28-08-2024, 11:47 PM
হাসপাতালে রোগী দেখার ফাঁকে জয়ন্তর কাছে এসে হাজির হল ওয়ার্ড বয় সুকুমার। বললে---স্যার, কেউ একজন আপনার খোঁজ করছে।
লাস্ট রাউন্ড দিয়ে বেরোবে জয়ন্ত। হাত ঘড়িতে দেখল সাড়ে সাতটা। এসময় আবার হাসপাতালে তার কে খোঁজ করতে এসেছে।
জয়ন্ত টয়েলটে গিয়ে চোখের চশমা নামিয়ে হাত মুখ ধুয়ে নিল। তারপর সাদা রুমাল দিয়ে মুখটা মুছে বেরিয়ে এলো ওয়েটিং রুমে। নিশ্চই কোনো রোগীর আত্মীয় হবে। অনেক সময় রোগীর আত্মীয়রা দুশ্চিন্তাগ্রস্ত হয়ে ডাক্তারদের এমন হাঁকডাক শুরু করে। আবার দুস্থ হলে কিছু ওষুধপত্র কিনে দেবার কথাও বলে। সেজন্য অবশ্য ডাক্তারদের একটা ট্রাস্টি আছে, তেমন হলে জয়ন্ত সেখানেই পাঠায়।
ওয়েটিং রুমের একেবারে শেষপ্রান্তে উঠে দাঁড়িয়ে হাসিমুখে তাকিয়ে আছে একটা দীর্ঘকায় পাগলাটে লোক। লোকটাকে এর আগে কখনো জয়ন্ত দেখেছে কিনা মনে করতে পারছে না। দেখেই বোঝা যায় ভিখিরি কিংবা পাগল। জয়ন্তের সাথেই বা এ হেন লোকের কিসের দরকার? বিস্মিত হল জয়ন্ত।
লোকটা এগিয়ে এলো জয়ন্তের দিকে। এক মুখ বিশ্রী হাসি নিয়ে বলল---ভালো আছেন?
বিস্ময়ে তাকালো জয়ন্ত, গলা দিয়েও তার সেই বিস্ময় ঝরে পড়ল---হুম্ম। চিনতে পারলাম না তো!
লোকটাকে দেখতে হয় মাথা উঁচু করে। জয়ন্তর চেয়ে অন্তত এক হাত লম্বা হবে। কাছে আসতেই বিদঘুটে গন্ধ পেল জয়ন্ত। যেন বহুদিন স্নান করেনি লোকটা। জমে থাকা ঘামের উৎকট ঘ্রাণ তার সর্বাঙ্গ দিয়ে উপচে পড়ছে। সেই সাথে গাঁজার গন্ধ। এ গন্ধটা জয়ন্ত চেনে মেডিক্যাল কলেজে পড়বার সময় থেকে। কিছু ছাত্রের একটু আধটু নেশায় সেই গন্ধে ভরে যেত হোস্টেল। লোকটা গাঁজা খায়।
জয়ন্ত ঈষৎ দূরে সরে দাঁড়ালো। পা থেকে মাথা পর্যন্ত পর্যবেক্ষণ করল লোকটিকে। মাথার চুলগুলো কোঁকড়া কোঁকড়া, ঝাঁকড়া হয়ে আছে জুলফি পর্যন্ত। লালচে নোংরা সেই চুলে মাটি আর বালির চিহ্ন। লাল চোখ, কোটরে ঢুকে আছে। রুক্ষ কর্কশ মুখে চোয়াল শক্ত হয়ে আছে। গাল ভর্তি কয়েক জন্ম না কাটা উস্কখুস্ক দাড়ি গোঁফ।
হলদে দাঁত বের করে লোকটা এখনো হাসছে। সেই হাসিতে দেখা যায় বিশ্রী রকম হলদে দাঁত কপাটি। ঠোঁটের কোণে ক্ষয় ধরেছে লোকটার। নেশা করার ফল হয়ত। গায়ে একটা চেক শার্ট। কিন্তু শার্টটা এতটাই নোংরা, যে তার রঙ চেনা মুশকিল। প্যান্টটা কোমরের কাছে দড়ি দিয়ে বাঁধা। পায়ে একটা সস্তার জুতো। বহুবার ছিঁড়ে যাওয়ায় তার দিয়ে বাঁধা হয়েছে কোথাও কোথাও।
---আমি গফুর। লোকটা কর্কশ ভাবে নামটা উচ্চারণ করল।
গফুর! শরৎচন্দ্রের 'মহেশ' গল্পে ছাড়া এই নামটা কবে কোথাও শুনেছে বলে মনে করতে পারলো না জয়ন্ত। তার না চিনতে পারা মুখের অভিব্যক্তি বুঝতে পেরে লোকটা বলল---চিনতে পারবেন না জানি। আমি আপনার শ্বশুরের গেরামে আলি চাচার ছেলে।
আলি চাচা নামটা অবশ্য অনেকবার সুচিত্রার মুখে শুনেছে জয়ন্ত। আলি চাচা লোকটাকে শেষবার তাদের বিয়ের সময় দেখে ছিল সে। সাদা ছাগ দাড়িওলা লোকটা জয়ন্তের শ্বশুরবাড়ির কেয়ারটেকার ছিলেন।
জয়ন্ত লোকটাকে এবার কাছ থেকে আরো ভালো করে পর্যবেক্ষণ করল। ময়লা জমতে জমতে গায়ের রঙটা কেমন বোঝা মুশকিল। কথা বলার সময় মুখের মধ্যে একটা লালার জাল তৈরি হচ্ছে। যা অত্যন্ত একটা ঘিনঘিনে দৃশ্য।
জয়ন্ত চারপাশটা দেখে নিল তৎক্ষনাৎ। লোকে কি ভাববে একজন ডাক্তার একটি নোংরা ভিখিরি মাতালের সাথে কি এত কথা বলছে! তাই সংক্ষিপ্ত করতে চাইল সে। বলল---আমি তো ঠিক চিনতে পারছি না ভাই আপনাকে।
লোকটার মুখটা তখন গম্ভীর হয়ে গেল। পকেট থেকে একটা পুরোনো পাসপোর্ট সাইজ ছবি বার করে দেখালো জয়ন্তকে। বলল---চিনতে পারছেন ডাক্তার বাবু? আপনার শ্বশুরবাড়ির কেয়ার টেকার, আমার আব্বা মহম্মদ আলি। রংপুর থেকে আব্বাকে নিয়েসে ছিল এপারে নিকুঞ্জ বাগচীর বাপ।
জয়ন্ত সুচির বাবার গ্রামীন বাড়িতে বহুবার গেছে, তবে কেয়ারটেকার আলির চেহারা কেমন ছিল পুঙ্খানুপুঙ্খ মনে রাখা কঠিন। তবে লোকটা বেশ লম্বা ছিল একথা সুচিও বলত।
এই লোকটাও লম্বা। বেশ লম্বা। অন্যান্য পাগল ভিখারীদের চেয়ে আলাদা করে নজর কাড়বে তার জন্য। এমন লম্বা লোক সচরাচর খুব কম দেখা যায়। আর্মিতেই মেলে। মাতাল কিংবা ভিখারি ভাবা যায় না। জয়ন্ত মনে মনে ভাবলে ইন্ডিয়ান ক্রিকেটে এখন একজন ফাস্ট বোলার এসেছে সদ্য, ইশান্ত শর্মা না কি নাম যেন। এ লোক যেন তেমনই। হয়ত অতটা লম্বা নয়। তবে ছয় ফুটের বেশি তো হবেই। তবে চেহারাটা সেই উচ্চতা অনুযায়ী নয়। যদিও বেশ শক্তপোক্ত, কব্জির কাছে শিরা-উপশিরা দেখা মিলছে। তবে কাঁধের কাছটা যেরকম চওড়া গড়নটা ততটা নয়।
এইবার লোকটা বলল---আমি একটা দরকারে এসেছি সার।
জয়ন্ত ভ্রু কুঁচকে তাকাতেই লোকটা বলল---আমার স্ত্রী খুব অসুস্থ। ক্যানসারের রোগী। এখুনি ওষুধ কিনতে পাঁচ হাজার টাকা লাগবে। কিছু টাকা পয়সা যদি সাহায্য করতেন...।
জয়ন্তর কাছে এই সাহায্যটুকু তেমন কিছু নয়। কিন্তু চেনা নেই, জানা নেই, এ লোককে সে টাকা দেবে কেন! বলল---থাকো কোথায় তুমি?
---পার্ক সার্কাসে ভাড়া বাড়িতে থাকি। কারখানায় কাজ করি সার। যা আয় হয় বউ বাচ্চাতে চলে না। এদিকে বউটা অসুস্থ। কি করি বলুন তো সার, তাই পথে নামতে হয়েছে।
---তুমি আমার খোঁজ পেলে কি করে? জয়ন্ত জিজ্ঞেস করল।
লোকটা আবার মুখের মধ্যে ঘিনঘিনে লালার জাল বিন্যাস করে হলদে দাঁত বের করে বলল---হপ্তা আগে গেরামে গেছিলাম বউয়ের চিকিৎসার জন্য জমিজমা যা আছে বেচতে। সেখানেই শুনলাম নিকুঞ্জবাবুর জামাই নাকি কলকাতা শহরে বড় ডাক্তার। তাই ভাবলাম যদি আপনার কাছে কিছু সাহায্য মেলে। আবার আব্বা তো সারাজীবন বাগচী বাড়ির কেয়ারটেকার ছিল, নিশ্চয় সেই বাড়ির জামাই হয়ে আপনি আমাকে খালি হাতে ফেরাবেন না।
মহা ধন্দে পড়ল জয়ন্ত। লোকটা তার শ্বশুরের নাম, কেয়ারটেকার আলির নাম সব ঠিকঠাক বলছে। আবার লোকটাকে দেখে কোনো অংশেই সংসারী লোক মনে হয় না। হয় ভবঘুরে উন্মাদ, নয় নেশাখোর মাতাল।
জয়ন্ত বললে---ঠিক আছে। আপনি দিন তিনেক পরে আসুন। আমি দেখছি কতটা কি করা যায়।
লোকটা আবার নোংরা দাঁত বের করে বিচ্ছিরি হাসিতে বললে---কিছু যদি মনে না করেন, শ' খানেক টাকা যদি এখন পেতাম, বাসভাড়া যে এত বেড়েছে বুঝতে পারিনি।
হাসপাতলে স্ট্রেচার নিয়ে রুগী ঢুকছে। এসময় একটা ভবঘুরের সাথে দাঁড়িয়ে পথ আটকানোর কোনো মানে হয় না। জয়ন্ত লোকটাকে বাইরে যেতে বলল। হাসপাতালের বাইরে লোকটার হাতে একশ টাকা দিয়ে বলল---আসুন।
লোকটা খানিক গিয়েই রাস্তায় কারোর ফেলে যাওয়া একটা জ্বলন্ত বিড়ি কুড়িয়ে টান দিতে দিতে বিদেয় হল।
জয়ন্ত মনে মনে হাসছে। কোত্থেকে এ উন্মাদের আচমকা উদয় হল কে জানে। জয়ন্তের শ্বশুর বাড়ির খোঁজ খবরই বা পেল কোথায়!
জয়ন্তের গাড়ির ড্রাইভার চন্দন এসে হাজির হল ততক্ষনে। বলল---সার চলুন।
***
লাস্ট রাউন্ড দিয়ে বেরোবে জয়ন্ত। হাত ঘড়িতে দেখল সাড়ে সাতটা। এসময় আবার হাসপাতালে তার কে খোঁজ করতে এসেছে।
জয়ন্ত টয়েলটে গিয়ে চোখের চশমা নামিয়ে হাত মুখ ধুয়ে নিল। তারপর সাদা রুমাল দিয়ে মুখটা মুছে বেরিয়ে এলো ওয়েটিং রুমে। নিশ্চই কোনো রোগীর আত্মীয় হবে। অনেক সময় রোগীর আত্মীয়রা দুশ্চিন্তাগ্রস্ত হয়ে ডাক্তারদের এমন হাঁকডাক শুরু করে। আবার দুস্থ হলে কিছু ওষুধপত্র কিনে দেবার কথাও বলে। সেজন্য অবশ্য ডাক্তারদের একটা ট্রাস্টি আছে, তেমন হলে জয়ন্ত সেখানেই পাঠায়।
ওয়েটিং রুমের একেবারে শেষপ্রান্তে উঠে দাঁড়িয়ে হাসিমুখে তাকিয়ে আছে একটা দীর্ঘকায় পাগলাটে লোক। লোকটাকে এর আগে কখনো জয়ন্ত দেখেছে কিনা মনে করতে পারছে না। দেখেই বোঝা যায় ভিখিরি কিংবা পাগল। জয়ন্তের সাথেই বা এ হেন লোকের কিসের দরকার? বিস্মিত হল জয়ন্ত।
লোকটা এগিয়ে এলো জয়ন্তের দিকে। এক মুখ বিশ্রী হাসি নিয়ে বলল---ভালো আছেন?
বিস্ময়ে তাকালো জয়ন্ত, গলা দিয়েও তার সেই বিস্ময় ঝরে পড়ল---হুম্ম। চিনতে পারলাম না তো!
লোকটাকে দেখতে হয় মাথা উঁচু করে। জয়ন্তর চেয়ে অন্তত এক হাত লম্বা হবে। কাছে আসতেই বিদঘুটে গন্ধ পেল জয়ন্ত। যেন বহুদিন স্নান করেনি লোকটা। জমে থাকা ঘামের উৎকট ঘ্রাণ তার সর্বাঙ্গ দিয়ে উপচে পড়ছে। সেই সাথে গাঁজার গন্ধ। এ গন্ধটা জয়ন্ত চেনে মেডিক্যাল কলেজে পড়বার সময় থেকে। কিছু ছাত্রের একটু আধটু নেশায় সেই গন্ধে ভরে যেত হোস্টেল। লোকটা গাঁজা খায়।
জয়ন্ত ঈষৎ দূরে সরে দাঁড়ালো। পা থেকে মাথা পর্যন্ত পর্যবেক্ষণ করল লোকটিকে। মাথার চুলগুলো কোঁকড়া কোঁকড়া, ঝাঁকড়া হয়ে আছে জুলফি পর্যন্ত। লালচে নোংরা সেই চুলে মাটি আর বালির চিহ্ন। লাল চোখ, কোটরে ঢুকে আছে। রুক্ষ কর্কশ মুখে চোয়াল শক্ত হয়ে আছে। গাল ভর্তি কয়েক জন্ম না কাটা উস্কখুস্ক দাড়ি গোঁফ।
হলদে দাঁত বের করে লোকটা এখনো হাসছে। সেই হাসিতে দেখা যায় বিশ্রী রকম হলদে দাঁত কপাটি। ঠোঁটের কোণে ক্ষয় ধরেছে লোকটার। নেশা করার ফল হয়ত। গায়ে একটা চেক শার্ট। কিন্তু শার্টটা এতটাই নোংরা, যে তার রঙ চেনা মুশকিল। প্যান্টটা কোমরের কাছে দড়ি দিয়ে বাঁধা। পায়ে একটা সস্তার জুতো। বহুবার ছিঁড়ে যাওয়ায় তার দিয়ে বাঁধা হয়েছে কোথাও কোথাও।
---আমি গফুর। লোকটা কর্কশ ভাবে নামটা উচ্চারণ করল।
গফুর! শরৎচন্দ্রের 'মহেশ' গল্পে ছাড়া এই নামটা কবে কোথাও শুনেছে বলে মনে করতে পারলো না জয়ন্ত। তার না চিনতে পারা মুখের অভিব্যক্তি বুঝতে পেরে লোকটা বলল---চিনতে পারবেন না জানি। আমি আপনার শ্বশুরের গেরামে আলি চাচার ছেলে।
আলি চাচা নামটা অবশ্য অনেকবার সুচিত্রার মুখে শুনেছে জয়ন্ত। আলি চাচা লোকটাকে শেষবার তাদের বিয়ের সময় দেখে ছিল সে। সাদা ছাগ দাড়িওলা লোকটা জয়ন্তের শ্বশুরবাড়ির কেয়ারটেকার ছিলেন।
জয়ন্ত লোকটাকে এবার কাছ থেকে আরো ভালো করে পর্যবেক্ষণ করল। ময়লা জমতে জমতে গায়ের রঙটা কেমন বোঝা মুশকিল। কথা বলার সময় মুখের মধ্যে একটা লালার জাল তৈরি হচ্ছে। যা অত্যন্ত একটা ঘিনঘিনে দৃশ্য।
জয়ন্ত চারপাশটা দেখে নিল তৎক্ষনাৎ। লোকে কি ভাববে একজন ডাক্তার একটি নোংরা ভিখিরি মাতালের সাথে কি এত কথা বলছে! তাই সংক্ষিপ্ত করতে চাইল সে। বলল---আমি তো ঠিক চিনতে পারছি না ভাই আপনাকে।
লোকটার মুখটা তখন গম্ভীর হয়ে গেল। পকেট থেকে একটা পুরোনো পাসপোর্ট সাইজ ছবি বার করে দেখালো জয়ন্তকে। বলল---চিনতে পারছেন ডাক্তার বাবু? আপনার শ্বশুরবাড়ির কেয়ার টেকার, আমার আব্বা মহম্মদ আলি। রংপুর থেকে আব্বাকে নিয়েসে ছিল এপারে নিকুঞ্জ বাগচীর বাপ।
জয়ন্ত সুচির বাবার গ্রামীন বাড়িতে বহুবার গেছে, তবে কেয়ারটেকার আলির চেহারা কেমন ছিল পুঙ্খানুপুঙ্খ মনে রাখা কঠিন। তবে লোকটা বেশ লম্বা ছিল একথা সুচিও বলত।
এই লোকটাও লম্বা। বেশ লম্বা। অন্যান্য পাগল ভিখারীদের চেয়ে আলাদা করে নজর কাড়বে তার জন্য। এমন লম্বা লোক সচরাচর খুব কম দেখা যায়। আর্মিতেই মেলে। মাতাল কিংবা ভিখারি ভাবা যায় না। জয়ন্ত মনে মনে ভাবলে ইন্ডিয়ান ক্রিকেটে এখন একজন ফাস্ট বোলার এসেছে সদ্য, ইশান্ত শর্মা না কি নাম যেন। এ লোক যেন তেমনই। হয়ত অতটা লম্বা নয়। তবে ছয় ফুটের বেশি তো হবেই। তবে চেহারাটা সেই উচ্চতা অনুযায়ী নয়। যদিও বেশ শক্তপোক্ত, কব্জির কাছে শিরা-উপশিরা দেখা মিলছে। তবে কাঁধের কাছটা যেরকম চওড়া গড়নটা ততটা নয়।
এইবার লোকটা বলল---আমি একটা দরকারে এসেছি সার।
জয়ন্ত ভ্রু কুঁচকে তাকাতেই লোকটা বলল---আমার স্ত্রী খুব অসুস্থ। ক্যানসারের রোগী। এখুনি ওষুধ কিনতে পাঁচ হাজার টাকা লাগবে। কিছু টাকা পয়সা যদি সাহায্য করতেন...।
জয়ন্তর কাছে এই সাহায্যটুকু তেমন কিছু নয়। কিন্তু চেনা নেই, জানা নেই, এ লোককে সে টাকা দেবে কেন! বলল---থাকো কোথায় তুমি?
---পার্ক সার্কাসে ভাড়া বাড়িতে থাকি। কারখানায় কাজ করি সার। যা আয় হয় বউ বাচ্চাতে চলে না। এদিকে বউটা অসুস্থ। কি করি বলুন তো সার, তাই পথে নামতে হয়েছে।
---তুমি আমার খোঁজ পেলে কি করে? জয়ন্ত জিজ্ঞেস করল।
লোকটা আবার মুখের মধ্যে ঘিনঘিনে লালার জাল বিন্যাস করে হলদে দাঁত বের করে বলল---হপ্তা আগে গেরামে গেছিলাম বউয়ের চিকিৎসার জন্য জমিজমা যা আছে বেচতে। সেখানেই শুনলাম নিকুঞ্জবাবুর জামাই নাকি কলকাতা শহরে বড় ডাক্তার। তাই ভাবলাম যদি আপনার কাছে কিছু সাহায্য মেলে। আবার আব্বা তো সারাজীবন বাগচী বাড়ির কেয়ারটেকার ছিল, নিশ্চয় সেই বাড়ির জামাই হয়ে আপনি আমাকে খালি হাতে ফেরাবেন না।
মহা ধন্দে পড়ল জয়ন্ত। লোকটা তার শ্বশুরের নাম, কেয়ারটেকার আলির নাম সব ঠিকঠাক বলছে। আবার লোকটাকে দেখে কোনো অংশেই সংসারী লোক মনে হয় না। হয় ভবঘুরে উন্মাদ, নয় নেশাখোর মাতাল।
জয়ন্ত বললে---ঠিক আছে। আপনি দিন তিনেক পরে আসুন। আমি দেখছি কতটা কি করা যায়।
লোকটা আবার নোংরা দাঁত বের করে বিচ্ছিরি হাসিতে বললে---কিছু যদি মনে না করেন, শ' খানেক টাকা যদি এখন পেতাম, বাসভাড়া যে এত বেড়েছে বুঝতে পারিনি।
হাসপাতলে স্ট্রেচার নিয়ে রুগী ঢুকছে। এসময় একটা ভবঘুরের সাথে দাঁড়িয়ে পথ আটকানোর কোনো মানে হয় না। জয়ন্ত লোকটাকে বাইরে যেতে বলল। হাসপাতালের বাইরে লোকটার হাতে একশ টাকা দিয়ে বলল---আসুন।
লোকটা খানিক গিয়েই রাস্তায় কারোর ফেলে যাওয়া একটা জ্বলন্ত বিড়ি কুড়িয়ে টান দিতে দিতে বিদেয় হল।
জয়ন্ত মনে মনে হাসছে। কোত্থেকে এ উন্মাদের আচমকা উদয় হল কে জানে। জয়ন্তের শ্বশুর বাড়ির খোঁজ খবরই বা পেল কোথায়!
জয়ন্তের গাড়ির ড্রাইভার চন্দন এসে হাজির হল ততক্ষনে। বলল---সার চলুন।
***