27-06-2024, 03:43 PM
(This post was last modified: 29-07-2024, 01:33 PM by kumdev. Edited 1 time in total. Edited 1 time in total.)
একবিংশতি পরিচ্ছেদ
দোকান বন্ধ করে শুয়ে পড়েছে আরণ্যক। যতক্ষণ ঘুম না আসে সারাদিনের কথা মনে মনে চর্বিত চর্বন করে।আমরা যখন কথা বলি অন্যের দিকে তাকিয়ে বলি নিজের দিকে তাকাইনা।বেশ মজা লাগে সেই চালুনি-সূচের মতো।মান্তু খবর নিয়ে এসেছে মেমসাহেব হুগলী না কোথায় একটা কলেজের অধ্যাপিকা।চেহারায় একটা গাম্ভীর্যের ছাপ।একটা ব্যপার খারাপ লেগেছে ওর ফ্লাটের নীচে ডাস্টবিনে নাকি মদের বোতল পড়ে থাকতে দেখা যায়।অবশ্য বিদেশীদের কাছে মদ কোনো বিষয় নয় ওরা সপরিবারে একসঙ্গে মদ্যপান করে।আর এইসব নিয়ে তার ভাবার দরকার কি?ঝর্ণাদির জন্য খারাপ লাগে।এই প্রথম তার কাছে এসে কিছু চেয়েছিল কিন্তু কিছু করতে পারেনি।পিকলুর কথায় মনে হল সন্তোষদা চায়না ওরা ঘরভাড়া পাক।শুনেছে এখন অবধি ওরা ঘর ভাড়া পায়নি।পুলিশ ভদ্রলোক মেসে থাকে। পিকলু কি রাজনীতি ছেড়ে দেবে নাকি অন্য দলে যোগ দেবে?যাই করুক পিকলু তার বন্ধু থেকেই যাবে।বিশুর কথা ভেবে মজা লাগে।মোবাইলে মেসেজ করে ফর্দ পাঠায় বিশু সেসব কিনে বাড়ী পৌছে দেয়।বিশুকে দিয়ে সব করায় এমন কি নিজের স্যানিটারি ন্যাপকিন পর্যন্ত বিশুকে দিয়ে কেনায়।ছেলেদের মত জিনস পরে অফিস যাও এসব নিজে কিনতে পারোনা। বিয়ে করতে হলে প্রেম করতে হবে কেন?প্রেমের মাধ্যমে পরস্পরকে জানা যায় আরণ্যক মানতে পারেনা।প্রেমের অন্তরালে চাপা থাকে মিথ্যাচার।একে অপরের প্রিয় হতে অনেক মিথ্যে অনেক অভিনয়ের আশ্রয় নেয়। কয়েক মাস মেলামেশা করলেই একে অপরকে জানতে পারে?মানুষ চেনা এত সহজ।আমরা নিজেরা নিজেদের কতটুকু চিনি? আমরা কি চাই তাকি নিজেরাই জানি?একটা কথা পড়েছি একটি পদার্ধের যা শক্তি তার ক্ষুদ্র ভগ্নাংশের আমরা পরিচয় পাই,ব্যবহারিক ক্ষেত্রে কাজে লাগাই।এইসব হাবিজাবি ভাবতে ভাবতে আরণ্যক ঘুমিয়ে পড়ে।
রাত নিঝুম সবাই শুয়ে পড়েছে।কাল আবার কলেজ আছে ইলিনাও শুয়ে পড়বে। একটা গেলাসে পানীয় নিয়ে ব্যালকনিতে বসে সিপ করতে থাকে।সুপমার সঙ্গে কথা বলে মনে হল বিয়ে নিয়ে প্রথমে যে অসন্তোষ ছিল এখন মানিয়ে নিয়েছে।মেয়েরা সহজে মানিয়ে নিতে পারে।বিয়ের আগের সব স্বপ্ন কল্পনা সরিয়ে রেখে বিবাহিত জীবনের নতুন প্রবাহে স্বচ্ছন্দে গা ভাসিয়ে দিতে পারে।বয়স হলে বিয়ে করতে হবে এই রীতি।বিয়ে দৈহিক সুচিতা এসব শুরুতে ছিল না।এসেছে অনেক পরে মানুষই সৃষ্টি করেছে এসব রীতিনীতি।একজন শুধুমাত্র পুরুষ পরিচয়ে খবরদারি করবে ইলিনা মেনে নিতে পারেনা।অন্যভাবে জীবনযাপন করা যায়না?কেবল নিজের জন্য নয় অন্যের জন্যও তো কিছু করা য়ায়,অন্যের সুখ-দুখকে নিজের করে কি বাচা যায়না?একটা কবিতার লাইন মনে পড়ল,পরের কারণে মনণেও সুখ
সুখ সুখ করে কেদনা আর ...যতই কাদিবে বাড়িবে জীবন ভার।গেলাসে শেষ চুমুক দিয়ে উঠে পড়ল ইলিনা।মাম্মী নেশা করে বেহুশ হয়ে যায়।নেশা করে বেহুশ হয়ে যদি উপভোগ নাই করলাম তাহলে নেশা করব কেন?
বিছানা ঝেড়ে লাইট নিভিয়ে শুয়ে পড়ল ইলিনা।অনিকা মৌসী বেশ চতুর।তার কলেজ ছাড়া আর কলেজের কথা আসবে কেন?চকিতে মনে হল তার কথা কাউকে বলছিল নাতো?একটু সতর্ক হতে হবে।দরকার বুঝলে দূর করে দেবে।কলেজে আঙুরদি মাইনে পেয়ে টাকা ফেরত দিতে এসেছিল।আঙুরদি কলেজের ফোর্থ ক্লাস স্টাফ।আগের মাসে অফিসে গিয়ে টাকা এ্যাডভান্স চাইছিল কিন্তু ক্লার্ক ভদ্রলোক দেয়নি এভাবে অগ্রিম দেওয়া যায়না।ব্যাপারটা নজরে পড়তে জিজ্ঞেস করে জানা গেল আঙুরদির মেয়ে এবার পরীক্ষা দেবে কিন্তু ফিজ দেওয়ার টাকা ণেই।জিজ্ঞেস করলাম কতটাকা?বলল একশো টাকা হলেই হবে।আমি ওকে একশো টাকা দিলাম।বেতন পাবার পর সেই টাকা ফেরত দিতে এসেছিল।সবাই সমান হয়না।আমি বললাম,তোমার মেয়েকে বলবে এক আণ্টি তোমার ফিজ দিয়েছে।আঙুরদি খুব খুশী বলল,ম্যা-ডা ম ভগবান আপনাকে খুব সুখী করবে।ভগবান কি করবে জানিনা আঙুরদির মেয়ের জন্য এটুকু করতে পেরে তৃপ্তি পেয়েছিলাম।
রাত বাড়তে থাকে সুনসান রাস্তাঘাট।রাস্তার পাশে এখানে সেখানে কুণ্ডলি পাকিয়ে নিশ্চিন্তে ঘুমোচ্ছে কয়েকটা কুকুর।
মোবাইল বাজতে আরণ্যকের ঘুম ভেঙ্গে যায়।এরা কি ঘুমায় না সারারাত মোবাইল নিয়ে বসে আছে।বিরক্ত হয়ে হাত বাড়িয়ে মাথার কাছে রাখা মোবাইল নিয়ে ভালোমত খিস্তি দেবে ভাবে।স্ক্রিনে JB দেখে তড়াক করে উঠে বসল।রাত সাড়ে তিনটে এত রাতে ঝর্ণাদি কি হল আবার?বাটন টিপে কানে লাগিয়ে বলল,কি- ব্যাপার এত রাতে?
রনো আমার খুব বিপদ তুই আসতে পারবি?কান্না জড়িত গলা।
কি বিপদ হ্যালো- হ্যালো...।যা ফোন কেটে দিয়েছে।
রনোর ঘুম চটকে গেছে।মোবাইল টিপে দেখল ঝর্ণাদিই তো?কি বিপদ হতে পারে স্বামী পুলিশ মনে হয়না পুলিশী কোনো ঝামেলা।
এতরাতে ফোন করল মনে হল কাদছিল ঝরণাদির মত মেয়ে সহজে কাদার পাত্রী নয়।কি করবে?কালাবাবুর দলবল হামলা করেনি তো?
আর স্থির হয়ে থাকতে পারেনা।চৌকি থেকে নেমে একটা জামা গলিয়ে দোকানে তালা দিয়ে বেরিয়ে পড়ল।রাস্তায় নামতে কুকুরগুলো ঘেউ-ঘেউ করে ডাকা শুরু করল।বেশ তো ঘুমোচ্ছিল।কে ওদের বোঝাবে আমি চোর-ডাকাত নই পাড়ার ছেলে।সাধে এদের নেড়ী কুত্তা বলে।দৌড়ালে পিছন পিছন দৌড়াবে।রনো দ্রুত পায়ে হাটতে থাকে।ঘেউ-ঘেউ আর থামে না।আচ্ছা ঝামেলা সারা পাড়া জাগিয়ে তুলবে নাকি?অনেকটা এগোবার ওরা আর পিছন পিছন আসেনা।একবার মনে হল দোকান থেকে একটা রড নিয়ে আসলে ভালো হতো।অবশ্য শুনেছে কালাবাবুর কোমরে মেশিন গোজা থাকে।
ঝর্ণাদির বাড়ীর কাছাকাছি এসে অবাক লাগে।কাউকে তো দেখছে না।তাহলে কি ওরা তুলে নিয়ে গেছে?রনোর বড় বড় নিশ্বাস পড়ে।
এতরাতে কাউকে কিছু জিজ্ঞেস করবে তার উপায় নেই।এতকাণ্ড হয়ে গেল পাড়ার লোক কেউ জাগলো না।মনে হচ্ছে ঝর্ণাদির ঘরেল আলো জ্বলছে।ঘরে তো মাসীমা মানে ঝর্ণাদির মায়ের তো থাকার কথা।চারদিকে ঘুটঘুটে অন্ধকার।কি করবে ভিতরে গিয়ে দেখবে?ভিতরে ওদের কেউ নেইতো?থাকলে থাকবে আরণ্যক তোয়াক্কা না করে দেওয়াল ঘেষে পা টিপে এগোতে থাকে।একী কি দেখছে!
ঝর্ণা বাইরে রকে এসে দাড়িয়েছে।আরণ্যক রকে উঠে বলল,ঝর্ণাদি তুমি ঠিক আছো তো?
রনো তুই-বলে জড়িয়ে ধরে কান্না ভেজা গলায় বলল, আমি জানতাম তুই আসবি।রনোরে মা ছাড়া আমার আর কেউ নেইরে...।
কেউ জড়িয়ে ধরলে তার উপরে মেয়ে মানুষ আরণ্যকের অস্বস্তি আবার বাইরে সে ঠেলে ঝর্ণাকে ঘরে ঢুকিয়ে জিজ্ঞেস করল,কি হয়েছে মাসীমার?
রনোকে ছেড়ে দিয়ে বলল,রাতে ধপাস করে শব্দ হতে ঘুম ভেঙ্গে গেল।শব্দটা মায়ের ঘর থেকে এসেছে গিয়ে দেখি মাটিতে পড়ে যন্ত্রণায় ছটফট করছে তুই যদি দেখতিস কি বলব-ভয় পেয়ে সজলকে খবর দিলাম।ও দেখে ছুটলো ডাক্তার ডাকতে।এতরাতে কেউ আসতে চায়না তবে ডাক্তার ঘোষ একটা ট্যাবলেট দিয়েছে সেইটা খেয়ে ঘুমোচ্ছে
মনে হয় ট্যাঙ্কুলাইজার দিয়েছে আরণ্যক জিজ্ঞেস করে,সজল বাবু কোথায়?
কি জানি আবার কোথায় গেল?
আমি বেরিয়ে দেখব?
এত রাতে তুই কোথায় যাবি তুই বোস।
কিছুক্ষণ পর একটা স্ট্রেচার নিয়ে সজল বোস এল।ঝর্ণা আমাকে দেখিয়ে বলল,এই হচ্ছে রনো যার কথা তোমাকে বলেছিলাম।
একটা ডাক্তার আসতে চায়না বলে সকালে আসবে,রোগী কি তোমার জন্য বসে থাকবে?কোমরে হাড় ভেঙ্গেছে মনে হচ্ছে।হসপিটালে নিয়ে যাওয়াই ভাল। অনেক চেষ্টা করে একটা এ্যাম্বুলেন্স পেয়েছি তাও শুধু ড্রাইভার।
স্ট্রেচার পেতে মাসীমাকে সন্তুর্পনে তোলা হল।আমিও হাত লাগালাম।
এসব জরুরী পরিসেবা কি সময় ধরে হয়।
একদিকে সজল বোস আরেকদিকে আমি দুজনে মিলে স্ট্রেচার এ্যাম্বুলেন্সে তুলে দিলাম।ঘরে তালাচাবি দিয়ে ঝর্ণা পিছনে মাসীমাকে নিয়ে আর সজল বোস ড্রাইভারের পাসে বসল। আমি মুখ বাড়িয়ে বললাম,ঝরণাদি আমাকে দোকান খুলতে হবে।আমি আর যাচ্ছিনা।
ঠিক আছে ফিরে খবর দেব।ভেবেছিলাম মা বুঝি আর ফিরবে না।
সামনে থেকে সজল বোস বলল,কিসবউপ আবোল-তাবোল বকছো?
এ্যাম্বুলেন্স ধোয়া উড়িয়ে চলে যেতে আরণ্যক হাটতে শুরু করল।উফস কি টেনশনে কাটলো ঝর্ণাদি ফোনে মাসীমার পড়ে যাবার কথা বললে এত টেনশন হতোনা।
সকালে ভেণ্ডারদের কাগজ বুঝিয়ে দেবার পর স্বস্তি।একটা কাগজ নিয়ে একটু আকি বুকি করার চেষ্টা করে চোখের পাতা ভারী হয়ে আসে একটা ঘুম-ঘুম ভাব দুপুরে টানা ঘুম দিতে হবে।ফরেনার মহিলা বাস রাস্তার দিকে যাচ্ছেন।মান্তু বলছিল কলেজের লেকচারার দেখলে কিন্তু বয়স খুব বেশী মনে হয়না। ঝর্ণাদি আসছে না?হ্যা তার দোকানের দিকেই।কাল কখন ফিরেছে জিজ্ঞেস করা হয়নি।কাছে আসতে বলল,কখন ফিরলে?
এইতো ফিরছি।এক্স-রে করল এমআরআই করল অনেক টাকা খরচ হয়ে গেল।ঝর্ণাদির চোখে মুখে ক্লান্তির ছাপ।
মাসীমা কেমন আছে?
চিকিৎসা চলছে কদিন সময় তো লাগবে।সজল ঠিক ধরেছে কোমরের হাড় ভেঙ্গেছে।যাই ওবেলা দেখতে যেতে হবে।
কখন যেতে হয়?
চারটের থেকে ছটা।আসিরে।
ঝর্ণাদির বিয়ে হয়েছিল বলে সজলবাবুকে পাশে পেয়েছে।একটা গানের কলি মনে পড়ল,গোলাপের অলি আছে ফাগুণের আছে বাহার সকলের সাথী আছে শুধু কেউ নেই আমার।মনে মনে হাসে আরণ্যক।ভিজিটিং আওয়ারস যা বলল ঐসময় দোকান ফেলে যাওয়া সম্ভব নয়।
হ্যারে রনো কার কথা বলছিল?
বিনয় আঢ্য পাশে দাঁড়িয়ে কাগজ পড়ছিলন সব শুনেছেন।আরণ্যক বলল,ওনার মা কাল রাতে খাট থেকে পড়ে গিয়েছিলেন।হসপিটালে ভর্তি করেছেন।
সাবধানে থাকিস নটোরিয়াস মহিলা।
বয়স্ক লোক কি আর বলবে আরণ্যক চুপ করে থাকে। যার আয়ু থাকে আগুণে দগ্ধ করলেও তার মৃত্যু হয় না।সকালবেলা মাসীমার খবরটা শুনে ভাল লাগল।