10-06-2024, 11:59 PM
(This post was last modified: 11-06-2024, 12:00 AM by kamonagolpo. Edited 1 time in total. Edited 1 time in total.)
পিতার আদেশে আমি পরদিনই অমরাবতীর উদ্দেশ্যে রওনা দিলাম ও সাতদিন বাদে সেখানে এসে পৌছলাম। পাহাড়ের কোলে সুন্দর প্রাকৃতিক পরিবেশে অপূর্ব সুন্দর এই অমরাবতী নগরী। ফুলে ফলে সাজানো তরুরাজিতে এখানে যেন সদা বসন্ত বিরাজ করছে।
আমার সাথে আসা সৈন্যরা নগরীর বাইরে তাদের শিবির স্থাপন করল। আমি দুজন দাসী নিয়ে রাজপ্রাসাদে এসে উপস্থিত হলাম।
প্রাসাদের বাইরে আমাকে মহামন্ত্রী সুলক্ষণ এবং তাঁর স্ত্রী চারুহাসিনীদেবী অভ্যর্থনা করলেন। তারপর চারুহাসিনীদেবী আমাকে আপ্যায়ন করে রাজঅন্তঃপুরে নিয়ে গেলেন।
অন্তঃপুরে আমার কক্ষে এসে আমি বিশ্রাম করার পর দাসীরা আমার জন্য উপযুক্ত আহার্য নিয়ে এল। চারুহাসিনীদেবী আমাকে অতি যত্নে আহার্য গ্রহন করালেন। আর আমার কাছে বার বার ক্ষমা চাইলেন যে মহারানী অপরূপাদেবীর শরীর অসুস্থ থাকায় তিনি আমাকে আপ্যায়ন করতে আসতে পারেননি।
আর অপরূপাদেবীর শাশুড়ি, রাজমাতাও পুত্রের নিধনে শোকস্তব্ধ হয়ে রাজধানী ত্যাগ করে আশ্রমবাসী হয়েছেন। অপরূপাদেবীর দুই ননদও আবার বিবাহ করে রাজধানী থেকে দূরে থাকেন তাঁরাও এই কঠিন সময়ে এখানে নেই।
তিন দিন কেটে গেল কিন্তু আমি অপরূপাদেবীর দর্শন পেলাম না। কিন্তু আমি ধৈর্য ধরে অপেক্ষা করতে লাগলাম। এই সময় আমি রাজ্যটি যথাসম্ভব ভ্রমন করে দেখে নিলাম।
রাজ্যের অভিজাত পরিবারগুলির সাথে আলাপ পরিচয়ও হল। তাঁরা সকলেই দেশের ভবিষ্যৎ নিয়ে উদ্বিগ্ন। সকলেই চান অপরূপাদেবী যত তাড়াতাড়ি সম্ভব সন্তানধারন করুন। কিন্তু অপরূপাদেবীর দর্শন কেউই পাচ্ছেন না।
চতুর্থ দিন আমার অনেক অনুরোধে চারুহাসিনীদেবী জানালেন অপরূপাদেবী একবার আমার সাথে স্বল্প সময়ের জন্য দেখা করবেন। তিনি জানতেন না যে আমি মহারাজ মকরধ্বজের কন্যা। জানলে তিনি আগেই দেখা করতেন।
আমি তাঁর সাথে অপরূপাদেবীর মহলে উপস্থিত হলাম। সেখানে একটি অতি সাধারন কক্ষে মাটির উপর একটি শয্যার উপরে অপরূপাদেবী বসে ছিলেন। পরনে বৈধব্য সাজ।
আমি গিয়ে তাঁর পাশে বসলাম। তাঁর বয়স বেশি নয়। গত তিনমাসের বৈধব্য জীবন যাপনে তাঁকে রুক্ষ লাগলেও একনজর দেখলেই বোঝা যায় যে তিনি কতটা সুন্দরী।
অপরূপাদেবী আমার গালে হাত দিয়ে আদর করে জিজ্ঞাসা করলেন - তুমি মহারাজ মকরধ্বজের কন্যা সরসিনী?
আমি ঘাড় নাড়তে তিনি একটু ম্লান হেসে বললেন - আমার বিবাহের সময় আমি ওনাকে দেখেছি। এই পরিবারের কাছে উনি দেবতার মত। তাই আমি তোমার সাথে সাক্ষাৎ করতে রাজি হলাম। না হলে আমি কারোর সাথেই আর দেখা করি না।
আমি বললাম - মহারানী, পিতা আপনার এই দুর্ভাগ্যে খুবই মানসিক কষ্ট পেয়েছেন। উনি মহারাজ ধনবলকে নিজের ভ্রাতার মতই স্নেহ করতেন। উনি আপনার অবস্থা জানার জন্যই বিশেষভাবে আমাকে পাঠিয়েছেন।
অপরূপাদেবী বললেন - উনি সত্যই খুবই দয়ালু। কিন্তু আমার অবস্থা এই তো দেখছ। আমি ঠিক করেছি আমার কন্যারা আর একটু বড় হলেই আমি সন্ন্যাস গ্রহন করব।
আমি বললাম - কেন মহারানী, এখন তো আপনার অনেক দায়িত্ব। এই রাজ্যকে তো আপনাকেই পালন করতে হবে। এই কথা আপনাকে বোঝানোর জন্য পিতা আমাকে অনেক করে বলেছেন।
অপরূপাদেবী বললেন - না আমার আর সংসারে থাকার ইচ্ছা নেই। স্বামীহীন নারীর এ জগতে কোন মূল্য নেই।
আমি বললাম - মহারানী, এ আপনার দুঃখের কথা। আপনি এখন দেহে ও মনে বিষাদগ্রস্থ তাই আপনার এইরকম মনে হচ্ছে। আপনার এখন উদ্দীপনার দরকার। তাহলেই আপনি আবার নতুনভাবে বাঁচতে পারবেন। আপনার জীবন সদ্য শুরু হয়েছে এখনই সন্ন্যাস গ্রহনের সময় নয়।
অপরূপাদেবী বললেন - সরসিনী, বয়সের তুলনায় তোমার চিন্তাভাবনা খুবই পরিণত। কিন্তু এই শোক আর বিষাদের কোন অন্ত নেই। আমি যেন এক অন্ধকারের মধ্যে ডুবে আছি। আমারও মাঝে মাঝে বাঁচতে ইচ্ছা করে কিন্তু তারপরেই আমি কোথায় যেন হারিয়ে যাই।
আমি বললাম - না মহারানী, আপনি হারিয়ে যাবেন না। আমি আপনাকে ফিরিয়ে আনব অন্ধকার থেকে আলোতে। পিতা আমাকে এই দায়িত্বই দিয়েছেন।
অপরূপাদেবী বললেন - কিন্তু তা কিভাবে সম্ভব হবে?
আমি বললাম - আপনাকে নতুন করে বাঁচতে শিখতে হবে। আপাতত আপনি কয়েকদিন আমার কথা মেনে চলুন। তারপর দেখুন আপনার অবস্থার পরিবর্তন হবে।
অপরূপাদেবী আমার হাত ধরে বললেন - সত্য বলছ তুমি? তুমি থাকবে আমার সাথে? তোমার বয়স বড়ই কম কিন্তু তোমার কথা শুনে মনে হচ্ছে তুমি খুবই বিদূষী ও বুদ্ধিমতী। মহারাজ মকরধ্বজ মনে হয় তোমাকে অনেক চিন্তাভাবনা করেই এখানে পাঠিয়েছেন।
আমি বললাম - অবশ্যই মহারানী, যতদিন না আপনি নতুন জীবনে ফিরে আসছেন আমি এখানে থেকে আপনাকে সঙ্গ দেব। পিতা আমাকে এই আদেশই করেছেন। আমাকে আপনি নিজের ভগিনী বলে মনে করতে পারেন।
আমার কথায় অপরূপাদেবীর দুই চোখ দিয়ে জল ঝরতে লাগল।