15-05-2024, 01:28 AM
(This post was last modified: 15-05-2024, 01:49 AM by Henry. Edited 2 times in total. Edited 2 times in total.)
বিক্রম ঠাট্টা করে বলল---তা চাঁদ বদন তোমার বাড়ি কোথায়?
---চাঁদ বদন নয়। চাঁদ বেদে আমার নাম। আমার বাড়ি এখানেই, সরবেড়িয়ায়।
পরশের এতক্ষনে নজরে পড়ল ছেলেটির দিকে। বিশেষ করে 'বেদে' পদবী তাকে কৌতূহলী করে তুলল। বলল---তোর বাবার নাম কি?
ঠিক তক্ষুনি এসে হাজির হলেন সন্তোষ বাবু। বললেন ও হচ্ছে এই কলেজের হেড দিদিমনির ছেলে। খুব ব্রিলিয়ান্ট ছেলে।
পরশ চুপ করে গেল। ত্রাণ সামগ্রী গ্রামের মানুষের হাতে তুলে দেওয়ার মুহূর্তেই পরশের নজর পড়ল কালো কাচ, সাদা গাড়ি থেকে একজন শ্বেতশুভ্র ফর্সা মহিলা নামলেন। চোখে চশমা, হাতে কালো ফিতের ঘড়ি। পরনে ঘিয়ে সিল্কের শাড়ি আর সাদা সিল্কের ব্লাউজ। বয়স সাতচল্লিশ-আটচল্লিশ ছুঁই ছুঁই, কিন্তু রূপ লাবণ্য যেন এখনো আগের মত।
খুব কাছে আসতেই পরশের পায়ের তলার মাটি যেন কাঁপতে শুরু করেছে। হৃদয়ে তুমুল ঝড় তার। কাকে দেখছে। মহিলার চোখে কালো সানগ্লাস। গলায় দামী মুক্তোর হার। পরশ চিনতে পারছে এই হেড দিদিমণি আর কেউ নয়, তারই জন্মদাত্রী মা রমা মৈত্র। সে একদৃষ্টে চেয়ে রইল মায়ের দিকে।
রমা অবশ্য পরশ অর্থাৎ পিকলুকে চিনতে পারে না। পরশের তীব্র রাগ হচ্ছে। কেন সে এখানে এলো। সে এক মুহূর্ত এখানে থাকতে চায় না। তবু সে এখন বাধ্য। এই মুহূর্ত ছেড়ে চলে যেতে চাইলে একটা আকস্মিক নাটক সৃষ্টি হবে। পরশ ওরফে পিকলু তা চায় না।
তার চেয়ে অদূরে যাওয়াই ভালো। দূরে একটা গাছের তলায় দাঁড়িয়ে সে সিগারেট ধরিয়েছে। বাবার এই বদ অভ্যাস তাকেও গ্রাস করেছে। বাইশ বছরের যুবক সে। হৃদয়ে এতবছর যে গ্লানি নিয়ে গোপনে গোপনে সে শক্ত পুরুষে পরিণত হয়েছে, সেই গ্লানি যেন আজ এতদিন পরে বিস্ফোরিত হতে চায়। সে চায়নি আর একবারের জন্যও তার গর্ভধারিণীর মুখ দর্শন করতে। এক কাকতলীয় সন্ধিক্ষণ তাকে ব্যথিত করছে।
রূপসা ছিপছিপে চেহারার মেয়ে। পরনে তার জিন্স কুর্তি। ছোট বব কাট চুল। তার গায়ের রঙ পরশেরই মত ফর্সা।
রূপসা যে পরশকে ভালোবাসে এটা গোটা ডিপার্টমেন্ট জানলেও পরশ জানে না। জানে না বললে ভুল হবে। পরশ আসলে পাত্তা দেয় না। ভালোবাসা, তার কাছে অযৌক্তিক শব্দ। তবু যে কোনো কঠিন মুহূর্তে রূপসাই তার ভরসা। রূপসা এসে দাঁড়ালো এই মুহূর্তে। পরশকে বলল---কি ব্যাপার বলতো, আমার মনে হচ্ছে তুই কোনো একটা বিষয় নিয়ে খুব টেনশনে আছিস? কাকু কি রাজি হননি, তোর সাথে জেনিভা যেতে?
পরশ উত্তর দিল না। ঠিক তক্ষুনি সন্তোষ বাবু এসে বললেন---চলো তোমাদের হেড মিস্ট্রেসের সাথে পরিচয় করিয়ে দিই।
সবাই গেলে রমা মৈত্রের নিজস্ব অফিস ঘরে। কিন্তু পরশ এলো না। অফিস রুমটা বড্ড ছিমছাম। হেড মিস্ট্রেস চোখের কালো চশমা খুলে পরিচয় দিলেন; তিনি রমা মৈত্র।
একে একে সকলের সাথে পরিচয় করলেন তিনি। রূপসা লক্ষ্য করল ভদ্রমহিলা যেমন রূপসী তেমন লাবণ্যময়ী। তেমন দুধে আলতা গায়ের রঙ। সবচেয়ে বড় কথা রমা মৈত্রের ব্যক্তিত্ব সকলের নজর কাড়লো। অল্প কথার মানুষ। কিন্তু বড্ড মহীয়সী।
রমা বলল---ঐ যে গাছের তলায় ছেলেটা দেখছি, ও এলো না তো?
চৈ বলে উঠল---পরশ? ও এরকমই। খেয়াল খুশি মত চলে।
পরশ? নামটা যেন রমার বুকে আলোড়ন ফেলল তৎক্ষনাৎ। পৃথিবীতে অনেক পরশই আছে হয়ত। তার মধ্যেই তার ছেলে পরশও লুকিয়ে আছে। লুকিয়েই থাক, কোনোদিন হয়ত সে মুহূর্ত আসবে না, সে দেখতে পাবে আপন গর্ভের পরশে জন্ম দেওয়া ছেলেটিকে। রমার মনে পড়ছে পীযুষের সাথে তার নামের সামঞ্জস্য রেখেই সে নিজের ছেলের নাম রেখেছিল পরশ।
ত্রাণ বিতরণ চলছে দীর্ঘক্ষণ। পরশের পাশে এসে দাড়ালো চাঁদ। বলল----দাদা, মা ডাকছে আপনাকে।
কে মা? তাকালো পরশ ওরফে পিকলু দূর প্রান্তে। দেখল যেখানে ত্রাণ সামগ্রী বিতরণ হচ্ছে সেখানেই একটা চেয়ারে বসে আছেন পায়ের উপর পা তুলে নরম ফর্সা মহীয়সী রমণী রমা মৈত্র।
পরশের ইচ্ছে নেই। সেই মায়ের সামনে গিয়ে দাঁড়ানোর। সে যেন পরিত্যাজ্য কর্ণ। তার কাছে এখন রমা দেবী চাঁদের মা মাত্র।
পরশ আসতেই হাসি মুখে রমা বলল---সকলের সাথে পরিচয় হল, তোমার সাথে হল না। তাই ভাবলাম পরিচিত হই। তোমরা ছাত্র-ছাত্রীরা যে সচেতনতা থেকে সুন্দরবনের প্রত্যন্ত গ্রামের মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছ। তার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ।
পরশ নিরুত্তর থাকার চেয়ে সামান্য সৌজন্য দেখানোই শ্রেয় মনে করল। বলল---ধন্যবাদ আপনাকেও।
---চাঁদ বদন নয়। চাঁদ বেদে আমার নাম। আমার বাড়ি এখানেই, সরবেড়িয়ায়।
পরশের এতক্ষনে নজরে পড়ল ছেলেটির দিকে। বিশেষ করে 'বেদে' পদবী তাকে কৌতূহলী করে তুলল। বলল---তোর বাবার নাম কি?
ঠিক তক্ষুনি এসে হাজির হলেন সন্তোষ বাবু। বললেন ও হচ্ছে এই কলেজের হেড দিদিমনির ছেলে। খুব ব্রিলিয়ান্ট ছেলে।
পরশ চুপ করে গেল। ত্রাণ সামগ্রী গ্রামের মানুষের হাতে তুলে দেওয়ার মুহূর্তেই পরশের নজর পড়ল কালো কাচ, সাদা গাড়ি থেকে একজন শ্বেতশুভ্র ফর্সা মহিলা নামলেন। চোখে চশমা, হাতে কালো ফিতের ঘড়ি। পরনে ঘিয়ে সিল্কের শাড়ি আর সাদা সিল্কের ব্লাউজ। বয়স সাতচল্লিশ-আটচল্লিশ ছুঁই ছুঁই, কিন্তু রূপ লাবণ্য যেন এখনো আগের মত।
খুব কাছে আসতেই পরশের পায়ের তলার মাটি যেন কাঁপতে শুরু করেছে। হৃদয়ে তুমুল ঝড় তার। কাকে দেখছে। মহিলার চোখে কালো সানগ্লাস। গলায় দামী মুক্তোর হার। পরশ চিনতে পারছে এই হেড দিদিমণি আর কেউ নয়, তারই জন্মদাত্রী মা রমা মৈত্র। সে একদৃষ্টে চেয়ে রইল মায়ের দিকে।
রমা অবশ্য পরশ অর্থাৎ পিকলুকে চিনতে পারে না। পরশের তীব্র রাগ হচ্ছে। কেন সে এখানে এলো। সে এক মুহূর্ত এখানে থাকতে চায় না। তবু সে এখন বাধ্য। এই মুহূর্ত ছেড়ে চলে যেতে চাইলে একটা আকস্মিক নাটক সৃষ্টি হবে। পরশ ওরফে পিকলু তা চায় না।
তার চেয়ে অদূরে যাওয়াই ভালো। দূরে একটা গাছের তলায় দাঁড়িয়ে সে সিগারেট ধরিয়েছে। বাবার এই বদ অভ্যাস তাকেও গ্রাস করেছে। বাইশ বছরের যুবক সে। হৃদয়ে এতবছর যে গ্লানি নিয়ে গোপনে গোপনে সে শক্ত পুরুষে পরিণত হয়েছে, সেই গ্লানি যেন আজ এতদিন পরে বিস্ফোরিত হতে চায়। সে চায়নি আর একবারের জন্যও তার গর্ভধারিণীর মুখ দর্শন করতে। এক কাকতলীয় সন্ধিক্ষণ তাকে ব্যথিত করছে।
রূপসা ছিপছিপে চেহারার মেয়ে। পরনে তার জিন্স কুর্তি। ছোট বব কাট চুল। তার গায়ের রঙ পরশেরই মত ফর্সা।
রূপসা যে পরশকে ভালোবাসে এটা গোটা ডিপার্টমেন্ট জানলেও পরশ জানে না। জানে না বললে ভুল হবে। পরশ আসলে পাত্তা দেয় না। ভালোবাসা, তার কাছে অযৌক্তিক শব্দ। তবু যে কোনো কঠিন মুহূর্তে রূপসাই তার ভরসা। রূপসা এসে দাঁড়ালো এই মুহূর্তে। পরশকে বলল---কি ব্যাপার বলতো, আমার মনে হচ্ছে তুই কোনো একটা বিষয় নিয়ে খুব টেনশনে আছিস? কাকু কি রাজি হননি, তোর সাথে জেনিভা যেতে?
পরশ উত্তর দিল না। ঠিক তক্ষুনি সন্তোষ বাবু এসে বললেন---চলো তোমাদের হেড মিস্ট্রেসের সাথে পরিচয় করিয়ে দিই।
সবাই গেলে রমা মৈত্রের নিজস্ব অফিস ঘরে। কিন্তু পরশ এলো না। অফিস রুমটা বড্ড ছিমছাম। হেড মিস্ট্রেস চোখের কালো চশমা খুলে পরিচয় দিলেন; তিনি রমা মৈত্র।
একে একে সকলের সাথে পরিচয় করলেন তিনি। রূপসা লক্ষ্য করল ভদ্রমহিলা যেমন রূপসী তেমন লাবণ্যময়ী। তেমন দুধে আলতা গায়ের রঙ। সবচেয়ে বড় কথা রমা মৈত্রের ব্যক্তিত্ব সকলের নজর কাড়লো। অল্প কথার মানুষ। কিন্তু বড্ড মহীয়সী।
রমা বলল---ঐ যে গাছের তলায় ছেলেটা দেখছি, ও এলো না তো?
চৈ বলে উঠল---পরশ? ও এরকমই। খেয়াল খুশি মত চলে।
পরশ? নামটা যেন রমার বুকে আলোড়ন ফেলল তৎক্ষনাৎ। পৃথিবীতে অনেক পরশই আছে হয়ত। তার মধ্যেই তার ছেলে পরশও লুকিয়ে আছে। লুকিয়েই থাক, কোনোদিন হয়ত সে মুহূর্ত আসবে না, সে দেখতে পাবে আপন গর্ভের পরশে জন্ম দেওয়া ছেলেটিকে। রমার মনে পড়ছে পীযুষের সাথে তার নামের সামঞ্জস্য রেখেই সে নিজের ছেলের নাম রেখেছিল পরশ।
ত্রাণ বিতরণ চলছে দীর্ঘক্ষণ। পরশের পাশে এসে দাড়ালো চাঁদ। বলল----দাদা, মা ডাকছে আপনাকে।
কে মা? তাকালো পরশ ওরফে পিকলু দূর প্রান্তে। দেখল যেখানে ত্রাণ সামগ্রী বিতরণ হচ্ছে সেখানেই একটা চেয়ারে বসে আছেন পায়ের উপর পা তুলে নরম ফর্সা মহীয়সী রমণী রমা মৈত্র।
পরশের ইচ্ছে নেই। সেই মায়ের সামনে গিয়ে দাঁড়ানোর। সে যেন পরিত্যাজ্য কর্ণ। তার কাছে এখন রমা দেবী চাঁদের মা মাত্র।
পরশ আসতেই হাসি মুখে রমা বলল---সকলের সাথে পরিচয় হল, তোমার সাথে হল না। তাই ভাবলাম পরিচিত হই। তোমরা ছাত্র-ছাত্রীরা যে সচেতনতা থেকে সুন্দরবনের প্রত্যন্ত গ্রামের মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছ। তার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ।
পরশ নিরুত্তর থাকার চেয়ে সামান্য সৌজন্য দেখানোই শ্রেয় মনে করল। বলল---ধন্যবাদ আপনাকেও।