05-04-2024, 01:38 PM
পর্ব - ৩য়।
সুমিত্রা নিজের ছেলের কাছে আসে, সঞ্জয় মায়ের মুখের দিকে তাকায়…মায়ের মিষ্ট হাঁসি তার দিকে চেয়ে আছে…আজ সকাল বেলা মাকে বেশ স্নিগ্ধ লাগছিলো..চোখে মুখে তার একটা সুন্দর জ্যোতি ফুটে উঠে ছিল..এ রূপ সে আগে কখনো দেখেনি…বিশেষ করে মা আজ অন্য দিনের মতো মুখ গোমড়া আর দুঃখী হয়ে থাকেনি…এমন উৎফুল্ল আর প্রাণোজ্জ্বল মাকেই তো দেখতে চাই সে…
সে চাই মা সদা সর্বদা ঠিক এভাবেই হাঁসি খুব থাকে যেন…আজ মায়ের মুখ টাও বেশ মিষ্টি লাগছিলো..ওর মাকে কেউ সুন্দরী বললে রাগ হয় ওর…”মাকে কেউ সুন্দরী বলবে কেন…?? এটা ওর মা…মিষ্টি মা…”
সঞ্জয় তড়িঘড়ি বিছানা থেকে উঠে পড়ে সকালের খাবার খেয়ে কলেজ যেতে হবে তাকে…
কলেজ যাবার পথে আসলামের সাথে দেখা হয় ওর….আসলাম বলে…”অভিনন্দন দোস্ত…তুই ক্লাসে প্রথম হয়েছিস…”
সঞ্জয় তার কথা শুনে হাঁসে…
কিন্তু আসলামকে একটু মন মরা দেখায়….সঞ্জয় প্রশ্ন করে তাকে “কি হয়েছে ভাই…? এমন মন খারাপ করে আছিস কেন..? “
“কিছু না রে….তেমন কিছু না..”বলে আসলাম.
সঞ্জয় আসলামের কাঁধে হাত রাখে আর বলে…”বল না বন্ধু…আমার এমন দুঃখী মানুষ দের ভালো লাগেনা…”
“আচ্ছা শোন তবে…”বলে আসলাম সঞ্জয়কে বলা শুরু করল..
“তুই ক্লাসে প্রথম হয়েছিস…আর আমি ভালো রেজাল্ট করতে পারিনি তাই..আব্বু জান অনেক রেগে গিয়েছিলো আমার উপর…আমার আম্মি জান কেউ অনেক বকাবকি করছিলো….সাথে তোর আর তোর মায়ের অনেক তারিফ শুনাম করছিলো..বলছিলো..সঞ্জয় খুব ভালো ছেলে আর ওর মা আহঃ খুবই ভালো মহিলা….বহিনজি দেখতেও ভালো আর স্বভাবেও ভালো মাশাআল্লাহ..!!! তাইতো এমন গরীবীতেও ছেলে ভালো মতো পড়াতে চাই…আচ্ছা আদমি বানাতে চাই….”
সঞ্জয় খুব গভীর মনোযোগ দিয়ে বন্ধুর কথা গুলো শুনছিলো….তারপর অবশেষে বলল “মন খারাপ করিসনা বন্ধু….আমি আছি তো…ঠিক মতো পড়াশোনা কর দেখবি তুইও ভালো রেজাল্ট করেছিস…”
রাস্তায় যাবার পথে…পাড়ার সেই দুস্টু ছেলে রফিক আর তুষার দাঁড়িয়ে ছিল..
রফিক সঞ্জয় কে উদ্দেশ্য করে বলে ওঠে “এই বাঁড়া…কোথায় যাস…অনেক হলো দেখা করিসনি…”
সঞ্জয় রফিকের কথা শুনে বেজায় চটে যায়…তাকে গালাগালি দেয়…?
বলে “এই ভেঁড়া কাকে বললি রে…তুই ভেঁড়া আমি না….”
রফিক সঞ্জয়ের কথা শুনে হাঁসে….
আসলাম ওর হাত ধরে টেনে নিয়ে যায়….বলে ছাড় না…ওরা তো আমাদের বন্ধু তাইনা..
সঞ্জয় আসলাম কে জবাব দেয়..বলে” ও দুস্টু ছেলে গালাগালি দেয়…মা ওর সাথে মিশতে মানা করেছে..”
আসলাম বলে চল চল কলেজে দেরি হচ্ছে…
সঞ্জয় তখন আসলাম কে বলে…”তুইও ওদের সাথে মিশবি না…ওরা দুস্টু ছেলে…”
“ছাড় না…আমরা সবাই ভালো….আর কে দুস্টু কে ভালো এসব দেখলে…তোর সাথে কেউ বন্ধুত্বই করবে না..” আসলাম বলে..
কিন্তু “মা”….
সঞ্জয়ের কথা কেড়ে আবার আসলাম বলে…”তুই কার সাথে মিশছিস…মাকে না জানালেই হল…”
সঞ্জয় মনে মনে ভাবল….হয়তো আসলাম ঠিকই বলছে…!!
সেদিন রবিবার ছিল…ছুটির দিন….বাবা মা কাজে চলে যাবার পর আসলাম সঞ্জয়ের বাড়িতে আসে…
তারা দুজন মিলে খেলা করতে যায়….সেখানে আবার তাদের সাথে রফিক আর তুষারের সাথে দেখা হয়…সাথে আরও বেশ কয়েকজন বিনয়…আর রাহুল..বোধহয়..
খেলতে খেলতে তারা মাঠের এককোনে এসে সব হাজির হয়…বিনয় পকেট থেকে বিড়ি আর দেশলাই কাঠি বের করে আনে….
“এসব কি…? “ মনে মনে সঞ্জয় বলে ওঠে…ওরা কি এবার বিড়ি খাবে…
রফিক বলে ওঠে ধুর কেলা…বিড়ি কে খায়?? সিগারেট দে আমায়…বলে দুটো আঙুলের ইশারা করে দেখায়…
আর সাথে আসলাম আর সঞ্জয় কেউ দে….
সঞ্জয় চমকে ওঠে বলে “না না…আমি বিড়ি খাই না…তোরা খা…”
সেখানে সঞ্জয় আর আসলাম বাদ দিয়ে সবাই ঘুরে ঘুরে বিড়ির সুখ টান নিতে থাকে…
মাঠের কিছু দূরে মা সুমিত্রার আগমন…কাজে থেকে ফেরার পালা…
আসলাম ফিসফিস করে সঞ্জয় কে বলে…”সঞ্জয় সঞ্জয়….সুমিত্রা চাচি…তোর মা..”
পেছন ফিরে দেখে সে…বেশ দূরে হলেও বোঝা যায় তারা কি করছে…
চোখা চোখি হয় মা ছেলের….মায়ের সুন্দরী পটল চেরা চোখ ক্রোধাগ্নি…
ভয় পেয়ে যায় সঞ্জয়…আজ নির্ঘাত মার পড়বে তার…
তড়িঘড়ি দৌড় দেয় সেখান থেকে….
কিছুক্ষনের মধ্যেই বাড়ি ফেরে সে…মাকে খোঁজে…আজ কপাল খারাপ তার..
“শোন্ সঞ্জয়…” সামনে মায়ের ডাক…কি হতে চলেছে তার আজকে…চোখ টিপে থাকে সে..
সুমিত্রা ছেলেকে বলে বস এখানে…সে জানে ছেলে এখন বড়ো হচ্ছে…আর দুধে শিশু নেই যাকে সে কোলে করে নিয়ে দুধ খাইয়ে ঘুম পাড়াতো…বারো অতিক্রম করে তেরোতে পৌঁছাবে সে..
সুতরাং তাকে মারধর করা চলবে না..
সুমিত্রা এসে ছেলের কাঁধে হাত দেয়…ওকে বোঝানোর চেষ্টা করে…বলে “বাবু দেখ…তোকে নিয়ে আমার অনেক স্বপ্ন আছে….জানিনা কতদূর সফল হব…তুইও তো আমার কথা সব মানিস…ওরা এই বস্তির ছেলে….তাই হয়তো ওদের সাথে তোর মেলা মেসা বন্ধ করতে পারবো না…কিন্তু কথাটা হলো যে তুই এখন বড়ো হচ্ছিস ভালো মন্দের জ্ঞান আছে তোর কাছে…সেহেতু কোনটা ঠিক কোনটা ভুল তুই ভালো ভাবেই জানিস…দেখ তোর বাবা একটা মাতাল মানুষ….আমার উপর কত অত্যাচার করে…আমি চাইনা তুই ও তোর বাবার মতো নেশা ভাঙ্গ কর…তুই অনেক বড় মানুষ হ…এটাই আমার কামনা…”
সঞ্জয় মাথা নিচু করে চুপটি করে মায়ের সব কথা মন দিয়ে শোনে….
অবশেষে বলে…”মা…আমি কি তাদের সাথে মিশবো না…?? “
“হ্যাঁ মেশ…মিশতে মানা নেই….আর এই বস্তি তে তোর জন্য আদর্শবান বন্ধু কোথা থেকে খুঁজে এনে দেব…এদের কেই বন্ধু মনে করতে হবে…আমি শুধু এটাই বলবো…যদি কোনো খারাপ বা অসভ্য গতিবিধি দেখিস তৎক্ষণাৎ চলে আসবি সেখান থেকে..”
সঞ্জয় মাথা নিচু করে মায়ের আদেশ পালন করে…
“বেশ যা এবার স্নান করে আয় তাড়াতাড়ি….আমি রান্নাবান্না করে তোর জন্য খাবার রেডি করি…” বলে সুমিত্রা..
“হ্যাঁ মা যায়…” বলে সঞ্জয় কুয়োতে জল তুলতে চলে যায়..
সেই মুহূর্তে “কই রে সুমি…কি করছিস তোরা…? “ বলে অলকা মাসির পদার্পন হয়…
সুমিত্রা রান্না ঘর থেকে বেরিয়ে আসে…”হ্যাঁ অলকা মাসি…কেমন আছো…তুমি…?? “
“হ্যাঁ রে আমি বেশ ভালো আছি…!! তোর খবর বল…কাজকর্ম কেমন চলছে তোর…?? “ অলকা মাসি বলে ওঠে..
“হ্যাঁ মাসি বেশ তো ভালোই চলছে এখন…” সুমিত্রা জবাব দেয়…
অলকা মোড়ার মধ্যে বসে সামান্য মুখ নামিয়ে মৃদু গলায় বলে ওঠে “হ্যাঁ রে শুনলাম নাকি তুই…ওই বাড়ির কাজ ছেড়ে দিয়েছিস…?? “
সুমিত্রা বলে “হ্যাঁ মাসি…মানে আমার ওই বাড়িতে কাজ করতে ঠিক ভালো লাগছিলো না…”
অলকা আবার মুখ টেরা করে প্রশ্ন করে..”কেন রে…ভালোই তো ছিল বুড়ো টা…খুশি করতে পারলে তোর টাকাপয়সার অভাব হত না…”
অলকা মাসির কথা শুনে সুমিত্রা একটু ভয় পেয়ে যায়…কি বলবে ঠিক করে উঠতে পারেনা..
“না মাসি…এমনি তেই ওদের অনেক কাজ আর লোকজন সুবিধার নয়..” সুমিত্রা আড়ষ্ট গলায় বলে ওঠে…
“আমি বুড়োটার কাছে সব শুনেছি…!!! তোকে আবার চাইছিলো সে….” আবার অলকা মাথা নিচু করে ফিসফিস করে বলে ওঠে..
সুমিত্রার মনে ভীতির সঞ্চার হয়…মনে মনে “হে ভগবান…লোকটা একে সব বলে দিয়েছে…”
সুমিত্রার চোখে মুখে বিন্দু বিন্দু ঘাম দেখে…অলকা আন্দাজ করে নেয় যে ওর মনে কি চলছে…
সে সুমিত্রাকে আশস্থ করে বলে “চিন্তা করিসনা মা…সুমি…ওসব হয়..জীবনে..তাছাড়া এই বস্তি তে কজন মহিলা সতী সাবিত্রী আছে..?? “
“প্রায় সবাই….নিজের পেটের জন্য অথবা মরদের স্বভাবের জন্য শরীর বেচছে..”
সুমিত্রার চোখে গল গল করে জল বেরিয়ে এলো…
অলকা মাসি আবার তাকে সান্ত্বনা দিতে থাকল..”কাঁদিস না মা…অমন করে কাঁদতে নেই…দেখনা আমাকেই দেখ….জোয়ান বয়সে কত পুরুষকে নাচিয়েছি…কি করব অভাবের দায়ে…তাছাড়া তোর একটা ছেলে আছে তো…বড়ো হলে তোর সব চিন্তা দূর হয়ে যাবে…চোখের জল মোছ সুমি…”
সুমিত্রা ক্রন্দনরত গলায় বলে ওঠে…”অলকা মাসি…তুমি বিশ্বাস করো….আমি বেশ্যা নই…কি করব সে সময় আমার অনেক দেনা হয়ে গিয়েছিলো…টাকা পয়সার দরকার ছিল তাই বাধ্য হয়ে আমাকে ও কাজ করতে হয়…”
সুমিত্রার নাকে মুখে জল গড়াতে থাকে…
কাঁদিস না মা কাঁদিস না…আসলে ব্যাপার টা কি জানিস এই দুস্টু পুরুষ সমাজ…মেয়েদের ভোগ সামগ্রী বলে মনে করে রেখেছে…যাইহোক কি আর বলবো…
তাছাড়া তুই সুন্দরী মেয়ে রসালো যৌবন তোর তাই ওদের নজর ঘুরে যায় ওই আরকি..
যাক আমি চলি…তুই ঠিক মতো থাকিস…দিনকাল এখন ভালো না…শুনেছি বস্তির লোকজন ও তোর উপর নজর দিয়ে রেখেছে…
সুমিত্রা নিজের আঁচল দিয়ে চোখ মুছতে মুছতে অলকা মাসিকে বাইরে অবধি দিয়ে আসে..
সুমিত্রা শুধু ভেতরে ভেতরে ফুঁপাতে থাকে….
ওদিকে সঞ্জয় সজোরে বলে ওঠে “মা আমার স্নান হয়ে গেছে তুমি…আমার জন্য খাবার রেডি করো…”
স্নান সেরে বেরিয়ে এসে সঞ্জয়, মায়ের চোখে অশ্রু দেখে মন খারাপ হয়ে যায়..বলে “মা তুমি কাঁদছো কেন…?? আমি সত্যি বলছি…কথা দিচ্ছি তোমায়…আমি কোনো দিন বিড়ি সিগারেট খাবো না…তুমি কেঁদো না মা…দয়া করে..”
সঞ্জয় হয়তো বুঝতেই পারলো না…যে মায়ের কাঁদার আসল কারণ কি….?
যাইহোক ছেলের প্রতিশ্রুতি আশ্বাস পেয়ে সুমিত্রার মন কিছুটা শক্ত হোল…বেশ তো কয়েকদিন ধরে ভালই তাদের জীবন কাটছিলো…এমন পরিস্থিতি না এলেই পারত…
ছেলে মায়ের হাত জড়িয়ে ধরে…মা সুমিত্রা সঞ্জয়ের থেকে একটু লম্বা বেশি…তবে ছেলে বড়ো হলে মাকে চাপিয়ে যাবে…সুমিত্রার উচ্চতা ওই পাঁচ ফুট পাঁচ ইঞ্চি হবে…
সব কিছু ভোলার চেষ্টা করে সুমিত্রা….সে দিন পেরিয়ে গেছে…এখন সামনে অনেক টা পথ পড়ে আছে…অনেক দূর যেতে হবে…পুরোনো দিন পেছনে ফেলে এগিয়ে যেতে হবে..যা হয়ে গেছে তা বদলানো যাবে না…সুতরাং সেগুলো ভেবেও কাজ নেই..
একটু হাফ ছেড়ে ছেলের দিকে তাকায় সুমিত্রা….”সঞ্জয়….বাবু…তুই ঠিক মতো পড়াশোনা করছিস তো…?….. তোকে আগামী বছরেও ক্লাসে প্রথম হয়ে দেখাতে হবে কিন্তু…জেনে রাখবি এটাই তোর মায়ের কামনা…”
সঞ্জয় মায়ের মুখ পানে চেয়ে হাঁসে….বলে “হ্যাঁ মা…আমি তোমার জন্য সবকিছু করতে রাজি আছি…”
“এবার খেতে দাও তো…আমার খুব খিদে পেয়েছে…”
সঞ্জয় মায়ের ক্রন্দনে খুবই ব্যাথিত হয়….মনে মনে একপ্রকার সপথ নেয় সে…”মায়ের খুশির জন্য সবকিছু সমর্পন…করতে রাজি”
দুপুরে খাওয়া শেষে সে আর খেলতে যায়না…ভাবুক ছেলে একটু একাকিত্ব চায়…তাই সে খেলার মাঠে না গিয়ে বস্তির উত্তর দিকে একটা এলাকা আছে ওই দিকে চলে যায়…সেখানটা বেশ নির্জন গাছ পালায় ভর্তি আর সামনে দিয়ে একটা নালা বয়ে গেছে..
সেখানে গিয়ে একটা পাথর খন্ডের উপর বসে ঘরের জন্য চিন্তা ভাবনা করে..
সেখান থেকে বহু দূরে শহরের উঁচু অট্টালিকা দেখা যায়…মনে মনে ভাবে ওর কাছে যদি টাকা থাকতো তাহলে মা বাবার জন্য একটা বাড়ি কিনে দিত..
নানা রকম আকাশ কুসুম চিন্তা ভাবনা করতে করতে হঠাৎ ওর নজর ওই নালার জলের মধ্যে চলে যায়….সেখানে সেই মা ঝোঁপে ছুঁড়ে ফেলে দিয়েছিল ওই রকম একটা বেলুন ভেসে থাকতে দেখে সে…
এই জিনিস টাকে দেখলেই শরীরে একটা বিচিত্র অনুভূতি জেগে উঠে ওর.
এ নিয়ে দ্বিতীয় বার এই অজ্ঞাত বস্তু তার নজরে আসে…
একটা ডান্ডা দিয়ে…ওটাকে ওঠানোর চেষ্টা করে সঞ্জয়…
অদ্ভুত ব্যাপার হোল এই বস্তুটাও ঠিক সেদিন কার মতোই…বেলুন আর ভেতরে সাদা থকথকে পদার্থ..
ডান্ডা দিয়ে আবার ওটাকে জলের মধ্যে ভাসিয়ে দেয় সঞ্জয়..
এই জিনিসটার ওপর গভীর কৌতূহল তার…কি কাজ এটার একদিন জেনেই ফেলবে সে..
“মাকেই জিজ্ঞাসা করতে হবে এটার ব্যাপারে..” মনে মনে বলে সে.
আসতে আসতে সন্ধ্যাবেলা হয়ে যায় ওর…
বাড়ি ফিরে এসে দেখে মা…শাড়ি ঘোমটা দিয়ে শাঁখ বাজিয়ে সন্ধ্যা দিচ্ছে…
মায়ের এই দৃশ্য মনকে নির্মল করে তোলে…মাকে দেবী লক্ষীর মতো মনে হয় তার..মাতৃ তুল্য দেবী সুমিত্রা কর জোড়ে, তার মধ্যি খানে ধূপকাঠি রেখে সন্ধ্যা বন্দনা করে চলেছে.
মাকে এভাবেই কিছুক্ষন এক দৃষ্টি তে তাকিয়ে দেখে সঞ্জয়…
অবশেষে কুয়ো তলায় হাত পা ধুতে চলে যায় সে….
মা এবার রান্নার কাজে মন নিবেশ করবে…আর ওকে বই নিয়ে পড়াশোনায় বসতে হবে..
পড়াশোনা করতে করতে মায়ের মুখ পানে আবার চেয়ে দেখে….সুমিত্রার সেটা নজরে আসায়…ছেলেকে উদ্দেশ্য বলে ওঠে “কি রে…বাবু কিছু বলবি…? “
সুমিত্রা নিজের ছেলের কাছে আসে, সঞ্জয় মায়ের মুখের দিকে তাকায়…মায়ের মিষ্ট হাঁসি তার দিকে চেয়ে আছে…আজ সকাল বেলা মাকে বেশ স্নিগ্ধ লাগছিলো..চোখে মুখে তার একটা সুন্দর জ্যোতি ফুটে উঠে ছিল..এ রূপ সে আগে কখনো দেখেনি…বিশেষ করে মা আজ অন্য দিনের মতো মুখ গোমড়া আর দুঃখী হয়ে থাকেনি…এমন উৎফুল্ল আর প্রাণোজ্জ্বল মাকেই তো দেখতে চাই সে…
সে চাই মা সদা সর্বদা ঠিক এভাবেই হাঁসি খুব থাকে যেন…আজ মায়ের মুখ টাও বেশ মিষ্টি লাগছিলো..ওর মাকে কেউ সুন্দরী বললে রাগ হয় ওর…”মাকে কেউ সুন্দরী বলবে কেন…?? এটা ওর মা…মিষ্টি মা…”
সঞ্জয় তড়িঘড়ি বিছানা থেকে উঠে পড়ে সকালের খাবার খেয়ে কলেজ যেতে হবে তাকে…
কলেজ যাবার পথে আসলামের সাথে দেখা হয় ওর….আসলাম বলে…”অভিনন্দন দোস্ত…তুই ক্লাসে প্রথম হয়েছিস…”
সঞ্জয় তার কথা শুনে হাঁসে…
কিন্তু আসলামকে একটু মন মরা দেখায়….সঞ্জয় প্রশ্ন করে তাকে “কি হয়েছে ভাই…? এমন মন খারাপ করে আছিস কেন..? “
“কিছু না রে….তেমন কিছু না..”বলে আসলাম.
সঞ্জয় আসলামের কাঁধে হাত রাখে আর বলে…”বল না বন্ধু…আমার এমন দুঃখী মানুষ দের ভালো লাগেনা…”
“আচ্ছা শোন তবে…”বলে আসলাম সঞ্জয়কে বলা শুরু করল..
“তুই ক্লাসে প্রথম হয়েছিস…আর আমি ভালো রেজাল্ট করতে পারিনি তাই..আব্বু জান অনেক রেগে গিয়েছিলো আমার উপর…আমার আম্মি জান কেউ অনেক বকাবকি করছিলো….সাথে তোর আর তোর মায়ের অনেক তারিফ শুনাম করছিলো..বলছিলো..সঞ্জয় খুব ভালো ছেলে আর ওর মা আহঃ খুবই ভালো মহিলা….বহিনজি দেখতেও ভালো আর স্বভাবেও ভালো মাশাআল্লাহ..!!! তাইতো এমন গরীবীতেও ছেলে ভালো মতো পড়াতে চাই…আচ্ছা আদমি বানাতে চাই….”
সঞ্জয় খুব গভীর মনোযোগ দিয়ে বন্ধুর কথা গুলো শুনছিলো….তারপর অবশেষে বলল “মন খারাপ করিসনা বন্ধু….আমি আছি তো…ঠিক মতো পড়াশোনা কর দেখবি তুইও ভালো রেজাল্ট করেছিস…”
রাস্তায় যাবার পথে…পাড়ার সেই দুস্টু ছেলে রফিক আর তুষার দাঁড়িয়ে ছিল..
রফিক সঞ্জয় কে উদ্দেশ্য করে বলে ওঠে “এই বাঁড়া…কোথায় যাস…অনেক হলো দেখা করিসনি…”
সঞ্জয় রফিকের কথা শুনে বেজায় চটে যায়…তাকে গালাগালি দেয়…?
বলে “এই ভেঁড়া কাকে বললি রে…তুই ভেঁড়া আমি না….”
রফিক সঞ্জয়ের কথা শুনে হাঁসে….
আসলাম ওর হাত ধরে টেনে নিয়ে যায়….বলে ছাড় না…ওরা তো আমাদের বন্ধু তাইনা..
সঞ্জয় আসলাম কে জবাব দেয়..বলে” ও দুস্টু ছেলে গালাগালি দেয়…মা ওর সাথে মিশতে মানা করেছে..”
আসলাম বলে চল চল কলেজে দেরি হচ্ছে…
সঞ্জয় তখন আসলাম কে বলে…”তুইও ওদের সাথে মিশবি না…ওরা দুস্টু ছেলে…”
“ছাড় না…আমরা সবাই ভালো….আর কে দুস্টু কে ভালো এসব দেখলে…তোর সাথে কেউ বন্ধুত্বই করবে না..” আসলাম বলে..
কিন্তু “মা”….
সঞ্জয়ের কথা কেড়ে আবার আসলাম বলে…”তুই কার সাথে মিশছিস…মাকে না জানালেই হল…”
সঞ্জয় মনে মনে ভাবল….হয়তো আসলাম ঠিকই বলছে…!!
সেদিন রবিবার ছিল…ছুটির দিন….বাবা মা কাজে চলে যাবার পর আসলাম সঞ্জয়ের বাড়িতে আসে…
তারা দুজন মিলে খেলা করতে যায়….সেখানে আবার তাদের সাথে রফিক আর তুষারের সাথে দেখা হয়…সাথে আরও বেশ কয়েকজন বিনয়…আর রাহুল..বোধহয়..
খেলতে খেলতে তারা মাঠের এককোনে এসে সব হাজির হয়…বিনয় পকেট থেকে বিড়ি আর দেশলাই কাঠি বের করে আনে….
“এসব কি…? “ মনে মনে সঞ্জয় বলে ওঠে…ওরা কি এবার বিড়ি খাবে…
রফিক বলে ওঠে ধুর কেলা…বিড়ি কে খায়?? সিগারেট দে আমায়…বলে দুটো আঙুলের ইশারা করে দেখায়…
আর সাথে আসলাম আর সঞ্জয় কেউ দে….
সঞ্জয় চমকে ওঠে বলে “না না…আমি বিড়ি খাই না…তোরা খা…”
সেখানে সঞ্জয় আর আসলাম বাদ দিয়ে সবাই ঘুরে ঘুরে বিড়ির সুখ টান নিতে থাকে…
মাঠের কিছু দূরে মা সুমিত্রার আগমন…কাজে থেকে ফেরার পালা…
আসলাম ফিসফিস করে সঞ্জয় কে বলে…”সঞ্জয় সঞ্জয়….সুমিত্রা চাচি…তোর মা..”
পেছন ফিরে দেখে সে…বেশ দূরে হলেও বোঝা যায় তারা কি করছে…
চোখা চোখি হয় মা ছেলের….মায়ের সুন্দরী পটল চেরা চোখ ক্রোধাগ্নি…
ভয় পেয়ে যায় সঞ্জয়…আজ নির্ঘাত মার পড়বে তার…
তড়িঘড়ি দৌড় দেয় সেখান থেকে….
কিছুক্ষনের মধ্যেই বাড়ি ফেরে সে…মাকে খোঁজে…আজ কপাল খারাপ তার..
“শোন্ সঞ্জয়…” সামনে মায়ের ডাক…কি হতে চলেছে তার আজকে…চোখ টিপে থাকে সে..
সুমিত্রা ছেলেকে বলে বস এখানে…সে জানে ছেলে এখন বড়ো হচ্ছে…আর দুধে শিশু নেই যাকে সে কোলে করে নিয়ে দুধ খাইয়ে ঘুম পাড়াতো…বারো অতিক্রম করে তেরোতে পৌঁছাবে সে..
সুতরাং তাকে মারধর করা চলবে না..
সুমিত্রা এসে ছেলের কাঁধে হাত দেয়…ওকে বোঝানোর চেষ্টা করে…বলে “বাবু দেখ…তোকে নিয়ে আমার অনেক স্বপ্ন আছে….জানিনা কতদূর সফল হব…তুইও তো আমার কথা সব মানিস…ওরা এই বস্তির ছেলে….তাই হয়তো ওদের সাথে তোর মেলা মেসা বন্ধ করতে পারবো না…কিন্তু কথাটা হলো যে তুই এখন বড়ো হচ্ছিস ভালো মন্দের জ্ঞান আছে তোর কাছে…সেহেতু কোনটা ঠিক কোনটা ভুল তুই ভালো ভাবেই জানিস…দেখ তোর বাবা একটা মাতাল মানুষ….আমার উপর কত অত্যাচার করে…আমি চাইনা তুই ও তোর বাবার মতো নেশা ভাঙ্গ কর…তুই অনেক বড় মানুষ হ…এটাই আমার কামনা…”
সঞ্জয় মাথা নিচু করে চুপটি করে মায়ের সব কথা মন দিয়ে শোনে….
অবশেষে বলে…”মা…আমি কি তাদের সাথে মিশবো না…?? “
“হ্যাঁ মেশ…মিশতে মানা নেই….আর এই বস্তি তে তোর জন্য আদর্শবান বন্ধু কোথা থেকে খুঁজে এনে দেব…এদের কেই বন্ধু মনে করতে হবে…আমি শুধু এটাই বলবো…যদি কোনো খারাপ বা অসভ্য গতিবিধি দেখিস তৎক্ষণাৎ চলে আসবি সেখান থেকে..”
সঞ্জয় মাথা নিচু করে মায়ের আদেশ পালন করে…
“বেশ যা এবার স্নান করে আয় তাড়াতাড়ি….আমি রান্নাবান্না করে তোর জন্য খাবার রেডি করি…” বলে সুমিত্রা..
“হ্যাঁ মা যায়…” বলে সঞ্জয় কুয়োতে জল তুলতে চলে যায়..
সেই মুহূর্তে “কই রে সুমি…কি করছিস তোরা…? “ বলে অলকা মাসির পদার্পন হয়…
সুমিত্রা রান্না ঘর থেকে বেরিয়ে আসে…”হ্যাঁ অলকা মাসি…কেমন আছো…তুমি…?? “
“হ্যাঁ রে আমি বেশ ভালো আছি…!! তোর খবর বল…কাজকর্ম কেমন চলছে তোর…?? “ অলকা মাসি বলে ওঠে..
“হ্যাঁ মাসি বেশ তো ভালোই চলছে এখন…” সুমিত্রা জবাব দেয়…
অলকা মোড়ার মধ্যে বসে সামান্য মুখ নামিয়ে মৃদু গলায় বলে ওঠে “হ্যাঁ রে শুনলাম নাকি তুই…ওই বাড়ির কাজ ছেড়ে দিয়েছিস…?? “
সুমিত্রা বলে “হ্যাঁ মাসি…মানে আমার ওই বাড়িতে কাজ করতে ঠিক ভালো লাগছিলো না…”
অলকা আবার মুখ টেরা করে প্রশ্ন করে..”কেন রে…ভালোই তো ছিল বুড়ো টা…খুশি করতে পারলে তোর টাকাপয়সার অভাব হত না…”
অলকা মাসির কথা শুনে সুমিত্রা একটু ভয় পেয়ে যায়…কি বলবে ঠিক করে উঠতে পারেনা..
“না মাসি…এমনি তেই ওদের অনেক কাজ আর লোকজন সুবিধার নয়..” সুমিত্রা আড়ষ্ট গলায় বলে ওঠে…
“আমি বুড়োটার কাছে সব শুনেছি…!!! তোকে আবার চাইছিলো সে….” আবার অলকা মাথা নিচু করে ফিসফিস করে বলে ওঠে..
সুমিত্রার মনে ভীতির সঞ্চার হয়…মনে মনে “হে ভগবান…লোকটা একে সব বলে দিয়েছে…”
সুমিত্রার চোখে মুখে বিন্দু বিন্দু ঘাম দেখে…অলকা আন্দাজ করে নেয় যে ওর মনে কি চলছে…
সে সুমিত্রাকে আশস্থ করে বলে “চিন্তা করিসনা মা…সুমি…ওসব হয়..জীবনে..তাছাড়া এই বস্তি তে কজন মহিলা সতী সাবিত্রী আছে..?? “
“প্রায় সবাই….নিজের পেটের জন্য অথবা মরদের স্বভাবের জন্য শরীর বেচছে..”
সুমিত্রার চোখে গল গল করে জল বেরিয়ে এলো…
অলকা মাসি আবার তাকে সান্ত্বনা দিতে থাকল..”কাঁদিস না মা…অমন করে কাঁদতে নেই…দেখনা আমাকেই দেখ….জোয়ান বয়সে কত পুরুষকে নাচিয়েছি…কি করব অভাবের দায়ে…তাছাড়া তোর একটা ছেলে আছে তো…বড়ো হলে তোর সব চিন্তা দূর হয়ে যাবে…চোখের জল মোছ সুমি…”
সুমিত্রা ক্রন্দনরত গলায় বলে ওঠে…”অলকা মাসি…তুমি বিশ্বাস করো….আমি বেশ্যা নই…কি করব সে সময় আমার অনেক দেনা হয়ে গিয়েছিলো…টাকা পয়সার দরকার ছিল তাই বাধ্য হয়ে আমাকে ও কাজ করতে হয়…”
সুমিত্রার নাকে মুখে জল গড়াতে থাকে…
কাঁদিস না মা কাঁদিস না…আসলে ব্যাপার টা কি জানিস এই দুস্টু পুরুষ সমাজ…মেয়েদের ভোগ সামগ্রী বলে মনে করে রেখেছে…যাইহোক কি আর বলবো…
তাছাড়া তুই সুন্দরী মেয়ে রসালো যৌবন তোর তাই ওদের নজর ঘুরে যায় ওই আরকি..
যাক আমি চলি…তুই ঠিক মতো থাকিস…দিনকাল এখন ভালো না…শুনেছি বস্তির লোকজন ও তোর উপর নজর দিয়ে রেখেছে…
সুমিত্রা নিজের আঁচল দিয়ে চোখ মুছতে মুছতে অলকা মাসিকে বাইরে অবধি দিয়ে আসে..
সুমিত্রা শুধু ভেতরে ভেতরে ফুঁপাতে থাকে….
ওদিকে সঞ্জয় সজোরে বলে ওঠে “মা আমার স্নান হয়ে গেছে তুমি…আমার জন্য খাবার রেডি করো…”
স্নান সেরে বেরিয়ে এসে সঞ্জয়, মায়ের চোখে অশ্রু দেখে মন খারাপ হয়ে যায়..বলে “মা তুমি কাঁদছো কেন…?? আমি সত্যি বলছি…কথা দিচ্ছি তোমায়…আমি কোনো দিন বিড়ি সিগারেট খাবো না…তুমি কেঁদো না মা…দয়া করে..”
সঞ্জয় হয়তো বুঝতেই পারলো না…যে মায়ের কাঁদার আসল কারণ কি….?
যাইহোক ছেলের প্রতিশ্রুতি আশ্বাস পেয়ে সুমিত্রার মন কিছুটা শক্ত হোল…বেশ তো কয়েকদিন ধরে ভালই তাদের জীবন কাটছিলো…এমন পরিস্থিতি না এলেই পারত…
ছেলে মায়ের হাত জড়িয়ে ধরে…মা সুমিত্রা সঞ্জয়ের থেকে একটু লম্বা বেশি…তবে ছেলে বড়ো হলে মাকে চাপিয়ে যাবে…সুমিত্রার উচ্চতা ওই পাঁচ ফুট পাঁচ ইঞ্চি হবে…
সব কিছু ভোলার চেষ্টা করে সুমিত্রা….সে দিন পেরিয়ে গেছে…এখন সামনে অনেক টা পথ পড়ে আছে…অনেক দূর যেতে হবে…পুরোনো দিন পেছনে ফেলে এগিয়ে যেতে হবে..যা হয়ে গেছে তা বদলানো যাবে না…সুতরাং সেগুলো ভেবেও কাজ নেই..
একটু হাফ ছেড়ে ছেলের দিকে তাকায় সুমিত্রা….”সঞ্জয়….বাবু…তুই ঠিক মতো পড়াশোনা করছিস তো…?….. তোকে আগামী বছরেও ক্লাসে প্রথম হয়ে দেখাতে হবে কিন্তু…জেনে রাখবি এটাই তোর মায়ের কামনা…”
সঞ্জয় মায়ের মুখ পানে চেয়ে হাঁসে….বলে “হ্যাঁ মা…আমি তোমার জন্য সবকিছু করতে রাজি আছি…”
“এবার খেতে দাও তো…আমার খুব খিদে পেয়েছে…”
সঞ্জয় মায়ের ক্রন্দনে খুবই ব্যাথিত হয়….মনে মনে একপ্রকার সপথ নেয় সে…”মায়ের খুশির জন্য সবকিছু সমর্পন…করতে রাজি”
দুপুরে খাওয়া শেষে সে আর খেলতে যায়না…ভাবুক ছেলে একটু একাকিত্ব চায়…তাই সে খেলার মাঠে না গিয়ে বস্তির উত্তর দিকে একটা এলাকা আছে ওই দিকে চলে যায়…সেখানটা বেশ নির্জন গাছ পালায় ভর্তি আর সামনে দিয়ে একটা নালা বয়ে গেছে..
সেখানে গিয়ে একটা পাথর খন্ডের উপর বসে ঘরের জন্য চিন্তা ভাবনা করে..
সেখান থেকে বহু দূরে শহরের উঁচু অট্টালিকা দেখা যায়…মনে মনে ভাবে ওর কাছে যদি টাকা থাকতো তাহলে মা বাবার জন্য একটা বাড়ি কিনে দিত..
নানা রকম আকাশ কুসুম চিন্তা ভাবনা করতে করতে হঠাৎ ওর নজর ওই নালার জলের মধ্যে চলে যায়….সেখানে সেই মা ঝোঁপে ছুঁড়ে ফেলে দিয়েছিল ওই রকম একটা বেলুন ভেসে থাকতে দেখে সে…
এই জিনিস টাকে দেখলেই শরীরে একটা বিচিত্র অনুভূতি জেগে উঠে ওর.
এ নিয়ে দ্বিতীয় বার এই অজ্ঞাত বস্তু তার নজরে আসে…
একটা ডান্ডা দিয়ে…ওটাকে ওঠানোর চেষ্টা করে সঞ্জয়…
অদ্ভুত ব্যাপার হোল এই বস্তুটাও ঠিক সেদিন কার মতোই…বেলুন আর ভেতরে সাদা থকথকে পদার্থ..
ডান্ডা দিয়ে আবার ওটাকে জলের মধ্যে ভাসিয়ে দেয় সঞ্জয়..
এই জিনিসটার ওপর গভীর কৌতূহল তার…কি কাজ এটার একদিন জেনেই ফেলবে সে..
“মাকেই জিজ্ঞাসা করতে হবে এটার ব্যাপারে..” মনে মনে বলে সে.
আসতে আসতে সন্ধ্যাবেলা হয়ে যায় ওর…
বাড়ি ফিরে এসে দেখে মা…শাড়ি ঘোমটা দিয়ে শাঁখ বাজিয়ে সন্ধ্যা দিচ্ছে…
মায়ের এই দৃশ্য মনকে নির্মল করে তোলে…মাকে দেবী লক্ষীর মতো মনে হয় তার..মাতৃ তুল্য দেবী সুমিত্রা কর জোড়ে, তার মধ্যি খানে ধূপকাঠি রেখে সন্ধ্যা বন্দনা করে চলেছে.
মাকে এভাবেই কিছুক্ষন এক দৃষ্টি তে তাকিয়ে দেখে সঞ্জয়…
অবশেষে কুয়ো তলায় হাত পা ধুতে চলে যায় সে….
মা এবার রান্নার কাজে মন নিবেশ করবে…আর ওকে বই নিয়ে পড়াশোনায় বসতে হবে..
পড়াশোনা করতে করতে মায়ের মুখ পানে আবার চেয়ে দেখে….সুমিত্রার সেটা নজরে আসায়…ছেলেকে উদ্দেশ্য বলে ওঠে “কি রে…বাবু কিছু বলবি…? “