11-04-2024, 10:24 PM
(This post was last modified: 20-06-2024, 04:48 PM by kumdev. Edited 1 time in total. Edited 1 time in total.)
দ্বিতীয় পরিচ্ছেদ
আরণ্যক সোম।বন্ধু-বান্ধব প্রতিবেশীদের মুখে মুখে হয়ে গেছে রণো।নাম করণ করেছিলেন যিনি তিনি বছর দুয়েক আগে স্ত্রী পুত্র রেখে গত হয়েছেন।ছেলেটি মেধাবী কিন্তু পড়াশুনায় তেমন মন ছিল না।সুদর্শন স্বাস্থ্যবান ।ভয় ডর বলে কিছু ছিল না। অজানা সম্পর্কে ছিল অপরিসীম কৌতূহল।মাস তিনেক আগে মাও স্বামীর সহগামিনী হলেন।মৃত্যুর আগে একটি কাজ করে গেছেন,বাবা পড় বাবা পড় করে ছেলের পিছনে লেগে থেকে ছেলেটিকে বি.এ পাস করিয়ে গেছেন।
খুব বেশী করে আজ মনে পড়ছে মায়ের কথা।আরণ্যকের চোখ ঝাপসা হয়ে আসে।কেউ না থাকলে তার অভাব আরো বেশী করে বোঝা যায়।মায়ের জন্য কিছুই কোরতে পারেনি ভেবে একটা অপরাধবোধ অনুভব করে।কোনো একটা যেমন তেমন কাজ জোটতে পারলে সাহাবাবুুর ভাড়াটা মিটিয়ে দিতে হবে।লোকটার ইচ্ছে ঘর ছেড়ে দিক তাহলে আরও বেশী ভাড়ায় ভাড়াটে পাওয়া যাবে।তিন মাস সময় চেয়েছে,রাজী হচ্ছে না।বলে কিনা ভাড়া দিতে হবেনা তুমি ঘর ছেড়ে দাও।ছেড়ে দাও বললে হবে।আমি কি পথে গিয়ে দাড়াবো। খবর পেয়েছে সাহাবাবু পার্টি অফিসে ষোগাষোগ করছে।কিছু হলে লোকে এখন থানায় না গিয়ে পার্টি অফিসে নালিশ জানাতে যায়।কিছুকাল আগে এই অঞ্চল নকশালদের দখলে ছিল।নকশাল নেতা নিমুদা পুলিশের সঙ্গে এনকাউণ্টারে মারা যায়।নিমুদার সঙ্গে তার আলাপ ছিল।মানুষটা খারাপ নয়।কেন যে নকশাল করত।নিমুদার বউ ঝর্ণাবৌদি ছিল হিংস্র প্রকৃতি,নিমুদার সঙ্গে ঝর্ণা বৌদিও এ্যাকশনে অংশ নিতো। দুই কম্যুনিস্ট পার্টির মধ্যে লড়াই।একজন কি আরেকজনের শ্রেণী শত্রু?পাড়া ছাড়া পার্টির লোকেরা মাঝে মাঝে হামলা করত,পাড়াটা তখন রণক্ষেত্রের রূপ নিতো।আরণ্যক রাজনীতি করত না বলে নকশালরা তাকে কিছু বলেনি।একদিন পুলিশ সঙ্গে পার্টির ছেলেরা মিলে পাড়াটা ঘিরে ফেলে শুরু করল আক্রমন।একের পর পর বোমা পড়ছে,মাঝে মাঝে গুলির শব্দ।সারা পাড়া দরজা জানালা বন্ধ করে বসে আছে।বিকেলের দিকে থামলো।বাইরে বেরিয়ে একেবারে সুনসান।পরস্পর ফিস্ফাস কথা।পাড়া ছেড়ে পালিয়ে যাওয়া পার্টির লোকজন ফিরে এসেছে।নিমুদা নাকি পালাতে গিয়ে পুলিশের গুলিতে লুটিয়ে পড়েছে।ঝর্ণাবৌদিও শুনেছি সঙ্গে ছিল।কোনোভাবে পালিতে বেচেছে।পাড়াটা নকশাল মুক্ত হয়ে গেল।উফস কিভাবে যে দিনগুলো কেটেছে ভাবলে শিউরে উঠতে হয়।
পার্টির একটা কথা তার ভালো লেগেছে,বদলা নয় বদল চাই।পার্টির লোকজন পাড়ায় ফিরে নকশালদের বাড়ীর লোকজনের উপর কোনো বদলা নেয়নি।কদিন পর ঝর্ণাবৌদিকে দেখা গেল বাজার করতে বেরিয়েছে।আমরা পাড়ার ছেলেরা অবাক হয়ে দেখতাম মাটির দিকে তাকিয়ে ধীর পায়ে হেটে চলেছে।একসময় কি দাপট ছিল।দেওয়ালে রঙ দিয়ে লিখতো কৃষি বিপ্লবের কথা।
আরণ্যক রাজনীতি ভালো বোঝেনা,রাজনীতিতে তার তেমন আগ্রহ নেই।সন্তোষদা অনেকবার তাকে পার্টিতে যোগ দিতে বলেছেন,সে এড়িয়ে গেছে।নাবুঝে কোনোকিছু করা তার পক্ষে সম্ভব নয়।একই কারণে ঠাকুর দেবতায় তার তেমন ভরসা নেই।প্রান্তিক সমাজের মানুষের ব্যাপারে ছিল তার অপরিসীম কৌতূহল।বাউল বোস্টম বৃহন্নলা গণিকা জীবন নিয়ে লেখা অনেক বই পড়ায় তার আগ্রহ।বন্ধুবান্ধবরা তার মনের এইসব খবর জানেনা।
ইলিনা গরুবাথানে চলে যাবে।ভার্সিটিতে আর ক্লাস হচ্ছে না।কয়েক সপ্তাহ পর পরীক্ষা।সুপমাও দেশে ঘাটাল চলে যাবে।বেরোবার জন্য প্রস্তুত হয় দুজনে। সুপমার মনে হল কথাটা জিজ্ঞেস করবে কিনা? ইলিনার সঙ্গে চোখাচুখি হতে সুপমা অদ্ভুত ভাবে তাকিয়ে হাসল।
কিছু বলবে?
ভাবছি একটা কথা জিজ্ঞেস করবো কিনা?
হোয়াই হেজিটেট?
কিছু মাইণ্ড করবে নাতো?
কি ব্যাপার বলতো?
ইলু তুমি কি ড্রিঙ্ক করো?
ইলিনা খিল খিল হেসে উঠল।
সুপমা বলল,তাহলে আমার হয়তো ভুল হয়ে থাকবে--।
তোমার ভুল হয়নি দোস্ত তুমি ঠিক আন্দাজ করেছো।
মাথা নীচু করে একটু ভেবে ইলিনা বলল,তোমাকে তো আমার পরিবারের কথা সব বলেছি।বাড়িতে ডিনারের পর সবাই একটু সিপ করতাম।আসলে বাঙালী পরিবারে এসব চলে না আমিও তোমাকে ইন্সিস্ট করিনি।তুমি একেবারে রেডি?এখনি বেরোবে নাকি?
একটু মামার সঙ্গে দেখা করে যাব।
আমার গাড়ী রাত সাড়ে-দশটায়,এতক্ষন একা থাকতে হবে।
সুপমার খারাপ লাগে বন্ধুকে একা রেখে যেতে।এক্টু ভেবে বলল,তুমিও চলো না গল্প করতে করতে বেশ সময় কেটে যাবে।
প্রস্তাবটা ইলিনার খারাপ লাগে না।বাঙালী পরিবারের সঙ্গে মেলামেশার সুযোগ তেমন হয়নি।একদিন গেছিল খারাপ লাগেনি।ওরা অবাক হয়ে তাকে দেখছিল কথাবার্তা হয়নি।ইলিনা বলল,ওকে আমাকে তৈরী হতে একটু সময় দাও।
ইলিনা প্যাণ্ট বদলে শাড়ী পরতে থাকে।সুপমা তাকে সাহায্য করে।
দড়ি ধরে মাপজোক করা হচ্ছে।বীরেন সামন্ত দাঁড়িয়ে নির্দেশ দিচ্ছে।রাজনৈতিক কারণে প্রায় বছর দেড়েক বন্ধ ছিল কাজকর্ম।উফস কিভাবে যে দিন কেটেছে।বাড়ীতে আত্মীয়-স্বজন আসা প্রায় বন্ধ।দাগ দেওয়া হলে দাগ ধরে মাটি কাটা শুরু হল।পারিবারিক ব্যবসা গহনা বানানো হলেও বীরু সামন্ত প্রোমোটারি ব্যবসা শুরু করেছে বছর পাচেক হতে চললো।বীরু সামন্তের কজে ফাকিবাজী নেই এই অঞ্চলে একটা সুনাম আছে।
কি হলরে?বীরু সামন্ত পাড়ে।
বাবু জল উঠছে।
একজন আমার বাসায় গিয়ে পাম্পটা নিয়ে আয়।
দু-মিনিট দূরে বীরু সামন্তের বাসা।একজন মজুর পাম্প আনতে চলে গেল।ঝুড়ি কোদাল কড়াই সব মজুত আছে।অনেকে ভাড়া নিয়ে কাজ করে।দূরে কি দেখে নজর আটকে যায় ভ্রু কুচকে লক্ষ্য করে,পুটিই তো।সঙ্গের মেয়েটিকে দেখে অস্বস্তি বোধ করে।ইংরেজি বলতে পারেনা বীরু।আগেও একবার এসেছিল,এড়িয়ে গেছে বীরু।
সুপমা কাছে এসে বলল,কি মামু ভাল আছো?
হ্যা-হ্যা বাড়ী যা।মা প্রায়ই তোর কথা বলে।
ইলুকে তো তুমি আগেও দেখেছো।
এই ভয় পাচ্ছিল,বোকার মত হেসে বলল,হ্যা-হ্যা তুই বাসায় যা পুটি।
খোড়াখুড়ি দেখিয়ে ইলিনা জিজ্ঞেস করে,এখানে কি হচ্ছে?
কথাটা কানে যেতেই বীরু সামন্তের বিস্ময়ের ঘোর কাটেনা।মেয়েটি বাংলা বলছে স্পষ্ট শুনল।নিজেকে সামলে নিয়ে বলল,এখানে ফ্লাট হবে।চার তলা ফ্লাট,এক-এক তলায় তিনটে ফ্লাট--আপনি পুটির সঙ্গে বাসায় যান--।
মাম্মা আমি সোপমার বন্ধু আমাকে কেন আপনি বলছেন?
মামুর কথা শুনে খিল খিল হেসে ওঠে সুপমা।ওর দিকে তাকিয়ে চোখ পাকিয়ে বীরু বলল,ঠিক-ঠিক তুমি বন্ধুর সঙ্গে যাও।
ওরা চলে যেতে বীরু স্বস্তি বোধ করে।ওদের চলে যাওয়ার দিকে তাকিয়ে ভাবে,বড়দির এই মেয়েটা লেখাপড়ায় খুব ভাল,সব নাতি-নাতনীর মধ্যে পুটি মায়ের খুব আদরের।
পাম্প নিয়ে আসতে বলল,জল সেচে মাটি কাটা শুরু কর।আমি আসছি।
ওরা এসেছে,বীরু সামন্ত মিস্টি কিনতে গেল।
কিছুটা যেতেই সন্তোষ মাইতির সঙ্গে দেখা।
হন হন করে কোথায় চললি?
মুখে হাসি টেনে বলল,বাড়িতে গেস্ট এসেছে একটু মিষ্টি আনতে যাচ্ছি।ভালো আছেন দাদা?
শুনলাম নতুন কাজে হাত দিয়েছিস?
আপনাদের আশির্বাদে হে-হে-
ফ্রিতে আশির্বাদ?
তা কেন সময় হলেই আপনার গিফট পৌছে যাবে--বীরু সামন্ত বেইমান নয়--।
হয়েছে হয়েছে যেখানে যাচ্ছিলি যা।
বীরু এগোতে থাকে।শালা শকুনের চোখ সব দিকে নজর।বীরু সক্রিয়ভাবে পার্টি করেনা পার্টির সমর্থক ভাব করে।প্রোমোটারি কোরতে হলে এদের সঙ্গে খাতির রাখতেই হবে।এক সময় অঞ্চলের ত্রাস ছিল ঝর্ণা।সেই ঝর্ণার সঙ্গে এখন বেশ খাতির।শালা রাজনীতি তার বোঝার কম্ম নয়।
সূর্য ঢলে পড়েছে পশ্চিমে।শিক্ষা নিকেতন প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ছুটির ঘণ্টা বাজতে ছেলে মেয়েরা হৈ-হৈ করে বেরিয়ে পড়ল।
রেখার বিয়ে সবাইকে নিমন্ত্রণ করেছে।সেইসব নিয়ে কথা হচ্ছিল স্টাফ রুমে।ছেলের বাড়ী হাওড়া।বিয়ের পর রেখাকে হাওড়া থেকে যাতায়াত করতে হবে।ঝর্ণা পাল কলেজ হতে পিছন থেকে আনিতা এসে বলল,মেয়েদের এই এক ঝামেলা।পাচ মিনিট হেটে কলেজে আসতো এখন খেয়া পেরিয়ে বাস জার্নি করে কলেজে আসতে হবে।
এইসব আলোচনায় ঝর্ণার আগ্রহ নেই।সে ভাবছিল অন্য কথা।মেয়েরা বিয়ে করে কেন?বাপ-মা চিরকাল থাকবে না সেজন্য কোনো উপার্জনক্ষম ছেলের সঙ্গে বিয়ে দেওয়া যাতে মেয়ের গ্রাসাচ্ছদনের উপায় হয়।শুধু কি তাই? মেয়ে যদি নিজেই নিজের ব্যবস্থা করতে পারে তাহলে কি বিয়ের প্রয়োজন নেই?শারীরি সুখকে কি উপেক্ষা করা যায়?অবশ্য পরস্পর দেখাশোনার ব্যাপারটাও আছে।পাড়ার ডাক্তারবাবু এস.পি. মুখার্জীর একমাত্র সন্তান মেয়ে।মেয়ের বিয়ের পর এখন বিদেশে থাকে।ড.মুখার্জীর মৃত্যুর পর মিসেস মুখার্জী একা থাকেন।মেয়ে কালেভদ্রে দেশে আসে মাকে দেখতে,চলে তো যাচ্ছে।
ঝর্ণাদি কি ভাবছো বলতো?সাড়া না পেয়ে অনিতা জিজ্ঞেস করল।
ভাবছি বিয়ের পর মেয়েকে কেন ছেলের বাড়ি যেতে হবে।কারা এসব নিয়ম করল?
অদ্ভুত লাগে ঝর্ণাদির কথা।অনিতা বলল,বারে সবাই কেন ঘর-জামাই থাকতে রাজী হবে?
ঝর্ণা বিরক্ত হয় বলে,আমি সেকথা বলিনি।ঘর-জামাই হয় অপদার্থ নিষ্কর্মারা--
ঠিকই তো।
না ঠিক নয়।আসল কথা হচ্ছে আমাদের পুরুষতান্ত্রিক সমাজ ব্যবস্থা।সামাজিক প্রথা বিধি-বিধান সৃষ্টি করেছে পুরুষরা তাদের অনুকূলে---।
অনিতা কথা বাড়ায় না।ঝর্ণাদির অতীত সে কিছুটা জানে।একজন মেয়েমানুষ বোমা-পিস্তল নিয়ে দৌড়াদৌড়ি করে সে ভাবতেই পারেনা।ওদের কথাবার্তা অন্যরকম।কথা ঘোরাবার জন্য বলল,আচ্ছা ঝর্ণাদি তোমাকে একটা কথা জিজ্ঞেস করব রাগ করবে নাতো?
কি কথা,রাগ করব কেন?
এই যে তুমি বিয়ে করোনি তোমার খারাপ লাগেনা?
অনিতা কি জানতে চায় বুঝতে অসুবিধে হয়না।জিজ্ঞেস করে,তোমার একথা কেন মনে এল?
না এমনি বললাম।
তোমাকে একটা কথা জিজ্ঞেস করি?
অনিতার বিয়ে হয়েছে বছর খানেক।বাপের বাড়ী শ্বশুরবাড়ী একঘণ্টার ব্যবধান।কলেজের আরও কাছে।কলেজের পথে দেখে ওরা অনিতাকে পছন্দ করেছিল। অনিতা বলল,আমি ভালই আছি।তুমি কি জিজ্ঞেস করবে?
তোমরা রোজই মিলিত হও?
অনিতা রক্তিম হয়,লাজুক গলায় বলল,ছেলেরা ভীষণ অসভ্য হয়।
মানে?
সারাদিন কিছু না।রাতে বিছানায় শুয়ে আমার ছোয়া লাগলেই নাকি শক্ত হয়ে যায়-।
কি শক্ত হয়ে যায়?
জানি না যাও।একটু ভেবে উদাস গলায় বলল,তখন কেমন মায়া হয়।নরম করে নাদিলে সারারাত কষ্ট পাবে--।
উলঙ্গ করে দেয়?
ধ্যেৎ আমার লজ্জা করে।কাপড় উঠিয়ে নিয়ে করে।
চোদাতে লজ্জা করেনা উলঙ্গ হতে লজ্জা যত ঢং।মনে মনে ভাবে ঝর্ণা।
বাড়ীর কাছে এসে পড়েছে।ঝর্ণা বলল,আসিরে।কাল তো রবিবার।
আরণ্যক সোম।বন্ধু-বান্ধব প্রতিবেশীদের মুখে মুখে হয়ে গেছে রণো।নাম করণ করেছিলেন যিনি তিনি বছর দুয়েক আগে স্ত্রী পুত্র রেখে গত হয়েছেন।ছেলেটি মেধাবী কিন্তু পড়াশুনায় তেমন মন ছিল না।সুদর্শন স্বাস্থ্যবান ।ভয় ডর বলে কিছু ছিল না। অজানা সম্পর্কে ছিল অপরিসীম কৌতূহল।মাস তিনেক আগে মাও স্বামীর সহগামিনী হলেন।মৃত্যুর আগে একটি কাজ করে গেছেন,বাবা পড় বাবা পড় করে ছেলের পিছনে লেগে থেকে ছেলেটিকে বি.এ পাস করিয়ে গেছেন।
খুব বেশী করে আজ মনে পড়ছে মায়ের কথা।আরণ্যকের চোখ ঝাপসা হয়ে আসে।কেউ না থাকলে তার অভাব আরো বেশী করে বোঝা যায়।মায়ের জন্য কিছুই কোরতে পারেনি ভেবে একটা অপরাধবোধ অনুভব করে।কোনো একটা যেমন তেমন কাজ জোটতে পারলে সাহাবাবুুর ভাড়াটা মিটিয়ে দিতে হবে।লোকটার ইচ্ছে ঘর ছেড়ে দিক তাহলে আরও বেশী ভাড়ায় ভাড়াটে পাওয়া যাবে।তিন মাস সময় চেয়েছে,রাজী হচ্ছে না।বলে কিনা ভাড়া দিতে হবেনা তুমি ঘর ছেড়ে দাও।ছেড়ে দাও বললে হবে।আমি কি পথে গিয়ে দাড়াবো। খবর পেয়েছে সাহাবাবু পার্টি অফিসে ষোগাষোগ করছে।কিছু হলে লোকে এখন থানায় না গিয়ে পার্টি অফিসে নালিশ জানাতে যায়।কিছুকাল আগে এই অঞ্চল নকশালদের দখলে ছিল।নকশাল নেতা নিমুদা পুলিশের সঙ্গে এনকাউণ্টারে মারা যায়।নিমুদার সঙ্গে তার আলাপ ছিল।মানুষটা খারাপ নয়।কেন যে নকশাল করত।নিমুদার বউ ঝর্ণাবৌদি ছিল হিংস্র প্রকৃতি,নিমুদার সঙ্গে ঝর্ণা বৌদিও এ্যাকশনে অংশ নিতো। দুই কম্যুনিস্ট পার্টির মধ্যে লড়াই।একজন কি আরেকজনের শ্রেণী শত্রু?পাড়া ছাড়া পার্টির লোকেরা মাঝে মাঝে হামলা করত,পাড়াটা তখন রণক্ষেত্রের রূপ নিতো।আরণ্যক রাজনীতি করত না বলে নকশালরা তাকে কিছু বলেনি।একদিন পুলিশ সঙ্গে পার্টির ছেলেরা মিলে পাড়াটা ঘিরে ফেলে শুরু করল আক্রমন।একের পর পর বোমা পড়ছে,মাঝে মাঝে গুলির শব্দ।সারা পাড়া দরজা জানালা বন্ধ করে বসে আছে।বিকেলের দিকে থামলো।বাইরে বেরিয়ে একেবারে সুনসান।পরস্পর ফিস্ফাস কথা।পাড়া ছেড়ে পালিয়ে যাওয়া পার্টির লোকজন ফিরে এসেছে।নিমুদা নাকি পালাতে গিয়ে পুলিশের গুলিতে লুটিয়ে পড়েছে।ঝর্ণাবৌদিও শুনেছি সঙ্গে ছিল।কোনোভাবে পালিতে বেচেছে।পাড়াটা নকশাল মুক্ত হয়ে গেল।উফস কিভাবে যে দিনগুলো কেটেছে ভাবলে শিউরে উঠতে হয়।
পার্টির একটা কথা তার ভালো লেগেছে,বদলা নয় বদল চাই।পার্টির লোকজন পাড়ায় ফিরে নকশালদের বাড়ীর লোকজনের উপর কোনো বদলা নেয়নি।কদিন পর ঝর্ণাবৌদিকে দেখা গেল বাজার করতে বেরিয়েছে।আমরা পাড়ার ছেলেরা অবাক হয়ে দেখতাম মাটির দিকে তাকিয়ে ধীর পায়ে হেটে চলেছে।একসময় কি দাপট ছিল।দেওয়ালে রঙ দিয়ে লিখতো কৃষি বিপ্লবের কথা।
আরণ্যক রাজনীতি ভালো বোঝেনা,রাজনীতিতে তার তেমন আগ্রহ নেই।সন্তোষদা অনেকবার তাকে পার্টিতে যোগ দিতে বলেছেন,সে এড়িয়ে গেছে।নাবুঝে কোনোকিছু করা তার পক্ষে সম্ভব নয়।একই কারণে ঠাকুর দেবতায় তার তেমন ভরসা নেই।প্রান্তিক সমাজের মানুষের ব্যাপারে ছিল তার অপরিসীম কৌতূহল।বাউল বোস্টম বৃহন্নলা গণিকা জীবন নিয়ে লেখা অনেক বই পড়ায় তার আগ্রহ।বন্ধুবান্ধবরা তার মনের এইসব খবর জানেনা।
ইলিনা গরুবাথানে চলে যাবে।ভার্সিটিতে আর ক্লাস হচ্ছে না।কয়েক সপ্তাহ পর পরীক্ষা।সুপমাও দেশে ঘাটাল চলে যাবে।বেরোবার জন্য প্রস্তুত হয় দুজনে। সুপমার মনে হল কথাটা জিজ্ঞেস করবে কিনা? ইলিনার সঙ্গে চোখাচুখি হতে সুপমা অদ্ভুত ভাবে তাকিয়ে হাসল।
কিছু বলবে?
ভাবছি একটা কথা জিজ্ঞেস করবো কিনা?
হোয়াই হেজিটেট?
কিছু মাইণ্ড করবে নাতো?
কি ব্যাপার বলতো?
ইলু তুমি কি ড্রিঙ্ক করো?
ইলিনা খিল খিল হেসে উঠল।
সুপমা বলল,তাহলে আমার হয়তো ভুল হয়ে থাকবে--।
তোমার ভুল হয়নি দোস্ত তুমি ঠিক আন্দাজ করেছো।
মাথা নীচু করে একটু ভেবে ইলিনা বলল,তোমাকে তো আমার পরিবারের কথা সব বলেছি।বাড়িতে ডিনারের পর সবাই একটু সিপ করতাম।আসলে বাঙালী পরিবারে এসব চলে না আমিও তোমাকে ইন্সিস্ট করিনি।তুমি একেবারে রেডি?এখনি বেরোবে নাকি?
একটু মামার সঙ্গে দেখা করে যাব।
আমার গাড়ী রাত সাড়ে-দশটায়,এতক্ষন একা থাকতে হবে।
সুপমার খারাপ লাগে বন্ধুকে একা রেখে যেতে।এক্টু ভেবে বলল,তুমিও চলো না গল্প করতে করতে বেশ সময় কেটে যাবে।
প্রস্তাবটা ইলিনার খারাপ লাগে না।বাঙালী পরিবারের সঙ্গে মেলামেশার সুযোগ তেমন হয়নি।একদিন গেছিল খারাপ লাগেনি।ওরা অবাক হয়ে তাকে দেখছিল কথাবার্তা হয়নি।ইলিনা বলল,ওকে আমাকে তৈরী হতে একটু সময় দাও।
ইলিনা প্যাণ্ট বদলে শাড়ী পরতে থাকে।সুপমা তাকে সাহায্য করে।
দড়ি ধরে মাপজোক করা হচ্ছে।বীরেন সামন্ত দাঁড়িয়ে নির্দেশ দিচ্ছে।রাজনৈতিক কারণে প্রায় বছর দেড়েক বন্ধ ছিল কাজকর্ম।উফস কিভাবে যে দিন কেটেছে।বাড়ীতে আত্মীয়-স্বজন আসা প্রায় বন্ধ।দাগ দেওয়া হলে দাগ ধরে মাটি কাটা শুরু হল।পারিবারিক ব্যবসা গহনা বানানো হলেও বীরু সামন্ত প্রোমোটারি ব্যবসা শুরু করেছে বছর পাচেক হতে চললো।বীরু সামন্তের কজে ফাকিবাজী নেই এই অঞ্চলে একটা সুনাম আছে।
কি হলরে?বীরু সামন্ত পাড়ে।
বাবু জল উঠছে।
একজন আমার বাসায় গিয়ে পাম্পটা নিয়ে আয়।
দু-মিনিট দূরে বীরু সামন্তের বাসা।একজন মজুর পাম্প আনতে চলে গেল।ঝুড়ি কোদাল কড়াই সব মজুত আছে।অনেকে ভাড়া নিয়ে কাজ করে।দূরে কি দেখে নজর আটকে যায় ভ্রু কুচকে লক্ষ্য করে,পুটিই তো।সঙ্গের মেয়েটিকে দেখে অস্বস্তি বোধ করে।ইংরেজি বলতে পারেনা বীরু।আগেও একবার এসেছিল,এড়িয়ে গেছে বীরু।
সুপমা কাছে এসে বলল,কি মামু ভাল আছো?
হ্যা-হ্যা বাড়ী যা।মা প্রায়ই তোর কথা বলে।
ইলুকে তো তুমি আগেও দেখেছো।
এই ভয় পাচ্ছিল,বোকার মত হেসে বলল,হ্যা-হ্যা তুই বাসায় যা পুটি।
খোড়াখুড়ি দেখিয়ে ইলিনা জিজ্ঞেস করে,এখানে কি হচ্ছে?
কথাটা কানে যেতেই বীরু সামন্তের বিস্ময়ের ঘোর কাটেনা।মেয়েটি বাংলা বলছে স্পষ্ট শুনল।নিজেকে সামলে নিয়ে বলল,এখানে ফ্লাট হবে।চার তলা ফ্লাট,এক-এক তলায় তিনটে ফ্লাট--আপনি পুটির সঙ্গে বাসায় যান--।
মাম্মা আমি সোপমার বন্ধু আমাকে কেন আপনি বলছেন?
মামুর কথা শুনে খিল খিল হেসে ওঠে সুপমা।ওর দিকে তাকিয়ে চোখ পাকিয়ে বীরু বলল,ঠিক-ঠিক তুমি বন্ধুর সঙ্গে যাও।
ওরা চলে যেতে বীরু স্বস্তি বোধ করে।ওদের চলে যাওয়ার দিকে তাকিয়ে ভাবে,বড়দির এই মেয়েটা লেখাপড়ায় খুব ভাল,সব নাতি-নাতনীর মধ্যে পুটি মায়ের খুব আদরের।
পাম্প নিয়ে আসতে বলল,জল সেচে মাটি কাটা শুরু কর।আমি আসছি।
ওরা এসেছে,বীরু সামন্ত মিস্টি কিনতে গেল।
কিছুটা যেতেই সন্তোষ মাইতির সঙ্গে দেখা।
হন হন করে কোথায় চললি?
মুখে হাসি টেনে বলল,বাড়িতে গেস্ট এসেছে একটু মিষ্টি আনতে যাচ্ছি।ভালো আছেন দাদা?
শুনলাম নতুন কাজে হাত দিয়েছিস?
আপনাদের আশির্বাদে হে-হে-
ফ্রিতে আশির্বাদ?
তা কেন সময় হলেই আপনার গিফট পৌছে যাবে--বীরু সামন্ত বেইমান নয়--।
হয়েছে হয়েছে যেখানে যাচ্ছিলি যা।
বীরু এগোতে থাকে।শালা শকুনের চোখ সব দিকে নজর।বীরু সক্রিয়ভাবে পার্টি করেনা পার্টির সমর্থক ভাব করে।প্রোমোটারি কোরতে হলে এদের সঙ্গে খাতির রাখতেই হবে।এক সময় অঞ্চলের ত্রাস ছিল ঝর্ণা।সেই ঝর্ণার সঙ্গে এখন বেশ খাতির।শালা রাজনীতি তার বোঝার কম্ম নয়।
সূর্য ঢলে পড়েছে পশ্চিমে।শিক্ষা নিকেতন প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ছুটির ঘণ্টা বাজতে ছেলে মেয়েরা হৈ-হৈ করে বেরিয়ে পড়ল।
রেখার বিয়ে সবাইকে নিমন্ত্রণ করেছে।সেইসব নিয়ে কথা হচ্ছিল স্টাফ রুমে।ছেলের বাড়ী হাওড়া।বিয়ের পর রেখাকে হাওড়া থেকে যাতায়াত করতে হবে।ঝর্ণা পাল কলেজ হতে পিছন থেকে আনিতা এসে বলল,মেয়েদের এই এক ঝামেলা।পাচ মিনিট হেটে কলেজে আসতো এখন খেয়া পেরিয়ে বাস জার্নি করে কলেজে আসতে হবে।
এইসব আলোচনায় ঝর্ণার আগ্রহ নেই।সে ভাবছিল অন্য কথা।মেয়েরা বিয়ে করে কেন?বাপ-মা চিরকাল থাকবে না সেজন্য কোনো উপার্জনক্ষম ছেলের সঙ্গে বিয়ে দেওয়া যাতে মেয়ের গ্রাসাচ্ছদনের উপায় হয়।শুধু কি তাই? মেয়ে যদি নিজেই নিজের ব্যবস্থা করতে পারে তাহলে কি বিয়ের প্রয়োজন নেই?শারীরি সুখকে কি উপেক্ষা করা যায়?অবশ্য পরস্পর দেখাশোনার ব্যাপারটাও আছে।পাড়ার ডাক্তারবাবু এস.পি. মুখার্জীর একমাত্র সন্তান মেয়ে।মেয়ের বিয়ের পর এখন বিদেশে থাকে।ড.মুখার্জীর মৃত্যুর পর মিসেস মুখার্জী একা থাকেন।মেয়ে কালেভদ্রে দেশে আসে মাকে দেখতে,চলে তো যাচ্ছে।
ঝর্ণাদি কি ভাবছো বলতো?সাড়া না পেয়ে অনিতা জিজ্ঞেস করল।
ভাবছি বিয়ের পর মেয়েকে কেন ছেলের বাড়ি যেতে হবে।কারা এসব নিয়ম করল?
অদ্ভুত লাগে ঝর্ণাদির কথা।অনিতা বলল,বারে সবাই কেন ঘর-জামাই থাকতে রাজী হবে?
ঝর্ণা বিরক্ত হয় বলে,আমি সেকথা বলিনি।ঘর-জামাই হয় অপদার্থ নিষ্কর্মারা--
ঠিকই তো।
না ঠিক নয়।আসল কথা হচ্ছে আমাদের পুরুষতান্ত্রিক সমাজ ব্যবস্থা।সামাজিক প্রথা বিধি-বিধান সৃষ্টি করেছে পুরুষরা তাদের অনুকূলে---।
অনিতা কথা বাড়ায় না।ঝর্ণাদির অতীত সে কিছুটা জানে।একজন মেয়েমানুষ বোমা-পিস্তল নিয়ে দৌড়াদৌড়ি করে সে ভাবতেই পারেনা।ওদের কথাবার্তা অন্যরকম।কথা ঘোরাবার জন্য বলল,আচ্ছা ঝর্ণাদি তোমাকে একটা কথা জিজ্ঞেস করব রাগ করবে নাতো?
কি কথা,রাগ করব কেন?
এই যে তুমি বিয়ে করোনি তোমার খারাপ লাগেনা?
অনিতা কি জানতে চায় বুঝতে অসুবিধে হয়না।জিজ্ঞেস করে,তোমার একথা কেন মনে এল?
না এমনি বললাম।
তোমাকে একটা কথা জিজ্ঞেস করি?
অনিতার বিয়ে হয়েছে বছর খানেক।বাপের বাড়ী শ্বশুরবাড়ী একঘণ্টার ব্যবধান।কলেজের আরও কাছে।কলেজের পথে দেখে ওরা অনিতাকে পছন্দ করেছিল। অনিতা বলল,আমি ভালই আছি।তুমি কি জিজ্ঞেস করবে?
তোমরা রোজই মিলিত হও?
অনিতা রক্তিম হয়,লাজুক গলায় বলল,ছেলেরা ভীষণ অসভ্য হয়।
মানে?
সারাদিন কিছু না।রাতে বিছানায় শুয়ে আমার ছোয়া লাগলেই নাকি শক্ত হয়ে যায়-।
কি শক্ত হয়ে যায়?
জানি না যাও।একটু ভেবে উদাস গলায় বলল,তখন কেমন মায়া হয়।নরম করে নাদিলে সারারাত কষ্ট পাবে--।
উলঙ্গ করে দেয়?
ধ্যেৎ আমার লজ্জা করে।কাপড় উঠিয়ে নিয়ে করে।
চোদাতে লজ্জা করেনা উলঙ্গ হতে লজ্জা যত ঢং।মনে মনে ভাবে ঝর্ণা।
বাড়ীর কাছে এসে পড়েছে।ঝর্ণা বলল,আসিরে।কাল তো রবিবার।