01-06-2024, 09:35 PM
দরজায় নক করার কিছুক্ষণের ভেতরেই শাহেদ এসে দরজা খুলল। খালি গায়ে, লুঙ্গি পরা। দেখেই ভেতরটা আনচান করে উঠলো। কিন্তু যা যা ভেবে রেখেছিলাম তার কিছুই আর মনে রইলো না। ওকে দেখে একেবারে স্বাভাবিক মায়ের মতোই বললাম, ঘুম আসছিল না। তোর বাবা, সাথী, সেতু সবাই ঘুমিয়ে গেছে। তাই ভাবলাম ঘরে নক করে দেখি। সাংসারিক ব্যাপারেও তো কথা বলা দরকার তোর সাথে। শাহেদ বলল, আসেন আম্মা। ভেতরে এসে বসেন। আমিও ঘুমিয়ে গেছিলাম। কিছুক্ষণ আগে জাগলাম। আমি ঘরে ঢুকে শাহেদের খাটের উপর বসলাম। শাহেদ কিছুটা দূরত্ব বজায় রেখে বসলো আমার পাশে। আমি ওর কাছে এগিয়ে গিয়ে ওর খোলা গায়ে হাত দিয়ে বললাম, এতো শুকিয়ে গেছিস কেন এই কদিনেই? বড় হবার পর আমি এভাবে ওর গায়ে কখনো হাত দেই নি তাই সে সংকোচে একেবারে জড়সড় হয়ে বলল, কই? আমি তো আগের মতোই আছি। আমি আবার ওর গায়ে হাত দিয়ে বললাম, নারে, অনেকটাই শুকিয়ে গেছিস। খাওয়া দাওয়া ঠিকমতো করবি। আর বেতনের টাকা তো প্রায় সবটাই আমার হাতে তুলে দিস। নিজের হাত খরচ কি থাকে কিছু? শাহেদ - আমার যা লাগে তা রাখি নিজের কাছে। এই নিয়ে চিন্তা করবেন না আম্মা। আমি দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললাম, আমার কপালের দোষ। নইলে এই বয়সে আমার বুকের মানিককে পড়াশোনা ছেড়ে সংসারের হাল ধরতে হবে কেন? বলেই ওর মাথাটা ধরে আমার বুকে চেপে ধরলাম। বুকের নরম মাংসপিণ্ডের মাঝে ছেলের মাথাটা অনুভব করে আমার সারা শরীরে বিদ্যুৎ খেলে গেলো। কিন্তু সে তৎক্ষণাৎ নিজেকে ছাড়িয়ে নিয়ে বলল, আহা আম্মা! অহেতুক মন খারাপ করেন কেন? যেটা হয় সেটা ভালোর জন্যই হয়। তাছাড়া আমি তো পড়াশোনায় অত ভালো ছিলাম না। হয়তো আগে ভাগে চাকরিতে ঢুকে পড়াটাই আমার জন্য ভালো হয়েছে। আমি আর কথা খুঁজে পাচ্ছিলাম না। আর কি করতে পারি তাও বুঝতে পারছিলাম না। শেষে আবার একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললাম, হুম। এই ভেবেই নিজেকে সান্ত্বনা দিতে হবে। আর উপায় কি? আচ্ছা বাবা, এখন থেকে মাঝে মাঝে রাতে সবাই ঘুমানোর পর আসবো তোমার কাছে সাংসারিক আলাপ করতে। এখন তো তুমিই বাড়ির কর্তা। সব ব্যাপারে তোমার সাথে আলোচনা করাটা তো দরকার। শাহেদ হেসে বলল, আসবেন আম্মা। তবে যেকোনো ব্যাপারে আপনি নিজেই সিদ্ধান্ত নিতে পারেন। সংসার আগেও আপনার ছিল আর এখনো আপনারই আছে। আমি ওর মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বললাম, বেঁচে থাকো বাবা। আল্লাহ মনের সব আশা পূরণ করুক। আচ্ছা, আমি এখন যাই। কাল রাতে আবার আসবো নে। সে হাসিমুখেই বলল, আচ্ছা আম্মা। আমি বেরিয়ে আসতেই সে দরজা লাগিয়ে দিলো আর সাথে সাথেই আমি একটা দীর্ঘশ্বাস ফেললাম। কি বলতে আসছিলাম আর কি বললাম। কি করার কথা ছিল আর কি করলাম। নিজের ওপর, নিজের ভাগ্যের ওপর রাগ হচ্ছিল। ধীর পায়ে নিচে নেমে বিছানায় গিয়ে শুয়ে পড়লাম আর নিজের অজান্তেই চোখের জলে বালিশ ভেজালাম।