31-03-2024, 10:53 AM
(This post was last modified: 22-05-2024, 01:21 AM by Sexpeare. Edited 2 times in total. Edited 2 times in total.)
শালীর অগাধ ভালোবাসা
পর্ব - ২
চারিদিকে একটা হৈ হৈ কান্ড। আসলে দীর্ঘ প্রায় তিন বছর পর শ্বশুর বাড়িতে এসেছি। সকলে ধরেই নিয়েছিল আমি আর কোনোদিন শ্বশুর বাড়িতে আসবোনা। আমিও সেই রকমই কিছু একটা ভেবে ছিলাম। কিন্তু ছেলের জেদ, অপত্য স্নেহের কাছে সব সিদ্ধান্তই বদলে যায়। বাড়ির বড় জামাই হিসেবে আমিও খুব সম্মান পাই সেটাও আমার বউ প্রিয়ার কারণে একটু বেশিই পাই। আসলে প্রিয়া খুবই সংস্কারি ও বাধ্য একটা মেয়ে ছিল। ও ছিল বাড়ির জ্যেষ্ঠা কন্যা, আর আমি আমার পরিবারের জ্যেষ্ঠ পুত্র। সাধারণত পরিবারের বড়ো মেয়েরা এরকমই হয়ে থাকে। তাদের চাহিদা কম থাকে, সবাইকে সামলে নিয়ে চলতে ভালোবাসে। আর ছোটো মেয়েরা একটু বেশি আহ্লাদি হয়, বড়োদের কাছে আবদার করে সব সময় নিজের পছন্দের জিনিসটি ঠিকই হাসিল করে নেয়। বাড়ির বড় মেয়ে অনেক বেশি ত্যাগী হয়, কারও ওপর হিংসা করেনা, কি পেলাম আর না পেলাম তার হিসেবও কষে না। সবাইয়ের প্রতি যত্নশীল হয়। প্রিয়াও এব্যাপারে ব্যতিক্রম ছিলোনা। আমার যখন বিয়ে হয় ওর বয়স ২৩ এর কোঠায়, আর আমার ২৬ বছর। ওর বাবা মানে আমার শ্বশুর মশাই আরও পাঁচ বছর আগে গত হয়েছেন। আমি বিনা যৌতুকে পিতৃহারা এক কন্যাকে বিয়ে করেছিলাম হাই কলেজে টিচারশিপ চাকরি পাওয়ার ঠিক পরেই। কলেজ শিক্ষকরা বেশি পনে বিয়ে করে এই বদনাম একটা ছিলোই, সেখানে আমি একটা ব্যতিক্রম সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম বিনা পনে বিয়ে, যেটা আমাকে সমাজে এবং শ্বশুর বাড়িতে একটু বেশিই সম্মান ও কদর এনে দিয়েছিলো।
যখন আমাদের বিয়ে হয় প্রিয়া তখন ইংলিশে মাস্টার্স ফাইনাল ইয়ারে। বিয়ের দুই মাস পর ওকে ইউনিভার্সিটি নিয়ে গিয়েছিলাম মাস্টার্স এ ফাইনাল এক্সাম দেবার জন্য। ও ওর ব্যাচমেটদের সাথে পরিচয় করিয়ে দিয়েছিলো। আমি খুব খাতির পেয়েছিলাম সবার কাছে। এক তো প্রিয়ার মতো সুন্দরী সংস্কারি মেয়ের সদ্য বিয়ে করা বর, তার ওপর হাই কলেজ মাস্টার, অন্যদিকে পেটানো হ্যান্ডসাম বডি, আর আমার বিনা পনে বিয়ে করাটা খুব চাউর হয়েগিয়েছিল। অনেকেতো রাজ্যটোক খেতাবও দিলো। তবে আমার পকেট অনেকটা খালি হয়েছিল ট্রিট দিতে গিয়ে।
আমি ২৩ বছর বয়সে ম্যাথ এ মাস্টার্স কমপ্লিট করি আর ২৫ এ বি এড এবং ২৬ বছর বয়সে এক চান্স এ এস এস সি ক্র্যাক করি আর হাই কলেজে টিচারশিপ এর চাকরি পেয়ে যাই। আসলে বরাবরই আমি কলেজে ভালো স্টুডেন্ট ছিলাম, যদিও কোনদিন কলেজে আমি ফার্স্ট, সেকেন্ড কিংবা থার্ড হতে পারিনি, আবার ক্লাসের রোল নম্বর ১০ এর ওপরেও যায়নি। তবে কলেজে প্রথমে কিন্তু আমি ব্যাক বেঞ্চার ছিলাম। গ্রামের প্রাইমারি কলেজে ক্লাস ফোর পাশ করে পাশের গ্রামের হাই কলেজে অ্যাডমিশন টেস্টের মাধ্যমে ক্লাস ফাইভে ভর্তি হই। আমি প্রথম থেকেই একটু বেশিই ভিতু স্বভাবের ছিলাম, তাই টিচারদের খূব ভয় পেতাম। তাই সর্বদাই পিছনের বেঞ্চে বসতাম, আর নিজেকে লুকিয়ে রাখতাম সামনের বেঞ্চের ছাত্রের পিছনে। সবসময় ভয় পেতাম যদি কোনও টিচারের সাথে চোখাচুখি হয়ে যায় তাহলেই আমাকে পড়া ধরবে। এমন নয় যে আমি হোমটাস্ক করতাম না, পড়া রোজই করতাম কিন্তু ভয় পেতাম টিচারদের মুখোমুখি হতে।
তবে একটা বিশেষ ঘটনাই ছিল আমার জীবনের টার্নিং পয়েন্ট, যা আমাকে ব্যাক বেঞ্চার থেকে ফ্রন্ট বেঞ্চার বানিয়েছিল, যুগিয়েছিল অনেক সাহস, এনে দিয়েছিল এক নতুন পরিচিতি। আমি তখন ক্লাস সিক্সে পড়ি। সালটা ঠিক মনে নেই, কারণ ছেলেবেলায় সময় সাল নিয়ে মাথা ঘামানোর প্রবণতা ছিল না। তবে চেষ্টা করলে হিসেব করতে পারি। আমি ম্যাট্রিক মানে মাধ্যমিক পরীক্ষা দিয়েছিলাম ১৯৯৯ সালের মার্চ মাসে। সেটাও ছিল আমার জীবনের একটা স্মরণীয় ইতিহাস । মাধ্যমিক পরীক্ষা ছিল আমার জীবনের প্রথম বোর্ড পরীক্ষা যেটা দিয়েছিলাম আমি এক দূর সম্পর্কের মাসির বাড়িতে থেকে। আসলে পরীক্ষার সেন্টার পড়েছিল আমাদের বাড়ী থেকে প্রায় ৫০ কিলোমিটার দূরে। তখনকার দিনে এখনকার দিনের মতো রোডে এত গাড়ী ঘোড়া চলত না। ঘণ্টায় মাত্র একটা করে বাস চলত। তখন গ্রামে সকল বাড়িতে একটা করে সাইকেলও থাকত না। এখনতো প্রত্যেক বাড়িতে একটা করে বাইক রয়েছে কোনও বাড়িতে আবার দুটো , অনেক বাড়িতে চার চাকাও রয়েছে। তখন ভাড়ার গাড়ীও সহজে পাওয়া যেতনা। এখনকার দিনে চারচাকা ভাড়া পেতে কোনও অসুবিধা নেই। কীছূ না পেলে টোটো বা টুকটুক পাওয়াই যায়। যাইহোক, বাবা মাধ্যমিক পরীক্ষা দেওয়ার জন্য দূর সম্পর্কের মাসির বাড়িতে থাকার ব্যবস্থা করেছিল। যদি একটা বাস মিস হয়ে যেত তাহলে কোনও একটা পরীক্ষাও মিস হতে পারত ।