Thread Rating:
  • 9 Vote(s) - 2.22 Average
  • 1
  • 2
  • 3
  • 4
  • 5
হাতটা রেখো বাড়িয়ে (Writer: ইশরাত জাহান)
#18
পর্ব -১২



শ্রাবণের শেষ সপ্তাহ। সকালে ঘুম ভাঙতেই চোখে পড়লো বাইরের তুমুল বর্ষণ। টিনের চালের বৃষ্টির অপূর্ব ঝমঝম শব্দ কানে শ্রুতিমধুর আবেশ সৃষ্টি করে। ঘুমু ঘুমু চোখে বারান্দার বৃষ্টি থেকে দৃষ্টি সরিয়ে ধারা একবার চোখ বুলালো ফাঁকা রুমটিতে। শুদ্ধকে দেখা যাচ্ছে না। এমনিতে তো আজকাল পড়া শুরু করার পর থেকে প্রতিদিন ভোর হতে না হতেই ধারাকে উঠিয়ে দেয়। আজ হঠাৎ ব্যতিক্রম হলো কেন? ধারা একটা হাই তুলে উঠে বসলো। ঘড়ির দিকে তাকিয়ে বুঝলো আসলেই অনেক বেলা হয়ে গেছে। বাইরে বৃষ্টি বলে তেমন বোঝা যাচ্ছে না। দেরি হয়ে গেছে বুঝতে পেরেও ধারার মধ্যে তাড়াহুড়োর কোন লক্ষণ দেখা গেল না। সকালে ঘুম থেকে উঠে বৃষ্টি দেখা প্রকৃতির একটা সুন্দর সারপ্রাইজ। চারপাশটা কেমন যেন হিমেল আবরণে জড়িয়ে আছে। ধারা গায়ের পাতলা কাঁথাটা টেনে পা থেকে গলা পর্যন্ত আষ্টেপৃষ্ঠে মুড়িয়ে রাখলো। এভাবে ঘুমু ঘুমু ভাবটা নিয়ে হালকা উষ্ণতাটা ধারার ভালো লাগছে। এভাবেই আপাদমস্তক কাঁথায় পেঁচিয়ে ধারা হাঁটুতে মুখ ভার দিয়ে রেখে বারান্দায় তাকিয়ে বৃষ্টি দেখতে লাগলো। টিনের চালে বৃষ্টির শব্দ পৃথিবীর সেরা শ্রুতিমধুর শব্দগুলোর একটি। এতদিন নিজেদের পাকা দালানে বসে বসে এই শ্রুতিমধুর ধ্বনি থেকে ধারা বঞ্চিত ছিল। আহ! কি সুন্দর!
তার এই সুন্দর মুহুর্তে ব্যাঘাত ঘটালো ফোনের কর্কশ রিংটোন। তার ছোট কাকী রুনা ফোন করেছে। ফোন রিসিভ করে অনেক কথাই হলো তার সাথে। ধারার বিয়েতে উপস্থিত না থাকতে পারায় রুনা ভীষণ দুঃখ প্রকাশ করলো। কাকীর সাথে কথা শেষ হলে ধারা বিছানা ছেড়ে উঠে দাঁড়ালো। কুঁচকানো জামা কাপড় হাত দিয়ে ঠিক করে এলোমেলো চুলগুলোকে হাত খোঁপা করে নিল সে। কাঠের সিঁড়ি দিয়ে ধারা নিচে নেমে দেখলো খোদেজা বারান্দায় টিনের ফুটো দিয়ে টুপটুপ করে পড়া বৃষ্টির পানির জায়গায় জায়গায় মগ, পাতিল, ছোট ছোট বাটি পেতে রাখছে। বড় বড় বালতিগুলো সব বাইরে পাতা। বৃষ্টির পানি সংরক্ষণের জন্য। মাঝের চৌকিতে চুমকি বেঘোরে ঘুমাচ্ছে। শুদ্ধ একটা মোড়ার উপর পা তুলে চেয়ারে হেলান দিয়ে বসে বসে ল্যাপটপ চালাচ্ছে। খোদেজা মগ, বাটিগুলো ঠিক ঠিক জায়গায় রাখতে রাখতে বলল, 

'সেই রাইত থিকা বৃষ্টি নামছে। তবুও এতক্ষণে একটু জোরও কমে নাই। আজকে মনে হয় সারাদিনই বৃষ্টি থাকবো রে মাহতাব। ঘর দুয়ার বৃষ্টিতে সব ভাইসা যাইবো মনে হইতাছে।'

শুদ্ধ ল্যাপটপের থেকে দৃষ্টি না সরিয়েই বলল,
'ভেসে গেলে যাবে আম্মা। আমরা একটা কলা গাছের ভেলা বানিয়ে ভাসতে ভাসতে ঘুরবো।'

খোদেজা কপট রাগ দেখিয়ে বলল,
'ফাইজলামো করিস না তো!'

মায়ের দিকে তাকিয়ে শুদ্ধ হাসতে লাগলো। স্বভাবতই তার গাল ডেবে গেলো। প্রতিবারের মতোই একটা ধাক্কা খেলো ধারা। ছেলেদের গালের টোলও যে এতো সুন্দর হয় তা শুদ্ধকে না দেখলে বোঝা সম্ভব না। কাঁঠের সিঁড়িতে ধারাকে ওমন থম মেরে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে খোদেজা বলল, 'বউ, ওইখানে দাঁড়ায় আছো কেন? আসো, নিচে আসো।'

ধারা নিচে নেমে এলে খোদেজা বলল,
'তুমি তো মনে হয় এখনও মুখ ধোও নাই না? এই বৃষ্টির ভিতরে আর কলপাড়ে যাবা কেমনে! একটা কাজ করো দরজার সামনে পাতা বালতি থিকাই বৃষ্টির পানি দিয়া মুখ ধুইয়া ফেলো। খোদেজার কথা মতোই করলো ধারা। টুথ ব্রাশ নিয়ে দরজার সামনেই দাঁড়িয়ে দাঁত ব্রাশ করে ধারা মগ দিয়ে বালতি থেকে পানি তুলে মুখ ধুয়ে নিল। বাইরে বৃষ্টির যা তেজ! পায়ের কাছটায় বৃষ্টির ছাটে ভিজে আসলো ধারার। ফিরে এসে দেখলো শুদ্ধ'র নজর এখনো ল্যাপটপেই। আজ ইচ্ছে করেই ধারাকে এতো বেলা করে ঘুমাতে দিয়েছে শুদ্ধ। গতকাল অনেক রাত পর্যন্তই পড়েছে ধারা। তাই আজ এই বৃষ্টির দিনে একটু ছাড় না হয় দেওয়াই যাক! খোদেজা চৌকির কাছ দিয়ে যাবার সময় চুমকির গায়ের কাঁথা টেনে বলল,
'ঐ মাইয়া, উঠ! আর কত ঘুমাবি? তাড়াতাড়ি উঠ।'

চুমকি একবার চোখ পিটপিট করে তাকিয়ে খোদেজা চলে যাবার পর আবারো কাঁথা টেনে ঘুমিয়ে পড়লো। শুদ্ধ বলল,
'আম্মা কিছু খেতে দাও। খিদে লাগছে তো! গরম গরম ভাত দাও।'

খোদেজা বলল, 'এই বৃষ্টির মধ্যে আমি গরম গরম ভাত পাবো কই? গতাকালের দোকান থেকে আনা পাউরুটি আর কলা আছে। তোমরা সবাই তা দিয়াই কাজ সাইরা নাও বাপু। আমার পান্তা ভাতেই হবে।'

এই বলে খোদেজা পাউরুটি আর কলা বের করে ধারা আর শুদ্ধকে দিলো। চুমকিরটা রেখে দিলো পরে উঠে খাবে বলে। শুদ্ধ পাউরুটিতে কামড় বসাতে বসাতে তার মাকে বলল, 'আম্মা, তুমিও একটা পাউরুটি খেয়ে নাও। পান্তা ভাত খাওয়া লাগবে না।'

'তা না হয় খাইলাম একটা। দুপুরে কি খাবি? আজকে তো চুলায় রান্না করা যাইবো না কোনমতেই। রসুইঘরের চালা একদিকে কাইত হইয়া বৃষ্টির পানি সব ঢুকতাছে। মাটির চুলা ভিজ্জা রইছে। আগুন ধরবো না। তোরে কয়বার বলছিলাম রসুইঘরের চালটা আগে ঠিক কইরা নে। কবে বৃষ্টিতে ভাইঙ্গা পড়ে! দেখলি তো, আমার কথাই সত্যি হইলো। এদিকে সিলিন্ডারের গ্যাসও শেষ। ঘরের মধ্যে যে রান্না করবো তারও উপায় নাই। এখন বল, কি হইবো?'

শুদ্ধ মোড়া থেকে পা নামিয়ে বলল, 'আচ্ছা বেশ! দোষটা যেহেতু আমারই। আজকের রান্নাটাও আমিই করবো।'

'করবি টা কেমনে?'

'তোমার না একটা আলগা ছোট মাটির চুলা আছে আম্মা! গতবছর চুমকি বায়না ধরায় বানিয়ে দিয়েছিলে। ঐটা তো চুমকি ঘরের মধ্যেই রেখে দিয়েছিল। ঐটা বের করো।'

'কি জানি বাপু! আমি বুঝি না তোর কাজ কারবার।'

'আহা আম্মা! তুমি বের করো তো। তারপর দেখো আমি কি করি। শর্টকাটে আজকে আমি খিচুড়ি রান্না করবো। সাথে ডিমভাজা। বৃষ্টির মধ্যে খিচুড়ি ডিম ভাজা দারুণ হবে।'

খোদেজা চৌকির তলা থেকে মাটির আলগা চুলাটা বের করে আনতে গেলো। ধারা এতক্ষণে জিজ্ঞাসা করলো,
'আপনি রান্নাও করতে পারেন?'
'হ্যাঁ।'
'কি বলেন!'
'এতো অবাক হবার কি আছে?খাওয়াটা কি শুধু মেয়েদের কাজ? ছেলেরা কি খায় না? তাহলে তারা রান্না করতে পারবে না কেন? মেসে থাকতে তো আমার রান্না আমিই করে খেতাম। আজকে আমার রান্না খেয়ে দেখবেন। মনে হয় না অতোটাও খারাপ রান্না করি।'

ধারা সত্যিই অবাক হয়েছিল। গ্রামে তো সে এতদিন এই দেখে এসেছে। ছেলেরা রান্না করা তো দূর! রান্নাঘরের নাম থেকেও একশ মাইল দূরে থাকে। নিজেদের বাড়িতেও তো এতদিন এমনটাই দেখে এসেছে ধারা। মেয়েলি কাজে হাত লাগানো নাকি পুরুষদের জন্য শোভা পায় না। আজকে শুদ্ধ'র মুখে সম্পূর্ণ ব্যতিক্রমী কথা শুনে অবাক না হয়ে ধারা কিভাবে পারে! 

ততক্ষণে খোদেজা চুলা নিয়ে চলে এসেছে। শুদ্ধ'র সামনে রেখে বলল, 'শুধু এই চুলা দিয়েই কি হবে আমি কিছু বুঝতাছি না কিন্তু। রান্নাঘর থিকা লাকড়ি আনবি কেমনে? এই বৃষ্টির মধ্যে আনতে গেলে তো সবই ভিজা যাবো। আর এই ঘরের মধ্যে তুই চুলা ধরাবিই কেমনে?'

'ওটা আমি ব্যবস্থা করে নেবো।'

এই বলে শুদ্ধ উঠে বারান্দায় গেলো। একটা বহু পুরনো ভাঙা চেয়ার পড়ে ছিল অনেক আগে থেকেই। সেটাকেই একটা দা দিয়ে কয়েক টুকরো করলো। নিজের রুমে গিয়ে একটা ব্যাগে ভরে পুরনো কাগজপত্র নিয়ে এলো সাথে করে। সেগুলো সহ চুলোটাকে বাতাসের প্রবাহের বিপরীতের বারান্দায় নিয়ে এমনভাবে রাখলো যাতে ধোয়া সব বাইরে চলে যায়। এর জন্য ঘরের দরজাও সম্পূর্ণ খুলে দিল। বাইরে তখন একনাগাড়ে বৃষ্টি ঝড়েই যাচ্ছে। খোদেজা দরজার ধারে গিয়ে বৃষ্টির পানি দিয়েই চাল ডাল ধুয়ে আনলো। ধারা বসে বসে বটি দিয়ে পেঁয়াজ মরিচ কেটে দিলো। চুমকি ততক্ষণে এমন শোরগোলের আওয়াজ পেয়ে ঘুম ছেড়ে উঠে বসলো। ব্যাপারটা বোধগম্য হতেই উৎফুল্ল হয়ে বিছানা থেকে নেমে আসলো সে। শুদ্ধ'র সামনে দাঁড়িয়ে উচ্ছ্বাসিত গলায় বলল, 'মাহতাব ভাই, আজকে কি আমরা চড়ুইভাতি করতাছি?'

শুদ্ধ হেসে বলল, 'হ্যাঁ রে চুমকি। এটাকে একটা ছোট খাটো চড়ুইভাতি বলাই যায়। কি বলেন ধারা?'

ধারা থতমত খেয়ে উঠলো। শুদ্ধ যে হঠাৎ করে তার নাম উচ্চারণ করবে এটা সে ভাবতে পারেনি। শুদ্ধ বলল, 'আপনি তো এমনভাবে চমকে গেলেন যেন আমি ভূত দেখার কথা বললাম। বাই দা ওয়ে, আপনি না একদিন বাঁশ ঝাড়ের নিচে কি দেখেছিলেন! আপনার ঐ ভূত বন্ধু এসে আবার দেখা দিয়েছিল?'

খানিক শাসনের চোখে শুদ্ধ'র দিকে তাকালো ধারা। চুমকি ভূতের কথা শুনে ভয় পেয়ে বলল,
'বাবা গো! তুমি কি দেখছিলা ভাবী? আমি হইলে তো সেইখানেই অজ্ঞান হইয়া যাইতাম।'

খোদেজা পেছন থেকে বলে উঠলো, 'ঐ ছেমড়ি, তুই পরে অজ্ঞান হইস। এখন যাইয়া আগে মুখ ধুইয়া আয়। বইসা বইসা সবার কাছে মুখের গন্ধ ছড়াইতাছে।'

গাল ফুলিয়ে মুখ ধুতে গেল চুমকি। শুদ্ধ মাটির চুলায় কয়েকটা লাকড়ি ঢুকিয়ে কাগজের টুকরো দিয়ে আগুন ধরালো। মুহুর্তের মধ্যে ধোঁয়ায় ছেয়ে গেলো ঘর। সবাই কাশতে আরম্ভ করে দিলো। খোদেজা কাশতে কাশতে বলল, 'ঐ মাহতাব, তুই ওঠ। কি যে করতাছোস!'

শুদ্ধ বলল, 'আম্মা, আমি বলছি না আজকে আমি একা রান্না করবো। কোন লেডিস হাত দিবে না। তোমরা চৌকির উপর পা তুলে বসো তো।'

শুদ্ধ চুলায় সব মশলাপাতি কষিয়ে চাল ডাল দিয়ে দিলো। ধারা শুধু তাকিয়ে তাকিয়ে শুদ্ধ'র রান্না দেখতে লাগলো। মহা আনন্দে চুলার সামনে বসে রইলো চুমকি। তাকে দেখে মনে হচ্ছে তার এখনই খেতে ইচ্ছে করছে। বাইরে তখনও ঝড়ছে অবিরাম শ্রাবণ ধারা। টিনের চালে ঝমঝম শব্দ। ভেজা মাটির গা বেঁয়ে পুকুরের দিকে নেমে যাচ্ছে বৃষ্টির জল। আর ঘরের ভেতর চলছে চারটে মানুষের একটুপর পর হাসি ঠাট্টা। এভাবেই গল্প, হাসি, মজায় একসময় ওদের খিচুড়ি রান্না শেষ হলো। রান্না শেষ হতেই খোদেজা বলল, 'নে এবার তোরা হাত মুখ ধুয়ে নে। আর যে গোসল করবি কর।' 
খোদেজার মুখের কথা শেষ হতে না হতেই চুমকি এক দৌড়ে বাইরে চলে গেলো। খোদেজা চেঁচিয়ে উঠে বলল, 'কি করতাছোস চুমকি? এই বৃষ্টির মধ্যে ভিজিস না। ঠান্ডা লাইগা যাইবো। পুকুর থিকা তাড়াতাড়ি কয়টা ডুব দিয়া আইয়া পড়। বৃষ্টিতে ভিজিস না বেশি।'

খোদেজার কথাগুলো বৃষ্টির শব্দের সাথে মিশে গিয়ে তেমনভাবে চুমকির কানে পৌঁছালো না। আর যদিওবা পৌছালো সে তেমন গা করলো না। চুমকি তো তখন মনের সুখে বৃষ্টিতে ভিজছে। শুদ্ধ তার মাকে বলছে, 'থাক আম্মা। ভিজুক। প্রতিদিন তো আর ভিজে না। মাঝে মাঝে একটু আধটু ভিজলে সমস্যা হয় না।'

খোদেজা তাই চুপ হয়ে গেলো। চুমকি বৃষ্টি ভেজা অবস্থায় হঠাৎ দৌঁড়ে গিয়ে দরজায় দাঁড়ানো ধারাকে টেনে আনলো বৃষ্টিতে। ধারার সামনে শুদ্ধ দাঁড়িয়ে ছিল। ধাক্কা লাগায় ধারার সাথে সেও চলে এলো বাইরে। বৃষ্টিতে দাঁড়িয়ে অবাক হয়ে ধারার দিকে তাকিয়ে বলল, 'আরে!'
ধারা পুরো ভিজে গিয়ে জবুথবু হয়ে বলল, 'আমি কি ইচ্ছে করে আপনাকে এনেছি নাকি! ধাক্কা লেগেছে। আর আপনিই তো এই মাত্র বললেন, একটু আধটু ভিজলে কিছু হয় না। তাহলে সমস্যা কি?'
শুদ্ধ ভিজে যাওয়া মাথার চুলগুলোতে হাত বুলিয়ে মৃদু হেসে বলল, 'ধারা, আপনি কিন্তু চালাক হয়ে যাচ্ছেন।'
ধারা আর চুমকি একে অপরের দিকে তাকিয়ে খানিক ঠোঁট চেঁপে হাসলো। ওরা তিনজন উঠোনে দাঁড়িয়ে শ্রাবণের ঝরিয়ে দেওয়া আনন্দের উল্লাসে মেতে উঠলো। দৌড়াতে গিয়ে চুমকি কাঁদায় পিছলে পড়ে গেলো। তা দেখে হাসিতে ফেটে পড়লো ধারা শুদ্ধ। খানিকবাদে দরজার কাছে দাঁড়ানো খোদেজাকেও টেনে নিয়ে এলো শুদ্ধ। খোদেজা মিথ্যা রাগের ভাণ ধরে বলল,
'আরে আরে কি করোস কি? তোরা ভিজ। আমার কি আর সেই সময় আছে!'
শুদ্ধ শুনলো না। মাকে টেনে নিয়ে এলো নিজেদের কাছে বাইরে। পানি ছিটিয়ে ছিটিয়ে আজ মাকেও নিজেদের সাথে বাচ্চা বানিয়ে দিল তারা। 

গোসল শেষে দুপুর হলে মেঝেতে মাদুর বিছিয়ে একসাথে খেতে বসলো সবাই। খোদেজা সবার প্লেটেই খিচুড়ি বেড়ে দিল। গরম ধোঁয়া ওঠা খিচুড়ি। তার সাথে ডিম ভাজা। দেখেই যেন সবার পেটে খিদে মোচড় দিয়ে উঠলো। চুমকি হঠাৎ বাঁধ সাধলো। সে হাত দিয়ে খাবে না। তার ভালো লাগছে না। তাকে খাইয়ে দিতে হবে। বিরক্ত হবার ভাণ ধরেও খোদেজা শেষমেশ চুমকির আর্জিতে ধরা দিলো। নিজের প্লেট থেকে খাইয়ে দিতে লাগলো চুমকিকে। চুমকি তো ভীষণ খুশি। শুদ্ধ বলে উঠলো, 'আম্মা, শুধু কি চুমকিকেই খাইয়ে দিবা? আমাকেও একটু দেখো।'

এই বলে শুদ্ধ মায়ের কাছে গিয়ে মুখ হা করে রইলো। আনন্দের সাথে খাইয়ে দিতে লাগলো খোদেজা। ধারা হাসিমুখে সেদিকে তাকিয়ে রইলো। দৃশ্যটা এতোটাই সুন্দর! ধারাকে এভাবে তাকিয়ে থাকতে দেখে খোদেজা বলল, 'বউ, তুমিও হা করো তো! তুমি বাদ যাবা কেন? শ্বাশুড়ি হইছি তাতে কি হইছে! ওরা যেমন তুমিও আমার কাছে ওমনই। নাও হা করো।'
খোদেজা এক নলা ধারার দিকে বাড়িয়ে দিলো। ধারাও মুখ হা করে খোদেজার হাত দিয়ে খেলো। সবকিছু ভীষণ ভালো লাগতে লাগলো তার। এমন মুহুর্ত সে খুব কমই দেখেছে। তাদের বাড়িতে তো সবাই সবসময় একপ্রকার গম্ভীর হয়েই থাকে। সবকিছু চলে কড়া নিয়মের সাথে। তাদের কাছে ডাইনিং টেবিল আছে। দুপুরে খাবার জন্য দশ আইটেম থাকে। থাকে না শুধু এতো আনন্দ। এতো হাসি ঠাট্টা। ধারার চোখ ছলছল করে উঠলো। ঠিক তখনই তার মনে পড়লো তার ছোট কাকী তার বিয়ের ছবি দেখতে চেয়েছিল। সকালেই চেয়েছিল। খাওয়া শেষ করেই সে তার কাছে যেই ছবিগুলো ছিল সেই সব ইমুতে পাঠিয়ে দিলো। কিন্তু সে কি আর জানতো এই ছবিগুলোই একদিন তার জীবনে কাল হয়ে দাঁড়াবে!

চলবে,
===========================
পড়তে থাকুন  চটি গল্প এ-র পাশা-পাশি ভিন্ন ধরনের গল্প ✒।


Keep reading chatty stories as well as different types of stories✒.



( Post By- Kam Pagol) 

[+] 1 user Likes Bangla Golpo's post
Like Reply


Messages In This Thread
RE: হাতটা রেখো বাড়িয়ে (Writer: ইশরাত জাহান) - by Bangla Golpo - 25-05-2024, 01:18 PM



Users browsing this thread: 2 Guest(s)