04-07-2024, 04:08 PM
দ্বাবিংশতি পরিচ্ছেদ
দিন তিনেক পেরিয়ে গেল আরণ্যক একদিনও হসপিটালে যায় নি।যা ভিজিটিং আওয়ারস কি করে যাবে।সন্তোষদা ওদের প্রতি বিরূপ সেজন্য বলতে ভরসা হয়নি।আজ সকালেই দাদা জিজ্ঞেস করছিল পিকলুর কথা।আরণ্যক এড়িয়ে গেছে।মান্তু একটা খবর এনেছে সমাগমের ফ্লাট কেনা হয়েছে ইলিুনা ব্রাউনের নামে।মান্তু পৌরসভায় কাজ করে ওর পক্ষে জানা সম্ভব।কিন্তু ইলিনা ব্রাউন অন্য কেউ হতে পারে অধ্যাপিকারই নাম নিশ্চিত করে বলা যায় না। অনেকদিন বাচবেন মহিলা বাস রাস্তা থেকে পাড়ায় ঢুকছেন।দোকানের কাছে এসে ঘাড় ঘুরিয়ে তাকালেন।আরণ্যক অন্যদিকে মুখ ফিরিয়ে নিল।চলায় সপ্রতিভ স্বছন্দ ভঙ্গী।মদ্যপান ব্যাপারটা মা-নতে মন চায়না।বাড়ির অন্যকেউ পান করতে পারে।একজন নেপালী মত মহিলা বাজার করতে আসে সম্ভবত কাজের লোক হবে।পরক্ষনে মনে হল কাজের লোকের মদ্যপান বাড়ীর লোকের এ্যালাও করার কথা নয়।
পিকলু এসে বলল,কি বস কি ভাবছো?
ভাবনার কি শেষ আছে?শোন পিকলু তুই আমার বন্ধু তাই বলছি যেখানে সেখানে মতামত দেবার দরকার কি?
পিকলু সন্ধিৎসু চোখে রনোকে দেখে বলল,কি ব্যাপার বলতো দোস্ত?মনে হচ্ছে কিছু চেপে যাচ্ছো?
আরণ্যকের মুখে হাসি খেলে যায় বলে,তোর কাছে যেমন খবর আসে অন্যের কানেও তেমনি তোর খবর যায়।
পিকলুর চোখে বিদ্যুতের ঝিলিক বলল,এবার বুঝেছি দাদা তোকে কিছু বলেছে।দ্যাখ কারো বিরুদ্ধে কুৎসা করা পিকলুর স্বভাব নয়। যা শুনছি তাই বলছি।
যা শুনছিস সেটা সত্যি কি করে বুঝলি?
একজন অনশনে বসে বারবার হাগু করতে যায় তাও তুই বলবি লোকটি লুকিয়ে চুরিয়ে খাচ্ছে না?
আরণ্যক জহাসি সামলাতে পারে না। হাসতে হাসতে বলল,তুইও কম হারামী না।
মান্তুকে দেখে পিকলু বলল,এই তো মান্তু মিউনিসিপ্যালিটিতে তুই বল এক একটা ফ্লাটের প্লান পাস করাতে কিরকম দিতে হয়?
আমি কি করে জানব?
তুই জানিস না?গাড়ে এত ভয় নিয়ে রাজনীতি করিস?
গাড়ে ভয়ের কি হল?যাব আমি হেলথ ডিপার্টমেণ্টে আছি
অন্য ডিপার্টমেণ্টের খবর রাখিস না?ে
দ্যাখ পিকলু এই বাজারে যদি আমার চাকরি চলে যায় তুই কি একটা চাকরি দিতে পারবি?
এটাই আমাদের দুর্বলতা।
গোপাল বলল,পিকলু আমাকে তোর পছন্দ নয় জানি তবু একটা কথা বলি গাড়ে ভয় ভালো নয় আবার বেশী সাহসও ভাল নয়।
আরণ্যক কিছু একটা দেখে বলল,পিকলু দোকানটা আমি একটু আসছি।
ঝর্ণা বসু বাজার থেকে বেরিয়ে বাস রাস্তার দিকে হাটতে থাকে।পরণে সাদা কোরা কাপড় মাথার চুল হাত খোপা করে বাধা।গঙ্গা স্নান কোরতে গেছিল নাকি।আরণ্যক দ্রুত হেটে বাস রাস্তায় গিয়ে ধরল।ঝর্ণা বলল,দোকানে ভীড় দেখে আর যাইনি বাসায় ফিরে ফোন করতাম।
গঙ্গা স্নান করে এলে?
সঙ্গী মহিলার দিকে এক নজর দেখে ঝর্ণা বলল,রোজ কলেজ ছুটির পর ছুটতাম হাসপাতালে মাকে দেখতে আর যেতে হবেনা ঝামেলা শেষ তাই গঙ্গায় ডুব দিয়ে এলাম।কদিন নিরামিষ খেতে হবে তাই আতপ চাল সব্জি কিনতে বাজারে এসেছিলাম।
কি নির্বিকার বলে যাচ্ছে আরবণ্যকের চোখ ছাপিয়ে জল গড়িয়ে পড়ে।
এই রনো রাস্তার মাঝে কি আরম্ভ করলি?যা ভুলতে চাই তা মনে করাতে চাস?চোখ মোছ বলে আচল দিয়ে চোখ মুছিয়ে দিল।
কাল বিকেলে গিয়ে দেখে এলাম দিব্যি বিছানায় শুয়ে ড্যাবডেবিয়ে চেমে আছে। শেষরাতে সজল এসে খবর দিল হাসপাতাল
জানালো জাহ্নবী পাল নো মোর।ওর নম্বর হাসপাতালে দেওয়া ছিল।বিশ্বাস কর শুনে আমি কাদিনি এক ফোটা চোখের জল ফেলেছি কেউ বলতে পারবে না।কেন কাদব বল?কাদলে কি মা আমার ফিরে আসবে?তার চেয়ে যেখানে গেছে শান্তিতে থাকুক ভাল থাকুক।
আমাকে একবার বলবে না?
কাউকে বলিনি।অনিতা ফোন করেছিল জানতে কেন কলেজে যাইনি?তখন আমি কাশীপুর শ্মশানে।খবর পেয়ে ও শ্মশানে গেছিল।
কতবার ভেবেছি যাব-যাব
তুই খালি ভেবেই যা ভাবতে ভাবতেই--ইচ্ছে করছে ঠাষ করে একটা দিই--।
আশপাশের পথচারী যেতে যেতে ঘুরে তাকায়।আরণ্যক হেসে বলল,ইচ্ছে অপূর্ণ থাকবে কেন--দাও।গাল এগিয়ে দিল।
অনিতা হেসে ফেলল।ঝর্ণা হাসে না বলে,তোর সঙ্গে মজা করছি না।শোণ রনো একটা কথা আছে,ভাবিয়া করিও কাজ।
কাজের জন্য ভাবতে হবে বৈকি।কাজে সফল হলে ভাবনা সার্থক।কতবার বলেছি এভাবে জীবনটাকে নষ্ট করিস না-
ঠিক আছে তুমি কাল রাতে বেরিয়েছো--।
জানিস অনিতা ছেলেটার অনেক গুণ ছিল--।
আবার শুরু করলে এখন যাও তো।
প্রশংসা শুনে লজ্জা পাচ্ছে।ঝর্ণা বলল, যাচ্ছি তুই সময় করে যাস।
ওরা চলে গেলে আরণ্যক নিজেকে সামলাতে পারে না।এক্টূ আড়ালে সরে গিয়ে দু-চোখে রুমাল চেপে ধরল।মনে পড়ল মায়ের কথা।পরীক্ষার আগে পড় বাবা পড় বলে পিছনে লেগে থাকতো।একটু ধাতস্থ হয়ে দোকানের দিকে হাটতে শুরু করে।
দোকানে আসতে সপ্রশ্ন দৃষ্টিতে তাকায় পিকলু।
ঝর্ণাবোসের মা কাল রাতে মারা গেলেন ।নীচূ স্বরে বলল আরণ্যক।
ভেরি স্যাড।বয়স হয়েছিল সেজন্য ধকল নিতে পারেন নি।
ক্লাস না থাকলে মিস ব্রাউন লাইব্রেরীতে সময় কাটায়।বই পড়তে ভালোবাসে বলে নয় স্টাফ রুমের গসিফ তার পছন্দ নয়।গল্প উপন্যাসের চেয়ে ব্যাতিক্রমী বিষয়ে আগ্রহ বেশী।আলমারি ঘাটতে ঘাটতে একটা বই হাতে এল Introduction to Tantra sastra.
মলাট খুলে কয়েক লাইন পড়ে ইন্টারেস্টিং মনে হল।বইটি লিখিয়ে ব্যাগে ভরে নিল।বাসায় ফিরে পোশাক বদলে বইটি নিয়ে বসল।
ন-দিনের মাথায় শ্রাদ্ধ।কলেজের কয়কজন ছাড়া কাউকে না বললেও রনোকে বলেছে।দোকান বন্ধ করে স্নান সেরে একগাছি রজনীগন্ধার মালা কিনে আরণ্যক রওনা দিল।রাস্তাঘাট সুনসান এদিকে ওদিকে ঘোরাঘুরি করছে কয়েকটা কুকুর।তাকে দেখেও ঘেউ-ঘেউ করছে না।আরণ্যকের মনে হল কুকুররাও ভাবনা-চিন্তা করে।ওরা বোঝে বদ লোকেরা রাতে বেরোয়।সেদিন রাতে চিল্লিয়ে পাড়া মাথায় করছিল আজ দেখেও দেখছে না।
সামনের বারান্দায় একটা চেয়ারে মাসীমার ছবিি মালাতে ঢেকে গেছে।আরণ্যক তার আনা মালাটা পরিয়ে দিয়ে চোখবুজে করজোড়ে প্রণাম কোরল।ভেবেছিল দশ-বারোজন লোক হবে এতো প্রায় তিরিশের কাছাকাছি সবাই অচেনা।ভিতরে উঠোনে ঝর্ণা বসু পুরোহিতের সঙ্গে মন্ত্রোচ্চারণ করছে।মায়ের শ্রাদ্ধের কথা মনে পড়ল।চেনা কাউকে নজরে পড়ছে অচেনা নারী-পুরুষের ভীড়ে অস্বস্তি বোধ করে।আরণ্যক ভাবল মালা তো দিয়েছে এবার কেটে পড়া যাক।এদিক-ওদিক তাকিয়ে সবে পা বাড়িয়েছে একজন মহিলা এসে সামনে চায়ের কাপ ধরল।হাত বাড়িয়ে চায়ের কাপ নিতে মহিলা একটা চেয়ার এগিয়ে চলে গেল।আরণ্যক চেয়ারে বসে চায়ে চুমুক দিল।মহিলাকে চেনা-চেনা লাগল,কোথায় দেখেছে মনে করার চেষ্টা করে।মনে পড়েছে মহিলা দিদির কলিগ সেদিন শ্মাশানে গেছিল।মহিলা এককাপ চা নিয়ে এদিকেই আসছে।আবার কাকে চা দেবে আরণ্যক আশপাশ দেখে।একটা চেয়ার টেনে মহিলা তার পাশে বসে চায়ে চুমুক দিতে থাকে।ভদ্রতার খাতিরে তার কিছু বলা উচিত কিন্তু কি বলবে ভেবে পায়না।এই হয়েছে মুষ্কিল সারাক্ষণ বকবক করতে পারে কিন্তু মেয়েদের সামনে গলা শুকিয়ে আসে।মনে পড়েছে মহিলার নাম অনিতা।
তুমি কি এখনই খেতে বসবে?অনিতা জিজ্ঞেস করল।
দিদির সঙ্গে দেখা না করেই চলে যাব?
সবাই আসছে আর খেতে বসে যাচ্ছে।
অনেক লোক বলেছে দেখছি।
কলেজ থেকে আমরা ছ-জন বাকী সব পুলিশ আর তাদের বৌ ছেলে মেয়েরা।
বেশ কথা হল এবার কি বলবে ভাবে আরণ্যক।মহিলা তার সহকর্মী ছেড়ে এখানেই বসে থাকবে নাকি?
দিদি মাকে খুব ভালো বাসতো।অনিতার গলায় বিষণ্ণতা।
ভাগ্যিস বিয়েটা হয়েছিল।বুদ্ধি করে বলল আরণ্যক।
মন্দের ভালো।
মন্দের ভালো কেন মি.বসু সরকারী চাকরি করেন--।
সরকারী না বে-সরকারী নাকি বেকার এসব মেয়েরা দেখেনা।
আলোচনা অন্যদিকে যাচ্ছে বুঝে আরণ্যক চুপ করে থাকে।
মেয়েরা কি চায় জানো?
মেয়েদের চাওয়া-পাওয়া নিয়ে মাথা ব্যথা ণেই আরণ্যক ভাবে শ্রাদ্ধটা কখন মিটবে।
অনিতা বলল,মেয়েরা শাড়ী-গহণা চায় অনেকে ভাবে,মেয়েরা একজন বন্ধু চায় প্রভু নয়।
আরণ্যকের অনেক প্রশ্ন মনে এলেও চুপ করে থাকে।
তুমি সন্তোষবাবুর দোকানে বসো না?
সামনে সজল বসুকে দেখে উঠে দাঁড়িয়ে আরণ্যক বলল,হ্যা আমি দাদার দোকানে কাজ করি।
দিন তিনেক পেরিয়ে গেল আরণ্যক একদিনও হসপিটালে যায় নি।যা ভিজিটিং আওয়ারস কি করে যাবে।সন্তোষদা ওদের প্রতি বিরূপ সেজন্য বলতে ভরসা হয়নি।আজ সকালেই দাদা জিজ্ঞেস করছিল পিকলুর কথা।আরণ্যক এড়িয়ে গেছে।মান্তু একটা খবর এনেছে সমাগমের ফ্লাট কেনা হয়েছে ইলিুনা ব্রাউনের নামে।মান্তু পৌরসভায় কাজ করে ওর পক্ষে জানা সম্ভব।কিন্তু ইলিনা ব্রাউন অন্য কেউ হতে পারে অধ্যাপিকারই নাম নিশ্চিত করে বলা যায় না। অনেকদিন বাচবেন মহিলা বাস রাস্তা থেকে পাড়ায় ঢুকছেন।দোকানের কাছে এসে ঘাড় ঘুরিয়ে তাকালেন।আরণ্যক অন্যদিকে মুখ ফিরিয়ে নিল।চলায় সপ্রতিভ স্বছন্দ ভঙ্গী।মদ্যপান ব্যাপারটা মা-নতে মন চায়না।বাড়ির অন্যকেউ পান করতে পারে।একজন নেপালী মত মহিলা বাজার করতে আসে সম্ভবত কাজের লোক হবে।পরক্ষনে মনে হল কাজের লোকের মদ্যপান বাড়ীর লোকের এ্যালাও করার কথা নয়।
পিকলু এসে বলল,কি বস কি ভাবছো?
ভাবনার কি শেষ আছে?শোন পিকলু তুই আমার বন্ধু তাই বলছি যেখানে সেখানে মতামত দেবার দরকার কি?
পিকলু সন্ধিৎসু চোখে রনোকে দেখে বলল,কি ব্যাপার বলতো দোস্ত?মনে হচ্ছে কিছু চেপে যাচ্ছো?
আরণ্যকের মুখে হাসি খেলে যায় বলে,তোর কাছে যেমন খবর আসে অন্যের কানেও তেমনি তোর খবর যায়।
পিকলুর চোখে বিদ্যুতের ঝিলিক বলল,এবার বুঝেছি দাদা তোকে কিছু বলেছে।দ্যাখ কারো বিরুদ্ধে কুৎসা করা পিকলুর স্বভাব নয়। যা শুনছি তাই বলছি।
যা শুনছিস সেটা সত্যি কি করে বুঝলি?
একজন অনশনে বসে বারবার হাগু করতে যায় তাও তুই বলবি লোকটি লুকিয়ে চুরিয়ে খাচ্ছে না?
আরণ্যক জহাসি সামলাতে পারে না। হাসতে হাসতে বলল,তুইও কম হারামী না।
মান্তুকে দেখে পিকলু বলল,এই তো মান্তু মিউনিসিপ্যালিটিতে তুই বল এক একটা ফ্লাটের প্লান পাস করাতে কিরকম দিতে হয়?
আমি কি করে জানব?
তুই জানিস না?গাড়ে এত ভয় নিয়ে রাজনীতি করিস?
গাড়ে ভয়ের কি হল?যাব আমি হেলথ ডিপার্টমেণ্টে আছি
অন্য ডিপার্টমেণ্টের খবর রাখিস না?ে
দ্যাখ পিকলু এই বাজারে যদি আমার চাকরি চলে যায় তুই কি একটা চাকরি দিতে পারবি?
এটাই আমাদের দুর্বলতা।
গোপাল বলল,পিকলু আমাকে তোর পছন্দ নয় জানি তবু একটা কথা বলি গাড়ে ভয় ভালো নয় আবার বেশী সাহসও ভাল নয়।
আরণ্যক কিছু একটা দেখে বলল,পিকলু দোকানটা আমি একটু আসছি।
ঝর্ণা বসু বাজার থেকে বেরিয়ে বাস রাস্তার দিকে হাটতে থাকে।পরণে সাদা কোরা কাপড় মাথার চুল হাত খোপা করে বাধা।গঙ্গা স্নান কোরতে গেছিল নাকি।আরণ্যক দ্রুত হেটে বাস রাস্তায় গিয়ে ধরল।ঝর্ণা বলল,দোকানে ভীড় দেখে আর যাইনি বাসায় ফিরে ফোন করতাম।
গঙ্গা স্নান করে এলে?
সঙ্গী মহিলার দিকে এক নজর দেখে ঝর্ণা বলল,রোজ কলেজ ছুটির পর ছুটতাম হাসপাতালে মাকে দেখতে আর যেতে হবেনা ঝামেলা শেষ তাই গঙ্গায় ডুব দিয়ে এলাম।কদিন নিরামিষ খেতে হবে তাই আতপ চাল সব্জি কিনতে বাজারে এসেছিলাম।
কি নির্বিকার বলে যাচ্ছে আরবণ্যকের চোখ ছাপিয়ে জল গড়িয়ে পড়ে।
এই রনো রাস্তার মাঝে কি আরম্ভ করলি?যা ভুলতে চাই তা মনে করাতে চাস?চোখ মোছ বলে আচল দিয়ে চোখ মুছিয়ে দিল।
কাল বিকেলে গিয়ে দেখে এলাম দিব্যি বিছানায় শুয়ে ড্যাবডেবিয়ে চেমে আছে। শেষরাতে সজল এসে খবর দিল হাসপাতাল
জানালো জাহ্নবী পাল নো মোর।ওর নম্বর হাসপাতালে দেওয়া ছিল।বিশ্বাস কর শুনে আমি কাদিনি এক ফোটা চোখের জল ফেলেছি কেউ বলতে পারবে না।কেন কাদব বল?কাদলে কি মা আমার ফিরে আসবে?তার চেয়ে যেখানে গেছে শান্তিতে থাকুক ভাল থাকুক।
আমাকে একবার বলবে না?
কাউকে বলিনি।অনিতা ফোন করেছিল জানতে কেন কলেজে যাইনি?তখন আমি কাশীপুর শ্মশানে।খবর পেয়ে ও শ্মশানে গেছিল।
কতবার ভেবেছি যাব-যাব
তুই খালি ভেবেই যা ভাবতে ভাবতেই--ইচ্ছে করছে ঠাষ করে একটা দিই--।
আশপাশের পথচারী যেতে যেতে ঘুরে তাকায়।আরণ্যক হেসে বলল,ইচ্ছে অপূর্ণ থাকবে কেন--দাও।গাল এগিয়ে দিল।
অনিতা হেসে ফেলল।ঝর্ণা হাসে না বলে,তোর সঙ্গে মজা করছি না।শোণ রনো একটা কথা আছে,ভাবিয়া করিও কাজ।
কাজের জন্য ভাবতে হবে বৈকি।কাজে সফল হলে ভাবনা সার্থক।কতবার বলেছি এভাবে জীবনটাকে নষ্ট করিস না-
ঠিক আছে তুমি কাল রাতে বেরিয়েছো--।
জানিস অনিতা ছেলেটার অনেক গুণ ছিল--।
আবার শুরু করলে এখন যাও তো।
প্রশংসা শুনে লজ্জা পাচ্ছে।ঝর্ণা বলল, যাচ্ছি তুই সময় করে যাস।
ওরা চলে গেলে আরণ্যক নিজেকে সামলাতে পারে না।এক্টূ আড়ালে সরে গিয়ে দু-চোখে রুমাল চেপে ধরল।মনে পড়ল মায়ের কথা।পরীক্ষার আগে পড় বাবা পড় বলে পিছনে লেগে থাকতো।একটু ধাতস্থ হয়ে দোকানের দিকে হাটতে শুরু করে।
দোকানে আসতে সপ্রশ্ন দৃষ্টিতে তাকায় পিকলু।
ঝর্ণাবোসের মা কাল রাতে মারা গেলেন ।নীচূ স্বরে বলল আরণ্যক।
ভেরি স্যাড।বয়স হয়েছিল সেজন্য ধকল নিতে পারেন নি।
ক্লাস না থাকলে মিস ব্রাউন লাইব্রেরীতে সময় কাটায়।বই পড়তে ভালোবাসে বলে নয় স্টাফ রুমের গসিফ তার পছন্দ নয়।গল্প উপন্যাসের চেয়ে ব্যাতিক্রমী বিষয়ে আগ্রহ বেশী।আলমারি ঘাটতে ঘাটতে একটা বই হাতে এল Introduction to Tantra sastra.
মলাট খুলে কয়েক লাইন পড়ে ইন্টারেস্টিং মনে হল।বইটি লিখিয়ে ব্যাগে ভরে নিল।বাসায় ফিরে পোশাক বদলে বইটি নিয়ে বসল।
ন-দিনের মাথায় শ্রাদ্ধ।কলেজের কয়কজন ছাড়া কাউকে না বললেও রনোকে বলেছে।দোকান বন্ধ করে স্নান সেরে একগাছি রজনীগন্ধার মালা কিনে আরণ্যক রওনা দিল।রাস্তাঘাট সুনসান এদিকে ওদিকে ঘোরাঘুরি করছে কয়েকটা কুকুর।তাকে দেখেও ঘেউ-ঘেউ করছে না।আরণ্যকের মনে হল কুকুররাও ভাবনা-চিন্তা করে।ওরা বোঝে বদ লোকেরা রাতে বেরোয়।সেদিন রাতে চিল্লিয়ে পাড়া মাথায় করছিল আজ দেখেও দেখছে না।
সামনের বারান্দায় একটা চেয়ারে মাসীমার ছবিি মালাতে ঢেকে গেছে।আরণ্যক তার আনা মালাটা পরিয়ে দিয়ে চোখবুজে করজোড়ে প্রণাম কোরল।ভেবেছিল দশ-বারোজন লোক হবে এতো প্রায় তিরিশের কাছাকাছি সবাই অচেনা।ভিতরে উঠোনে ঝর্ণা বসু পুরোহিতের সঙ্গে মন্ত্রোচ্চারণ করছে।মায়ের শ্রাদ্ধের কথা মনে পড়ল।চেনা কাউকে নজরে পড়ছে অচেনা নারী-পুরুষের ভীড়ে অস্বস্তি বোধ করে।আরণ্যক ভাবল মালা তো দিয়েছে এবার কেটে পড়া যাক।এদিক-ওদিক তাকিয়ে সবে পা বাড়িয়েছে একজন মহিলা এসে সামনে চায়ের কাপ ধরল।হাত বাড়িয়ে চায়ের কাপ নিতে মহিলা একটা চেয়ার এগিয়ে চলে গেল।আরণ্যক চেয়ারে বসে চায়ে চুমুক দিল।মহিলাকে চেনা-চেনা লাগল,কোথায় দেখেছে মনে করার চেষ্টা করে।মনে পড়েছে মহিলা দিদির কলিগ সেদিন শ্মাশানে গেছিল।মহিলা এককাপ চা নিয়ে এদিকেই আসছে।আবার কাকে চা দেবে আরণ্যক আশপাশ দেখে।একটা চেয়ার টেনে মহিলা তার পাশে বসে চায়ে চুমুক দিতে থাকে।ভদ্রতার খাতিরে তার কিছু বলা উচিত কিন্তু কি বলবে ভেবে পায়না।এই হয়েছে মুষ্কিল সারাক্ষণ বকবক করতে পারে কিন্তু মেয়েদের সামনে গলা শুকিয়ে আসে।মনে পড়েছে মহিলার নাম অনিতা।
তুমি কি এখনই খেতে বসবে?অনিতা জিজ্ঞেস করল।
দিদির সঙ্গে দেখা না করেই চলে যাব?
সবাই আসছে আর খেতে বসে যাচ্ছে।
অনেক লোক বলেছে দেখছি।
কলেজ থেকে আমরা ছ-জন বাকী সব পুলিশ আর তাদের বৌ ছেলে মেয়েরা।
বেশ কথা হল এবার কি বলবে ভাবে আরণ্যক।মহিলা তার সহকর্মী ছেড়ে এখানেই বসে থাকবে নাকি?
দিদি মাকে খুব ভালো বাসতো।অনিতার গলায় বিষণ্ণতা।
ভাগ্যিস বিয়েটা হয়েছিল।বুদ্ধি করে বলল আরণ্যক।
মন্দের ভালো।
মন্দের ভালো কেন মি.বসু সরকারী চাকরি করেন--।
সরকারী না বে-সরকারী নাকি বেকার এসব মেয়েরা দেখেনা।
আলোচনা অন্যদিকে যাচ্ছে বুঝে আরণ্যক চুপ করে থাকে।
মেয়েরা কি চায় জানো?
মেয়েদের চাওয়া-পাওয়া নিয়ে মাথা ব্যথা ণেই আরণ্যক ভাবে শ্রাদ্ধটা কখন মিটবে।
অনিতা বলল,মেয়েরা শাড়ী-গহণা চায় অনেকে ভাবে,মেয়েরা একজন বন্ধু চায় প্রভু নয়।
আরণ্যকের অনেক প্রশ্ন মনে এলেও চুপ করে থাকে।
তুমি সন্তোষবাবুর দোকানে বসো না?
সামনে সজল বসুকে দেখে উঠে দাঁড়িয়ে আরণ্যক বলল,হ্যা আমি দাদার দোকানে কাজ করি।