19-05-2024, 04:20 PM
(This post was last modified: 19-05-2024, 04:25 PM by Godhuli Alo. Edited 1 time in total. Edited 1 time in total.)
নিজের ঘরে এসে আমি স্তব্ধ হয়ে রইলাম। এ কী শুনে এলাম আমি। এমনটি কি কখনো কোথাও হয়েছে নাকি হওয়া সম্ভব? বাবা কেন মৃত্যুর আগে আমাকে এমন পরী়ক্ষার ভেতর ফেলে গেলেন! একটু পরেই মা এলেন আমার ঘরে। আমি উঠে তাকে জড়িয়ে ধরে বললাম, মা শুনলে তো বাবার কথা! এমনটি কি হতে পারে কখনো? আমার মা বিচলিত কন্ঠে বললেন, আমিও বুঝতে পারছি না তিনি এসব কেন বললেন? তবে শেষ ইচ্ছে হিসেবে বলেছেন যখন তখন সবদিক বিবেচনা করেই বলেছেন। আমি - কিন্তু আমি কিভাবে মেনে নেবো এটা বলো তুমি? মা - ধৈর্য ধর। সময়ই ঠিক করে দেবে সবকিছু। আমি - আর তমাল? ও কিভাবে মেনে নেবে এটা? আমার মতো বয়ষ্ক একজন জীবনসঙ্গী! ওর জীবনটা যে নষ্ট হয়ে যাবে। প্লিজ মা, তুমি ওর কাছ থেকে শুনে আসো ওর মনোভাবটা কি এ ব্যাপারে? মা - আচ্ছা, আমি যাচ্ছি। তুই বোস্ শান্ত হয়ে। কিছুক্ষণ পর মা এসে বললেন, তমালও মানতে পারছে না বিষয়টা। কিন্তু নানার শেষ ইচ্ছে সে পূরণ করবেই যত কষ্টই হোক। শুনে আমি পাথরের মতো স্তব্ধ হয়ে রইলাম। তারপর বললাম, ঠিক আছে তুমি যাও মা। আমাকে একটু একা থাকতে দাও। সে রাতেই ঘুমের ভেতর বাবার মৃত্যু হলো। সকালে কান্নাকাটির রোল পড়ে গেলো। আমার মা দুবার মূর্ছা গেলেন। বিকেলের দিকে বাবার জানাজা অনুষ্ঠিত হলো। সবকিছু সামলে সন্ধ্যার পর তমাল বাড়ি ফিরলো। বাবার মৃত্যুশোকে তখনও আমি মৃতপ্রায়। কিন্তু তার ভেতরও নিজের ভবিষ্যৎ চিন্তা আমাকে দিশেহারা করে তুলছিল। সেই অস্থিরতা থেকেই রাত এগারোটার দিকে আমি তমালের ঘরের সামনে এলাম। দরজা ভেজানো ছিল। সেটা সরিয়ে দেখলাম সে খালি গায়ে একটা ট্রাউজার পরে বই পড়ছে শুয়ে শুয়ে। আমি ভেতরে ঢুকে বললাম, কি করছ তমাল? সে তাড়াতাড়ি খাট থেকে উঠে আলনা থেকে একটা টি শার্ট নিয়ে সেটা গায়ে দিয়ে বলল, এসো এসো বসো এখানে। আমি বললাম, কি ব্যাপার? আমাকে দেখে এতো লজ্জা পেলে কেন? আগে তো এভাবে লজ্জা পেতে না। সে মুখ নিচু করে মাথা চুলকিয়ে বলল, আগের অবস্থা আর এখনকার অবস্থা তো এক নয়। আমি খাটের উপর বসে বললাম, হুম এই নতুন অবস্থা নিয়েই কথা বলতে এসেছি আমি। তোমার নানা মরবার আগে যে পাগলামিটা করে গেলেন তার মাসুল তো আমাদের দুজনকে দিতে হবে। তমাল - হ্যা, কি আর করা ভাগ্যকে মেনে নেয়া ছাড়া? আমি - হুম, তা তো ঠিকই। কিন্তু কিভাবে কি করবে ভেবে দেখেছ? তমাল - হ্যা, ভাবতে তো হয়েছেই। আমার ছুটি শেষ কালই চলে যাবো। আমি মুখ কালো করে বললাম, আর আমি, আমরা? তমাল - তোমরা এখানেই থাকবে। এই বাড়ি আর জমি বিক্রি করার ব্যবস্থা করবে। আর ততদিনে আমি চাকরিতে একটু থিতু হবার চেষ্টা করবো। এরপর ধরো এক বছরের ভেতর আমি তোমাদের আমার কাছে নিয়ে যাবো ঢাকায়। আমি - সুন্দর প্ল্যান। কিন্তু এখানে আমরা একা দুজন মেয়ে মানুষের থাকাটা কঠিন হবে। তমাল - হুম, কিন্তু কঠিন পরিস্থিতি জীবনে আসলে মেয়েদের কঠিন হতে হয়। তোমাকেও তেমনটা হতে হবে। আমাদের আত্মীয় স্বজন তো তেমন কেউ নেই। তবে আমার বন্ধু জহিরকে বলে দিয়েছি সব সময় তোমাদের খেয়াল রাখতে। তাছাড়া পাড়া প্রতিবেশীরাও তো আছে। সবাই তো নানাকে অনেক পছন্দ করতো। নিশ্চয়ই খেয়াল রাখবে তোমাদের। আমি দীর্ঘ নিঃশ্বাস ছেড়ে বললাম, হুম। তারপর কিছুক্ষণ চুপ থেকে বললাম, আচ্ছা তুমি বই পড়ো তাহলে। আমি যাচ্ছি। বলেই ওর ঘর থেকে বেরিয়ে এলাম। নিজের ঘরে এসে কেমন যেনো লাগছিল আমার। আবার বৌ সাজবো আর তমাল বর সেজে আসবে আমার সামনে। তারপর আমার ঘোমটা তুলে..... না, আর ভাবা যাচ্ছে না। ভাবতেই আমার তলপেটের নিচটা ভিজে যাচ্ছে। হায়, এমন লাগছে কেন? কি থেকে কি হয়ে যাচ্ছে?