30-04-2024, 11:09 PM
(This post was last modified: 30-04-2024, 11:17 PM by Godhuli Alo. Edited 2 times in total. Edited 2 times in total.)
ছাদ থেকে ঘরে এসে মনে হচ্ছিল যেন একটা স্বপ্নের জগতে আছি। এতো দিন নিজের দিকে মনোযোগ দেবার প্রয়োজন মনে করি নি। আজ বেশ ঘটা করে ড্রেসিং টেবিলের আয়নার সামনে বসলাম। চেহারায় বয়সের ছাপ পড়ে গেছে যা হয়তো আর লুকানো যাবে না কিন্তু একটু বাড়তি লাবন্য আনাই যায় নিয়মিত রূপচর্চা করে। রূপচর্চার অভ্যেস ছিল কৈশোরে আর প্রথম যৌবনে। তারপর বিয়ের পর আর ওসবের ফুরসত পাই নি। এখন আবার নতুন করে শুরু করতে হবে মনে হচ্ছে। এরই মাঝে টের পেলাম উনি ছাদ থেকে ঘরে এসেছেন। দৌড়ে চলে গেলাম রান্নাঘরে চা বানাতে। আমি জানি ব্যায়াম সেরে এসে সে চা বানিয়ে খায়। একটু পরেই সে রান্নাঘরে এসে বলল, কি করছ? আমার একটু চা বানানোর দরকার ছিল। আমি বললাম, চা-ই বানাচ্ছি তোমার জন্য। ডাইনিং টেবিলে গিয়ে বসো। সে মুচকি হেসে বলল, এখনই এতো আদর যত্ন শুরু হয়ে গেল! এতো দিন তো নিজেই বানিয়ে খেতে হতো। আমি মৃদু হেসে বললাম, এতো দিন যা হয়েছে এখন থেকে তা আর হবে না। চায়ের সাথে টা-ও মিলবে। সেও হাসিমুখে বলল, বেশ। নিজেকে কেমন যেন রাজা রাজা মনে হচ্ছে। আমি - তুমি তো আমার রাজাই। অয়ন - আর তুমি আমার রানি। ওকে, আমি বসছি টেবিলে। কিছুক্ষণ পর ট্রেতে চা বিস্কুট সাজিয়ে ওর সামনে রাখলাম। সে আড়চোখে তাকিয়ে বলল, এখন যাও নিজেকে একটু গুছিয়ে নাও। ভার্সিটিতে যাবার আগে তোমাকে সুন্দর রুপে দেখতে চাই। আমি মুচকি হেসে বললাম, ঠিক আছে। তারপর নিজের ঘরে গিয়ে পুরনো শাড়িটা ফেলে নীল রঙের সুন্দর একটা শাড়ি পরলাম। চুলটা ভালোভাবে আচড়িয়ে সিথি করে খোঁপা বাধলাম। মুখে একটু ক্রিম আর শরীরে একটু পারফিউমও ছিটালাম। তারপর বের হয়ে দেখলাম সে চা শেষ করে শাওয়ার নিতে বাথরুমে ঢুকেছে। আমি রান্নাঘরে সকালের নাস্তা তৈরিতে লেগে গেলাম। কিছুক্ষণ পর বৌমা ঘুম থেকে উঠে রান্নাঘরে এসে বলল, একি মা, আপনি নাস্তা বানাচ্ছেন কেন? আমি হেসে বললাম, রোজ রোজ তোমাকেই কেন বানাতে হবে? বৌমা - কিন্তু আপনি তো অসুস্থ! আমি - না, আজ বেশ ভালোই লাগছে। বৌমা - হ্যা মা, আপনার চোখে মুখে একটা আনন্দের ধারা দেখতে পাচ্ছি যা আগে কখনো দেখি নি। আমি কোনো জবাব না দিয়ে শুধু মৃদু হাসলাম। মনে মনে বললাম, এতো দিন তো স্বামী কাছে ছিল না তাই মনমরা হয়ে থাকতাম। এখন তো স্বামী পাশেই আছে। নাস্তা তৈরি শেষ করে অয়নকে খেতে ডাকলাম। ও টেবিলে বসে আবার আড়চোখে আমার দিকে তাকিয়ে আস্তে করে বলল, খুব সুন্দর লাগছে কিন্তু। আমি লজ্জায় মুখ নত করলাম। এরপর আমি, চয়ন, বৌমা আর অনু মিলে নাস্তা করলাম। অয়ন ততক্ষণে ভার্সিটিতে যাবার জন্য তৈরি হচ্ছিল। আমাদের খাওয়া শেষ হবার পর অয়ন যখন ভার্সিটিতে যাবার জন্য ঘর থেকে বের হচ্ছিল তখন আমি দরজা লাগানোর অজুহাতে ওর কাছে গিয়ে বললাম, ভালো থেকো সারা দিন। খেয়াল রেখো নিজের। আর ও আস্তে করে বলল, আর তুমি সারাদিন মনে রেখো আমায়। শুনে আমি মৃদু হাসলাম আর হাত নাড়িয়ে বিদায় জানালাম। সেও হাত নাড়িয়ে চলে গেল। সারাদিন কিছুতেই আর মন বসছিল না। শুধু ওর কথাই ভাবছিলাম আর ওর ঘরে ফেরার অপেক্ষা করছিলাম।