15-05-2024, 01:29 AM
(This post was last modified: 15-05-2024, 01:53 AM by Henry. Edited 1 time in total. Edited 1 time in total.)
পরশ লক্ষ্য করল মায়ের হাতে কোনো শাঁখা পোলা নেই। মা কি শিক্ষিকা হবার পর ধর্মীয় রীতি বর্জন করল?
রূপসা জিজ্ঞেস করল---ম্যাডাম, আপনাদের কলেজটি খুব সুন্দর। কত বছর হল?
রমা মৈত্র হেসে বলল----এই কলেজটি কোনো সরকারি অনুদানপ্রাপ্ত নয়। কাজেই তোমরা ভুল করবে যদি ভেবে থাকো এটি সরকারি কলেজ। আমার স্বামীর অবদান এই বিদ্যালয়টি গড়ে তুলতে।
সন্তোষ বাবু বললেন--আসলে ম্যাডাম এই গ্রামের পঞ্চায়েত প্রধান। এবং বলতে গেলে তার উদ্যোগেই এই কলেজ। গ্রামের ছেলে-মেয়েদের পড়তে হলে তিনটি গ্রাম পেরিয়ে যেতে হত, তাই ম্যাডাম এই কলেজটি গড়েছেন, কোনো সরকারী সাহায্য ছাড়াই। এই কলেজটি এ বছর উচ্চমাধ্যমিকের অনুমোদন পেয়েছে। বিনামূল্যে গ্রামের ছেলে-মেয়েরা পড়াশোনা করে। ম্যাডামের স্বামীর স্মৃতিতেই কলেজ।
চমকে উঠল পিকলু। স্বামীর স্মৃতিতে মানে? এতক্ষণ সে কলেজটির নাম দেখেনি। কলেজটির নাম; শম্ভু বেদে স্মৃতি শিক্ষা নিকেতন।
তার মানে কি শম্ভু আঙ্কেল মারা গেছেন! চমকে উঠল সে। এজন্যই কি মায়ের হাতে শাঁখা পোলা নেই।
স্মিত হাসলেন রমা মৈত্র। বললেন---আসার সময় নিশ্চয়ই কষ্ট হয়েছে তোমাদের। আজ তোমরা আমদের বাড়িতেই রেস্ট নেবে। কাল সুন্দরবনের প্রকৃতি উপভোগ করে ফিরে যেও।
সব কাজ সেরে ওদের খাবার ব্যাবস্থা হল রমা ম্যাডামের বাড়িতেই। পিকলু দেখল শম্ভু আঙ্কেলের সেই নদী তীরের দোচালা বাড়িটি নেই। দূরের সেই কালনাগিনী নদী, যেন অনেক কাছে চলে এসেছে। পিকলুর হৃদয়ে আচমকা একটা ব্যথা হচ্ছে, শম্ভু আঙ্কেল তার মাকে ছিনিয়ে নিয়েছে তার থেকে, এ কথা সত্যি। কিন্তু শম্ভু আঙ্কেলই তো তার জীবন বাঁচিয়ে ছিল।
এই বাড়িটা তিনতলা, প্রাসাদপম। সুন্দর সাজানো গোছানো। সোলার প্যানেল বসেছে এ বাড়িতে। বাড়ির ডাইংনিং রুমের প্ৰতিটি কোন দেখে পিকলু টের পাচ্ছে পুরোনো স্মৃতি। তার মায়ের হাতে গোছানো ঘরের মধ্যে যন্ত্রনায় দুঃখে যেন তার দমবন্ধ হয়ে আসছে। রাজকীয় পর্দা, বড় খাবার টেবিল। সবেতেই বনেদিয়ানা।
খাবার টেবিলে হঠাৎ করেই সকলে আঁতকে উঠল। লাফিয়ে উঠল মেয়েরা চেয়ারের উপর। আট বছরের চাঁদ হাতে একটা সাপ নিয়ে এসে ভয় দেখাচ্ছে।
পিকুল পীযুষ মৈত্রের ছেলে, সে সাপ চেনে। এটা একটা দাঁড়াশ সাপ। সবাইকে সাহস দিয়ে সে বলল---ভয়ের কিছু নেই, এটা নির্বিষ।
চাঁদ হেসে উঠল আনন্দে---কি মজা। ভয় পেয়েছ তোমরা!
খাবার পরিবেশন করতে আসা লতা আন্টি আর ষষ্ঠী আঙ্কেলকে চিনতে পারলো পিকলু। লতা আন্টি মোটা হয়ে গেছে অনেক। ষষ্ঠীপদ আঙ্কেলের চুলে পাক ধরেছে। অথচ ওরা কেউ পিকলুকে চিনতে পারেনি।
খাবার শেষে সকলের জন্য একটা বড় হল ঘরে নরম কার্পেটের বিছানা পেতে দেওয়া হয়েছে বিশ্রাম নেবার জন্য।
পরশের ভালো লাগছে না। সে বাড়ির আনাচে কানাচে চোখ রাখতেই দেখল একটা বড় ঘরের দেয়ালের এককোণে ছবিটা, তার আর বাবার। বিস্মিত হল পিকলু। এ ছবি এখনো কেন মা রেখেছে।
পিকলু মুগ্ধ হয়ে দেখছিল কাচের সাজানো বাক্সগুলি। এই বাক্সগুলিতে বোধ হয় আগে সাপ ছিল অনেক। শুধু একটা বাক্সে সদ্য ছাড়া খোলস দেখে দেখে মনে হচ্ছে এখানে ঐ দাঁড়াশটা থাকে।
শম্ভু আঙ্কেলের কথা মনে পড়ল পিকলুর। ঝাঁপিতে করে সাপ রাখতো সে। তার বাবার মত অমন কাচের বাক্সে নয়। কিন্তু কাচের বাক্সে এখানে কে সাপ রাখে। শম্ভু আঙ্কেলই তো নেই, তখন কে এসবের রক্ষণাবেক্ষণ করে? কাচের বাক্সগুলোই বা খালি কেন? সাপগুলো গেল কোথায়?
আচমকা পেছন থেকে ভয় পাইয়ে দিল চাঁদ। বলল---এবার দাদাও ভয় পেয়ে গেছে!
পিকলু দেখল চাঁদের হাতে ধরা সেই সাপটা। পরক্ষনেই ভুল ভাঙলো তার, এটা সেই দাঁড়াশটা নয়। সোনালি দীর্ঘ মস্ত বড় একটা গোখরো, যেন সেই পদ্ম নাগ। না, না এটা পদ্ম নাগ নয়। তাকে তো তার মা রমা মৈত্র খুন করে ফেলেছে। এ পদ্মের চেয়েও বিশাল। ঠিক যেন রাজগোখরো। যদিও এটা গোখরোই। কি বিশাল ফনা মেলে আছে। রঙটা প্রচন্ড উজ্জ্বল সোনালী বর্ণের। যেন এই সাপটার খুব যত্ন নেওয়া হয়।
এবার ভয় পেল পিকলু। এরকমই এক পদ্ম নাগের কামড়েই তার জীবন বিপন্ন হয়ে গেছিল একদিন। সে ফিরে এসে দেখল বন্ধুরা যে যার মত জায়গা করে শুয়ে-বসে আছে। কেউ বা ইয়ারফোন কানে দিয়ে, কেউ বা ল্যাপটপে মুখ করে মগ্ন।
রূপসা জিজ্ঞেস করল---ম্যাডাম, আপনাদের কলেজটি খুব সুন্দর। কত বছর হল?
রমা মৈত্র হেসে বলল----এই কলেজটি কোনো সরকারি অনুদানপ্রাপ্ত নয়। কাজেই তোমরা ভুল করবে যদি ভেবে থাকো এটি সরকারি কলেজ। আমার স্বামীর অবদান এই বিদ্যালয়টি গড়ে তুলতে।
সন্তোষ বাবু বললেন--আসলে ম্যাডাম এই গ্রামের পঞ্চায়েত প্রধান। এবং বলতে গেলে তার উদ্যোগেই এই কলেজ। গ্রামের ছেলে-মেয়েদের পড়তে হলে তিনটি গ্রাম পেরিয়ে যেতে হত, তাই ম্যাডাম এই কলেজটি গড়েছেন, কোনো সরকারী সাহায্য ছাড়াই। এই কলেজটি এ বছর উচ্চমাধ্যমিকের অনুমোদন পেয়েছে। বিনামূল্যে গ্রামের ছেলে-মেয়েরা পড়াশোনা করে। ম্যাডামের স্বামীর স্মৃতিতেই কলেজ।
চমকে উঠল পিকলু। স্বামীর স্মৃতিতে মানে? এতক্ষণ সে কলেজটির নাম দেখেনি। কলেজটির নাম; শম্ভু বেদে স্মৃতি শিক্ষা নিকেতন।
তার মানে কি শম্ভু আঙ্কেল মারা গেছেন! চমকে উঠল সে। এজন্যই কি মায়ের হাতে শাঁখা পোলা নেই।
স্মিত হাসলেন রমা মৈত্র। বললেন---আসার সময় নিশ্চয়ই কষ্ট হয়েছে তোমাদের। আজ তোমরা আমদের বাড়িতেই রেস্ট নেবে। কাল সুন্দরবনের প্রকৃতি উপভোগ করে ফিরে যেও।
সব কাজ সেরে ওদের খাবার ব্যাবস্থা হল রমা ম্যাডামের বাড়িতেই। পিকলু দেখল শম্ভু আঙ্কেলের সেই নদী তীরের দোচালা বাড়িটি নেই। দূরের সেই কালনাগিনী নদী, যেন অনেক কাছে চলে এসেছে। পিকলুর হৃদয়ে আচমকা একটা ব্যথা হচ্ছে, শম্ভু আঙ্কেল তার মাকে ছিনিয়ে নিয়েছে তার থেকে, এ কথা সত্যি। কিন্তু শম্ভু আঙ্কেলই তো তার জীবন বাঁচিয়ে ছিল।
এই বাড়িটা তিনতলা, প্রাসাদপম। সুন্দর সাজানো গোছানো। সোলার প্যানেল বসেছে এ বাড়িতে। বাড়ির ডাইংনিং রুমের প্ৰতিটি কোন দেখে পিকলু টের পাচ্ছে পুরোনো স্মৃতি। তার মায়ের হাতে গোছানো ঘরের মধ্যে যন্ত্রনায় দুঃখে যেন তার দমবন্ধ হয়ে আসছে। রাজকীয় পর্দা, বড় খাবার টেবিল। সবেতেই বনেদিয়ানা।
খাবার টেবিলে হঠাৎ করেই সকলে আঁতকে উঠল। লাফিয়ে উঠল মেয়েরা চেয়ারের উপর। আট বছরের চাঁদ হাতে একটা সাপ নিয়ে এসে ভয় দেখাচ্ছে।
পিকুল পীযুষ মৈত্রের ছেলে, সে সাপ চেনে। এটা একটা দাঁড়াশ সাপ। সবাইকে সাহস দিয়ে সে বলল---ভয়ের কিছু নেই, এটা নির্বিষ।
চাঁদ হেসে উঠল আনন্দে---কি মজা। ভয় পেয়েছ তোমরা!
খাবার পরিবেশন করতে আসা লতা আন্টি আর ষষ্ঠী আঙ্কেলকে চিনতে পারলো পিকলু। লতা আন্টি মোটা হয়ে গেছে অনেক। ষষ্ঠীপদ আঙ্কেলের চুলে পাক ধরেছে। অথচ ওরা কেউ পিকলুকে চিনতে পারেনি।
খাবার শেষে সকলের জন্য একটা বড় হল ঘরে নরম কার্পেটের বিছানা পেতে দেওয়া হয়েছে বিশ্রাম নেবার জন্য।
পরশের ভালো লাগছে না। সে বাড়ির আনাচে কানাচে চোখ রাখতেই দেখল একটা বড় ঘরের দেয়ালের এককোণে ছবিটা, তার আর বাবার। বিস্মিত হল পিকলু। এ ছবি এখনো কেন মা রেখেছে।
পিকলু মুগ্ধ হয়ে দেখছিল কাচের সাজানো বাক্সগুলি। এই বাক্সগুলিতে বোধ হয় আগে সাপ ছিল অনেক। শুধু একটা বাক্সে সদ্য ছাড়া খোলস দেখে দেখে মনে হচ্ছে এখানে ঐ দাঁড়াশটা থাকে।
শম্ভু আঙ্কেলের কথা মনে পড়ল পিকলুর। ঝাঁপিতে করে সাপ রাখতো সে। তার বাবার মত অমন কাচের বাক্সে নয়। কিন্তু কাচের বাক্সে এখানে কে সাপ রাখে। শম্ভু আঙ্কেলই তো নেই, তখন কে এসবের রক্ষণাবেক্ষণ করে? কাচের বাক্সগুলোই বা খালি কেন? সাপগুলো গেল কোথায়?
আচমকা পেছন থেকে ভয় পাইয়ে দিল চাঁদ। বলল---এবার দাদাও ভয় পেয়ে গেছে!
পিকলু দেখল চাঁদের হাতে ধরা সেই সাপটা। পরক্ষনেই ভুল ভাঙলো তার, এটা সেই দাঁড়াশটা নয়। সোনালি দীর্ঘ মস্ত বড় একটা গোখরো, যেন সেই পদ্ম নাগ। না, না এটা পদ্ম নাগ নয়। তাকে তো তার মা রমা মৈত্র খুন করে ফেলেছে। এ পদ্মের চেয়েও বিশাল। ঠিক যেন রাজগোখরো। যদিও এটা গোখরোই। কি বিশাল ফনা মেলে আছে। রঙটা প্রচন্ড উজ্জ্বল সোনালী বর্ণের। যেন এই সাপটার খুব যত্ন নেওয়া হয়।
এবার ভয় পেল পিকলু। এরকমই এক পদ্ম নাগের কামড়েই তার জীবন বিপন্ন হয়ে গেছিল একদিন। সে ফিরে এসে দেখল বন্ধুরা যে যার মত জায়গা করে শুয়ে-বসে আছে। কেউ বা ইয়ারফোন কানে দিয়ে, কেউ বা ল্যাপটপে মুখ করে মগ্ন।