Thread Rating:
  • 26 Vote(s) - 2.69 Average
  • 1
  • 2
  • 3
  • 4
  • 5
Adultery অন্তর্বর্তী শূন্যতা
#90
ইন্দুমতি – শরীরটা আজ খুবই ক্লান্ত লাগছে। সেই সাথে মনটাও। ওদের আর দোষ কী। সকাল থেকে কম ধকল গেল ওদের উপরে। শারীরিক ক্লান্তির থেকেও মানসিক ক্লান্তিটা যেন আজ ওকে বেশীই ভোগাচ্ছে। কিচেনে দিনের শেষ টুকিটাকি কাজগুলো সামলাতে সামলাতে এই কথাগুলোই বারবার ওর মনে হচ্ছিল। হাঁটুটা বেশ ব্যাথা লাগছে। একটু বাম ঘষতে পারলে হতো। সেটাও তো লাগিয়ে দেওয়ার কেউ নেই। বর আর ছেলে দুজনেই খেয়ে দেয়ে সটান শুতে চলে গেল যে যার ঘরে। এখন গিয়ে দেখবে বর দিব্যি ঠোঁটের কোণে সিগারেট ঝুলিয়ে মোবাইল ঘাঁটছে! এই বুড়ো বয়সে যে কিসের এই ফোনের প্রতি মোহ ও সেটা বুঝতে পারে না। ও লক্ষ্য করে দেখেছে ইদানিং মোবাইল ঘাঁটার বদঅভ্যেসটা কর্তার মধ্যে বেশ জাঁকিয়েই বসেছে। সেই সাথে পাল্লা দিয়ে বেড়েছে সিগারেট ফোঁকাটাও। লোকটার চিরকাল সবই উল্টো কীর্তি! লোকে বয়স বাড়লে সিগারেট খাওয়া কমিয়ে দেয়। এনার দিনের পর দিন বেড়েই চলেছে। দিনের শেষে বসে যে বউয়ের সাথে একটু কথা বলবে, গল্প করবে সেসবের বালাই নেই। খালি ফোন আর সিগারেট! সিগারেট আর ফোন! এইভাবেই গোটা জীবনটাতো কাটিয়ে দিল। না আছে কোনো দায়িত্ব। আর না আছে কোনো কান্ডজ্ঞান। সংসারে যে শুধু কাঁড়ি কাঁড়ি টাকা রোজগার করলেই হয় না, তার সাথে যে একটু সাংসারিক জ্ঞানও থাকা দরকার, সেটা আজও ও কর্তার মগজে ঢোকাতে পারল না। অবশ্য মগজ থাকলে তো ঢুকবে! সেসবেরও কোনো বালাই নেই! যাকে বলে ওয়ার্থলেস! মনের মধ্যে বরের প্রতি রাগটাকে চিবোতে চিবোতে আর সামান্য খোঁড়াতে খোঁড়াতে ডাইনিং টেবিলের সামনে এসে দাঁড়াল। খাবারগুলোকে টেবিলের উপরে পর পর সাজিয়ে রেখে প্রতিটার উপরে ভালো করে চাপা দিল। যাতে কিছুতে মুখ না দিতে পারে। অবশ্য এ খাবার তাদের নয়। ওর, বরের আর ছেলের তিনজনের রাতের খাওয়া হয়ে গেছে। এটা বুবলার জন্য। অর্থাৎ ওর মেয়ের জন্য। তার বাড়ি ফেরার কোনো কালেই ঠিক থাকে না। এই যেমন আজকে। খাবারগুলোকে রেখে সোজা হয়ে উঠে দেওয়াল ঘড়িটার দিকে তাকালো। রাত প্রায় এগারোটা বাজতে যাচ্ছে। মেয়ের এখনও বাড়ি ফেরার সময় হল না। কোথায় কি রাজকার্য করছে কে জানে। কোন সভ্য, শিক্ষিত আর ভদ্রবাড়ির মেয়ে এত রাত করে বাড়ি ফেরে? অথচ দেখো, বাপের কোনো হুঁশ আছে এই বিষয়ে? খেলো দেলো, হাত ধুয়ে সিগারেট ফুঁকতে আর মোবাইল ঘাঁটতে চলে গেলো। এখন যদি এই বিষয়ে কিছু বলতে যায়, তো উল্টে বলবে, সবেতেই নাকি ওর বাতিক! এটা কোনো কথা? উঠতি বয়সের মেয়ে, কেন এত রাত করে বাড়ি ফিরছে, সেটা দেখতে হবে না? ওনাকে দিয়ে যদি একটা কাজ হয়! ছেলেটাও হয়েছে বাপের মতই। হাঁদা, গঙ্গারাম। জিন আর যাবে কোথায়? শরীরে তো একই রক্ত বইছে! নিরাশায় মাথা নাড়তে নাড়তে আবার কিচেনের দিকে হাঁটা দিল ও।

হাতের আর হেঁশেলের কাজ শেষ করে যখন অবশেষে বেডরুমে এল, তখন ঘড়ির কাঁটা এগারোটা পেরিয়ে গেছে। ঘরের মধ্যে কোথাও কর্তাকে দেখতে পেল না। রুমে যখন নেই, তখন নির্ঘাত গেছে ব্যালকনিতে। ওখানেই তো আড্ডা। দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে ওখানে সিগারেট ফোঁকে আর মোবাইল ঘাঁটে। ঐ মোবাইলে যে কিসের মোক্ষ বাপু ও জানে না। আর জানতেও চায় না। মোবাইলের একটা অ্যাপেতেই ওর যা হাঁশফাঁশ অবস্থা। এর বেশী কিছু ওর পক্ষে জানা সম্ভব নয়। ইচ্ছেও নেই। আজকালকার ছেলেরা তো ঐ করেই গেল রসাতলে! ঘাড় ঘুরিয়ে দেখল, ও যা ভেবেছে ঠিক তাই। বাবু ব্যালকনিতে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে দিব্যি সিগারেট ফুঁকছে আর মোবাইল ঘাঁটছে! একটু যদি লজ্জা-শরম থাকে শরীরে! দেখে ওর গোটা শরীর রাগে রি রি করে উঠল। একবার ইচ্ছে হল গিয়ে দু চার কথা শুনিয়ে দিয়ে আসি। কিন্তু এত রাতে আর সিন ক্রিয়েট করতে ভালো লাগছে না। যা পারে করুক। বিছানার কাছে এসে বিছানাটা ঝাড়তে শুরু করল। শোওয়ার আগে বিছানাটা না ঝাড়লে শুয়ে আর ঘুমিয়ে শান্তি হয় না ওর। বর বলে এটাও নাকি ওর একটা বাতিক। ম্যানিয়া। যে যা বলে বলুক। বিছানা ঝাড়া হলে একবার ব্যালকনির দিকে তাকালো। দেখলো বর এতক্ষণ ওর দিকেই তাকিয়েছিল। যেই চোখাচোখি হল ওমনি মুখ নীচু করে আবার মোবাইলের দিকে তাকালো। একে নিয়ে ঘর করা এককথায় অসম্ভব। তাড়াতাড়ি ঘরের আলো নিভিয়ে শুয়ে পড়ল। যতক্ষণ মন চায় ব্যালকনিতে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে হাওয়া খাক, সিগারেট খাক আর মোবাইল ঘাঁটুক। কিন্তু শুয়ে পড়লেও চোখে যে চট করেই ঘুম চলে এল এরকম নয়। বরং চোখ দুটো বন্ধ করতেই আজকের সন্ধ্যের পর থেকে ঘটে যাওয়া প্রত্যেকটা ঘটনা এক এক করে ওর মনে পড়ে যেতে লাগল। এরকম এর আগে ওর সাথে কখনও ঘটেনি। ইচ্ছা না থাকা সত্ত্বেও ঐ অ্যাপটাকে ও ইন্সটল করেছে। আবার শুধু যে ইন্সটল করেছে তাইই নয়, সেই সাথে ব্যবহারও করেছে। অ্যাপটাকে এককথায় নরক বললেও কম বলা হয়। নোংরামীর চূড়ান্ত। এমন সব জিনিস যা দেখে শুনে ও অবাক হয়ে গেছে। তা এতে ওর কি স্বার্থ? কিছুই নেই। কলেজের ছেলেমেয়েরগুলোও তো ওর নিজের ছেলেমেয়ের মতোই। যদি আজ ওর নিজের পেটের ছেলে-মেয়ে এই অ্যাপের পাল্লায় পড়ে গোল্লায় যাওয়ার রাস্তা খোঁজে, তাহলে মা হিসাবে কি ওর কোনো দায়িত্ব থাকবে না? বসে বসে চোখের সামনে নিজের ছেলে-মেয়েদুটোকে রসাতলে যেতে দেখবে? সেটা ও পারবে না। শিক্ষিকা মানে তো একপ্রকার মা। যে যাই বলুক, ও ওর কলেজের ছেলেমেয়েদেরকে এই চোরাবালি থেকে উদ্ধার করবেই। তার জন্য ওকে যা করতে হতে পারে, ও করবে। ও করছেও। কিন্তু এখানে একটাই অসুবিধে। এখানে কে যে কে, সেটাই বুঝতে পারা যাচ্ছে না। যার সঙ্গে কথা বলছে, সে যে ওরই ছাত্র কিনা সেটাও বোঝার কোনো উপায় নেই। কিভাবে তাদেরকে খুঁজে বের করা যায়, সেটাও ওর এইমূহুর্তে জানা নেই। আবার থেমে গিয়ে হাত গুঁটিয়ে বসে থাকাটাও অর্থহীন। যতদিন না একটা প্ল্যান মাথায় আসছে এভাবেই চালাতে হবে। এছাড়া আর উপায় কী? এই যেমন আজকেই। রাত তখন ন’টা বাজবে হঠাৎ করেই কিউপিড নামের একটা প্রোফাইল থেকে ওর সাথে চ্যাট করতে শুরু করল। সে কে, ওরই কোনো ছাত্র কিনা সেটা বাজিয়ে দেখার জন্যই ও খেজুরে আলাপ করতে শুরু করল। এই কদিন এইভাবেই খেজুরে আলাপ চালাবে বলে ও ঠিক করেছে। সে যাই হোক। ঠিক সেই সময়েই বর অফিস থেকে ঘরে এল। তার সামনে এসব করা একদমই ঠিক হবে না, ভেবে নিয়ে ও তৎক্ষণাৎ কথাবার্তা থামিয়ে দিল। মনে মনে একটু ভয় ছিল, এতে আবার রাগ করে ওকে বাদ দিয়ে দেবে না তো? যাই হোক বর চা-জলখাবার খেয়ে বেডরুমে ঢুকে পড়তেই ও জাঁকিয়ে বসল। চশমাটা আবার চোখে এঁটে কিউপিডকে লিখে পাঠাল, “Now I am free. We can talk freely.” মনের আশাটা সঙ্গে সঙ্গেই পূরণ হয়ে যাবে, সেটা ও ভাবেনি। যতই হোক পুরুষ মানুষ তো। ছোঁকছোঁকানি স্বভাব আর যাবে কোথায়! মেয়ে দেখতে না দেখতেই কথা বলার জন্য উন্মুখ হয়ে আছে। এক সেকেন্ডের মধ্যেই জবাব এলো, “বাংলায় কথা বলা যেতে পারে?” সে আর বলতে, তোমার মত অশিক্ষিত যে বেশীক্ষণ ইংরেজী চালাতে পারবে না, সেটা বলাই বাহুল্য। আর শুধু তুমি কেন, এখানে যারা যারা আছে, তারা প্রত্যেকেই যে কমবেশী অশিক্ষিত সেটা আর বলে দিতে হয় না। অশিক্ষিত না হলেও রুচির যে বড়োই অভাব, সেটা তো পরিষ্কার। যাই হোক, মনের রাগ মনের মধ্যেই পুষে রেখে ও উত্তরে লিখল, “অবশ্যই যেতে পারে। আমি বাংলাতেই কথা বলতে চাই তোমার সঙ্গে।” এতেই গলে জল হয়ে গেল। সামনে থাকলে মনে হয় গড়িয়ে পায়ের উপরেই পড়ে যেত। লিখে পাঠিয়েছে, “আমিও তোমার সাথে কথা বলতে চাই।” মরণ নেই আর কি!

-  “তুমি কোথায় থাকো? কলকাতায়?” এর বেশী খেজুরে আলাপ করার সময় ওর নেই। তাই তাড়াতাড়ি কাজের কথায় চলে এল।

-  “হ্যাঁ। আর তুমি?” লিখে পাঠাল ছেলেটা।

-  “আমিও কলকাতাতেই থাকি।” এটুকু সত্যি কথা লেখা যেতেই পারে। না হলে সন্দেহ করতে পারে। এর সাথে যোগ করল, “তুমি কি করো? পড়াশোনা?”

-  “না। আমি কাজ করি।”

-  “কাজ করো! কি কাজ করো?” এবার ওর কেমন যেন একটু সন্দেহ হল। যতদূর মনে আছে এর বয়স লেখা ছিল ২৩। এখন মনে হচ্ছে সব ভুয়ো।

-  “অফিসে কাজ করি। কেন?”

-  “তোমার বয়স লেখা আছে ২৩। তোমার এখন তো পড়াশোনা করার কথা। আর তুমি বলছো অফিসে কাজ করো। এটা ঠিক বুঝতে পারলাম না।” ফোনে একটানা টাইপ করা যে কতটা কষ্টের কাজ সেটা আজ ও বুঝতে পারল। আঙুল, ঘাড় আর চোখ তিনটেতেই যন্ত্রনা হচ্ছে। কিন্তু থেমে গেলে হবে না। উত্তরটা আসতে একটু দেরীই হল।

-  “আসলে আমি পড়শোনাই করতাম। কয়েক মাস আগে বাবা মারা গেছে। তাই সংসার চালাতে আমাকে কাজ করতে হচ্ছে। আর অফিসে কাজ করি মানে, তেমন কিছু নয়। ঐ পিওন গোছের।” লেখাটা পড়ে সম্পূর্ণ বিশ্বাস হল না। জল তো এর মধ্যে নিশ্চিত আছে। সে যাই হোক, এ মোটেও ওর ছাত্র হতে পারে না। তাহলে লাভ কিছুই হল না। মনটা একটু খারাপ হয়ে গেল। দেখল এরই মধ্যে আরও একটা মেসেজ পাঠিয়েছে ছেলেটা। খুলে দেখল,
-  “কি হল? কথা বলবে বলে চুপ করে গেলে যে?”

-  “না। এমনি।” ও লিখল। ছেলেটা ওর ছাত্র না হতে পারে। কিন্তু ভদ্র তাতে সন্দেহ নেই। কথা বলতে খুব একটা খারাপ লাগছে না। এর সাথে কথা চালানো যেতেই পারে। কে জানে, হয়তো ভবিষ্যতে ওর কোনো কাজে লেগে যেতেও পারে। দেখাই যাক না। ও লিখল, “তুমি এখন কি করছো?”

-  “আমি একটু আগে অফিস থেকে ফিরেছি।” ছেলেটা লিখল।

-  “তোমার বাড়িতে কে কে থাকে?” এমনিই জিজ্ঞাসা করল ও।

-  “কেন?” প্রশ্নেই ভয়ের ছাপ স্পষ্ট। এতে ভয় পাওয়ার কি আছে? ভীতুর ডিম একটা! মনে মনে না হেসে পারল না। আজকালকার ছেলেদের মতো মোটেও নয়।

-  “ভয় পেও না। আমি এমনিই জিজ্ঞাসা করলাম।” ও বুঝিয়ে বলল।

-  “ভয় পাইনি। তবে তুমি এমন হঠাৎ করে জিজ্ঞাসা করলে আমি চমকে গেলাম।” ওহঃ বাবু নাকি ভয় পায়নি। খালি মিছে কথা।

-  “ভয় যদি না পেয়ে থাকো, তাহলে বলো বাড়িতে কে কে আছে।” মনে মনে আবার একচোট হাসল।

-  “বাড়িতে মা আছে। দাদা আছে। একটা ছোটো বোন আছে।”

-  “তাই নাকি? দাদা কি করেন?” এবারও এমনিই জিজ্ঞাসা করল। ছেলেটার সব কথা কেন জানি জানতে ইচ্ছে করছে। এরকম সরল মনের ছেলের সঙ্গে ও অনেকদিন কথা বলেনি।

-  “দাদা! দাদার একটা দোকানে কাজ করে।”

-  “ও। আর বোন?”

-  “ও পড়াশোনা করে। ওর লেখাপড়াটা ছাড়াই নি।” বেশ অকপট স্বীকারোক্তি। এই কারণেই ছেলেটাকে ওর ভালো লাগছে। কিন্তু ও কিকরে এইরকম একটা অ্যাপে এলো, সেটা জানতে খুব ইচ্ছে করছে। কিন্তু এখনই জানলে হবে না। ধৈর্য ধরতে হবে।

-  “বাঃ এটা ভালো করেছো। ওর পড়াশোনাটা যেন ছাড়িয়ে দিও না।”

-  “না। ও খুব ভালোবাসে পড়তে।” তারপর একটু থেমে আবার একটা মেসেজ পাঠালো ছেলেটা। “তখন থেকে তো শুধু আমাকেই প্রশ্ন করে যাচ্ছো। এবার নিজের কথা একটু বলো।”

-  “বলো, কি জানতে চাও?” ও তাড়াতাড়ি লিখল। এবার কিছু একটা বানাতে হবে।

-  “সব কিছুই। তুমি কোথায় থাকো। কি করো, বাড়িতে কে কে আছে, এই সব।” এবার একটু সময় নিল ও। মনের মধ্যে মিথ্যে গুলো একের পর এক সাজিয়ে নিয়ে ও টাইপ করতে শুরু করল, “বলছি একে একে। আমি...”


রাত এখন কটা বাজে কে জানে ঘুমটা কেন ভাঙ্গল সেটাও বুঝতে পারছে না ঘরটা অন্ধকার ঠিকই তবে একদিক দিয়ে কিছুটা আলো ঘরে ঢুকছে। তার মানে ব্যালকনিটা খোলা। এখনও বাবুর শুতে আসার সময় হল না! বালিশের পাশ থেকে চশমাটা নিয়ে পড়ল। তারপর হাতড়ে মোবাইলটাকে হাতে তুলে নিল। দুটো বেজে দশ! এখনও ব্যালকনিতে দাঁড়িয়ে কি করছে! উঠে বসতে গেল তখনই ওর চোখে পড়ল ফোনে কিছু নোটিফিকেশন এসেছে। তাড়াতাড়ি বিছানায় উঠে বসে অ্যাপটা খুলল। বেশ কয়েকটা প্রোফাইল থেকে ইতিমধ্যে ওর কাছে পার্টনার রিকোয়েস্ট এসেছে। এসব নিয়ে কাল ভাবা যাবে মনে করে ফোনটা রাখতে যাবে, ঠিক সেই সময়েই একটা মেসেজ ঢুকল ওর প্রোফাইলে। খুলে দেখল মেসেজটা এসেছে ব্যাফোমেট নামের একটা প্রোফাইল থেকে। মনে পড়ে গেল একেই আজ বিকালে অ্যাকসেপ্ট করেছে সেই কানাগলিটার ভিতরে দাঁড়িয়ে। এতরাতে সে কি পাঠিয়েছে? তাড়াতাড়ি খুলে দেখল, লেখা আছে, “এত রাতে জেগে আছেন?” মানে? একথার অর্থ কী? ও তাড়াতাড়ি লিখল, “তুমিও তো জেগে আছো?” উত্তর এল, “আমার কথা বাদ দাও। তুমি কেন জেগে আছো, সেটা বলো।” ন্যূনতম ভদ্রতাটাও জানে না। এদের যে কি হবে কে জানে। ততক্ষণে চোখ থেকে ঘুমের শেষ রেশটুকুও মুছে গেছে। বরের কথা ভুলে গিয়ে বিছানায় বাবু হয়ে বসল। তারপর টাইপ করল, “যদি বলি, তোমার সঙ্গেই কথা বলবো বলে, জেগে আছি, তাহলে কি করবে?” জবাব এলো, “বিশ্বাস করব না।” কোথাকার কোন খাঞ্জা খাঁ এলো রে, যেন ওকে বিশ্বাস করানোর দায় ওর। লিখল, “কেন বিশ্বাস করবে না?” ছেলেটা মহা চালিয়াৎ সেটা ওর উত্তরেই টের পাওয়া গেল, “তুমি আমার আগেই অ্যাকটিভ ছিলে। আমি পরে হয়েছি। তাই।” একে ল্যাজে খেলানো ছাড়া উপায় নেই। ও তাড়াতাড়ি লিখল, “আমি তোমার জন্যই অপেক্ষা করছিলাম।” সঙ্গে সঙ্গে উত্তরও চলে এল, “তুমি জানতে, আমি এই সময় আসবো?” নিজেকে গোয়েন্দা ভাবছে। ভাবাচ্ছি। মনে মনে রাগটাকে ধরে রেখে টাইপ করল, “জানতাম বলব না। তবে মনে হয়েছিল। তোমাদের মত ছেলেরা রাত জেগেই থাকে।” এবার একটা মনের মতো উত্তর দেওয়া গেছে। “তুমি কি করছো?” ওর এককথাতেই সুর নরম গেছে। ও লিখল, “শুয়ে শুয়ে তোমার সাথে চ্যাট করছি। তুমি কি করছো?” উত্তর এল, “তোমার সাথে আড্ডা মারবার চেষ্টা করছি।” এতো দেখছি মহা ফাজিল ছেলে। একে সাবধানে ট্যাকল করতে হবে। না হলেই মুশকিল। ও লিখল, “তাহলে চলো। গল্প করা যাক। আগে তোমার বিষয়ে আমাকে কিছু বলো। তুমি কি করো। কোথায় থাকো। পড়াশোনা করো নাকি। ইত্যাদি।” কিন্তু এ একদমই অন্য ঘাঁটি। ছেলেটা লিখল, “আমার কথা পরে হবে। আগের তোমার সম্পর্কে কিছু বলো। তারপরে আমি বলবো।” আর বেশী কথা না বাড়িয়ে মনের মধ্যে মিথ্যেগুলোকে আরো একবার সাজিয়ে নিয়ে ধীরে সুস্থে ফোনের কিবোর্ডে টাইপ করতে লাগল ইন্দুমতি।
[Image: 20240303-191414.png]
Like Reply


Messages In This Thread
RE: অন্তর্বর্তী শূন্যতা - by রতিদেবী - 06-04-2024, 07:26 PM



Users browsing this thread: 2 Guest(s)