Thread Rating:
  • 9 Vote(s) - 2.22 Average
  • 1
  • 2
  • 3
  • 4
  • 5
হাতটা রেখো বাড়িয়ে (Writer: ইশরাত জাহান)
#24
পর্ব -১৬


সকাল থেকেই শুদ্ধদের বাড়িতে একটা জমজমাট ভাব। শহর থেকে শুদ্ধ'র কিছু ফ্রেন্ড এসেছে। সবগুলোই মেয়ে। সকাল দশটা নাগাদ রূপনগর গ্রামে পৌঁছেছে তারা। সারাদিন থেকে আবার সন্ধ্যার পরে চলে যাবে। সবকিছু আগে থেকেই পূর্বপরিকল্পিত ছিল। তারা সবাই শহুরে, কখনো গ্রাম দেখেনি। শুদ্ধদের বাড়িতে আসার ইচ্ছে সেই ইউনিভার্সিটি লাইফ থেকেই ছিল। অবশেষে একটা শক্ত পরিকল্পনা করে চলেই এসেছে সবাই। প্রায় চার পাঁচটা মেয়ে। সবার পরনেই আধুনিক পোশাক। সাথে সুন্দরীর খেতাব তো আছেই। সকাল থেকেই তাদেরকে বারবার ঘুরে ঘুরে দেখছে ধারা। খোদেজার সাথে রান্না বান্নায় সাহায্যর সাথে সাথে তার আড়চোখের দৃষ্টি শুধু সেদিকেই যাচ্ছে। একটু আগে খোদেজা বলেছিল ধারাকে, মেহমানদের ট্যাং গুলিয়ে শরবত বানিয়ে দিতে। ধারা কিছু ফলমূল কেটে সাথে শরবতের গ্লাস নিয়ে ট্রে সমেত গেলো শুদ্ধ'র ফ্রেন্ডদের কাছে। শুদ্ধ ওদের সাথেই বসে খোশগল্পে মজেছে। এদের মধ্যে সবাই যে শুদ্ধ'র ভালো ফ্রেন্ড এরকম নয়। কেউ কেউ ফ্রেন্ডের ফ্রেন্ড আর ভালো ক্লাসমেট সূত্রেও আছে। ধারা সেখানে গিয়ে শুনতে পেলো শুদ্ধ বলছে,
'তোরা একা চলে এলি কেন? রাকিব, শিহাব, তুহিন ওদেরকেও সাথে নিয়ে আসতি।'

শুদ্ধ'র সবথেকে ভালো ফ্রেন্ড তিশা বলল,
'কেন? ওদেরকে নিয়ে আসতে হবে কেন? ঐ হারামীগুলা যে এর আগে একা একা বেড়িয়ে গেলো! তখন আমাদের আনছিলো? ওরা ছেলেরা ছেলেরা একা বেড়িয়ে গেছে এখন আমরা মেয়েরা মেয়েরা একা বেড়াবো। আমরা মেয়েরাও কোন কিছুতে কম না।' 

শুদ্ধ মৃদু হাসলো। তিশা বলে উঠলো,
'তুই হাসবি না। তুই হইলি গিয়া আরেকটা হারামী। একা একা বিয়ে করে ফেললা! আমাদের খবর দিছিলা?'

'খুব তাড়াহুড়োর মধ্যে হয়ে গেছে রে। কাহিনী আছে অনেক। তোরা বুঝবি না।'

'তুই তোর কাহিনী নিয়া চুপ থাক! তোর বউরে ডাক। গল্প করি।'

ধারা ট্রে হাতে ওদের সামনে গিয়ে নামিয়ে রাখলো। তিশা আর বাকি সবাই আরো একবার ভালো মতো দেখে নিলো তাদের সামনে দাঁড়ানো উনিশ বছরের সুন্দরী মেয়েটিকে। তিশা একটু এগিয়ে এসে শুদ্ধকে চোখ মেরে ফিসফিসিয়ে বলল,
'বউ তো দেখি ভালোই সুন্দর। দিন তো মনে হয় ভালোই কাটছে!'

শুদ্ধ ওঁকে থামিয়ে বলল, 'ধ্যাৎ! চুপ কর তো।'
তিশা চুপ হয়ে গেলো। ধারা শুধু বিস্ময় চোখে ও'র সামনের মেয়েগুলোকেই দেখতে লাগলো। একেকটার চাইতে একেকটা সুন্দর। চলন বলনও অন্যরকম। সবাই দেখতেই কতো স্মার্ট! পোশাক আশাকেও ধারার সম্পূর্ণ বিপরীত। ধারা খেয়াল করলো এদের মধ্যে সবচাইতে বেশি সুন্দরী মণিকা নামের ছিপছিপে গড়নের মেয়েটা ধারাকে একদম পা থেকে মাথা পর্যন্ত খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখছে। তাকানোর ধরণটাও একটু অদ্ভুত। ধারা ভাবতে লাগলো, এই এতো সুন্দর সুন্দর মেয়ে, এই সবগুলোই কি শুদ্ধ'র ফ্রেন্ড? একটা মানুষের এতো ফ্রেন্ড থাকে? ছেলেদের এতো মেয়ে বন্ধু থাকার কি দরকার? আর দেখো, এদের সাথে কি সুন্দর হেসে হেসে কথা বলছে! হাসি যেন আর বাঁধ মানছে না। আর আমার সাথে যখন কথা বলে তখন একটা কথার মধ্যে দুইটাই থাকে খোঁচা। 
শুদ্ধ উঠে দাঁড়িয়ে বলল, 
'তোরা দেখ আশেপাশে ঘুরে ঘুরে। আমি একটু দুই মিনিটের জন্য আসছি।'

শুদ্ধ চলে গেলে বাকি সবাইও ছড়িয়ে ছিটিয়ে শুদ্ধদের বাড়ি দেখতে লাগলো। ধারা শুধু আড়াল থেকে নজর রাখতে লাগলো মেয়েগুলোর উপর। এর মধ্যে মণিকা নামের মেয়েটিকে দেখলো আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে নিজেকে বারবার ঠিকঠাক করছে। তার পাশে থাকা মেয়েটি ও'র কান্ডে ক্লান্ত হয়ে বলল, 
'আর কতক্ষণ লাগাবি? চল বাইরে যাই।'
'দাঁড়া, আর এক মিনিট। দেখ তো আমাকে দেখতে কেমন লাগছে?'
'ভালোই লাগছে।'
মণিকা দুষ্টুমি করে চোখ মেরে বলল,
'হট লাগছে?'
'আরে বাবা হ্যাঁ।'
একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে মণিকা বলল,
'আচ্ছা, আমি কি আগে দেখতে কম হট ছিলাম? শুদ্ধ'র আমার প্রতি ইন্টারেস্ট না জন্মিয়ে এই গ্রামের মেয়েটার ভেতর এমন কি পেলো?'

পাশের মেয়েটি বলল, 'তুই যথেষ্ঠ হট ছিলি আর আছোস। যার বিয়ে যার সাথে লেখা তার সাথেই হবে। এগুলা নিয়ে ভেবে লাভ নাই এবার চল তো৷ তোর প্রেজেন্ট বয়ফ্রেন্ডও কি কম হ্যান্ডসাম নাকি!'

'তা ঠিক। তবে শুদ্ধ'র ব্যাপারটাই আলাদা। এখন আর কি করার! চল বাইরে যাই।'
মণিকা চলে গেলে ধারা পেছন থেকে মেয়েটার দিকে তাকিয়েই রইলো। মণিকার পরনে ব্লু টপস আর হোয়াইট জিন্স। চুলগুলো কার্লি করা। দেখতেই কতো স্মার্ট লাগে। আর অপরদিকে ধারা....! ধারা মুখ ফুলিয়ে আয়নার সামনে গিয়ে দাঁড়ালো। তার পরনে গোলাপি রঙের ছাপা তোলা থ্রি পিছ। মাথার চুল গুলো বেণি করা। একদম সাধারণ। ধারা আরেকবার পেছন থেকে মণিকার দিকে তাকিয়ে নিজের চুলের বেণিটা খুলে ফেললো৷ তার রেশমীর মতো লম্বা সোজা চুলগুলো হঠাৎ ছাড়া পেয়ে বাতাসে তাল মেলাতে লাগলো। সেভাবেই বাইরে চলে এলো ধারা। বাইরে এসে দেখলো তিশা শুদ্ধকে বলছে,
'ঐ, এখানেই আর কতক্ষণ থাকবো? আশপাশটা তো দেখলামই। তোর খামারে নিয়ে চল৷ আমাদের ব্যাচের সবার থেকে ডিফারেন্ট তুই কি করতাছোস ঐটা দেখতে হবে না!'

শুদ্ধ বলল, 'এখনই যাবি?'

'হুম। আমি গাড়ি ড্রাইভারকে বলে আসি।'

শুদ্ধ হাসতে হাসতে বলল, 'গাড়িতে যাবি? তুই কি এখনও শহরে আছোস ফাজিল? পায়ে হেঁটে যেতে হবে ক্ষেতের উপর দিয়ে। ঐখানে গাড়ি নিলে গ্রামবাসী তোদের ধরে পিটাবে।'

ওরা সবাই যাবার জন্য রওনা হলো। তিশা ধারাকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে বলল, 'আরে ধারা! তুমিও চলো। বুঝতে পারছি তুমি অনেকবার গিয়েছো, তোমার নতুন করে দেখবার কিছু নেই। তাতে কি হয়েছে? আমাদের সাথেও না হয় দেখলে আরেকবার।'

ধারা কি বলবে ভেবে পেলো না। কারণ সে তো এর আগে কখনো শুদ্ধ'র খামারে যায়নি। সত্যি বলতে তার কখনো মাথাতেই আসেনি এটা। শুদ্ধ জিজ্ঞাসাসূচক দৃষ্টিতে ধারার দিকে তাকিয়ে রইলো। সত্যিই ধারার যাওয়ার ইচ্ছা আছে নাকি বোঝার জন্য। নয়তো কোন কিছুর জন্যই শুদ্ধ ধারাকে জোর করতে চায় না। তিশা ওরা একটু এগিয়ে গেলে শুদ্ধ ধারার কাছে এসে মৃদু স্বরে জিজ্ঞাসা করলো, 'ধারা, আপনি যাবেন?'
ধারা বলল, 'হুম।'
ধারার সত্যিই যেতে মন আছে নাকি নেই ভেবেই শুদ্ধ আবারো বলল, 'আপনার যেতে ইচ্ছা না করলে থাক। আমি তিশাকে কিছু একটা বলে বোঝাতে পারবো৷'
ধারার কিঞ্চিৎ রাগ হলো। বলল, 'কেন? আমি যেতে পারবো না কেন?'
'না মানে আপনার যদি অসুবিধা হয়ে থাকে তাই বললাম।'
'আপনার ফ্রেন্ডদের যদি অসুবিধা না হয় তাহলে আমার হবে কেন? তাদের মধ্যে একজন যেতে না চাওয়ায় তখন দেখলাম তাকে খুব বুঝিয়ে সুঝিয়ে নিচ্ছেন। আর এখন আমাকে এটা বলছেন কেন? আমি যাবোই।'
ধারা হনহনিয়ে গিয়ে তিশাদের পিছু নিল। শুদ্ধ অবাক হয়ে তাকিয়ে রইলো। শুদ্ধ তো ধারার ভালোর জন্যই বলেছিল। এতে এমন রাগ করার কি হলো?

গ্রামের পথে নামতেই সবাই ড্যাবড্যাব করে তাকিয়ে এই শহুরে চালচলনের মেয়েগুলোকে দেখতে লাগলো। তাদের পোশাকগুলোই বেশি আকর্ষণ করছে গ্রামবাসীদের। ধারা তখন চুল ছেড়ে আসলেও পথে নামতেই মাথায় ওড়না দিয়ে ঘোমটা দিয়ে নিলো। সে বউ মানুষ। আবার কে দেখে কি বলে! ওরা গ্রামের ক্ষেতের আল ধরে হেঁটে যেতে লাগলো। মাটি দিয়ে বানানো একদম সরু যাবার মতো একটা অস্থায়ী ব্যবস্থা। শুদ্ধ আর ধারার অভ্যাসের কারণে তেমন অসুবিধা না লাগলেও তিশাদের বেশ অসুবিধা লাগলো। একেকজন হাঁটতে গিয়ে বারবার একেক দিকে কাত হয়ে যায়। এই বুঝি বারবার পাশের ধানের ক্ষেতে পড়তে গিয়েও বেঁচে যায়। ওদের কান্ড দেখে ধারার কিঞ্চিৎ হাসি পেলো। শুদ্ধ বারবার উদ্গ্রীব হয়ে বলতে লাগলো, 'সাবধানে যাস।' ধারার হাসি গায়েব হয়ে গেলো। আল পেরিয়ে সামনে এলো ছোট্ট একটা গর্তের মতো। পানি জমে ডোবার মতো হয়ে রয়েছে। তার উপরে একটা ছোট্ট গাছের গুঁড়ি ফেলে যাবার ব্যবস্থা করা হয়েছে। মণিকা দেখেই বলল,
'অসম্ভব! এটার উপর দিয়ে যাবো কিভাবে? পা দিলেই তো মনে হয় পড়ে যাবো। আমি বাবা পারবো না।'
বাকিদেরও একই মত। শুদ্ধ বলল, 'এছাড়া তো উপায় নেই। একটু চেষ্টা কর, পারবি। মাত্র দু কদম ফেললেই তো হয়ে যাবে। এই দেখ এই যে, মাটি থেকে এক পা গাছের গুঁড়িতে ফেলবি তারপর আবার আরেক পা ওপারের মাটিতে। সিম্পল।'
শুদ্ধ একবার করে দেখালোও। কিন্তু শহুরে মানুষ, জীবনেও যা চোখে দেখেনি তা কি আর তাদের বোধগম্য হবে! ধারার কাছেও এটা কিছুই লাগলো না। এমন ছোট গর্তের উপর গাছের গুঁড়ি দিয়ে পার তো সে কতোই হয়েছে। সেদিন নেহাত অনেক লম্বা সাঁকো ছিল বলে তার পা পিছলে গিয়েছে। আজকেরটা তো সে অনায়াসেই পার হতে পারবে।
সবার আবারো একই কথা শুনে শুদ্ধ গাছের গুঁড়ি পার হয়ে গিয়ে হাত বাড়িয়ে বলল, 'আমার হাত ধরে আস্তে আস্তে আয়। তাহলে তো আর পড়বি না।'
সবাই তাই করলো। শুদ্ধ'র হাত ধরে সবাই আল্লাহ আল্লাহ করতে লাফিয়ে টাফিয়ে চিৎকার করতে করতে অবশেষে একে একে সবাই পার হতে লাগলো। মুখ আংশিক ভার হয়ে গেলো ধারার। এমন লাফানোর কি আছে? হাত না ধরে কি আর পার হওয়া যেতো না! একে একে যখন সবার শেষ হয়ে গেলো তখন খুশিমুখে শুদ্ধ'র দিকে নিজের হাত বাড়িয়ে দিলো ধারা। কিন্তু শুদ্ধ'র নজরে তা পড়ার আগেই সে ঘুরে গেলো। ধারার মুখ ফুলে গেলো। আসল কথা ধারার অভ্যেস আছে, সে পারবে ভেবেই শুদ্ধ'র খেয়ালেই আসেনি আবারো হাত ধরার কথা। তার উপরে ধারা সকাল থেকেই যেভাবে উল্টো রিয়্যাক্ট করছে। তাই আর তাকে আজ বেশি ঘাটছে না শুদ্ধ। কিন্তু ধারার মনে তো তখন চলছিল অন্য কিছু। সে মুখ ফুলিয়ে গটগট করে গাছের গুঁড়ি পেরিয়ে গেলো। আবারো সামনে পড়লো ক্ষেতের আল। আর শুরু হলো একেকটা মেয়ের নাচানাচি। শুদ্ধ বারবার বলতে লাগলো, 'সাবধানে যাস।'
আর ধারা মনে মনে মুখ ভেংচি দিতে লাগলো।

অবশেষে ওরা গিয়ে শুদ্ধ'র খামারে পৌঁছালো। বিস্ময় নিয়ে সেখানটায় তাকিয়ে রইলো সবাই। সবথেকে বেশি বিস্মিত হলো ধারা। সম্পূর্ণ অন্যধরণের উৎকৃষ্ট অত্যাধুনিক ব্যবস্থায় চলছে কৃষিকাজ। একটা অংশে দেখতে পেলো গাছের উপরে কেমন যেন নেট দিয়ে ঘরের মতো প্রস্তুত করা। একেকটা গাছের সোজাসুজি ঝুলছে একেকটা সরু দড়ি। এই দড়ি বেঁয়ে গাছগুলো সব উপরে চলে যাবে। আর দ্রুত বৃদ্ধি পাবে। এই ব্যবস্থার ফলে খুব অল্প জায়গার মধ্যেই অধিক গাছ ফলনের সুযোগ পাচ্ছে। আরেক অংশে দেখলো সব গাছের গোড়ায় গোড়ায় সোজাসুজি গিয়ে একটা সরু পাইপের মতো স্থাপন করা। সেই পাইপ থেকে গাছের গোড়ায় গোড়ায় আস্তে আস্তে টিপটিপ করে পানি পড়ছে। এটাকে বলে ড্রিপ ইরিগেশন। এর ফলে পানি সেচের ঝামেলা তো নেই ই বরং পানি খুব সাশ্রয় হচ্ছে। ওরা সবাই ঘুরে ঘুরে শুদ্ধ'র নতুন ধরণের খামার দেখতে লাগলো। ধারা অধিক অবাক হলো ধান ক্ষেতে গিয়ে। একটা বড় ট্রাক্টরের মতো একদম ভিন্ন ধরণের গাড়ি ক্ষেতের উপর দিয়ে চালিয়ে নেওয়া হচ্ছে। আর তার থেকে অটোমেটিক ধানের চারা কাঁদা পানিতে রোপন হচ্ছে। ব্যাপারটা এমন, যে কাজটা করতে একজন কৃষককে অনেক সময় নিয়ে একটা একটা করে বিভিন্ন স্থানে রোপন করতে হতো সেটা নিমিষেই খুব দ্রুত একসাথে অনেকগুলো চারা রোপন হচ্ছে। এমন যন্ত্র ধারা এর আগে কখনো দেখেনি। শুধু ধারা কেন এই গ্রামের কেউই হয়তো দেখেনি। কৃষিতে যে আজকাল প্রযুক্তির প্রয়োগে কতো পরিবর্তন এসেছে তা শিক্ষার অভাবে তাদের এখনো চক্ষুগোচর হয়নি। ধারা যখন বিস্ময় নিয়ে সবটা দেখছিলো তখন তিশা এসে ধারার পাশে দাঁড়িয়ে মৃদু হেসে বলল,
'সবকিছু শুদ্ধ কতো সুন্দর করে গুছিয়ে নিয়েছে তাই না ধারা! ও আসলেই একটা জিনিয়াস। নিজের উপর আত্মবিশ্বাসের জোরেই সবার থেকে ভিন্ন পথে হাঁটা দিয়ে তা সম্ভবও করে তুলছে। ইনশাআল্লাহ ও পারবে। তোমার ভাগ্য যে কতোটা ভালো তা তুমি জানো না ধারা। শুদ্ধ'র মতো একটা হাজবেন্ড সচরাচর পাওয়া যায় না। ইউনিভার্সিটিতে থাকতে কতো মেয়েরা ও'র পেছনে ঘুরেছে! বড়লোক থেকে বড়লোকের মেয়েরা ওঁকে পাবার জন্য পাগল হয়ে উঠেছিল। কিন্তু ও কারো ডাকেই সাড়া দেইনি। সবসময় নিজের লক্ষে স্থির হয়ে থেকেছে। শুধু বলতো সব বিয়ের পর, বিয়ের পর। বউয়ের সাথেই প্রেম করবো। পাগল একটা! আজকালকার দিনে এমন ছেলের কথা কখনো শুনছো? আমার বন্ধুটা খুব ভালো। ওঁকে কখনো হারাতে দিয়ো না ধারা। সবসময় ভালোবাসা দিয়ে আগলে রাখো। ভাগ্য কিন্তু বারবার সুপ্রসন্ন হয় না।'
-----------

তিশা ওরা সবাই সন্ধ্যা হবার আগেই চলে গেলো। বাড়ি নিরিবিলি হয়ে গেলো আবার। তবুও ধারা সেদিন আর পড়ায় মনোযোগ বসাতে পারলো না। বারবার নিজেকে খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে আয়নায় দেখতে লাগলো সে। ওর মাথায় শুধু মণিকার চেহারাটাই ভাসতে লাগলো। একসময় রাতের খাবারের ডাক পড়লো। ধারা সকালে বেশি করে রুটি বানিয়ে ফ্রিজে রেখে দিয়েছিল৷ সেই রুটিগুলোই গ্যাসের চুলায় বসে বসে ভাজছে খোদেজা। গরম গরম খাবার জন্যই এখন শুদ্ধ আর ধারাকে খেতে ডেকেছে সে। চুমকি ঘুমিয়ে পড়েছে বহু আগেই। রাতের খাবার আর খেতে উঠবে বলে মনে হয় না। ধারা ভাবনা মুখে খেতে বসলো৷ খোদেজা শুদ্ধ'র প্লেটে দুটো রুটি আর ধারার প্লেটে দুটো রুটি দিয়ে বলল সামনের পিরিচে রাখা ভাজি দিয়ে খেতে। ধারা নিজের পিরিচের ভাজির অর্ধেক অংশই কমিয়ে রাখলো৷ রুটিও একটা রেখে দিলো। সে এমনিতেও খুব বেশি একটা খায় না। শুদ্ধ দেখে বলল, 'আপনি তো দেখি সবই রেখে দিচ্ছেন ধারা। আপনি একদম বাচ্চাদের মতোন। খেতেই চান না। সব সময় বেশি বেশি করে খাবেন।'
ধারা নিজের ভাবনা থেকেই হঠাৎ ফট করে বলে উঠলো, 'আপনি আমাকে বাচ্চাদের মতোন বললেন কেন? আমি কি দেখতে হট না?'

শুদ্ধ সবে তখন রুটির একটুকরো ছিঁড়ে মুখে দিতে যাচ্ছিল। ধারার কথা শুনে থেমে গিয়ে অবাক হয়ে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে শব্দ করে হেসে ফেললো সে। ধারা থতমত খেয়ে গেলো। কি বলে ফেললো সে এটা? খোদেজা অন্যদিকে ফিরে রুটি ভাজছিলো বলে ধারার কথা শুনতে পায়নি। হঠাৎ শুদ্ধকে ওমন হাসতে দেখে বারবার উৎসুক হয়ে জিজ্ঞাসা করতে লাগলো কি হয়েছে? কি হয়েছে? শুদ্ধ বলবে কি! সে নিজের হাসিই থামাতে পারছে না। উদ্ভটের মতো কথাটা বলে ফেলায় ধারা প্রথমে যতোটা না বিব্রত হয়েছিল এখন আবার সম্পূর্ণ অন্য কারণে তার মুখ ঝুলে গেলো। শুদ্ধ এতো হাসছে কেন? সে কি আসলেই হট না?



চলবে*********
===========================
পড়তে থাকুন  চটি গল্প এ-র পাশা-পাশি ভিন্ন ধরনের গল্প ✒।


Keep reading chatty stories as well as different types of stories✒.



( Post By- Kam Pagol) 

[+] 1 user Likes Bangla Golpo's post
Like Reply


Messages In This Thread
RE: হাতটা রেখো বাড়িয়ে (Writer: ইশরাত জাহান) - by Bangla Golpo - 29-05-2024, 06:58 AM



Users browsing this thread: