Thread Rating:
  • 96 Vote(s) - 2.71 Average
  • 1
  • 2
  • 3
  • 4
  • 5
Romantic Thriller প্রতিশোধ: দ্যা রিভেঞ্জ (সমাপ্ত)
(08-10-2022, 11:59 PM)Monen2000 Wrote:
                             ত্রয়োদশ পর্ব

অভয়ের কাছে যেতে গিয়ে আবার বাধা পায় তাথৈ, ওখানকার লোকেরা ওকে যেতেই দেয় না আজ যদিও ও একা আসেনি সাথে অমিয়কেও নিয়ে এসেছে, যদিও অমিয় আসতে চায়নি ওর কিছুতেই বিশ্বাস হয়নি যে অভয় বেঁচে আছে ও বারবার বলেছে "আপনার ভুল হচ্ছে মিস্ ভট্টাচার্য, অভয় বেঁচে থাকলে আমার সাথে যোগাযোগ করতোই"
কিন্তু তবুও তাথৈ কোনোমতে বুঝিয়ে নিয়ে এসেছে, কিন্তু ঢুকতে দিলে তো। তাথৈ বারবার ওদের বোঝাতে চেষ্টা করে যে ওকে ওদের বস চেনে এর আগেও সে দেখা করে গেছে কিন্তু কে শোনে কার কথা।
"কি হচ্ছে এখানে?" একটা পুরুষ টণ্ঠ শুনে সবাই চমকে তাকায়, তাথৈ আর অমিয় দুজনেই লক্ষ্য করে যে আগন্তুক কে দেখে ওখানের লোকগুলো সম্মানের সাথে এগিয়ে যায় গিয়ে কিছু বলে, তারপর আগন্তুক তাদের দিকে এগিয়ে এসে বলে: আপনি এখানে কি করছেন মিস্ ভট্টাচার্য?।
আপনি আমাকে চেনেন?
আপনার সাথে সম্মুখ পরিচয় এর আগে হয়নি।
ওহ, আমি অভয়ের সাথে দেখা করতে এসেছিলাম আর ও অমিয় ও অভয়ের সাথে দেখা করতে এসেছে।
এইসময় একজন লোকাল লোক এগিয়ে এসে আগন্তুককে বলে: দেখুন না ভাইজান কতবার বলেছি যে ওই নামে এখানে কেউ থাকে না তবুও উনি শুনছেন না।
ঠিক আছে তুমি যাও। লোকটা চলে গেলে তাথৈ বলে: দেখুন আমি এর আগে এসে অভয়ের সাথে দেখা করে গেছি, কিন্তু এখন আর আমাকে যেতে দিচ্ছে না আপনি প্লিজ আমাদের যেতে দিন।
কোনো লাভ নেই, আপনি যার সাথে দেখা করতে এসেছেন তিনি এখন এখানে নেই, কবে ফিরবেন ঠিক নেই, কাজেই আপনারা ফিরে যান, আর তার নাম রয়।
কিন্তু..
কোনো কিন্তু নয় আমি চাইলে আপনাদের এখান থেকে বার করে দিতে পারতাম কিন্তু সেটা করিনি, এবার আপনারা নিজেই চলে যান।
তাথৈ আর অমিয় ফিরে আসছে এমন সময় আমিরের ফোন বাজলো, সে ফোনটা কানে দিয়ে বলে "বলো, সব ঠিক আছে?"।

অফিসে মায়ের শরীর খারাপের খবরটা শুনেই কোনোমতে তাড়হুড়ো করে বাণিজ্যনগরীতে নিজের বাংলোয় ফেরে এআরসি। মায়ের রুমে ঢুকে দেখে তিনি বিছানায় শুয়ে আছেন পাশে মাসি বসে আছে।
কি হয়েছে মা? এখন কেমন আছো? ডাক্তার কোথায়?
আস্তে আস্তে বাবু আগে শান্ত হয়ে বস তারপর বলছি। কথাটা বললেন মাসি।
আগে বলো কি হয়েছে? ডাক্তার কোথায়, আসেনি?
ডাক্তার এসেছিল দেখে গেছে।
কি হয়েছে?
কিছুনা, পূজোয় উপোস রেখেছিল তাই শরীর দুর্বল ছিল তাই মাথাটা একটু ঘুরে গিয়েছিল।
এত পূজো আর উপোস কিসের? প্রায় গর্জে ওঠে এআরসি।
এই শুরু হলো। আস্তে আস্তে বলে এআরসির মা অমৃতাদেবী।
আমি ভালোভাবে বলছি এসব বন্ধ করো নাহলে কিন্তু..
নাহলে কি করবি?
এবাড়িতে পূজোআচ্চা বন্ধ করে দেবো।
তোর কথামতো নাকি?
হ্যাঁ, আমার কথা মতো।
তোর বাড়ি বলে যা খুশি করবি?
যদি তাই মনে করো তাহলে তাই।
দিদি, চলোতো ওর বাড়িতে ওই থাকুক আমরা চলে যাবো।
তোমরা মা-ব্যাটায় কথা বলো আমি নীচে যাই। বলে বিন্দু মাসি চলে গেলেন।
তোমাকে কে বেরোতে দেয় আমি দেখবো, পূজো করে শরীর খারাপ করলে এখন কোন ঠাকুর দেখতে আসছে?
বাবু, তোকে বলেছি না এসব বলবি না। এবার অমৃতা দেবীও গর্জে উঠলেন, কিন্তু শরীর দুর্বল তাই আবার বিছানায় এলিয়ে পরলেন।
মা.. তুমি ঠিক আছো? আচ্ছা আচ্ছা তুমি পূজো করো কিন্তু উপোস করার কি দরকার?
এত‌ই যদি মায়ের চিন্তা তাহলে কোথায় ছিলি এতদিন? 
মা তোমাকে তো বলেছি আমি কোথায় ছিলাম..
এবার ওসব ছাড় অভয়, ওসব পুরনো কথা, এখানে আমরা নতুন জীবন শুরু করেছি।
যতদিন না ওই লোকটাকে শেষ করছি ততদিন আমি শান্তিতে থাকতে পারবো না মা, ওই লোকটা আমার বাবাকে আমার থেকে কেড়ে নিয়েছে, আমাদের যে জমিতে আমরা নিজেদের স্বর্গ বানিয়েছিলাম ওই জায়গায় লোকটা নিজের পাপের হেড অফিস করেছে, আমাদের শান্ত সুখী আনন্দের জীবনটাকে তছনছ করে দিয়েছে, ওকে আমি ছাড়বো না।
আর ওই মেয়েটা?
কোন মেয়েটা? অবাক হয় এআরসি।
ওই যে যার সাথে তুই কলেজে..
না, ওর সাথে আমার আর কোনো সম্পর্ক নেই।
তোর বাবার কিন্তু ওকে খুব পছন্দ ছিল, কি যেন নাম?
ওর কথা ছাড়ো মা, ও ওর পরিবারের মতোই, একটুও আলাদা নয়।
আলাদা হতেও তো পারে।
না, আলাদা নয় আর ওর কথা ছাড়ো, তুমি রেস্ট নাও।
তুই কি আবার যাবি?
যাবো, তবে আগে তুমি সুস্থ হবে তারপর।
পরদিন লাঞ্চে অনেকদিন পর মায়ের হাতের রান্না খেলো এআরসি, ছেলেকে কাছে পেয়ে অনেকটাই সুস্থ হয়ে উঠেছেন।
এবার কিন্তু আমি তোর সাথে যাবো। খাওয়া শেষ হতেই ছেলেকে কথাটা বললেন অমৃতাদেবী।
এখনই কি? তুমি আরও সুস্থ হ‌ও তারপর যেয়ো।
আমি ঠিক আছি, এবার আমি কোনো কথা শুনবো না তোর সাথে যাবোই।
মা..
না, তুই এবার নিয়ে যাবি ব্যাস।
আচ্ছা ঠিক আছে, তুমি এখন যাও রেস্ট নাও, যখন আমি যাবো তখন দেখা যাবে।
মা চলে যাওয়ার পর এআরসি ফোন করে "হ্যালো, আমির?"
বলো, সব ঠিক আছে?"।
হ্যাঁ।
আম্মির শরীর ভালো?
হুমমম, আগের থেকে বেটার,আচ্ছা শোনো মা এবার আমার সাথে আসতে চাইছে।
তাতে অসুবিধা কোথায়?
অসুবিধা তেমন কিছু না, তুমি একটা কাজ করতে পারবে?
কি বলো?
একটা নতুন বাড়ি বা ফ্ল্যাট দেখো, ভাড়া পাওয়া গেলে ভালো নাহলে কিনে নাও।
দরকার কি, আমি যে ফ্ল্যাটে থাকি ওখানে থাকবেন।
সেটা হয় না আমির।
কেন উনি আমার আম্মি নন?
সেটা নয়, প্রবলেম টা অন্য, ওই এরিয়াটা বীরেন ভট্টাচার্যের বাড়ির খুব কাছে, ওখানে তোমার থাকাটা জরুরী আর ওখানে সিকিউরিটি কম, মাকে সিকিউরিটি ছাড়া রাখতে সাহস হয় না।
ঠিক বলেছো, তোমার ওখানেই তো আম্মি থাকতে পারে।
উঁহু ওখানে বিদিশা আসে।
তাতে কি হয়েছে? তুমি ওখানেই আসো আম্মিকে নিয়ে, ওখানে সিকিউরিটি বেশী আমি আরো বাড়িয়ে দিচ্ছি তাছাড়া ওখানে বাগান আছে, ওনার ভালো লাগবে।
একদিকে ঠিক।
তাহলে সেটাই করো, আচ্ছা শোনো একটা কথা আছে।
বলো।
মিস্ ভট্টাচার্য এসেছিলেন সাথে একজন ছেলে, বললো তোমার ছোটোবেলার বন্ধু।
কি নাম?
অমিয়, আমি ফেরত পাঠিয়ে দিয়েছি।
ঠিক করেছো, আচ্ছা তাহলে ওটাই করো সিকিউরিটি বাড়িয়ে দাও আমি আমার বাড়িতেই মা আর মাসিকে নিয়ে যাবো।
আচ্ছা ঠিক আছে।

একটা কর্পোরেট অফিসে উচ্চপদে কাজ করে অমিয়, অফিসের পরেও এমন কিছু কাজ থাকে যেগুলো তাকে বাড়িতে সেরে রাখতে হয়, সেদিন‌ও অফিস থেকে ফিরে  কাজ করছিল এমন সময় একটা অচেনা নম্বর থেকে ফোন এল, হ্যালো কে বলছেন?
আমি। একটা মেয়ের গলা শোনা যায়।
কে আমি?
বৃষ্টি। নামটা শুনে কিছুক্ষনের জন্য স্তব্ধ হয়ে যায় অমিয় কোনো কথা বলে না, ফোনের ওপার থেকে ক্রমাগত ভেসে আসতে থাকে  হ্যালো.. হ্যালো শুনতে পাচ্ছো?
আমাকে কেন ফোন করেছেন? গম্ভীরকণ্ঠে বলে অমিয়।
আমি তোমার সাথে দেখা করতে চাই।
কিন্তু আমি চাই না।
অমিয় প্লিজ দেখা করো প্লিজ আমার কিছু কথা আছে।
কিন্তু আমার কোনো কথা নেই।
অমিয়... তুমি আমাকে কলেজে প্রপোজ করেছিলে, আমাকে আরেকবার সুযোগ দেবে?
অমিয়‌ বিস্মিত হয়, সে বুঝতে পারে না যে সে জেগে আছে না স্বপ্ন দেখছে?
কি হলো দেবে?
আপনার আজ কি হয়েছে মিস্ ভট্টাচার্য?
এবারে তাথৈ‌এর আওয়াজ আসে সে বলে: ওকে আরেকটা সুযোগ দে না, প্রত্যেককেই তো দ্বিতীয় সুযোগ দেওয়া উচিত।
না মিস্ ভট্টাচার্য কিছু কিছু ক্ষেত্রে দ্বিতীয় সুযোগ হয়না।
এরকম বলিস না অমিয়।
দেখুন সত্যি বলছি আমি এখনো আপনার দিদির যোগ্য হ‌ইনি, আর ওনাকে খুশী রাখার মতো আর্থিক সামর্থ্য‌ও আমার এখনো হয়নি,আপনার দিদি আমার সাথে সুখী হবে না আর আমি ওনাকে কষ্ট দিতে চাইনা,
অমিয় বৃষ্টি সত্যি নিজেকে বদলাতে চাইছে, ওকে একটা সুযোগ দে।
বদলাবে, কেন? উনি যেরকম আছেন ভালো আছেন সুখে আছেন তাহলে নিজেকে বদলাবেন কেন?
তুমি কি এখন আমাকে ভালোবাসো না? প্রশ্নটা বৃষ্টি করে।
কিছুক্ষণ চুপ করে থাকে অমিয়। 
কি রে উত্তর দে? এবারে তাথৈ প্রশ্ন করে,অমিয় উত্তর দেয় কিন্তু উত্তরটা তাথৈ‌এর বুকে তীরের মতো বিঁধে যায়।
"শেষবার অভয়ের সাথে আমার কি কথা হয়েছিল জানেন? আপনি তো ওর ফোন ধরেননি, আপনার দিদি কথা বলেছিল এবং কি বলেছিল সেটা তো আগেই বলেছি, সেদিন আপনার দিদি ফোন কাটার পরে ও আমাকে একটা কথা বলেছিল জানেন?"
কি কথা?
আপনার কাছ থেকে ঠকে গিয়ে ছেলেটার মন ভেঙে গিয়েছিল ও বলেছিল "আমি যা ভুল করেছি তুই কোনোদিন করিস না অমিয়, কোনোদিন নিজের লেভেলের থেকে উঁচু লেভেলের কাউকে ভালোবাসিস না, কোনোদিন না"।
আমি ওকে ঠকাইনি অমিয়।
সেসব কথা এখন অর্থহীন, কারণ ও বেঁচে নেই।
তাথৈ কিছু বলতে যাচ্ছিল কিন্তু তার আগেই অমিয় বলে: ছাড়ুন ওর কথা, আপনার দিদিকে বলবেন নিজেকে বদলানোর দরকার নেই ,উনি যেমন আছেন সেরকমই থাকুন কেউ না কেউ তো ঠিক পছন্দ করবেই ওনাকে, গুড নাইট।

"তুই এখানে থাকিস?" ছেলের বাগানবাড়িটা।দেখে প্রশ্ন করেন অমৃতাদেবী।
হ্যাঁ।
ভালো জায়গাটা। এবার কথাটা বলেন বিন্দু মাসি, তাকেও নিয়ে এসেছেন অমৃতাদেবী, দুইজন ঘুরে ঘুরে পুরো বাড়ি আর বাগানটা দেখছিলেন পিছনে এআরসি আর আমির। এমন সময় এআরসির ফোনে একটা ম্যাসেজ আসে, সেটা পড়ে ওর চোখ বড়ো বড়ো হয়ে যায়, আমির লক্ষ্য করে সেটা জিজ্ঞেস করে "কার ম্যাসেজ?"
বিদিশার।
কি লিখেছে।
আমির আমাকে এখনই যেতে হবে, তুমি মা আর মাসিকে সামলাও।
আরে হয়েছে টা কি?
বিদিশা ইজ ইন গ্ৰেট ডেঞ্জার, আই হ্যাভ টু সেভ হার।
কি বিপদ?
রকি, ও বিদিশাকে কোথাও নিয়ে যাচ্ছে।
কিন্তু তুমি ওকে খুঁজবে কোথায়? রকি ওকে যেকোনো জায়গায় নিয়ে যেতে পারে আর তাছাড়া রকি বিদিশার হাজবেন্ড ও বিদিশাকে কোথাও নিয়ে যেতেই পারে।
কোনো একটা কারনে বিদিশার সন্দেহ হয়েছে, ও আমার কাছে হেল্প চেয়েছে, আর আমিও ওকে কথা দিয়েছিলাম যে আমি ওকে প্রোটেক্ট করবো।
কিন্তু তুমি ওদের পাবে কোথায়?
নিকুঞ্জ আছে না।
নিকুঞ্জ? মানে ওই ছেলেটা যে মোবাইলের লোকেশন ট্র্যাক করে আমাদের হয়ে।
হুমম।
আরে হ্যাঁ আমি তো ভুলেই গিয়েছিলাম ওকেও তো এখানে নিয়ে এসেছি আমরা, কিন্তু তুমি একা যাবে? কয়েকজন কে নিয়ে যাও।
অত সময় নেই, তুমি মা আর মাসিকে দেখো, আমার কিছু হবে না।
কোথায় যাচ্ছিস তুই? ছেলেকে প্রশ্নটা করেন অমৃতাদেবী।
একটা ছোট্ট কাজ এসেছে সেখানেই যাচ্ছি, আমির র‌ইলো আমি একটু পরেই চলে আসবো।

হাইওয়ে ছেড়ে পাশের কাচা রাস্তায় গাড়িটা ঢুকতেই বিদিশার সন্দেহটা দৃঢ় হয়, আর ভয়টা কয়েকগুণ বেড়ে যায়। আজ সকাল থেকেই রকি অদ্ভুতভাবে ভালো ব্যবহার করছে তার সাথে যেটা সে আগে কখনো করেনি, একসময় বলে আজ ওকে নিয়ে ঘুরতে বেরোবো সারাদিন ওর সাথে কটাবে। তখনই সন্দেহ হয়েছিল বিদিশার তাই একসময় সুযোগ বুঝে রয়কে ম্যাসেজ করে সাহায্যের আর্তি জানায়, কিন্তু এইখানে রয় খুঁজে পাবে ওকে?
কাঁচা এবড়োখেবড়ো রাস্তা দিয়ে কিছুটা গিয়ে একটা পাঁচিল ঘেরা গোডাউনের ভিতরে ঢোকে গাড়িটা, বিদিশা লক্ষ্য করে পাঁচিল আর গোডাউনের মধ্যবর্তী এলাকায় অনেককটা বড়ো বড়ো গাছ রয়েছে, সবথেকে বড়ো কথা পুরো এলাকাটায় বেশ কয়েকজন রাইফেলধারী দাঁড়িয়ে আছে, আরও একজনকে চোখে পড়লো লম্বা মতো, মাথায় টাক, গায়ের রঙ শ্যামলা শরীরের পেশীর আধিক্য এতটাই যে একে দানব বলা উচিত।
বিদিশা ওর দিকে ভয়ার্ত দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে দেখে রকি বলে: ওকে আমরা পালোয়ান বলে ডাকি, একটা সময় কুস্তি করতো এখন আমার হয়ে কাজ করে, কারো শরীরের হাড় ভেঙে টুকরো টুকরো করে দিতে ও এক্সপার্ট।
"আমাকে এখানে কেন এনেছো" ভয়ার্ত স্বরে জিজ্ঞেস করে বিদিশা।
এখানে তোমার জন্য সারপ্রাইজ আছে।
সারপ্রাইজ?
হুমমম, চলো ভিতরে চলো। দুজনে গোডাউনের ভিতরে ঢোকে, বিদিশা লক্ষ্য করে গোডাউনটা ফাঁকা সে রকিকে জিজ্ঞেস করে: এখানে কিসের সারপ্রাইজ?
ওয়েলকাম... ওয়েলকাম। হটাৎ তৃতীয় কণ্ঠস্বরে বিদিশা চমকে ওঠে, অতীন সান্যাল দাঁড়িয়ে আছে তবে গায়ে পুলিশের উর্দি নেই ফরমাল পোষাক পরা, চোখে একটা সানগ্লাস।
উনি এখানে কি করছেন?
ওকে আমি ডেকেছি তাই।
তুমি, কেন?
একটা ছোট্ট কাজের জন্য।
কাজ, কি কাজ?
হটাৎ একটা গোঙানির শব্দ পেয়ে বিদিশা এদিক ওদিক তাকাতে থাকে, দেখে দুজন লোক অন্য একজনকে ধরে নিয়ে আসছে, বোঝাই যাচ্ছে এই তৃতীয় ব্যাক্তিটিকে প্রচণ্ড মারধর করা হয়েছে, সে হাঁটতে পারছে না ওই দুজন তাকে টানতে টানতে এনে ধুপ করে মেঝেতে ফেলে দিল। এবারে বিদিশা চিনতে পারে তার বাবা অনিমেষ বাবু।
বাবা। একটা আর্তনাদ করে বিদিশা ছুটে যেতে চায় কিন্তু রকি তার হাত ধরে ফেলে, বিদিশা কাঁদতে শুরু করে "বাবা.. বাবা"
আরে তোমার বাবা এখনো বেঁচে আছেন, তবে কতক্ষণ থাকবেন জানিনা।
রকি.. কেন করছো তুমি এরকম, উনি তোমার কি ক্ষতি করেছেন?
ক্ষতি তুমি করেছো, তার শাস্তি তো পেতে হবে তাই না?
আমি তোমার কি ক্ষতি করেছি? বিদিশা নিজেকে ছাড়ানোর আপ্রাণ চেষ্টা করতে থাকে কিন্তু রকির শক্ত হাত থেকে নিজেকে ছাড়াতে ব্যর্থ হয়।
যে বস্তিটা মামা উচ্ছেদ করার চেষ্টা করছে কিন্তু পারছে না, ওখানে বাইরের কাউকে ঢুকতে দেওয়া হয় না অথচ তুমি ওখানে অনায়াসে ঢুকে যাও কিভাবে, কার কাছে যাও? রকির প্রশ্ন শুনে বিদিশা হতভম্ব হয়ে যায়, সে চুপ করে থাকে, 
কি হলো উত্তর দিন। এবার অতীন কথা বলে। দেখুন আপনি উত্তর দিয়ে দিলে আমরা আপনি এবং আপনার বাবাকে যেতে দেবো আর না হলে...
রকি বিশ্বাস করো, আমি ওদিকে..
আমার লোক আপনাকে ওখানে যেতে দেখেছে, কাজেই মিথ্যা বলে লাভ নেই। বিদিশাকে কথা শেষ করতে দেয়না অতীন, সে গিয়ে নীচে পরে থাকা অনিমেষ বাবুর পেটে এক লাথি মারে।
বাবা... বিদিশা আবার আর্তনাদ করে ওঠে নিজেকে ছাড়ানোর জন্য ছটফট করতে থাকে, কিন্তু এবারও ব্যর্থ হয়। অতীন পরপর আরও কয়েকটা লাথি মারে, অনিমেষ বাবুর মুখ থেকে কিছুটা রক্ত বেরিয়ে আসে। বিদিশা কাঁদতে থাকে "রকি.. রকি প্লিজ ওনাকে আর মারতে বারন করো, প্লিজ"।
তাহলে বলো ওখানে কে থাকে, কার কাছে যাও?
বিদিশা চুপ করে আছে দেখে রকি আবার বলে: কি হলো উত্তর দেবে না?
আপনি এআরসির কাছে যান, তাই না? কথাটা অতীন বলে।
এআরসি? বিদিশা বেশ অবাক হয়েছে বোঝা যায়।
নামটা কোনোদিন শোনোনি? এআরসি.. এআরসি ইণ্ডাস্ট্রিজ এর মালিক যে মামার কন্ট্রাক্ট ছিনিয়ে নিয়েছে।
এসব কি বলছো তুমি?
এবার বলোতো ওখানে এআরসির সাথে আর কে কে থাকে? আর কি জানো তুমি ওর সম্বন্ধে?
বিদিশা চুপ করে আছে দেখে অতীন বলে: এভাবে উনি মুখ খুলবে না রকি।
তাহলে তুই মুখ খোলা, তোকে পুরো স্বাধীনতা দিলাম।
অতীন দুজন লোককে ইশারা করতেই ওরা মেঝেতে প্রায় মূর্ছিত অনিমেষ বাবুকে আবার মারতে শুরু করে, বিদিশা আর্তনাদ করতে থাকে "রকি... রকি বাবা আমার বাবা"।
উত্তরটা দিয়ে দাও।
আমি সত্যিই এআরসিকে চিনি না, বিদিশা কাতরাতে থাকে। রকি কিছু বলতে যাচ্ছিল এমন সময় এমন সময় ফোনটা বেজে ওঠে "হ্যাঁ, মামা বলো"
তুই কোথায়?
এইতো আমার ব‌উএর সাথে টাইম স্পেন্ড করছি সাথে শ্বশুর ও আছেন।
কিছু বললো?
এখনো না, তবে খুব তাড়াতাড়ি বলে দেবে।
ওখানে অতীন আছে না?
হ্যাঁ, আছে।
ও ওদের সামলে নেবে, তুই এখানে চলে আয় কাজ আছে।
কি কাজ মামা?
আয় তারপর বলছি, তাড়াতাড়ি চলে আয়।
ঠিক আছে মামা। ফোনটা রেখে রকি বলে: শোন অতীন মামা আমাকে ডাকছে, আমাকে যেতে হবে তুই এদের সামলে নে।
ওকে।
রকি...রকি..। রকিকে চলে যেতে দেখে বিদিশা আর্তচিৎকার করতে থাকে, কিন্তু রকি সম্পূর্ণ অগ্ৰাহ্য করে চলে যায়।
ওয়েল ওয়েল বিদিশা ম্যাডাম, এবার তাড়াতাড়ি মুখ খুলুন আমার ধৈর্য্য কিন্তু খুব কম।
ওখানে আপনারর যম থাকে অতীন সান্যাল। বিদিশা ঘৃণাভরে কথাটা বলে।
আমার যম? হো হো করে উচ্চস্বরে হেসে উঠলো অতীন তারপর বলে আমার যম এখনো জন্মায়নি।
অতিরিক্ত আত্মবিশ্বাস পতন ডেকে আনে, জানেন তো? তেজের সঙ্গে উত্তর দেয় বিদিশা।
আমার পতন ছাড়ুন, আপাতত নিজের বাবার কথা চিন্তা করুন, রকি আমাকে পুরো পার্মিশন দিয়ে গেছে আপনার মুখ খোলার জন্য আমি যা খুশি করতে পারি, অত‌এব তাড়াতাড়ি মুখ খুলুন, কেন নিজের আর নিজের বাবার বিপদ বাড়াচ্ছেন?
বললাম তো এআরসি বলে কাউকে আমি চিনি না।
আপনি চেনেন, আপনি ওই বস্তিতে যার কাছে যান তার নাম এআরসি, সে এআরসি ইণ্ডাস্ট্রিজ এর মালিক এই শহরে বীরেন ভট্টাচার্যের সাথে শত্রুতা শুরু করেছে।
বিদিশার বিস্মিতভাব প্রতি মুহুর্তে বাড়তে থাকে, অতীন বলে চলে: আমার চাকরি চলে যাওয়ার পিছনে ওই আছে, আমি জানি ওকে আমি ছাড়বো না।
ও এআরসি কি না জানিনা কিন্তু ও আপনাদের থেকে অনেক অনেক ভালো একজন মানুষ।
এই তো মুখ খুলছে, এবার বলুন তো ওর সম্বন্ধে আর কি কি জানেন?
কিছু না কারণ জানার দরকার হয় নি।
আবার মিথ্যা শুরু করলেন... দেখুন আমিও খারাপ ন‌ই যদি না কেউ আমাকে খারাপ করে আর আপনি আমাকে খারাপ হতে বাধ্য করছেন।
আমি সত্যিই ওর সম্বন্ধে কিছু জানিনা আর ওর নাম এআরসি নয়।
তাহলে কি?
রয়।
রয়?
হ্যাঁ রয়। এবার তো আমি যা জানি সব বলে দিয়েছি এবার আমাকে আর আমার বাবাকে যেতে দিন।
আসল কথাটা কি বলুন তো আপনাদের যেতে দেওয়ার হুকুম নেই, বীরেন ভট্টাচার্য স্পষ্ট বলেছেন আপনাদের দুজনকেই যেন শেষ করে দি‌ই। বিদিশা স্তম্ভিত হয়ে গেল, সে কিছু করার আগেই পরপর দুটো কানফাটানো আওয়াজ শুনে তাকিয়ে দেখে অতীনের যে দুজন লোক তার মূর্ছিত বাবার পাশে ছিল তাদের হাতে দুটো পিস্তল আর সেটা সটান তার বাবার দিকে তাক করা, বিদিশা "বাবা.." বলে ছুটে অনিমেষ বাবুর নিথর দেহটার কাছে গেল তারপর তার মাথার কাছে বসে তার মাথাটা নিজের কোলে তুলে নিয়ে কান্নায় ভেঙে পড়লো, পিস্তলধারী দুজন তখন বিদিশার মাথায় পিস্তল ছোঁয়ালো...

গাড়িতে উঠেই এআরসি নিকুঞ্জকে ফোন করে ব্লুটুথ হেডফোনটা কানে লাগিয়ে নেয়, এই নিকুঞ্জ বলে ছেলেটা তার দলের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ সদস্য, বয়স ২৫-২৬ হবে, ছিপছিপে দোহারা চেহারা খুব একটা চোখে পরার মতো নয় কিন্তু যেজন্য এআরসি ওকে নিজের দলে রেখেছে সেটা হলো ও একজন হ্যাকার, আর যে কারো ফোনের লোকেশন ট্র্যাক করতে পারে, গরীব অনাথ এই ছেলেটি চাকরির জন্য অনেক জায়গায় ঘুরেছে শেষে অন্ধকার জগতে জড়িয়ে পড়ে পুলিশের খপ্পড়েও পড়েছিল বেশ কয়েকবার, এআরসি ছেলেটার দক্ষতা দেখে পুলিশের কাছ থেকে ছাড়িয়ে এনে নিজের দলে ভিড়িয়েছে সেই থেকে ছেলেটি তাকে খুবই সম্মান করে,এবং তার সাথেই থেকেছে, খুব তাড়াতাড়ি এআরসি বুঝতে পারে এই ছেলেটি সত্যিই তার খুব কাজে আসবে তাই সে পার্মানেন্টলি তাকে নিজের কাছে রেখে দেয়, মাঝে মাঝেই নিজের সাথে নিয়ে যায়।
"হ্যালো নিকুঞ্জ?"
বলুন স্যার।
তোমাকে একজনের লোকেশন বার করতে হবে, আমি ডিটেইলস পাঠিয়ে দিয়েছি, সাথে আমাকেও কানেক্ট করে নাও আমাকে ডিরেকশন দিতে পারবে। একটু পরে নিকুঞ্জ বলে "স্যার এই নাম্বার তো বন্ধ আছে, আর বন্ধ নাম্বার ট্র্যাক করা যায় না"।
ঠিক আছে আমি আরো একটা নাম্বার পাঠাচ্ছি।
নিকুঞ্জের ইনস্ট্রাকশন মতো চলছিল এআরসি, নিকুঞ্জের কথা মতো হাইওয়ের রাস্তা ধরে চলছিল সে,
স্যার, নাম্বারটা মুভ করছে আপনার দিকে এগিয়ে আসছে।
মানে?
হ্যাঁ স্যার, আপনার কাছাকাছি চলে এসেছে। একটু পরেই এআরসি দেখে একটা গাড়ি উল্টোদিক থেকে তার দিকে এগিয়ে আসছে, গাড়িটা তার পাশ কাটিয়ে বেরিয়ে গেল... রকি তাকে খেয়াল করেনি, বা করলেও এড়িয়ে গেল। দুশ্চিন্তায় পড়ে যায় এআরসি, সে কি দেরী করে ফেললো আসতে?রকি কি অলরেডি বিদিশাকে...
স্যার... স্যার শুনছেন। ফোনে নিকুঞ্জের গলা ভেসে আসতে থাকে।
নিকুঞ্জ, যে এরিয়ায় এতক্ষণ লোকেশন দেখাচ্ছিল ওটা এখান থেকে কোনদিকে কতদূর?
বেশি দূর নয়, কিন্তু স্যার।
তুমি জায়গাটার ডিরেকশন দাও। নিকুঞ্জের কথামতো এআরসি হাইওয়ে ছেড়ে কাঁচা রাস্তায় গাড়ি ঘোরালো।
স্যার, আপনি সোজা চলতে থাকুন, ওখান থেকে কিছুটা দূরে লোকেশন ছিল।
ঠিক আছে।
পাঁচিল ঘেরা গোডাউনটা থেকে কিছুটা দূরেই গাড়ি দাঁড় করিয়ে নামলো এআরসি, খুব সন্তর্পণে পাঁচিলের কাছে যায়, পাঁচিলটা প্রায় তার কাঁধ পর্যন্ত উঁচু, গেট দিয়ে ঢুকতে পারবে না এটা আর তাকে বলতে হবে না, সে একটু ঝুঁকে পাঁচিল ধরে ধরে ঢোকার জায়গা খুঁজতে থাকে, একটু পরেই মেইন গেট থেকে কিছুটা সরে এসে গোডাউনের পিছন দিকে দেখে প্রায় পাঁচিলের গা ঘেষে একটা পড়ো গাছ, কোনোমতে পাঁচিলের উপরে উঠে গাছে চড়তে পারে তাহলে ঘন পাতার আড়ালে থেকে জায়গাটা ভালো করে দেখে নিতে পারবে।
যেমন ভাবা তেমন কাজ প্রথমে পাঁচিলের উপর থেকে অল্প উঁকি মেরে কেউ নেই দেখে মুহূর্তের মধ্যে দুহাতে পাঁচিলের উপরে ভর দিয়ে উঠে সেখান থেকে গাছে লাফিয়ে ঘন পাতার আড়ালে লুকোলো এআরসি সেখানে কিছুক্ষণ অপেক্ষা করে র‌ইলো যদিও সময় বয়ে যাচ্ছে বিদিশা কি অবস্থায় আছে এখনো জানে না সে, বেশীক্ষণ অপেক্ষা করতে হলো না তাকে গোডাউন আর পাঁচিলের মধ্যবর্তী জমিতে বেশ কয়েকজনকে টহল দিতে দেখলো তাদের প্রত্যেকের হাতে রাইফেল, পিছন দিকে বড়ো গাছের আধিক্য বেশি,  গাছে থেকেই কোমরের পিছনে গোঁজা পিস্তলটা বার করে এআরসি তারপর ম্যাগাজিনটা খুলে বুলেট চেক করে নেয় এবার পকেট থেকে সাইলেন্সার বার করে পিস্তলের নলে লাগিয়ে আস্তে আস্তে গাছ থেকে নামে পা টিপে টিপে অথচ দ্রুত গতিতে এগিয়ে গিয়ে অপর একটা গাছের আড়ালে লুকোয় দেখে একজন ওদিকেই আসছে টহল দিতে, লোকটা এসে কয়েকসেকেণ্ড দাঁড়িয়ে আশেপাশে নজর বোলায় তারপর আবার যাওয়ার জন্য পিছনে ফেরে সঙ্গে সঙ্গে গাছের আড়াল থেকে বেরিয়ে এসে পিছন থেকে লোকটার মুখ একহাতে চেপে ধরে অপর হাতে কপালের পাশে কানের উপরে পিস্তল ঠেকিয়ে ট্রিগার চাপে এআরসি আস্তে আস্তে লোকটার নিথর দেহটা মাটিতে শুইয়ে এগিয়ে যায়।
সঙ্গীর আসতে দেরী দেখে একজন ওদিকে আসে সামনে নিজের সঙ্গীর লাশ দেখে চেঁচাতে যাবে এমন সময় আচমকা একটা বুলেট তার কপালের একেবারে মাঝখান ভেদ করে বেরিয়ে যায়, মাটিতে পরার আগে তাকেও ধরে ফেলে এআরসি আস্তে আস্তে তাকেও মাটিতে শুইয়ে দেয়।
এক এক করে টহল দিতে থাকা সবকটাকে শেষ করে সে, সবাইকেই যে কাছে গিয়ে শেষ করে এমন নয় ,দূর থেকেও শ্যুট করে, এআরসি যাকে বলে ক্র্যাকশট্ অর্থাৎ ওর গুলি খুব একটা ফস্কায় না, শেষ জনকে শেষ করে সবে ভিতরে ঢুকতে যাবে এমন সময় সামনে যাকে দেখে তার জন্য একেবারেই প্রস্তুত ছিল না সে, তার সামনে এক দানব দাঁড়িয়ে আছে, একে টহল দিতে দেখেনি তাই কথা জানতে পারেনি ভাগ্য ভালো লোকটা এখনো চেঁচায়নি, আরেকটা ভালো কথা ওর হাতে কোনো অস্ত্র নেই এদিকে ম্যাগাজিনের গুলি শেষ, এ দানব তাকে নতুন ম্যাগাজিন লোড করার টাইম দেবে না তাই পিস্তলটা আবার কোমরের পিছনে গুঁজে খালি হাতেই মোকাবেলা করার জন্য তৈরি হয়।
পালোয়ান নামের যে দানব এই মুহূর্তে এআরসির সামনে দাঁড়িয়ে আছে সে পরপর বেশ কয়েকটা ঘুষি চালালো তার চোয়াল লক্ষ্য করে কিন্তু প্রতিটা ঘুষি‌ই খুবই ক্ষিপ্রতার সাথে এড়িয়ে গেল, ঘুষিগুলোর একটাও যদি তার চোয়ালে লাগতো তাহলে নির্ঘাৎ চোয়ালের হাড় ভেঙে যেত। পরপর ঘুষিগুলো না লাগায় পালোয়ান যেন আরো রেগে গেল সে এবার এলোপাতাড়ি ঘুষি চালাতে লাগলো, কিন্তু তার সমস্যা হচ্ছে তার চেহারা, তার গায়ে জোর অনেক বেশি কিন্তু গতি অনেক স্লথ অপরদিকে এআরসির শরীর এই দানবের তুলনায় যথেষ্ট ছোটো এবং তার রিফ্লেক্স অনেক দ্রুত, সে সবকটা ঘুষি‌ই এড়িয়ে গেল, এইভাবে বেশ কিছুক্ষণ চললো, এআরসির কয়েকটা পাঞ্চ পালোয়ানের পেটে বুকে লাগলেও তেমন এফেক্ট পরলো না, উল্টে পালোয়ানের একটা ঘুষি সে এড়াতে পারলো না যদিও সে দুহাত ঠিক মুখের সামনে গার্ড করে চোয়ালটা বাঁচালো কিন্তু ঘুষির জোরের জন্য পিছনে ছিটকে পরলো, পালোয়ানটা এবার এগিয়ে এসে একটা লাথি মারতে চাইলো কিন্তু এআরসি একপাশে সরে গিয়ে লোকটার উ
ঊরুতে প্রচণ্ড আঘাত করে লোকটা কয়েকপা পিছনে পরে যায় এবার আবার ঘুষি পাকিয়ে তেড়ে এল কিন্তু এবার এআরসি ঘুষি এড়িয়ে পিছনে গিয়ে পালোয়ানের ডান পাঁজরে একটা লাথি কষালো, অন্য কেউ হলে পাঁজরে হাত দিয়ে বসে পরতো কিন্তু পালোয়ানের তেমন কিছু হলো না, সে আবার ঘুষি মারতে উদ্যত হলো কিন্তু এআরসি তার থেকে অনেক দ্রুত গতির ফাইটার, অত্যন্ত ক্ষিপ্রতার সাথে এআরসি আবার ঘুষি এড়িয়ে পিছনে গিয়ে আবার ডান পাজরে পরপর কয়েকটা লাথি মারলো এবার পালোয়ানটা পাজরে হাত দিয়ে একটা হাঁটু ভাঁজ করে মাটিতে বসলো, লোকটা চেঁচাতে যাবে কিন্তু পারলো না, এমন সময় তার ব্রহ্মতালুতে একটা প্রচণ্ড আঘাত হলো এবং পর মুহূর্তেই গলায় প্রচণ্ড আঘাত পেয়ে মাটিতে লুটিয়ে পরলো, কপাল থেকে ঘাম ঝেড়ে ফেললো এআরসি পিস্তলটা বার করে তাতে নতুন ম্যাগাজিন লোড করছে এমন সময় গোডাউনের ভিতরে পরপর দুটো গুলির আওয়াজ এল, আর দেরি করলো না একটা বুলেট মাটিতে পরে থাকা পালোয়ানের মাথায় লক্ষ্য করে চালিয়ে দৌড়ে ভিতরে গেল।

মৃত বাবার মাথাটা নিজের কোলে নিয়ে কান্নায় ভেঙে পরেছিল বিদিশা কিন্তু একটু পরেই যেন শোকে পাথর হয়ে গেল, এবার তার মাথায় পিস্তল ঠেকানো হয়েছে সে চোখদুটো বন্ধ করে, অতীনের বিদ্রুপ মেশানো কণ্ঠ শুনতে পেলো সে: কি করবো বলুন মিসেস ভট্টাচার্য? বীরেন ভট্টাচার্য হুকুম দিয়েছেন অবজ্ঞা করতে পারবো না।
লোকদুটো ট্রিগার চাপতে যাবে এমন সময় অতীন লক্ষ্য করে হটাৎ কি একটা তাদের কপালের একেবারে মাঝখান ভেদ করে যায়, আর লোকদুটো কাটা গাছের মতো মাটিতে লুটিয়ে পড়ে, সঙ্গে সঙ্গে  সে নিজের পায়ে মোজার মধ্যে রাখা পিস্তলটা খুলে আনতে যাবে সঙ্গে সঙ্গে তার পায়ের খুব কাজে মাটিতে একটা বুলেট এসে লাগে সঙ্গে সঙ্গেসে সোজা হয়ে কয়েকপা পিছিয়ে যায়, গোডাউনের দরজার দিকে তাকিয়ে দেখে সেখানে এক অচেনা ছেলে দাঁড়িয়ে আছে তার‌ই দিকে পিস্তল উঁচিয়ে, এবার সে ধীরে ধীরে এগিয়ে আসে।
হটাৎ অট্টহাসিতে ফেটে পরে অতীন সান্যাল "এআরসি... এআরসি" বলে আবার হাসতে থাকে, একটু পরে হাসি থামিয়ে বলে "আমার বিশ্বাস হচ্ছে না যে স্বয়ং এআরসি এখানে এসেছে, এই আপনি খুব অবাক হচ্ছেন না যে আমি চিনলাম কিভাবে? এটা আমার অনুমান আর আমার অনুমান যে নির্ভুল সেটা আপনিও জানেন আর আমিও জানি"।
এআরসি একবার বিদিশার দিকে একবার মৃত অনিমেষ বাবুর দিকে তাকায় যদিও তার হাতের পিস্তল অতীনের দিকে স্থির, বিদিশাও একবার এআরসির দিকে তাকায়। আবার অতীনের গলা শোনা যায় "কি করবো বলুন বীরেন ভট্টাচার্যের হুকুম ছিল, তাই পালন করতে হয়েছে"।
এআরসি আবার অতীনের দিকে তাকায় রাগী গলায় বলে "কাজটা ঠিক করেননি"
এখন কি করবেন, আমাকে গুলি করবেন?
ইচ্ছা তো সেরকমই আছে।
না, এবার বিদিশা কথা বলে, ও আমার বাবাকে খুন করার আগে যণ্ত্রনা দিয়েছে মারধর করেছে, ওকেও ওইভাবে যণ্ত্রনা দিয়ে মারো রয়, ওইভাবে মারো।
পিস্তলটা আবার পিছনে গুঁজে নেয় এআরসি দেখে অতীন বলে: হাতাহাতি লড়াই.. গুড, অনেকদিন পর কাউকে পেলাম যে আমার সাথে হাতাহাতি করতে চাইছে, আমি জানিনা বাইরে পালোয়ান সহ আমার অতগুলো লোককে কিভাবে এড়িয়ে নিঃশব্দে তুই ভিতরে এলি তবে এখান থেকে তুই আর বেঁচে ফিরতে পারবি না।
এড়াবো কিভাবে? আপনার প্রতিটা লোকের সাথেই আমার মোলাকাত হয়েছে এমনকি ওই পালোয়ানের সাথে একটু কসরৎ ও করেছি যদিও সবকটাই এখন যমের বাড়ি, আর খুব শীঘ্রই আপনিও যাবেন।
তাই নাকি তাহলে আয় আগে তোর হাতপা ভাঙবো তারপর তোর চোখের সামনে ওই বিদিশাকে মারবো, ওকেই বাঁচাতে এসেছিলি না? তারপর বিদিশার দিকে তাকিয়ে বলে: বীরেন ভট্টাচার্য বলেছেন ওনার শত্রুদের শেষ করলেই উনি ওনার ভাইঝির সাথে আমার বিয়ে দেবেন, তাথৈ... আমার আর তর স‌ইছে না তাথৈ‌এর জন্য, ওকে..
কথাটা শেষ করে না কিন্তু ওটুকু শুনেই এআরসির মাথায় রাগ উঠে যায় সে দ্রুত পায়ে প্রতিদ্বন্দ্বীর দিকে এগিয়ে এসে ডানহাত দিয়ে এক ঘুষি মারতে যায়, কিন্তু অতীন বা হাত বাড়িয়ে ধরে ফেলে তারপর ডানহাতে তার পেটে কয়েকটা সজোরে ঘুষি মারে এবং একটা লাথি, এআরসি ছিটকে কয়েকহাত পিছিয়ে পড়ে যায়, অতীন শুধু পুলিশ অফিসার নয় একসময় সে ও রকি স্টেট লেভেলে বক্সিং চ্যাম্পিয়ন ছিল তার উপর পুলিশের ট্রেনিং কাজেই সে নিজেও একজন দক্ষ ফাইটার সেটা আর না বললেও চলে।
ঘুষি আর লাথি খেয়ে এআরসির দম বন্ধ হয়ে আসতে থাকে কিন্তু তাও নিজেকে সামলে নেয় আবার উঠে আক্রমণ করে কিন্তু এবারেও সে অতীনকে আঘাত করতে পারে না বরঞ্চ অতীন আবার তার আঘাতকে আটকে তাকে একটা ঘুষি মেরে ছিটকে ফেলে দেয়।
এবার বিদ্রুপের হাসি শুনতে পায় এআরসি সাথে কিছু কথা "ইসস মেয়েটাকে বাঁচাতে এলি আর ওর সামনেই মার খাচ্ছিস, জানিস শুধুমাত্র তোর জন্য মেয়েটার বাবা মারা গেল",  একথা শুনে আবার এআরসির রাগ সপ্তমে চড়ে সে উঠে আক্রমণ করতে গিয়েও করে না, থেমে যায় সে বুঝতে পারে সে ভুল করছে, তার প্রতিদ্বন্দ্বী প্রফেশনাল ফাইটার এবং যথেষ্ট এক্সপার্ট, এরকম লোকেদের সাথে লড়াইতে জিততে গেলে তাকে ফোকাস করতে হবে আর তার জন্য নিজের রাগটাকে নিয়ন্ত্রণ করতে হবে।
আবার আওয়াজ আসে "কি রে থেমে গেলি? ভয় পেয়ে গেলি নাকি?" তারপরেই আবার বিদ্রুপের হাসির শব্দ শোনে সে, কিন্তু এবারে সে ভুল করে না,সে হাত এগিয়ে দুটো আঙ্গুল দিয়ে অতীনকে ডাকে যেন চ্যালেঞ্জ জানায়, অতীন একটু অবাক হয় কিন্তু তারপরেই একটু মুচকি হেসে এআরসির দিকে তেড়ে আসে ঘুষি মারার জন্য কিন্তু এবারে এআরসি অতীনের ঘুষিটা ঠিক সময়ে একটু সরে এড়িয়ে যায়, কিন্তু অতীনের কবজি ধরে এবং পায়ে একটা ল্যাং মারে ফলে অতীন নিজের নিয়ণ্ত্রন হারিয়ে ফেলে এবং এআরসি তার কবজি টেনে ছুঁড়ে ফেলে দেয় অতীন কিছুটা দূরে গিয়ে পরে, চোখ থেকে চশমাটা খুলে পড়ে যায় তার।
কিন্তু তৎক্ষণাৎ উঠে ঘুরে দাঁড়ায় এবার এগিয়ে এসে দুহাতে এলোপাতাড়ি ঘুষি চালাতে থাকে কিন্তু এআরসি নিজের হাত দিয়ে নিজের মুখটা শিল্ড করে ঘুষি গুলো আটকাতে থাকে, কিন্তু এবার অতীন হটাৎ ঘুষি চালানোর টার্গেট পালটে তার পেটে চালায়, দুসেকেন্ডের মতো দেরী হয়েছে হাতটা নামাতে ফলে ঘুষিটা আবার সজোরে এআরসির বুকের একটু নীচে লাগে সে কয়েক পা পিছিয়ে যায়।
কিন্তু অতীন আবার এগিয়ে এসে আগের মতো এলোপাতাড়ি ঘুষি চালাতে থাকে এবং এআরসি আবার শিল্ড করতে থাকে কিন্তু এবার এআরসি হটাৎ অতীনেরর ঘুষি ওর মুখে লাগার আগে বা হাতে একটা মোক্ষম আপার কাট পাঞ্চ মারে অতীনের থুতনিতে, অতীন কয়েকপা পিছিয়ে টাল সামলাতে না পেরে পড়ে যায়।
কিন্তু আবার উঠে দ্রুত এগিয়ে এসে পা তুলে লাথি মারতে যায় কিন্তু এআরসি লাথিটা এড়িয়ে একহাতে তার পা ধরে অপর হাতের কনুই দিয়ে হাঁটুতে জোড়ে আঘাত করতে থাকে, দু-তিনটে আঘাত খাবার পরে অতীন অপর পাটা শূন্যে তুলে লাথি মারতে যায় কিন্তু এআরসি ধরে থাকা পা টা টেনে ছেড়ে দিয়ে সরে আসে, ফলে লাথিটা তার না লাগলেও অতীন মাটিতে বেকায়দায় পড়ে যায় এবং আঘাতপ্রাপ্ত হয়।
তাও উঠে খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে এগিয়ে আসে ঘুষি মারার জন্য কিন্তু পায়ে চোট পাওয়ার জন্য অতীনের গতি কিছুটা কমে গেছে, এআরসি সহজেই ঘুষিটা এড়িয়ে যায় এবং আবার আগের মতো কবজিটা ধরে ফেলে তবে এবার ছুঁড়ে না ফেলে হাতটাকে টেনে সোজা করে ধরে কনুইয়ের জয়েন্টে জোড়ে আঘাত করে "মট" করে একটা শব্দ হয় এবং অতীন আঃ করে আর্তনাদ করে ওঠে, হাত ভেঙে গেছে।
কিন্তু তাও হার স্বীকার না করে অপর হাতটা দিয়ে ঘুষি মারতে যায়, এবার এআরসি নিজের একটা পা দিয়ে অতীনের এগিয়ে থাকা পায়ের পাতাটাকে চেপে ধরে শরীরে ঠেলা মারে এতে অতীন টাল সামলাতে পারে না পড়ে যায় কিন্তু একটা পা এআরসি মাটির সাথে চেপে ধরায় পুরো শরীরটা বেখাপ্পা হয়ে পড়ে এবং আরেকটা "মট" করে শব্দ আর অতীনের আগের থেকে জোরে আর্তনাদের শব্দে বোঝা যায় একটা পা‌ও ভাঙলো।
এবার সে আর মাটি থেকে ওঠে না ঘষটে ঘষটে গোঁগোঁ করতে করতে পিছনে সরতে থাকে, এআরসি ওর দিকে আস্তে আস্তে এগোতে থাকে, কোমরের পিছন থেকে পিস্তলটা হাতে নেয় তারপর বিদিশার দিকে তাকিয়ে ওকে ডাকে, বিদিশা উঠে ওর পাশে এলে পিস্তলটা ওর হাতে ধরিয়ে দেয়, বিদিশা অতীনকে লক্ষ্য করে পিস্তল তাক করে, একসময় ক্রমাগত ট্রিগার চাপতেই থাকে পুরো ম্যাগাজিন খালি করেও তার হুঁশ হয় না সে ট্রিগার চাপতেই থাকে, যদিও সাইলেন্সার লাগানো থাকায় কোনো আওয়াজ হয় না।
Good
Like Reply


Messages In This Thread
RE: প্রতিশোধ: দ্যা রিভেঞ্জ - by Bohemian-M - 17-05-2024, 06:28 PM



Users browsing this thread: 19 Guest(s)