Thread Rating:
  • 135 Vote(s) - 3.69 Average
  • 1
  • 2
  • 3
  • 4
  • 5
Adultery পদ্ম নাগের বিষ
পিকলু আজ স্কুলে জয়েন করেছে। স্কুলে বাবার সাথেই ও আজ গিয়েছিল। ওর বন্ধুরা একে একে ওকে শুভেচ্ছা জানিয়ে যাচ্ছে। ভালো লাগছে পিকলুর। দীর্ঘ এক বছর ওর ঘরে বসে কেটেছে। মা আর ফিরবে না। বাবা বলেছে মা এখানে থাকতে চায় না। পিকলুর অবশ্য তা মনে হয়নি। সে কিশোর হলেও বুঝতে বাকি নেই। মায়ের সাথে শম্ভু আঙ্কেলের সম্পর্কটাই মা আর বাবার বিচ্ছিন্নতার কারন। বড্ড একলা লাগে ওর কলকাতার বাড়িতে। চাঁপা মাসি দেখাশোনা করে। চাঁপা মাসির ছেলেটা পর চেয়ে বড্ড ছোট, তবু ও এলে পিকলু ওর সাথে খেলা করে। এখন বাইরে খেলাধূলো বা সাঁতারে যাওয়ার বারণ আছে। প্রতিদিন সকালে আর সন্ধেয় ফিজিওথেরাপি হয়।
পিকলু টের পায় ফিজিওথেরাপিস্ট শুভ আঙ্কেলের কৌশলের চেয়ে শম্ভু আঙ্কেলের মালিশ অনেক আরামপ্রদ ছিল। শম্ভু আঙ্কেল মানুষটাকে ওর মোটেই খারাপ লাগতো না। বরং বড্ড এডভেনচারিস্ট লাগতো। কেমন নদীপথে নৌকা করে ঘুরিয়েছিল ওকে আর মাকে। কেমন বাবার মত স্টিক দিয়ে নয়, হাতের মুঠোয় সাপ ধরে। কত বাঘের রুদ্ধশ্বাস গল্প শুনেছিল সে শম্ভু আঙ্কেলের মুখে। কিন্তু মাকে তার থেকে, বাবার থেকে কেড়ে নেব শম্ভু আঙ্কেল, এটা মেনে নিতে পারেনি পিকলু। বাবার জন্য দুখঃ হয় তার।
প্রতিদিন রাতে বাবা সিগারেট হাতে পায়চারি করে।কখনো কখনো ছাদ বারান্দায় বসে থাকে আঙুলে সিগারেট চেপে পথবাতির দিকে চেয়ে। পিকলু বুঝতে পারে চশম চোখে বাবা যখন হারপেটোলজিষ্টের মোটা বইগুলো পড়তে থাকে তখনও যেন বিষণ্নতা।
একদিন তো পীযুষ বই পড়তে হাঁক ছেড়ে বলে ফেলেছিল "রমা এক কাপ চা দিয়ে যাও"। পিকলুর মা ছাড়া ভালো লাগে না।

স্কুলে আজ তার ভালো লাগছে। কলেজ থেকে তাড়াতাড়ি ফিরে পীযুষ নিজেই গাড়ি করে ছেলেকে স্কুল থেকে নিয়ে ফিরল। ঘরে ঢুকতে চাঁপা বললে---দাদা, পিকলুর জন্য জলখাবার রেডি কইরা আছে, আপনিও কি এহন জলখাবার খাবেন?

পীযুষ বললে---চা দিও শুধু।

বাথরুম থেকে বেরিয়ে পীযুষ দেখলে ছেলেটা তার নিজের রুম ছেড়ে বেরোয় না আজকাল। চাঁপা চা দিয়ে গেছে। সকালের কাগজটা পড়া হয়নি। পীযুষ ওটা খুলে পড়তে লাগলো। চাঁপার হাতের রান্না হোক বা চা কোনোটাই রমার মত নয়।

চাঁপা রান্নার কাজ সন্ধের মধ্যে সেরে বাড়ি চলে যায়। রান্না সেরে রেখে এসে ও বললে---দাদা একটা কথা ছিল?
পীযুষ কাগজ থেকে মুখ তুলে চশমার ওপর দিয়ে তাকালো। চাঁপা বললে---দাদা, আমি কাজটা ছেড়ে দিব পরের মাস হতে।

পীযুষ জানে যে কথা অনেক আগেই জানিয়ে রেখেছে চাঁপা। উত্তম নামে একটা ছেলেকে ও বিয়ে করেছে পুনর্বার। ছেলেটা কাজ পেয়েছে একটা কোম্পানিতে হায়দ্রাবাদে। ওখানেই চলে যাবে চাঁপা। পীযুষ নিরুত্তর রইল।
চাঁপা ঠিক বুঝতে পেরেছিল না প্রথম প্রথম বৌদির সাথে দাদার গন্ডগোলটা কোথায়। পরে বুঝেছে ওই ভীমনাগ বেদের ছেলেকে নাকি বৌদি বিয়ে করে সংসার করছে। চাঁপা বিস্মিত হয়েছিল। দাদার নির্বিকার মুখটা দেখে ওর মধ্যে একটা দুঃখ গ্রাস করেছে। এ বাড়িতে অনেকদিন কাজ করেছে সে। তার ভালোমন্দে এইবাড়ির দাদা-বৌদি আপন করে সাহায্য করেছে। সেই বাড়িরই এক গভীর সঙ্কটের সময় সে কাজ ছেড়ে চলে যাচ্ছে।
উপায় কি? উত্তম একটা দু কামরার ঘর ভাড়া নিয়েছে হায়দ্রাবাদে। ওখানেই ওরা সংসার করবে। চাঁপার ছেলেটাকেও ভালবাসে উত্তম। ছেলেটাও খুব ন্যাওটা উত্তমের। ছেলের হাত ধরে যখন উত্তমকে রাস্তা ধরে হাঁটতে দেখে বুকটা ভরে যায় চাঁপার। রনজিৎ কখনো পিতা হতে পারেনি চাঁপার ছেলের। কিন্তু উত্তম পুরোদস্তুর পিতা।

খাবার টেবিলে পীযুষ নিজেই প্লেটে করে বেড়ে আনলো খাবার ছেলে আর তার জন্য। পিকলু রিমোটটা নিয়ে খেলার চ্যানেলগুলো বদলে বদলে দেখতে ব্যস্ত।
পীযুষ আজকাল ছেলের সাথেও কম কথা বলে। হঠাৎ করে পিকলু বললে---বাবা, চাঁপা মাসি চলে যাচ্ছে?
---হুম্ম।
---তাহলে আমাদের রান্নাবান্নার কি হবে?
---দেখি, নতুন কোনো কাজের লোক পাই কিনা।
---বাবা, ষষ্ঠীআঙ্কেল ফোন করেছিল।

চমকে উঠল পীযুষ। তারপর কিছুক্ষণ নীরব থাকলো ও। এবং অবশেষে বললে---কেন?

---বলল, আমার নাকি একটা ভাই হয়েছে।

বুকটা কেঁপে উঠল পীযুষের। রমা যে গর্ভবতী ছিল সে কথা পীযুষও কানাঘুষো শুনেছিল। শম্ভুর সন্তানকে জন্ম দিয়েছে রমা। বড্ড হাহাকার হচ্ছে পীযুষের বুকে। ইউনিভার্সিটির সামনে নীল শাড়ি পরে পীযুষের জন্য দাঁড়িয়ে থাকা সেই যুবতী মেয়েটির কথা মনে পড়ে যাচ্ছে পীযুষের। এত বছর প্রেম, দাম্পত্য, তারপরে রমা এখন অন্যের সংসারে ঘরনী। রমা এখনো বেদের সংসারে বেদেনী। এখন সে সংসারে তৃতীয় জনও এসে গেছে।

স্বাস্থ্যকেন্দ্রের বিছানায় শুয়ে আছে রমা। কাছে তার ছোট্টটি। শিশুটির গায়ের রঙ শ্যামলা বর্ণের। বাপের মত কালোও নয়, মায়ের মত ফর্সাও নয়। রমার কোলে শুয়ে চুকচুক করে মায়ের দুধ খাচ্ছে সে। রমার স্তন আবার দশক পরে পরিপূর্ণ। আজ সে চল্লিশের কোঠায়, এই শুকনো বুক কোনো একদিন আবার স্রোতস্বিনী নদীর মত হয়ে উঠবে ভাবেনি সে। আসলে নারীর বুক এমনই, সবসময়ের জন্যই তার  স্রোতময় সরিৎ হবার ক্ষমতা রাখে। এমনকি রজঃবন্ধা নারীও দুগ্ধবতী হবার ক্ষমতা রাখে।
শম্ভু এসে ছিল অনেকক্ষন। কিছু ঔষধ আর ফলমূল কিনে আবার এসেছে সে। রমার পুষ্ট স্তন তার বাচ্চার মুখে গোঁজা। এ দৃশ্যে মুগ্ধ শম্ভু। রমা হাসিমুখে তাকালো শম্ভুর দিকে। বললে---দেখো কেমন ঘুমোতে দিচ্ছে না আমাকে তোমার ছেলে।

শম্ভু স্বাস্থ্যকেন্দ্রের পাশাপাশি বেডগুলোর দূরত্ব অনুমান করে বললে---বাপকা ব্যাটা কি লা!

ওরা এ নিয়ে দ্বিতীয়বার চুম্বন করল দুজনে। ঠোঁটে ঠোঁট মেশানো ঘন চুম্বন শেষ হতেই রমা বললে--আমি বাড়ি যাবো কবে শম্ভু?

---কালই সকালে ছাইড়ে দিবে ডাক্তার। বেশি কইরে ফল খাইবি, জল খাইবি, আমি ঘরে মেথি আইনে রাইখছি, মেথি খাইলে দুধ বাড়ে। বাচ্চারে দুধ খাওয়াইবি ঠিকঠাক কইরে।

রমা মৃদু হেসে তার সদ্যজাত সন্তানের কপালে চুমু দিয়ে বললে---সে আর বলতে, তোমার বেবির খিদে খুব বেশি।

পীযুষ সেই রাতে ঘুমোতে পারেনি হৃদয়ে বিশাল ঝড় তাকে ঘুমোতে দেয়নি। রমাকে ফিরিয়ে আনতে সে চেয়েছে, রমা যা ভুল করেছে তা সে ক্ষমা করে দিতে চেয়েছিল। কিন্তু রমা গর্ভবতী জানার পর সে আর রমার কাছে যেতে চায়নি। এখন তার মনে হচ্ছে রমা কি আজীবন শম্ভুর হয়ে গেল? তার কিংবা পিকলুর কি হবে?

চলবে।
Like Reply


Messages In This Thread
পদ্ম নাগের বিষ - by Henry - 21-10-2023, 11:21 PM
RE: পদ্ম নাগের বিষ - by Henry - 27-03-2024, 12:00 AM



Users browsing this thread: 4 Guest(s)