Thread Rating:
  • 96 Vote(s) - 2.71 Average
  • 1
  • 2
  • 3
  • 4
  • 5
Romantic Thriller প্রতিশোধ: দ্যা রিভেঞ্জ (সমাপ্ত)
(07-11-2022, 02:32 PM)Monen2000 Wrote:
                            বিংশ পর্ব

রয় চুপ করে থাকে, রকি আমিরের দিকে ফিরে বলে: আর তোর সাথে তো আমার দেখাই হয়নি, যাইহোক তোদের মারার আগে আলাপটা হয়ে ভালোই হলো। রয় তবুও চুপ করে আছে দেখে রকি আবার হাসতে হাসতে বলে: চিন্তা নেই মামা ভুল করেছিলেন সেদিন তোকে জ্যান্ত ছেড়ে রেখে আমি সেই ভুল করবো না।

রয় এবং আমির দুজনেই চটপট একবার চারিদিকে চোখ বুলিয়ে নেয়, আশেপাশের লোকজন এই একাধিক পিস্তলধারীকে দেখে ভয়ে সরে গেছে, বেশ ফাঁকাই হয়ে গেছে জায়গাটা। মুখ ঢাকা থাকায় রয়ের মুখের ভাব বোঝা না গেলেও যে কোনো কারনেই আমিরের মুখের ভাব পাল্টে গেছে তার চোখেমুখে একটা চাপা উত্তেজনা যেন সে যেটা চাইছে সেটাই হচ্ছে,  রকি এবার রয়কে উদ্দেশ্য করে বলে "কি রে মুখ থেকে কথা বেরোচ্ছে না কেন তুই নাকি আমাদের শেষ করবি মামাকে থ্রেট দিয়েছিলি এখন চুপ কেন, আমার ছোটোমামাকে একা পেয়ে মেরেছিস, এবার কি করবি?"
এবার আমির কথা বলে আর তার স্বরে ভয়ের কোনো চিহ্ন নেই: আপনার মামাকে আমরা মারিনি অন্য লোক মেরেছে।
তোর মনে হয় তোর কথা বিশ্বাস করবো?
সেটা আপনার নিজস্ব ব্যাপার।
রকি এবার এগিয়ে এসে আমিরের একদম মুখোমুখি দাঁড়ায় বলে: বিদিশাকে কোথায় লুকিয়ে রেখেছিস? আমি জানি ও তোদের সাথেই থাকে।
ও যেখানেই আছে ভালো আছে। আমির নির্ভয়ে উত্তর দেয়।
"ভাইজান এবার এদের শেষ করে দিন"। মাহমুদ রকিকে উদ্দেশ্য করে কথাটা বলে।
পিপীলিকার পাখা গজায় মরিবার তরে কথাটা শুনেছেন মিস্টার রকি? আওয়াজটা শুনে রকি অবাক হয়ে যায় এমনকি উসমান ও মাহমুদ‌ও, কথাটা আমির বলেনি বলেছে তার পাশে দাঁড়ানো রয় কিন্তু ওর আওয়াজ এরকম নয়, এবার ওদের আশ্চর্যভাবটা কয়েকগুণ বাড়িয়ে আমিরের পাশে দাঁড়ানো ছেলেটা নিজের চোখ থেকে গগলস্ খোলে তারপর মাথা থেকে হুডিটা সরায় সবাই অবাক হয়ে দেখে এর চুল রয়ের মতো বড়ো নয় ছোটো আর সবশেষে মুখের স্কার্ফটা খুলতেই বিস্ময়ে হতবাক হয়ে যায় দেখে যাকে এতক্ষণ তারা রয় ভাবছিল সে আসলে অন্য কেউ রয় আসেনি, উসমানের মুখ থেকে একটা নাম উচ্চারিত হয় "বশির"।
হ্যাঁ, উসমান আমি, যখনই খবর পেলাম যে তোরা এভাবে খোলাখুলি বাইরে আসছিস তখনই বুঝেছিলাম যে এটা ফাঁদ, বসকে ধরার জন্য তাই ওনাকে কিভাবে আগে আসতে দি‌ই বল? তাই নিজেই চলে এলাম আমি জানতাম আমার হাইট, বডির শেপ বসের মতো,ওনার মতো সাজলে মুখ না দেখে বা আওয়াজ না শুনে আমাকে চেনা মুশকিল। এদিকে তোদের শাস্তি তো দিতে হবে তাই না, গদ্দারি করেছিস তার শাস্তি তাই চলে এলাম। তোদের মতো গদ্দার মসজিদে ঢুকে সেটাকে নাপাক করেছিস, আমি তো তোদের ওখানেই শেষ করতে চেয়েছিলাম কিন্তু বসের হুকুম মসজিদে রক্তপাত চলবে না, তাই বাইরেই মারবো তোদের।
এদিকে নিজের প্ল্যান ফেল হয়ে গেছে দেখে রকি রাগে ফুঁসতে ফুঁসতে নিজের লোকদের বললো: শেষ করে দে এদের। কিন্তু হুকুমটা তামিল হবার আগেই হটাৎ কোথা থেকে কি হয়ে গেল বুঝতে পারলো না, রকির পাশে দাঁড়ানো দুজন বডিগার্ডের কপাল ফুটো করে দুটো বুলেট বেরিয়ে গেল এবং আর আমিরের দলের যারা অসহায়ের মতো দাঁড়িয়ে ছিল তাদের কারো হাতে ম্যাজিকের মতো ধারালো ছুরি চলে এল এবং কিছু বোঝা বা করার আগেই  তারা ঘুরে  রকির দলের লোকদের গলায় পেটে বা পাঁজরে চালাতে শুরু করে, সাথে কয়েকজন পিস্তল উঠিয়ে নেয় এবং তার থেকেও আশ্চর্যের আশেপাশে এতক্ষণ কাউকে দেখা না গেলেও হটাৎ আশেপাশের বিভিন্ন ছোটোখাটো গলি থেকে অনেকগুলো লোক পিস্তলহাতে বেরিয়ে আসে, পরপর পিস্তলের আওয়াজ হতে থাকে একটা সময় সম্বিত ফিরে পেয়ে রকি উসমান এবং মাহমুদ দেখে তাদের চারপাশে তাদের দলের লোকদের রক্ত মাখা লাশ পড়ে আছে, উসমান এবং মাহমুদ পালাতে যায় কিন্তু আবার ধরা পরে যায়, যে লোকটা আমিরের পাশে রয় সেজে দাঁড়িয়ে ছিল সে এবার রকির মুখোমুখি হয় একটা পিস্তল রকির মাথায় ঠেকিয়ে বলে: রয়কে খুঁজছিলেন না আপনাকে ওর কাছেই নিয়ে যাবো‌। রকি বাধা দিতে গিয়েও পারে না তখনই মাথার পিছনে একটা আঘাত পেয়ে চোখে অন্ধকার নেমে আসে।
অনেকক্ষণ পরে যখন রকির চোখ খোলে তখন প্রথমে বুঝতে পারে না কোথায় আছে  ধীরে ধীরে ধাতস্থ হয়ে দেখে ও একটা চেয়ারে বসে আছে জায়গাটা একটা বড়ো গোডাউন মনে হয় তার, এবার দুজন লোকের চিৎকারের আওয়াজ পেয়ে পাশের দিকে তাকায়, কিছুক্ষণ থেকেই চিৎকার শুনতে পারছিল এখন তাকিয়ে  দেখে একটু দূরে দুজনকে দুহাত উপরে ঝুলিয়ে বেধে রাখা হয়েছে আর জনা ২০ মতন লোক পাঞ্চিং ব্যাগের মতো ওদের বুকে পিঠে মুখে পাঞ্চ করে যাচ্ছে ,ওদের চিনতে পারে রকি উসমান ও মাহমুদ। রকি উঠতে যায় কিন্তু সঙ্গে সঙ্গেই একজন বলে: চেষ্টাও করবেন না মিস্টার রকি আপনার দিকে দুটো পিস্তল তাক করা আছে উঠলেই ওরা গুলি চালাবে, রকি গলাটা চিনতে পারে ওই বশির বলে লোকটার, সে বলে: আমাকে কোথায় নিয়ে এসেছিস?
বশির এবার রকির সামনে আসে বলে: আপনি বসের সাথে দেখা করতে চাইছিলেন না তাই নিয়ে এসেছি, ওই যে বস।
বশির যেদিকে দেখায় সেদিকে তাকায় রকি দেখে উসমান ও মাহমুদকে যেখানে পেটানো হচ্ছে তার পাশেই একজন দাঁড়িয়ে আছে তাকে চিনতে অসুবিধা হয় না রকির একেই সে কিছুদিন আগে হাত পা বাঁধা অবস্থায় দেখেছে এআরসি ওরফে রয়, পরনে কালো ফুলস্লিভ শার্ট যার স্লিভদুটো কবজির একটু উপর পর্যন্ত গোটানো আর বুকের কাছে শার্টের একটা বোতাম খোলা সাথে কালো জিন্সের ট্রাউজার, চোখে কালো গগলস্। এবার রয় এগিয়ে এসে রকির উদ্দেশ্যে নিজের একটা হাত বাড়িয়ে দেয় করমর্দন করার জন্য "হ্যালো রকি, আমাদের আবার দেখা হলো,বুঝতেই পারছেন যে আপনি যেমন আমাকে ধরার জন্য টোঁপ ফেলেছিলেন ঠিক তেমনি আমিও আপনাকে ধরার জন্য ফাঁদ পেতেছিলাম, যাকে বলে এক তীরে দুই শিকার"। রকি হাত মেলায় বলে: আমাকে মারবি তো? নে মার।
আপনার সাথে আমার কোনো শত্রুতা ছিল না কিন্তু আমাদের দুজনের পরিচিত একজনের সাথে আপনার শত্রুতা আছে, আর সে প্রতিশোধ চায় আমি তাকে কথা দিয়েছি তার প্রতিশোধে আমি তার পাশে থাকবো তাই আপনাকে এখানে তার কাছে নিয়ে এসেছি এরপর সে যা করবে সেটাই হবে। রয় থামলে রকি কথা বলা শুরু করে "বিদিশার জন্য এতকিছু? কেন ওকে পছন্দ ওকে বিয়ে করবি নাকি?"
রয়ের সাথে আমির‌ও এসেছিল রকির কথা শুনে সে থাকতে পারে না এসে এক থাপ্পড় লাগায় রকির গালে, আবার মারতে যাচ্ছিল কিন্তু রয়ের "আমির.. রিল্যাক্স" শুনে থেমে যায়। রকি আবার ব্যাঙ্গ করে"আরিব্বাস একটা ফুলের পিছনে দুটো মৌমাছি?"
আজ বুঝলাম বিদিশা আপনাকে কেন এত ঘেন্না করে, আমার‌ই ইচ্ছা করছে মেরে আপনার মুখ ফাটিয়ে দিতে। শান্ত কণ্ঠে বলে রয়।
তাহলে আর দেরী কেন আয়। রকি এবার চেয়ার ছেড়ে উঠে দাঁড়িয়ে নিজের দুটো হাত মুঠো করে রয়কে লড়াইয়ের জন্য আহ্বান করে, দেখে রয়ের ঠোঁটে ব্যাঙ্গাত্মক হাসি দেখা যায়।
ওর চ্যালেঞ্জ এক্সেপ্ট করো রয়, প্রত্যেকেরই শেষ ইচ্ছা পূরণ করার সুযোগ পাওয়া উচিত। এক মেয়ের কণ্ঠস্বর ভেসে এল ,রকি আওয়াজটার উৎস লক্ষ্য করে তাকাতেই বিদিশাকে দেখতে পেল ,সঙ্গে সঙ্গেই এবার তার মুখে ব্যাঙ্গাত্মক হাসির সাথে ব্যাঙ্গ মিশ্রিত কথা: আরে বেবি... তুমি এখানে আর আমি তোমাকে কোথায় না কোথায় খুঁজছি, কেন বেবি নিজের স্বামীকে ছেড়ে থাকতে ভালো লাগছে?
স্বামী? আমার নিরপরাধ বাবাকে মারার পরেও তোমার লজ্জা করছে না আমার সামনে দাঁড়িয়ে একথা বলতে?
রকি আবার হাসতে লাগলো তারপর হাসি থামিয়ে বললো: ঠিক আছে আমি না হয় নাই হলাম তা এই দুজনের মধ্যে কে? দুজনেরই দেখলাম তোমার প্রতি সমান দরদ।
তোমার নোংরা মনে নোংরামি ছাড়া এর থেকে ভালো আরকি আশা করতে পারি?
কি করবো বলো, আমি এরকমই তা এবার কাকে পাঠাচ্ছো আমার সাথে লড়তে? তবে যদি আমি জিতি তাহলে?
তাহলে?
তাহলে আমাকে এখান থেকে জ্যান্ত যেতে দিতে হবে আর তোমাকেও আমার সাথে যেতে হবে।
আর যদি তুমি হেরে যাও?
তাহলে আমাকে মেরে দিও।
আমি রাজী।
বেশ তাহলে পাঠাও কাকে পাঠাবে, তবে যাকেই পাঠাও নিজে তৈরি থেকো তার মরামুখ দেখার জন্য।
আমি তৈরী আছি তোমার মরামুখ দেখার জন্য।
কথাটা শুনে আবার রকি একটু হেসে রয়ের দিকে তাকিয়ে বললো: তাহলে তুই আসবি, আয়।
রয় ওরফে অভয় একটু হেসে নিজের দুহাতে কনুইয়ের কাছে শার্টের হাতাটা ধরে একটু টেনে উপরে তুলে এগিয়ে গেল এবং পরক্ষনেই রকি আক্রমণ করলো সে একসময় স্টেট লেভেলে বক্সিং চ্যাম্পিয়ন ছিল এবং নিঃসন্দেহে একজন সেরা মুষ্টিযোদ্ধা সে আর তার নীতি হলো অ্যাটাক ইজ দ্যা বেস্ট ডিফেন্স, বরাবরই সে প্রতিপক্ষকে  কোনো সুযোগ না দিয়ে আগে আক্রমণ করে প্রতিপক্ষকে কুপোকাত করায় বিশ্বাসী সেটাই সে করে এসেছে আজ‌ও সে তাই করলো, কিন্তু সে জানেনা আজ যে তার সামনে তার প্রতিপক্ষ হয়ে দাঁড়িয়ে আছে সে নিজেও একজন সেরা ফাইটার।
পরপর রকির আঘাতগুলো প্রতিহত করছে অভয়, কখনো মাথা সরিয়ে এড়িয়ে যাচ্ছে তো কখনো রকির হাতটা নিজের হাত দিয়ে আটকে যাচ্ছে, এবং ফাঁক পেলে নিজেও আঘাত করছে যেটা রকিও প্রতিহত করছে, এইভাবে বেশ খানিকক্ষণ কেটে গেল কেউ কাউকে ঘায়েল করতে পারলো না সমানে সমানে টক্কর চলছে, হঠাৎ রকির একটা মুষ্টি প্রহার আটকাতে অভয়ের একটু দেরী হয়ে গেল ফলে আঘাতটা সোজা ওর চোয়ালে আঘাত করলো, অভয় কয়েকপা পিছিয়ে গেল ওর ঠোঁটের কোন থেকে একটু রক্ত বেরিয়ে এল পরক্ষনেই সে এগিয়ে এসে ঘুষি পাকিয়ে রকির চোয়ালে আঘাত করতে গেল কিন্তু পারলো না রকি অভয়ের মুষ্টিটা ধরে ফেললো তার হয়তো ইচ্ছা ছিল অভয়ের হাতটা মোচড়িয়ে বা আঘাত করে ভেঙে দেওয়ার কিন্তু সেটা করার আগেই অভয় ঘুরে রকিকে নিজের পিছনে পিঠের দিকে নিয়ে কনুইটা তুলে পিছনে চালিয়ে দিল আর সেটা সোজা গিয়ে লাগলো রকির নাকে, রকি অভয়ের হাত ছেড়ে দিয়ে কয়েকপা পিছিয়ে নাকে হাত দিয়ে চেপে ধরলো যখন হাত সরালো তখন দেখা গেল রকির নাক ফেটে রক্ত গড়াচ্ছে।
রকি বা হাতের তালুর উল্টোপিঠ দিয়ে কিছুটা রক্ত মুছে নিল তারপর আবার এগিয়ে এল এবার আরও ক্ষিপ্র আরও দ্রুত গতিতে আঘাত করছে অভয়‌ও ঠিক ততোধিক দ্রুততায় ততোধিক ক্ষিপ্রতার সাথে আঘাতগুলো প্রতিহত করছে কিন্তু তাও কয়েকটা আঘাত অভয়ের চোয়ালে, পেটে এসে লাগলো, বদলে অভয়ের কয়েকটা আঘাত‌ও রকির চোয়ালে নাকে গিয়ে লাগলো আরও খানিকক্ষণ কেটে যাওয়ার পরেও কেউ কাউকে হারাতে পারলো না। রকি বলে উঠলো "তুই তো বিদিশাকে হতাশ করছিস ও কত আশা নিয়ে তোকে আমার সাথে লড়তে পাঠালো আর তুই.."।
অভয় ব্যাঙ্গের উত্তর দেয় না ,শুধু ঠোঁটের কোণে একটা ছোট্ট হাসি দেখা দেয়। রকি এগিয়ে আসে অভয়ের চোয়াল লক্ষ্য করে ঘুষি চালায় অভয় ঘুষিটা ধরে নেয় কিন্তু রকি অপর হাত দিয়ে অভয়ের তলপেটে পাঞ্চ মারে অভয় কয়েকপা পিছিয়ে যায় ,এবার রকি এগিয়ে আসে পরপর দ্রুতগতিতে দুহাতে অভয়ের চোয়াল মুখ লক্ষ্য করে ঘুষি চালাতে থাকে কিন্তু অভয় হাত দিয়ে সেগুলো ব্লক করতে থাকে মাঝে হঠাৎ রকি হাঁটু উঠিয়ে আঘাত করতে গেলে অভয় নিজের একটা কনুই হাঁটুর উপর আঘাত করে এতে রকি হাঁটু দিয়ে আঘাত করতে পারে না এটা ঠিক তবে পরমুহূর্তেই একটা হাত দিয়ে অভয়ের চোয়ালে একটা মোক্ষম পাঞ্চ মারে।
আবার রকি পরপর ঘুষি মারতে থাকে এবং অভয়‌ও আগের মতো ব্লক করতে থাকে এবারও রকি আবার তার হাঁটু উপরে তোলে তবে এবার অভয় তার কনুইয়ের বদলে হাঁটু তুলে আঘাতটা ব্লক করে এবং রকি হাত দিয়ে আঘাত করতে গেলে সেটা এড়িয়ে রকির চোয়ালে পাঞ্চ মারে এবার রকি কিছুটা পিছিয়ে যায় কিন্তু পরক্ষনেই আবার এগিয়ে এসে আঘাত করতে যায় এবারও দুজনের মধ্যে অনেকক্ষণ সমানে সমানে লড়াই চলে, দুজনেই দুজনের আঘাত ব্লক করে নিজেকে বাঁচিয়ে অপরকে আঘাত করার চেষ্টা চালাতে থাকে একসময় অভয় রকির হাতটা ধরে আঘাতটা আটকাতেই রকি চকিতে লুকিয়ে রাখা একটা ছোট্ট ছুরি অন্য হাতে বার করে দ্রুত পেট লক্ষ্য করে চালিয়ে দেয় কিন্তু সেটা খেয়াল করে অভয় আঘাতটা এড়ানোর জন্য পিছনে সরে আসে তবুও ছুরিটা অভয়ের পেটের চামড়া ছুঁয়ে যায় এবং ছুরিটা ধারালো হবার জন্য কিছুটা কেটে রক্ত বেরোতে থাকে। আমির সেটা দেখেই রকিকে মারার জন্য পিস্তল বার করতেই অভয় হাত উঁচু করে বারণ করে তারপর আবার রকির উদ্দেশ্যে একটা বিদ্রুপের হাসি দিয়ে ওকে আক্রমণ করার জন্য ইশারা করে, এতে রকি একটু অবাক এবং রেগে যায় সে ছুরি হাতে এগিয়ে আসে এবং দ্রুতগতিতে ছুরি দিয়ে অভয়কে আঘাত করার চেষ্টা করতে থাকে কখনো ডানহাতে ছুরি ধরে অভয়ের গলা লক্ষ্য করে চালায় তো কখনো মুহূর্তের মধ্যে বা হাতে নিয়ে পেটে ঢোকাতে চেষ্টা করে, অভয়‌ও ক্রমাগত আঘাতগুলো কখনো এড়িয়ে যেতে থাকে তো কখনো রকির হাত ধরে আঘাতগুলো আটকে দিতে থাকে মাঝে অবশ্য রকি চকিতে আঘাতের লক্ষ্য পাল্টে ফেলে মানে অভয়ের গলা লক্ষ্য করে চালিয়ে চকিতে অন্য হাতে ছুরি নিয়ে একটু ঝুঁকে অভয়ের থাইয়ে বা পেটে চালায় কয়েকবার একটু কেটে গিয়ে রক্ত বেরোতে থাকে এইভাবে চলতে চলতে একসময় অভয় রকির ছুরি ধরা ডানহাতের আঘাতটা মাথা সরিয়ে এড়িয়ে যায় এবং রকির কবজিটা ধরে ফেলে পরক্ষনেই নিজের  বা হাঁটুটা তুলে রকির ডান পাঁজরে সজোরে আঘাত করে, একটা "আঃ" আর্তনাদের সাথে রকি কয়েকপা পিছিয়ে বা হাত দিয়ে আঘাতপ্রাপ্ত পাঁজর চেপে ধরে ছক হাঁটু মুড়ে মাটিতে বসে পরে, সুযোগটা কাজে লাগায় অভয় কারণ সে এখন জয়ের গন্ধ পেতে শুরু করেছে সে এবার এগিয়ে যায় কি টেক্সট রকি পাঁজরে ব্যাথা নিয়েও উঠে দাঁড়িয়ে আবার অভয়কে আঘাত করতে এলে অভয় আবার আঘাতটা এড়িয়ে রকির থুতনিতে একটা আপারকাট পাঞ্চ মারে রকি ছিটকে পিছনে মাটিতে পড়ে যায় এবং তার হাত থেকে ছুরিটা একটু তফাতে পরে যায়, কিন্তু রকিও একজন চ্যাম্পিয়ন ফাইটার সে সঙ্গে সঙ্গে উঠে ছুরি ছাড়াই আঘাত করতে এলে অভয় তার কমন অথচ ভীষণ কার্যকরী ট্যাকটিক্স ব্যবহার করে, এক পা তুলে রকির এক পায়ের পাতা মাটিতে চেপে ধরে আর এক হাত দিয়ে রকির চোয়ালে ঘুষি চালায় রকি আঘাতটা ছড়ানোর জন্য মাথাটা পিছনে সরিয়ে আঘাতটা এড়ালেও একটা পা মাটির সাথে অভয় চেপে ধরে থাকায় শরীরের ব্যালেন্স ঠিক রাখতে পারে না এবং একটা তীব্র আর্তনাদ করে মাটিতে পরে যায় এবং বলাবাহুল্য রকির‌ও একটা পায়ের পাতার জয়েন্ট ভেঙে গেছে।
অভয় এর আগেও কয়েকবার এটা করতে চেষ্টা করেছে কিন্তু রকি সঠিক সময়ে সরে যাওয়ায় সফল হয়নি অবশেষে হয়েছে রকি মাটিতে পরে কাতরাতে থাকে আর যন্ত্রনায় আর্তনাদ করতে থাকে অভয় রকির কাছে গিয়ে ওর চোয়ালে একটা মোক্ষম পাঞ্চ মারে। এবার বিদিশা এগিয়ে রকির সামনে আসে অভয় পিছিয়ে যায় যাওয়ার আগে বিদিশাকে বলে: তোমাকে বলেছিলাম না তোমার প্রতিশোধ পূরণ হবে, আমি সাহায্য করবো আমি আমার কথা রেখেছি, যাও নিজের প্রতিশোধ পূরণ করো।
বিদিশার হাতে পিস্তল রকি এবার বিদিশার দিকে অগ্নিদৃষ্টিতে তাকায় কোনোমতে বলে: কি মারবে আমাকে?
বিদিশা শান্ত কণ্ঠে জবাব দেয়: তোমাকে মুক্তি দিচ্ছি পারলে পরের জন্মে একজন ভালো মানুষ হয়ে জন্মিও। কথাটার সাথে সাথেই পিস্তল পরপর কয়েকবার গর্জে ওঠে এবং রকি দুহাত দুদিকে ছড়িয়ে মাটিতে লুটিয়ে পড়ে।

খবরটা এসে পৌঁছানো মাত্র বীরেন ভট্টাচার্যের পায়ের তলার মাটি সরে গেল তার ভাইয়ের পরে এবার তার ভাগ্নে রকিও... পুলিশ থেকে অবশ্য তাদের বডি শনাক্তের জন্য ডেকেছে কিন্তু বীরেন বাবু জানেন রকি এআরসির পিছনে ছিল আর এআরসি যে কতটা ভয়ানক সেটার প্রমাণ তো তিনি অনেক আগেই পেয়েছেন তবুও তিনি রকিকে পাঠিয়েছিলেন এআরসির পিছনে, রাগে দুঃখে হতাশায় নিজের মাথার চুল টেনে ছিঁড়তে ইচ্ছা করছে বীরেন বাবুর।
মর্গে নিজের ছেলের মৃতদেহের উপরে কান্নায় ভেঙে পড়েছেন বৈশালী দেবী তাকে সান্ত্বনা দেওয়ার চেষ্টা করছেন শেফালী দেবী ও বৃষ্টি কিছুটা দূরে গম্ভীর মুখে দাঁড়িয়ে আছেন বীরেন বাবু। শ্মশানে রকির দেহটা চুল্লিতে ঢোকানোর সাথে সাথেই বৈশালী দেবী ভাইয়ের কাছে এসে চেঁচাতে শুরু করেন, "বীরেন তুই এখনো দাঁড়িয়ে থাকবি? আমার ছেলেকে যে বা যারা মেরেছে তাদের তুই ছেড়ে দিবি? আমার ওদের লাশ চাই, রক্ত চাই" বীরেন বাবু দিদির কথায় কোনো উত্তর না দিলেও শেফালী দেবী আর চুপ থাকতে পারেন না এত বছরের বিবাহিত জীবনে যেটা করেননি সেটাই এখন করলেন নিজের স্বামীর উদ্দেশ্যে উঁচু গলায় কথা বললেন "দেখছো তোমার পাপের পরিণাম? প্রথমে তোমার ভাই গেলো আর এখন রকি, জানিনা তোমার আর কত পাপের শাস্তি পাওয়া বাকি আছে আমাদের"।
এবার বীরেন বাবুও গর্জে ওঠেন: পাপ নয় ভুল একটা ভুল করেছিলাম তার মাশুল এখন দিতে হচ্ছে কিন্তু আমিও বীরেন ভট্টাচার্য, এত সহজে হারবো না ওই রুদ্রের ছেলে অভয়কে এবার নিজের হাতে শেষ করবো"
চেষ্টা তো করেছিলে ষোলো বছর আগে তুমি তোমার দিদি আর ঠাকুরপো সাথে জগাও ছিল সবাই তাদের পাপের শাস্তি পেয়েছে এবার তোমার পালা, এবার তো অন্তত নিজেকে শোধরাও।
অনেক কথা হয়েছে তোর... এত বছর আমার পায়ের তলায় ছিলি আর আজ..
আর আজ মুখ ফুটেছে, শেষের কথাটা বলেন বৈশালী দেবী একটু থেমে তিনি আবার বলতে শুরু করেন: আজ তোমার মুখ ফুটেছে শেফালী ভুলে যাচ্ছো তুমি কার সামনে দাঁড়িয়ে কথা বলছো।
না, তবে আপনি ভুলে যাচ্ছেন আজ রকির এই অবস্থা শুধুমাত্র আপনাদের জন্য।
চোপ গর্জন করে ওঠেন বীরেন বাবু , তিনি আরও কিছু বলতে যাচ্ছিলেন কিন্তু তার আগেই বৃষ্টির কাছে বাধা পান, বৃষ্টি বলে: মা তো ভুল কিছু বলেনি, রকি দাদা কি কি করতো সেটা আমরা সবাই জানি, বৌদিকে কিরকম মারতো অত্যাচার করতো সেটাও আমরা দেখেছি।
এখন দেখছি তোমার‌ও মুখ ফুটেছে বৃষ্টি। চাপা গর্জনে কথাটা বলেন বীরেন বাবু।
যেটা সত্যি সেটাই বলছি ড্যাডি, তোমাদের করা অন্যায়ের শাস্তি আমরা ভোগ করছি যে তাথৈ আগে আমার সাথে কথা না বলে থাকতো না সে এখন আমার থেকে দূরে দেখাও করে না ,যে ছেলেটা একসময় আমাকে ভালোবাসতো সে এখন আমাকে ঘেন্না করে শুধুমাত্র তোমাদের জন্য, আর তোমাদের কথা শুনে আমি ছোটোবেলায় যে অন্যায়টা করেছিলাম তার জন্য কিন্তু আঃ। হটাৎ বৃষ্টি আর্তনাদ করে ওঠে কারণ বৈশালী দেবী এখন ওর চুলের মুঠি চেপে ধরেছেন এবং ক্রুদ্ধ স্বরে বলতে থাকেন: আমরা যা করেছি বেশ করেছি, আবার করবো যে আমার ছেলেকে মেরেছে তাকে আর তার পুরো পরিবারকে জ্যান্ত পোড়াবো।
ওকে ছেড়ে দাও দিদি, শেফালী দেবী অনুরোধ করতে থাকেন,বৃষ্টিও আর্তনাদ করতে থাকে কিন্তু বৈশালী দেবী তাতে কর্ণপাত করেন না তিনি এক‌ইভাবে বলতে থাকেন: তবে তার আগে তোদের মা-মেয়ের উচিত শিক্ষা দেবো। কিন্তু তিনি কিছু করার আগেই শেফালী দেবী নিজের মেয়েকে ছাড়িয়ে নেন, বৈশালী দেবী রাগে ফুঁসতে ফুঁসতে আবার বৃষ্টিকে ধরার জন্য এগিয়ে আসতেই শেফালী দেবী নিজের মেয়েকে আড়খল করে বলতে থাকেন: আপনারা কি মানুষ? এতটা নীচে একজন মানুষ কিভাবে নামতে পারে?
দেখবি তুই? তাহলে দেখ বলে এবার বীরেন বাবু তার স্ত্রী শেফালী দেবীর গলা টিপে ধরেন আর চিৎকার করে বলতে থাকেন "আজ সবাইকে শেষ করে দেবো"
ড্যাডি.. বৃষ্টি ভয়ে আর্তনাদ করে ওঠে, "ছাড়ো মা কে ছাড়ো" বীরেন বাবুকে একটা ধাক্কা দিয়ে নিজের মাকে ছাড়িয়ে নেয় বৃষ্টি, শেফালী দেবী কাশতে থাকেন, বৃষ্টি বলতে শুরু করে "তোমরা মানুষের‌ও অধম, পিশাচ তোমরা"
মনে হচ্ছে আজ মা-মেয়ে দুটোকেই শেষ করতে হবে। বলে ক্রুদ্ধ বৈশালী দেবী বৃষ্টির দিকে এগিয়ে যেতেই ,চকিতে বৃষ্টি নিজের গোড়ালির কাছে জিন্সের তলায় লুকোনো পিস্তল বার করে আনে আর সটান সেটা নিজের পিসির দিকে তাক করে, এক মুহূর্ত থমকে যান বৈশালী দেবী, কিন্তু বীরেন ভট্টাচার্যের কয়েকজন লোক বৃষ্টিকে ধরার জন্য এগিয়ে আসতেই বৃষ্টি ওদের দিকে পিস্তল ঘোরায় বলে: কেউ আমাদের ধরার চেষ্টা করলে আমি গুলি চালাবো।
চালা গুলি। বীরেন বাবুর গুরুগম্ভীর স্বর শোনা যায়, তিনি এগিয়ে আসছেন বৃষ্টির দিকে।
ড্যাডি আমি কিন্তু চালিয়ে দেবো।
চালা গুলি, মেয়ে হয়ে নিজের বাবার দিকে পিস্তল ধরেছিস, নিজের মেয়েই শত্রু হয়ে গেছে আর বীরেন ভট্টাচার্য শত্রুর শেষ রাখে না। বীরেন ভট্টাচার্য এগোতে থাকেন আর বৃষ্টি এবং সরমাদেবী পিছোতে থাকেন তাদের চোখে ভয়। হঠাৎই সরমাদেবী মেয়ের হাত থেকে পিস্তল ছিনিয়ে নিয়ে সেটা সোজা নিজের স্বামীর দিকে উঁচিয়ে ধরে মেয়ের উদ্দেশ্যে বলেন: পালা বৃষ্টি, পারলে তাথৈএর সাথে যোগাযোগ কর, ও অভয়ের কাছে আছে।
মা তুমিও চলো, আমি তোমাকে একা ছেড়ে..
কথা বাড়াস না বৃষ্টি পালা নাহলে এরা তোকে মেরে ফেলবে। ইতিমধ্যে বীরেন বাবু এগিয়ে এসে নিজের স্ত্রীর হাত থেকে পিস্তল কেড়ে নিতে চাইছেন কিন্তু সরমাদেবী ছাড়তে চাইছেন না এই নিয়ে ধস্তাধস্তি চলছে, বৃষ্টি তবুও দাঁড়িয়ে আছে দেখে সরমাদেবী আবার বলেন: দৌড়ো বৃষ্টি, পালিয়ে যা। এবার বৃষ্টি দৌড়াতে যেতেই বৈশালী দেবী কয়েকজনকে হুকুম দেন ওকে ধরার কিন্তু তখনই সরমাদেবী একটা জোরে ধাক্কায় বীরেন বাবুকে মাটিতে ফেলে দিয়ে আগুয়ান লোকদের উদ্দেশ্যে পরপর দুটো গুলি চালান, একজনের গায়ে গুলি  লাগায় সে একটা আর্তনাদ করে মাটিতে লুটিয়ে পড়ে।
বৃষ্টি দাঁড়িয়ে থাকিস না পালা। এবার মায়ের কথা শোনে বৃষ্টি সে দৌড় লাগায় কিন্তু তখনই বীরেন বাবু উঠে নিজের স্ত্রীকে ধরতে এগিয়ে আসতেই তাকে লক্ষ্য করে গুলি চালান সরমাদেবী কিন্তু অনভ্যস্ত হাতে চালানোর জন্য লক্ষ্যভ্রষ্ট হয়ে গুলি লাগে বৈশালীদেবীর বুকে, রক্তাক্ত অবস্থায় একটা চিৎকার করে মাটিতে পড়ে যান পরক্ষনেই বীরেন বাবুর হাতের পিস্তল গর্জে ওঠে এবার সরমাদেবী মাটিতে পড়ে যান।
"তোরা যা বৃষ্টিকে ধরে আন ও যেন কোনোমতেই পালাতে না পারে" পাগলের মতো চিৎকার করতে থাকেন বীরেন বাবু, তার লোকের বেরিয়ে যায়। দৌড়াতে থাকে বৃষ্টি, একটু আগেই সে পরপর দুবার পিস্তলের আওয়াজ শুনেছে সাথে দুজন মহিলার চিৎকার চিনতে কষ্ট হয়নি তার একজন তার পিসি আর অপরজন তার মা, বুকফাটা কান্না বেরিয়ে আসতে চায় কিন্তু তার মনে পবে তার মা তাকে বাঁচানোর জন্য প্রাণ দিয়েছে, তাই তাকে পালাতে হবে তার মায়ের বলিদান ব্যার্থ হতে দেবে না সে।
আরো জোরে দৌড়াতে থাকে সে শ্মশান থেকে বেশ কিছুটা দূরে গাড়ি চলাচলের রাস্তা, সেখানে বাসস্টপ আছে সেদিকে দৌড়াতে থাকে, একটু পরে দাঁড়িয়ে ঝুঁকে দুহাঁটুতে হাত দিয়ে হাঁফাতে শুরু করে কিন্তু পিছনে একাধিক পায়ের আওয়াজ পেয়ে সে বোঝে তাকে ধাওয়া করা হচ্ছে, সে আবার দৌড় লাগায়।
কোনোমতে বাসস্টপে পোঁছেই যে বাসটা সবার আগে এল সেটাতেই উঠে গেল বৃষ্টি কোথায় যাবে সেটাও দেখলো না অবশ্য কোথায় যাবে সেটাই তো জানেনা মনে পড়লো মা বলেছিলেন তাথৈএর কাছে যেতে, তাথৈ অভয়ের কাছে আছে। অভয়.. ও বেঁচে আছে? কিন্তু থাকলেও ও কোথায় আছে সেটা বৃষ্টির জানা নেই তাথৈকে ফোন করতে পারে কিন্তু তাথৈ তো এখন ওর সাথে কথাই বলতে চায় না ও কি ফোন ধরবে?
অনেক ভেবে তাথৈকে ফোন করে বৃষ্টি কিন্তু দুর্ভাগ্য যে তাথৈএর ফোন সুইচড অফ, এবার সত্যিই ভয় করতে থাকে বৃষ্টির এবার কি করবে, কোথায় যাবে? হটাৎ ওর মনে পড়লো অমিয়র কথা অমিয় নিশ্চয়ই জানে তাথৈ আর অভয় কোথায় আছে কিন্তু অমিয়‌ও তো ওকে ঘৃণা করে ও কি সাহায্য করবে? অমিয়‌কে ফোন করে বৃষ্টি কিন্তু অমিয় ওর ফোন ধরে না একটু পরে আবার ফোন করলে কেটে দেয় নিজের মনেই নিজেকে ব্যাঙ্গ করে বৃষ্টি, নিজেকেই বলে: আমাকে এখন সবাই ঘেন্না করে, কেন বাঁচতে চাইছি এর থেকে তো মারা গেলেই ভালো হতো। কিন্তু পরক্ষনেই মায়ের মৃত্যুর কথা মনে পড়তেই ঠিক করে তাকে বাঁচতে হবে, তার মায়ের হত্যার প্রতিশোধ নেওয়ার জন্য তাই প্রথমে দোনোমোনো করলেও শেষ পর্যন্ত বৃষ্টি ঠিক করে সে অমিয়র সাথে দেখা করে সাহায্য করবে। বাসে একদম পিছনে গিয়ে একটা সিট পেয়ে বসে দুহাতে নিজের মুখ ঢাকে বৃষ্টি, লুকোনো মুখ চোখের জলে ভিজে যায় যদিও সবার অলক্ষ্যেই থাকে ব্যাপারটা, একটু পরে চোখের জল মুছে নেয় এখন চোখের জল ফেলার সময় নয়।
কিছুক্ষণ পরে যখন একটা বাসস্টপে নামলো বৃষ্টি তখন সন্ধ্যা উত্তীর্ণ হয়ে গেছে অমিয়র বাড়ি চেনে না সে কিন্তু অফিসটা চেনে সেখানেই যাওয়া ঠিক করে বৃষ্টি একটা অটো নিয়ে অমিয়র অফিসে পৌঁছে সিকিউরিটির কাছ থেকে জানতে পারেও আসতে একটু দেরী হয়ে গেছে অমিয় এইমাত্র বেরিয়ে গেছে, বৃষ্টি জানে অমিয় মাঝে মাঝে অফিস থেকে বেরিয়ে সামনের চায়ের দোকানে আড্ডা দেয় বৃষ্টি সেই দিকে ছূটলো। চায়ের দোকানের কাছে পৌঁছেও বৃষ্টি অমিয়কে যদিও দেখতে পেলো না কিন্তু যাদের পেলো তাদের দেখে ওর হৃৎকম্প শুরু হয়ে গেল ,এদের সে চেনে তার ড্যাডির হয়ে কাজ করে নির্ঘাত ওকে খুঁজছে, বৃষ্টি চট করে একটু আড়ালে লুকিয়ে গেল।
একটু পড়ে লোকগুলো অন্যদিকে চলে গেলে আড়াল থেকে বেরিয়ে আসে চায়ের দোকানে অমিয়র খোঁজ করে জানে অমিয় এখান থেকেও একটু আগে বেরিয়ে গেছে,  বৃষ্টি জানে অমিয় ওর ফোন ধরবে না তাই চায়ের দোকানের দোকানদারের থেকে ফোন চেয়ে অমিয়কে ফোন করে কিন্তু এবারও দুর্ভাগ্য যে অমিয়র ফোন বিজি পরপর কয়েকবার করে কিন্তু প্রতিবারই বিজি, শেষে হতাশ হয়ে ফোনটা ফেরত দিয়ে দোকান থেকে বেরিয়ে যায়।
আর কিছু করার নেই বৃষ্টির, ওর সব রাস্তা বন্ধ কিন্তু তবুও শেষ চেষ্টা হিসেবে তাথৈকে আরেকবার ফোন করে যদিও ওর মনে আর বেশি আশা নেই, তবুও যতক্ষণ শ্বাস ততক্ষণ আশ এইভেবে ফোন করেছে যদি তাথৈএর ফোন চালু হয় এবং তাথৈ ফোন ধরে তাহলে তাথৈর কাছে সাহায্য না চাইলেও অন্তত ক্ষমা চেয়ে নেবে কারণ এইভাবে একা বেশীক্ষণ সে তার ড্যাডির লোকেদের থেকে পালাতে পারবে না ধরা পড়বেই। ফোনটা কানে দিয়ে অপেক্ষা করতে থাকে এবার অবশ্য তাথৈএর ফোন চালু হয়েছে কিন্তু রিং হয়ে যাচ্ছে তাথৈ ধরছে না, বৃষ্টি ভাবছে ফোন কেটে দেবে এমন সময় ওপাশ থেকে ভেসে এলো "কি হয়েছে বল"।
হ্যালো, হ্যালো তাথৈ
বল কি হয়েছে?
তাথৈ আমাকে বাঁচা, ওরা আমাকে মেরে ফেলবে।
কারা? কি হয়েছে তোর?
তাথৈ ওরা মাকেও মেরেছে এবার আমার পিছনে ধাওয়া করছে।
কারা? তুই শান্ত হ আগে তারপর বল কি হয়েছে?
হ্যালো হ্যালো। কিছু বলতে গিয়েও বলতে পারলো না বৃষ্টি কারণ ঠিক তখনই ফোনের চার্জ শেষ হয়ে ফোনটা বন্ধ হয়ে গেল, ফোনটা রেখে কিছুক্ষণ দুচোখ বন্ধ করে দাঁড়িয়ে থাকে বৃষ্টি, তার বন্ধ চোখ দিয়েও জল ঝড়ছে সে জানে আর কোনো উপায় নেই সে একবার চারিদিকে তাকায় অনেক পথচারীদের দেখলেও একটু আগের দেখা নিজের ড্যাডির লোকদের দেখতে পায় না। বৃষ্টি হাঁটতে থাকে কোথায় যাচ্ছে কার কাছে যাচ্ছে কোনো ঠিক নেই ফোন বন্ধ থাকায় তাথৈকে জানাতে পারেনি কোথায় আছে কাজেই ওর থেকে সাহায্য পাওয়ার আশাও নেই, অন্য কারো থেকে ফোন করে লোকেশন দিতে পারে কিন্তু ও আসার আগেই যে ওর ড্যাডির লোকগুলো ওকে ধরে ফেলবে না তার গ্যারান্টি নেই, এদিকে তৃষ্ণায় গলা কাঠ, ক্ষিদেতে পেটে মোচড় দিচ্ছে, একটু এগিয়ে একটা ফাস্টফুডের দোকান দেখতে পেলো বৃষ্টি সেখানে ঢুকে আগে অনেকটা জল খেয়ে তেষ্টা মেটালো, তারপর খাবার খাবে বলে অর্ডার দিতে গিয়ে মনে পড়ে ওর কাছে বেশি ক্যাশ নেই যা ছিল সেটা গাড়ি ভাড়ায় খরচ হয়ে গেছে আর অল্প যা আছে সেটায় এখানে খাওয়া হবে না, অন্য কোনো কমদামি খাবারের দোকান খুঁজতে হবে বেশী ক্যাশ কখনোই সঙ্গে রাখার অভ্যাস নেই, বেশিরভাগ সময় মোবাইল থেকেই পেমেন্ট করে দেয় কিন্তু এখন সে উপায়‌ও নেই, আরও কিছুটা জল খেয়ে দোকান থেকে বাইরে বেরিয়ে আসে ও খেয়াল‌ও করে না যে দোকানে ঢোকা ইস্তক একজোড়া চোখ অবাক দৃষ্টিতে ওর কার্যকলাপ লক্ষ্য করছে।
সবে দোকানের বাইরে পা দিয়েছে এমন সময় বৃষ্টি শুনতে পেলো "ওই যে ওখানে ধর ওকে", তাকিয়ে দেখে লোকগুলো ফিরে এসেছে, সে আবার দিগ্বিদিক জ্ঞানশূন্য হয়ে দৌড় লাগায় পিছনে লোকগুলো দৌড়াতে থাকে কিন্তু কজন শক্ত সমর্থ জোয়ান লোকের সাথে সে পারবে কেন লোকগুলো ওর অনেক কাছে চলে এসেছে ওকে প্রায় ধরেই ফেলবে এমন সময় বৃষ্টির সামনে এক বাইক এসে থামে আর চালক বলে: তাড়াতাড়ি উঠে এসো। বাইক চালক হেলমেট করে থাকায় প্রথমে চিনতে পারে না বৃষ্টি তাই একটু হকচকিয়ে যায়, চালক আবার বলে "কি হলো উঠে আসো" শুনে তাড়াতাড়ি বাইকের পিছনের সীটে উঠে বসে আর সঙ্গে সঙ্গে বাইক দ্রুত গতিতে বেরিয়ে যায়।
ওই লোকগুলো তোমার পিছনে পড়েছিল কেন? জিজ্ঞেস করে বাইক চালক, কিন্তু বৃষ্টি চুপ করে থাকে তার এখন হতবিহ্বল অবস্থা এই চালক একজন ছেলে এবং সবথেকে বড়ো ব্যাপার একে সে চেনে, মুখ না দেখলেও গলার আওয়াজে চিনেছে, অমিয়... যার সাথে দেখা করার জন্য এতক্ষণ ধরে সে পাগলের মতো ছুটছে কিন্তু সবজায়গায় শোনে সে চলে গেছে কিন্তু ওর সৌভাগ্য ঠিক সময় ওর সামনে চলে এলো।  বৃষ্টি পিছন থেকে দুহাতে অমিয়কে আঁকড়ে জড়িয়ে ধরে পিঠে মাথা রাখে কিন্তু চালকের প্রশ্নের উত্তরের বদলে বলে "ওরা কিন্তু এখন তোমার‌ও পিছনে পড়বে"
কিন্তু ওরা কারা? আর বীরেন ভট্টাচার্যের মেয়ের পিছনে পড়েছেই বা কেন? এত সাহস এই শহরে কার?
ওরা বীরেন ভট্টাচার্যের‌ই লোক।
অবাক হয় অমিয় বলে "তোমার ড্যাডি তোমাকে ধরতে লোক পাঠিয়েছেন কেন?"
অনেক লম্বা ঘটনা।
তুমি আমাকে খুঁজছিলে কেন?
কারণ তোমার কাছে আসতেই আমার মন চেয়েছে তাই, তোমাকে তো ফোন‌ও করেছিলাম তুমি ধরোনি।
হ্যাঁ মিটিংয়ে ছিলাম পরে কাজের চাপে কলব্যাক করতে ভুলে গেছি, এবার বলোতো কি হয়েছে? ও এই নাও এটা খেয়ে নাও আর তারপর হেলমেট পড়ে নাও। কথাটা বলে অমিয় একটা প্যাকেট বৃষ্টির হাতে দেয়।
বৃষ্টি সেটা নিতেই অমিয় আবার বলে: আপাতত এটাই খেয়ে নাও, কি আর করবো বলো তোমার পছন্দের খাবার এইমুহূর্তে আনতে পারলাম না তার জন্য দুঃখিত।
বৃষ্টি বোঝে অমিয় এখনো ওর উপরে রেগে আছে সে চুপ করে প্যাকেট খোলে তাতে একটা রোল আছে, বৃষ্টি চুপচাপ খেতে থাকে, মাঝে একবার জিজ্ঞেস করে: তুমি খেয়েছো?
হুম।
সত্যি বলছো?
তুমি যে দোকান থেকে জল খেলে ওখানেই আমি খাচ্ছিলাম তুমি খেয়াল করোনি।্ও আচ্ছা।
এবার সব খুলে বলোতো।
বৃষ্টি একে একে সব বলতে থাকে এমনকি ওকে পালাতে বলে মায়ের ওদের সামনে দাঁড়িয়ে থাকার কথাও, অমিয় চুপ করে শুনতে থাকে হটাৎ রাস্তায় একটা বাঁক নেওয়ার সময় বৃষ্টি ওদের পিছনে তাকায় আর তাকাতেই ওর বুকটা ছ্যাঁৎ করে ওঠে তাড়াতাড়ি অমিয়কে বলে "আরো জোরে চালাও ওরা আমাদের পিছু নিয়েছে" অমিয় বাইকের স্পিড বাড়িয়ে দেয় কিন্তু এখন মাঝরাত নয় যে রাস্তা ফাঁকা থাকবে তাই না চাইলেও মাঝে মাঝে ওকে স্পিড কমাতে হচ্ছে। বৃষ্টি ভয়ার্ত গলায় বলে "ওরা আমার পিছনে আছে তুমি এক কাজ করো"। অমিয় বুঝতে পারে বৃষ্টি কি বলতে চাইছে সে বলে "চুপ করে বসে থাকো"। বৃষ্টি আবার বলে "তুমি আমাকে কোথাও নামিয়ে চলে যাও ওরা ধরতে পারলে তোমাকে ছাড়বে না"। অমিয় এবার ধমক দেয় "বললাম তো চুপ করে থাকতে, আমাকে ভাবতে দাও", বৃষ্টি চুপ করে যায় কিন্তু অমিয় একহাতে পকেট থেকে মোবালটা বার করে কাকে যেন ফোন করে তারপর আবার পকেটে রেখে দেয় বৃষ্টি বোঝে অমিয় হেডফোন লাগিয়ে রেখেছে।

?
Like Reply


Messages In This Thread
RE: প্রতিশোধ: দ্যা রিভেঞ্জ - by Bohemian-M - 17-05-2024, 06:42 PM



Users browsing this thread: 14 Guest(s)