25-07-2024, 01:14 AM
(This post was last modified: 25-07-2024, 04:13 PM by kumdev. Edited 1 time in total. Edited 1 time in total.)
পঞ্চবিংশতি পরিচ্ছেদ
রাত হয়েছে। ইলিনা ব্রাউন উঠে সাওনি ব্রউনের ঘরে ঢুকে শূণ্য বিছানার দিকে কয়েক পলক তাকিয়ে থাকে।তার কখনো বিয়ে হবে না।মম তাকে অভিশাপ দিয়েছে।এই অবস্থায়ও এক চিলতে হাসি ফোটে ঠোটের ফাকে।ভেবেছিল খাবার অর্ডার করবে। সদ্য মাম্মী মারা গেল আজ সে উপোস করবে।কাল কলেজ যাবে।ইলিনা বারান্দায় গিয়ে বসল।
তিমীলাই কসৈলে বিহে গর্দেন। বিয়ে নিয়ে তার মাথা ব্যথা ণেই।বিয়ের অভিজ্ঞতা খুব প্রীতিকর নয়।তাছাড়া বিয়ে নিয়ে তার মধ্যে কোনো ফিলিংস নেই।ইলিনা ভাবছে অন্য কথা।সময় কাটাবার জন্য কিছু একটা করা দরকার।পাড়ায় মিশতে গেলে বড় অন্তরায় তার চেহারা।চেহারার জন্য সকলে তাকে আড়চোখে দেখলেও আলাপে কেউ আগ্রহী নয়।একবার মনে হল দুস্থ ছেলে মেয়েদের বাড়ীতে এনে পড়ালে কেমন হয়।পরক্ষণে প্রাইভেসির কথা ভেবে মনে হল সেটা ঠিক হবে না।তাছাড়া অন্যান্য ফ্লাটের থেকে আপত্তি আসাতে পারে।
রাতের পর নতুন সূর্যোদয়ে দিনের শুরু হয়।ইলিনা ব্রাউন কলেজ যাওয়া শূরু করে।কলেজে সেই সব চেয়ে জুনিয়র অন্যান্যদের চেয়ে বয়সের ব্যবধান এত বেশি তাকে সহকর্মী হিসেবে কেউ ভাবতে পারেনা।সকলে তাকে নিদেশিনী ভাবে মজার ব্যাপার হচ্ছে কোনোদিন বিদেশে পা রাখার সুযোগ হয়নি।এই বাংলার মাটিতে তার জন্ম এবং বেড়ে ওঠাঅদক্লে।ইলিনা ব্রাউন মেয়েদের মধ্যে বেশ জনপ্রিয়।মেয়েরা তাকে আপন করে নিয়েছে আর কি চাই।একদিন অফ পিরিয়ডে ছন্দাদি বললেন,চাকরি তো হল এবার একটা বিয়ে করে ফেলুন।
অযাচিত উপদেশে মজা লাগে ইলিনা হেসে বলল,ভাল ছেলে পেলেই বিয়ে করব।
এদেশের ছেলে বিয়ে করবেন?
এদেশ-বিদেশ বুঝিনা ভাল ছেলে হলেই হবে।
কে এল সি মানে কনকলতা চক্রবর্তী জিজ্ঞেস করলেন,আচ্ছা মিস ব্রাউন আপনি দেশ ছেড়ে এখানে চাকরি করছেন এতে আপনার বাবা-মা আপত্তি করেনি?
ইলিনা কিছু বলার আগেই জিবি মানে গৌরী বসু বললেন,কনকদি আমাদের সঙ্গে বিদেশীদের মেলাতে যাবেন না।এ্যামেরিকায় ছেলে প্রাপ্ত বয়স্ক হলে বাড়ী ছেড়ে আলাদা বাসা ভাড়া নিয়ে থাকে।
গৌরী ঠিক বলেছে।কলি বসাক তাল দিলেন।আমার এক পরিচিত জার্মানীতে পড়তে গিয়ে সে দেশের মেয়ে বিয়ে করে এনেছে।সেই মেয়ে কোনোদিন বাপের বাড়ী গেছে শুনিনি।
শোনো কলি আমার কাছে উলটো খবর আছে।মালতী বেরা বলল।
উল্টো খবর মানে?
আমার জ্যাঠতুতো ভাই রাশিয়ায় পড়তে গিয়ে রাশিয়ান মেয়ে বিয়ে করে সেখানেই থেকে গেছে।জ্যাঠা-জেঠিও ওখানে মাসের পর মাস পড়ে থাকে।
ব্যাস শুরু হয়ে গেল।এখন আলোচনা কোথায় গিয়ে থামে কে বলতে পারে,ইলিনা উঠে লাইব্রেরীতে চলে গেল।এইজন্য ইলিনা অফ পিরিয়ডে স্টাফ রুমে বসেনা লাইব্রেরীতে সময় কাটায়।
কলেজ থেকে ফিরে আগের মত ডোর বেল বাজাতে হয় না।চাবি ঘুরিয়ে দরজা খুলে ভিতরে ঢুকতে হয়।কলেজে ঘণ্টার পর ঘণ্টা বকবক করে সময় কেটে যায়।কত মেয়ের কত রকমের প্রশ্নের উত্তর দিতে হয় কিভাবে সময় চলে যায় বুঝতেই পারেনা।বাসায় ফিরে কথা বলার একটা লোক নেই।একা হলে অতীতের নানা কথা ভীড় করে ঘিরে ধরে।শাড়ী বদলে লুঙ্গি আর কুর্তা পরল।বাড়ীতে এই পোশাকই কম্ফোর্টেবল বোধ করে।আলো কমে এসেছে লাইট জ্বেলে রান্না ঘরে ঢুকল।চা করে ফ্লাক্সে ঢেলে এক কাপ নিয়ে বারান্দায় এসে বসে।
আকাশে পেজা তুলোর মত টুকরো টুকরো মেঘ ভেসে চলেছে কোন নিরুদ্দেশে।মনে পড়ল কে এল সি ম্যামের কথা।কনকদি বাবা-মায়ের আপত্তি আছে কিনা জানতে চাইছিলেন।একটা দীর্ঘশ্বাস বেরিয়ে এল অজান্তে।মা জন্ম দিয়ে স্তন্যপান করালেও মায়ের স্নেহ মমতা কি বোঝার সুযোগ পায়নি।ড্যাড টাকা দিয়ে দায়িত্ব শেষ করেছে।স্টুডেণ্ট লাইফটা কেটেছে হোস্টেলে মেসে।ছুটিছাটাতে বাড়ীতে এলেও মায়ের সঙ্গে দেখা হয়েছে কম।দেখা হলেও কথা হতোনা।সাওনি ব্রাউনই তার আবদার বায়না মেটাতো।আর যাইহোক ম্যাথু তার পড়াশুনার খরচ জোগাতে কার্পণ্য করেনি।পড়াশুনা করে এই জায়গায় পৌছেছি তার জন্যই।ইলিনার চোখ ঝাপসা হয়ে এল।স্নেহ মমতা প্রেম ভালবাসার অনেক কথা বইতে পড়েছি উপলব্ধি করার সুযোগ বিধাতা তাকে দেয়নি।ওরা এসব জানে না, সবাই তাকে বিদেশী বলে জানে সেও তাদের ভুল ভাঙ্গাতে চায়না।
জীবন বড়ই অদ্ভুত।আশা আকাঙ্খ্যা রাগ বিদ্বেষ নিয়ে বেচে থাকা একটা মানুষের চলার গতি মুহূর্তে স্তব্ধ হয়ে যেতে পারে।সাওনি ব্রাউন চলে যেতে আজ নিজেকে বড় একা মনে হয়।দুঃখ বেদনায় পাশে থেকে আহা-উহু বলার মত তার কেউ ণেই।রাত হল এবার রান্নার আয়োজন করতে হয়।এক বেলাতেই দু-বেলার রান্না করে রাখে এখন কেবল ভাতটা করলেই হবে।চাল ধুয়ে হাড়ি স্টোভে চাপিয়ে দিল।
বাজারে গেলে অসুবিধে হয়না।ভেণ্ডারড়া তার দিকে চোখ বড় করে তাকায় না।মাছ অলা সব্জিওলা যে যার বিক্রী বাট্টা নিয়ে ব্যস্ত।মনে হল কলিং বেল বাজল।এত রাতে আবার কে এল?স্টোভের নভ ঘুরিয়ে ঢিমে করে বেরিয়ে জিজ্ঞেস করল,কে-ঈএ?
বাইরে থেকে আওয়াজ এল,হাম পাড়া সে আয়া।
হিন্দি শূনে হাসি পেল।দরজা খুলে দেখল কয়েকজন লোক,মুখ চেনা।ইলিনা বলল,বাংলায় বলুন।
আমরা পুজোর চাদা নিতে এসেছি।
পুজো কবে?
এইতো এই সপ্তাহে মহালয়া পরের সপ্তাহে পুজো।
কলেজেও পুজোর ছুটি পড়ে যাবে তখন বাড়ী বসে সময় কাটাতে হবে।ইলিনা বলল,কত দিতে হবে?
প্রতি ফ্লাট আমরা এক ধরেছি।
এক টাকা! ইলিনা অবাক হয়।
কি বলছেন ম্যাম এক টাকায় তো দুব্বো ঘাসও হবে না।আমরা একশ টাকা ধরেছি।
একশো!
ম্যাম আমরা অন্য পাড়ায় চাদা তুলছি না--পাচদিনের পুজো--।
ইলিনা ঘর থেকে ব্যাগ এনে টাকা বের কোরতে থাকে।
কি নাম ম্যাম?
ইলিনা ব্রাউন।
ওরা বিল কেটে টাকা নিয়ে চলে গেল।সিড়ি দিয়ে নামতে নামতে বলাবলি করে ব্যবহার খুব ভাল।এই বয়সে কলেজে পড়ায়।আমাদের মত বাংলা বলে।
বিনয় আঢ্য বাড়ীতে একা।মনোরমা বিরাটি গেছে মেয়ের বাড়ি।রান্না করে দিয়ে গেছে পুজোর জামা কাপড় দিতে।আজ আর ফিরবে না কাল সকালে ফেরার কথা।বিনয় আঢ্য বেশ উত্তেজ্জিত।অনেকদিন পর মওকা মিলেছে। কাল সকালের জন্য অপেক্ষা করছে কখন তরঙ্গ আসে। তরঙ্গবালা তোমাকে করব ফালা ফালা।