15-06-2024, 10:25 AM
(This post was last modified: 15-06-2024, 10:28 AM by Godhuli Alo. Edited 1 time in total. Edited 1 time in total.)
**পরম্পরা**
মণিরার আত্মকথাঃ
আজ আমার স্বামীর মৃত্যুদিন। 24 বছরের বন্ধন কেটে মানুষটা ছেড়ে গেলো আমাকে। ভাবতেই পারছি না যে এই পৃথিবীর কোথাও আর তার অস্তিত্ব নেই। ছেলে, মেয়ে, আত্মীয় স্বজনে পুরো বাড়িটা গমগম করছে তবু মনে হচ্ছে যেনো কোথাও কেউ নেই। আমি একা, একেবারেই একা। সারাটা দিন, সারাটা রাত কিভাবে কেটে গেলো, কিছুই যেনো টের পাই নি। পরের দিনগুলোও আমি আমার নিজের ভেতরেই ডুবে রইলাম। চারপাশের কোনো কিছুই খেয়াল করলাম না। তারপর আত্মীয় স্বজনরা যখন ধীরে ধীরে সবাই বিদায় নিতে লাগলেন, বাড়ি প্রায় ফাঁকা হতে থাকলো তখন আমার কিছুটা সম্বিৎ ফিরলো। সামনের দিনগুলো অনেক কঠিন ভাবে একাই কাটাতে হবে, সেটা উপলব্ধি করতে লাগলাম। স্বামীর মৃত্যুর এক সপ্তাহ পর আমার দুই মেয়ে বিদায় নেবার জন্য প্রস্তুত হলো। সেটাই স্বাভাবিক। তাদের নিজেদের সংসার রয়েছে। কতোদিন আর তারা এভাবে বাপের বাড়িতে পড়ে থাকবে? আমি প্রসন্নচিত্তেই বিদায় দিলাম তাদের। কিন্তু ওরা দুজন বের হবার পরেই একরাশ নিঃসঙ্গতা ছেয়ে ধরলো আমাকে। এতো বড় বাড়িতে এখন শুধু আমি আর আমার একুশ বছর বয়সী ছেলে ইমন। তাছাড়া ছেলের সাথে আমার খুব একটা কথাবার্তাও হয় না। কিশোর বয়স থেকেই ও একেবারে একা নিজের মতো করে একটা জগত তৈরি করে নিয়েছে যেখানে মা, বাবা, বোন কারোই প্রবেশাধিকার ছিল না। এখন পুরো বাড়িতে শুধু দুজন মানুষ থাকার পরেও সে যদি ঐভাবেই নিজেকে গুটিয়ে রাখে তাহলে বেঁচে থাকাটা আরও কঠিন হবে। বোনদের বিদায় দিয়ে কিছুক্ষণ পরেই ফিরলো ইমন। ফিরেই নিজের ঘরে গিয়ে ঢুকলো। তার কিছু সময় পর আমি ওর ঘরে গিয়ে বললাম, পুরো বাড়িটা কেমন ফাঁকা হয়ে গেছে নারে?
ইমন জোর করে মুখে হাসি আনবার চেষ্টা করে বলল, ফাঁকা হবে কেন আম্মা? আমি তো আছি।
আমিও স্মিত হাসার চেষ্টা করে বললাম, তুমি থাকা আর না থাকা তো সমান কথা। দরকার ছাড়া তো একটা কথাও বের হয় না মুখ থেকে।
ইমন হাসিমুখেই বলল, এখন যেহেতু আমাদের দুজনের আর কেউ নেই তাই কথা বলার দরকারটা বেশি বেশিই হবে। আর দরকার ছাড়াও এখন থেকে অনেক অনেক কথা আমরা বলবো নিজেদের কষ্ট আর একাকীত্ব ভুলতে।
আমি বললাম, তাহলে তো ভালোই। তবে আমার সবচেয়ে বড় ভয়টা হচ্ছে রাতে একলা ঘুমানো নিয়ে। কখনোই আমি একা ঘুমাই নি। তাছাড়া ভূতের ভয়টা আমার ছোটবেলা থেকেই বড্ড বেশি।
ইমন বলল, ঠিক আছে আম্মা। আজ থেকে না হয় রাতে আমিই ঘুমাবো আপনার কাছে।
আমি হাফ ছেড়ে বললাম, যাক বাঁচা গেলো বড় একটা চিন্তা থেকে।
মণিরার আত্মকথাঃ
আজ আমার স্বামীর মৃত্যুদিন। 24 বছরের বন্ধন কেটে মানুষটা ছেড়ে গেলো আমাকে। ভাবতেই পারছি না যে এই পৃথিবীর কোথাও আর তার অস্তিত্ব নেই। ছেলে, মেয়ে, আত্মীয় স্বজনে পুরো বাড়িটা গমগম করছে তবু মনে হচ্ছে যেনো কোথাও কেউ নেই। আমি একা, একেবারেই একা। সারাটা দিন, সারাটা রাত কিভাবে কেটে গেলো, কিছুই যেনো টের পাই নি। পরের দিনগুলোও আমি আমার নিজের ভেতরেই ডুবে রইলাম। চারপাশের কোনো কিছুই খেয়াল করলাম না। তারপর আত্মীয় স্বজনরা যখন ধীরে ধীরে সবাই বিদায় নিতে লাগলেন, বাড়ি প্রায় ফাঁকা হতে থাকলো তখন আমার কিছুটা সম্বিৎ ফিরলো। সামনের দিনগুলো অনেক কঠিন ভাবে একাই কাটাতে হবে, সেটা উপলব্ধি করতে লাগলাম। স্বামীর মৃত্যুর এক সপ্তাহ পর আমার দুই মেয়ে বিদায় নেবার জন্য প্রস্তুত হলো। সেটাই স্বাভাবিক। তাদের নিজেদের সংসার রয়েছে। কতোদিন আর তারা এভাবে বাপের বাড়িতে পড়ে থাকবে? আমি প্রসন্নচিত্তেই বিদায় দিলাম তাদের। কিন্তু ওরা দুজন বের হবার পরেই একরাশ নিঃসঙ্গতা ছেয়ে ধরলো আমাকে। এতো বড় বাড়িতে এখন শুধু আমি আর আমার একুশ বছর বয়সী ছেলে ইমন। তাছাড়া ছেলের সাথে আমার খুব একটা কথাবার্তাও হয় না। কিশোর বয়স থেকেই ও একেবারে একা নিজের মতো করে একটা জগত তৈরি করে নিয়েছে যেখানে মা, বাবা, বোন কারোই প্রবেশাধিকার ছিল না। এখন পুরো বাড়িতে শুধু দুজন মানুষ থাকার পরেও সে যদি ঐভাবেই নিজেকে গুটিয়ে রাখে তাহলে বেঁচে থাকাটা আরও কঠিন হবে। বোনদের বিদায় দিয়ে কিছুক্ষণ পরেই ফিরলো ইমন। ফিরেই নিজের ঘরে গিয়ে ঢুকলো। তার কিছু সময় পর আমি ওর ঘরে গিয়ে বললাম, পুরো বাড়িটা কেমন ফাঁকা হয়ে গেছে নারে?
ইমন জোর করে মুখে হাসি আনবার চেষ্টা করে বলল, ফাঁকা হবে কেন আম্মা? আমি তো আছি।
আমিও স্মিত হাসার চেষ্টা করে বললাম, তুমি থাকা আর না থাকা তো সমান কথা। দরকার ছাড়া তো একটা কথাও বের হয় না মুখ থেকে।
ইমন হাসিমুখেই বলল, এখন যেহেতু আমাদের দুজনের আর কেউ নেই তাই কথা বলার দরকারটা বেশি বেশিই হবে। আর দরকার ছাড়াও এখন থেকে অনেক অনেক কথা আমরা বলবো নিজেদের কষ্ট আর একাকীত্ব ভুলতে।
আমি বললাম, তাহলে তো ভালোই। তবে আমার সবচেয়ে বড় ভয়টা হচ্ছে রাতে একলা ঘুমানো নিয়ে। কখনোই আমি একা ঘুমাই নি। তাছাড়া ভূতের ভয়টা আমার ছোটবেলা থেকেই বড্ড বেশি।
ইমন বলল, ঠিক আছে আম্মা। আজ থেকে না হয় রাতে আমিই ঘুমাবো আপনার কাছে।
আমি হাফ ছেড়ে বললাম, যাক বাঁচা গেলো বড় একটা চিন্তা থেকে।