15-07-2024, 12:08 AM
পরের প্রায় একমাস আমি রবির কথা মতন আমার সমস্ত কনট্রাক্ট পেপার যেগুলো ওই মাসে বিভিন্ন ক্লায়েন্টদের কাছে যাবার ছিল সেগুলোকে পাঠাবার আগে রবির কাছে ফাইনাল চেক করতে পাঠালাম । যথারিতি কোন সমস্যা ছিলনা ওগুলোতে । মাসের শেষ নাগাদ আবার রবি আমাকে ওর চেম্বারে ডাকলো ।
-“রাজীব আমি এখন তোমার কাজে মোটামুটি ভাবে খুশি । তুমি যেভাবে তোমার কাজ করছ আর তোমার ক্লায়েন্টদের সামলাচ্ছ তাতে আমার আর অসন্তুষ্ট হবার কোন কারন নেই । তোমার ক্লায়েন্টদের নিয়ে যা সমস্যা ছিল মনে হচ্ছে সেগুলো মিটে গেছে । এখন আর কারুর কোন সমস্যা নেই”।
-“একটা কথা বলি রবি কিছু মনে করোনা, আমার কিন্তু কোনদিনই মনে হয়নি যে আমার ক্লায়েন্টদের সত্যি সত্যি মেজর কোন অভিযোগ বা সমস্যা ছিল”।
আমার কথা শুনে প্রচণ্ড একটা বিরক্তির ভাব ফুটে উঠলো রবির মুখে । যা দেখে আমার মনে হল এই ধরনের কথা বোধহয় না বললেই ভাল হত।
-“দেখ রাজীব আমি তোমাকে আমার চেম্বারে ডেকেছি শুধু এই টুকু বলতে যে তোমাকে আর তোমার সমস্ত কনট্রাক্ট পেপার কোথাও পাঠাবার আগে আমার কাছে পাঠানোর দরকার নেই।কিন্তু এখন থেকে আমি চাই যে তুমি যেসমস্ত নতুন ক্লায়েন্টদের নিয়ে কাজ করছো তাদের সব ব্যাপারে আমাকে ইনভল্ব কর”।
-“জানতে পারি কেন”?
-“দেখ আমরা ম্যানেজমেন্ট থেকে ঠিক করেছি আমাদের বিজনেসের ওপর আমাদের মানে ম্যানেজমেন্টের আরো কন্ট্রোল থাকা উচিত । তাই এখন থেকে আমি আমাদের অফিসের সমস্ত বড় বড় কনট্রাক্টের ব্যাপারে নিজেকে ইনভল্ব রাখতে চাই । ম্যানেজমেন্টের ইনস্ট্রাকশান অনুযায়ী আমাকে দেখতে হবে যে আমাদের সমস্ত ক্লায়েন্টরা আমাদের কাছ থেকে একদম সঠিক সার্ভিস পাচ্ছে কিনা”?
-“হ্যাঁ কিন্তু অফিসে তো আমার মত আরো সেলস ম্যানেজার আছে… শুধু আমাকেই বা আতস কঁচের তলায় ফেলা হচ্ছে কেন”?
-“শুধু তুমি নও রাজীব, আমি সমস্ত সেলস ম্যানেজারদের কাজই এখন থেকে মনিটরিং করবো। তোমার এতে চিন্তিত হবার কোন কারন নেই। এতে করে আমার নিজের কাজই শুধু বাড়বে তোমার কোন অসুবিধে হবেনা । আর মনে কোরোনা যে আমি শুধু শুধু তোমার কাজে নাক গলাতে চাইছি ।এটা একটা ম্যানেজমেন্ট ডিসিশান”।
রাতে বাড়ি ফেরার পর অনেকটা আগের দিনের মতই মনীষা দরজা খুলে আমার মুখ দেখেই বুঝতে পারলো যে আবার অফিসে কিছু একটা ঘটেছে ।ফলস্বরূপ আমাকে ওকে সব কিছু খুলে বলতে হল। ওকে বোললাম যে রবি আমাকে ওর চেম্বারে ডেকে কি কি বলেছে আর কি কারনে আমার মাথা এখোনো রাগে গন গন করছে ।
-“রাজীব তুমি কিন্তু বড় বেশি টেনশন নিচ্ছ ব্যাপারটায়।অফিস তো আর বাড়ি নয়, সেখানে অনেক সময়ই এই ধরনের ঘটনা ঘটে ।সেটা মেনে নেওয়াই ভাল।তবে তুমি যদি রাগ না কর তাহলে বলি আমার কিন্তু মনে হয় মিস্টার সহায় তোমার ওপর ছড়ি ঘোরাতে চাইছেননা, উনি তোমার কাজে তোমাকে সাহায্যই করতে চাইছেন।
মনীষা যে সম্পূর্ণ ঠিক কথা বলেছে সেটা বুঝতে পারলেও আমি কিন্তু মনে মনে বেশ একটু অসন্তুষ্টই হলাম।আমি ভেবেছিলাম অন্যসব বাপারের মত মনীষা আমাকে এব্যাপারেও সাপোর্ট করবে, আমার পাশে দাঁড়াবে, বলবে হ্যাঁ রবি সত্যিই বাড়াবাড়ি করছে ব্যাপারটা নিয়ে ।আশ্চর্যজনক ভাবে রবির সব কাজেই আজকাল ও রবিকে সাপোর্ট করা শুরু করেছে ।এই চিন্তাটা হটাত আমার মাথায় আসতেই রাগ আরো বেড়ে গেল আমার ।মনীষার উচিত ছিল আমার সাথে আজ এগ্রি করা যে আমার মত যোগ্য সিনিয়ার এমপ্লয়ীকে একটু স্বাধীনভাবেই আজ করতে দেওয়া উচিত, ও এইভাবে আমার সব কাজে নাক গলালে হিতে বিপরীত হয়ে যখন কম্পানির সেলস ফল করবে তখন বুঝবে কত ধানে কত চাল ।মনীষা এর আগে সব ব্যাপারে আমাকে সাপোর্ট করলেও আজ কেন এমন করছে বুঝলামনা ।
এর প্রায় দুমাস পর এমন একটা ঘটনা ঘটলো যে আমার মনে হল কিছু একটা ব্যাপার নিশ্চই আছে ।আমি আর মনীষা এক রাতে আমার এক অফিস কলিগের বাড়িতে তার একটা বার্থডে পার্টি অ্যাটেন্ড করতে গেছিলাম।এমনিতে টুপুর হবার পর মনীষাকে পার্টিতে যাওয়া একরকম প্রায় বন্ধ করে দিতে হয়েছিল ।যদিও আমরা চাইলে আমার বড় মেয়ে টাপুরের মত আমরা টুপুরকেও আমাদের দাদা বউদির কাছে রেখে বেরতে পারতাম ।ওঁদের ফ্ল্যাটটা আমাদের ফ্ল্যাটের একবারে তলায় ।আমরা দুই ভাই একসাথেই ফ্ল্যাট কিনেছিলাম ।দাদা বউদির কোন সন্তান নেই।টাপুরতো একরকম ওদের কাছেই মানুষ হচ্ছে ।লোকে দেখে ভাবে টাপুর আমার নয় ওদেরই সন্তান ।টাপুরকে পেয়ে ওরা যেন নতুন করে বাঁচার রসদ পেয়ে গেছে ।আর টুপুর হবার পরতো ওদের আনন্দ প্রায় দিগুন হয়ে গেছে ।সকাল থেকে রাত পর্যন্ত এই দুজনকে নিয়েই সময় কাটে ওদের।
কিন্তু দাদা সবে ভি-আর-এস নিয়েছেন আর বউদিরও বয়েস হচ্ছে।পাঁচ বছরের টাপুরকে সামলানো আর দেড় বছরের বাচ্চা সামলানো তো আর এক কথা নয় ।তাই আমরা একটা দিন রাতের আয়া খুঁজছিলাম।দাদা বউদি বলেছিলেন কি দরকার খরচ বাড়ানোর আমরা তো আছি ।কিন্তু আমি মনীষাকে বললাম দেখ একটা দিন রাতের আয়া পেলে তোমাদের সকলেরই একটু রিলিফ হয়ে যাবে ।অনেক খোঁজার পর দুদিন আগে একটা দিন রাতের আয়া পেয়ে গিয়েছিলাম আমরা।ভদ্রমহিলার বয়েস প্রায় পঞ্চাশ পঞ্চান্ন হবে কিন্তু খুব কাজের আর বাচ্চা সামলাতে একবারে এক্সপার্ট।ওদের হাতে টাপুর টুপুর কে ছেড়ে অনেক দিন পর পার্টিটা অ্যাটেন্ড করতে পেরেছিলাম আমরা।
যাই হোক সেদিন পার্টিতে রাত প্রায় বারটা বেজে গিয়েছিল ।আমার পরের দিন অফিস ছিল বলে আমি একটু তাড়াতাড়ি কেটে পরার তাল করছিলাম ।হাতে একটা হার্ড ড্রিংকের গ্লাস নিয়ে এদিক ওদিক উদ্দেশ্যহীন ভাবে ঘুরছিলাম পার্টির মধ্যে ।ভাবছিলাম ভিড় একটু পাতলা হলেই টুক করে সরে পড়তে হবে ।রাত প্রায় সাড়ে বারটা নাগাদ ভিড় একটু পাতলা হতেই ভাবলাম মনীষাকে গিয়ে বলি যে চল এবার আস্তে আস্তে সরে পরি ।মনীষাকে প্রথমে খুঁজে পাচ্ছিলামনা ।তারপর দেখলাম ও গার্ডেনে আমার এক অফিস কলিগের বউ নিশার সাথে গল্প করছে ।আমি সোজা ওর দিকে এগিয়ে গেলাম।গার্ডেনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে এক একটা ছোটো ছোটো জটলাতে জোর আড্ডা আর পরনিন্দা আর পরচর্চা চলছে।পুরো গার্ডেনটাই আলো দিয়ে ভীষণ সুন্দর করে সাজানো ।ভিড় একটু পাতলা হয়ে গেলেও এখনো অনেক লোক ছিল পার্টিতে।মনীষা আর নিশা পাশাপাশি দাঁড়িয়ে গল্প করছিল ।ওদের পেছনটা আমার দিকে থাকায় ওরা আমাকে দেখতে পায়নি ।তাছাড়া ওরা এত মগ্ন হয়ে গল্প আর হাঁসাহাসি করে যাচ্ছিল যে চারপাশে কি হচ্ছে সেই ব্যাপারে ওদের কোন হুঁস ছিলনা ।কি এত গল্প করছে ওরা? এমনিতে নিশা মুখে প্রকাশ না করলেও মনীষাকে মনে মনে বেশ হিংসা করে ।কারন অনেকটা বিদ্যা বালানের মত দেখতে সুন্দরী আমার বউকে ওর বর মানে আমার কলিগ খুব পছন্দ করে।মনীষার রান্না, ওর ঘর সাজান, সব কিছুই তার খুব পছন্দ ।মনীষাকে দেখতে পেলেই ও মনীষার সাথে খুনসুটি শুরু করে ।আজও করেছে।
নিশাও দেখতে খুব সুন্দরী। কিন্তু সুন্দরী হলেও আমি কিন্তু ওকে একদম পছন্দ করিনা ।এর কারন ওর স্বভাব চরিত্র খুব একটা ভাল নয় আর ও যা মুখে আসে তাই বলে দেয়।নিশার মুখের কোন বাঁধন নেই ।এমন কি গুরু লঘু কোন জ্ঞানও নেই।ওর কথা বলার স্টাইল অনেকটা ষোল সতেরো বছরের ডেঁপো ছেলেদের মতন।
আমি মনীষাকে ডাকতে যাব এমন সময় ওদের একটা কথা আমার কানে এল ।কথাটা শুনে আমি ফ্রিজ হয়ে গেলাম ।এসব কি বলছে ওরা ?ওদের ডিস্টার্ব না করে টুক করে ওদের পেছনে একটা ছোট জটলার পাশে এমন ভাবে দাঁড়ালাম যাতে ওদের সব কথা শুনতে পেলেও ওরা আমাকে দেখতে না পারে।নিশা বললো
-“বুঝতেই পারছি লোকটাকে তোর খুব মনে ধরেছে”।
এই বলে নিশা মনীষার হাতে ছোটো করে একটা খিমচি কেটে দিল।
-“ধুত বাজে বকিসনা তো।ওফ সত্যি তোকে কোন কথা বলা নয়।বললেই শুরু হয়ে যাবি”।
কোন লোকটার কথা বলছে ওরা? আমি একটু এদিক ওদিক তাকিয়ে খুঁজতে চেষ্টা করলাম কার কথা বোলছে ওরা… কিন্তু পেলামনা।
-“মিথ্যে বলিসনা তুই মনীষা, তুই যখন ওর কথা বলছিলি তখন তোর মুখ দেখেই বোঝা যাচ্ছিল যে তুই লোকটার প্রেমে পরেছিস”।
-“কি যে আজে বাজে কথা বলিসনা তুই।জানিস রাজীব ওকে একদম দেখতে পারেনা”।
-“আমি রাজীব কে দোষ দিতে পারিনা।বিশেষ করে আমার বউ যদি আমার বসের প্রেমে পড়তো তাহলে আমিও তাকে দুচোখে দেখতে পারতামনা”।
-“আবার বাজে কথা বলছিস?আমি মোটেই মিস্টার সহায়ের প্রেমে পরিনি”।
-“পরেছিস বাবা পরেছিস।ওর মত সেক্সি আর হ্যান্ডসাম দেখতে পুরুষের প্রেমে কেই বা না পরে?তোর কোন দোষ নেই এতে।এটা স্বাভাবিক”।
-“তুই বড্ড বাজে ইয়ার্কি করিস নিশা ।প্রায় দশ বছর হয়ে গেল আমার আর রাজীবের বিয়ের আর আমি এখন প্রেমে পরবো।আমি কি পাগল”?
-“কেন বিয়ে করলে প্রেমে পরা যায়না বুঝি।প্রেমে পরবি, লাগাবি, বুকের দুধ খাওয়াবি, সব করতে পারবি ।শুধু তোর বর না জানলেই হল ।হিহিহিহি”
-“ধ্যাত বাজে বকিসনা তো।তুই গিয়ে দুধ খাওয়াগে যা ।যত সব নোংরা নোংরা কথা তোর”।
-“কেন এতে নোংরার কি আছে?আমিও খাওয়াই তো।আমার বুকের দুধ তো বাড়ির সকলেই খায়।বাচ্চা খায়, বাচ্ছার বাবা খায়, বাচ্ছার কাকা খায় ।আমার সাথে আমার দেওরের ইন্টুমিন্টুর ব্যাপারটাতো তুই জানিস।যাকে বলে একবারে ফুল ফ্যামিলি নরিসমেন্ট এর দায়িত্ব আমার ওপর হি হি হি”।
-“ইশ নিশা তুইনা ।আমি শুধু বললাম মিস্টার সহায় খুব স্মার্ট, ওঁকে দেখতে খুব হ্যান্ডসাম আর সেক্সি।আর তুই কি কথা থেকে কি কথা শুরু করলি ।নাঃ আজ আর তোর সঙ্গে মস্করা করে আমার কাজ নেই।চল অনেক রাত হয়েছে, তাড়াতাড়ি বাড়ি যেতে হবে, কাল রাজীবের অফিস আছে”।
আমি চট করে সরে পরলাম ওখান থেকে।রাতে গাড়ি চালিয়ে বাড়ি ফেরার সময় আমি মনে মনে ভাবছিলাম কি আশ্চর্য এই মেয়ে মানুষের মন।সেদিন মলে মাত্র পাঁচ মিনিট কথা বলেছে রবি আমাদের সঙ্গে, আর এর মধ্যেই মনীষার মত কনজারভেটিভ মেয়ের ওকে শুধু হান্ডসাম আর সেক্সিই নয় ভীষণ স্মার্টও মনে হল। “স্ট্রেন্জ”ভাবলাম আমি।তারপরেই গত কয়েকদিনের ঘটনার কথা এক এক করে মনে পরতে থাকলো আমার।মনে পরলো কিভাবে মনীষা গত কয়েক মাস ধরেই সব ব্যাপারেই রবিকে সমর্থন করছিল।মনে পরলো সেদিন মলে মনীষা কি ভাবে একদিন রবিকে আমাদের বাড়িতে নেমন্তন্ন করতে বায়না শুরু করেছিল।এসব ভাবতেই বুকের ভেতরটা সেদিনকার মত কেমন যেন জ্বালা জ্বালা করতে শুরু করলো আমার।
-“রাজীব আমি এখন তোমার কাজে মোটামুটি ভাবে খুশি । তুমি যেভাবে তোমার কাজ করছ আর তোমার ক্লায়েন্টদের সামলাচ্ছ তাতে আমার আর অসন্তুষ্ট হবার কোন কারন নেই । তোমার ক্লায়েন্টদের নিয়ে যা সমস্যা ছিল মনে হচ্ছে সেগুলো মিটে গেছে । এখন আর কারুর কোন সমস্যা নেই”।
-“একটা কথা বলি রবি কিছু মনে করোনা, আমার কিন্তু কোনদিনই মনে হয়নি যে আমার ক্লায়েন্টদের সত্যি সত্যি মেজর কোন অভিযোগ বা সমস্যা ছিল”।
আমার কথা শুনে প্রচণ্ড একটা বিরক্তির ভাব ফুটে উঠলো রবির মুখে । যা দেখে আমার মনে হল এই ধরনের কথা বোধহয় না বললেই ভাল হত।
-“দেখ রাজীব আমি তোমাকে আমার চেম্বারে ডেকেছি শুধু এই টুকু বলতে যে তোমাকে আর তোমার সমস্ত কনট্রাক্ট পেপার কোথাও পাঠাবার আগে আমার কাছে পাঠানোর দরকার নেই।কিন্তু এখন থেকে আমি চাই যে তুমি যেসমস্ত নতুন ক্লায়েন্টদের নিয়ে কাজ করছো তাদের সব ব্যাপারে আমাকে ইনভল্ব কর”।
-“জানতে পারি কেন”?
-“দেখ আমরা ম্যানেজমেন্ট থেকে ঠিক করেছি আমাদের বিজনেসের ওপর আমাদের মানে ম্যানেজমেন্টের আরো কন্ট্রোল থাকা উচিত । তাই এখন থেকে আমি আমাদের অফিসের সমস্ত বড় বড় কনট্রাক্টের ব্যাপারে নিজেকে ইনভল্ব রাখতে চাই । ম্যানেজমেন্টের ইনস্ট্রাকশান অনুযায়ী আমাকে দেখতে হবে যে আমাদের সমস্ত ক্লায়েন্টরা আমাদের কাছ থেকে একদম সঠিক সার্ভিস পাচ্ছে কিনা”?
-“হ্যাঁ কিন্তু অফিসে তো আমার মত আরো সেলস ম্যানেজার আছে… শুধু আমাকেই বা আতস কঁচের তলায় ফেলা হচ্ছে কেন”?
-“শুধু তুমি নও রাজীব, আমি সমস্ত সেলস ম্যানেজারদের কাজই এখন থেকে মনিটরিং করবো। তোমার এতে চিন্তিত হবার কোন কারন নেই। এতে করে আমার নিজের কাজই শুধু বাড়বে তোমার কোন অসুবিধে হবেনা । আর মনে কোরোনা যে আমি শুধু শুধু তোমার কাজে নাক গলাতে চাইছি ।এটা একটা ম্যানেজমেন্ট ডিসিশান”।
রাতে বাড়ি ফেরার পর অনেকটা আগের দিনের মতই মনীষা দরজা খুলে আমার মুখ দেখেই বুঝতে পারলো যে আবার অফিসে কিছু একটা ঘটেছে ।ফলস্বরূপ আমাকে ওকে সব কিছু খুলে বলতে হল। ওকে বোললাম যে রবি আমাকে ওর চেম্বারে ডেকে কি কি বলেছে আর কি কারনে আমার মাথা এখোনো রাগে গন গন করছে ।
-“রাজীব তুমি কিন্তু বড় বেশি টেনশন নিচ্ছ ব্যাপারটায়।অফিস তো আর বাড়ি নয়, সেখানে অনেক সময়ই এই ধরনের ঘটনা ঘটে ।সেটা মেনে নেওয়াই ভাল।তবে তুমি যদি রাগ না কর তাহলে বলি আমার কিন্তু মনে হয় মিস্টার সহায় তোমার ওপর ছড়ি ঘোরাতে চাইছেননা, উনি তোমার কাজে তোমাকে সাহায্যই করতে চাইছেন।
মনীষা যে সম্পূর্ণ ঠিক কথা বলেছে সেটা বুঝতে পারলেও আমি কিন্তু মনে মনে বেশ একটু অসন্তুষ্টই হলাম।আমি ভেবেছিলাম অন্যসব বাপারের মত মনীষা আমাকে এব্যাপারেও সাপোর্ট করবে, আমার পাশে দাঁড়াবে, বলবে হ্যাঁ রবি সত্যিই বাড়াবাড়ি করছে ব্যাপারটা নিয়ে ।আশ্চর্যজনক ভাবে রবির সব কাজেই আজকাল ও রবিকে সাপোর্ট করা শুরু করেছে ।এই চিন্তাটা হটাত আমার মাথায় আসতেই রাগ আরো বেড়ে গেল আমার ।মনীষার উচিত ছিল আমার সাথে আজ এগ্রি করা যে আমার মত যোগ্য সিনিয়ার এমপ্লয়ীকে একটু স্বাধীনভাবেই আজ করতে দেওয়া উচিত, ও এইভাবে আমার সব কাজে নাক গলালে হিতে বিপরীত হয়ে যখন কম্পানির সেলস ফল করবে তখন বুঝবে কত ধানে কত চাল ।মনীষা এর আগে সব ব্যাপারে আমাকে সাপোর্ট করলেও আজ কেন এমন করছে বুঝলামনা ।
এর প্রায় দুমাস পর এমন একটা ঘটনা ঘটলো যে আমার মনে হল কিছু একটা ব্যাপার নিশ্চই আছে ।আমি আর মনীষা এক রাতে আমার এক অফিস কলিগের বাড়িতে তার একটা বার্থডে পার্টি অ্যাটেন্ড করতে গেছিলাম।এমনিতে টুপুর হবার পর মনীষাকে পার্টিতে যাওয়া একরকম প্রায় বন্ধ করে দিতে হয়েছিল ।যদিও আমরা চাইলে আমার বড় মেয়ে টাপুরের মত আমরা টুপুরকেও আমাদের দাদা বউদির কাছে রেখে বেরতে পারতাম ।ওঁদের ফ্ল্যাটটা আমাদের ফ্ল্যাটের একবারে তলায় ।আমরা দুই ভাই একসাথেই ফ্ল্যাট কিনেছিলাম ।দাদা বউদির কোন সন্তান নেই।টাপুরতো একরকম ওদের কাছেই মানুষ হচ্ছে ।লোকে দেখে ভাবে টাপুর আমার নয় ওদেরই সন্তান ।টাপুরকে পেয়ে ওরা যেন নতুন করে বাঁচার রসদ পেয়ে গেছে ।আর টুপুর হবার পরতো ওদের আনন্দ প্রায় দিগুন হয়ে গেছে ।সকাল থেকে রাত পর্যন্ত এই দুজনকে নিয়েই সময় কাটে ওদের।
কিন্তু দাদা সবে ভি-আর-এস নিয়েছেন আর বউদিরও বয়েস হচ্ছে।পাঁচ বছরের টাপুরকে সামলানো আর দেড় বছরের বাচ্চা সামলানো তো আর এক কথা নয় ।তাই আমরা একটা দিন রাতের আয়া খুঁজছিলাম।দাদা বউদি বলেছিলেন কি দরকার খরচ বাড়ানোর আমরা তো আছি ।কিন্তু আমি মনীষাকে বললাম দেখ একটা দিন রাতের আয়া পেলে তোমাদের সকলেরই একটু রিলিফ হয়ে যাবে ।অনেক খোঁজার পর দুদিন আগে একটা দিন রাতের আয়া পেয়ে গিয়েছিলাম আমরা।ভদ্রমহিলার বয়েস প্রায় পঞ্চাশ পঞ্চান্ন হবে কিন্তু খুব কাজের আর বাচ্চা সামলাতে একবারে এক্সপার্ট।ওদের হাতে টাপুর টুপুর কে ছেড়ে অনেক দিন পর পার্টিটা অ্যাটেন্ড করতে পেরেছিলাম আমরা।
যাই হোক সেদিন পার্টিতে রাত প্রায় বারটা বেজে গিয়েছিল ।আমার পরের দিন অফিস ছিল বলে আমি একটু তাড়াতাড়ি কেটে পরার তাল করছিলাম ।হাতে একটা হার্ড ড্রিংকের গ্লাস নিয়ে এদিক ওদিক উদ্দেশ্যহীন ভাবে ঘুরছিলাম পার্টির মধ্যে ।ভাবছিলাম ভিড় একটু পাতলা হলেই টুক করে সরে পড়তে হবে ।রাত প্রায় সাড়ে বারটা নাগাদ ভিড় একটু পাতলা হতেই ভাবলাম মনীষাকে গিয়ে বলি যে চল এবার আস্তে আস্তে সরে পরি ।মনীষাকে প্রথমে খুঁজে পাচ্ছিলামনা ।তারপর দেখলাম ও গার্ডেনে আমার এক অফিস কলিগের বউ নিশার সাথে গল্প করছে ।আমি সোজা ওর দিকে এগিয়ে গেলাম।গার্ডেনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে এক একটা ছোটো ছোটো জটলাতে জোর আড্ডা আর পরনিন্দা আর পরচর্চা চলছে।পুরো গার্ডেনটাই আলো দিয়ে ভীষণ সুন্দর করে সাজানো ।ভিড় একটু পাতলা হয়ে গেলেও এখনো অনেক লোক ছিল পার্টিতে।মনীষা আর নিশা পাশাপাশি দাঁড়িয়ে গল্প করছিল ।ওদের পেছনটা আমার দিকে থাকায় ওরা আমাকে দেখতে পায়নি ।তাছাড়া ওরা এত মগ্ন হয়ে গল্প আর হাঁসাহাসি করে যাচ্ছিল যে চারপাশে কি হচ্ছে সেই ব্যাপারে ওদের কোন হুঁস ছিলনা ।কি এত গল্প করছে ওরা? এমনিতে নিশা মুখে প্রকাশ না করলেও মনীষাকে মনে মনে বেশ হিংসা করে ।কারন অনেকটা বিদ্যা বালানের মত দেখতে সুন্দরী আমার বউকে ওর বর মানে আমার কলিগ খুব পছন্দ করে।মনীষার রান্না, ওর ঘর সাজান, সব কিছুই তার খুব পছন্দ ।মনীষাকে দেখতে পেলেই ও মনীষার সাথে খুনসুটি শুরু করে ।আজও করেছে।
নিশাও দেখতে খুব সুন্দরী। কিন্তু সুন্দরী হলেও আমি কিন্তু ওকে একদম পছন্দ করিনা ।এর কারন ওর স্বভাব চরিত্র খুব একটা ভাল নয় আর ও যা মুখে আসে তাই বলে দেয়।নিশার মুখের কোন বাঁধন নেই ।এমন কি গুরু লঘু কোন জ্ঞানও নেই।ওর কথা বলার স্টাইল অনেকটা ষোল সতেরো বছরের ডেঁপো ছেলেদের মতন।
আমি মনীষাকে ডাকতে যাব এমন সময় ওদের একটা কথা আমার কানে এল ।কথাটা শুনে আমি ফ্রিজ হয়ে গেলাম ।এসব কি বলছে ওরা ?ওদের ডিস্টার্ব না করে টুক করে ওদের পেছনে একটা ছোট জটলার পাশে এমন ভাবে দাঁড়ালাম যাতে ওদের সব কথা শুনতে পেলেও ওরা আমাকে দেখতে না পারে।নিশা বললো
-“বুঝতেই পারছি লোকটাকে তোর খুব মনে ধরেছে”।
এই বলে নিশা মনীষার হাতে ছোটো করে একটা খিমচি কেটে দিল।
-“ধুত বাজে বকিসনা তো।ওফ সত্যি তোকে কোন কথা বলা নয়।বললেই শুরু হয়ে যাবি”।
কোন লোকটার কথা বলছে ওরা? আমি একটু এদিক ওদিক তাকিয়ে খুঁজতে চেষ্টা করলাম কার কথা বোলছে ওরা… কিন্তু পেলামনা।
-“মিথ্যে বলিসনা তুই মনীষা, তুই যখন ওর কথা বলছিলি তখন তোর মুখ দেখেই বোঝা যাচ্ছিল যে তুই লোকটার প্রেমে পরেছিস”।
-“কি যে আজে বাজে কথা বলিসনা তুই।জানিস রাজীব ওকে একদম দেখতে পারেনা”।
-“আমি রাজীব কে দোষ দিতে পারিনা।বিশেষ করে আমার বউ যদি আমার বসের প্রেমে পড়তো তাহলে আমিও তাকে দুচোখে দেখতে পারতামনা”।
-“আবার বাজে কথা বলছিস?আমি মোটেই মিস্টার সহায়ের প্রেমে পরিনি”।
-“পরেছিস বাবা পরেছিস।ওর মত সেক্সি আর হ্যান্ডসাম দেখতে পুরুষের প্রেমে কেই বা না পরে?তোর কোন দোষ নেই এতে।এটা স্বাভাবিক”।
-“তুই বড্ড বাজে ইয়ার্কি করিস নিশা ।প্রায় দশ বছর হয়ে গেল আমার আর রাজীবের বিয়ের আর আমি এখন প্রেমে পরবো।আমি কি পাগল”?
-“কেন বিয়ে করলে প্রেমে পরা যায়না বুঝি।প্রেমে পরবি, লাগাবি, বুকের দুধ খাওয়াবি, সব করতে পারবি ।শুধু তোর বর না জানলেই হল ।হিহিহিহি”
-“ধ্যাত বাজে বকিসনা তো।তুই গিয়ে দুধ খাওয়াগে যা ।যত সব নোংরা নোংরা কথা তোর”।
-“কেন এতে নোংরার কি আছে?আমিও খাওয়াই তো।আমার বুকের দুধ তো বাড়ির সকলেই খায়।বাচ্চা খায়, বাচ্ছার বাবা খায়, বাচ্ছার কাকা খায় ।আমার সাথে আমার দেওরের ইন্টুমিন্টুর ব্যাপারটাতো তুই জানিস।যাকে বলে একবারে ফুল ফ্যামিলি নরিসমেন্ট এর দায়িত্ব আমার ওপর হি হি হি”।
-“ইশ নিশা তুইনা ।আমি শুধু বললাম মিস্টার সহায় খুব স্মার্ট, ওঁকে দেখতে খুব হ্যান্ডসাম আর সেক্সি।আর তুই কি কথা থেকে কি কথা শুরু করলি ।নাঃ আজ আর তোর সঙ্গে মস্করা করে আমার কাজ নেই।চল অনেক রাত হয়েছে, তাড়াতাড়ি বাড়ি যেতে হবে, কাল রাজীবের অফিস আছে”।
আমি চট করে সরে পরলাম ওখান থেকে।রাতে গাড়ি চালিয়ে বাড়ি ফেরার সময় আমি মনে মনে ভাবছিলাম কি আশ্চর্য এই মেয়ে মানুষের মন।সেদিন মলে মাত্র পাঁচ মিনিট কথা বলেছে রবি আমাদের সঙ্গে, আর এর মধ্যেই মনীষার মত কনজারভেটিভ মেয়ের ওকে শুধু হান্ডসাম আর সেক্সিই নয় ভীষণ স্মার্টও মনে হল। “স্ট্রেন্জ”ভাবলাম আমি।তারপরেই গত কয়েকদিনের ঘটনার কথা এক এক করে মনে পরতে থাকলো আমার।মনে পরলো কিভাবে মনীষা গত কয়েক মাস ধরেই সব ব্যাপারেই রবিকে সমর্থন করছিল।মনে পরলো সেদিন মলে মনীষা কি ভাবে একদিন রবিকে আমাদের বাড়িতে নেমন্তন্ন করতে বায়না শুরু করেছিল।এসব ভাবতেই বুকের ভেতরটা সেদিনকার মত কেমন যেন জ্বালা জ্বালা করতে শুরু করলো আমার।