19-06-2024, 08:28 AM
পর্ব ২
কোনোরকমে স্নান সেরে বেরিয়ে আসে রেখা। সম্পূর্ণ উলংগ হয়েই। তারপর বাইরে রাখা প্যাণ্টি পড়ে নাইটি পরে নিলো একটা। যুৎসই না হলেও সেখানেই থাকা একটা ওড়না দিয়ে বুকটা ঢেকে দিল নিজের। ইতিমধ্যে বাইরের আগন্তুক চার পাঁচ বার হাক দিয়েছে। যদিও রেখা সাড়া দেয় নি। রেখা দরজা খুলে দেখে একটা মাঝ বয়সী ছেলে। বয়স বড় জোর ত্রিশ। দেখতে শুনতে ভালই। ভদ্র পোশাক, স্বভাব যেন একটু দ্রুতগামী। দরজা খুলতেই আগন্তুক বললো, আপ রেখা বুয়া হো নাহ্?
রেখার হিন্দির সাথে বড় নিবিড় শত্রুতা। কেউ হিন্দি বললে তাকে অসহ্য লাগে রেখার। কিন্তু নাম তো ঠিক বললো এই ছেলে। রেখা পরিষ্কার বাংলায় বললো, আমার নাম রেখা। কিন্তু তোমাকে চিনলাম না । আগন্তুক বললো, মে পঙ্কজ। মেরে পাপা অবিনাশ মুখার্জি। নারায়নপুরওয়ালে। রেখা অবিনাশ বা পঙ্কজ কাউকেই চিনতে পারল না। যদিও নারায়নপুর চেনে। রেখার মামার বাড়ি। রেখার মামার বাড়ির কেউ ভেবে রেখা একটু মনে করার চেষ্টা করে। তারপর আগন্তুক বলে, ওয়াহ মেরে দাদী কো সব জানতে হ্যা। গোপিকা দাদী। রেখার আজ বুঝতে বাকি থাকে না। এ হলো গোপীকা মাসির নাতি। সন্তু দাদার ছেলে। পরিচয় পাওয়া মাত্র রেখা ব্যস্ত হয়ে ওঠে ।
সন্তু দাদা কাজের সূত্রে বিদেশ চলে যায়। যোগাযোগ প্রায় নেই।বছর পনের আগে একবার এসেছিল সন্তু দাদা। ওই এক রাতের জন্য। এখন আর যোগাযোগ নেই। কখনও কারো মুখে শুনেছে এই টুকুই যা। পঙ্কজ বলে, একচুয়ালী মেরা বস কে সাথ টুর পে য়াহা আয়া হু মৈন। তো পাপা নে আপকা অ্যাড্রেস দিয়া আউর কাহা আপসে জরুর মিলনে কো। পাপা দো সাল সে বেড রিডেন হ্যা। এক স্ট্রোক হুয়া থা। প্রেসার হামেশা হাই।
এসবের মধ্যেই পঙ্কজের জন্য একটু খাবার নিয়ে আসে রেখা। ইতিমধ্যে রেখার কথাও পঙ্কজ জেনেছে। শ্যামলের মারা যাওয়া, সূর্যর পড়াশুনা। সবই বলেছে। সন্তু দাদার সাথে ফোন হয়েছে। তারপর পঙ্কজ বললো, বুয়া আপ কেহ রেহি হো পেইসো কি দিককাত হ্যাঁ। তো আপ এক বিসনেস কিউন নেহি স্টার্ট কর রেহী হো?
রেখা বলে, কি ব্যবসা করবো। কোনো দিন ভাবী নি। আর টাকাও নেই। টাকার দিক্কত আছে।
পঙ্কজ এই সেই কথার পর বলে, আপ রুকো, মেইন বস সে বাত করতা হুইন। আগর কুছ হো পায়ে। কাল তো হাম লট জায়েঙ্গে। তো দেখতে হেইন।
রেখার ফোন নম্বর নিয়ে পঙ্কজ চলে যায়।
বলেছিলাম নাহ্ যে ভগবান অন্য কিছু ভেবে রেখেছিল। হলো ও তাই। পঙ্কজ কেই বস অর্থ্যাৎ বীরেন বলল, আমাদের বিসনেস টা কলকাতাতে এক্সটেন্ড করবো ভাবছি। এখানে ভালো মার্কেট আছে। পঙ্কজ ও জানাই তার এক আত্মীয়া বিধবা গৃহবধূ। ব্যবসা করার মূলধন চাই। যদি সাহায্য করে। বীরেন সেই অফার লুফে নিয়ে আজই একটা মিটিং করে নিতে চাইলো। সেই মতো পঙ্কজ ফোন করে রেখাকে চলে আসতে বললো।
দুজন একসাথে থাকার অনেক স্বপ্ন দেখেছিল একদিন। সেই স্বপ্ন পূরণ হয় নি। কিন্তু আজ যে এত বছর পর আবার দুজনের দেখা হবে সেটা এক ভগবান ছাড়া আর কেউ জানলো না। দুপুরে একটু ডাল ভাত খেয়ে প্রয়োজনীয় কাগজ পত্র নিয়ে বেরিয়ে পড়ল রেখা। সাদা চুড়িদার, কালো কামিজ ।হাতে একটা ঘড়ি, অন্য হাতে ব্যাগ। যথা সময়ে যথা স্থানে পৌঁছে পঙ্কজ কে ফোন করল রেখা। পঙ্কজ রেখাকে একটা জায়গায় বসতে বলে বীরেন কে ডাকতে অন্য রুমে যাই। রেখা কিছুটা ভীত ,কিছুটা নার্ভাস। বীরেন এসে রেখার সামনে দাঁড়ায়। অবাক হয়ে চেয়ে থাকে দুজন দুজনের দিকে। পঁচিশ বছরের পুরোনো পরিচয়। তবু যেন বিশ্বাস করে না কেউই। বীরেন ভাবে এটাই কি সেই তার জীবন ওলটপালট করে দেওয়া রেখা? অন্য কেউ নয় তো? রেখা ভাবে হে ঠাকুর কেন দাড় করালে এই মানুষটার সামনে? যদি প্রশ্ন করে কেন সব তছনছ করে দিয়েছ? কি উত্তর দেবে সে?
পঙ্কজের সামনে বীরেন ঘোষ নিজেকে সামলে নিয়ে বলে, বসুন ম্যাডাম। দাড়িয়ে আছেন কেন? রেখা নির্বাক বসে পরে। ওর পা যেন অসাড় হয়ে গেছে। গোটা শরীর কাপছে। বীরেন পঙ্কজের দিকে তাকিয়ে বলে, পঙ্কজ প্লিজ কুছ স্ন্যাকস বুলা দো ম্যাডাম কে লিয়ে। আউর তুম একবার টিকিট কনফার্ম হুয়া ইয়া নেহি দেখলো। পঙ্কজ কিছু বলতে গেলে বললো, মেইন বাত করলেতা হুন, তুম দেখলো। পঙ্কজ জি স্যার বলে বেরিয়ে যায়। বীরেন মিনিট খানেক তাকিয়ে থাকে রেখার দিকে। তারপর একবার চোখ বন্ধ করে ঢোক গিলে বলে , ভালো আছো রেখা? রেখা ফুপিয়ে কাঁদতে শুরু করে। এযে কি ভীষণ ব্যথা। বীরেন আবার বলে, কত গুলো বছর পর এই শহরে ফিরলাম। প্রতি টা মুহূর্তে এটাই চাইছিলাম যদি একবার তোমাকে দেখতে পাই। যদি একবার আমার রেখা সোনাকে... ।বীরেন চুপ করে যায়। খোলা জানালার সামনে গিয়ে দাঁড়ায় বীরেন। চোখের জলটা আড়াল করে নেই। সকালের রোদে রেখা শুরু করেছিল আজকের দিনটা। সন্ধ্যার প্রায় ডুবন্ত রোদে দিনটা শেষ করছে বীরেন। রেখা নিজেকে সামলে একটু কথা বলার জায়গায় যায়। কি কথা বলে শুরু করবে বুঝতে পারে না রেখা। তাও বলে, আমি সব দিক দিয়েই ব্যর্থ বীরু। আজ হয়তো জীবনটাই অন্য রকম হতো যদি ... । রেখাও কথাটা শেষ করে না। তারপর চেয়ার থেকে উঠে বীরেনের পায়ের উপর পড়ে কাঁদতে কাঁদতে বলে, আমার ছেলেটা পড়াশুনায় খুব ভালো। Engineering কলেজে পড়ছে। কিন্তু হোস্টেলে থেকে পড়ানোর ক্ষমতা আর নেই। ওর বাবা মরে গেল। সব টাকা পয়সা জমি সব শেষ। ঘরটা যা আছে। সেটাও হয়তো বিক্রি করতে হবে। তাই যদি কিছু সাহায্য করতে।
মিনিট খানেক সব নিস্তব্ধ। তারপর করিডোর ধরে একটা পায়ের শব্দ শুনতে পাই। দ্রুত রেখাকে টেনে তুলে চেয়ারে বসিয়ে দিয়ে সামনের চেয়ারে নিজে বসে। কিছু আলোচনা হচ্ছে ভান করতেই ঘরে ঢোকে পঙ্কজ আর একটা ওয়েটার। কফি আর স্ন্যাকস দিয়ে ওয়েটার চলে যায়। পঙ্কজ টিকিটের কথা বল। কাল ভোর হওয়ার আগেই কলকাতাকে বিদায় করতে হবে। তারপর বীরেন নিজের থেকে বললো, ম্যাডাম কেহ রেহ হ্যাঁ কি শি ক্যান ডো। তো হাম একবার লোকেশন দেখ লেনা চাহ্তে হ্যাঁ।
পঙ্কজকে অন্য কাজে ব্যস্ত করে রেখার সাথে বীরেন বেরিয়ে যায়। গাড়ি না নিয়ে অটো ধরে। রেখা কিছু বলে না। শুধু বীরেন যা করে তার সাথে সেই ভাবে চলে। কিছু দূর গিয়ে একটা তুলনামূলক নির্জন জায়গায় অটো থেকে নেমে যায় ওরা। বীরেন অটোর টাকা মিটিয়ে রাস্তা থেকে নেমে আসে ফুটপাথে। হাত জোড় করে দাঁড়ায় রেখার সামনে, বলে , রেখা যা করলাম তার জন্য ক্ষমা চাইছি। তুমি হয়তো ওখানে থাকলে নিজেকে সামলাতে পারতে না। হয়তো পঙ্কজ বা বাকিরা সন্দেহ করতো। তাই এখানে নিয়ে এলাম।
শহরের এই অংশটা অনেক বছর আগে ওদের দেখা করার জায়গা ছিল। একটা বাসস্টপে ওরা বসে। সময় কাটতে থাকে। দুজনের বিচ্ছেদের পর থেকে দুজনের জীবন কিভাবে কাটতে থাকে সেই কথা বলে দুজন। যখন রাত নয়টা বেজে গেল তখন সূর্যের ফোন এলো রেখার কাছে। এতে ওদের গল্পের বিরতি হলো। ফোন শেষে রেখা বলল, বিরু এবার বাড়ি ফিরতে হবে।
বীরু বলল, সে তো যাবেই। তবে আমার ব্যবসার কলকাতার অপারেশন টা তুমি দেখো। তাহলে আর টাকার কথা ভাবতে হবে না। আমি দিল্লি ফিরে গিয়ে তোমাকে হাজার শিপমেন্ট পাঠিয়ে দিচ্ছি। তুমি সেটা লোকালের মধ্যে বিক্রি করো। তোমাকে এখনি কোনো টাকা খরচ করতে হবে না।
আরো কিছুক্ষন ব্যবসার কিছু জিনিস বুঝিয়ে বীরু রেখার ফোন নম্বর নিয়ে চলে যায়। রেখাও ওখান থেকে অটো ধরে চলে যায়। রেখার মনে চলতে থাকে অনেক কিছু।
দিন কয়েক পর থেকেই রেখার জীবন বদলাতে শুরু করে। ব্যবসা করতে প্রথমে অসুবিধা হয়। বীরেন্দ্র গাইড করে। রেখা মাসের শেষে প্রায় চব্বিশ হাজার টাকার ব্যবসা করে। বীরু অনলাইন টাকা পাঠানোর ব্যাপারটা শিখিয়ে দেয় রেখাকে। দশ হাজার টাকা পাঠিয়ে দেই বীরুকে। এভাবে কেটে যায় একটা বছর। এক বছরে কলকাতায় রীতিমত বাজার দখল করে নেয় ওরা। রেখার ধার দেনা, সঞ্চয় সব কিছু ঠিকঠাক হয়ে যায়। রেখার জীবনে বিরুর সাথে বিচ্ছেদে যেমন জীবনটা থেমে গেছিল। আবার বিরুকে পেয়ে দৌড়াতে শুরু করলো। এখন দুজন মেয়েকে সেলস গার্লস হিসাবে রাখতে হয়েছে রেখাকে। নিজে scooty কিনে সেটা চালানো শিখে কিছু দিন কাজ করছিল। কিন্তু তাতে ও পেরে উঠছিল না।
বছর শেষে রেখাকে ফোন করে বীরু বলল সে কলকাতায় আসবে। রেখার জীবনে সব কিছু ওলটপালট হবে এবার। সেটা রেখা তখনও জানত না।
বীরু হঠাৎ ফোন করে বলল, রেখা তুমি হিসাবের ফাইল নিয়ে আসবে। আর শাড়ি পরে না। আমার অফিসের পুরুষ মহিলা সব লোকেরাই শার্ট জিনস আর ব্লেজার পরে কাজ করে। তোমাকেও অফিসিয়াল কাজে সেটাই মেইনটেইন করতে হবে।
বীরু এমন ভাবেই বললো যে রেখা ভাবলো যেন আদেশ করল। রেখার একটু মন খারাপ হলো। মনে মনে ভাবলো, সে নিজেকে বীরুর প্রাক্তন প্রেমিকা ভাবলেও বীরু শুধু তাকে সামান্য একজন কর্মচারী মনে করে। যায় হোক সেদিন রাতে গিয়ে জিনস, শার্ট আর ব্লেজার কিনে আনল রেখা। পরের দিন সকালে স্নান পুজো করে একটু খেয়ে বেরিয়ে গেল। এয়ারপোর্ট থেকে বিরু কে রিসিভ করবে ভেবেছিল। সেই রকম ভাবেই গাড়ি ভাড়া নিয়ে অপেক্ষা করছিল। বীরু যখন বেরিয়ে এলো তখন দেখলো ওর সাথে আর ও একজন লোক। খুব সম্ভবত সাউথ ইন্ডিয়ান। বীরু পরিচয় করিয়ে দিল হি ইস মিস্টার রানা গুপ্তা। প্রায় সাড়ে ছয় ফুট লম্বা। পেটানো শরীর। জামার ভেতর দিয়েই বোঝা যাচ্ছে বিশাল মাসাল। এয়ারপোর্ট থেকে বেরিয়ে ওরা ওঠে একটা পাঁচ তারা হোটেলে। হোটেলের ভেতরে গিয়ে মিস্টার গুপ্তা আর বীরেন্দ্র আলাদা দুটো ঘর বুক করে। রেখাকে বীরেন্দ্র ওর সাথে যেতে বলে।
কোনোরকমে স্নান সেরে বেরিয়ে আসে রেখা। সম্পূর্ণ উলংগ হয়েই। তারপর বাইরে রাখা প্যাণ্টি পড়ে নাইটি পরে নিলো একটা। যুৎসই না হলেও সেখানেই থাকা একটা ওড়না দিয়ে বুকটা ঢেকে দিল নিজের। ইতিমধ্যে বাইরের আগন্তুক চার পাঁচ বার হাক দিয়েছে। যদিও রেখা সাড়া দেয় নি। রেখা দরজা খুলে দেখে একটা মাঝ বয়সী ছেলে। বয়স বড় জোর ত্রিশ। দেখতে শুনতে ভালই। ভদ্র পোশাক, স্বভাব যেন একটু দ্রুতগামী। দরজা খুলতেই আগন্তুক বললো, আপ রেখা বুয়া হো নাহ্?
রেখার হিন্দির সাথে বড় নিবিড় শত্রুতা। কেউ হিন্দি বললে তাকে অসহ্য লাগে রেখার। কিন্তু নাম তো ঠিক বললো এই ছেলে। রেখা পরিষ্কার বাংলায় বললো, আমার নাম রেখা। কিন্তু তোমাকে চিনলাম না । আগন্তুক বললো, মে পঙ্কজ। মেরে পাপা অবিনাশ মুখার্জি। নারায়নপুরওয়ালে। রেখা অবিনাশ বা পঙ্কজ কাউকেই চিনতে পারল না। যদিও নারায়নপুর চেনে। রেখার মামার বাড়ি। রেখার মামার বাড়ির কেউ ভেবে রেখা একটু মনে করার চেষ্টা করে। তারপর আগন্তুক বলে, ওয়াহ মেরে দাদী কো সব জানতে হ্যা। গোপিকা দাদী। রেখার আজ বুঝতে বাকি থাকে না। এ হলো গোপীকা মাসির নাতি। সন্তু দাদার ছেলে। পরিচয় পাওয়া মাত্র রেখা ব্যস্ত হয়ে ওঠে ।
সন্তু দাদা কাজের সূত্রে বিদেশ চলে যায়। যোগাযোগ প্রায় নেই।বছর পনের আগে একবার এসেছিল সন্তু দাদা। ওই এক রাতের জন্য। এখন আর যোগাযোগ নেই। কখনও কারো মুখে শুনেছে এই টুকুই যা। পঙ্কজ বলে, একচুয়ালী মেরা বস কে সাথ টুর পে য়াহা আয়া হু মৈন। তো পাপা নে আপকা অ্যাড্রেস দিয়া আউর কাহা আপসে জরুর মিলনে কো। পাপা দো সাল সে বেড রিডেন হ্যা। এক স্ট্রোক হুয়া থা। প্রেসার হামেশা হাই।
এসবের মধ্যেই পঙ্কজের জন্য একটু খাবার নিয়ে আসে রেখা। ইতিমধ্যে রেখার কথাও পঙ্কজ জেনেছে। শ্যামলের মারা যাওয়া, সূর্যর পড়াশুনা। সবই বলেছে। সন্তু দাদার সাথে ফোন হয়েছে। তারপর পঙ্কজ বললো, বুয়া আপ কেহ রেহি হো পেইসো কি দিককাত হ্যাঁ। তো আপ এক বিসনেস কিউন নেহি স্টার্ট কর রেহী হো?
রেখা বলে, কি ব্যবসা করবো। কোনো দিন ভাবী নি। আর টাকাও নেই। টাকার দিক্কত আছে।
পঙ্কজ এই সেই কথার পর বলে, আপ রুকো, মেইন বস সে বাত করতা হুইন। আগর কুছ হো পায়ে। কাল তো হাম লট জায়েঙ্গে। তো দেখতে হেইন।
রেখার ফোন নম্বর নিয়ে পঙ্কজ চলে যায়।
বলেছিলাম নাহ্ যে ভগবান অন্য কিছু ভেবে রেখেছিল। হলো ও তাই। পঙ্কজ কেই বস অর্থ্যাৎ বীরেন বলল, আমাদের বিসনেস টা কলকাতাতে এক্সটেন্ড করবো ভাবছি। এখানে ভালো মার্কেট আছে। পঙ্কজ ও জানাই তার এক আত্মীয়া বিধবা গৃহবধূ। ব্যবসা করার মূলধন চাই। যদি সাহায্য করে। বীরেন সেই অফার লুফে নিয়ে আজই একটা মিটিং করে নিতে চাইলো। সেই মতো পঙ্কজ ফোন করে রেখাকে চলে আসতে বললো।
দুজন একসাথে থাকার অনেক স্বপ্ন দেখেছিল একদিন। সেই স্বপ্ন পূরণ হয় নি। কিন্তু আজ যে এত বছর পর আবার দুজনের দেখা হবে সেটা এক ভগবান ছাড়া আর কেউ জানলো না। দুপুরে একটু ডাল ভাত খেয়ে প্রয়োজনীয় কাগজ পত্র নিয়ে বেরিয়ে পড়ল রেখা। সাদা চুড়িদার, কালো কামিজ ।হাতে একটা ঘড়ি, অন্য হাতে ব্যাগ। যথা সময়ে যথা স্থানে পৌঁছে পঙ্কজ কে ফোন করল রেখা। পঙ্কজ রেখাকে একটা জায়গায় বসতে বলে বীরেন কে ডাকতে অন্য রুমে যাই। রেখা কিছুটা ভীত ,কিছুটা নার্ভাস। বীরেন এসে রেখার সামনে দাঁড়ায়। অবাক হয়ে চেয়ে থাকে দুজন দুজনের দিকে। পঁচিশ বছরের পুরোনো পরিচয়। তবু যেন বিশ্বাস করে না কেউই। বীরেন ভাবে এটাই কি সেই তার জীবন ওলটপালট করে দেওয়া রেখা? অন্য কেউ নয় তো? রেখা ভাবে হে ঠাকুর কেন দাড় করালে এই মানুষটার সামনে? যদি প্রশ্ন করে কেন সব তছনছ করে দিয়েছ? কি উত্তর দেবে সে?
পঙ্কজের সামনে বীরেন ঘোষ নিজেকে সামলে নিয়ে বলে, বসুন ম্যাডাম। দাড়িয়ে আছেন কেন? রেখা নির্বাক বসে পরে। ওর পা যেন অসাড় হয়ে গেছে। গোটা শরীর কাপছে। বীরেন পঙ্কজের দিকে তাকিয়ে বলে, পঙ্কজ প্লিজ কুছ স্ন্যাকস বুলা দো ম্যাডাম কে লিয়ে। আউর তুম একবার টিকিট কনফার্ম হুয়া ইয়া নেহি দেখলো। পঙ্কজ কিছু বলতে গেলে বললো, মেইন বাত করলেতা হুন, তুম দেখলো। পঙ্কজ জি স্যার বলে বেরিয়ে যায়। বীরেন মিনিট খানেক তাকিয়ে থাকে রেখার দিকে। তারপর একবার চোখ বন্ধ করে ঢোক গিলে বলে , ভালো আছো রেখা? রেখা ফুপিয়ে কাঁদতে শুরু করে। এযে কি ভীষণ ব্যথা। বীরেন আবার বলে, কত গুলো বছর পর এই শহরে ফিরলাম। প্রতি টা মুহূর্তে এটাই চাইছিলাম যদি একবার তোমাকে দেখতে পাই। যদি একবার আমার রেখা সোনাকে... ।বীরেন চুপ করে যায়। খোলা জানালার সামনে গিয়ে দাঁড়ায় বীরেন। চোখের জলটা আড়াল করে নেই। সকালের রোদে রেখা শুরু করেছিল আজকের দিনটা। সন্ধ্যার প্রায় ডুবন্ত রোদে দিনটা শেষ করছে বীরেন। রেখা নিজেকে সামলে একটু কথা বলার জায়গায় যায়। কি কথা বলে শুরু করবে বুঝতে পারে না রেখা। তাও বলে, আমি সব দিক দিয়েই ব্যর্থ বীরু। আজ হয়তো জীবনটাই অন্য রকম হতো যদি ... । রেখাও কথাটা শেষ করে না। তারপর চেয়ার থেকে উঠে বীরেনের পায়ের উপর পড়ে কাঁদতে কাঁদতে বলে, আমার ছেলেটা পড়াশুনায় খুব ভালো। Engineering কলেজে পড়ছে। কিন্তু হোস্টেলে থেকে পড়ানোর ক্ষমতা আর নেই। ওর বাবা মরে গেল। সব টাকা পয়সা জমি সব শেষ। ঘরটা যা আছে। সেটাও হয়তো বিক্রি করতে হবে। তাই যদি কিছু সাহায্য করতে।
মিনিট খানেক সব নিস্তব্ধ। তারপর করিডোর ধরে একটা পায়ের শব্দ শুনতে পাই। দ্রুত রেখাকে টেনে তুলে চেয়ারে বসিয়ে দিয়ে সামনের চেয়ারে নিজে বসে। কিছু আলোচনা হচ্ছে ভান করতেই ঘরে ঢোকে পঙ্কজ আর একটা ওয়েটার। কফি আর স্ন্যাকস দিয়ে ওয়েটার চলে যায়। পঙ্কজ টিকিটের কথা বল। কাল ভোর হওয়ার আগেই কলকাতাকে বিদায় করতে হবে। তারপর বীরেন নিজের থেকে বললো, ম্যাডাম কেহ রেহ হ্যাঁ কি শি ক্যান ডো। তো হাম একবার লোকেশন দেখ লেনা চাহ্তে হ্যাঁ।
পঙ্কজকে অন্য কাজে ব্যস্ত করে রেখার সাথে বীরেন বেরিয়ে যায়। গাড়ি না নিয়ে অটো ধরে। রেখা কিছু বলে না। শুধু বীরেন যা করে তার সাথে সেই ভাবে চলে। কিছু দূর গিয়ে একটা তুলনামূলক নির্জন জায়গায় অটো থেকে নেমে যায় ওরা। বীরেন অটোর টাকা মিটিয়ে রাস্তা থেকে নেমে আসে ফুটপাথে। হাত জোড় করে দাঁড়ায় রেখার সামনে, বলে , রেখা যা করলাম তার জন্য ক্ষমা চাইছি। তুমি হয়তো ওখানে থাকলে নিজেকে সামলাতে পারতে না। হয়তো পঙ্কজ বা বাকিরা সন্দেহ করতো। তাই এখানে নিয়ে এলাম।
শহরের এই অংশটা অনেক বছর আগে ওদের দেখা করার জায়গা ছিল। একটা বাসস্টপে ওরা বসে। সময় কাটতে থাকে। দুজনের বিচ্ছেদের পর থেকে দুজনের জীবন কিভাবে কাটতে থাকে সেই কথা বলে দুজন। যখন রাত নয়টা বেজে গেল তখন সূর্যের ফোন এলো রেখার কাছে। এতে ওদের গল্পের বিরতি হলো। ফোন শেষে রেখা বলল, বিরু এবার বাড়ি ফিরতে হবে।
বীরু বলল, সে তো যাবেই। তবে আমার ব্যবসার কলকাতার অপারেশন টা তুমি দেখো। তাহলে আর টাকার কথা ভাবতে হবে না। আমি দিল্লি ফিরে গিয়ে তোমাকে হাজার শিপমেন্ট পাঠিয়ে দিচ্ছি। তুমি সেটা লোকালের মধ্যে বিক্রি করো। তোমাকে এখনি কোনো টাকা খরচ করতে হবে না।
আরো কিছুক্ষন ব্যবসার কিছু জিনিস বুঝিয়ে বীরু রেখার ফোন নম্বর নিয়ে চলে যায়। রেখাও ওখান থেকে অটো ধরে চলে যায়। রেখার মনে চলতে থাকে অনেক কিছু।
দিন কয়েক পর থেকেই রেখার জীবন বদলাতে শুরু করে। ব্যবসা করতে প্রথমে অসুবিধা হয়। বীরেন্দ্র গাইড করে। রেখা মাসের শেষে প্রায় চব্বিশ হাজার টাকার ব্যবসা করে। বীরু অনলাইন টাকা পাঠানোর ব্যাপারটা শিখিয়ে দেয় রেখাকে। দশ হাজার টাকা পাঠিয়ে দেই বীরুকে। এভাবে কেটে যায় একটা বছর। এক বছরে কলকাতায় রীতিমত বাজার দখল করে নেয় ওরা। রেখার ধার দেনা, সঞ্চয় সব কিছু ঠিকঠাক হয়ে যায়। রেখার জীবনে বিরুর সাথে বিচ্ছেদে যেমন জীবনটা থেমে গেছিল। আবার বিরুকে পেয়ে দৌড়াতে শুরু করলো। এখন দুজন মেয়েকে সেলস গার্লস হিসাবে রাখতে হয়েছে রেখাকে। নিজে scooty কিনে সেটা চালানো শিখে কিছু দিন কাজ করছিল। কিন্তু তাতে ও পেরে উঠছিল না।
বছর শেষে রেখাকে ফোন করে বীরু বলল সে কলকাতায় আসবে। রেখার জীবনে সব কিছু ওলটপালট হবে এবার। সেটা রেখা তখনও জানত না।
বীরু হঠাৎ ফোন করে বলল, রেখা তুমি হিসাবের ফাইল নিয়ে আসবে। আর শাড়ি পরে না। আমার অফিসের পুরুষ মহিলা সব লোকেরাই শার্ট জিনস আর ব্লেজার পরে কাজ করে। তোমাকেও অফিসিয়াল কাজে সেটাই মেইনটেইন করতে হবে।
বীরু এমন ভাবেই বললো যে রেখা ভাবলো যেন আদেশ করল। রেখার একটু মন খারাপ হলো। মনে মনে ভাবলো, সে নিজেকে বীরুর প্রাক্তন প্রেমিকা ভাবলেও বীরু শুধু তাকে সামান্য একজন কর্মচারী মনে করে। যায় হোক সেদিন রাতে গিয়ে জিনস, শার্ট আর ব্লেজার কিনে আনল রেখা। পরের দিন সকালে স্নান পুজো করে একটু খেয়ে বেরিয়ে গেল। এয়ারপোর্ট থেকে বিরু কে রিসিভ করবে ভেবেছিল। সেই রকম ভাবেই গাড়ি ভাড়া নিয়ে অপেক্ষা করছিল। বীরু যখন বেরিয়ে এলো তখন দেখলো ওর সাথে আর ও একজন লোক। খুব সম্ভবত সাউথ ইন্ডিয়ান। বীরু পরিচয় করিয়ে দিল হি ইস মিস্টার রানা গুপ্তা। প্রায় সাড়ে ছয় ফুট লম্বা। পেটানো শরীর। জামার ভেতর দিয়েই বোঝা যাচ্ছে বিশাল মাসাল। এয়ারপোর্ট থেকে বেরিয়ে ওরা ওঠে একটা পাঁচ তারা হোটেলে। হোটেলের ভেতরে গিয়ে মিস্টার গুপ্তা আর বীরেন্দ্র আলাদা দুটো ঘর বুক করে। রেখাকে বীরেন্দ্র ওর সাথে যেতে বলে।