18-04-2024, 03:53 PM
তৃতীয় পরিচ্ছেদ
সাইকেল নিয়ে হকাররা কেউ পঞ্চাশ কেউ সত্তর গুনে গুনে কাগজ নিচ্ছে।সন্তোষবাবু সব একটা খাতায় লিখে রাখছেন কাকে কি কাগজ কত কাগজ দিচ্ছেন।কাগজ নিয়ে ওরা বাড়ি বাড়ী বিলি করতে বেরিয়ে পড়বে। কমরেড সন্তোষ মাইতি সারাদিন পার্টির কাজে ব্যস্ত থাকলেও ভোরবেলা দোকান খুলে এই কাজটা করতে হয়।কাউকে বিশ্বাস করে এই দায়িত্ব দেওয়া যায়না।টাকা পয়সার ব্যাপার।পার্টির ছেলেরা একে একে আসতে থাকে।চুনীলাল আসতে গোপাল বলল,এইতো চুনীবালা এসে গেছে।
চুনীলাল একটু মেয়েলী ঢঙে কথা বলে।চুনী চোখ পাকিয়ে বলল,দ্যাখ গোপাল সক্কালবেলা মুখ খারাপ করাবিনা।
এই কি আরম্ভ করলি?পিক্লু বলল।
হকারদের বিদায় দিয়ে কমরেড সন্তোষবাবু বললেন,তোরা এসে গেছিস?সাহার বাড়ীর কাছে গিয়ে দাড়া,আমি আসছি।
ওরা দলবেধে হারু সাহার বাড়ীর নীচে জড়ো হল।উপর থেকে দেখে হারাধন সাহা উৎসাহিত হয়ে নেমে এসে বললেন,তোমরা এসে গেছো।সন্তোষবাবু আসবেন না?
দাদা আসছেন।কোনো চিন্তা করবেন না দাদা বললেই মাল পত্তর সব বাইরে ফেলে দেবো।গোপাল সাহাবাবুকে আশ্বস্ত করে।
তোমরা চা খাবে তো?দাঁড়াও আমি চা নিয়ে আসছি।হারুবাবু চা আনতে উপরে চলে গেলেন।
ওরা পরস্পর চোখ চাওয়া চাওয়ি করে হাসে।শালা খুব খাতির হচ্ছে।
গোপালের আচরণ অনেক্ষণ থেকে লক্ষ্য করছে পিকলু।সাহাবাবু চলে যেতে বলল,আচ্ছা গোপাল,রনোর উপর তোর এত রাগ কেন বলতো?
রাগ হবে না?চুনী বলল,রনো ওকে একবার নকশালদের হাত থেকে বাচিয়েছিল।
এ্যাই লেডিস যা জানিসনা তানিয়ে কথা বলবি না।
পিক্লু বলল,চুনী কিছু ভুল বলেছে?
শোন তখন আমি পার্টিতে আসিনি ওরা ভেবেছিল আমি পার্টি করি।
যাইহোক রনো এসেছিল তো--।
আমি কাউকে ডাকিনি।
পিক্লু হাসলো বলল,রনোকে ডাকতে হয় না।অন্যায় দেখলে নিজেই ঝাপিয়ে পড়ে।
আচ্ছা পিকলু রনো তো আমাদের পার্টির ছেলে নয় ওর হয়ে তুই এত দালালী করছিস কেন?বিরক্ত হয়ে বলল গোপাল।
সাহাবাবু কেটলিতে চা নিয়ে এসেছেন।সবার হাতে কাগজের গেলাস ধরিয়ে দিয়ে একে একে চা দিতে থাকেন। সবাই আয়েশ করে চায়ে চুমুক দিতে থাকে।বিশু জিজ্ঞেস করল,সাহাবাবু ও আছে তো?
যাবে কোথায়?দরজা বন্ধ করে সারাক্ষণ কি করে কে জানে?
রান্না বান্না করে না?
ঘরের মধ্যে স্টোভ জ্বেলে রান্না করে।ঘরের যা অবস্থা করেছে তোমাদের কি বলব?
আপনি মানা করেন নি?
আর মানা।এখন বিদায় হলে বাচি।
বিশু চিন্তা করছে দাদা ব্যাপারটা কিভাবে মেটাবে।রনো পার্টি না করলেও ওর ব্যবহারটা এত সুন্দর,বিশুর সঙ্গে খুব ভালো সম্পর্ক।দাদা যদি মালপত্তর ফেলে দিতে হুকুম করে বিশু পারবে না।গোপালটা এত তেড়িবেড়ি করছে রনো যদি এক থাবড়া দেয় বেটা নর্দমায় গিয়ে পড়বে।চুনীর সঙ্গে চোখাচুখি পল্টু হাসলো।ভাবে ভগবান চুনীকে মেয়ে গড়তে গিয়ে ছেলে ছেলে গড়ে ফেলেছে।গোপাল ওকে চুনীবালা খালিখালি বলেনা।
ওই তো দাদা আসছে।চুনী বলল।
সবাই তাকিয়ে দেখল সন্তোষ মাইতি পরনে পায়জামা পাঞ্জাবী কাধে ঝোলা ব্যাগ ধীর পায়ে এদিকে আসছেন।গোপাল বলল,বস যা বলবে তাই হবে।
বিরক্ত হয়ে বিশু বলল,বস কিরে?আমরা কি কোনো মাফিয়ার দল?
সন্তোষবাবু আসতে হারু সাহা কিছু একটা বলার জন্য এগিয়ে যেতে কমরেড সন্তোষ মাইতি হাত তুলে থামিয়ে দিয়ে বললেন,কমরেড তোমরা এখানে থাকো।আমি রনোর সঙ্গে কথা বলে দেখি ওকী চায়।
সকলে পরস্পর মুখ চাওয়া-চাওয়ি করে।সন্তোষবাবু ভিতরে ঢুকে বন্ধ দরজার কড়া নাড়তে ভিতর থেকে সাড়া এল,কে-এ-এ?
সন্তোষদা দরজা খোল।
সঙ্গে সঙ্গে দরজা খুলে গেল।অবাক চোখে সামনে দাড়িয়ে আরণ্যক।খালি গা প্রশস্ত বক্ষ।রনো বলল,দাদা আপনি?খবর দিলে আমিই যেতাম--।
সন্তোষবাবু ঘরে আসবাব বলতে এককোনে একটা আলমারি আর দেওয়াল ঘেষে একটা চৌকি।মেঝেতে একটা শতরঞ্চি পাতা।
স্ট্রাগলিং লাইফ অথচ চলতে চলতে পা পিছলে যায়নি।সন্তোষ মাইতির মন ভারাক্রান্ত হয়।
কি করছিলি?
লাজুক গলায় রনো বলল,এই একটু যোগ-প্রাণায়াম করছিলাম।শতরঞ্চি তুলে ভাজ করতে করতে জিজ্ঞেস করে, দাদা একটু চা করি?
চৌকির একপাশে বসে বললেন,চা করবি কিনা জিজ্ঞেস করছিস?
লজ্জা পেয়ে রনো চৌকির নীচ থেকে স্টোভ বের করে জল চাপিয়ে দিল।
মাস্টার মশাইকে আমি শ্রদ্ধা করতাম।আমার দেখা সৎ মানুষদের একজন ছিলেন মাস্টারমশায়।বাবার কথা বলছে রনো বুঝতে পারে। চা হয়ে যেতে দুটো কাপে ঢেলে একটা কাপ এগিমে দিয়ে বলল,বিস্কুট নেই।
সন্তোষবাবু হাত বাড়িয়ে চায়ের কাপ নিয়ে চুমুক দিলেন,মোটামুটি।সুগন্ধী চা প্রত্যাশাও করেননি।এক পলক রনোকে দেখে বললেন,কেন এসেছি জিজ্ঞেস করলি নাতো?
মৃদু হেসে রনো বলল,জানি।বাড়ীঅলা পার্টি অফিসে গেছিল।
সরাসরি এলসিএসের কাছে।প্রভাত বসু কেসটা আমাকে দেখতে বলেছে।
রনো কোনো কথা বলেনা,এসব তার জানা।
সাহা বাবু নালিশ করেছে তুই ভাড়াও দিবি না ঘরও ছাড়বি না--।
উনি ঠিক কথা বলেনি।
মানে?
ভাড়া দেবো না বলিনি।সন্তোষদা আমরা এত বছর আছি মাস গেলেই প্রথমে ভাড়া মিটিয়ে দিয়েছি।মা মারা যাবার পর অনেক খরচা হয়ে গেছে।বলেছি তিনটে মাস সময় দিন কাকু সব ভাড়া মিটিয়ে দেব।আপনিই বলুন মানুষের বিপদ-আপদ থাকে না?
কোথা থেকে দিবি?
এর মধ্যে আমি কিছু না কিছু জুটিয়ে নেব।চিরকাল কি বেকার থাকব নাকি?
ছেলেটা খুব সরল।কি বলবেন সন্তোষবাবু ভেবে পান না।
কাকু কি বলে জানেন তোমাকে ভাড়া দিতে হবে না,তুমি ঘর ছেড়ে দাও।
আচ্ছা রনো মনে কর তোকে সময় দেওয়া হল।যদি এর মধ্যে কোনো চাকরি জোগাড় করতে না পারিস--?
পাবো না বলছেন?ছায়া নেমে আসে রনোর মুখে।
পাবিনা বলছি না।ধর যদি না পাস?
ঠিকই।রনো ঘরের কোনে দাড় করানো স্টিলের আলমারি দেখিয়ে বলল,বাবা এটা একুশশো টাকায় নতুন কিনেছিল।ওটা বেচে সাত-আটশো টাকা পাবো না?ওটা বেচে কড়ায় গণ্ডায় কাকুর পাওনা মিটিয়ে ঘর ছেড়ে পাড়া ছেড়ে চলে যাব।থানা পুলিশ পার্টি অফিস কোথাও যেতে হবে না।আপনি কাকুকে একটু বুঝিয়ে বলুন।আপনি বললে মুখের উপর না বলতে পারবে না।
সন্তোষবাবুর চোখ ঝাপসা হয়ে এল বললেন,পাড়া ছেড়ে চলে যাবি?
কি করব বলুন।সব কিছু আমার ইচ্ছাধীন নয়।
কি বলবেন সাহাবাবুকেই কি জবাব দেবেন কিছুটা দিশাহরা বোধ করেন।বললেন,তোর তো রান্নাই হয়নি,অনেক দেরী করিয়ে দিলাম।
না না দেরী আর কি।দু-মুঠো চাল আর দুটো আলু সেদ্ধ করে নিতে কতক্ষণ লাগবে।
সেকিরে তরিতরকারি আর কিছু করবি না?
রনো ফ্যাকাসে হেসে বলল,ওসব কিছু নেই তাছাড়া আমি ঐসব রান্না করতেও জানিনা।
এইভাবে দিনের পর দিন চালাচ্ছে ছেলেটা সন্তোষবাবুর বিস্ময়ে অন্ধকার দেখলেন।অন্ধকারের মধ্যে এক চিলতে বিদ্যুতের ঝিলিক খেলে যায়।দ্বিধা কাটিয়ে বললেন,তুই আমার দোকানে বসবি?
আপনার দোকানে?
সকালে হকারদের কাগজ দিবি কাকে কত দিতে হবে খাতায় লেখা আছে--।
আমি তো সব জানি।
দোকানে ঘুমোবি আর বদ্যিনাথের হোটেলে খাবি আমি বলে দেব।টাকা পয়সা দিতে পারবো না।
আপনি বলছেন এখান থেকে চলে যাব?
হ্যা যতদিন চাকরি না পাচ্ছিস--।
ঠিক আছে এটা যখন আপনার ইচ্ছে--।
তোর ইচ্ছে না হলে থাক।
ঠিক আছে দোকানেই বসব।
তুই এখন রান্না কর।ওবেলা বিশেরা এসে মালপত্তর নিয়ে যাবে।
বাইরে ওরা চিন্তিত সেই কখন ঢুকেছে কি করছে এতক্ষণ?সাড়া শব্দ নেই কিছু হলে শুনতে পেতো।পিকলু বলল ওইতো দাদা বের হচ্ছে।দাদার মুখ কেমন গম্ভীর তবু কেউ কিছু জিজ্ঞেস করার সাহস পায়না।সন্তোষবাবু বেরিয়ে এসে বললেন,পার্টি অফিসে চল।
সন্তোষদা ভালই কৌশল করলেন।যাকগে একদিক দিয়ে ভালই হল।রোজ রোজ আর অশান্তি ভাল লাগে না। রনো একসঙ্গে দুবেলার ভাত রান্না করে।আজ অর্ধেক চাল দিল হাড়িতে।ওবেলা বদ্যিনাথের হোটেল।বহুকাল মাছ খায়নি।হাড়িতে ভাত ফুটছে।খাওয়া থাকার ব্যবস্থা হল আর কি চাই। আলমারি খুলে জামা কাপড় সব দুটো ব্যাগে ভর্তি করে আলমারি খালি করে ফেলল।আলমারি নিয়ে যাবেনা।এখানে রেখেই বিক্রী করে দেবে।কপালে থাকলে পরে নতুন আলমারী কেনা যাবে।ঘর দোর নেই আলমারি বয়ে বেড়ানোর দরকার কি।
আজ কলেজ নেই।বেলা করে সাবান নিয়ে স্নানে ঢুকল ঝর্ণা। ছুটির দিন সাবান দিয়ে ভাল করে রগড়ে স্নান করতে হবে।বাথরুমের দরজা বন্ধ করে একটানে খুলে ফেলল শাড়ী।তলপেটের নীচে যোনীতে হাত বোলাতে কাটার মত বেধে।বশী বড় হয়নি কদিন পর সেভ করা যাবে।সারা শরীরে সাবান ঘষতে থাকে।গুদের মধ্যে আঙুল ভরে দিতে হিরশির করে উঠল সারা শরীর।অনিতা জিজ্ঞেস করছিল বিয়ে করিনি খারাপ লাগে কিনা?ইঙ্গিতটা বুঝতে অসুবিধে হবার কথা নয়।নিমু তাকে ফালা ফালা করেছে ওর জানার কথা নয়।অবশ্য খুব আয়েশ করে একেবারে উদোম হয়ে করার উপায় ছিল না।চারপাশে কমরেডরা ঘোরাঘুরি করছে।রাতেও পাহারা দিতে হতো।বলা যায়না কখন মাকুরা এ্যাটাক করে বসে।এরই মধ্যে সুযোগ হলে দুটো বাড়ীর ফাকে ঢুকে পাছা উচিয়ে দেওয়াল ধরে দাড়াতাম আর নিমু কাপড় কোমরের উপরে তুলে পিছন দিক থেকে ঠাপাতো।নিমুর মোনাটা বেশী বড় নয় আবার ছোটও নয়--মোটামুটি।সন্তোষদার মোনা বেশী বড় নয় আর দমও কম।মিনিট পাচেকের মধ্যে নেতিয়ে পড়ে।ওনারে দিয়ে করিয়ে সুখ হয়না।কি করে যে ওনার বউ ওনারে নিয়ে সংসার করছে।এই চাকরিটা দাদা করে দিয়ে খুব উপকার হয়েছে। এজন্য দাদার কাছে কৃতজ্ঞ।একথা কাউকে বলতে কেন নিষেধ করেছে কে জানে।মা ছাড়া কেউ একথা জানে না।
কিরে তোর হল?খাবি কখন?
মায়ের গলা পেয়ে হাপুস হুপুস জল ঢালতে থাকে ঝর্ণা।গামছা দিয়ে গা মুছতে মুছতে নিমুর কথা ভেবে দীর্ঘশ্বাস বেরিয়ে এল।
ভেবেছিল বিছানায় ফেলে একদিন আয়েশ করে করবে।বেচরা! সে সাধ আর পূরণ হল না।নিজেকে খুব একা মনে হয় সংসারে।
গরু বাথানে ফিরে এল ইলিনা ব্রাউন।বাড়ীতে থেকেই পড়াশুনা করবে।পরীক্ষার দু-দিন আগে কলকাতায় যাবে।সুপমাও দেশে চলে গেছে।ওর মামা বীরেনবাবু বেশ যত্নআত্তি করলেন।রসগোল্লা মিষ্টিটা ইলিনার বেশ পছন্দ হয়েছে।
মামন কি বলব দিদি না মা--দিন দিন খুব এ্যরোগাণ্ট হয়ে যাচ্ছে।কারো কথা শোনে না।যখন ইচ্ছে বেরিয়ে যায়।বাড়ী ফেরে রাত করে।মি. ব্রাউনের পরিবারের লোক সেজন্য কেউ কিছু বলার সাহস করেনা।ড্যাডও এব্যপারে নির্বিকার।
একটা জিনিস লক্ষ্য করেছ ইলিনা,মাম্মি যখন বাংলোর বাইরে বারান্দায় গিয়ে বসে একটা ছেলে বছর চৌত্রিশ-পয়ত্রিশ বয়স ড্যাড না থাকলে মাঝে মাঝে আসে।প্রথমে মনে হয়েছিল মামনের জন্য আসে।ছেলেটির নাম নিশীথ বর্মন,এল আই সিতে বড় অফিসার।কি এত গুজগুজ করে?ইলিনার পড়াশুনা আছে।এসব নিয়ে ভাবলে চলবে না।পরীক্ষায় তাকে ভালো রেজাল্ট করতে হবে।
সাইকেল নিয়ে হকাররা কেউ পঞ্চাশ কেউ সত্তর গুনে গুনে কাগজ নিচ্ছে।সন্তোষবাবু সব একটা খাতায় লিখে রাখছেন কাকে কি কাগজ কত কাগজ দিচ্ছেন।কাগজ নিয়ে ওরা বাড়ি বাড়ী বিলি করতে বেরিয়ে পড়বে। কমরেড সন্তোষ মাইতি সারাদিন পার্টির কাজে ব্যস্ত থাকলেও ভোরবেলা দোকান খুলে এই কাজটা করতে হয়।কাউকে বিশ্বাস করে এই দায়িত্ব দেওয়া যায়না।টাকা পয়সার ব্যাপার।পার্টির ছেলেরা একে একে আসতে থাকে।চুনীলাল আসতে গোপাল বলল,এইতো চুনীবালা এসে গেছে।
চুনীলাল একটু মেয়েলী ঢঙে কথা বলে।চুনী চোখ পাকিয়ে বলল,দ্যাখ গোপাল সক্কালবেলা মুখ খারাপ করাবিনা।
এই কি আরম্ভ করলি?পিক্লু বলল।
হকারদের বিদায় দিয়ে কমরেড সন্তোষবাবু বললেন,তোরা এসে গেছিস?সাহার বাড়ীর কাছে গিয়ে দাড়া,আমি আসছি।
ওরা দলবেধে হারু সাহার বাড়ীর নীচে জড়ো হল।উপর থেকে দেখে হারাধন সাহা উৎসাহিত হয়ে নেমে এসে বললেন,তোমরা এসে গেছো।সন্তোষবাবু আসবেন না?
দাদা আসছেন।কোনো চিন্তা করবেন না দাদা বললেই মাল পত্তর সব বাইরে ফেলে দেবো।গোপাল সাহাবাবুকে আশ্বস্ত করে।
তোমরা চা খাবে তো?দাঁড়াও আমি চা নিয়ে আসছি।হারুবাবু চা আনতে উপরে চলে গেলেন।
ওরা পরস্পর চোখ চাওয়া চাওয়ি করে হাসে।শালা খুব খাতির হচ্ছে।
গোপালের আচরণ অনেক্ষণ থেকে লক্ষ্য করছে পিকলু।সাহাবাবু চলে যেতে বলল,আচ্ছা গোপাল,রনোর উপর তোর এত রাগ কেন বলতো?
রাগ হবে না?চুনী বলল,রনো ওকে একবার নকশালদের হাত থেকে বাচিয়েছিল।
এ্যাই লেডিস যা জানিসনা তানিয়ে কথা বলবি না।
পিক্লু বলল,চুনী কিছু ভুল বলেছে?
শোন তখন আমি পার্টিতে আসিনি ওরা ভেবেছিল আমি পার্টি করি।
যাইহোক রনো এসেছিল তো--।
আমি কাউকে ডাকিনি।
পিক্লু হাসলো বলল,রনোকে ডাকতে হয় না।অন্যায় দেখলে নিজেই ঝাপিয়ে পড়ে।
আচ্ছা পিকলু রনো তো আমাদের পার্টির ছেলে নয় ওর হয়ে তুই এত দালালী করছিস কেন?বিরক্ত হয়ে বলল গোপাল।
সাহাবাবু কেটলিতে চা নিয়ে এসেছেন।সবার হাতে কাগজের গেলাস ধরিয়ে দিয়ে একে একে চা দিতে থাকেন। সবাই আয়েশ করে চায়ে চুমুক দিতে থাকে।বিশু জিজ্ঞেস করল,সাহাবাবু ও আছে তো?
যাবে কোথায়?দরজা বন্ধ করে সারাক্ষণ কি করে কে জানে?
রান্না বান্না করে না?
ঘরের মধ্যে স্টোভ জ্বেলে রান্না করে।ঘরের যা অবস্থা করেছে তোমাদের কি বলব?
আপনি মানা করেন নি?
আর মানা।এখন বিদায় হলে বাচি।
বিশু চিন্তা করছে দাদা ব্যাপারটা কিভাবে মেটাবে।রনো পার্টি না করলেও ওর ব্যবহারটা এত সুন্দর,বিশুর সঙ্গে খুব ভালো সম্পর্ক।দাদা যদি মালপত্তর ফেলে দিতে হুকুম করে বিশু পারবে না।গোপালটা এত তেড়িবেড়ি করছে রনো যদি এক থাবড়া দেয় বেটা নর্দমায় গিয়ে পড়বে।চুনীর সঙ্গে চোখাচুখি পল্টু হাসলো।ভাবে ভগবান চুনীকে মেয়ে গড়তে গিয়ে ছেলে ছেলে গড়ে ফেলেছে।গোপাল ওকে চুনীবালা খালিখালি বলেনা।
ওই তো দাদা আসছে।চুনী বলল।
সবাই তাকিয়ে দেখল সন্তোষ মাইতি পরনে পায়জামা পাঞ্জাবী কাধে ঝোলা ব্যাগ ধীর পায়ে এদিকে আসছেন।গোপাল বলল,বস যা বলবে তাই হবে।
বিরক্ত হয়ে বিশু বলল,বস কিরে?আমরা কি কোনো মাফিয়ার দল?
সন্তোষবাবু আসতে হারু সাহা কিছু একটা বলার জন্য এগিয়ে যেতে কমরেড সন্তোষ মাইতি হাত তুলে থামিয়ে দিয়ে বললেন,কমরেড তোমরা এখানে থাকো।আমি রনোর সঙ্গে কথা বলে দেখি ওকী চায়।
সকলে পরস্পর মুখ চাওয়া-চাওয়ি করে।সন্তোষবাবু ভিতরে ঢুকে বন্ধ দরজার কড়া নাড়তে ভিতর থেকে সাড়া এল,কে-এ-এ?
সন্তোষদা দরজা খোল।
সঙ্গে সঙ্গে দরজা খুলে গেল।অবাক চোখে সামনে দাড়িয়ে আরণ্যক।খালি গা প্রশস্ত বক্ষ।রনো বলল,দাদা আপনি?খবর দিলে আমিই যেতাম--।
সন্তোষবাবু ঘরে আসবাব বলতে এককোনে একটা আলমারি আর দেওয়াল ঘেষে একটা চৌকি।মেঝেতে একটা শতরঞ্চি পাতা।
স্ট্রাগলিং লাইফ অথচ চলতে চলতে পা পিছলে যায়নি।সন্তোষ মাইতির মন ভারাক্রান্ত হয়।
কি করছিলি?
লাজুক গলায় রনো বলল,এই একটু যোগ-প্রাণায়াম করছিলাম।শতরঞ্চি তুলে ভাজ করতে করতে জিজ্ঞেস করে, দাদা একটু চা করি?
চৌকির একপাশে বসে বললেন,চা করবি কিনা জিজ্ঞেস করছিস?
লজ্জা পেয়ে রনো চৌকির নীচ থেকে স্টোভ বের করে জল চাপিয়ে দিল।
মাস্টার মশাইকে আমি শ্রদ্ধা করতাম।আমার দেখা সৎ মানুষদের একজন ছিলেন মাস্টারমশায়।বাবার কথা বলছে রনো বুঝতে পারে। চা হয়ে যেতে দুটো কাপে ঢেলে একটা কাপ এগিমে দিয়ে বলল,বিস্কুট নেই।
সন্তোষবাবু হাত বাড়িয়ে চায়ের কাপ নিয়ে চুমুক দিলেন,মোটামুটি।সুগন্ধী চা প্রত্যাশাও করেননি।এক পলক রনোকে দেখে বললেন,কেন এসেছি জিজ্ঞেস করলি নাতো?
মৃদু হেসে রনো বলল,জানি।বাড়ীঅলা পার্টি অফিসে গেছিল।
সরাসরি এলসিএসের কাছে।প্রভাত বসু কেসটা আমাকে দেখতে বলেছে।
রনো কোনো কথা বলেনা,এসব তার জানা।
সাহা বাবু নালিশ করেছে তুই ভাড়াও দিবি না ঘরও ছাড়বি না--।
উনি ঠিক কথা বলেনি।
মানে?
ভাড়া দেবো না বলিনি।সন্তোষদা আমরা এত বছর আছি মাস গেলেই প্রথমে ভাড়া মিটিয়ে দিয়েছি।মা মারা যাবার পর অনেক খরচা হয়ে গেছে।বলেছি তিনটে মাস সময় দিন কাকু সব ভাড়া মিটিয়ে দেব।আপনিই বলুন মানুষের বিপদ-আপদ থাকে না?
কোথা থেকে দিবি?
এর মধ্যে আমি কিছু না কিছু জুটিয়ে নেব।চিরকাল কি বেকার থাকব নাকি?
ছেলেটা খুব সরল।কি বলবেন সন্তোষবাবু ভেবে পান না।
কাকু কি বলে জানেন তোমাকে ভাড়া দিতে হবে না,তুমি ঘর ছেড়ে দাও।
আচ্ছা রনো মনে কর তোকে সময় দেওয়া হল।যদি এর মধ্যে কোনো চাকরি জোগাড় করতে না পারিস--?
পাবো না বলছেন?ছায়া নেমে আসে রনোর মুখে।
পাবিনা বলছি না।ধর যদি না পাস?
ঠিকই।রনো ঘরের কোনে দাড় করানো স্টিলের আলমারি দেখিয়ে বলল,বাবা এটা একুশশো টাকায় নতুন কিনেছিল।ওটা বেচে সাত-আটশো টাকা পাবো না?ওটা বেচে কড়ায় গণ্ডায় কাকুর পাওনা মিটিয়ে ঘর ছেড়ে পাড়া ছেড়ে চলে যাব।থানা পুলিশ পার্টি অফিস কোথাও যেতে হবে না।আপনি কাকুকে একটু বুঝিয়ে বলুন।আপনি বললে মুখের উপর না বলতে পারবে না।
সন্তোষবাবুর চোখ ঝাপসা হয়ে এল বললেন,পাড়া ছেড়ে চলে যাবি?
কি করব বলুন।সব কিছু আমার ইচ্ছাধীন নয়।
কি বলবেন সাহাবাবুকেই কি জবাব দেবেন কিছুটা দিশাহরা বোধ করেন।বললেন,তোর তো রান্নাই হয়নি,অনেক দেরী করিয়ে দিলাম।
না না দেরী আর কি।দু-মুঠো চাল আর দুটো আলু সেদ্ধ করে নিতে কতক্ষণ লাগবে।
সেকিরে তরিতরকারি আর কিছু করবি না?
রনো ফ্যাকাসে হেসে বলল,ওসব কিছু নেই তাছাড়া আমি ঐসব রান্না করতেও জানিনা।
এইভাবে দিনের পর দিন চালাচ্ছে ছেলেটা সন্তোষবাবুর বিস্ময়ে অন্ধকার দেখলেন।অন্ধকারের মধ্যে এক চিলতে বিদ্যুতের ঝিলিক খেলে যায়।দ্বিধা কাটিয়ে বললেন,তুই আমার দোকানে বসবি?
আপনার দোকানে?
সকালে হকারদের কাগজ দিবি কাকে কত দিতে হবে খাতায় লেখা আছে--।
আমি তো সব জানি।
দোকানে ঘুমোবি আর বদ্যিনাথের হোটেলে খাবি আমি বলে দেব।টাকা পয়সা দিতে পারবো না।
আপনি বলছেন এখান থেকে চলে যাব?
হ্যা যতদিন চাকরি না পাচ্ছিস--।
ঠিক আছে এটা যখন আপনার ইচ্ছে--।
তোর ইচ্ছে না হলে থাক।
ঠিক আছে দোকানেই বসব।
তুই এখন রান্না কর।ওবেলা বিশেরা এসে মালপত্তর নিয়ে যাবে।
বাইরে ওরা চিন্তিত সেই কখন ঢুকেছে কি করছে এতক্ষণ?সাড়া শব্দ নেই কিছু হলে শুনতে পেতো।পিকলু বলল ওইতো দাদা বের হচ্ছে।দাদার মুখ কেমন গম্ভীর তবু কেউ কিছু জিজ্ঞেস করার সাহস পায়না।সন্তোষবাবু বেরিয়ে এসে বললেন,পার্টি অফিসে চল।
সন্তোষদা ভালই কৌশল করলেন।যাকগে একদিক দিয়ে ভালই হল।রোজ রোজ আর অশান্তি ভাল লাগে না। রনো একসঙ্গে দুবেলার ভাত রান্না করে।আজ অর্ধেক চাল দিল হাড়িতে।ওবেলা বদ্যিনাথের হোটেল।বহুকাল মাছ খায়নি।হাড়িতে ভাত ফুটছে।খাওয়া থাকার ব্যবস্থা হল আর কি চাই। আলমারি খুলে জামা কাপড় সব দুটো ব্যাগে ভর্তি করে আলমারি খালি করে ফেলল।আলমারি নিয়ে যাবেনা।এখানে রেখেই বিক্রী করে দেবে।কপালে থাকলে পরে নতুন আলমারী কেনা যাবে।ঘর দোর নেই আলমারি বয়ে বেড়ানোর দরকার কি।
আজ কলেজ নেই।বেলা করে সাবান নিয়ে স্নানে ঢুকল ঝর্ণা। ছুটির দিন সাবান দিয়ে ভাল করে রগড়ে স্নান করতে হবে।বাথরুমের দরজা বন্ধ করে একটানে খুলে ফেলল শাড়ী।তলপেটের নীচে যোনীতে হাত বোলাতে কাটার মত বেধে।বশী বড় হয়নি কদিন পর সেভ করা যাবে।সারা শরীরে সাবান ঘষতে থাকে।গুদের মধ্যে আঙুল ভরে দিতে হিরশির করে উঠল সারা শরীর।অনিতা জিজ্ঞেস করছিল বিয়ে করিনি খারাপ লাগে কিনা?ইঙ্গিতটা বুঝতে অসুবিধে হবার কথা নয়।নিমু তাকে ফালা ফালা করেছে ওর জানার কথা নয়।অবশ্য খুব আয়েশ করে একেবারে উদোম হয়ে করার উপায় ছিল না।চারপাশে কমরেডরা ঘোরাঘুরি করছে।রাতেও পাহারা দিতে হতো।বলা যায়না কখন মাকুরা এ্যাটাক করে বসে।এরই মধ্যে সুযোগ হলে দুটো বাড়ীর ফাকে ঢুকে পাছা উচিয়ে দেওয়াল ধরে দাড়াতাম আর নিমু কাপড় কোমরের উপরে তুলে পিছন দিক থেকে ঠাপাতো।নিমুর মোনাটা বেশী বড় নয় আবার ছোটও নয়--মোটামুটি।সন্তোষদার মোনা বেশী বড় নয় আর দমও কম।মিনিট পাচেকের মধ্যে নেতিয়ে পড়ে।ওনারে দিয়ে করিয়ে সুখ হয়না।কি করে যে ওনার বউ ওনারে নিয়ে সংসার করছে।এই চাকরিটা দাদা করে দিয়ে খুব উপকার হয়েছে। এজন্য দাদার কাছে কৃতজ্ঞ।একথা কাউকে বলতে কেন নিষেধ করেছে কে জানে।মা ছাড়া কেউ একথা জানে না।
কিরে তোর হল?খাবি কখন?
মায়ের গলা পেয়ে হাপুস হুপুস জল ঢালতে থাকে ঝর্ণা।গামছা দিয়ে গা মুছতে মুছতে নিমুর কথা ভেবে দীর্ঘশ্বাস বেরিয়ে এল।
ভেবেছিল বিছানায় ফেলে একদিন আয়েশ করে করবে।বেচরা! সে সাধ আর পূরণ হল না।নিজেকে খুব একা মনে হয় সংসারে।
গরু বাথানে ফিরে এল ইলিনা ব্রাউন।বাড়ীতে থেকেই পড়াশুনা করবে।পরীক্ষার দু-দিন আগে কলকাতায় যাবে।সুপমাও দেশে চলে গেছে।ওর মামা বীরেনবাবু বেশ যত্নআত্তি করলেন।রসগোল্লা মিষ্টিটা ইলিনার বেশ পছন্দ হয়েছে।
মামন কি বলব দিদি না মা--দিন দিন খুব এ্যরোগাণ্ট হয়ে যাচ্ছে।কারো কথা শোনে না।যখন ইচ্ছে বেরিয়ে যায়।বাড়ী ফেরে রাত করে।মি. ব্রাউনের পরিবারের লোক সেজন্য কেউ কিছু বলার সাহস করেনা।ড্যাডও এব্যপারে নির্বিকার।
একটা জিনিস লক্ষ্য করেছ ইলিনা,মাম্মি যখন বাংলোর বাইরে বারান্দায় গিয়ে বসে একটা ছেলে বছর চৌত্রিশ-পয়ত্রিশ বয়স ড্যাড না থাকলে মাঝে মাঝে আসে।প্রথমে মনে হয়েছিল মামনের জন্য আসে।ছেলেটির নাম নিশীথ বর্মন,এল আই সিতে বড় অফিসার।কি এত গুজগুজ করে?ইলিনার পড়াশুনা আছে।এসব নিয়ে ভাবলে চলবে না।পরীক্ষায় তাকে ভালো রেজাল্ট করতে হবে।