18-04-2024, 08:11 AM
“আমি সিদ্ধান্ত নিয়েছি এ জীবন আর রাখবো না!”
এটাই ছিলো ডায়েরিতে লেখা শেষ বাক্য। এরপর শুধু খালি কিছু পাতা। ডায়েরি শেষ করে আমি পাগলপ্রায়। কি হয়েছিলো তন্ময়ের সাথে! সত্যি কি আত্মহত্যা করে ফেলেছে! আর কিবা এমন হয়েছিলো সেই রাতের পর যে তন্ময় আত্মহত্যা করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলো। এই ডায়েরিটা কি সত্যি সত্যি কারো লেখা? নাকি শুধুই একটা গল্প? তন্ময় বলতে কেউ আছে? কোথায় থাকে সে? কি করে জানবো তাঁর সর্বশেষ অবস্থা। অনেক অনেক প্রশ্ন অথচ কোন উত্তর জানা নেই। আমি আবারও গোগ্রাসে শুরু থেকে শেষ অব্দি পড়ে ফেলি ডায়েরিটা। যদি পাওয়া যায় কোন তথ্য, তন্ময় লোকটার আসল পরিচয়। স্যাডলি কোন নতুন তথ্যই পেলাম না। আছে শুধু কয়েকটা মানুষের নাম আর কিছু জায়গার বর্ননা। এ-থেকে কিছুই বুঝা সম্ভব না।
পরদিন গেলাম আমার বাসার পাশে সেই পুরাতন ভাঙ্গারির দোকানীর কাছে (মনে আছেতো তাঁর কথা? ঐ যে যে দোকান থেকে আমি এই অদ্ভুত ডায়েরিটা পেয়েছিলাম।) দোকানের মালিক কিছুতেই বলতে পারলো না এই ডায়েরির আসল সোর্স। শুধু জানালো, তাঁর দোকানে এসব পুরাতন বই আসে অসংখ্য হকার-ফেরিওয়ালাদেড় কাছ থেকে। কোন ফেরিওয়ালা এই ডায়েরি দিয়েছিলো, তাঁর মনে নেই। জিজ্ঞেস করলাম, এই ধরণের আর কোন ডায়েরি কই এসেছিলো? দোকানদার অনেকগুলা মাটিতে আঁটিবাঁধা পুরাতন পড়ে থাকা ডায়েরি দেখালো, আমি সবগুলো নাড়াচাড়া করে দেখালাম। খুবই মামুলী ডায়েরি, বাসার আর বাজারের হিসেব আর ছাইপাঁশ কবিতাতে ভর্তি। আমার সেই কাঙ্ক্ষিত তন্ময় নামক বিস্ময় যুবকের লেখা কোন ডায়েরি নয়।
বিরসবদনে বাসায় ফিরলাম। মাথা থেকে কিছুতেই তন্ময়কে সরাতে পারলাম না। পারলাম না জানতে তন্ময় কে? সত্যি কি বেঁচে আছে? কি হয়েছিলো সেদিন যে তন্ময়কে আত্মহত্যা করার কথা লিখতে হলো। এসব প্যাচালো ভাবনার মুহূর্তে আচমকা বিদ্যুৎ চমকের মতো মনে পড়লো, ডাঃ মুনিরা ফেরদৌসি যে হসপিটালে কাজ করতেন তাঁর নাম ছিলো ডায়েরীতে। সেই হসপিতালে খুঁজ নিলেইতো জানা যায় তিনি এখন কোথায়? তাঁর কাছ থেকে তন্ময় অব্দি পৌঁছাতে দেরি হবে না।
সেদিন দুপুরেই গেলাম, উত্তরা ল্যাবএইডে। রিসিপশনিস্ট জানালো, মুনিরা ফেরদৌসি এই হসপিটালে কাজ করতেন, এখন আর করেন না। জানতে চাইলাম, এখন কোথায় চেম্বার উনার? রিসিপশনিস্ট জানালো, ঊনি এখন দেশের বাইরে। চমকে উঠলাম আমি। ডায়েরিতেও তাই লিখা ছিলো। তাঁর মানে ডায়েরিতে মিথ্যে নয়, সত্যই লেখা ছিলো। রিসিপশনিস্টকর শতবার অনুরোধ স্বত্বেও মুনিরা ফেরদৌসির বাসার ঠিকানা দিলো না। তবে যখন আকার-ইঙ্গিতে টাকা দেয়ার কথা বললাম, সে রাজী হলো ঠিকানাটা দিতে। তবে সে সতর্ক করে দিলো, “এই ঠিকানাটা পুরাতন, ম্যাডাম বিদেশ যাওয়ার পরে থেকে উনার পরিবারের কেউ হয়তো থাকে না এই ঠিকানায়।”
আমি ঠিকানাটা পেয়েই আর সময় নষ্ট করলাম না। ঠিকানা অনুযায়ী ধানমন্ডির এক বাড়িতে গিয়ে হাজির হলাম। বাইরে থেকে সুন্দর গুছানো বাড়ি। বুঝতে পারলাম না এখন ঠিক করবো। আচমকা ঢুকে যাবো বাড়িতে? নাকি আশেপাশের দোকান টোকানে জিজ্ঞেশ করবো, “এখানে ডাঃ মুনিরা ফেরদৌসির বাড়ি কোনটা?”। অনেকক্ষন সিদ্ধান্তহীনভাবে বাড়িটার আশেপাশে হাঁটলাম। একটা সময় বাড়ি থেকে ইউনিফর্ম পরা সর্দার গোছের এক লোক বেরিয়ে এসে ধমকের সুরে জিজ্ঞেস করলো, “কি চান মিয়া! এইখানে কি?” বুঝলাম এই বাসার দারোয়ান হবে, লোকটার বলার ভংগি আর বিশালবপু চেহারায় একটু ভড়কে গেলাম, তাঁও সামলে নিয়ে বললাম, “চাচা মিয়া, ভালো আছেন? আমি পত্রিকার লোক, একটা খবরের জন্য আসছি।”
শুরুতে ভালো মন্দ আলাপ করে, পরিস্থিতি স্বাভাবিক করে নেয়ার চেষ্টা করলাম। কাজের শ্রেণির লোকেরা সাংবাদিক পরিচয়ে ভালোই পাত্তা দেয়। শুরুতে জেনে নিলাম, লোকটা এই বাসায় কতদিন ধরে কাজ করছে। শুরুতে একদমই নাছোড়বান্দা, কিছুই বলবো না এমন একটা ভাব দেখালেও, রিসিপশনিস্টের মতো এই লোকও টাকার গন্ধ পেতেই হড়হড় করে সব বলে গেলো। মোটামোটি ডায়েরীতে যা যা লিখা ছিলো, সেগুলোই তৃতীয় একজনের নজর থেকে যেভাবে দেখা যায় লোকটা তাই বলে গেলো। যেমন ধরেন, ডায়েরীর কারণে আমরা জানি, তন্ময় আর মুনিরা ফেরদৌসি নিয়মিত এই বাসাতেই সেক্স করতেন। আর দারোয়ানের ভাষায় বললে, “জিশান বাবাজী বিদেশ চলে যাওয়ার পরেও উনার বন্ধু সবসময় এই বাসায় পড়ে থাকতো। বুঝেনইতো একলা বেটী মানুষ পাইলে এই বয়সের পোলাপাইন কি করে।”
লোকটার কাছে অনেক কিছু জানা গেলেও তন্ময় এখন কোথায়? তাঁর কোন ঠিকানা কিছুই জানতে পারলাম না। শুধু জানলাম, এই বাসায় এখন মুনিরা ফেরদৌসি বা তাঁর পরিবারের কেউ থাকে না। সবাই দেশের বাইরে চলে গেছে। মাঝখানে পুলিশ কেইসেরও কিছু একটা হইছিলো। তবে কি কেইস বা কি ঘটনা তা দারোয়ান চাচা জানেন না। অনেক দৌড়াদৌড়ি করেও ফলাফল শুন্য। তন্ময়ের পরিচয় জানতে পারলাম না।
আস্তে আস্তে আমিও ভুলতে বসেছি এই ডায়েরির গল্প, নিজের জীবনে ব্যস্ত হয়ে পড়েছি। ভাবলাম ডায়েরিটা আপনাদের সাথে শেয়ার করি। হয়তো আপনারা কেউ চিনবেন তন্ময় কে! হয়তো আপনাদের কেউই তন্ময়।
~ সমাপ্ত