Thread Rating:
  • 9 Vote(s) - 2.22 Average
  • 1
  • 2
  • 3
  • 4
  • 5
হাতটা রেখো বাড়িয়ে (Writer: ইশরাত জাহান)
#33
 পর্ব -২৩


কানে ফোন নিয়ে স্তব্ধ হয়ে দাঁড়িয়ে রইলো শুদ্ধ। এই মুহুর্তে কর্ণগোচর হওয়া প্রতিটা কথাই কি সত্যি? কিছুক্ষণের জন্য তার সবকিছু কল্প ভ্রম বলে মনে হলো। কিন্তু না, চোখের সামনেই তো একটা নীল রঙের পাখি ডানা ঝাপটে উড়ে বেড়াচ্ছে। হিমেল হাওয়া গায়ে ধাক্কা খেয়ে খেয়ে চলে যাচ্ছে। স্বপ্ন তো রঙিন রঙের হয় না। গরম, ঠান্ডা, কোন ব্যাথার অনুভুত হয় না। তার মানে সবই বাস্তব! যেই ধারা নিজের কোন ক্ষুদ্র পছন্দ অপছন্দের কথা তার পরিবারের কাছে বলতে পারে না, সেই ধারা কিনা শুদ্ধ'র জন্য আজ নিজের বাবার কথার বিরুদ্ধে গেলো! অবশেষে সে নিজের মতামত সবার সামনে উপস্থাপন করতে পারলো! ফোনের ওপাশ থেকে আরো অনেক কথা হতে লাগলো। আজিজ সাহেব বিস্ফোরিত কণ্ঠে বললেন,
'তোমার মাথা ঠিক আছে? কি বলছো জানো!'
আজিজ সাহেবের ক্ষুব্ধ গলায় ধারা খানিক কেঁপে উঠলো। চোখ বন্ধ করে একটু গভীর শ্বাস টেনে কম্পিত স্বরে বলল,
'জানি। আমার মাথা পুরো ঠিক আছে। আমি আমার মনের কথাই বললাম।'

'ঐ ছেলে একটা পতিতার সন্তান! আর তুমি তার কাছে থাকতে চাইছো!'

ধারা এবার অধৈর্য স্বরে বলে উঠলো,
'তাতে কি হয়েছে বাবা? উনি তো কোন ভুল করেননি। সে তো ঠিক আছে। এখন তার আসল মা কে তাতে কি আসে যায়!'

'ঐ ছেলে আমাদেরকে ঠকিয়েছে। বিয়ের আগে কেন বললো না সত্যিটা?'

'শুদ্ধ যদি জানতো তাহলে অবশ্যই বলতো। শুদ্ধ কখনো কাউকে ঠকাতে পারে না। উনি খুব ভালো মানুষ। তাকে আমি বিশ্বাস করি৷ আর যদিও বা সত্যটা লুকানো থাকে তবুও এই সত্য জানা না জানায় আমার কিছু যায় আসে না। যার সাথে আমার বিয়ে হয়েছে আমি তাকে চিনি, জানি। আমি জানি সে কতোটা ভালো। সে ভালো থাকলেই আমার কাছে যথেষ্ঠ। তার আশেপাশের ব্যাপার আমার কাছে ম্যাটার করে না। প্রত্যেকটি মানুষেরই একটা নিজস্ব আলাদা ব্যক্তিত্ব থাকে৷ জন্ম পরিচয়ে কি হয়? আসল পরিচয়টা তো তার ভেতরের গুণগুলো দিয়েই হয়। তার নিজের কর্ম দিয়ে হয়। আর শুদ্ধ'র সেখানে কোন খাদ নেই।'

আজিজ সাহেব আসমার দিকে তাকিয়ে ক্ষুব্ধ হয়ে বললেন, 'তোমার মেয়ের কি হয়েছে? পাগল হয়ে গেলো নাকি!'

শাহেদ উদ্গ্রীব হয়ে ধারার কাছে এসে বলল,
'ধারা, কি বলছিস তুই এগুলো? আমরা তোর ভালোর জন্যই যা করার করছি।'

ধারা কেঁদে ফেলে বলল, 'আমি শুধু তার কাছেই ভালো থাকবো। আর কোনভাবেই না।'

আজিজ সাহেব হুংকার ছেড়ে বললেন,
'বিয়ে করে এই মেয়ের আস্পর্ধা বেড়ে গেছে! বড়দের সামনে কিসব কথা বলে যাচ্ছে।'

ধারা কাঁদতে লাগলো। শাহেদ মোলায়েম স্বরে বলল, 'কাঁদে না ধারা। দেখ, আমি বুঝতে পারছি। এতোদিন তুই ও বাড়িতে ছিলি তাই এভাবে হুট করে সিদ্ধান্ত হওয়ায় তোর একটু মায়া লাগছে। ব্যাপার না। আস্তে আস্তে দেখবি সব ভুলে যাবি। একটু সময় যেতে দে।'

আজিজ সাহেব বললেন, 'ধারা, আমি যা বলছি তুমি তাই করবে। পৃথিবীর ভালো মন্দ তুমি এখনও জানো না। এতো বড়ও হয়ে যাও নি।'

ধারা বলল, 'যদি বড়ই না হয়ে থাকি তাহলে আমাকে বিয়ে কেন দিয়েছিলেন বাবা? আমি এমন কি বড় অন্যায় করে ফেলেছিলাম! এখন যখন আমি আমার স্বামীর কাছে থাকতে চাইছি তখন বলছেন তাকে ছেড়ে দিতে! যখন ইচ্ছা সবাই বলবেন বিয়ে করতে, যখন ইচ্ছা বলবেন ছেড়ে দিতে....এভাবে কিভাবে হয় বাবা? আমার নিজেরও তো কিছু ইচ্ছা অনিচ্ছা আছে।'

আজিজ সাহেব গর্জে উঠে বলে উঠলেন,
'ব্যাস! অনেক বেশি বলে ফেলেছো। এখানেই থেমে যাও। তুমি আর ঐ বাড়িতে ফিরে যেতে পারবে না। না মানে না। আর একটাও কথা না। আসমা, তোমার মেয়েকে ভেতরে নিয়ে যাও।'

আজিজ সাহেব খুব বেশি ক্ষেপে আছেন। শঙ্কিত হয়ে আসমা দ্রুত ধারাকে ধরে রুমে নিয়ে যেতে চায়। ধারা যেতে চায় না। সে কাঁদতে কাঁদতে বলতে থাকে, 'না বাবা। আপনি এটা করতে পারেন না। আমি শুদ্ধ'র কাছেই থাকতে চাই। আমি তাকে ছাড়বো না। কোনদিনও ছাড়বো না।'

আজিজ সাহেব ভ্রুকুটি করে সেদিকে তাকিয়ে থাকেন। ধারাকে ভেতরে নিয়ে গেলে শাহেদ এসে ভাইকে বলে, 'ভাইজান, ধারাকে নিয়ে এতো মাথা 
ঘামাবেন। বাচ্চা মানুষ তো৷ আবেগী হয়ে পড়েছে। একটু সময় গেলেই ঠিক হয়ে যাবে। আমরা যা ঠিক করেছি আপনি সেদিকে মনোযোগ দেন। ধারাকে এখন বুঝিয়ে সুঝিয়ে ঐ ছেলেকে ডিভোর্স দেওয়াতে হবে। যত দ্রুত সম্ভব এই ঝামেলা মিটিয়ে ফেলতে পারলেই হলো।'

আজিজ সাহেব আর কোন জবাব দেন না। একবার শাহেদের দিকে দৃষ্টিপাত করে তিনি গটগটিয়ে রুমে চলে যান।

রুমে বসে ধারা ব্যাকুল হয়ে কাঁদতে থাকে। জীবনের সমস্যাগুলো যেন কমার নামই নিচ্ছে না। একের পর এক জট লেগেই যাচ্ছে, লেগেই যাচ্ছে। ধারা অসহায় বোধ করে। শুদ্ধ'র কথা খুব বেশি মনে হতে থাকে তার। ঠিক তখনই তার ফোনটা বেঁজে উঠে। সে উঠায় না। বারবার বাজতেই থাকে৷ শেষমেশ বিরক্ত হয়ে নাম না দেখেই কানে তুলে বলে, 'হ্যালো!'

ওপাশ থেকে একটা স্পষ্ট ভরাট গলায় কেউ বলে উঠে, 'ধারা!'
একমুহূর্তের জন্য ধারা থমকে যায়। মন প্রাণ জুড়ে এক শীতল শিহরণ বয়ে যায়। সেই চেনা ডাক! আজ কতদিন পর ধারা শুনতে পেলো শুদ্ধ'র সুমিষ্ট সুস্পষ্ট কন্ঠস্বর। ধারা চোখ বন্ধ করে ফেলে। আত্মায় পানি ফিরে আসে তার। চোখ বেয়ে গড়িয়ে পড়ে জল। শুদ্ধ আবারো ডেকে উঠে, 'ধারা, শুনছেন?'

আর সময় নষ্ট না করে ধারা চটজলদি বলতে থাকে, 'শুদ্ধ....শুদ্ধ, প্লিজ আমাকে মাফ করে দিন। আমি আর কখনোই এমন করবো না। আমার উপর আর রাগ করে থাকবেন না। আমাকে ক্ষমা করে দিন।'

শুদ্ধ ধারাকে থামিয়ে বলল, 'কিসের জন্য ক্ষমা চাইছেন আপনি?' 
'ঐ পরীক্ষার ব্যাপারটার জন্য....
শুদ্ধ আবেগ্লাপুত থেকেই মৃদু হেসে বলল, 
'আপনি এখনও ঐ ব্যাপারেই পড়ে আছেন! যেখানে এতো বিরাট কিছু হয়ে গেছে। আমাকে নিয়ে এতো বড় একটা সত্য বেড়িয়ে এসেছে....
শুদ্ধ'র কথার মাঝেই ধারা বলে উঠলো, 'ঐ সবে আমার কিছু যায় আসে না।'
শুদ্ধ একটু নাক টেনে আবারো হাসলো। বলল,
'আপনি আজকে আমাকে অবাক করে দিয়েছেন ধারা। আপনি আজ আপনার বাবার সামনে যা বললেন।'
শুদ্ধ একটু থামে। ধারা অবাক হয়৷ শুদ্ধ কিভাবে জানলো? ধারার মনের ভাব বুঝতে পেরে শুদ্ধ বলে, 'আমি শুনেছি। সবটাই শুনেছি। আমি তখন আপনাদের বাড়ির ফোনে অন স্পিকারে ছিলা। আপনি আজকে যা বললেন, আপনি শিওর তো?'
'হুম।'
'সত্যি?'
'এর থেকে বেশি শিওর আমি আমার জীবনে আর কখনো হইনি।'
'এই কথা জানাজানি হলে আপনাকেও অনেক কথা শুনতে হবে। পারবেন তো ধারা আমার সাথে থাকতে?'
ধারা ক্ষণবিলম্ব না করেই বলল, 'পারবো।'
'ভেবে চিন্তে দেখবেন ধারা। এতো তাড়াহুড়ো করার কিছু নেই।'
'ভাবাভাবির আর কোন প্রশ্নই উঠে না। আমার মন কি চায় আমি জানি।'
শুদ্ধ'র ঠোঁটের কোনায় তৃপ্তির হাসি ফুটে উঠে। সে নরম কণ্ঠে বলে, 'এতো কনফিডেন্ট!'
ধারা বলে, 'আপনিই তো বলেছিলেন, নিজের উপর সবসময় বিশ্বাস রাখতে।'
শুদ্ধ কণ্ঠ স্বাভাবিক করে টেনে বলে, 'হুম! আমি আরও অনেক কিছু বলেছিলাম তা কি মনে আছে?
'কি?'
'এই যে, যাই হয়ে যাক সবসময় ঠিকমতো খাওয়া....

ওপাশ থেকে হঠাৎ শুদ্ধ'র কথা থেমে যায়। ধারা কান থেকে ফোন নামিয়ে দেখে তার ফোনের চার্জ শেষ হয়ে বন্ধ হয়ে গেছে। ধারা একটু বিরক্তির সাথে ফোনটা ঝাঁকি দেয়। বাড়িতে আবারো শাহেদ আর আজিজ সাহেবের জোরালো গলার আওয়াজ শোনা যায়। প্রসঙ্গ ঐ একই। শুদ্ধ'র থেকে ধারাকে ছাড়িয়ে নেওয়া। শুদ্ধ'র সাথে কথা বলে যা একটু মনটা হালকা হয়েছিল, বাবা চাচার সেই কথা শুনতে পেরে ধারা আবারো কাঁদতে থাকে। বালিশে মুখ গুঁজে অশ্রু লুকায়। সে রাতে আর ধারা খেতে আসে না। আসমা অনেক ডাকাডাকি করে। কিন্তু লাভ হয় না। ধারার সাথে ঘুমাতে জমিরন বিবিকে পাঠানো হয়। ধারার অবস্থা ভালো না। রুমে একা ঘুমোতে দেওয়া ঠিক হবে না। ধারাদের বাড়িটা পাকা দোতলা ধরণের। নিচ তলা পুরো কম্প্লিট হলেও দোতলায় শুধু ভেতরের টুকু ঠিক করা হয়েছে। বাইরের কাজ এখনো বাকি। বেলকনিতেও গ্রিল লাগানো হয়নি। সেই খোলা বারান্দায় অন্ধকারের মধ্যে বসে বসে ধারা আকাশের দিকে তাকিয়ে কাঁদে। একটা সময় ছিল যখন ও বাড়িতে ধারার যেতে ইচ্ছে করেনি। বিয়ের আগের রাতটিতেও ঠিক এভাবেই বারান্দায় বসে আকাশের দিকে তাকিয়ে কেঁদেছিল ধারা। তবুও ধারাকে যেতে হয়েছিল। আর এখন একটা সময় যখন ধারা ও বাড়িতে যাবার জন্যই কাঁদছে। আগে অচেনা যেই পুরুষটির কথা ভাবনায় এনে ধারা ভয় পেতো, আজ তার বিরহেই ধারা ব্যাকুল। তাকে একটি বার চোখের দেখা দেখার জন্যই তার মন উৎকণ্ঠিত। সময় কিভাবে পাল্টায়! ধারা ধীর পায়ে উঠে নিজের রুমের দিকে তাকায়। কতো সুন্দর পাকা ঘর, নজরকাড়া দেয়ালের রং, আরামদায়ক বিছানা, বিভিন্ন প্রসাধনী। তবুও ধারার মন টানছে সেই একছেয়ে টিনের বেষ্টন, কাঠের পাটাতন, সাধারণ বিছানা, আর সেই অসাধারণ মানুষটির প্রতি। তার নিজের চিরচেনা রুমটিই আজ তার বড় অচেনা ঠেকে। এই কক্ষে সব থেকেও নেই। বড্ড খালি। ভালোবাসা শুন্য। ধারার ইচ্ছা করে ছুটে এখান থেকে বেড়িয়ে পড়তে। 

জমিরন বিবি অনেকক্ষণ যাবৎ ধারার দিকে তাকিয়ে ছিলেন। ধারাকে এমন উদাস মনে রুমের দেয়ালে নজর বুলাতে দেখে তিনি খেঁকিয়ে উঠে বলেন, 'এই ছেমড়ি, ঘুমাইলে ঘুমা। নইলে বাত্তি নিভাইয়া বইয়া থাক। এই আলোতে আমার ঘুম আহে না।'

ধারা লাইট বন্ধ করে বিছানায় শুয়ে পড়ে। পাশ ফিরে নিরবে অশ্রু বিসর্জন করে৷ যাতে ঘুমন্ত দাদীর অসুবিধা না হয়। রাত গভীর হতে থাকে৷ একসময় ঘুমিয়ে যায় ধারা। মাঝ রাতে হঠাৎ একটা শক্ত হাত তার মুখ চেঁপে ধরে। ধারার ঘুম ভেঙে যায়। মুখ দিয়ে অস্ফুট আতর্নাদ করতে গিয়েও সে ব্যর্থ হয়। স্পষ্ট করে তাকিয়েও অন্ধকারে একটা মানুষের অস্পষ্ট অবয়ব ছাড়া আর কিছু চোখে পড়ে না।
 

চলবে,
===========================
পড়তে থাকুন  চটি গল্প এ-র পাশা-পাশি ভিন্ন ধরনের গল্প ✒।


Keep reading chatty stories as well as different types of stories✒.



( Post By- Kam Pagol) 

Like Reply


Messages In This Thread
RE: হাতটা রেখো বাড়িয়ে (Writer: ইশরাত জাহান) - by Bangla Golpo - 02-06-2024, 11:07 AM



Users browsing this thread: 1 Guest(s)