23-04-2024, 04:16 PM
চতুর্থ পরিচ্ছেদ
ভোরের আলো ফুটি ফুটি করতে আরণ্যকের ঘুম ভেঙ্গে গেল।চোখ মেলে নজরে পড়ে দু-পাশের তাকে সাজানো বিভিন্ন জার্ণাল।কোথায় আছে উপলব্ধি হতে ধড়ফড়িয়ে উঠে পড়ে চোখেমুখে জল দিয়ে দোকানের ঝাপ তুলে বাইরে এসে বসল।কিছুক্ষণ পর একটা ভ্যানগাড়ী দোকানের সামনে এসে দাড়াল।কাগজ এসেছে আরণ্যকের বুঝতে অসুবিধে হয়না।সে এগিয়ে গেল।ভ্যান হতে দুজন লোক নেমে সংবাদ পত্রের কয়েকটা গাঁটরি নামিয়ে দিয়ে চালান এগিয়ে দিল।আরণ্যক স্বাক্ষর করে দিতে এক কপি ছিড়ে তার হাতে দিয়ে ভ্যান চলে গেল।ইতিমধ্যে ভেণ্ডাররা একে একে আসতে শুরু করেছে।
সব ভেণ্ডারদের কারো পঞ্চাশ কারো ষাট--কাগজ বুঝিয়ে দিয়ে খাতায় লিখে রেখে দায়িত্ব শেষ।প্রায় ঘণ্টা খানেকের কাজ।ভেণ্ডাররা সবাই তার চেনা।এরপর দোকানে বসে মাছি তাড়াও।মাঝে মধ্যে দু-একজন কাগজ নিতে আসছে।কেউ খেলার খবর কেউ লটারির নম্বর দেখতে কিম্বা পাত্র-পাত্রীর খবরের জন্য।কলেজ কলেজ অফিস কাছারি আছে সেজন্য সকালে বন্ধু-বান্ধবরা কেউ আসেনা।সন্ধে বেলা জমে ওঠে আড্ডা।বিশে পিকলু মান্তু চুনী সবাই খুব খুশী হয়েছে সন্তোষদা তাকে এই কাজটা দিয়েছে বলে।
অবশ্য ফুলনদেবীর চাকরি পাওয়ার ব্যাপারটা কেউ মেনে নিতে পারেনি।ওদের ধারণা ফুলন দেবীর চাকরি পাওয়ার পিছনে সন্তোষদার হাত আছে।ফুলন দেবী মহিলার আসল নাম নয় নক্সালি আমলে মহিলা নাকি খুব টরচার করেছিল পার্টির লোকেদের উপর।দুর্ধর্ষ প্রকৃতির মহিলা।সেজন্য ওকে ফুলনদেবী বলে।মহিলা আরণ্যকের মুখ চেনা।তাকে একবার লজ্জার হাত থেকে বাচিয়েছিল।
অনেক বেলা হল।স্নান করে বদ্যিনাথের হোটেল সেরে আসা যাক।ঝাপ বন্ধ করে আরণ্যক স্নানে চলে গেল।
সবাই ক্লাসে চলে গেছে।স্টাফ রুম প্রায় ফাকা।ফার্স্ট পিরিয়ডে ঝর্ণা পালের ক্লাস নেই।স্টাফ রুমের একধারে বসে বসে ভাবছে,সন্তোষকে এবার থামাতে হবে।চাকরি দিয়েছে বলে কি কিনে নিয়েছে।ঘরে বউ থাকতে অন্যের দিকে কেন নজর বুঝতে পারে না। তাও যদি মোনাটা সাইজ মতো হতো।এক এক সময় প্রশ্ন জাগে বড় হলে কি বেশী সুখ হয়?একটা মোনার ছবি চোখের সামনে ভেসে ওঠে।ছেলেটা তাদেরই পাড়ার। সেদিন দলবল নিয়ে পাড়ায় ঢুকেছে।মাকুরা পাড়া ছেড়ে পালিয়েচে।বোমা গুলির শব্দে দোকানপাট সব বন্ধ।নিমুকে নিয়ে একটা রকে বসে আছি।হঠাৎ নজরে পড়ে ছেলেটি নির্বিকারভাবে হেটে আসছে।কিছু বলতে যাবো নিমু কাধ চেপে ধরে নিষেধ করল।ছেলেটি সামনে দিয়ে মোড়ের দিকে এগিয়ে গেল।
তুমি চেনো নাকি?
মাথা নেড়ে সম্মতি জানিয়ে বলল,ও রাজনীতির ধারেপাসে থাকেনা।
হিরোর মতো দেখতে ছেলেটা।
বয়সে তোমার থেকে অনেক ছোটো।
ওর কাধে ছোট্ট একটা ঘুষি দিয়ে বললাম,ইয়ার্কি হচ্ছে।
মোড়ের দিক থেকে একটা গোলমালের শব্দ আসতে নিমু বলল,কমরেড দেখো তো কি হল?ওরা বাইরের কমরেড এপাড়ার
লোকজন চেনেনা।আমাদের তো এপাড়ায় থাকতে হবে।
আমি দ্রুত এগিয়ে গেলাম।অবাঞ্ছিত কোনো গোলমালে জড়ানো ঠিক হবে না।সাধারণ মানুষের আস্থা বিশ্বাস অর্জন করতে হবে।
মোড়ের মাথায় গিয়ে দেখলাম একটা গলির মধ্যে সেই ছেলেটাকে দিলীপ সুকুমাররা ধরেছে।একটা লম্বা লাঠি ছেলেটার কাধে আড়াআড়ি ভাবে রেখে দু-হাত প্রসারিত করে লাঠির দুদিকে বাধা।যেন যীশুখ্রীষ্ট।তারপর পায়জামা খুলে দিয়ে বলছে,যা বাড়ি যা।
তলপেটের নীচ থেকে প্রায় ছ-সাত ইঞ্চি মোনাটা ঘড়ির পেণ্ডলামের মতো ঝুলছে।শক্ত হলে না জানি কত বড় হবে।চোখ ফেরাতে ইচ্ছে করেনা।নিজেকে সংযত করে বললাম,একী হচ্ছে কমরেড?একটা নিরীহ ছেলের উপর--।
কথা শেষ না হতেই দিলীপ বলল,ঝর্ণাদি কাকে নিরীহ বলছো?কি বলে জানো,একজন নিরস্ত্রের উপর অস্ত্র নিয়ে হামলা করায় কোনো বীরতা নেই।
ঠিকই তো বলেছে।ঝর্ণার চোখ ঘুরেফিরে মোনার দিকে চলে যাচ্ছে।
আমরা কি জানতাম শালা নিরস্ত্র না সশস্ত্র?
যাক ওর বাধন খুলে দাও।
ওরা বাধন খুলতে থাকে।ঝর্ণা জিজ্ঞেস করল,এই গোলমালে বেরিয়েছো কেন?
আজ একাদশী।একাদশীর দিন মা ছাতু খায়।ছাতু কিনতে বেরিয়েছিলাম।
যাও বাড়ি যাও ছাতু কিনতে হবে না।
কেন ছাতু কিনতে হবে না কেন?
ছেলেটির গলায় ভয়ের কোনো লক্ষণ নেই।হাতের বাধন খোলা হয়ে গেছে।খুব ইচ্ছে করছিল মোনটা ধরে চটকাতে।ঝর্ণা বলল,দেখছো না সব দোকান-পাট বন্ধ।পায়জামা পরে বাড়ী যাও।
ধন্যবাদ।
ছেলেটা চলে যেতে ঝর্ণা বলল,কমরেড আমরা ভ্যানগার্ড অব দি পিউপল।সাধারণ মানুষকে নিয়ে আমাদের চলতে হবে--।
স্যরি ঝর্ণাদি।দিলীপ বলল।আসলে ছেলেটি এমন মেজাজ নিয়ে কথা বলছিল এইজন্য ভাবলাম একটু শিক্ষা দিয়ে দিই।
আমি কিন্তু মানা করেছিলাম।সরোজ বলল।
কিগো ঝর্ণাদি তোমার এ পিরিয়ডেও ক্লাস নেই?
অনিতার কথায় খেয়াল ঘণ্টা পড়ে গেছে।লজ্জা পেয়ে ক্লাসে চলে গেল।
হোটেল থেকে ফিরে একটা বই নিয়ে আধশোয়া হয়ে আরণ্যক চোখ বোলাতে থাকে।দুপুরে ঘুমানোর অভ্যেস নেই।হারু সাহার বাড়ী ছেড়ে এলেও স্মৃতি তার পিছু ছাড়ছে না।ঐ বাড়ীতে তার বাবা মায়ের স্পর্শ লেগে আছে।আলমারিটা সন্তোষদা নিয়েছেন আটশো টাকায়।ভালই হল কাউকে তো দিতেই হতো।
একমাসের ভাড়া মিটিয়ে দিতে গেলে হারু সাহা অপরাধীর গলায় বলল,ভাড়া কিসের,তোর দিতে হবে না।
কঠিণ গলায় আরণ্যক বলল,টাকাটা ধরুন।
কথা না বাড়িয়ে হাত বাড়িয়ে হারু সাহা টাকাটা নিয়ে ভাবে ছেলেটার ব্যবহার ঠিক করেনি।
সন্তোষদা শুনে একটু বকাবকি করলেন,কি দরকার ছিল আগ বাড়িয়ে টাকা দিতে যাবার।ঘর ছেড়েছিস ওর বাপের ভাগ্যি।
একটা বাজে লোক সামান্য কটা টাকার জন্য ঐরকম একটা বাজে লোকের কাছে ঋণী থাকব।
সন্তোষ মাইতির বিস্ময়ে মুখে কথা জোগায় না।পার্টি করার সুবাদে বহু মানুষের সঙ্গে মেশার সুযোগ হলেও রণোটা তার কাছে নতুন অভিজ্ঞতা।দোকানের দায়িত্ব ঠিক লোককেই দেওয়া হয়েছে নিশ্চিন্ত হলেন।
ছুটির পর কলেজ থেকে বেরিয়ে অনিতার সঙ্গে বাড়ী ফিরছে ঝর্ণা।অনিতা বিয়ের কথা বলছিল।পরিচিতরা কেউ বিয়ে করতে সাহস করবে না।আচমচকা পুলিশের জিপ পাশে দাড়ায়।জিপ থেকে একজন নেমে জিজ্ঞেস করল,মিস পাল?
হ্যা ঝর্ণা পাল।
বড়বাবু আপনাকে একবার থানায় দেখা করতে বলেছেন।
অনিতা বেশ ঘাবড়ে গেছে।ঝর্ণা জিজ্ঞেস করে,কি ব্যাপারে বলুন তো?
কোনো কেসের ব্যাপারে হয়তো কথা বলবেন।সময় করে একদিন আসুন সব জানতে পারবেন।
আচ্ছা ঠিক আছে।
জিপে উঠে লোকটি চলে গেল।
কি কেস গো ঝর্ণাদি?অনিতা জানতে চায়।
কি করে বলব?আগে থানায় যাই।মনে মনে ভাবে সন্তোষ লেজে খেলাচ্ছে।
কোনো খারাপ কিছু নয়তো?
ঝর্ণা হেসে বলল,কোনো ব্যাপারে জানতে চায় হয়তো।
সেজন্য ঝর্ণাদিকে ডাকবে কেন,অনিতা কথাটা মানতে পারেনা আবার কিছু বলার সাহস হয়না।দুই রাস্তার মুখে এসে ঝর্ণা বলে,তুমি যাও আমি একটু বাজার হয়ে যাব।ঝর্ণা অন্যপথ ধরল।
দোকান খুলে বসে আছে আরণ্যক।সামনে একটা বেঞ্চে কয়েকজন বন্ধু।আড্ডা চলছে।কথা ওরাই বলছে আরণ্যক নীরব শ্রোতা।কখনো সিনেমা কখনো খেলাধুলা আবার কখনো রাজনীতি।একটা থেকে আরেকটা পাড়ার বিষয়ও বাদ যাচ্ছে না।যেমন একটু আগে পিকলু বলছিল আগ বাড়িয়ে কিছু করতে যাওয়া ঠিক নয়।বছর তিনেক আগে ডাক্তারবাবুর মৃত্যু সংবাদ শুনে দলবল নিয়ে ছুটে গেছিল।বয়স হয়েছে বাড়ীতে বসেই রোগী দেখতেন।মেয়ের বিয়ে হয়ে গেছে বিদেশে থাকে।বাড়ীতে স্ত্রী ছাড়া আর কেউ নেই।এসময় পাশে দাড়ানো কর্তব্য ভেবে কোমরে গামছা বেধে গিয়ে একেবারে বেকুফ।মৃতের বাড়ি বলে মনে হলনা। তাহলে কি ভুল খবর?তাদের দেখে মিসেস মুখার্জী নেমে এলেন।মুখটা বিষণ্ণ জানালেন,গতকাল ডাক্তারবাবু মারা গেছেন।বডি ঘরে বরফ চাপা দিয়ে রাখা আছে।এসব এজেন্সীর লোক দিয়ে মেয়েই করিয়েছে।মেয়ের কাল আসার কথা।দাহ সৎকার এজেন্সীই করবে।তোমাদের আর কষ্ট করে আসতে হবে না।
শালা আজকাল কতকি হয়েছে।মান্তু বলল।
আগে যেমন কাধে করে বলহরি বলে খই ছড়াতে ছড়াতে যেতে হতো এখন শব বহনের গাড়ী।মন্টু বলল।
ওর মেয়ে এয়ামেরিকা বসেই ফোনে ফোনে সব ব্যবস্তা করেচে।
কিরে রণ তুই কিছু বলছিস না?
কি বলব আমার মনে হয় এই সমস্যার কারন একান্নবর্তী পরিবার ভেঙ্গে যাওয়া।মেয়ে বিদেশে থাকে,ছুটে এসেছে তো।
বিশু বলল,আর শালা ফ্যামিলি প্লানিং।আগে একটা পরিবারে ছ-সাত জন কম করে থাকতো এখন হাম দো হামারা দো
সবাই হো-হো করে হেসে উঠল।রাস্তায় ঝর্ণাকে দোকানের দিকে তাকিয়ে দাড়িয়ে থাকতে দেখে হাসি থেমে গেল।
ঝর্ণা দোকানের দিকে এগিয়ে এক।আরণ্যককে দেখে চিনতে পেরেছে।ছেলেটা বোধহয় লজ্জায় তারদিকে তাকাচ্ছে না।ওকে বন্ধুরা রনো বলে ডাকছিল।রনোর পায়জামার নীচে মোনাটা চোখের সামনে ভেসে ওঠে।ঝর্ণা জিজ্ঞেস করে,সন্তোষবাবু দোকানে বসে না?
কোনো ঠিক নেই।কখনো সখনো বসে।ঝর্ণার দিকে না তাকিয়ে জবাব দিল আরণ্যক।
ঝর্ণা উসখুস করছে দেখে জিজ্ঞেস করে কিছু বলতে হবে?
তাকের দিকে একটা বই দেখিয়ে ঝর্ণা বলল,ঐটা দাও তো।
বইটা দেখে আরণ্যক বলল,পার্টির কর্মসূচী?
হ্যা একটা দাও।
আরণ্যক বইটা হাতে দিতে বইয়ের দাম দিতে দিতে জিজ্ঞেস করল ঝর্ণা,আমাকে চিনতে পেরেছো?
চিনবো না কেন সেদিন আপনি লজ্জা থেকে বাচিয়েছিলেন।মৃদু গলায় বলল আরণ্যক।
ঝর্ণা চলে যেতেই পল্টু বলল,কি গুরু ঠিক দেখলাম তো?ফুলন দেবী আমাদের পার্টির কর্মসূচী পড়ছে।
সব শালা সন্তোষদার ম্যাজিক।
ভোরের আলো ফুটি ফুটি করতে আরণ্যকের ঘুম ভেঙ্গে গেল।চোখ মেলে নজরে পড়ে দু-পাশের তাকে সাজানো বিভিন্ন জার্ণাল।কোথায় আছে উপলব্ধি হতে ধড়ফড়িয়ে উঠে পড়ে চোখেমুখে জল দিয়ে দোকানের ঝাপ তুলে বাইরে এসে বসল।কিছুক্ষণ পর একটা ভ্যানগাড়ী দোকানের সামনে এসে দাড়াল।কাগজ এসেছে আরণ্যকের বুঝতে অসুবিধে হয়না।সে এগিয়ে গেল।ভ্যান হতে দুজন লোক নেমে সংবাদ পত্রের কয়েকটা গাঁটরি নামিয়ে দিয়ে চালান এগিয়ে দিল।আরণ্যক স্বাক্ষর করে দিতে এক কপি ছিড়ে তার হাতে দিয়ে ভ্যান চলে গেল।ইতিমধ্যে ভেণ্ডাররা একে একে আসতে শুরু করেছে।
সব ভেণ্ডারদের কারো পঞ্চাশ কারো ষাট--কাগজ বুঝিয়ে দিয়ে খাতায় লিখে রেখে দায়িত্ব শেষ।প্রায় ঘণ্টা খানেকের কাজ।ভেণ্ডাররা সবাই তার চেনা।এরপর দোকানে বসে মাছি তাড়াও।মাঝে মধ্যে দু-একজন কাগজ নিতে আসছে।কেউ খেলার খবর কেউ লটারির নম্বর দেখতে কিম্বা পাত্র-পাত্রীর খবরের জন্য।কলেজ কলেজ অফিস কাছারি আছে সেজন্য সকালে বন্ধু-বান্ধবরা কেউ আসেনা।সন্ধে বেলা জমে ওঠে আড্ডা।বিশে পিকলু মান্তু চুনী সবাই খুব খুশী হয়েছে সন্তোষদা তাকে এই কাজটা দিয়েছে বলে।
অবশ্য ফুলনদেবীর চাকরি পাওয়ার ব্যাপারটা কেউ মেনে নিতে পারেনি।ওদের ধারণা ফুলন দেবীর চাকরি পাওয়ার পিছনে সন্তোষদার হাত আছে।ফুলন দেবী মহিলার আসল নাম নয় নক্সালি আমলে মহিলা নাকি খুব টরচার করেছিল পার্টির লোকেদের উপর।দুর্ধর্ষ প্রকৃতির মহিলা।সেজন্য ওকে ফুলনদেবী বলে।মহিলা আরণ্যকের মুখ চেনা।তাকে একবার লজ্জার হাত থেকে বাচিয়েছিল।
অনেক বেলা হল।স্নান করে বদ্যিনাথের হোটেল সেরে আসা যাক।ঝাপ বন্ধ করে আরণ্যক স্নানে চলে গেল।
সবাই ক্লাসে চলে গেছে।স্টাফ রুম প্রায় ফাকা।ফার্স্ট পিরিয়ডে ঝর্ণা পালের ক্লাস নেই।স্টাফ রুমের একধারে বসে বসে ভাবছে,সন্তোষকে এবার থামাতে হবে।চাকরি দিয়েছে বলে কি কিনে নিয়েছে।ঘরে বউ থাকতে অন্যের দিকে কেন নজর বুঝতে পারে না। তাও যদি মোনাটা সাইজ মতো হতো।এক এক সময় প্রশ্ন জাগে বড় হলে কি বেশী সুখ হয়?একটা মোনার ছবি চোখের সামনে ভেসে ওঠে।ছেলেটা তাদেরই পাড়ার। সেদিন দলবল নিয়ে পাড়ায় ঢুকেছে।মাকুরা পাড়া ছেড়ে পালিয়েচে।বোমা গুলির শব্দে দোকানপাট সব বন্ধ।নিমুকে নিয়ে একটা রকে বসে আছি।হঠাৎ নজরে পড়ে ছেলেটি নির্বিকারভাবে হেটে আসছে।কিছু বলতে যাবো নিমু কাধ চেপে ধরে নিষেধ করল।ছেলেটি সামনে দিয়ে মোড়ের দিকে এগিয়ে গেল।
তুমি চেনো নাকি?
মাথা নেড়ে সম্মতি জানিয়ে বলল,ও রাজনীতির ধারেপাসে থাকেনা।
হিরোর মতো দেখতে ছেলেটা।
বয়সে তোমার থেকে অনেক ছোটো।
ওর কাধে ছোট্ট একটা ঘুষি দিয়ে বললাম,ইয়ার্কি হচ্ছে।
মোড়ের দিক থেকে একটা গোলমালের শব্দ আসতে নিমু বলল,কমরেড দেখো তো কি হল?ওরা বাইরের কমরেড এপাড়ার
লোকজন চেনেনা।আমাদের তো এপাড়ায় থাকতে হবে।
আমি দ্রুত এগিয়ে গেলাম।অবাঞ্ছিত কোনো গোলমালে জড়ানো ঠিক হবে না।সাধারণ মানুষের আস্থা বিশ্বাস অর্জন করতে হবে।
মোড়ের মাথায় গিয়ে দেখলাম একটা গলির মধ্যে সেই ছেলেটাকে দিলীপ সুকুমাররা ধরেছে।একটা লম্বা লাঠি ছেলেটার কাধে আড়াআড়ি ভাবে রেখে দু-হাত প্রসারিত করে লাঠির দুদিকে বাধা।যেন যীশুখ্রীষ্ট।তারপর পায়জামা খুলে দিয়ে বলছে,যা বাড়ি যা।
তলপেটের নীচ থেকে প্রায় ছ-সাত ইঞ্চি মোনাটা ঘড়ির পেণ্ডলামের মতো ঝুলছে।শক্ত হলে না জানি কত বড় হবে।চোখ ফেরাতে ইচ্ছে করেনা।নিজেকে সংযত করে বললাম,একী হচ্ছে কমরেড?একটা নিরীহ ছেলের উপর--।
কথা শেষ না হতেই দিলীপ বলল,ঝর্ণাদি কাকে নিরীহ বলছো?কি বলে জানো,একজন নিরস্ত্রের উপর অস্ত্র নিয়ে হামলা করায় কোনো বীরতা নেই।
ঠিকই তো বলেছে।ঝর্ণার চোখ ঘুরেফিরে মোনার দিকে চলে যাচ্ছে।
আমরা কি জানতাম শালা নিরস্ত্র না সশস্ত্র?
যাক ওর বাধন খুলে দাও।
ওরা বাধন খুলতে থাকে।ঝর্ণা জিজ্ঞেস করল,এই গোলমালে বেরিয়েছো কেন?
আজ একাদশী।একাদশীর দিন মা ছাতু খায়।ছাতু কিনতে বেরিয়েছিলাম।
যাও বাড়ি যাও ছাতু কিনতে হবে না।
কেন ছাতু কিনতে হবে না কেন?
ছেলেটির গলায় ভয়ের কোনো লক্ষণ নেই।হাতের বাধন খোলা হয়ে গেছে।খুব ইচ্ছে করছিল মোনটা ধরে চটকাতে।ঝর্ণা বলল,দেখছো না সব দোকান-পাট বন্ধ।পায়জামা পরে বাড়ী যাও।
ধন্যবাদ।
ছেলেটা চলে যেতে ঝর্ণা বলল,কমরেড আমরা ভ্যানগার্ড অব দি পিউপল।সাধারণ মানুষকে নিয়ে আমাদের চলতে হবে--।
স্যরি ঝর্ণাদি।দিলীপ বলল।আসলে ছেলেটি এমন মেজাজ নিয়ে কথা বলছিল এইজন্য ভাবলাম একটু শিক্ষা দিয়ে দিই।
আমি কিন্তু মানা করেছিলাম।সরোজ বলল।
কিগো ঝর্ণাদি তোমার এ পিরিয়ডেও ক্লাস নেই?
অনিতার কথায় খেয়াল ঘণ্টা পড়ে গেছে।লজ্জা পেয়ে ক্লাসে চলে গেল।
হোটেল থেকে ফিরে একটা বই নিয়ে আধশোয়া হয়ে আরণ্যক চোখ বোলাতে থাকে।দুপুরে ঘুমানোর অভ্যেস নেই।হারু সাহার বাড়ী ছেড়ে এলেও স্মৃতি তার পিছু ছাড়ছে না।ঐ বাড়ীতে তার বাবা মায়ের স্পর্শ লেগে আছে।আলমারিটা সন্তোষদা নিয়েছেন আটশো টাকায়।ভালই হল কাউকে তো দিতেই হতো।
একমাসের ভাড়া মিটিয়ে দিতে গেলে হারু সাহা অপরাধীর গলায় বলল,ভাড়া কিসের,তোর দিতে হবে না।
কঠিণ গলায় আরণ্যক বলল,টাকাটা ধরুন।
কথা না বাড়িয়ে হাত বাড়িয়ে হারু সাহা টাকাটা নিয়ে ভাবে ছেলেটার ব্যবহার ঠিক করেনি।
সন্তোষদা শুনে একটু বকাবকি করলেন,কি দরকার ছিল আগ বাড়িয়ে টাকা দিতে যাবার।ঘর ছেড়েছিস ওর বাপের ভাগ্যি।
একটা বাজে লোক সামান্য কটা টাকার জন্য ঐরকম একটা বাজে লোকের কাছে ঋণী থাকব।
সন্তোষ মাইতির বিস্ময়ে মুখে কথা জোগায় না।পার্টি করার সুবাদে বহু মানুষের সঙ্গে মেশার সুযোগ হলেও রণোটা তার কাছে নতুন অভিজ্ঞতা।দোকানের দায়িত্ব ঠিক লোককেই দেওয়া হয়েছে নিশ্চিন্ত হলেন।
ছুটির পর কলেজ থেকে বেরিয়ে অনিতার সঙ্গে বাড়ী ফিরছে ঝর্ণা।অনিতা বিয়ের কথা বলছিল।পরিচিতরা কেউ বিয়ে করতে সাহস করবে না।আচমচকা পুলিশের জিপ পাশে দাড়ায়।জিপ থেকে একজন নেমে জিজ্ঞেস করল,মিস পাল?
হ্যা ঝর্ণা পাল।
বড়বাবু আপনাকে একবার থানায় দেখা করতে বলেছেন।
অনিতা বেশ ঘাবড়ে গেছে।ঝর্ণা জিজ্ঞেস করে,কি ব্যাপারে বলুন তো?
কোনো কেসের ব্যাপারে হয়তো কথা বলবেন।সময় করে একদিন আসুন সব জানতে পারবেন।
আচ্ছা ঠিক আছে।
জিপে উঠে লোকটি চলে গেল।
কি কেস গো ঝর্ণাদি?অনিতা জানতে চায়।
কি করে বলব?আগে থানায় যাই।মনে মনে ভাবে সন্তোষ লেজে খেলাচ্ছে।
কোনো খারাপ কিছু নয়তো?
ঝর্ণা হেসে বলল,কোনো ব্যাপারে জানতে চায় হয়তো।
সেজন্য ঝর্ণাদিকে ডাকবে কেন,অনিতা কথাটা মানতে পারেনা আবার কিছু বলার সাহস হয়না।দুই রাস্তার মুখে এসে ঝর্ণা বলে,তুমি যাও আমি একটু বাজার হয়ে যাব।ঝর্ণা অন্যপথ ধরল।
দোকান খুলে বসে আছে আরণ্যক।সামনে একটা বেঞ্চে কয়েকজন বন্ধু।আড্ডা চলছে।কথা ওরাই বলছে আরণ্যক নীরব শ্রোতা।কখনো সিনেমা কখনো খেলাধুলা আবার কখনো রাজনীতি।একটা থেকে আরেকটা পাড়ার বিষয়ও বাদ যাচ্ছে না।যেমন একটু আগে পিকলু বলছিল আগ বাড়িয়ে কিছু করতে যাওয়া ঠিক নয়।বছর তিনেক আগে ডাক্তারবাবুর মৃত্যু সংবাদ শুনে দলবল নিয়ে ছুটে গেছিল।বয়স হয়েছে বাড়ীতে বসেই রোগী দেখতেন।মেয়ের বিয়ে হয়ে গেছে বিদেশে থাকে।বাড়ীতে স্ত্রী ছাড়া আর কেউ নেই।এসময় পাশে দাড়ানো কর্তব্য ভেবে কোমরে গামছা বেধে গিয়ে একেবারে বেকুফ।মৃতের বাড়ি বলে মনে হলনা। তাহলে কি ভুল খবর?তাদের দেখে মিসেস মুখার্জী নেমে এলেন।মুখটা বিষণ্ণ জানালেন,গতকাল ডাক্তারবাবু মারা গেছেন।বডি ঘরে বরফ চাপা দিয়ে রাখা আছে।এসব এজেন্সীর লোক দিয়ে মেয়েই করিয়েছে।মেয়ের কাল আসার কথা।দাহ সৎকার এজেন্সীই করবে।তোমাদের আর কষ্ট করে আসতে হবে না।
শালা আজকাল কতকি হয়েছে।মান্তু বলল।
আগে যেমন কাধে করে বলহরি বলে খই ছড়াতে ছড়াতে যেতে হতো এখন শব বহনের গাড়ী।মন্টু বলল।
ওর মেয়ে এয়ামেরিকা বসেই ফোনে ফোনে সব ব্যবস্তা করেচে।
কিরে রণ তুই কিছু বলছিস না?
কি বলব আমার মনে হয় এই সমস্যার কারন একান্নবর্তী পরিবার ভেঙ্গে যাওয়া।মেয়ে বিদেশে থাকে,ছুটে এসেছে তো।
বিশু বলল,আর শালা ফ্যামিলি প্লানিং।আগে একটা পরিবারে ছ-সাত জন কম করে থাকতো এখন হাম দো হামারা দো
সবাই হো-হো করে হেসে উঠল।রাস্তায় ঝর্ণাকে দোকানের দিকে তাকিয়ে দাড়িয়ে থাকতে দেখে হাসি থেমে গেল।
ঝর্ণা দোকানের দিকে এগিয়ে এক।আরণ্যককে দেখে চিনতে পেরেছে।ছেলেটা বোধহয় লজ্জায় তারদিকে তাকাচ্ছে না।ওকে বন্ধুরা রনো বলে ডাকছিল।রনোর পায়জামার নীচে মোনাটা চোখের সামনে ভেসে ওঠে।ঝর্ণা জিজ্ঞেস করে,সন্তোষবাবু দোকানে বসে না?
কোনো ঠিক নেই।কখনো সখনো বসে।ঝর্ণার দিকে না তাকিয়ে জবাব দিল আরণ্যক।
ঝর্ণা উসখুস করছে দেখে জিজ্ঞেস করে কিছু বলতে হবে?
তাকের দিকে একটা বই দেখিয়ে ঝর্ণা বলল,ঐটা দাও তো।
বইটা দেখে আরণ্যক বলল,পার্টির কর্মসূচী?
হ্যা একটা দাও।
আরণ্যক বইটা হাতে দিতে বইয়ের দাম দিতে দিতে জিজ্ঞেস করল ঝর্ণা,আমাকে চিনতে পেরেছো?
চিনবো না কেন সেদিন আপনি লজ্জা থেকে বাচিয়েছিলেন।মৃদু গলায় বলল আরণ্যক।
ঝর্ণা চলে যেতেই পল্টু বলল,কি গুরু ঠিক দেখলাম তো?ফুলন দেবী আমাদের পার্টির কর্মসূচী পড়ছে।
সব শালা সন্তোষদার ম্যাজিক।