Thread Rating:
  • 18 Vote(s) - 2.89 Average
  • 1
  • 2
  • 3
  • 4
  • 5
Adultery জীবনের খেলাঘর (আপডেট নং ১)
#2
কি রে রেসাল্ট টা বের করতে এত সময় লাগে তোর? বিরক্ত আর অস্বস্তি নিয়ে ছোট ভাই হাসিব কে তারা দেয় হুসনা। 

আরে আপু, সার্ভার ডাওন দেখতে পাচ্ছিস না, আর বালের ফোন আমার, একবার রিফ্রেশ দিলে ৭ বার হ্যাং মারতেছে। দ্বিগুণ বিরক্তি নিয়ে উত্তর দেয় হাসিব।

ধার্মিক রক্ষনশীল পরিবারের বড় মেয়ে হুসনা। মাধ্যমিক পেরুবার আগেই ওকে কয়েকবার বসতে হয়েছে পাত্রপক্ষের সামনে। কিন্তু হুসনা ছাত্রী ভালো, মাধ্যমিকে ভালো রেসাল্ট আর আত্বীয় স্বজনের পীড়াপীড়িতে প্রচন্ড অনিচ্ছা স্বত্বেও বড় মেয়েকে কলেজে ভর্তি করেছিলেন নজরুল ইসলাম। প্রচন্ড একগুঁয়ে স্বভাব আর পুরোনো ধ্যান ধারণার লোক এই নজরুল। তার ধারণা মেয়েরা শুধু সন্তান বিয়াবে আর ঘরের কাজ করবে। মেয়েদের আবার এত পড়াশোনার দরকার কি! বড় মেয়েকে কলেজে পড়ালেও ছোট মেয়ে হুমায়রা কে এত দূর নেয়ার কোনো ইচ্ছে নেই নজরুল 'র। ছেলে হাসিব আছে, তাকে পড়াশোনা করিয়ে লাভ আছে, মেয়েদের টাকা নষ্ট করে পড়িয়ে লাভ টা কি হবে, শেষে তো আরেক জনের ঘরের বাসনই মাজতে হবে।

আজ হুসনার উচ্চ মাধ্যমিক পরিক্ষার রেসাল্ট বের হবে, অনেকটা আতঙ্ক আর বুক ভরা আশা নিয়ে রেসাল্ট দেখার অপেক্ষা করছে হুসনা। কেন যে সার্ভার এত দুর্বল থাকে কে জানে?

আচ্ছা আপু, তুই যে এত টেনশন করছিস রেজাল্ট নিয়ে, রেসাল্ট ভালো হলেই কি লাভ? তোর কি মনে হয় আব্বা তোকে আরো পড়াশোনা করাবে? ভার্সিটির ভর্তি কোচিং ও তো করিস নি, ভালো ভার্সিটিতে চান্স ও তো পাবি না… অনেকটা হতাশা মাখা গলা নিয়ে বলল হাসিব।

সেটা নিয়ে তোর এত ভাবতে হবে না, রেসাল্ট ভালো হলে আব্বাকে মানিয়ে নেয়া যাবে। উত্তর দেয় হুসনা।

দাঁড়া দাঁড়া আপু লোড হচ্ছে সাইট, তাড়াতাড়ি রেজিষ্ট্রেশন আর রোল টা বল……..

হামিদা খাতুন কলপারে বসে বাসি বাসন মাজছিলেন। পিছন থেকে অনেকটা চিৎকার করে হুসনা বললো আম্মা আম্মা, কি করো তুমি?

দেখছিস না বাসন মাজি, তুই এমন চিল্লায়ে উঠলি কেন? ব্লাউজের ফাকে থুথু দিয়ে হামিদা খাতুন বুঝালেন হুসনার চিৎকারে চমকে উঠেছেন তিনি। 

আম্মা, আমি গোল্ডেন A+ পেয়েছি…… 

মেয়ের ভালো রেসাল্ট এর কথা শুনে ভিতর থেকে খুশি হলেও সেটা খুব বেশি প্রকাশ করলেন না হামিদা। শুধু ভালো বলে বললেন, রান্না ঘরে গিয়ে দুপুরের খাবারের জন্য সব কেটে কুটে রাখতে।

রান্না ঘরে বসে হুসনা তার মাকে বলল, আম্মা, আব্বাকে বলো না আমি আরো পড়াশোনা করতে চাই……

চুপ কর, বয়স কত হয়েছে খেয়াল আছে! আরো পড়াশোনা করতে চায়, এখন বিয়ে করে সংসারে মন দে…..

কি বলো আম্মা, আমার বয়স তো মাত্র বিশ……

বিশ তোর কাছে মাত্র? আমার যখন বিশ বছর বয়স তখনই আমি তোদের তিন ভাইবোনের মা হয়ে গিয়েছি…..

আম্মা, এখনো আগের দিন আছে নাকি? আর আমি তো সবসময় * পরেই ক্লাসে যাব, সমস্যা কি হবে তাতে?

আছে, সমস্যা আছে, বিয়ে ছাড়া মেয়েরা পাপ থেকে বাঁচতে পারে না…..

আম্মা এসব বলো না তো, যারা পাপ করে তারা বিয়ের পরেও করে, ইচ্ছা শক্তি থাকলে পাপ থেকে বাঁচা কোনো ব্যাপার না। তুমি আব্বা কে বুঝিয়ে বলো, আব্বা তাহলে না করবে না……

তোরা না কিছু বুঝিস না, যদি ইচ্ছা থাকেও তাহলেই লাভটা কি? তোদের আব্বা কি এত টাকা ইনকাম করে? পড়াশোনার খরচ চালানোর সামর্থ থাকা লাগবে না?

পড়াশোনার খরচ তো বড় চাচাই দিবে…..

আর কত দয়া-অনুগ্রহ নিবো আমরা বলতো……

হাতে থাকা বেগুনটা না কেটেই হনহন করে রান্নাঘর থেকে বেরিয়ে গেল হুসনা।

                                **************
ট্রাক থেকে রড নামছে, মুখে কাঁচা পাকা দাঁড়ি নিয়ে দাঁড়িয়ে সেটা তদারকি করছেন নজরুল ইসলাম। গোডাউনের ভিতরে উঁচু চেয়ারে বসে আছে মাহতাব। মাহতাব ব্যাবসার কিছুই বুঝে না, বাবা বেঁচে থাকতে কখনো দোকান-আড়ৎ কোথাও বসতো না সে। হার্ট এটাকে বাবার হটাৎ মৃত্যুর পর না চাইলেও ব্যাবসার ভার কাধে নিতে হয়েছে। ব্যাবসার আয় - ব্যয়, বাকির খাতা ইত্যাদি দেখে মাহতাব এর মনে হয়েছে এটা একটা বিশাল সমুদ্র। সেই সমুদ্রে তাকে দক্ষ নাবিকের মত পথ দেখিয়ে যাচ্ছে তার বাবার ম্যানেজার নজরুল ইসলাম। নজরুল কে অন্ধের মত বিশ্বাসের পাশাপাশি মুরুব্বি হিসেবে সম্মান ও করে মাহতাব। রড আনলোড হওয়ার পর নজরুল ইসলাম এসে বললেন স্যার, মাল নেমেছে সব, হিসেব সব ঠিকঠাক আছে…..

চাচা, আপনাকে কত দিন বলেছি আমাকে স্যার ডাকবেন না, খারাপ লাগে আমার….. বসুন এখন, চা খান…..

তোমার আম্মা কেমন আছে বাবা?

ভালো চাচা, আম্মা আপনাকে বাসায় যেতে বলে আপনি তো একদমই যান না, আজকে চলুন দুপুরে…… 

আচ্ছা…….


বড় ডাইনিং টেবিলে হরেক আইটেম এর লোভনীয় খাবার সাজানো। মাহতাব এর মা, মাহতাব আর নজরুল ইসলাম তাদের নিজেদের আসন বুঝে নিয়ে বসে পরলেন। বাড়িতে দুই জন কাজের মেয়ে থাকা স্বত্ত্বেও চৌধুরী বাড়ির একমাত্র বউ মেধা মাথায় ঘোমটা দিয়ে খাবার পরিবেশন করছে। মুরগীর দুটো রান, সেটা নিয়ে দোটানায় পরে গিয়েছে মেধা। শাশুড়ী, বর কে দিবে নাকি মেহমান কে একটা রান দিবে, মেহমান কে দিলে আবার কাকে দিবে না, এসব ভাবার সময় মাহতাব এর মা বলে উঠলেন, বউমা, তোমার আঙ্কেল কে দাও আগে। মেধা যেন হাঁফ ছেড়ে বাঁচলো। মেধার সন্ধানী দৃষ্টি, কখন কার কি লাগে একনাগাড়ে তা পরিবেশন করে যাচ্ছে। নজরুল ইসলাম এই জন্যই এই বাড়িতে আসতে চান না। বেগানা মহিলাদের দিকে দৃষ্টিপাত তিনি একদম পছন্দ করেন না। তাড়াতাড়ি খাওয়া শেষ করে বের হতে পারলেই যেন বাঁচেন তিনি। 

সোফায় নজরুল ইসলাম বসার পর মাহতাব এর মা সামনাসামনি বসে বললেন ভাইজান! আপনি সবসময় আমাদের পরিবারের বিপদাপদ এর সময় পাশে ছিলেন, তাই একটা পরামর্শ করতে চাচ্ছি আপনার সাথে…..

ভাবি, ভাইজান সারাজীবনই আমাকে আগলে রেখেছেন, এখনও যদি আপনাদের কোনো উপকারে আসতে পারি তাহলে ভিতর থেকেই একটা ভালো লাগা কাজ করে মনে……

আসলে ভাইজান মাহতাব এর বিয়ের তো প্রায় ৪ বছর হতে চললো, কিন্তু এখনো বাচ্চা কাচ্চা হচ্ছে না। আমি চাচ্ছিলাম মাহতাব কে আরেকটা বিয়ে দিতে……

দেখুন ভাবি, আপনাদের পারিবারিক বিষয়ে আমি আর কি পরামর্শ দিব, শুধু এতটুকু বলতে পারি আমাদের ধর্মে ৪ টা পর্যন্ত বিয়ের অনুমতি দেয়া আছে। কিন্তু শর্ত অনেক কঠিন, সব স্ত্রীদের মধ্যে সমতা বিধান রাখা বাধ্যতামূলক। যেটা বেশিরভাগ স্বামী পারে না। যে কোনো একজনকে বেশি সুযোগ বা সুবিধা দেয়া জায়েজ নেই। আর আপনাদের ক্ষেত্রে যদি এমন হয় যে আপনাদের এখনের বউমার বাচ্চা হয় না বলে তার সাথে খারাপ ব্যাবহার করেন সেটা একটা নিকৃষ্ট কাজ হবে। বাচ্চা কাচ্চা দেয়ার মালিক আল্লাহ, তবে আপনাদের ধন-সম্পদের অভাব নেই, মাহতাব ছেলে হিসেবেও ভালো, চাইলেই সে সমতা রেখে চলতে পারবে। বড়সড় একটা লেকচার দিয়ে থামলেন নজরুল ইসলাম। 

আসলে ভাইজান এখন বিয়ে-শাদীও অনেক রিস্কের ব্যাপার, ভালো মেয়ে পাওয়াও দুষ্কর। তাই আপনার কাছে আমার ছেলের জন্য আপনার ছোট মেয়েটাকে চাচ্ছি…..

অনেকটা ভুত দেখার মত চমকে উঠলেন নজরুল ইসলাম প্রস্তাবটা শুনে। অনেকগুলো ধাক্কা একসাথে খেয়েছেন তিনি। প্রথমত তার মালিকের ছেলের সাথে নিজের মেয়ের বিয়ের প্রস্তাব তিনি আশাই করেন নি, তারপর আবার তার বড় মেয়ের বিয়ে না হলেও ছোট মেয়ের জন্য প্রস্তাব দিচ্ছেন তিনি। অথচ ছোট মেয়ের বয়স সামনের মাসে মাত্র চোদ্দ হবে। তাছাড়া ছেলে বিবাহিত, বাচ্চা হচ্ছে না, সমাজ স্ত্রীকে দোষারোপ করলেও এসব ক্ষেত্রে ছেলের সমস্যাই থাকে বেশি। থতমত খেয়ে নজরুল ইসলাম বললেন,

ভাবি, আসলে আমি এমন কিছু কখনো ভাবি নি, আর আমার বড় মেয়ের এখনো বিয়ে হয় নি, ছোট মেয়েরও তো বিয়ের বয়স হয় নি, এখন কিভাবে এটা হতে পারে?

ভাইজান, আমি জানি আপনার বড় মেয়ের বিয়ে হয় নি, কিন্তু আমার আর মাহতাব এর পছন্দ আপনার ছোট মেয়েকে। আর বয়স তো কম হয় নি, বয়স দিয়ে কি হয়? ওর শরীর বাড়ন্ত। মাহতাব এর সাথে ভালো মানাবে……

আচ্ছা ভাবি, আমি ওর মায়ের সাথে কথা বলে জানাবো…..

দেখেন ভাইজান, এর পর থেকে রড-সিমেন্ট এর ডিলারশিপটা না হয় পুরোপুরি ভাবে আপনিই দেখলেন….. নজরুল ইসলামকে শেষমেষ একটা আর্থিক অফার ও দিয়ে দিলেন মাহতাব এর মা।
Like Reply


Messages In This Thread
RE: জীবনের খেলাঘর (আপডেট নং ১) - by মিসির আলি - 25-06-2024, 05:36 PM



Users browsing this thread: 1 Guest(s)