20-06-2019, 12:02 AM
তিনটে দিন অতিবাহিত হয়ে গেছে।নির্মল মুষড়ে পড়েছে আরো বেশি করে।পোদ্দারের সাথে ফোনে কথাও বলতে চাইছে না।
অফিস থেকে ক্লান্ত হয়ে ফেরে নির্মল।মনে হচ্ছে প্রতিটা দিন তার শেষের দিনকে এগিয়ে আনছে।
মিতালি সাধারণ ঘরোয়া মেয়ে।নাই নাই করে ঊনচল্লিশে পা দিল সে।খুব মনে পড়ছে তার সেই দিনের কথা যেদিন নির্মল তাকে দেখতে এসেছিল।মিতালি তখন মাস্টার ডিগ্রিতে পড়ছে।মিতালির বাবা ছিলেন কলেজ মাস্টার।মিতালীর ছোট বোন চৈতালি বাবার অমতে এক পাঞ্জাবি ছেলেকে বিয়ে করে পালিয়ে যায়।সেদিন থেকে এখনো মিতালির ছোট বোনের সাথে যোগাযোগ নেই তার।
মিতালির গায়ের রঙ ফর্সা।তার বাবা মা দুজনেই ফর্সা ছিল।যখন নির্মল দেখতে আসে মিতালি তখন বাইশ তেইশ।ছিপছিপে চেহারা।মিষ্টি হাসির গোল মুখটায় একটা ঘরোয়া ভাব ছিল তার মধ্যে।মিতালির মা অসুস্থ হয়ে যাওয়ায় বড় মেয়ে হিসেবে পড়াশোনার পাশাপাশি বাড়ীর সব কাজ জানত সে।মিতালির রূপ ও স্নিগ্ধতায় মুগ্ধ হয়ে কলেজে পড়বার সময় এক দুজন প্রপোজও করেছিল তাকে।মিতালি ছোট বোনের মত কখনোই প্রেমের সম্পর্কে জড়ায়নি।
নির্মলকে যখন মিতালি প্রথম দেখে নির্মলের পরনে একটা আকাশনীল শার্ট আর কালো প্যান্ট।সবে চাকরী পেয়েছে নির্মল।চোখে চশমা।গায়ের রঙ খুব ফর্সা নয়।ফর্সা ছেলে মিতালির পছন্দ নয়।নির্মলের মা তখন অসুস্থ।বিয়েটা খুব দ্রুতই হয়ে গেল।
বলতে বলতে ষোলটা বছর নির্মল আর মিতালি কাটিয়ে দিয়েছে।সামনের বছর সিন্টু মাধ্যমিক দেবে।এখন নির্মল আর মিতালির চেহারাতেও অনেক পরিবর্তন।নির্মল চুয়াল্লিশ, মিতালি ঊনচল্লিশ।নির্মলের চুল পাতলা হয়ে গেছে।পেটে একটা ভুঁড়িও হয়েছে।সবচয়ে পরিবর্তন হয়েছে মিতালির।মুখের শ্রী সেই আগের মত থাকলেও।তার শরীর আর সেই ছিপছিপে নেই।আবার মুটকিও হয়ে যায়নি।বরং সবকিছু পরিণত হয়েছে।কোমর, পেট, হাতের মাসলস সবজায়গায় মাংস জমলেও তা পরিণত।অতিরিক্ত নয়।সামান্য চর্বি যুক্ত হয়েছে পেটে।গায়ের ফর্সা রঙটা আগের মত উজ্জ্বল না থাকলেও এখনও ফর্সা স্নিগ্ধতা ভাবটা আছে।সুশ্রী মুখের মিষ্টি হাসি, ঘরোয়া গৃহিনীসুলভ সাজগোজ, মাতৃত্ব সব কিছু মিলে সে একজন চল্লিশ ছুঁই ছুঁই সাধারণ ঘরোয়া গৃহবধূ।বাইরে বেরোলে সাধারণ তাঁত কিংবা টেরিকটের শাড়ি পরে।কোনো অনুষ্ঠান থাকলেই সিল্ক বা অন্যকিছু পরে।বাড়ীতে শাড়ি, নাইটি দুটোতেই অভ্যস্ত।
মিতালি সারা জীবনে দু একটি প্রেমের প্রস্তাব ছাড়া কোনো খারাপ প্রস্তাব পায়নি।মাঝে মধ্যেই সে বাজার যায়।পরিচিত দোকানদারেরা তাকে শ্রদ্ধা করে। তার মধ্যে উগ্রতাহীন সাধারণত্ব তাকে সম্মান এনে দেয়। এই ঊনচল্লিশ বছর বয়সে সে সুন্দরী হলেও যুবতী নারীদের মত আকর্ষণীয় নিশ্চই নয়।চৌদ্দ বছরের একটা ছেলের মা সে।তার দেহে স্বাভাবিক রূপে সেই আগের শিথিলতা নেই ।সিন্টুকে ছোটবেলায় স্তন দিতে দিতে তার স্তনের শিথিলতা নস্ট হয়েছে।যদিও মিতালীর স্তন দুটি বেশ বড়, তাতে বরং বুকের ভারে সামান্য হলেও ঝোলা।স্তনের বোঁটাগুলিও থেবড়ে গেছে। এমন নোংরা প্রস্তাব তার মত শিক্ষিত রুচিশীলা সাধারণ গৃহিনীকে পেতে হবে সে ভাবতেই পারেনি।মানুষ যে কত বিকৃতকামী সে আগে জানতো না।
বাইরে বৃষ্টি হচ্ছে ঝিরঝির কর।প্রচন্ড গরমের পর স্বস্তির বৃষ্টি।মিতালি পাশ ফিরে নির্মলের দিকে তাকালো।নির্মল চিৎ হয়ে শুয়ে আছে।
---তুমি ঘুমোওনি? নির্মল মিতালির দিকে পাশ ফিরল।
মিতালিড় হুশ ফিরল।বলল---তুমি ওষুধ খেয়েছ?
---হুম্ম খেয়েছি।তবু ঘুম আসছে না।সিন্টুকে তুমি দেখো মিতু।
----তুমি আর একবার লোকটার সাথে কথা বলে দেখো না।
---কোন লোকটা? ওই জয়নাল মন্ডল? জানোয়ারটার সাথে আর কোনো কথা এরপরে কি বলা যায়?
----কিছু তো করার নেই।আমাদের সম্যসা কি এভাবেই ভেঙে যাবে?
---অনেক ভেবেছি মিতু।আর কোনো বিকল্প নেই।আমি হেরে গেলাম।ভেঙে পড়ল নির্মল।
মিতালিও ফুঁপিয়ে কেঁদে উঠল।বলল---আমি তোমাকে ছেড়ে যেতে দেব না।ওই লোকটাকে বলো আমি রাজি।
---কি রাজি মিতালি?তোমার কি মাথা খারাপ হল?
মিতালি তখনও ফুঁপিয়ে যাচ্ছে---আমি তোমাকে জেলে যেতে দেব না।আমাদের ছেলেটার ভবিষৎত কি হবে?
---হেরে যেওনা মিতু।আমি হেরে গেছি বলে তুমি কেন হারবে? তোমাকে সামলে নিতে হবে।
---না আমি পারব না।আমি তোমাকে ছেড়ে বাঁচবো না।প্লিজ তুমি ওই জানোয়ারটার কাছে আমাকে সঁপে দাও।কি আছে শরীরে? আমার তোমার ভালোবাসা, আমাদের সংসার, আমাদের ছেলের ভবিষ্যৎ এর চেয়ে কি বড় এই শরীর?
----মিতু ???
----হ্যা।আর কোনো রাস্তা নেই আমাদের।
----আমি লোকটাকে খুন করে ফেলব মিতু!
---লক্ষীটি ছেলে মানুষী করো না।সব ঠিক হয়ে যাবে।মাত্র দুটি মাসের ত্যাগ আমাদের জীবনের বিপদ রোধ করতে পারে।
---ইস! আমি কি করব মিতু? আমি কি করব? পুরুষ মানুষ হয়েও নির্মল ফুঁপিয়ে উঠল।মিতালি নিজে নির্মলকে এর আগে একবার কাঁদতে দেখেছিল যেদিন তার শাশুড়ি মারা যায়।
নির্মলের বুকে মুখ লুকোল মিতালি।---মাত্র দুটি মাস লক্ষীটি। মাত্র দুটি মাস।পরে আমরা ভুলে যাবো আমাদের জীবনের এই দুটি মাস।
----------
সকালে খাবার রেডি করছিল মিতালি।সিন্টু বলল---মা আমার টিফিন বাক্স কোথায়?
মিতালি ছেলের টিফিন বাক্স গুছিয়ে বলল---জল বেশি করে খাস।সিন্টু বেরিয়ে যেতে মিতালি ডাইনিং টেবিলে নির্মল যেখানে খাচ্ছে তার পাশে এসে বসল।
----আজ যাচ্ছ তো?
----মিতালি সত্যি কি সম্ভব?
----আর কোনো রাস্তা আছে?
----নাঃ নেই।
------------
স্টেশনের কাছে এসে এদিক ওদিক খুঁজছিল নির্মল।কয়েকজন কুলি একটা ঠেলা গাড়ী ঘিরে গল্প করছে।নির্মল সেদিকে এগিয়ে গিয়ে বলল----আপনারা জয়নাল মন্ডল কোথায় বলতে পারবেন?
একটা অল্প বয়সী বিহারি ছেলে বলল-- জয়নাল চাচা? উধার যাইয়ে মিল যায়েগা।
নির্মল প্লাটফর্ম ধরে এগিয়ে গেল।পেছনের দিকে পরিত্যাক্ত ট্রেনগুলো পড়ে আছে।দু চারটে কুলি কি নিয়ে নিজেদের মধ্যে ঝগড়া, গালিগালাচ করছে।তাদের মাঝে সবচেয়ে তাগড়া লম্বা লোকটাকে চেনা সহজ।
নির্মল ডাকদিল---জয়নাল?
লোকটা ঘুরে পড়তেই নির্মলের ভুল ভাঙলো।জয়নালের মতই তাগড়া বিরাট তামাটে চেহারার লোকটি আসলে জয়নাল নয়।
---কাকে চাচ্ছেন বাবু?
----ওঃ নাঃ।আমি আসলে জয়নাল মন্ডলকে খুঁজছি।
----ও বলেন।আমি তার ভাই মইনুল।
নির্মল বলল---না ওর সঙ্গে একটু দরকার আছে।
----তবে খাড়া হন।ডাকছি।
কিছুক্ষন পরে খইনি ডলতে ডলতে জয়নাল এলো।কি বিচ্ছিরি লোকটা।যেন প্রাগৈতিহাসিক দানব।নোংরা লুঙ্গি।ময়লা উস্কখুস্ক কাঁচাপাকা চুল।
----আরে বাবুসাহেব বলেন?
----আপনি নিশ্চই বুঝতে পারছেন কি জন্য এসেছি।রুক্ষ গলায় বলল নিখিল।
----তার মানে আপনার বিবি দু মাসের লগে আমার বিবি।বিচ্ছিরি ভাবে কথাটা বলল লোকটা।হলদে দাঁতগুলো বের কিরে হাসি হাসি ভাব।
লোকটার সাথে আর কথা বলতে ভালো লাগছিল না নির্মলের।অল্প কথা সেরে অফিসে ফিরল সে।কোনো ভাবেই কাজে মন বসছিল না তার।
-------
---সিন্টু আমি দু মাসের জন্য বাইরে যাবো।তুই বাবার সাথে থাকবি।পড়াশোনায় গাফিলতি করবি না।
----কোথায় যাবে মা?
-----ওই যে আমার বান্ধবী দিল্লিতে থাকে।লীনা মাসি।ওদের বাড়ী যাবো।পরীক্ষা ভালো দিলে তোকেও নিয়ে যাবো কেমন।
সকাল থেকেই কেমন গম্ভীর হয়ে আছে নির্মল।মিতালি স্নানে গেল।একটা বেগুনি রঙের তাঁত শাড়ি পরল।তার সাথে বেগুনি ব্লাউজ।মিতালির ফর্সা গায়ে বেশ মানিয়েছে।গলায় সবসময় পরে থাকা পাতলা একটা সোনার চেন।কপালে লাল টিপ, সিঁদুর, শাঁখা-পোলা।ব্যাগে কয়েকটা নাইটি আর কয়েকটা শাড়ি নিয়েছে মিতালি।আর আনুষঙ্গিক জিনিস পত্র।
নির্মল ট্রেনে তুলে দিল নিজে।নদীয়ার যে স্টেশনে নামবে মিতালি সেখানে জয়নাল অপেক্ষা করবে।ট্রেন থেকে যখন নামলো মিতালি ভিড়ে ঠাসা ট্রেনে তখন হাল্কা হয়ে গেছে। স্টেশনে নেমে এদিক ওদিক দেখছিল সে।দূর থেকে ভয়ঙ্কর চেহারার দানবীয় লোকটাকে চিনতে ভুল হল না তার।লোকটা এসে বলল---চলেন চলেন।
লোকটার পিছু পিছু হাঁটছে মিতালি।জয়নালের ছায়াটা মিতালির গায়ে পড়ছে।ভীষন রৌদ্র।মিতালি সাধারণ বাঙালি মেয়েদের উচ্চতার।এই ছ ফুট দু ইঞ্চির লোকটার কাছে সে পুতুল।সে ভয় সিঁটিয়ে হাঁটছিল।আগামী দুই মাস এই লোকটাকে তাকে ;., করবে!
(চলবে)
অফিস থেকে ক্লান্ত হয়ে ফেরে নির্মল।মনে হচ্ছে প্রতিটা দিন তার শেষের দিনকে এগিয়ে আনছে।
মিতালি সাধারণ ঘরোয়া মেয়ে।নাই নাই করে ঊনচল্লিশে পা দিল সে।খুব মনে পড়ছে তার সেই দিনের কথা যেদিন নির্মল তাকে দেখতে এসেছিল।মিতালি তখন মাস্টার ডিগ্রিতে পড়ছে।মিতালির বাবা ছিলেন কলেজ মাস্টার।মিতালীর ছোট বোন চৈতালি বাবার অমতে এক পাঞ্জাবি ছেলেকে বিয়ে করে পালিয়ে যায়।সেদিন থেকে এখনো মিতালির ছোট বোনের সাথে যোগাযোগ নেই তার।
মিতালির গায়ের রঙ ফর্সা।তার বাবা মা দুজনেই ফর্সা ছিল।যখন নির্মল দেখতে আসে মিতালি তখন বাইশ তেইশ।ছিপছিপে চেহারা।মিষ্টি হাসির গোল মুখটায় একটা ঘরোয়া ভাব ছিল তার মধ্যে।মিতালির মা অসুস্থ হয়ে যাওয়ায় বড় মেয়ে হিসেবে পড়াশোনার পাশাপাশি বাড়ীর সব কাজ জানত সে।মিতালির রূপ ও স্নিগ্ধতায় মুগ্ধ হয়ে কলেজে পড়বার সময় এক দুজন প্রপোজও করেছিল তাকে।মিতালি ছোট বোনের মত কখনোই প্রেমের সম্পর্কে জড়ায়নি।
নির্মলকে যখন মিতালি প্রথম দেখে নির্মলের পরনে একটা আকাশনীল শার্ট আর কালো প্যান্ট।সবে চাকরী পেয়েছে নির্মল।চোখে চশমা।গায়ের রঙ খুব ফর্সা নয়।ফর্সা ছেলে মিতালির পছন্দ নয়।নির্মলের মা তখন অসুস্থ।বিয়েটা খুব দ্রুতই হয়ে গেল।
বলতে বলতে ষোলটা বছর নির্মল আর মিতালি কাটিয়ে দিয়েছে।সামনের বছর সিন্টু মাধ্যমিক দেবে।এখন নির্মল আর মিতালির চেহারাতেও অনেক পরিবর্তন।নির্মল চুয়াল্লিশ, মিতালি ঊনচল্লিশ।নির্মলের চুল পাতলা হয়ে গেছে।পেটে একটা ভুঁড়িও হয়েছে।সবচয়ে পরিবর্তন হয়েছে মিতালির।মুখের শ্রী সেই আগের মত থাকলেও।তার শরীর আর সেই ছিপছিপে নেই।আবার মুটকিও হয়ে যায়নি।বরং সবকিছু পরিণত হয়েছে।কোমর, পেট, হাতের মাসলস সবজায়গায় মাংস জমলেও তা পরিণত।অতিরিক্ত নয়।সামান্য চর্বি যুক্ত হয়েছে পেটে।গায়ের ফর্সা রঙটা আগের মত উজ্জ্বল না থাকলেও এখনও ফর্সা স্নিগ্ধতা ভাবটা আছে।সুশ্রী মুখের মিষ্টি হাসি, ঘরোয়া গৃহিনীসুলভ সাজগোজ, মাতৃত্ব সব কিছু মিলে সে একজন চল্লিশ ছুঁই ছুঁই সাধারণ ঘরোয়া গৃহবধূ।বাইরে বেরোলে সাধারণ তাঁত কিংবা টেরিকটের শাড়ি পরে।কোনো অনুষ্ঠান থাকলেই সিল্ক বা অন্যকিছু পরে।বাড়ীতে শাড়ি, নাইটি দুটোতেই অভ্যস্ত।
মিতালি সারা জীবনে দু একটি প্রেমের প্রস্তাব ছাড়া কোনো খারাপ প্রস্তাব পায়নি।মাঝে মধ্যেই সে বাজার যায়।পরিচিত দোকানদারেরা তাকে শ্রদ্ধা করে। তার মধ্যে উগ্রতাহীন সাধারণত্ব তাকে সম্মান এনে দেয়। এই ঊনচল্লিশ বছর বয়সে সে সুন্দরী হলেও যুবতী নারীদের মত আকর্ষণীয় নিশ্চই নয়।চৌদ্দ বছরের একটা ছেলের মা সে।তার দেহে স্বাভাবিক রূপে সেই আগের শিথিলতা নেই ।সিন্টুকে ছোটবেলায় স্তন দিতে দিতে তার স্তনের শিথিলতা নস্ট হয়েছে।যদিও মিতালীর স্তন দুটি বেশ বড়, তাতে বরং বুকের ভারে সামান্য হলেও ঝোলা।স্তনের বোঁটাগুলিও থেবড়ে গেছে। এমন নোংরা প্রস্তাব তার মত শিক্ষিত রুচিশীলা সাধারণ গৃহিনীকে পেতে হবে সে ভাবতেই পারেনি।মানুষ যে কত বিকৃতকামী সে আগে জানতো না।
বাইরে বৃষ্টি হচ্ছে ঝিরঝির কর।প্রচন্ড গরমের পর স্বস্তির বৃষ্টি।মিতালি পাশ ফিরে নির্মলের দিকে তাকালো।নির্মল চিৎ হয়ে শুয়ে আছে।
---তুমি ঘুমোওনি? নির্মল মিতালির দিকে পাশ ফিরল।
মিতালিড় হুশ ফিরল।বলল---তুমি ওষুধ খেয়েছ?
---হুম্ম খেয়েছি।তবু ঘুম আসছে না।সিন্টুকে তুমি দেখো মিতু।
----তুমি আর একবার লোকটার সাথে কথা বলে দেখো না।
---কোন লোকটা? ওই জয়নাল মন্ডল? জানোয়ারটার সাথে আর কোনো কথা এরপরে কি বলা যায়?
----কিছু তো করার নেই।আমাদের সম্যসা কি এভাবেই ভেঙে যাবে?
---অনেক ভেবেছি মিতু।আর কোনো বিকল্প নেই।আমি হেরে গেলাম।ভেঙে পড়ল নির্মল।
মিতালিও ফুঁপিয়ে কেঁদে উঠল।বলল---আমি তোমাকে ছেড়ে যেতে দেব না।ওই লোকটাকে বলো আমি রাজি।
---কি রাজি মিতালি?তোমার কি মাথা খারাপ হল?
মিতালি তখনও ফুঁপিয়ে যাচ্ছে---আমি তোমাকে জেলে যেতে দেব না।আমাদের ছেলেটার ভবিষৎত কি হবে?
---হেরে যেওনা মিতু।আমি হেরে গেছি বলে তুমি কেন হারবে? তোমাকে সামলে নিতে হবে।
---না আমি পারব না।আমি তোমাকে ছেড়ে বাঁচবো না।প্লিজ তুমি ওই জানোয়ারটার কাছে আমাকে সঁপে দাও।কি আছে শরীরে? আমার তোমার ভালোবাসা, আমাদের সংসার, আমাদের ছেলের ভবিষ্যৎ এর চেয়ে কি বড় এই শরীর?
----মিতু ???
----হ্যা।আর কোনো রাস্তা নেই আমাদের।
----আমি লোকটাকে খুন করে ফেলব মিতু!
---লক্ষীটি ছেলে মানুষী করো না।সব ঠিক হয়ে যাবে।মাত্র দুটি মাসের ত্যাগ আমাদের জীবনের বিপদ রোধ করতে পারে।
---ইস! আমি কি করব মিতু? আমি কি করব? পুরুষ মানুষ হয়েও নির্মল ফুঁপিয়ে উঠল।মিতালি নিজে নির্মলকে এর আগে একবার কাঁদতে দেখেছিল যেদিন তার শাশুড়ি মারা যায়।
নির্মলের বুকে মুখ লুকোল মিতালি।---মাত্র দুটি মাস লক্ষীটি। মাত্র দুটি মাস।পরে আমরা ভুলে যাবো আমাদের জীবনের এই দুটি মাস।
----------
সকালে খাবার রেডি করছিল মিতালি।সিন্টু বলল---মা আমার টিফিন বাক্স কোথায়?
মিতালি ছেলের টিফিন বাক্স গুছিয়ে বলল---জল বেশি করে খাস।সিন্টু বেরিয়ে যেতে মিতালি ডাইনিং টেবিলে নির্মল যেখানে খাচ্ছে তার পাশে এসে বসল।
----আজ যাচ্ছ তো?
----মিতালি সত্যি কি সম্ভব?
----আর কোনো রাস্তা আছে?
----নাঃ নেই।
------------
স্টেশনের কাছে এসে এদিক ওদিক খুঁজছিল নির্মল।কয়েকজন কুলি একটা ঠেলা গাড়ী ঘিরে গল্প করছে।নির্মল সেদিকে এগিয়ে গিয়ে বলল----আপনারা জয়নাল মন্ডল কোথায় বলতে পারবেন?
একটা অল্প বয়সী বিহারি ছেলে বলল-- জয়নাল চাচা? উধার যাইয়ে মিল যায়েগা।
নির্মল প্লাটফর্ম ধরে এগিয়ে গেল।পেছনের দিকে পরিত্যাক্ত ট্রেনগুলো পড়ে আছে।দু চারটে কুলি কি নিয়ে নিজেদের মধ্যে ঝগড়া, গালিগালাচ করছে।তাদের মাঝে সবচেয়ে তাগড়া লম্বা লোকটাকে চেনা সহজ।
নির্মল ডাকদিল---জয়নাল?
লোকটা ঘুরে পড়তেই নির্মলের ভুল ভাঙলো।জয়নালের মতই তাগড়া বিরাট তামাটে চেহারার লোকটি আসলে জয়নাল নয়।
---কাকে চাচ্ছেন বাবু?
----ওঃ নাঃ।আমি আসলে জয়নাল মন্ডলকে খুঁজছি।
----ও বলেন।আমি তার ভাই মইনুল।
নির্মল বলল---না ওর সঙ্গে একটু দরকার আছে।
----তবে খাড়া হন।ডাকছি।
কিছুক্ষন পরে খইনি ডলতে ডলতে জয়নাল এলো।কি বিচ্ছিরি লোকটা।যেন প্রাগৈতিহাসিক দানব।নোংরা লুঙ্গি।ময়লা উস্কখুস্ক কাঁচাপাকা চুল।
----আরে বাবুসাহেব বলেন?
----আপনি নিশ্চই বুঝতে পারছেন কি জন্য এসেছি।রুক্ষ গলায় বলল নিখিল।
----তার মানে আপনার বিবি দু মাসের লগে আমার বিবি।বিচ্ছিরি ভাবে কথাটা বলল লোকটা।হলদে দাঁতগুলো বের কিরে হাসি হাসি ভাব।
লোকটার সাথে আর কথা বলতে ভালো লাগছিল না নির্মলের।অল্প কথা সেরে অফিসে ফিরল সে।কোনো ভাবেই কাজে মন বসছিল না তার।
-------
---সিন্টু আমি দু মাসের জন্য বাইরে যাবো।তুই বাবার সাথে থাকবি।পড়াশোনায় গাফিলতি করবি না।
----কোথায় যাবে মা?
-----ওই যে আমার বান্ধবী দিল্লিতে থাকে।লীনা মাসি।ওদের বাড়ী যাবো।পরীক্ষা ভালো দিলে তোকেও নিয়ে যাবো কেমন।
সকাল থেকেই কেমন গম্ভীর হয়ে আছে নির্মল।মিতালি স্নানে গেল।একটা বেগুনি রঙের তাঁত শাড়ি পরল।তার সাথে বেগুনি ব্লাউজ।মিতালির ফর্সা গায়ে বেশ মানিয়েছে।গলায় সবসময় পরে থাকা পাতলা একটা সোনার চেন।কপালে লাল টিপ, সিঁদুর, শাঁখা-পোলা।ব্যাগে কয়েকটা নাইটি আর কয়েকটা শাড়ি নিয়েছে মিতালি।আর আনুষঙ্গিক জিনিস পত্র।
নির্মল ট্রেনে তুলে দিল নিজে।নদীয়ার যে স্টেশনে নামবে মিতালি সেখানে জয়নাল অপেক্ষা করবে।ট্রেন থেকে যখন নামলো মিতালি ভিড়ে ঠাসা ট্রেনে তখন হাল্কা হয়ে গেছে। স্টেশনে নেমে এদিক ওদিক দেখছিল সে।দূর থেকে ভয়ঙ্কর চেহারার দানবীয় লোকটাকে চিনতে ভুল হল না তার।লোকটা এসে বলল---চলেন চলেন।
লোকটার পিছু পিছু হাঁটছে মিতালি।জয়নালের ছায়াটা মিতালির গায়ে পড়ছে।ভীষন রৌদ্র।মিতালি সাধারণ বাঙালি মেয়েদের উচ্চতার।এই ছ ফুট দু ইঞ্চির লোকটার কাছে সে পুতুল।সে ভয় সিঁটিয়ে হাঁটছিল।আগামী দুই মাস এই লোকটাকে তাকে ;., করবে!
(চলবে)