28-08-2024, 11:58 PM
(This post was last modified: 28-08-2024, 11:59 PM by Henry. Edited 1 time in total. Edited 1 time in total.)
খাবার টেবিল হল সবচেয়ে উৎকৃষ্ট সময় সারাদিনের। সুচির কলেজ, পিউ এর ফিউচার, অংশুর পড়াশোনা, জয়ন্তের হাসপাতাল, আত্মীয় স্বজন, রাজনীতি, সাহিত্য, খেলাধুলা সবই আলোচনা হয় এই সময়। সূচি সকলকে খাবার দিয়ে নিজের প্লেটে ভাত নিয়ে বলল---ট্রান্সফার লেটার এসেছে আজ।
এক গ্রাস ভাত মুখে পুরে জয়ন্ত তাকালো স্ত্রীর দিকে। সুচির মা অনেকদিন ধরেই অসুস্থ। এদিকে বয়স্কা মহিলা ঐ বাড়ি ছেড়ে আসতেও চান না কোথাও। মায়ের দেখাশোনা করার জন্য সুচির এক দূর সম্পর্কের পিসতুতো অবিবাহিত বোন আছে অবশ্য, তবু তার ভরসা হয় না। না হবারও কারণ আছে, একদিন সুচির মা বাথরুমে পড়ে চোট পান আচমকা, তবে থেকেই সুচির এই দুশ্চিন্তা। শেষমেশ সূচি চেয়েছিল বাপের বাড়ির কাছে প্রত্যন্ত কোনো গ্রামীণ কলেজে ট্রান্সফার নেবে। যাতে সে মায়ের কাছে থাকতে পারে।
অংশুর মাধ্যমিকের জন্য অপেক্ষা করতে হয়েছিল তাকে। মাস চারেক হল ট্রান্সফারের চেষ্টা করছিল সূচি। অবশেষে আজ সেই ট্রান্সফার লেটার এসেছে। সুচির মুখে তাই তৃপ্তির ছাপ। এই ট্রান্সফারের জন্য জয়ন্তকেও সুচির সাথে কম ছোটাছুটি করতে হয়নি।
জয়ন্ত বলল---কোন কলেজে হল তবে?
---ঐ গোবিন্দপুরে একটা আপার প্রাইমারী কলেজ আছে, ওখানে। ছাত্র-ছাত্রী কম, কলেজটাও ছোট। ভালোই হল, মায়ের কাছে থাকতে পারবো বেশিক্ষন।
সুচির গলায় স্বস্তির স্বর। জয়ন্ত তার শ্বশুরের গ্রামের বাড়ির এলাকাটা ভালোই চেনে। গ্রামের বাড়ি বলা ভালো কারন সুচিরা বড় হয়েছে চন্দননগরে। আসলে জয়ন্তের শ্বশুরমশাই ছিলেন জয়ন্তের বাবার বিশেষ বন্ধু। জয়ন্তের বাবা ছিলেন চন্দননগরে ইংরেজির শিক্ষক। আর শ্বশুরমশাই ছিলেন সেই এলাকার নাম করা হোমিওপ্যাথি ডাক্তার। জয়ন্তের বাবা অনন্তদেব দাশগুপ্ত সুচির বাবার দেওয়া ওষুধ ছাড়া এলোপ্যাথি ছুঁতেন না। বয়স্কালে অবশ্য দুজনকেই এলোপ্যাথির দ্বারস্থ হতে হলেন। একজন ছিলেন হার্টের পেশেন্ট অপরজন ক্যানসার নিয়ে বুড়ো বয়সে জয়ন্তেরই ট্রিটমেন্ট নিয়েছিলেন।
সূচি আর জয়ন্তের বিয়েটাও একরকম দুই বাড়ি থেকে ঠিক করাই ছিল। কানাঘুষো সে সব কথা জয়ন্তের কানে আসতো শৈশব থেকেই। হুগলি জেলার সুচিদের গ্রামের বাড়িতে পুজোর সময় দুই পরিবার হই হই করে যাওয়ার চল ছিল।
সে সময়ই গ্রামটা চেনা জয়ন্তের। ইচ্ছেমত গ্রামে ঘুরে বেড়ানোর শখ ছিল শহরে বড় হওয়া জয়ন্তের। হুগলির প্রত্যন্ত এই গ্রামে সুচিত্রাও বড় হয়নি। সে বড় হয়েছে তার বাবার হোমিওপ্যাথি পেশার সুবাদে চন্দননগর শহরে। কাজেই সূচি বরং তার দেশবাড়ির গ্রাম জয়ন্তের চেয়ে কম চেনে।
জয়ন্ত বললে---গোবিন্দপুরে আপার প্রাইমারি? খুব মনে পড়ছে না তো?
অংশু খাবার চিবোতে চিবোতে বলল---আছে। গোবিন্দপুর জুনিয়র হাইকলেজ।
---তুই জানলি কি করে? জয়ন্ত বিস্ময়ে জিজ্ঞেস করল ছেলেকে।
অংশু কিছু উত্তর দেওয়ার আগেই পিউ বলল---কোত্থেকে আবার? ইন্টারনেট থেকে জেনেছে।
জয়ন্ত হাসলো। আজকালকার দিনের ছেলে-মেয়েরা এক্সপার্ট সব কিছুতেই। তার ছেলে-মেয়েটিও কম নয়। দুটিতেই পড়াশোনায় ভালো। দুটিতেই ভীষণ স্মার্ট। অবশ্য এর জন্য তার চেয়ে সুচিত্রার অবদান বেশি।
জয়ন্ত বলল---কবে থেকে জয়েন করছ তবে? তোমার কলিগরা জানে?
সুচিত্রা ছেলের পাতে ভাত দিতে দিতে বলল---জানবে না কেন। হেড মিস্ট্রেস নিজেই তো চেষ্টা কম করেননি। জয়েন হতে এখনো তিনমাস বাকি। এদিকে মা খুব অসুস্থ।
সুচিত্রার বর্তমান কলেজটা কলকাতাতেই। বালিগঞ্জেই তার কলেজ। সামান্য অটো ধরেই যাওয়া যায়। ফলে সংসার, কলেজ সবকিছুই সুচিত্রার সামলাতে তেমন কোনো সমস্যা হয় না। এদিকে সত্যিই সুচির মা খুব অসুস্থ। মাঝে একবার জয়ন্ত নিজেই গিয়ে ডাক্তার দেখিয়ে এনেছিল শাশুড়িমাকে।
অংশু বলল---আমি যাবো। আমার সামার ভ্যাকেশন পড়েছে কলেজে। এখন তো যেতেই পারি।
জয়ন্ত ছেলের দিকে তাকিয়ে বলল---তুই একা যেতে পারবি?
অমনি সূচি ঝাঁঝিয়ে উঠে বলল---না। ও একা যেতে পারবে না। রাস্তাঘাট চেনে না, যাবে কি করে!
অংশু মায়ের ওপর বিরক্ত হয়ে বলল---পারবো না কেন? শিয়ালদা থেকে ট্রেন ধরেই তো যেতে হবে। আমাদের কলেজেই পড়ত একটা ছেলে। ওর বাড়ি আরামবাগে। গোবিন্দপুর গ্রাম ও খুব চেনে। আমি যাতায়াতের সবটা জেনে নেব ঠিক ওর কাছ থেকে।
জয়ন্ত হেসে বললে---সূচি, তোমার ছেলে বড় হয়ে গেছে। ষোল পেরিয়ে গেল। তুমি এখনও ছোটো বলছ?
***
এক গ্রাস ভাত মুখে পুরে জয়ন্ত তাকালো স্ত্রীর দিকে। সুচির মা অনেকদিন ধরেই অসুস্থ। এদিকে বয়স্কা মহিলা ঐ বাড়ি ছেড়ে আসতেও চান না কোথাও। মায়ের দেখাশোনা করার জন্য সুচির এক দূর সম্পর্কের পিসতুতো অবিবাহিত বোন আছে অবশ্য, তবু তার ভরসা হয় না। না হবারও কারণ আছে, একদিন সুচির মা বাথরুমে পড়ে চোট পান আচমকা, তবে থেকেই সুচির এই দুশ্চিন্তা। শেষমেশ সূচি চেয়েছিল বাপের বাড়ির কাছে প্রত্যন্ত কোনো গ্রামীণ কলেজে ট্রান্সফার নেবে। যাতে সে মায়ের কাছে থাকতে পারে।
অংশুর মাধ্যমিকের জন্য অপেক্ষা করতে হয়েছিল তাকে। মাস চারেক হল ট্রান্সফারের চেষ্টা করছিল সূচি। অবশেষে আজ সেই ট্রান্সফার লেটার এসেছে। সুচির মুখে তাই তৃপ্তির ছাপ। এই ট্রান্সফারের জন্য জয়ন্তকেও সুচির সাথে কম ছোটাছুটি করতে হয়নি।
জয়ন্ত বলল---কোন কলেজে হল তবে?
---ঐ গোবিন্দপুরে একটা আপার প্রাইমারী কলেজ আছে, ওখানে। ছাত্র-ছাত্রী কম, কলেজটাও ছোট। ভালোই হল, মায়ের কাছে থাকতে পারবো বেশিক্ষন।
সুচির গলায় স্বস্তির স্বর। জয়ন্ত তার শ্বশুরের গ্রামের বাড়ির এলাকাটা ভালোই চেনে। গ্রামের বাড়ি বলা ভালো কারন সুচিরা বড় হয়েছে চন্দননগরে। আসলে জয়ন্তের শ্বশুরমশাই ছিলেন জয়ন্তের বাবার বিশেষ বন্ধু। জয়ন্তের বাবা ছিলেন চন্দননগরে ইংরেজির শিক্ষক। আর শ্বশুরমশাই ছিলেন সেই এলাকার নাম করা হোমিওপ্যাথি ডাক্তার। জয়ন্তের বাবা অনন্তদেব দাশগুপ্ত সুচির বাবার দেওয়া ওষুধ ছাড়া এলোপ্যাথি ছুঁতেন না। বয়স্কালে অবশ্য দুজনকেই এলোপ্যাথির দ্বারস্থ হতে হলেন। একজন ছিলেন হার্টের পেশেন্ট অপরজন ক্যানসার নিয়ে বুড়ো বয়সে জয়ন্তেরই ট্রিটমেন্ট নিয়েছিলেন।
সূচি আর জয়ন্তের বিয়েটাও একরকম দুই বাড়ি থেকে ঠিক করাই ছিল। কানাঘুষো সে সব কথা জয়ন্তের কানে আসতো শৈশব থেকেই। হুগলি জেলার সুচিদের গ্রামের বাড়িতে পুজোর সময় দুই পরিবার হই হই করে যাওয়ার চল ছিল।
সে সময়ই গ্রামটা চেনা জয়ন্তের। ইচ্ছেমত গ্রামে ঘুরে বেড়ানোর শখ ছিল শহরে বড় হওয়া জয়ন্তের। হুগলির প্রত্যন্ত এই গ্রামে সুচিত্রাও বড় হয়নি। সে বড় হয়েছে তার বাবার হোমিওপ্যাথি পেশার সুবাদে চন্দননগর শহরে। কাজেই সূচি বরং তার দেশবাড়ির গ্রাম জয়ন্তের চেয়ে কম চেনে।
জয়ন্ত বললে---গোবিন্দপুরে আপার প্রাইমারি? খুব মনে পড়ছে না তো?
অংশু খাবার চিবোতে চিবোতে বলল---আছে। গোবিন্দপুর জুনিয়র হাইকলেজ।
---তুই জানলি কি করে? জয়ন্ত বিস্ময়ে জিজ্ঞেস করল ছেলেকে।
অংশু কিছু উত্তর দেওয়ার আগেই পিউ বলল---কোত্থেকে আবার? ইন্টারনেট থেকে জেনেছে।
জয়ন্ত হাসলো। আজকালকার দিনের ছেলে-মেয়েরা এক্সপার্ট সব কিছুতেই। তার ছেলে-মেয়েটিও কম নয়। দুটিতেই পড়াশোনায় ভালো। দুটিতেই ভীষণ স্মার্ট। অবশ্য এর জন্য তার চেয়ে সুচিত্রার অবদান বেশি।
জয়ন্ত বলল---কবে থেকে জয়েন করছ তবে? তোমার কলিগরা জানে?
সুচিত্রা ছেলের পাতে ভাত দিতে দিতে বলল---জানবে না কেন। হেড মিস্ট্রেস নিজেই তো চেষ্টা কম করেননি। জয়েন হতে এখনো তিনমাস বাকি। এদিকে মা খুব অসুস্থ।
সুচিত্রার বর্তমান কলেজটা কলকাতাতেই। বালিগঞ্জেই তার কলেজ। সামান্য অটো ধরেই যাওয়া যায়। ফলে সংসার, কলেজ সবকিছুই সুচিত্রার সামলাতে তেমন কোনো সমস্যা হয় না। এদিকে সত্যিই সুচির মা খুব অসুস্থ। মাঝে একবার জয়ন্ত নিজেই গিয়ে ডাক্তার দেখিয়ে এনেছিল শাশুড়িমাকে।
অংশু বলল---আমি যাবো। আমার সামার ভ্যাকেশন পড়েছে কলেজে। এখন তো যেতেই পারি।
জয়ন্ত ছেলের দিকে তাকিয়ে বলল---তুই একা যেতে পারবি?
অমনি সূচি ঝাঁঝিয়ে উঠে বলল---না। ও একা যেতে পারবে না। রাস্তাঘাট চেনে না, যাবে কি করে!
অংশু মায়ের ওপর বিরক্ত হয়ে বলল---পারবো না কেন? শিয়ালদা থেকে ট্রেন ধরেই তো যেতে হবে। আমাদের কলেজেই পড়ত একটা ছেলে। ওর বাড়ি আরামবাগে। গোবিন্দপুর গ্রাম ও খুব চেনে। আমি যাতায়াতের সবটা জেনে নেব ঠিক ওর কাছ থেকে।
জয়ন্ত হেসে বললে---সূচি, তোমার ছেলে বড় হয়ে গেছে। ষোল পেরিয়ে গেল। তুমি এখনও ছোটো বলছ?
***