20-06-2019, 10:58 AM
জানালার পাশের ছেলেটি উঠে যেতেই সফিকুল রাহাতকে ডাকলো, ‘ভাবি জানালার পাশে এসে বস। ভালো লাগবে।’
রাহাত উঠে এসে জানালার পাশে আর সফিকুলের পাশে বসলো। ট্রেন থামল পরের স্টেশনে। এদিকে ট্রেনে বেশি ভিড় থাকে না। তাই সহজে জায়গা পাওয়া যায় আর পছন্দ করে জায়গা পাল্টানো যায়। ট্রেন কয়েক মুহূর্ত থেমে আবার চলতে শুরু করলো। রাহাত জানালা দিয়ে বাইরে দেখছে। পাশে সফিকুল বসে আছে। রাহাত দেখছে কত বাড়ি, ঘর, গাছ গাছালি, মাঠ, প্রান্তর সব হুঁশ করে পার হয়ে যাচ্ছে। সফিকুল ঝাল মুড়ি কিনলো হকারের কাছে থেকে। একটা ঠোঙ্গা রাহাতের দিকে এগিয়ে দিয়ে বলল, ‘নাও, ভাবি একটু ঝাল মুড়ি খাও।’
রাহাত মুড়ির ঠোঙ্গা নিল কিন্তু সফিকুলকে বলল, ‘কি দরকার ছিল মুড়ি কেনার। ওত চিরকাল বাড়িতে খাই।’ মুড়ি হাতে করে বের করে মুখে দিল আর নজর জানালা দিয়ে বাইরে দিকে দিল। অনেক দিন পর ট্রেনে চেপে মন খুশি ভরে আছে। কত দিন পর গ্রাম থেকে বাইরে বেরোলো।
কয়েকটা স্টেশন গেলে সফিকুল দিলখুশ কিনলো। রাহাতকে দিল। বেশ গরম গরম বিক্রি করছিল লোকটা। ডাল আর চিনি দিয়ে বেশ সুস্বাদু একপ্রকার খাদ্য দিলখুশ। সফিকুল পছন্দ করে আর গরম গরম পেলেই কিনে খায়। আজ রাহাতকে দিল। রাহাত বলল, ‘তোর খুব পয়সা হয়েছে, নারে? এত বাজে খরচ করছিস কেন?’
সফিকুল বলল, ‘দিলখুশ খেতে আমারদারুন লাগে। তুমি বল তো কেমন লাগলো?’ ও রাহাতের কথা পাত্তা দিল না।
রাহাত মুখে দিলে সফিকুল ওর দিকে তাকিয়ে রইলো ওর কেমন লাগে সেটা জানার জন্যে। রাহাত স্বাদটা নিয়ে বলল, ‘এটা বেশ ভালো। আর আগে যতবার খেয়েছি সব ঠান্ডা ছিল। গরম গরম তাই টেস্টই আলাদা।’ চোখে মুখে তৃপ্তি।
রাহাতের ভালো লেগেছে দেখে সফিকুলের ভালো লাগলো। মন থেকে কাউকে কিছু খাওয়ালে এবং সেটা যদি তার ভালো লাগে তাহলে মন তৃপ্ত হয়। অনুভূতি কোনো জবাব হয় না।
সফিকুল বলল, ‘ভাবি তাড়াতাড়ি খেয়ে নাও, পরের স্টেশনে নামব।’
রাহাতের খাওয়া শেষ হলে ব্যাগ থেকে বের করে ওকে জলের বোতল দিল সফিকুল। রাহাত খানিকটা জল খেয়ে ফেরত দিল বোতলটা। স্টেশনে থামলে ওরা উঠে পড়ল। নেমে পায়ে পায়ে এগিয়ে গেল ওরা। স্টেশন থেকে বেরিয়ে হাঁটতে লাগলো। রিকশাতে যেতে রাজি হলো না রাহাত। বলল যে হেঁটে যেতে অনেক কিছু ভালো করে দেখা যায়। রিক্সা বড্ড তাড়াতাড়ি যায়!! মিনিট দশেক মূল রাস্তা ধরে হেঁটে একটা গলির মুখে এলো। একটা বাড়ির সামনে ওরা দাঁড়ালো। সফিকুল বলল, ‘এটা হলো ডক্টর সরকারের চেম্বার। প্রত্যেক দিনই এমন ভিড় থাকে। ফিরতে ফিরতে অনেক দেরী হয়ে যাবে ভাবি।’
রাহাত বলল, ‘সেত জানি। কি আর করা যাবে। নাম লেখাতে হবে না?’
সফিকুল বলল, ‘তুমি এখানে দাঁড়াও, আমি লিখিয়ে আসছি।’ বলে সফিকুল ভিতরে চলে গেল। কম্পাউন্ডার রোগী সামলাচ্ছে। ভিতরের ঘরটা বেশ বড়। চারিদিকে বেঞ্চ পাতা আর ঘরের মধ্যেও বেঞ্চ পাতা। বেশির ভাগ মহিলা রোগী। কেউ কেউ সাথে বাচ্চা নিয়ে এসেছে। একটা কোলাহল সৃষ্টি হয়েছে ভিতরে।
কম্পাউন্ডারের কাছে গিয়ে সফিকুল বলল, ‘নাম লেখাবো।’
কম্পাউন্ডার বলল, ‘কি নাম?’
সফিকুল-রাহাতুন্নেসা বিবি। কত নম্বর?
কম্পাউন্ডার-৭৩।
সফিকুল-মোটামুটি কখন হবে?
কম্পাউন্ডার- সে আমি জানি না। মোটামুটি সাড়ে তিনটে নাগাদ চলে এস।
সফিকুল- ঠিক আছে।
সফিকুল বাইরে বেরিয়ে এসে দেখল রাহাত একই জায়গাতে দাঁড়িয়ে আছে। সফিকুলকে দেখে বলল, ‘কি হলো?’
সফিকুল ওর দিকে তাকিয়ে বলল, ‘৭৩ নম্বর, সাড়ে তিনটের আগে হবে না।’
রাহাত বলল, ‘সাড়ে তিনটে মানে তো অনেক সময়। কি করব?’
সফিকুল বলল, ‘এক এখানে বসে থাকতে পার নাহলে আমার সাথে চল একটু ঘুরে আসি। সবে তো ৯টা বাজে।’
রাহাত বলল, ‘তাই চল। এত সময় বসে থাকতে পারব না।’
ওরা ওখান থেকে রওনা দিল।
রাহাতকে সফিকুল বলল, ‘কোথায় যাবে বল?’
রাহাত জবাব দিল, ‘আমি কি বলব! তোর কলেজ দেখব। আর যা খুশি দেখাস।’
সফিকুল বলল, ‘কলেজ খুলতে দেরী আছে। চল পার্কে যাই।’
রাহাত ছোট্ট করে বলল, ‘চল।’
হেঁটে হেঁটে ওরা পার্কে পৌছে গেল। বেশ সুন্দর গোছানো। একটা সরোবর আছে। নানান গাছপালা আর একটা মাঠ নিয়ে পার্ক। মাঠের চারিধারে ছোট রাস্তা করা আছে। সেটা দিয়ে এখনো কিছু লোক প্রাতঃভ্রমন করে নিচ্ছে। রাহাত দেখে অবাকই হলো পুরুষ এবং মহিলারা ট্রাক সুট পরে এত দেরিতে প্রাতঃভ্রমণ করছে দেখে। সিমেন্ট বাঁধানো বেঞ্চ করা আছে গোটাকয়েক। তাদের একটাতে বসলো ওরা। সামনে গাছের আড়ালে একজোড়া ছেলে মেয়ে বসে আছে। এত সকাল সকাল প্রেম করতে দেখেও রাহাতের আশ্চর্য্য লাগলো। এদের কি সময় জ্ঞান কিছু নেই। যাই হোক কিছু সময় বসে থাকলো। ছেলে মেয়ে দুটো গাছের আড়ালে জড়াজড়ি করছে হয়ত বা চুমুও খাচ্ছে। স্পষ্ট করে দেখা যাচ্ছে না। কিন্তু একটা আভাস পাওয়া যাচ্ছে। সামনা সামনি কাউকে চুমু খেতে দেখেনি রাহাত, তাও আবার দিনের আলোয়। শরীরে একটা শিরশিরানি দৌড়ে গেল। অন্য দিকে নজর দিতে চাইলেও বারবার ওদিকেই তাকাচ্ছে। নিষিদ্ধ কিছু দেখাতে একটা আলাদা টান বা আমেজ আছে। সেটা এড়ানো সহজ নয়। সফিকুল বেশি কথা বলছে না। টুকটাক এটা সেটা অপ্রয়োজনীয় কিছু বলছে। সফিকুল রাহাতকে দেখল যে ছেলে মেয়ের দিকে তাকিয়ে আছে।
সফিকুল বলল, ‘ভাবি এখানে এগুলো খুব কমন। কেউ কিছু মনে করে না।’
রাহাত বলল, ‘তাও এমন দিনে দুপুরে!!!’
সফিকুল বলল, ‘হয়ত টিউশনি পালিয়ে প্রেম করছে।’
রাহাত আর কিছু বলল না। খানিক বাদে সফিকুল বলল, ‘ভাবি চল কলেজ দেখবে বলছিলে। এখন খুলে গেছে।’
রাহাত বলল, ‘হ্যা দেখব তো! চল।’
ওরা পার্ক থেকে বেরিয়ে এলো। রাহাতের মনের মধ্যে ওই ছেলে মেয়ে দুটির কথা ঘোরাফেরা করতে লাগলো। কি সুন্দর মেয়েটা। ছেলেটাও বেশ ভালো। ওদের জুরি মানাবে ভালো। ধুরর!! কি সব ভাবছে। ওসব ভাবার দরকার নেই। ভাবার জন্যে ওদের অভিভাবকরা আছেন। তারা ভাববেন। কিন্তু কেমন অভিভাবক যে ছেলে মেয়ে কি করছে খোঁজ করে না। প্রেম তো করবে কিন্তু সাথে সাথে জীবন চালাতে গেলে যা করতে হবে সেটাও তো ঠিক মত করতে হবে। নাহলে পরবর্তী জীবন সুখের হবে না। ভাবতে ভাবতে ওরা সফিকুলের সামনে চলে এলো।
সফিকুল বলল, ‘ভাবি এটা আমাদের কলেজ।’
রাহাত দেখল একটা বড় বাড়ির সামনে এসে দাঁড়িয়েছে। বড় করে গেট করা আছে। তাতে বড় বড় করে লেখা আছে নন্দলাল কলেজ। কলেজ দেখে ওর মন ভরে গেল। নিজের জীবনে খুব বড় সখ ছিল কলেজে পড়ার, সেটা হয়নি। ছাত্রী হিসেবে কোনদিন কলেজে আসতে পারে নি। কোনো দিন আগে দেখেও নি। সফিকুল এই কলেজে পড়ে সেটা ভেবে ওর খুব ভালো লাগলো। আবেগে বুকের ভিতর জলীয় বাস্প তৈরী হয়েছে। কখন যে বাস্প জমে জল হয়ে চোখ দিয়ে নেমে এসেছে টের পায় নি রাহাত। সম্বিত ফিরল সফিকুলের কোথায়।
সফিকুল ওর চোখে জল দেখে বলল, ‘ভাবি কি হয়েছে? শরীর খারাপ লাগছে? বসবে একটু?’
রাহাত লজ্জা পেয়ে চোখের জল মুছে নিল। একটু ম্লান হেসে বলল, ‘না না, আমি ঠিক আছি। কিছু খারাপ লাগছে না।’
সফিকুল বলল, ‘তাহলে কাঁদছ কেন?’
রাহাত বলল, ‘কাঁদি নি। চোখে জল এসে গেছিল। জানিস আমার কলেজে পড়ার খুব ইচ্ছা ছিল। কিন্তু সেটা আমার জোটে নি। এই প্রথম কোনো কলেজ দেখলাম। তুই এই কলেজে পরিস ভেবেই আমার গর্ব হচ্ছিল। তাতেই হয়ত চোখে জল এসে গেছে। তুই ওসব বুঝবি না।’
সফিকুল বলল, ‘কি যে কর না!! কত হাজার হাজার ছেলেমেয়ে পড়ে এই কলেজে। এতে গর্ব করার কি আছে?’
রাহাত বলল, ‘নিজের কেউ তো তারা নয়।’
জটিল উত্তর পেয়ে সফিকুল আর কিছু বলল না। সফিকুল প্রসঙ্গ পাল্টে বলল, ‘ভিতরে যাবে?’
রাহাত বলল, ‘হ্যা যাব তো। এত দূর এলাম আর ভিতরটা দেখব না?’
সফিকুল বলল, ‘তাহলে চল।’
ওটা গেট পার করে ভিতরে ঢুকলো। সফিকুল বুঝতে পারছে না ভাবিকে কি দেখাবে। দেখার যে কি আছে সেটা ও বুঝতে পারে না। সেইতো ক্লাসরুম, স্টাফ রুম, প্রফেসর রুম আর ল্যাব। ভিতরে ঢুকে ওরা দোতলায় উঠে গেল। কলেজে ছাত্রছাত্রী এখনো আসে নি। দুইচার জন এসে গুলতানি মারছে। একটা রুম খোলা ছিল। ওটা কলেজের গ্যালারী। সেটা ফাঁকা। ওটার ভিতরে দুইজন ঢুকলো।
সফিকুল বলল, ‘এখানে আমাদের পাসের ক্লাস হয়।’
রাহাত দেখল ঘরটা অনেক বড়। দুইসারি বেঞ্চ পাতা আছে। মাঝে দিয়ে রাস্তা। প্রথম বেঞ্চের থেকে পরের বেঞ্চের উচ্চতা বেশি। শেষের বেঞ্চ অনেক উচুতে। কলেজে এমনভাবে বেঞ্চ পাতা থাকত না। শেষের বেঞ্চের ছেলেরাও ঠিক মত শিক্ষককে ঠিক মত দেখতে পাবে। সামনের বেঞ্চের ছেলেদের জন্যে কোনো অসুবিধা হবে না। রাহাত ভাবলো বেশ ভালো ব্যবস্থা।
রাহাত মুখে বলল, ‘খুব সুন্দর। আমিও যদি এখানের ছাত্র হতাম!’
সফিকুল বলল, ‘বেশ হত। আমরা একসাথে কলেজে আসতাম আর আমি তোমার পাশে বসতাম।’
রাহাত বলল, ‘ছেলেমেয়ে পাশাপাশি বসে নাকি?’
সফিকুল বলল, ‘বসে তো, সব সময় নাহলেও মাঝে মধ্যে বসে।’
রাহাত বলল, ‘বেশ মজা তো!’
সফিকুল বলল, ‘হ্যা তা বটে।’
ওরা বেরিয়ে এলো। সফিকুল ওদের ডিপার্টমেন্টের সামনে এলো। ডিপার্টমেন্ট বন্ধ। রাহাতকে বলল, ‘এটা আমাদের ডিপার্টমেন্ট। এখানেই আমাদের অনার্সের ক্লাস হয় আর প্র্যাকটিকাল ক্লাস হয়। বন্ধ নাহলেও তোমাকে ভিতরে ঢুকিয়ে দেখাতে পারতাম না। বুঝছ তো?’
রাহাত বলল, ‘হ্যা বুঝেছি।’
বাইরে থেকে দেখে রাহাত বলল, ‘ঠিক আছে চল এবারে যাই।’
সফিকুল বলল, ‘চল।’
রাহাত আর সফিকুল বাইরে চলে এলো। রাহাতের চোখে মুখে একটা অদ্ভুত ভালো লাগা। একটা অদ্ভুত তৃপ্তি। যেন কত দিনের না দেখা বা স্বপ্নের রাজকুমারকে দেখে এলো। রাহাতের মুখে খুশি দেখে সফিকুল আশ্চর্য্য হলো না। গত কয়েক দিন অর সাথে গভীরভাবে মিশে দেখেছে যে ও মধ্যে একটা সহজ ভালবাসা আছে পড়াশোনার প্রতি। সেটাই খুব আশ্চর্যের। কারণ কোনো কারনই থাকতে পারে না এক গ্রাম্য বধূর পড়াশোনার প্রতি এত ভালবাসা। অবশ্য আল্লার তৈরী সব কিছু অনায়াসে ব্যাখা করা সম্ভব না। তাই সে চেষ্টাও করে না সফিকুল। প্রায় কিছুই না পাওয়া রাহাতকে এক ঝলক আনন্দের রশ্মি দেখিয়ে সফিকুল নিজেও আনন্দ পেল। আর এত সাধারণ একটা কলেজ দেখে যে কেউ এত খুশি হতে পারে সফিকুল সেটা আগে বুঝতে পারে নি। সফিকুলকে পড়ার জন্যে যে উত্সাহ বা চাপ দিত সেটা অন্তত কোনো ভড়ং নয়, একান্তই ভিতরের তাগিদে। সফিকুল অবাক হয় এটা ভেবে যে রাহাত ভাবি অর মধ্যে এমন কি দেখল যার জন্যে ওকে আবার এই পড়াশোনার রাজপথে এনে ফেলল। নিজের কাছে স্বীকার করতে সফিকুলের কোনো লজ্জা করে না যে রাহাত ভাবি গত কয়েক দিনে অর মধ্যে অনেক পরিবর্তন এনে দিয়েছে। পড়াশুনা গ্রহ থেকে ও ক্রমেই দূরে সরে সরে যাচ্ছিল। আল্লার অসীম করুনায় রাহাত ভাবি সঠিক সময়ে ওকে আবার সেই গ্রহে ফেরত এনেছে। এখন ওর পড়তে ভালো লাগে। সেটা রাহাত ভাবির ঘরে বসে পড়লে তো কোনো কথায় নেই। নিজের বিষয়ের প্রেমে পড়ে গেছে। জুলজি পড়ে আনন্দ পায়। মনে মনে রাহাত ভাবিকে ধন্যবাদ না দিয়ে পারে না। আর সেই রাহাত ভাবিকে নিজের কলেজ দেখিয়ে ধন্যবাদ দেওয়াটা হয়ে গেল।
কলেজ থেকে বেরোতেই ওদের সাথে ডালিয়ার দেখা হলো। সফিকুল দেখেছে যে শহরের হলেও এই মেয়েটি ওর সাথে বেশ যেচে কথা বলে। হয়ত মেয়েটি . বলেই। দেখা হতেই একগাল হেসে ডালিয়া সফিকুলকে বলল, ‘কি রে তুই এখানে? আজ তো কোনো ক্লাস হবে না।’
সফিকুল বলল, ‘আমি ক্লাস করতে আসিনি।’
ডালিয়া-তাহলে?
সফিকুল-এ হলো রাহাত ভাবি। ডাক্তার দেখাতে এসেছি।
ডালিয়া- ডাক্তার দেখাতে এসেছিস তো এখানে কি করছিস?
সফিকুল- ভাবির কলেজ দেখার সখ। সেটা হলো। আর ভাবি একটু বাথরুমে যাবে, তাই আর কি?
রাহাত ভাবলো সফিকুল মিথ্যা কেন বলছে। যাই হোক কোনো কারণ নিশ্চয় থাকবে। চুপ করে ওর কথা মত মনে মনে তৈরী হলো।
ডালিয়া বলল, ‘ভাবি চল আমার সাথে। সফিকুল তুই এখানে দাঁড়িয়ে থাক, আমরা আসছি একটু পর।’
সফিকুল বলল, ‘ওকে।’
রাহাতকে নিয়ে ডালিয়া আবার কলেজের ভিতরে গেল।
রাহাত বলল, ‘তোমার নাম কি?’
ডালিয়া বলল, ‘ডালিয়া। আমি সফিকুলের সাথে পড়ি। আর টিউশনিও একজায়গাতে যাই। ও আমার প্র্যাক্টিকালের পার্টনার।’
রাহাত বলল, ‘তোমার নামটা খুব সুন্দর। ও তাহলে তোমার খুব ভালো বন্ধু?’
ডালিয়া বলল, ‘জানি না। ও আমার ভালো বন্ধু, কিন্তু আমি ওর ভালো বন্ধু কিনা সেটা বুঝতে পারি না। আমি কোনো কিছু বললে এককান দিয়ে ঢোকায় আর অন্য কান দিয়ে বের করে দেয়। মাথার মধ্যে কিছু নেয় না।’
রাহাত বলল, ‘ও ঐরকমই। পড়াশুনা কেমন করে সফিক?’
ডালিয়া জবাব দিল, ‘কোনো ঠিক নেই। আগে মনে হত ঢিলাঢালা চলছে, এখন মনে হচ্ছে পড়াশুনা করছে। টিউশনি বা কলেজেও ভালো রেসপন্স করে। এমনিতে ওর খুব ভালো ছেলে, পড়াশুনাতেও আর আচার আচরনেও।’
রাহাত সহসা বলে উঠলো, ‘তোমার বয়ফ্রেন্ড আছে?’
ডালিয়া এমন সল্পপরিচিত মহিলার কাছে থেকে প্রশ্নটা শুনে থমকে গেল। উত্তেজিত না হয়ে শান্ত স্বরে বলল, ‘না, কেন বলত?’
রাহাত বলল, ‘না এমনি।’
ওদের ডিপার্টমেন্টের সামনে চলে এলো। ডিপার্টমেন্ট খুলে গেছে। ভিতরে থেকে একটা চাবি এনে বাথরুমের দরজা খুলে দিল ডালিয়া। রাহাত ভিতরে ঢুকে প্রস্রাব করে চলে এলো। ওরা আবার বাইরের দিকে বেরোতে থাকলো।
রাহাত বলল, ‘ডালিয়া সফিকুলকে একটু দেখে রেখো। এমনিতে গ্রামের বাইরে ও একা। হয়ত কারোর সাথে মিশতে সময় লাগে।’
ডালিয়া বলল, ‘তুমি চিন্তা কর না ভাবি। কলেজে কোনো অসুবিধা হয় না। তাছাড়া আমার বাড়ি এখানে। আমি তো আছি।’
বাইরে বেরোলে দেখল সফিকুল একলা দাঁড়িয়ে ছিল।
রাহাত আর সফিকুল চলে যাবার আগে ডালিয়া বলল, ‘কাল টিউশনি আছে মনে আছে তো?’
সফিকুল বলল, ‘আছে।’
ডালিয়া বলল, ‘আমার নোটটা নিয়ে আসিস।’
সফিকুল বলল, ‘ঠিক আছে। আজ চলি।’
ওরা এগিয়ে গেল। রাহাত একবার পিছন ফিরে দেখল ডালিয়া ওদের দিকে তাকিয়ে আছে।
রাহাত বলল, ‘আমাকে বাথরুম করতে পাঠালি কেন?’
সফিকুল বলল, ‘শুধু কলেজ দেখতে এসেছি শুনলে আমাকে পরে খ্যাপাত। এমনিতেই কলেজ আসি না। তাছাড়া আমরা অনেক আগে বাড়ি থেকে বেরিয়েছি।’
রাহাত বলল, ‘তা ঠিক একটু পেয়েছিল বটে। মেয়েটা বেশ সুন্দর না?’
সফিকুল বলল, ‘তা হবে।’
রাহাত বলল, ‘ঠিক করে বল। ব্যবহার কি ভালো।’
সফিকুল বলল, ‘সবাই তোমার মত রাগী হলে ভালো হত?’
রাহাত-‘আমি রাগী তো বেশ! তুই আমাকে নিয়ে এলি কেন? তাছাড়া আমার কথা বলছি না। ডালিয়ার কথা বলছিলাম।’
সফিকুল-দেখো ভাবি শহরের মেয়ে। ওরা ছেলে বা মেয়ে যে কারোর সাথে সহজে মিশতে পারে। আমাদের মত ইতস্তত করে না। এতে ভালো খারাপের কিছু নেই।
রাহাত-তুই বুঝিস না ও তোকে কেয়ার করে।
সফিকুল-ধুরর ছার তো! আমাদের হাতে এখনো অনেক সময় আছে। চল এখন খেয়ে নিই। তারপর একটা সিনেমা দেখি। গরমে আর কত সময় বাইরে ঘুরব।
রাহাত-তোর কি টাকা অনেক বেশি হয়েছে? ফালতু খরচ কেন করবি?
সফিকুল-বেশি হয় নি। তাছাড়া বড় হয়ে চাকরি করব। তখন হাতে টাকা থাকবে। এখন যেটা করতে ইচ্ছে করছে সেটা তখন করতে পারব না হয়ত। তাই শুধু টাকা টাকা ভাবি না। তাছাড়া সব সময় তো তুমি সাথে থাকবে না।।
রাহাত ওর দিকে তাকালো। সামনের দিকে তাকিয়ে আছে সফিকুল। আবার সামনের দিকে তাকিয়ে ওর সমানে সমানে চলতে শুরু করলো।
একটা হোটেলে খেয়ে নিল। তারপর একটা রিক্সা করে সিনেমা হলে চলে এলো। রাহাত খুব বেশি সিনেমা হলে এসে দেখেনি। গিয়াস বিয়ের পরে বার কয়েক এনেছিল। সেটাও কোন মান্ধাতার আমলে! মনেই পরে না। ব্যালকনিতে টিকিট কাটল সফিকুল। নিচে খুব বেশি হট্টগোল। নোংরা লোকজন বেশি। উপরে এমনিতে ভিড় কম, তাছাড়া যারা আসে না হট্টগোল করে না। তাই সফিকুলের ব্যালকনি ভালো লাগে। বাংলা সিনেমা। তাও ফ্লপ। তার জন্যে ওপরে ভিড় নেই বললেই চলে। ওরা টিকিট নিয়ে ভিতরে ঢুকলো। টর্চ হাতে লোকটা ওদের সিত দেখিয়ে দিল। ফাঁকা। ২০ জন মত এসেছে। সব ছড়িয়ে ছিটিয়ে বসে আছে। ওরা বসলো পাশাপাশি। কিছু সময়ের মধ্যে সিনেমা শুরু হলো। সফিকুলের সিনেমা দেখতে বেশি ইচ্ছা নেই। হলের মধ্যে এসি লাগানো তাই ঠান্ডা। সেইজন্যে ভাবিকে নিয়ে এসেছে। সিনেমা শুরু হতেই মন দিয়ে সিনেমা দেখছে ভাবি। সফিকুল ভাবে কি যে দেখে। সবই একই লাগে। শুধু রামের জায়গায় হনুমান নায়ক জাতীয় পার্থক্য। চোখ অন্ধকারে সয়ে গেছে অনেক আগেই। বাকি দর্শকদের দেখতে লাগলো। হলে অনেক সময় পর্দার থেকে দর্শকদের দেখতে বেশি ভালো লাগে। সফিকুলের ভাগ্য ভালো। আজ ও পর্দার থেকে পর্দার সামনে বেশি আকর্ষনীয় দৃশ্য পেয়ে গেল। সামনে দুই সারি আগে একটা লোক পাশে মেয়েছেলে নিয়ে বসে আছে। সফিকুল পরিস্কার দেখতে পাচ্ছে যে লোকটা মহিলার বুকে হাত দিয়েছে। হাত তো দেওয়া নয়, যেন ঠাসছে। সফিকুল খানিক দেখার পর রাহাতকে দেখল পর্দার দিকে তাকিয়ে সব গিলছে। সফিকুল ভাবির হাত ধরে নারা দিল, তারপর চোখের ইশারা করে সামনের ওদের দেখালো। ভাবি তো হা করে ওদের দেখল। সত্যি এমন হয়!! অবাক হয়ে গেল। চোখের সামনে কাউকে এমন ভাবে মাই দলতে দেখে নি। সিনেমা দেখা ওর মাথায় উঠলো। সফিকুলের হাতটা ভাবি ধরে থাকলো। মাঝে মাঝে সিনেমা দেখছিল, কিন্তু ওদের দিক থেকে চোখ সরাতে পারে নি। সফিকুল ভাবিকে হলে মধ্যে কিছু করতে চায় না। ও ধীর স্থির হয়ে খেলতে চায়। ভাবি এখন অনেকটা ওর আয়ত্বের মধ্যে আছে। হরবর না করলে পুরোপুরি চলে আসবে। সেটার জন্যে অপেক্ষা করছে। খানিক পরে হাফ টাইম হয়ে গেল। ওরা বাইরে চলে গেল। হাফ টাইমের পর আর ফেরত এলো না। পরে হাফটা ভাবি সিনেমা দেখল। শেষ হলে ওরা ডাক্তারের চেম্বারে চলে গেল। তখনও সাড়ে তিনটে বাজে নি।
(৬ঠ পর্ব সমাপ্ত)
রাহাত উঠে এসে জানালার পাশে আর সফিকুলের পাশে বসলো। ট্রেন থামল পরের স্টেশনে। এদিকে ট্রেনে বেশি ভিড় থাকে না। তাই সহজে জায়গা পাওয়া যায় আর পছন্দ করে জায়গা পাল্টানো যায়। ট্রেন কয়েক মুহূর্ত থেমে আবার চলতে শুরু করলো। রাহাত জানালা দিয়ে বাইরে দেখছে। পাশে সফিকুল বসে আছে। রাহাত দেখছে কত বাড়ি, ঘর, গাছ গাছালি, মাঠ, প্রান্তর সব হুঁশ করে পার হয়ে যাচ্ছে। সফিকুল ঝাল মুড়ি কিনলো হকারের কাছে থেকে। একটা ঠোঙ্গা রাহাতের দিকে এগিয়ে দিয়ে বলল, ‘নাও, ভাবি একটু ঝাল মুড়ি খাও।’
রাহাত মুড়ির ঠোঙ্গা নিল কিন্তু সফিকুলকে বলল, ‘কি দরকার ছিল মুড়ি কেনার। ওত চিরকাল বাড়িতে খাই।’ মুড়ি হাতে করে বের করে মুখে দিল আর নজর জানালা দিয়ে বাইরে দিকে দিল। অনেক দিন পর ট্রেনে চেপে মন খুশি ভরে আছে। কত দিন পর গ্রাম থেকে বাইরে বেরোলো।
কয়েকটা স্টেশন গেলে সফিকুল দিলখুশ কিনলো। রাহাতকে দিল। বেশ গরম গরম বিক্রি করছিল লোকটা। ডাল আর চিনি দিয়ে বেশ সুস্বাদু একপ্রকার খাদ্য দিলখুশ। সফিকুল পছন্দ করে আর গরম গরম পেলেই কিনে খায়। আজ রাহাতকে দিল। রাহাত বলল, ‘তোর খুব পয়সা হয়েছে, নারে? এত বাজে খরচ করছিস কেন?’
সফিকুল বলল, ‘দিলখুশ খেতে আমারদারুন লাগে। তুমি বল তো কেমন লাগলো?’ ও রাহাতের কথা পাত্তা দিল না।
রাহাত মুখে দিলে সফিকুল ওর দিকে তাকিয়ে রইলো ওর কেমন লাগে সেটা জানার জন্যে। রাহাত স্বাদটা নিয়ে বলল, ‘এটা বেশ ভালো। আর আগে যতবার খেয়েছি সব ঠান্ডা ছিল। গরম গরম তাই টেস্টই আলাদা।’ চোখে মুখে তৃপ্তি।
রাহাতের ভালো লেগেছে দেখে সফিকুলের ভালো লাগলো। মন থেকে কাউকে কিছু খাওয়ালে এবং সেটা যদি তার ভালো লাগে তাহলে মন তৃপ্ত হয়। অনুভূতি কোনো জবাব হয় না।
সফিকুল বলল, ‘ভাবি তাড়াতাড়ি খেয়ে নাও, পরের স্টেশনে নামব।’
রাহাতের খাওয়া শেষ হলে ব্যাগ থেকে বের করে ওকে জলের বোতল দিল সফিকুল। রাহাত খানিকটা জল খেয়ে ফেরত দিল বোতলটা। স্টেশনে থামলে ওরা উঠে পড়ল। নেমে পায়ে পায়ে এগিয়ে গেল ওরা। স্টেশন থেকে বেরিয়ে হাঁটতে লাগলো। রিকশাতে যেতে রাজি হলো না রাহাত। বলল যে হেঁটে যেতে অনেক কিছু ভালো করে দেখা যায়। রিক্সা বড্ড তাড়াতাড়ি যায়!! মিনিট দশেক মূল রাস্তা ধরে হেঁটে একটা গলির মুখে এলো। একটা বাড়ির সামনে ওরা দাঁড়ালো। সফিকুল বলল, ‘এটা হলো ডক্টর সরকারের চেম্বার। প্রত্যেক দিনই এমন ভিড় থাকে। ফিরতে ফিরতে অনেক দেরী হয়ে যাবে ভাবি।’
রাহাত বলল, ‘সেত জানি। কি আর করা যাবে। নাম লেখাতে হবে না?’
সফিকুল বলল, ‘তুমি এখানে দাঁড়াও, আমি লিখিয়ে আসছি।’ বলে সফিকুল ভিতরে চলে গেল। কম্পাউন্ডার রোগী সামলাচ্ছে। ভিতরের ঘরটা বেশ বড়। চারিদিকে বেঞ্চ পাতা আর ঘরের মধ্যেও বেঞ্চ পাতা। বেশির ভাগ মহিলা রোগী। কেউ কেউ সাথে বাচ্চা নিয়ে এসেছে। একটা কোলাহল সৃষ্টি হয়েছে ভিতরে।
কম্পাউন্ডারের কাছে গিয়ে সফিকুল বলল, ‘নাম লেখাবো।’
কম্পাউন্ডার বলল, ‘কি নাম?’
সফিকুল-রাহাতুন্নেসা বিবি। কত নম্বর?
কম্পাউন্ডার-৭৩।
সফিকুল-মোটামুটি কখন হবে?
কম্পাউন্ডার- সে আমি জানি না। মোটামুটি সাড়ে তিনটে নাগাদ চলে এস।
সফিকুল- ঠিক আছে।
সফিকুল বাইরে বেরিয়ে এসে দেখল রাহাত একই জায়গাতে দাঁড়িয়ে আছে। সফিকুলকে দেখে বলল, ‘কি হলো?’
সফিকুল ওর দিকে তাকিয়ে বলল, ‘৭৩ নম্বর, সাড়ে তিনটের আগে হবে না।’
রাহাত বলল, ‘সাড়ে তিনটে মানে তো অনেক সময়। কি করব?’
সফিকুল বলল, ‘এক এখানে বসে থাকতে পার নাহলে আমার সাথে চল একটু ঘুরে আসি। সবে তো ৯টা বাজে।’
রাহাত বলল, ‘তাই চল। এত সময় বসে থাকতে পারব না।’
ওরা ওখান থেকে রওনা দিল।
রাহাতকে সফিকুল বলল, ‘কোথায় যাবে বল?’
রাহাত জবাব দিল, ‘আমি কি বলব! তোর কলেজ দেখব। আর যা খুশি দেখাস।’
সফিকুল বলল, ‘কলেজ খুলতে দেরী আছে। চল পার্কে যাই।’
রাহাত ছোট্ট করে বলল, ‘চল।’
হেঁটে হেঁটে ওরা পার্কে পৌছে গেল। বেশ সুন্দর গোছানো। একটা সরোবর আছে। নানান গাছপালা আর একটা মাঠ নিয়ে পার্ক। মাঠের চারিধারে ছোট রাস্তা করা আছে। সেটা দিয়ে এখনো কিছু লোক প্রাতঃভ্রমন করে নিচ্ছে। রাহাত দেখে অবাকই হলো পুরুষ এবং মহিলারা ট্রাক সুট পরে এত দেরিতে প্রাতঃভ্রমণ করছে দেখে। সিমেন্ট বাঁধানো বেঞ্চ করা আছে গোটাকয়েক। তাদের একটাতে বসলো ওরা। সামনে গাছের আড়ালে একজোড়া ছেলে মেয়ে বসে আছে। এত সকাল সকাল প্রেম করতে দেখেও রাহাতের আশ্চর্য্য লাগলো। এদের কি সময় জ্ঞান কিছু নেই। যাই হোক কিছু সময় বসে থাকলো। ছেলে মেয়ে দুটো গাছের আড়ালে জড়াজড়ি করছে হয়ত বা চুমুও খাচ্ছে। স্পষ্ট করে দেখা যাচ্ছে না। কিন্তু একটা আভাস পাওয়া যাচ্ছে। সামনা সামনি কাউকে চুমু খেতে দেখেনি রাহাত, তাও আবার দিনের আলোয়। শরীরে একটা শিরশিরানি দৌড়ে গেল। অন্য দিকে নজর দিতে চাইলেও বারবার ওদিকেই তাকাচ্ছে। নিষিদ্ধ কিছু দেখাতে একটা আলাদা টান বা আমেজ আছে। সেটা এড়ানো সহজ নয়। সফিকুল বেশি কথা বলছে না। টুকটাক এটা সেটা অপ্রয়োজনীয় কিছু বলছে। সফিকুল রাহাতকে দেখল যে ছেলে মেয়ের দিকে তাকিয়ে আছে।
সফিকুল বলল, ‘ভাবি এখানে এগুলো খুব কমন। কেউ কিছু মনে করে না।’
রাহাত বলল, ‘তাও এমন দিনে দুপুরে!!!’
সফিকুল বলল, ‘হয়ত টিউশনি পালিয়ে প্রেম করছে।’
রাহাত আর কিছু বলল না। খানিক বাদে সফিকুল বলল, ‘ভাবি চল কলেজ দেখবে বলছিলে। এখন খুলে গেছে।’
রাহাত বলল, ‘হ্যা দেখব তো! চল।’
ওরা পার্ক থেকে বেরিয়ে এলো। রাহাতের মনের মধ্যে ওই ছেলে মেয়ে দুটির কথা ঘোরাফেরা করতে লাগলো। কি সুন্দর মেয়েটা। ছেলেটাও বেশ ভালো। ওদের জুরি মানাবে ভালো। ধুরর!! কি সব ভাবছে। ওসব ভাবার দরকার নেই। ভাবার জন্যে ওদের অভিভাবকরা আছেন। তারা ভাববেন। কিন্তু কেমন অভিভাবক যে ছেলে মেয়ে কি করছে খোঁজ করে না। প্রেম তো করবে কিন্তু সাথে সাথে জীবন চালাতে গেলে যা করতে হবে সেটাও তো ঠিক মত করতে হবে। নাহলে পরবর্তী জীবন সুখের হবে না। ভাবতে ভাবতে ওরা সফিকুলের সামনে চলে এলো।
সফিকুল বলল, ‘ভাবি এটা আমাদের কলেজ।’
রাহাত দেখল একটা বড় বাড়ির সামনে এসে দাঁড়িয়েছে। বড় করে গেট করা আছে। তাতে বড় বড় করে লেখা আছে নন্দলাল কলেজ। কলেজ দেখে ওর মন ভরে গেল। নিজের জীবনে খুব বড় সখ ছিল কলেজে পড়ার, সেটা হয়নি। ছাত্রী হিসেবে কোনদিন কলেজে আসতে পারে নি। কোনো দিন আগে দেখেও নি। সফিকুল এই কলেজে পড়ে সেটা ভেবে ওর খুব ভালো লাগলো। আবেগে বুকের ভিতর জলীয় বাস্প তৈরী হয়েছে। কখন যে বাস্প জমে জল হয়ে চোখ দিয়ে নেমে এসেছে টের পায় নি রাহাত। সম্বিত ফিরল সফিকুলের কোথায়।
সফিকুল ওর চোখে জল দেখে বলল, ‘ভাবি কি হয়েছে? শরীর খারাপ লাগছে? বসবে একটু?’
রাহাত লজ্জা পেয়ে চোখের জল মুছে নিল। একটু ম্লান হেসে বলল, ‘না না, আমি ঠিক আছি। কিছু খারাপ লাগছে না।’
সফিকুল বলল, ‘তাহলে কাঁদছ কেন?’
রাহাত বলল, ‘কাঁদি নি। চোখে জল এসে গেছিল। জানিস আমার কলেজে পড়ার খুব ইচ্ছা ছিল। কিন্তু সেটা আমার জোটে নি। এই প্রথম কোনো কলেজ দেখলাম। তুই এই কলেজে পরিস ভেবেই আমার গর্ব হচ্ছিল। তাতেই হয়ত চোখে জল এসে গেছে। তুই ওসব বুঝবি না।’
সফিকুল বলল, ‘কি যে কর না!! কত হাজার হাজার ছেলেমেয়ে পড়ে এই কলেজে। এতে গর্ব করার কি আছে?’
রাহাত বলল, ‘নিজের কেউ তো তারা নয়।’
জটিল উত্তর পেয়ে সফিকুল আর কিছু বলল না। সফিকুল প্রসঙ্গ পাল্টে বলল, ‘ভিতরে যাবে?’
রাহাত বলল, ‘হ্যা যাব তো। এত দূর এলাম আর ভিতরটা দেখব না?’
সফিকুল বলল, ‘তাহলে চল।’
ওটা গেট পার করে ভিতরে ঢুকলো। সফিকুল বুঝতে পারছে না ভাবিকে কি দেখাবে। দেখার যে কি আছে সেটা ও বুঝতে পারে না। সেইতো ক্লাসরুম, স্টাফ রুম, প্রফেসর রুম আর ল্যাব। ভিতরে ঢুকে ওরা দোতলায় উঠে গেল। কলেজে ছাত্রছাত্রী এখনো আসে নি। দুইচার জন এসে গুলতানি মারছে। একটা রুম খোলা ছিল। ওটা কলেজের গ্যালারী। সেটা ফাঁকা। ওটার ভিতরে দুইজন ঢুকলো।
সফিকুল বলল, ‘এখানে আমাদের পাসের ক্লাস হয়।’
রাহাত দেখল ঘরটা অনেক বড়। দুইসারি বেঞ্চ পাতা আছে। মাঝে দিয়ে রাস্তা। প্রথম বেঞ্চের থেকে পরের বেঞ্চের উচ্চতা বেশি। শেষের বেঞ্চ অনেক উচুতে। কলেজে এমনভাবে বেঞ্চ পাতা থাকত না। শেষের বেঞ্চের ছেলেরাও ঠিক মত শিক্ষককে ঠিক মত দেখতে পাবে। সামনের বেঞ্চের ছেলেদের জন্যে কোনো অসুবিধা হবে না। রাহাত ভাবলো বেশ ভালো ব্যবস্থা।
রাহাত মুখে বলল, ‘খুব সুন্দর। আমিও যদি এখানের ছাত্র হতাম!’
সফিকুল বলল, ‘বেশ হত। আমরা একসাথে কলেজে আসতাম আর আমি তোমার পাশে বসতাম।’
রাহাত বলল, ‘ছেলেমেয়ে পাশাপাশি বসে নাকি?’
সফিকুল বলল, ‘বসে তো, সব সময় নাহলেও মাঝে মধ্যে বসে।’
রাহাত বলল, ‘বেশ মজা তো!’
সফিকুল বলল, ‘হ্যা তা বটে।’
ওরা বেরিয়ে এলো। সফিকুল ওদের ডিপার্টমেন্টের সামনে এলো। ডিপার্টমেন্ট বন্ধ। রাহাতকে বলল, ‘এটা আমাদের ডিপার্টমেন্ট। এখানেই আমাদের অনার্সের ক্লাস হয় আর প্র্যাকটিকাল ক্লাস হয়। বন্ধ নাহলেও তোমাকে ভিতরে ঢুকিয়ে দেখাতে পারতাম না। বুঝছ তো?’
রাহাত বলল, ‘হ্যা বুঝেছি।’
বাইরে থেকে দেখে রাহাত বলল, ‘ঠিক আছে চল এবারে যাই।’
সফিকুল বলল, ‘চল।’
রাহাত আর সফিকুল বাইরে চলে এলো। রাহাতের চোখে মুখে একটা অদ্ভুত ভালো লাগা। একটা অদ্ভুত তৃপ্তি। যেন কত দিনের না দেখা বা স্বপ্নের রাজকুমারকে দেখে এলো। রাহাতের মুখে খুশি দেখে সফিকুল আশ্চর্য্য হলো না। গত কয়েক দিন অর সাথে গভীরভাবে মিশে দেখেছে যে ও মধ্যে একটা সহজ ভালবাসা আছে পড়াশোনার প্রতি। সেটাই খুব আশ্চর্যের। কারণ কোনো কারনই থাকতে পারে না এক গ্রাম্য বধূর পড়াশোনার প্রতি এত ভালবাসা। অবশ্য আল্লার তৈরী সব কিছু অনায়াসে ব্যাখা করা সম্ভব না। তাই সে চেষ্টাও করে না সফিকুল। প্রায় কিছুই না পাওয়া রাহাতকে এক ঝলক আনন্দের রশ্মি দেখিয়ে সফিকুল নিজেও আনন্দ পেল। আর এত সাধারণ একটা কলেজ দেখে যে কেউ এত খুশি হতে পারে সফিকুল সেটা আগে বুঝতে পারে নি। সফিকুলকে পড়ার জন্যে যে উত্সাহ বা চাপ দিত সেটা অন্তত কোনো ভড়ং নয়, একান্তই ভিতরের তাগিদে। সফিকুল অবাক হয় এটা ভেবে যে রাহাত ভাবি অর মধ্যে এমন কি দেখল যার জন্যে ওকে আবার এই পড়াশোনার রাজপথে এনে ফেলল। নিজের কাছে স্বীকার করতে সফিকুলের কোনো লজ্জা করে না যে রাহাত ভাবি গত কয়েক দিনে অর মধ্যে অনেক পরিবর্তন এনে দিয়েছে। পড়াশুনা গ্রহ থেকে ও ক্রমেই দূরে সরে সরে যাচ্ছিল। আল্লার অসীম করুনায় রাহাত ভাবি সঠিক সময়ে ওকে আবার সেই গ্রহে ফেরত এনেছে। এখন ওর পড়তে ভালো লাগে। সেটা রাহাত ভাবির ঘরে বসে পড়লে তো কোনো কথায় নেই। নিজের বিষয়ের প্রেমে পড়ে গেছে। জুলজি পড়ে আনন্দ পায়। মনে মনে রাহাত ভাবিকে ধন্যবাদ না দিয়ে পারে না। আর সেই রাহাত ভাবিকে নিজের কলেজ দেখিয়ে ধন্যবাদ দেওয়াটা হয়ে গেল।
কলেজ থেকে বেরোতেই ওদের সাথে ডালিয়ার দেখা হলো। সফিকুল দেখেছে যে শহরের হলেও এই মেয়েটি ওর সাথে বেশ যেচে কথা বলে। হয়ত মেয়েটি . বলেই। দেখা হতেই একগাল হেসে ডালিয়া সফিকুলকে বলল, ‘কি রে তুই এখানে? আজ তো কোনো ক্লাস হবে না।’
সফিকুল বলল, ‘আমি ক্লাস করতে আসিনি।’
ডালিয়া-তাহলে?
সফিকুল-এ হলো রাহাত ভাবি। ডাক্তার দেখাতে এসেছি।
ডালিয়া- ডাক্তার দেখাতে এসেছিস তো এখানে কি করছিস?
সফিকুল- ভাবির কলেজ দেখার সখ। সেটা হলো। আর ভাবি একটু বাথরুমে যাবে, তাই আর কি?
রাহাত ভাবলো সফিকুল মিথ্যা কেন বলছে। যাই হোক কোনো কারণ নিশ্চয় থাকবে। চুপ করে ওর কথা মত মনে মনে তৈরী হলো।
ডালিয়া বলল, ‘ভাবি চল আমার সাথে। সফিকুল তুই এখানে দাঁড়িয়ে থাক, আমরা আসছি একটু পর।’
সফিকুল বলল, ‘ওকে।’
রাহাতকে নিয়ে ডালিয়া আবার কলেজের ভিতরে গেল।
রাহাত বলল, ‘তোমার নাম কি?’
ডালিয়া বলল, ‘ডালিয়া। আমি সফিকুলের সাথে পড়ি। আর টিউশনিও একজায়গাতে যাই। ও আমার প্র্যাক্টিকালের পার্টনার।’
রাহাত বলল, ‘তোমার নামটা খুব সুন্দর। ও তাহলে তোমার খুব ভালো বন্ধু?’
ডালিয়া বলল, ‘জানি না। ও আমার ভালো বন্ধু, কিন্তু আমি ওর ভালো বন্ধু কিনা সেটা বুঝতে পারি না। আমি কোনো কিছু বললে এককান দিয়ে ঢোকায় আর অন্য কান দিয়ে বের করে দেয়। মাথার মধ্যে কিছু নেয় না।’
রাহাত বলল, ‘ও ঐরকমই। পড়াশুনা কেমন করে সফিক?’
ডালিয়া জবাব দিল, ‘কোনো ঠিক নেই। আগে মনে হত ঢিলাঢালা চলছে, এখন মনে হচ্ছে পড়াশুনা করছে। টিউশনি বা কলেজেও ভালো রেসপন্স করে। এমনিতে ওর খুব ভালো ছেলে, পড়াশুনাতেও আর আচার আচরনেও।’
রাহাত সহসা বলে উঠলো, ‘তোমার বয়ফ্রেন্ড আছে?’
ডালিয়া এমন সল্পপরিচিত মহিলার কাছে থেকে প্রশ্নটা শুনে থমকে গেল। উত্তেজিত না হয়ে শান্ত স্বরে বলল, ‘না, কেন বলত?’
রাহাত বলল, ‘না এমনি।’
ওদের ডিপার্টমেন্টের সামনে চলে এলো। ডিপার্টমেন্ট খুলে গেছে। ভিতরে থেকে একটা চাবি এনে বাথরুমের দরজা খুলে দিল ডালিয়া। রাহাত ভিতরে ঢুকে প্রস্রাব করে চলে এলো। ওরা আবার বাইরের দিকে বেরোতে থাকলো।
রাহাত বলল, ‘ডালিয়া সফিকুলকে একটু দেখে রেখো। এমনিতে গ্রামের বাইরে ও একা। হয়ত কারোর সাথে মিশতে সময় লাগে।’
ডালিয়া বলল, ‘তুমি চিন্তা কর না ভাবি। কলেজে কোনো অসুবিধা হয় না। তাছাড়া আমার বাড়ি এখানে। আমি তো আছি।’
বাইরে বেরোলে দেখল সফিকুল একলা দাঁড়িয়ে ছিল।
রাহাত আর সফিকুল চলে যাবার আগে ডালিয়া বলল, ‘কাল টিউশনি আছে মনে আছে তো?’
সফিকুল বলল, ‘আছে।’
ডালিয়া বলল, ‘আমার নোটটা নিয়ে আসিস।’
সফিকুল বলল, ‘ঠিক আছে। আজ চলি।’
ওরা এগিয়ে গেল। রাহাত একবার পিছন ফিরে দেখল ডালিয়া ওদের দিকে তাকিয়ে আছে।
রাহাত বলল, ‘আমাকে বাথরুম করতে পাঠালি কেন?’
সফিকুল বলল, ‘শুধু কলেজ দেখতে এসেছি শুনলে আমাকে পরে খ্যাপাত। এমনিতেই কলেজ আসি না। তাছাড়া আমরা অনেক আগে বাড়ি থেকে বেরিয়েছি।’
রাহাত বলল, ‘তা ঠিক একটু পেয়েছিল বটে। মেয়েটা বেশ সুন্দর না?’
সফিকুল বলল, ‘তা হবে।’
রাহাত বলল, ‘ঠিক করে বল। ব্যবহার কি ভালো।’
সফিকুল বলল, ‘সবাই তোমার মত রাগী হলে ভালো হত?’
রাহাত-‘আমি রাগী তো বেশ! তুই আমাকে নিয়ে এলি কেন? তাছাড়া আমার কথা বলছি না। ডালিয়ার কথা বলছিলাম।’
সফিকুল-দেখো ভাবি শহরের মেয়ে। ওরা ছেলে বা মেয়ে যে কারোর সাথে সহজে মিশতে পারে। আমাদের মত ইতস্তত করে না। এতে ভালো খারাপের কিছু নেই।
রাহাত-তুই বুঝিস না ও তোকে কেয়ার করে।
সফিকুল-ধুরর ছার তো! আমাদের হাতে এখনো অনেক সময় আছে। চল এখন খেয়ে নিই। তারপর একটা সিনেমা দেখি। গরমে আর কত সময় বাইরে ঘুরব।
রাহাত-তোর কি টাকা অনেক বেশি হয়েছে? ফালতু খরচ কেন করবি?
সফিকুল-বেশি হয় নি। তাছাড়া বড় হয়ে চাকরি করব। তখন হাতে টাকা থাকবে। এখন যেটা করতে ইচ্ছে করছে সেটা তখন করতে পারব না হয়ত। তাই শুধু টাকা টাকা ভাবি না। তাছাড়া সব সময় তো তুমি সাথে থাকবে না।।
রাহাত ওর দিকে তাকালো। সামনের দিকে তাকিয়ে আছে সফিকুল। আবার সামনের দিকে তাকিয়ে ওর সমানে সমানে চলতে শুরু করলো।
একটা হোটেলে খেয়ে নিল। তারপর একটা রিক্সা করে সিনেমা হলে চলে এলো। রাহাত খুব বেশি সিনেমা হলে এসে দেখেনি। গিয়াস বিয়ের পরে বার কয়েক এনেছিল। সেটাও কোন মান্ধাতার আমলে! মনেই পরে না। ব্যালকনিতে টিকিট কাটল সফিকুল। নিচে খুব বেশি হট্টগোল। নোংরা লোকজন বেশি। উপরে এমনিতে ভিড় কম, তাছাড়া যারা আসে না হট্টগোল করে না। তাই সফিকুলের ব্যালকনি ভালো লাগে। বাংলা সিনেমা। তাও ফ্লপ। তার জন্যে ওপরে ভিড় নেই বললেই চলে। ওরা টিকিট নিয়ে ভিতরে ঢুকলো। টর্চ হাতে লোকটা ওদের সিত দেখিয়ে দিল। ফাঁকা। ২০ জন মত এসেছে। সব ছড়িয়ে ছিটিয়ে বসে আছে। ওরা বসলো পাশাপাশি। কিছু সময়ের মধ্যে সিনেমা শুরু হলো। সফিকুলের সিনেমা দেখতে বেশি ইচ্ছা নেই। হলের মধ্যে এসি লাগানো তাই ঠান্ডা। সেইজন্যে ভাবিকে নিয়ে এসেছে। সিনেমা শুরু হতেই মন দিয়ে সিনেমা দেখছে ভাবি। সফিকুল ভাবে কি যে দেখে। সবই একই লাগে। শুধু রামের জায়গায় হনুমান নায়ক জাতীয় পার্থক্য। চোখ অন্ধকারে সয়ে গেছে অনেক আগেই। বাকি দর্শকদের দেখতে লাগলো। হলে অনেক সময় পর্দার থেকে দর্শকদের দেখতে বেশি ভালো লাগে। সফিকুলের ভাগ্য ভালো। আজ ও পর্দার থেকে পর্দার সামনে বেশি আকর্ষনীয় দৃশ্য পেয়ে গেল। সামনে দুই সারি আগে একটা লোক পাশে মেয়েছেলে নিয়ে বসে আছে। সফিকুল পরিস্কার দেখতে পাচ্ছে যে লোকটা মহিলার বুকে হাত দিয়েছে। হাত তো দেওয়া নয়, যেন ঠাসছে। সফিকুল খানিক দেখার পর রাহাতকে দেখল পর্দার দিকে তাকিয়ে সব গিলছে। সফিকুল ভাবির হাত ধরে নারা দিল, তারপর চোখের ইশারা করে সামনের ওদের দেখালো। ভাবি তো হা করে ওদের দেখল। সত্যি এমন হয়!! অবাক হয়ে গেল। চোখের সামনে কাউকে এমন ভাবে মাই দলতে দেখে নি। সিনেমা দেখা ওর মাথায় উঠলো। সফিকুলের হাতটা ভাবি ধরে থাকলো। মাঝে মাঝে সিনেমা দেখছিল, কিন্তু ওদের দিক থেকে চোখ সরাতে পারে নি। সফিকুল ভাবিকে হলে মধ্যে কিছু করতে চায় না। ও ধীর স্থির হয়ে খেলতে চায়। ভাবি এখন অনেকটা ওর আয়ত্বের মধ্যে আছে। হরবর না করলে পুরোপুরি চলে আসবে। সেটার জন্যে অপেক্ষা করছে। খানিক পরে হাফ টাইম হয়ে গেল। ওরা বাইরে চলে গেল। হাফ টাইমের পর আর ফেরত এলো না। পরে হাফটা ভাবি সিনেমা দেখল। শেষ হলে ওরা ডাক্তারের চেম্বারে চলে গেল। তখনও সাড়ে তিনটে বাজে নি।
(৬ঠ পর্ব সমাপ্ত)
All the contents posted by me have been downloaded from the internet. Credit goes to the original uploaders. Anyone having any issues with pictures posted, please message for removal.