19-06-2024, 02:32 PM
ঊনবিংশ পরিচ্ছেদ
কলেজ ছুটির পর বাড়ী ফিরছে।ঝর্ণার সঙ্গে অনিতা।ঝর্ণাদি বিয়ে করবে ভাবেনি।বিয়ের কথা বললেই এড়িয়ে যেতো।বাইরে ঝর্ণাদির যা পরিচয় কোনো ছেলে বিয়ে অনিতার মনে হয়নি।বিয়ের পর ঝর্ণাদিড় মেজাজ বদলে গেছে একটা মেয়েলী ভাব এসেছে।
আচ্ছা ঝর্ণাদি তুমি কি মনে করো বিয়ের কথা কেউ জানতে পারবেনা?
জানলে জানবে।
তাহলে বলছো না কেন কলেজে?
সই সাবুদ করে বিয়ে হয়েছে বিয়েতে কাউকে বলতে পারিনি। নতুন করে আর বলতে চাইনে।
অনিতা ব্যাপারটা বুঝতে পারে।প্রসঙ্গ বদলাতে বলল,তোমাকে কবে নিয়ে যাবে?
এটাই তো সমস্যা।সজল চেষ্টা করছে বাড়ীভাড়া পেলেই চলে যাব।কেন যে বাড়ি পাচ্ছে না বুঝতে পারছি না। পুলিশের লোক বলে হয়তো কেউ ভাড়া দিতে চাইছে না।
এদিকে কোথায় যাচ্ছো?
আজ এক্টূ বাজার হয়ে যাব তরিতরকারি কিছুই নেই।
বাক নিয়ে অন্যপথ ধরল ঝর্ণা।অনিতা বেশ সরল ওর সঙ্গে কথা বলতে বেশ লাগে।
সজল রাতে খেতে আসে সেজন্য ভালমন্দ রান্না করতে হয় রাতে মেসেই থাকে।কবে যে ঘরের ব্যবস্থা করে আলাদা সংসার হবে কে জানে। বাজার করে বেরিয়ে দেখলো ছেলেটা দোকানে একা বসে আছে। বেশ মেয়ে পটানো চেহরা।ঝর্ণার ওকে খুব ভাল লাগে।অবশ্য বয়সে অনেক ছোট।ঝর্ণা দোকানের দিকে এগিয়ে গেল।
বলুন দিদি কি দেব?আরণ্যক জিজ্ঞেস করল।
চআমাকে চিনতে পেরেছিস?
আপনাকে কে না চেনে।
ফুলন দেবী?
ঝাঃ আপনি ঝর্ণা পাল।
এখন আমি ঝর্ণা বসু।
মান্তুর খবরটা তাহলে ঠিক পুলিশকে বিয়ে করেছে।
আচ্ছা রনো আমার একটা উপকার করবি?
এভাবে বলছেন কেন সাধ্যের মধ্যে হলে কেন করবো না।তবে দোকান ছেড়ে এখন কোথাও যাওয়া--।
তোকে কোথাও যেতে হবে না। অনেকের সঙ্গে তোর আলাপ দেখিস তো কাছাকাছি কোনো বাড়ীভাড়া পাওয়া যায়কিনা? দু-কামরা হলেই চলবে।
আজকাল বাড়ীভাড়া পাওয়া মুষ্কিল।
কেন বাড়ীওয়ালারা ভাড়া দেওয়া ছেড়ে দিয়েছে?
না তানয়।আসলে এত ফ্লাট হচ্ছে সবাই ফ্লাট কিনছে।অনেকে ভাড়াটে তুলে দিয়ে বহুতল বানাচ্ছে তাতে এককালীন অনেক
টাকা পারওয়া যায়।
হুউম।একথাটা ঝর্ণার মনে আসেনি।
আচ্ছা দিদি আপনি বলেছেন খবর পেলে আপনাকে জানাব।
তুই আমাকে দিদি বললি তাই বলছি।এই দোকানের মালিক সন্তোষ মালটা খুব সুবিধের নয় একটা পয়দাখোর জানিস কত কামায়?
আমি আদার ব্যাপারি জাহাজের খবরে আমার কি দরকাত?
সত্যের দিকে মুখ ফিরিয়ে থাকলে সত্য মিথ্যে হয়ে যায়না।
সত্য-মিথ্যে বুঝিনা আমি বুঝি ঝর্ণা পালের অতীতে অনেক ভাঙচুর হয়েছে কিন্তু আমার সত্য আমার সামনে দাঁড়িয়ে থাকা ঝর্ণা বসু।অতীত ঘেটে সময় নষ্ট কোরতে চাইনে।
ঝর্ণা বিপুল বিস্ময়ে তাকিয়ে থাকে।পুরানো দিনের কথা মুহূর্তে ভেসে ওঠে সামনে।কি দিন কাটিয়েছে পুলিশের তাড়া খেয়ে পালিয়ে পালিয়ে বেড়ানো নাওয়া-খাওয়ার ঠিক ছিলনা। এক পুলিশের সঙ্গে ঘর বেধে আজ সে ঝর্ণা বসু।সত্যি জীবন এক জায়গায় থেমে থাকেনা,প্রতিনিয়ত বদলায়।
কি ভাবছো?
ভাবছি এখান দিয়ে যাওয়ার সময় দেখি তরতাজা যোয়ান ছেলে দোকানে বসে কাগড বিক্রী করছে তখন খুব কষ্ট হয়,এইকি একটা জীবন?এভাবেই কি কাটিয়ে দিবি?
আরণ্যকের মন বিষণ্ণ হয়।কতলোকের সঙ্গে কত কথা হয় তার কথা এমন করে তো কেউ বলেনি।দিদি মেয়ে বলেই হয়তো বলেছে।মায়ের মুখটা মনে পড়ল। প্রসঙ্গ বদলাতে বলল, দাও ওসব তুমি চা খাবে?
চায়ের তো সময় হয়ে গেছে চা হলে মন্দ হয়না।
আরণ্যক একটা টুল বাইরে বের করে দিয়ে বলল,আপনি বসুন আমি বলে আসছি।-
তুমিই তো ভাল ছিল আবার আপনি কেন ভাই?
ঠিক আছে তুমি বোসো আমি আসছি।
আরণ্যক বেরোতে ঝর্ণা বলল,এই টাকাটা রাখ সঙ্গে কিছু প্যাটিস-ফ্যাটীস কিছু আনিস।
আরণ্যক চলে গেল।চায়ের প্রসঙ্গ এনে উত্তরটা এড়িয়ে গেল।ভিতরে টেবিলের উপর একটা মোবাইল নজরে পড়তে উঠে মোবাইলটা ঘুরিয়ে ফিরিয়ে দেখতে থাকে।মোবাইলটা বেশ দামী।
আরণ্যক বাকী টাকা ফেরৎ দিয়ে বলল,ওটা আমাকে একজন দিয়েছে।
মনে হচ্ছে বেশ দামী।কে দিয়েছে?
দিয়েছে মানে -ডাক্তারবাবুর বউ আমেরিকা যাবার সময় গাড়ীতে রেখে যায়।পরে ফোন করে বললেন,আমাকে দিয়েছেন।
একটা লোক দু-কাপ চা আর একটা প্যাটিস দিয়ে গেল।ঝর্ণা বলল,এটা কি?
চিকেন প্যটিস তুমি তো বললে--।
একটা কেন?
অনেক দাম তাই আচ্ছা আরেকটা বলছি।
থাক আর বলতে হবেনা একটা ছুরি দিয়ে কেটে দু-ভাগ কর।
এতে আমার নাম সেভ করে রাখব?ফোন করলে বিরক্ত হবে নাতো?
তুমি ফোন করলে তো তোমার নাম দেখা যাবে বিরক্ত হব কেন?জানো দিদি মোবাইলে অনেক আজেবাজে মেয়ের ফোন আসে।
এত খারাপ লাগে-
সাবধান যা মেয়ে পটানো চেহারা তোমার-
ধ্যেৎ কিযে বলনা তুমি!
মেয়েদের তো চেনোনা।তারা সাংঘাতিক স্ত্রীয়াশ্চরিত্রম দেবা ন জানন্তি-কাকে কিলেভাবে ফাসিয়ে দেবে-
তুমি মেয়ে হয়ে এরকম বলছো?দেখো কাসা পিতলে জঙ ধরেনা জঙ ধরে লোহায়।যে ফাসতে চায় সেই ফাসে শূধু মেয়েদের দোষ দিলে হবেনা।ে
মেয়েদের প্রতি তোর দেখছি খুব বিশ্বাস।যাই অনেক বেলা হল তোর সঙ্গে কথা বলে ভালই কাটল--
বিশ্বাস নয় শ্রদ্ধা
এই কাপগুলো কি করব?
রেখে দাও লোক এসে নিয়ে যাবে।
বাজারের থলে নিয়ে ঝর্ণা বলল,এবার নিজের কথা একটু ভাব,আসিরে ফোন করব।আর শোন কোনোৣৣ পুলিশী ঝামেলা হলে আমাকে বলবি-।ঝর্ণা চলে গেল।
দূর থেকে দেখে গোপাল বলল,আরে ফুলন দেবী না?
রনোর সঙ্গে চা খাচ্ছে কি ব্যাপার শালা ঠিক দেখছি তো।
ফুলন দেবীকে চা খাওয়াচ্ছে আর আমাদের বেলায় পয়সা নেই।
সবাই এতক্ষণ পার্টি অফিসে ছিল।।
দোকানে এসে বিশু বলল,বস আমাদের একটু চা হয়ে যাক।
প্লেট দেখে সিধু বলল,চায়ের সঙ্গে টাও ছিল মাইরি।
বিশ্বাস কর মাইরি দিদি খাইয়েছে-আরণ্যক সাফাই দিল।
উরিব্বাস আবার দিদিই!গোপাল বলতে সবাই হো-হো হাসিতে ভেঙ্গে পড়ল।
দিদি বলব না তো কি দিদিমা বলব?আরণ্যকের গলায় ক্ষোভ।
ঠিক আছে ঠিক আছে চা আমি খাওয়াচ্ছি।পিকলু বলল,এই মান্তু চারটে চা দুটো ফলস বলে আয়।
মোবাইল বাজতে বিশু একটু সরে গিয়ে কানে লাগিয়ে বলল,হ্যা বলো...গেছিলাম তো...কি মুষ্কিল অফিস ছুটি নাহলে কিকরে যাবো...তুমি দাড়াবে কেন আমিই বা কিকরে জানবো বলো...আহা তুমি একবার ফোন কোরতে পারতে আমি যাচ্ছি...তুমি বাড়ী চলে এসেছো তাহলে...আরঠিক আছে ভুল বোঝাবুঝি নয় আমার অন্যায় হয়ে গেছে আর কিছু?
বিশু ফিরে আসতে ফিসফিস করে জিজ্ঞেস করল মান্তু,ও ফোন করেছিল?
আর বলিস না নাথাকলেও জ্বালা আবার থাকলেও জ্বালা।
কি বলছিল?
নাম চিনি জিভে ঝাল।কথা হয়েছিল ছুটির পর নিকো পার্কে মিট করব
চা এসে গেছে হাতে হাতে নিয়ে নেও।পিকলু বলল।
মান্তু জিজ্ঞেস করে তুই যাস নি?
পরে বলছি চল চা খেয়েনি।
পিকলু এককাপ চা রনোকে এগিয়ে দিয়ে বলল,নে চা খা মাথা ঠাণ্ডা হবে।
মাথা আমার বরাবরই ঠাণ্ডা চায়ে চুমুক দিয়ে বলল,আচ্ছা তুই বল পিকলু কেউ যদি অতীতের সবকিছু ছেড়ে মূল ধারায় ফিরে আসতে চায় আমাদের কি উচিত নয় তার পাশে দাঁড়ানো?
ওদের কথা ছাড়ত তুই হয়েছিস যেমন।ঝর্ণা পাল তোকে কি বলছিল?
কলেজ থেকে ফেরার পথে বাজার কোরতে এসেছিল।ঝর্ণা পাল বিয়ে করে ঝর্ণা বসু হয়েছে।
কথাটা কানে যেতেই মান্তু বলল,কিরে আমি বলেছিলাম না,মিলল তো?
পিকলু বিরক্ত হয়ে বলল, আমাদের মধ্যে কি কথা হচ্ছে তুই জানিস?
যাক গে শোন পিকলু।ওরা বাসা ভাড়া করে আলাদা থাকতে চায় আমাকে বলল, আমার চেনা কোনো ঘর ভাড়া আছে কিনা?
ঘর এক জায়গায় আছে কিন্তু---
ঘর আছে বলছিস?কোথায় রে,ওদের খুব দরকার।
কিন্তু ওদের হবে না।
কেন হবেনা হাজব্যাণ্ড ওয়াইফ দুজনেই চাকরি করে অসুবিধে কোথায়?
সেইটাই তো তোকে বলছি।এক সময় ফুলদেবী দাদাকে নিয়ে কথা উঠেছিল এও শোনা গেছে চাকরিটা নাকি দাদাই করে দিয়েছে।
সব শোনা কথা।
আবার এখন কি হল দাদা ওদের নামই শূনতে চায়না।আবার বলে ওর নাকি চরিত্র ভাল নয়।
এসব কথা ভাল লাগছে না বাদ দে।
তোর আলমারিটা দাদা কিনেছিল না?
কি করব ঘর ছেড়ে দিতে হল আলমারি কোথায় রাখব
কতটাকায় বিক্রী করেছিলি?
আটশো মত হবে।
তুই জানিস টাকা কে দিয়েছিল?টাকা দিয়েছিল হারু সাহা।
আরণ্যকের মোবাইল বাজতে পিকলু বলল,তুই কথা বল আমি সিগারেট নিয়ে আসছি।
মোবাইল স্ক্রিনে ভেসে উঠেছে JB.আরণ্যক হেসে কানে লাগিয়ে বলল,হ্যালো?
রনো তোর কথা সজলকে বলছিলাম।তুই বললি কাসা পেতলে জঙ ধরে না তাই বলে অবহেলায় ফেলে রাখতে হবে?ঘষেমেজে চকচকে দেখতে ইচ্ছে করেনা?জীবনটাকে এত অবহেলা করিস না।
এখনো তাকে নিয়ে ভাবছে।আরণ্যকের চোখ ঝাপসা হয়ে আসে।সত্যিই মেয়েরা মায়ের জাত।ফোন কানে লাগিয়ে বলল, দোকানে খদ্দের এসেছে এখন রাখছি।
তোর গলাটা কেমন ভারী শোনাচ্ছে।
আরণ্যক ফোন কেটে দিল।
কলেজ ছুটির পর বাড়ী ফিরছে।ঝর্ণার সঙ্গে অনিতা।ঝর্ণাদি বিয়ে করবে ভাবেনি।বিয়ের কথা বললেই এড়িয়ে যেতো।বাইরে ঝর্ণাদির যা পরিচয় কোনো ছেলে বিয়ে অনিতার মনে হয়নি।বিয়ের পর ঝর্ণাদিড় মেজাজ বদলে গেছে একটা মেয়েলী ভাব এসেছে।
আচ্ছা ঝর্ণাদি তুমি কি মনে করো বিয়ের কথা কেউ জানতে পারবেনা?
জানলে জানবে।
তাহলে বলছো না কেন কলেজে?
সই সাবুদ করে বিয়ে হয়েছে বিয়েতে কাউকে বলতে পারিনি। নতুন করে আর বলতে চাইনে।
অনিতা ব্যাপারটা বুঝতে পারে।প্রসঙ্গ বদলাতে বলল,তোমাকে কবে নিয়ে যাবে?
এটাই তো সমস্যা।সজল চেষ্টা করছে বাড়ীভাড়া পেলেই চলে যাব।কেন যে বাড়ি পাচ্ছে না বুঝতে পারছি না। পুলিশের লোক বলে হয়তো কেউ ভাড়া দিতে চাইছে না।
এদিকে কোথায় যাচ্ছো?
আজ এক্টূ বাজার হয়ে যাব তরিতরকারি কিছুই নেই।
বাক নিয়ে অন্যপথ ধরল ঝর্ণা।অনিতা বেশ সরল ওর সঙ্গে কথা বলতে বেশ লাগে।
সজল রাতে খেতে আসে সেজন্য ভালমন্দ রান্না করতে হয় রাতে মেসেই থাকে।কবে যে ঘরের ব্যবস্থা করে আলাদা সংসার হবে কে জানে। বাজার করে বেরিয়ে দেখলো ছেলেটা দোকানে একা বসে আছে। বেশ মেয়ে পটানো চেহরা।ঝর্ণার ওকে খুব ভাল লাগে।অবশ্য বয়সে অনেক ছোট।ঝর্ণা দোকানের দিকে এগিয়ে গেল।
বলুন দিদি কি দেব?আরণ্যক জিজ্ঞেস করল।
চআমাকে চিনতে পেরেছিস?
আপনাকে কে না চেনে।
ফুলন দেবী?
ঝাঃ আপনি ঝর্ণা পাল।
এখন আমি ঝর্ণা বসু।
মান্তুর খবরটা তাহলে ঠিক পুলিশকে বিয়ে করেছে।
আচ্ছা রনো আমার একটা উপকার করবি?
এভাবে বলছেন কেন সাধ্যের মধ্যে হলে কেন করবো না।তবে দোকান ছেড়ে এখন কোথাও যাওয়া--।
তোকে কোথাও যেতে হবে না। অনেকের সঙ্গে তোর আলাপ দেখিস তো কাছাকাছি কোনো বাড়ীভাড়া পাওয়া যায়কিনা? দু-কামরা হলেই চলবে।
আজকাল বাড়ীভাড়া পাওয়া মুষ্কিল।
কেন বাড়ীওয়ালারা ভাড়া দেওয়া ছেড়ে দিয়েছে?
না তানয়।আসলে এত ফ্লাট হচ্ছে সবাই ফ্লাট কিনছে।অনেকে ভাড়াটে তুলে দিয়ে বহুতল বানাচ্ছে তাতে এককালীন অনেক
টাকা পারওয়া যায়।
হুউম।একথাটা ঝর্ণার মনে আসেনি।
আচ্ছা দিদি আপনি বলেছেন খবর পেলে আপনাকে জানাব।
তুই আমাকে দিদি বললি তাই বলছি।এই দোকানের মালিক সন্তোষ মালটা খুব সুবিধের নয় একটা পয়দাখোর জানিস কত কামায়?
আমি আদার ব্যাপারি জাহাজের খবরে আমার কি দরকাত?
সত্যের দিকে মুখ ফিরিয়ে থাকলে সত্য মিথ্যে হয়ে যায়না।
সত্য-মিথ্যে বুঝিনা আমি বুঝি ঝর্ণা পালের অতীতে অনেক ভাঙচুর হয়েছে কিন্তু আমার সত্য আমার সামনে দাঁড়িয়ে থাকা ঝর্ণা বসু।অতীত ঘেটে সময় নষ্ট কোরতে চাইনে।
ঝর্ণা বিপুল বিস্ময়ে তাকিয়ে থাকে।পুরানো দিনের কথা মুহূর্তে ভেসে ওঠে সামনে।কি দিন কাটিয়েছে পুলিশের তাড়া খেয়ে পালিয়ে পালিয়ে বেড়ানো নাওয়া-খাওয়ার ঠিক ছিলনা। এক পুলিশের সঙ্গে ঘর বেধে আজ সে ঝর্ণা বসু।সত্যি জীবন এক জায়গায় থেমে থাকেনা,প্রতিনিয়ত বদলায়।
কি ভাবছো?
ভাবছি এখান দিয়ে যাওয়ার সময় দেখি তরতাজা যোয়ান ছেলে দোকানে বসে কাগড বিক্রী করছে তখন খুব কষ্ট হয়,এইকি একটা জীবন?এভাবেই কি কাটিয়ে দিবি?
আরণ্যকের মন বিষণ্ণ হয়।কতলোকের সঙ্গে কত কথা হয় তার কথা এমন করে তো কেউ বলেনি।দিদি মেয়ে বলেই হয়তো বলেছে।মায়ের মুখটা মনে পড়ল। প্রসঙ্গ বদলাতে বলল, দাও ওসব তুমি চা খাবে?
চায়ের তো সময় হয়ে গেছে চা হলে মন্দ হয়না।
আরণ্যক একটা টুল বাইরে বের করে দিয়ে বলল,আপনি বসুন আমি বলে আসছি।-
তুমিই তো ভাল ছিল আবার আপনি কেন ভাই?
ঠিক আছে তুমি বোসো আমি আসছি।
আরণ্যক বেরোতে ঝর্ণা বলল,এই টাকাটা রাখ সঙ্গে কিছু প্যাটিস-ফ্যাটীস কিছু আনিস।
আরণ্যক চলে গেল।চায়ের প্রসঙ্গ এনে উত্তরটা এড়িয়ে গেল।ভিতরে টেবিলের উপর একটা মোবাইল নজরে পড়তে উঠে মোবাইলটা ঘুরিয়ে ফিরিয়ে দেখতে থাকে।মোবাইলটা বেশ দামী।
আরণ্যক বাকী টাকা ফেরৎ দিয়ে বলল,ওটা আমাকে একজন দিয়েছে।
মনে হচ্ছে বেশ দামী।কে দিয়েছে?
দিয়েছে মানে -ডাক্তারবাবুর বউ আমেরিকা যাবার সময় গাড়ীতে রেখে যায়।পরে ফোন করে বললেন,আমাকে দিয়েছেন।
একটা লোক দু-কাপ চা আর একটা প্যাটিস দিয়ে গেল।ঝর্ণা বলল,এটা কি?
চিকেন প্যটিস তুমি তো বললে--।
একটা কেন?
অনেক দাম তাই আচ্ছা আরেকটা বলছি।
থাক আর বলতে হবেনা একটা ছুরি দিয়ে কেটে দু-ভাগ কর।
এতে আমার নাম সেভ করে রাখব?ফোন করলে বিরক্ত হবে নাতো?
তুমি ফোন করলে তো তোমার নাম দেখা যাবে বিরক্ত হব কেন?জানো দিদি মোবাইলে অনেক আজেবাজে মেয়ের ফোন আসে।
এত খারাপ লাগে-
সাবধান যা মেয়ে পটানো চেহারা তোমার-
ধ্যেৎ কিযে বলনা তুমি!
মেয়েদের তো চেনোনা।তারা সাংঘাতিক স্ত্রীয়াশ্চরিত্রম দেবা ন জানন্তি-কাকে কিলেভাবে ফাসিয়ে দেবে-
তুমি মেয়ে হয়ে এরকম বলছো?দেখো কাসা পিতলে জঙ ধরেনা জঙ ধরে লোহায়।যে ফাসতে চায় সেই ফাসে শূধু মেয়েদের দোষ দিলে হবেনা।ে
মেয়েদের প্রতি তোর দেখছি খুব বিশ্বাস।যাই অনেক বেলা হল তোর সঙ্গে কথা বলে ভালই কাটল--
বিশ্বাস নয় শ্রদ্ধা
এই কাপগুলো কি করব?
রেখে দাও লোক এসে নিয়ে যাবে।
বাজারের থলে নিয়ে ঝর্ণা বলল,এবার নিজের কথা একটু ভাব,আসিরে ফোন করব।আর শোন কোনোৣৣ পুলিশী ঝামেলা হলে আমাকে বলবি-।ঝর্ণা চলে গেল।
দূর থেকে দেখে গোপাল বলল,আরে ফুলন দেবী না?
রনোর সঙ্গে চা খাচ্ছে কি ব্যাপার শালা ঠিক দেখছি তো।
ফুলন দেবীকে চা খাওয়াচ্ছে আর আমাদের বেলায় পয়সা নেই।
সবাই এতক্ষণ পার্টি অফিসে ছিল।।
দোকানে এসে বিশু বলল,বস আমাদের একটু চা হয়ে যাক।
প্লেট দেখে সিধু বলল,চায়ের সঙ্গে টাও ছিল মাইরি।
বিশ্বাস কর মাইরি দিদি খাইয়েছে-আরণ্যক সাফাই দিল।
উরিব্বাস আবার দিদিই!গোপাল বলতে সবাই হো-হো হাসিতে ভেঙ্গে পড়ল।
দিদি বলব না তো কি দিদিমা বলব?আরণ্যকের গলায় ক্ষোভ।
ঠিক আছে ঠিক আছে চা আমি খাওয়াচ্ছি।পিকলু বলল,এই মান্তু চারটে চা দুটো ফলস বলে আয়।
মোবাইল বাজতে বিশু একটু সরে গিয়ে কানে লাগিয়ে বলল,হ্যা বলো...গেছিলাম তো...কি মুষ্কিল অফিস ছুটি নাহলে কিকরে যাবো...তুমি দাড়াবে কেন আমিই বা কিকরে জানবো বলো...আহা তুমি একবার ফোন কোরতে পারতে আমি যাচ্ছি...তুমি বাড়ী চলে এসেছো তাহলে...আরঠিক আছে ভুল বোঝাবুঝি নয় আমার অন্যায় হয়ে গেছে আর কিছু?
বিশু ফিরে আসতে ফিসফিস করে জিজ্ঞেস করল মান্তু,ও ফোন করেছিল?
আর বলিস না নাথাকলেও জ্বালা আবার থাকলেও জ্বালা।
কি বলছিল?
নাম চিনি জিভে ঝাল।কথা হয়েছিল ছুটির পর নিকো পার্কে মিট করব
চা এসে গেছে হাতে হাতে নিয়ে নেও।পিকলু বলল।
মান্তু জিজ্ঞেস করে তুই যাস নি?
পরে বলছি চল চা খেয়েনি।
পিকলু এককাপ চা রনোকে এগিয়ে দিয়ে বলল,নে চা খা মাথা ঠাণ্ডা হবে।
মাথা আমার বরাবরই ঠাণ্ডা চায়ে চুমুক দিয়ে বলল,আচ্ছা তুই বল পিকলু কেউ যদি অতীতের সবকিছু ছেড়ে মূল ধারায় ফিরে আসতে চায় আমাদের কি উচিত নয় তার পাশে দাঁড়ানো?
ওদের কথা ছাড়ত তুই হয়েছিস যেমন।ঝর্ণা পাল তোকে কি বলছিল?
কলেজ থেকে ফেরার পথে বাজার কোরতে এসেছিল।ঝর্ণা পাল বিয়ে করে ঝর্ণা বসু হয়েছে।
কথাটা কানে যেতেই মান্তু বলল,কিরে আমি বলেছিলাম না,মিলল তো?
পিকলু বিরক্ত হয়ে বলল, আমাদের মধ্যে কি কথা হচ্ছে তুই জানিস?
যাক গে শোন পিকলু।ওরা বাসা ভাড়া করে আলাদা থাকতে চায় আমাকে বলল, আমার চেনা কোনো ঘর ভাড়া আছে কিনা?
ঘর এক জায়গায় আছে কিন্তু---
ঘর আছে বলছিস?কোথায় রে,ওদের খুব দরকার।
কিন্তু ওদের হবে না।
কেন হবেনা হাজব্যাণ্ড ওয়াইফ দুজনেই চাকরি করে অসুবিধে কোথায়?
সেইটাই তো তোকে বলছি।এক সময় ফুলদেবী দাদাকে নিয়ে কথা উঠেছিল এও শোনা গেছে চাকরিটা নাকি দাদাই করে দিয়েছে।
সব শোনা কথা।
আবার এখন কি হল দাদা ওদের নামই শূনতে চায়না।আবার বলে ওর নাকি চরিত্র ভাল নয়।
এসব কথা ভাল লাগছে না বাদ দে।
তোর আলমারিটা দাদা কিনেছিল না?
কি করব ঘর ছেড়ে দিতে হল আলমারি কোথায় রাখব
কতটাকায় বিক্রী করেছিলি?
আটশো মত হবে।
তুই জানিস টাকা কে দিয়েছিল?টাকা দিয়েছিল হারু সাহা।
আরণ্যকের মোবাইল বাজতে পিকলু বলল,তুই কথা বল আমি সিগারেট নিয়ে আসছি।
মোবাইল স্ক্রিনে ভেসে উঠেছে JB.আরণ্যক হেসে কানে লাগিয়ে বলল,হ্যালো?
রনো তোর কথা সজলকে বলছিলাম।তুই বললি কাসা পেতলে জঙ ধরে না তাই বলে অবহেলায় ফেলে রাখতে হবে?ঘষেমেজে চকচকে দেখতে ইচ্ছে করেনা?জীবনটাকে এত অবহেলা করিস না।
এখনো তাকে নিয়ে ভাবছে।আরণ্যকের চোখ ঝাপসা হয়ে আসে।সত্যিই মেয়েরা মায়ের জাত।ফোন কানে লাগিয়ে বলল, দোকানে খদ্দের এসেছে এখন রাখছি।
তোর গলাটা কেমন ভারী শোনাচ্ছে।
আরণ্যক ফোন কেটে দিল।