Thread Rating:
  • 46 Vote(s) - 3.2 Average
  • 1
  • 2
  • 3
  • 4
  • 5
Adultery আগুণের পরশমণি;কামদেব
ত্রয়োবিংশতি পরিচ্ছেদ



কলেজ ছুটির পর বাস স্টপেজে এসে দাড়ালো ইলিনা ব্রাউন।ছুটির পর বাসায় ফেরার জন্য অন্যান্যদের মত তাড়া নেই।বিয়ে না হোক কিছু একটা করা দরকার এভাবে অলস জীবন যাপন পছন্দ নয়।শাড়ীতে টান পড়তে তাকিয়ে দেখল খালি গা নাদুস নুদুস একটি ছেলে হাত পেতে দাড়িয়ে।মুখে কিছু না বললেও করুন নজর দেখে বোঝা যায় কিছু পয়সা চাইছে।কতই বা বয়স নয়-দশ হবে,এই বয়সে বই খাতা নিয়ে স্কুলে যাবার কথা।ইলিনার খুব মায়া হয় ব্যাগ হতে একটা টাকা বের করে জিজ্ঞেস করল,তোমার পড়তে ইচ্ছে হয়না?
ছেলেটি পিট পিট করে তাকায়,কিছু বোঝার আগেই হাতের টাকাটা ছো-মেরে নিয়ে নিমেষে উধাও হল।
পাশ থেকে একজন ফুট কাটল,পড়াশুনা করবে তালেই হয়েছে।এভাবেই ওদের উপার্জন শুনলে চমকে যাবেন।
বাস আসতে উঠে পড়ল।লেডিস সিট খালি দেখে বসে পড়ে।একটু আগের ঘটনা নিয়ে মনের মধ্যে আনাগোনা করে। পড়াশুনা কেবল উপার্জনের জন্য? 
বৃহন্নলাদের জীবন সত্য--বইটা পড়ে হিজরেদের সম্পর্কে অনেক নতুন তথ্য জানা গেল।এদের দেখলে ঘেন্নায় মুখ ফিরিয়ে নিই ওদের নিয়ে মজা করি কিন্তু ওদের জীবনের ট্র্যজেডি সম্পর্কে কতটুকু জানি। পিকলুদের  আসার সময় হয়ে এসেছে।বইটা আরণ্যক ভিতরে ঢুকিয়ে রাখল।ওরা দেখলে কি বই, কি আছে এতে, এসব জেনে কি হবে নানা প্রশ্নের জবাব দিতে হবে।
কাল বেশ ভালই খাওয়া দাওয়া হয়েছে।হোটেলে খেতে খেতে অরুচি এসে গেছিল।ঝর্ণাদির কাজ শেষ হলে দেখা করে এসেছে।তুই ওর ব্যবহারে কিছু মনে করিস না।একথা কেন বলল?মি.বসুর কথা কি?কিন্তু ওনার সঙ্গে তো বেশী কথা হয়নি আর যখন কথা হয়েছে দিদি তখন মন্ত্রপাঠে ব্যস্ত ছিল।
কিরে  কাল খুব সাটিয়েছিস?মান্তু এসে বলল।
আরণ্যক অবাক হয় মান্তু কিকরে জানল? হেসে বলল,তুই কিকরে জানলি?
মান্তু গর্বের ভঙ্গীতে ঘাড় নেড়ে বলল,এলাকায় সব খবর এ মিঞার নখ দর্পণে।
একটা কথা মনে হতে আরণ্যকের মজা লাগ বলে,তুই তো হেল্থ ডিপার্টমেণ্টে আছিস অন্য খবর কি করে পাস?
মান্তু ইঙ্গিতটা বুঝে গম্ভীর হয়ে গেল।একটু দম নিয়ে বলল,দ্যাখ রনো তোকে বিশ্বাস করি বলেই বলছি।পিকলু যা করছে সেটা ঠিক হচ্ছে না।আরে বাবা আমরা নীচু তলার কর্মী আমাদের ক্ষমতা কতটুকু?কালাবাবু কোথায় কি করছে পার্টি জানেনা ভেবেছিস?বিশ্বাসদের ভাড়াটে তুলতে কারা বোমাবাজী করল পুলিশ সব জেনেও কেন হাত গুটিয়ে বসে থাকল পার্টির কি কিছু করার ছিলনা?মানুষ ঘাসে মুখ দিয়ে চলেনা সব দেখছে যা করার একদিন মানুষই করবে।
কথাগুলো শুনতে শুনতে মান্তুকে আরণ্যক যেন নতুন করে চিনছে।চোখের দেখায় মানুষকে চেনা যায়না।ইলিনা ব্রাউনকে পাড়ায় ঢুকতে দেখে পরস্পর চোখাচুখি হয়।মান্তু বলল,ওরা আসছে তুই আবার ওদের এসব বলতে যাস না।
তোদের পার্টির ব্যাপারে আমি কেন বলতে যাব?
এত সুন্দর হ্যাণ্ডসাম রোজ যাতায়াতের পথে দোকানে বসে থাকতে দেখে ইলিনা ভাবে এখানে কত টাকা ইনকাম হতে পারে?অন্য কোনো কাজ তো করতে পারে। দোকানে বসে কখনো বই পড়ছে কখনো লেখালিখি করছে তাতে মনে হয় লেখাপড়াও কিছু করেছে।যৌবনের এই অপচয় ইলিনার খারাপ লাগে।অবশ্য সবকিছু তার মনের মত হবে তার মানে নেই আর খারাপ লাগলেও সেইবা কি করতে পারে।কেন দোকানে কাজ করে অন্য কিছুইবা করেনা কেন বাইরে থেকে দেখে বোঝা যায় না।সেও তো একসময় ভেবেছিল অক্সফোর্ডে গিয়ে পড়াশোনা করবে এতদূরে গিয়ে কলেজে অধ্যাপনা করতে হবে কখনো ভেবেছিল?পরিস্থিতি কাকে যে কোথা থেকে কোথায় নিয়ে যাবে--।মোবাইল বাজতে দেখল অকিনা।বোধহয় কিছু নিয়ে যেতে বলবে।ফ্লাটের কাছে এসে গেছে ইলিনা ফোন কেটে দিল। সিড়ি বেয়ে তিন তলায় উঠে বেল টিপল।
অকিনা দরজা খুলে কান্না জড়িত গলায় বলল,মেমসাব সর্বনাশ হয়ে গেছে।
ইলিনা ভিতরে ঢুকে দেখল মাম্মী মেঝেতে পড়ে আছে।জিজ্ঞেস করে,কি করে হল?
মালকিন ঘুম থেকে উঠে বারান্দায় যেতে গিয়ে মাথা ঘুরে পড়ে গেল।কত ডাকছি সাড়া নেই।
ইলিনা নীচু হয়ে নাকের নীচে হাত রেখে বোঝার চেষ্টা করে।বলল,আমি এখুনি ডাক্তার ডেকে আনছি।
ব্যাগ রেখে দ্রুত নীচে নেমে এল।রাস্তায় নেমে খেয়াল হয় সেতো এখানকার কিছুই চেনেনা কোথায় খুজবে ডাক্তার?রাস্তার দু-পাশ দেখতে দেখতে হাটতে থাকে।এই বয়সে এত নেশা করলে সহ্য হবে কেন?একটা নির্মীয়মান বাড়ীর নীচে মজুরদের সঙ্গে কথা বলছিল বীরেন সামন্ত।সুপমার মামা মি.সামন্ত না?ইলিনা দ্রুত গিয়ে বলল,আঙ্কেল আমার মাম্মী পড়ে গিয়ে জ্ঞান হারিয়েছে ডাক্তার কোথায় পাবো?
বীরু সামন্ত চিনতে পেরে বলল,ডাক্তার তো আছে কিন্তু একটা কথা বলব?বয়স হয়েছে সেন্স ণেই স্যালাইন অক্সিজেন দিতে হতে পারে তুমি বরং এ্যাম্বুলেন্সে কাছকাছি কোনো নার্সিং হোমে নিয়ে যাও।
কথাটা ইলিনার ভাল লাগে বলল,আমি তো কিছুই চিনিনা এ্যাম্বুলেন্স কোথায়--।
তোমাকে কিছু চিনতে হবেনা।বাসায় গিয়ে পেশেণ্টকে রেডি করো এ্যাম্বুলেন্স পৌছে যাবে।
থ্যাঙ্ক ইউ আঙ্কেল।ইলিনা ফ্লাটে ফিরে এসে একটা ব্যাগে বেশকিছু টাকা ভরে নিয়ে অপেক্ষা করতে থাকে।সময় যেন ধীরগতিতে এগোচ্ছে।মাম্মী আবার চোখ মেলে তাকাবে তো?আবোলতাবোল ভাবনা মাথায় বিজকুড়ি কাটে।অকিনা এককাপ চা এগিয়ে দিল।দশ-বারো মিনিট হয়ে গেল চিন্তিত মনে চায়ে চুমুক দিতে থাকে ইলিনা।কিছুক্ষণ পর কলিং বেল বাজতে অকিনা দরজা খুলে দিতে দুটি লোক স্ট্রেচার নিয়ে ঢুকে জিজ্ঞেস করে,পেশেণ্ট কই?
পাজাকোলা করে সাওনি ব্রাউনকে স্ট্রেচারে তুলে নিয়ে গেল।অকিনাকে সাবধানে থাকতে বলে ইলিনাও বেরিয়ে গেল।
ইলিনা উঠে বসতে এ্যাম্বুলেন্স চলতে শুরু করল।ইলিনা বলল,ভাই কাছাকাছি কি নার্সিং হোম আছে?
সাহেব বলেছে রোজ ভ্যালিতে নিয়ে যেতে।
মি.সামন্ত সব ঠিক করে দিয়েছে ইলিনা বুঝতে পারে।ভাগ্যিস সামন্তর সঙ্গে দেখা হয়েছিল নাহলে কি  হতো ভেবে শিউরে ওঠে।
নার্সিং হোম পৌছে পেশেণ্টকে বেড-এ দেওয়া হল।ওদের নির্দেশমত ক্যাশ কাউণ্টারে গিয়ে আপাতত দশ হাজার ডিপোজিট করতে হল।বাকী হিসেব ডিসচার্জের সময় হবে।টাকা মিটিয়ে একটা বেঞ্চে বসে অপেক্ষা কোরতে থাকে।সেই সকালে কলেজ যাবার আগে খেয়ে বেরিয়েছিল কলেজে গিয়ে সামান্য টিফিন আর চা আর বাসায় ফিরে এক কাপ চা ছাড়া কিছুই খায়নি।এখান থেকে বেরিয়ে কিছু খেয়ে আসবে ইচ্ছে হচ্ছে না।ভালয় ভালয় মাম্মীকে নিয়ে বাসায় ফিরতে পারলে শান্তি।ইলিনা মনে মনে স্থির করে একেবারে বন্ধ নয় তবে নেশা কমাতে হবে।এবার পাড়ায় একটু মেলামেশা করা দরকার।একেবারে বিচ্ছিন্ন হয়ে সমাজে থাকা যায় না।
একটি নার্স এসে বলল,আপনি এখানে
আমার পেশেণ্ট আছে মিসেস ব্রাউন।
কটা বাজে দেখেছেন?এত রাত অরবধি এখানে থাকার নিয়ম ণেই।
ইলিনা ঘড়ি দেখল ঘড়ির কাটা দশটা পেরিয়ে গেছে।জিজ্ঞেস করল,মিসেস ব্রাউন কেমন আছে?
স্যলাইন চলছে।চব্বিশ ঘণ্টা না কাটলে কিছু বলা যাচ্ছেনা।আচ্ছা উনি কি ড্রিঙ্ক করেন?
ইলিনার মুখে কথা জোগায় না, দৃষ্টি নামিয়ে নিল।
হুউম লিভারটা একেবারে ড্যামেজড।
আমি একটু দেখতে পারি?
সেটা কিকরে সম্ভব উনি এখন আইসিইউতে আছেন।আপনি কাল সকালে আসুন।   
বাসায় ফিরলে অকিনা জিজ্ঞেস করে,মেমসাব মালকিন কেমন আছে?
আছে একরকম।তুমি খেয়েছো?
এইবার খাব।মেমসাব আপনাকে খেতে দিই?
আমাকে?না থাক আমার খেতে ইচ্ছে করছে না।পারলে আমাকে এক কাপ চা করে দাও।
ইলিনা পোশাক বদলে ব্যালকনিতে গিয়ে ইজি চেয়ারে গা এলিয়ে দিল।হেটে এসেছে সারাটা পথ বেশ ক্লান্ত বোধ হয়। মাথার উপর তারা ঝলমল বিশাল আকাশ।নিজেকে খুব নিঃসঙ্গ মনে হয়।মামনের কথা মনে পড়ল।কোথায় আছে কে জানে।অনিকা চা দিয়ে দাড়িয়ে থাকে।
চায়ের কাপ নিয়ে বলল,কিছু বলবে?
মেমসাব অত চিন্তা করবেন দেখবেন মালকিন ভাল হয়ে যাবে।
শুকনো হাসি খেলে গেল ইলিনার ঠোটে বলল,রাত হয়েছে তুমি খেয়ে নেও।
ঘুমোতে ইচ্ছে করছে না।কয়েক ঘণ্টা পর সকাল হয়ে যাবে।কাল কলেজ যাওয়ার প্রশ্নই নেই।সকালে স্নান করেই বেরিয়ে যাবে।সব কিছুর একটা মাত্রা থাকা উচিত।লিভার ড্যামেজ হবে এআর নতুন কথা কি।কত নিষেধ করেছে না শুনলে কি করা যাবে।হঠাৎ একটা চিন্তা ঝিলিক দিয়ে যায়।মাম্মী তো আগে এত আসক্ত ছিল না তাহলে কেন এমন হয়ে উঠল।এর পিছনে কোনো কারণ থাকা সম্ভব।
ট্রাক ড্রাইভার স্বামী দুর্ঘটনায় মৃত্যু হলে সাওনি রাইয়ের চোখের সামনে নেমে এল অনিশ্চিত অন্ধকার।নাবালিকা কন্যা সন্তান নিয়ে দিশাহারা হয়ে কাজের জন্য চারদিকে হাতড়াচ্ছ সেই সময় ম্যাথু আর্ণল্ড ব্রাউন এল তার জীবনে।ম্যাথুর কাম লালসাকে ভালবাসা ভেবে নতুন করে ঘর বাধার স্বপ্ন দেখতে থাকে। ম্যাথুর প্রচণ্ড দাপট সেই দাপটের ভাগীদার সাওনি রাই রাতারাতি সাওনি ব্রাউন হতে মুহূর্তকাল অপেক্ষা করেনি। বাংলোয় বাস গাড়ী করে এদিক ওদিক ঘোরা শপিং কোরতে যাওয়া লাঞ্চ ডিনার ডিনারের পর সামান্য পান--বেশ কাটছিল।ম্যাথুর সময়ের ঠিক ছিল না সকাল দুপুর রাত্রি যখন ইচ্ছে হতো সাওনির শরীরে ঢেলে দিত লালসা।এত পাওয়ার বিনিময়ে এটুকু তো দিতে হবে মিসেস ব্রাউন মেনে নিয়েছিল।কিন্তু যেদিন তার পনেরো বছরের কন্যা ম্যাথুর লালসা থেকে রেহাই পেলনা তার স্বপ্ন কল্পনা চুরচুর ভেঙ্গে পড়ল অসহায় সাওনি নেশাকে আকড়ে ধরল।মেয়েটাও বিয়ে করলনা বেছে নিল স্বেচ্ছাচারী জীবন।
সকাল হতে অনিকা রান্নাঘরে ঢুকল।এবাড়ীর প্রতি তার মোহ কেটে গেছে।মামন এলে ওর সঙ্গেই চলে যাবে চা কোরতে কোরতে ভাবে।
Like Reply


Messages In This Thread
RE: আগুণের পরশমণি;কামদেব - by kumdev - 09-07-2024, 04:08 PM



Users browsing this thread: 20 Guest(s)