Thread Rating:
  • 114 Vote(s) - 2.66 Average
  • 1
  • 2
  • 3
  • 4
  • 5
কিছু মনের সত্যি কথা
একটা রূপকথা

 
 
বছর পাঁচেক আগের কথা -
মেয়েটি প্রেমে পড়েছিল।
গভীর সে প্রেম।
পাগলপারা সে প্রেম।
ভালবাসার মতো গভীর সে প্রেম।
প্রেম, তবু আমাদের মতো সাধারণ মানুষের চোখে যা ‘সুগম’, তেমনি প্রেম কিন্তু না। বরং বেশ একটু ব্যবধান ছিল দুজনের মধ্যে।
বয়সের ব্যবধান।
ভাষা ও সংস্কৃতির ব্যবধান।
আর, তারচেয়েও বেশি করে - অবস্থানের ব্যবধান।
মেয়েটি একজন - সাংবাদিক। যার ক্ষুরধার মস্তিস্ক আর চাবুক কলম আছে। আর অন্যদিকে, প্রেমিকটি বিনোদন জগতের বেশ নামী মুখ।
ভালোই চলছিল দুজনের যাপন। ভালবাসাকেই বাসা বানিয়েছিল মেয়েটা। ভেবেছিল, সেই বাসায় সবটাই বুঝি ভালো, সব কোণেই বুঝি আলো।
কিন্তু এ যে ঘোর কলি! তাই, একদিন মেয়েটি হঠাৎ করেই জানতে পারে ‘নারী’ থেকে ‘মা’ এর উত্তরণ হয়েছে। বীজ অঙ্কুরোদগমের জন্য প্রস্তুত।
খুশি হয়েছিল খুব মেয়েটি। খুশিরই তো খবর! এমন ভাসাভাসি প্রেমের ফল আসছে ঘরে - এর চেয়ে আনন্দের কী কিছু হতে পারে!
কিন্তু, জীবন যে ‘সিনেমা’ নয়, তাই প্রেমিকের কাছ থেকে মেয়েটি পেল অবহেলা এবং, আধুনিক ভাষায় যাকে বলে ‘ঘোস্ট’ করে দেওয়া, অর্থাৎ ব্লক করে দেওয়া ফোন থেকে।
ভাবছেন, এ তো কত হচ্ছে! আজকের ঘটনা তো নয়, যুগ যুগ ধরেই হচ্ছে।
বা ভাবছেন “মেয়েটা কেন অ্যালাও করল?” বা, “মেয়েটারও দোষ আছে!”
তাহলে বলি, গান্ধর্ব মতে বিয়ে হয়েছিল দুজনের। আর মেয়েটা ‘ভালবেসেছিল।’ তাই, কোনো বাধাই বাঁধা মনে হয়নি। আর এর সাথে যুক্ত হয়েছিল ছেলেটির একটার পর একটা মিথ্যে কথা বলা। মিথ্যে প্রতিশ্রুতি, মিথ্যে স্বপ্ন।
এবার কি ভাবছেন? “মেয়েটির অ্যাবরশান করানো উচিৎ?”
আজ্ঞে না, এই মেয়ে আমাদের এই অন্য রূপকথার নায়িকা। নিজের দায়িত্ব, আগত সন্তানের দায়িত্ব নিয়েছে নিজেই। আর সেই সঙ্গে নিজের কাছে প্রতিজ্ঞা করেছে দিনের পর দিন যে মিথ্যে বলে গেছে, তাকে শাস্তি দেবেই।
একনার ভাবুন তো - যতই আমরা নিজেদের আধুনিক ভাবি না কেন, এখনও পর্যন্ত তো আমাদের সমাজের একটা দাঁত-নখ আছেই, যেটা সময়ে অসময়ে বেরিয়ে পড়ে। আর তার মধ্যে একা একটি মেয়ে, অন্তঃসত্ত্বা, প্রতারিতা, একাকিনী! ক্লান্ত শরীর এবং ততোধিক ক্ষত-বিক্ষত মন।
তবু, একটি বারের জন্যেও হাল ছাড়েনি মেয়েটা। নিজেকে ‘বেচারা’ ভাবেনি। বরং দাঁতে দাঁত চেপে লড়াই করেছে। প্রতারকের বিরুদ্ধে।
অর্থ, আর্থিক সহায়তা চায় না সে। কিন্তু শাস্তি চায় বিশ্বাসঘাতকের।
দুজনের সামাজিক অবস্থানে ফারাক বিস্তর। লোকটি নিজের ক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠিত এবং সুপরিচিত। তাই প্রাথমিক ভাবে মিডিয়া থেকে শুরু করে বিনোদন জগৎ - সাহায্য পায় নি মেয়েটা কারোর কাছেই। কিন্তু, ওই যে, হাল ছাড়েনি। কারণ, এটা শুধু তার একার লড়াই ই না, বরং যে প্রাণটি তিলে তিলে বেড়ে উঠছে তার জন্য লড়াই।
অবশ্য তাকেও ক্ষতি করার কম চেষ্টা তো হয়নি! ফুচকা খেতে গেছিল মেয়েটা, হঠাৎ অজ্ঞাত পরিচয় বাইক এসে ধাক্কা মেরে পালিয়েছে, ফোনে একটার পর একটা ‘থ্রেট কলে'র কথা তো ছেড়েই দিলাম।
তবে, এতকিছুর পরেও মেয়েটার লড়াই কিছুটা অন্তত, সফল হয়েছে। “আমি অমুককে চিনিই না” বলেছিল যে লোকটি, তাকে পদত্যাগ করতে হয়েছে। এফ. আই. আর ও গৃহীত হয়েছে।
মেয়েটি আমার কাছের বন্ধু।
কাজের সূত্রে আলাপ, কখনও দেখা হয়নি, তবু বছরের পর বছর ধরে দেখেছি কিভাবে অবলা প্রাণীদের সন্তানের মতো করে আগলে রেখেছে। তার বুদ্ধি, প্রত্যুৎপন্নতা - সবটাই এক্কেবারে অন্যরকম। আর সেই মেয়েটি এমন অবস্থায় আছে - বুকটা আনচান করছিল। তাই আকুল হয়ে জিজ্ঞেস করেছিলাম “হ্যাঁ রে, ভালবাসিস এখনও?”
খুব শান্ত ভাবে বলেছে “ভালবেসেছিলাম। এখনও বাসি। আর তাই চাই, শাস্তিটা পাক। কর্মফল ভোগ করুক, নইলে মুক্তি নেই।”
চুপচাপ মাথা নেড়েছি আমি।
আর, কুর্ণিশ জানিয়েছি সেই মা কে - যে শত প্রতিকুলতা আর ভাঙা মনের যন্ত্রণা নিয়েও একহাতে আগলে রেখে পালন করছে সন্তানকে, আর অন্যহাতে ধরেছে খড়্গ - সংহারের জন্য।
আইনী কারণে আমি নাম উল্লেখে অপারগ, হয়ত এই লেখা আমার বন্ধুটির চোখেও পড়বে না। কিন্তু আমি সোচ্চারে বলতে চাই যে এমনি মেয়েরা, এমনি শক্ত শিরদাঁড়ার মেয়েরা আরও অনেক, অনেক, অনেক জন্মাক! সত্যপ্রতিষ্ঠার জেদ ছড়িয়ে পড়ুক সর্বত্র। প্রতারণা করলে শাস্তি পাক দোষীরা।
পাক! পাক! পাক!
চিরকালের চোখের জল আগুন হোক। আর সেই আগুনে শুদ্ধিকরণ হোক সমাজের, মনুষ্যত্বের…
সরস্বতী প্রয়োজনে মাতঙ্গী হোন…

Collected ..
Like Reply


Messages In This Thread
RE: কিছু মনের সত্যি কথা - by ddey333 - 10-04-2024, 11:49 AM



Users browsing this thread: 1 Guest(s)