
শালীর অগাধ ভালোবাসা
পর্ব - ১
আমার একমাত্র সন্তান অমিতের জোরাজুরিতে দীর্ঘ তিন বছর পর শ্বশুর বাড়িতে এলাম। অমিত একটা কনভেন্ট কলেজে ক্লাস সেভেনের বার্ষিক পরীক্ষা দিয়েছে। ও প্রতি বছর দুর্গাপূজার ছুটিতে আর মার্চ এ বার্ষিক পরীক্ষা শেষ হয়ে গেলে মামা বাড়িতে আসে। আসলে পড়াশুনার চাপের কারণে খুব একটা আউটিং হয় না। অমিতও মামা বাড়ি ছাড়া আর কোথাও যেতে ভালোবাসেনা।মামা বাড়িতে ওকে সবাই খুব ভালোবাসে। আর এই ভালোবাসাটা ও পেয়েছে কিছুটা উত্তরাধিকার সূত্রে আর কিছুটা নিজের মেধা ও সৎ গুনে। উত্তরাধিকার সূত্রে এই কারণে বললাম, ওর মা মানে আমার একমাত্র প্রিয় বউ প্রিয়া ছিল সকলের খুব প্রিয়। বংশের বড় কন্যা, তার ওপর খুব সংস্কারি ও বাধ্য ছিল। হ্যাঁ, ছিল বলছি কারণ প্রিয়া আর বেঁচে নেই। তিন বছর আগে আমাকে ছেড়ে না ফেরার দেশে চলে গেছে। ও বেঁচে থাকতেই "প্রিয়ার ছেলে'' শুধু এই কারণে অমিত একটু বেশি ভালোবাসা পেয়েছে ওর মামা বাড়িতে। এখন আবার ও মাতৃহারা, তাই মামা বাড়িতে ওর ভালোবাসাটাও বহুগুণ বেড়ে গিয়েছে।
প্রিয়া বেঁচে থাকতে আমরা তিনজনে একসাথে কলকাতা থেকে শ্বশুর বাড়িতে আসতাম উক্ত দুই সময়ে - দুর্গাপূজা ও ছেলের বার্ষিক পরীক্ষার পর। মাঝে মধ্যে গ্রীষ্মের ছুটিতে কিংবা জামাই ষষ্ঠিতে। কিন্তু প্রিয়া চলে যাবার পর আর শ্বশুর বাড়িতে গিয়ে জামাই আদর নিতে ইচ্ছে হয়নি। যার জন্য শ্বশুর বাড়ি, সেই যখন নেই, তখন যাই কিভাবে? একটা অস্বস্তি কাজ করতো মনের মধ্যে। তবে শ্বশুর বাড়ির লোকজন ওর মৃত্যুর জন্যে আমাকে দায়ী করেনা। আসলে বাচ্চা বেলা থেকেই প্রিয়ার কিছু শারীরিক সমস্যা ছিল। ডাক্তার বলেছিল ও বেশীদিন বাঁচবে না, তারপরেও আমার সাথে বারো বছর সংসার করে ৩৫ বছর বয়সে ও মারা যায়।
আজ তিন বছর পর শ্বশুর বাড়িতে এসে বুঝলাম আমার প্রতি তাদের শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা কিছুই এতটুকু কমেনি। তাদের অনুযোগেরও শেষ নেই - কেন এতদিন আসিনি, ভুলে গিয়েছি নাকি ইত্যাদি ইত্যাদি। এমনকি আর বিয়ে কেন করিনি, কতই বা আমার বয়স, অমিতের একটা নতুন মা হলে ভালো হত। তাদের আমার প্রতি অগাধ ভালোবাসায় আমি আপ্লুত। জামাই খাতিরেরও কোনো কমতি ছিল না এখনও।