19-03-2024, 07:49 PM
(This post was last modified: 20-03-2024, 07:03 PM by বয়স্ক মহিলা প্রেমী. Edited 2 times in total. Edited 2 times in total.)
নায়নী আর আকর্ষের এই বন্ধুত্বটা আরো গভীর হয়েছে এই কয়েকদিনে। সারাদিনে একবার হলেও ২জন ২জনের খবর নেয়। কিছু দরকার হলেই একজন আরেকজনের কাছে চলে যায় বিনা দ্বিধায়। আকর্ষ নিজের কাজ নিয়ে ভালোই সিরিয়াস সব সময় নিষ্ঠার সাথে কাজ করার দরুন ওর কোথাও ভুল ধরা কঠিন হয়ে পড়ে, আকর্ষের কাজ অনেক ভালো সেটা কম বেশি সবাই জানে। নতুন ব্রাঞ্চ ম্যানেজার সবিতা সবার কাজ নখ দর্পনে রাখলেও আকর্ষের কাজ নিয়ে কখনো কিছুই বলে না। তারপর দিনে একবার হলেও আকর্ষকে নিজের কেবিনে ডাকা কোনো কাজ না থাকলে আকর্ষের সাথে আড্ডা দেওয়া, আকর্ষকে বাইরে ডিনারে যাওয়ার প্রস্তাব দেওয়া এইসব চলছে, আকর্ষ এইগুলো প্রথমে নায়নীকে বললেও নায়নী খুব বেশি একটা পাত্তা দিতো না। নায়নী মনে করতো কাজ ভালো হওয়ার জন্য এইসব করে, কিন্তু একদিন আকর্ষ বলে উঠলো সবিতা ম্যাম মাঝে মাঝে ওর গায়ে হাত দেয় যা ওর একটু অস্বস্তি লাগে, এইটা কথা শোনার পর নায়নীর কেমন যেন লাগতে শুরু করে। তাই ও খুব খেয়াল করতে থাকে, কয়েকদিন নজর রাখার পর দেখতে পেলো আসলেই তাই আকর্ষের সাথে মনে হয় একটু বেশি টাচি হচ্ছে এই ব্রাঞ্চ ম্যানেজার। কয়েকদিন দেখার পর নায়নী এক রাত্রে আকর্ষের সাথে ফোনে কথা বলার সময় বললো,
"ব্রাঞ্চ ম্যানেজার তো তোমাকে তো খুব ফেভার করছে দেখি?"
এই কথা শুনে আকর্ষ একটু অবাক হলো, আর বললো,
"আমাকে ফেভার করছে কোথায় আমি তো সেরকম কিছু দেখছি না।"
"করছে করছে। আমি খেয়াল করেছি।"
" ফেভার করলে তো ভালোই তাই না? "
"ভালো কিন্তু উনি তোমাকে একটু বেশি টাচ করে।"
"বাহ্ ম্যাম কি সুন্দর আমিই তো আপনাকে বললাম যে উনি আমাকে বেশি টাচ করে আর আপনি আমাকে সে কথা কেন বলছেন?"
"কারণ আমি দেখেছি। "
"ওহ আচ্ছা।"
"শোনো উনার কাছে থেকে দূরে থেকো যেভাবে মৌমাছির মতো তোমার আশে পাশে ঘুরঘুর করে মনে হয় তোমার শরীরের ভেতর যে মধু আছে সেগুলো শুষে নিবে।"
এই কথা বলে নায়নী হাসতে লাগলো। আকর্ষ বুঝলো নায়নী কি বুঝাতে চাইছে। তাই বললো,
"সবিতা ম্যামের মতো সুন্দরী যদি আমার এইটা অধমের মধু খেতে চায় তাহলে মধু না শুধু মধুর পুরো মৌচাক ধরে খাইয়ে দিবো।"
" আহঃ কি কথা। তো খাওয়াও না তোমার মৌচাক। কে না করেছে। "
"কেও না করেনি। কিন্তু আমি খাওয়াতে চাই আরেকজনকে যে খেতে চায় না। আর যে খেতে চায় তাকে আমি খাওয়াতে চাই না কি একটা সমস্যা।"
নায়নী মনে মনে ভাবলো, এইটা পিচ্চি ছেলেটা তার কথাই বলছে। তাই কথা ঘুরানোর জন্য,
"হয়েছে কে কি খায় এখন সেটা সময় বলবে। এখন ঘুমাও অনেক রাত হলো।"
"কি করে ঘুমাই একা যে আর ঘুম আশে না। "
"তাই তাহলে মাসিমাকে বলি একটা বিয়ে দিয়ে দিতে কি বলো।"
"এতো তাড়াতাড়ি বিয়ে করবো না।"
"এহ বাবা এখন বললে একা ঘুমাতে ভালো লাগে না বিয়ে করলেই তো আর একা ঘুমাতে হবে না।"
"বিয়ে তো করতেই চাই কিন্তু আমি যাকে বিয়ে করতে চাই সেও যে আমাকে বিয়ে করতে চায় কিনা সেটাই তো জানি না।"
"ওহ বাবা তাই তা কে আমাদের এইটা হ্যান্ডসামের মনের দখল নিয়েছে শুনি।"
"আছে একজন।"
"বাহ্ তাহলে নামটা বলো না শুনি।"
"নাহ এখন না সময় হলে এমনি জানতে পারবে আমি জানাবো।"
"ঠিক আছে অপেক্ষায় রইলাম তোমার মনের রানীকে দেখার জন্য।"
"আচ্ছা।"
"ঠিক আছে এখন রাখছি।"
"এইটা শোনো আমার একটা কথা রাখবে?"
"কি কথা শুনি?"
"নাহ আগে বলো রাখবে।"
"আচ্ছা রাখবো বলো,"
"আমাকে একটা গান গেয়ে শোনাও না।"
"কি না না একদম না আমি ঐ গানটান গাইতে পারি না।"
"মিথ্যে কেন বলছো আমি জানি তুমি গান গাও।"
"কিভাবে জানলে শুনি?"
"আমি তোমার ফেসবুকে দেখেছি তোমার ফ্রেন্ডরা তোমাকে ট্যাগ করে ভিডিও আপলোড করেছে সেখানে দেখেছি।"
আকর্ষ কি বলবে এখন ভেবে পেলো না, শুধু বললো
"এখনি শুনতে হবে।"
"হুমম।"
নায়নী কিছু চায়নি ওর কাছে এই পর্যন্ত আজকে চেয়েছে তাই ও না করলো না। আকর্ষ জিজ্ঞেস করলে,
"এইখানে শুনবে না ভয়েস এসএমএস করে দিবো?"
"ভয়েজ এসএমএস করে দাও।"
আকর্ষ তখন বাই বলে কল কেটে দিলো,
আর গাইতে শুরু করলো,
তোমায় হৃদ মাঝারে রাখবো, ছেড়ে দেবো না
তোমায় হৃদ মাঝারে রাখবো, ছেড়ে দেবো না
ওরে ছেড়ে দিলে সোনার গৌর আর পাবে না
ক্ষ্যাপা ছেড়ে দিলে সোনার গৌর আর পাবে না, না না না
ছেড়ে দেবো না
তোমায় হৃদ মাঝারে রাখবো, ছেড়ে দেবো না
তোমায় হৃদ মাঝারে রাখবো, ছেড়ে দেবো না
হৃদয় মোহনো গোরা, কোন গুনিজনার মনোহরা
হৃদয় মোহনো গোরা, কোন গুনিজনার মনোহরা
ওরে রাধার প্রেমে মাতোয়ারা চাঁদ গৌড়
ওরে রাধার প্রেমে মাতোয়ারা
ধূলায় যাই ভাই গড়াগড়ি
যেতে চাইলে যেতে দেবো না
ওরে যেতে চাইলে যেতে দেবো না, না না না
না না না যেতে দেবো না
তোমায় হৃদ মাঝারে রাখবো, ছেড়ে দেবো না
তোমায় হৃদ মাঝারে রাখবো, ছেড়ে দেবো না
এইটুকু গান নিজের খালি গলায় গেয়ে পাঠিয়ে দিলো। আর সাথে একটা গুড নাইট লিখে আকর্ষ শুয়ে পড়লো। নায়নী ভয়েস এসএমএস পাওয়ার সাথে সাথে সেটা চালু করলো আর নায়নী শুনতে পেলো আকর্ষের গলায় এই গানটা, নায়নী গানটা শুনছে আর নায়নীর মনে হচ্ছে গানটা আকর্ষ শুধু নায়নীর জন্য গাইছে। অন্য কারো জন্য না। শুধু নায়নীর জন্য। নায়নী ঐ একটা ভয়েজ এসএমএস যে কতবার শুনেছে তার কোনো হিসেব নেই। নিজেও ঐ ভয়েজ এসএমএসের সাথে তাল মিলিয়ে গাইলো। রাত অনেক হয়ে যাওয়াতে ঘুমিয়ে পড়লো নাহলে হয়তো সারারাত ঐ গান শুনতো।
আজকে অফিসে সবার মধ্যে একটা টান টান উত্তেজনা কাজ করছে। ব্রাঞ্চ ম্যানেজার বলেছে আজকে একটা স্পেশাল নোটিশ আছে। এইটা শুনে কেও কেও খুশি আবার কেও কেও দুঃখী কারণ অনেকে ভয় করছে কারণ যদি তাঁদের চাকরি চলে যায় আবার অনেকে খুশি এইটা ভেবে
যে হয়তো তাঁদের প্রমোশন হবে, সবাই নানান জল্পনা কল্পনা করছে কানাঘুসা হচ্ছে অনেক কিন্তু কেও কিহজ বলছে না। নায়নীকে আকর্ষ একবার এসএমএস করেছিল কি নোটিস আছে এইটা জানে কিনা? নায়নী বললো ও জানে না।
আকর্ষ ও আর কিছু বলেনি। অবশেষে অনেক জলপনার কল্পনার পর আসলো সেই সময়।
কি বলবে সবিতা?
কি হবে আকর্ষ আর নায়নীর সাথে?
অবশেষে এলো সে সময়, সবাইকে সবিতা ওদের এনাউন্সমেন্ট এরিয়াতে আসতে বলল। দেখতে দেখতে সবাই এনাউন্সমেন্ট এরিয়াতে এসে পড়ল সবাই ভাবছে এখন কি হবে সবিতা কি বলবে
? অনেকের মনে অনেক কিছুই চলছে এরই মাঝে সবিতা তার নিজের কেবিন থেকে বেরিয়ে এনাউন্সমেন্ট এরিয়াতে আসলো এসে বললো,
"আপনারা সবাই জানেন আমাদের এই ব্রাঞ্চ এইটা কয়েকটা মাসের ব্যবধানে খুব সুন্দর গ্রোথ দেখিয়েছে। আপনারা আপনাদের সর্বোচ্চ দিয়ে চেষ্টা করে যাচ্ছেন আমিও দেখেছি আপনারা কতটা কাজ করেন আর কোম্পানির জন্য কতটা ভাবেন। এই সব কাজের চাপে নিজের সুখ দুঃখ সব ভুলেই যেতে হয় এতো কাজের চাপ, তাই আমি হেড ব্রাঞ্চে কথা বলেছি আর আমাদের গ্রোথ ও আমাদের জন্য হেড ব্রাঞ্চ একদিনের ছুটি ও একটি ছোট্ট পার্টির আয়োজন করেছেন। পার্টির থিম হলো ওয়েস্টার্ন ড্রেস আপনারা সবাই নিজেদের পছন্দের ড্রেস পড়ে আসবেন। আর সেই দিন অনেক এনজয় করবেন। তো আসছে রবিবার দেখার হচ্ছে পার্টিতে। "
এইটা কথা বলার সাথে সাথে সবাই হাত তালি দিলো। অনেকের মনে থেকে পাথর নামও গেলো, অনেকে পার্টি পাচ্ছে বলে খুশি। আকর্ষ ও একটু ব্রেক পাবে এইটা ভেবে ও খুশি। নিজেকে এখন সময় দেওয়াটা ভুলেই গেছে। এইটা সারাদিন অফিস থেকে ঘর আর ঘর থেকে আবার অফিস এইভাবেই যাচ্ছে জীবন, এই একঘেয়ামীর জীবনে একটু তো ছন্দপতন হলো এইটা অনেক আকর্ষের কাছে। সবাইকে আরো কিছু কথা বলে সবিতা এনাউন্সমেন্ট শেষ করলো। সবাই নিজেদের ডেস্কে এসে কাজে লেগে গেলো। আকর্ষ জয়দেব আর কৌশিক নিজেদের মধ্যে একবার ডিসকাস করে নিলো কি পড়বে। তখন জয়দেব বলে উঠলো,
"যে যাই বল সবিতা ম্যামকে বিকিনিতে যা লাগবে না, ম্যামের বড়ো বড়ো ঐ সুন্দর দুটো মাই ইসসস আমার ভাবলেই নিজের শরীরের লোম দাঁড়িয়ে যাচ্ছে।"
কৌশিক আর আকর্ষ সেই কথা শুনে বললো,
"চুপ শালা কি বলিস এইসব কেও শুনলে না তোকে বিকিনি পরিয়ে অফিস থেকে বের করে দিবে ঐ সবিতা ম্যাম তখন আর কিছু বলতে পারবি না।"
"আর রাখতো আমার চাকরি গেলে যাক যদি ঐ অপ্সরার সান্নিধ্য একবার পাই না তাহলে চাকরি কেন এইটা দুনিয়া ছেড়ে দিবো আমি।"
এইটা কথা শুনে কৌশিক আকর্ষকে বললো,
"বাদ দে ভাই এ পিড়েছে সবিতা ম্যামের মাইরার পেছনে এ মনে হয় স্বপ্নেও ম্যামের মাইয়ের কথা ভাবে। আর না জানি কি কি করে ও সবিতা ম্যামকে ভেবে সেটা ও ভালো জানে আমরা আমাদের কাজে যাই ভাই।"
আকর্ষ বললো,
"হুমম। আর জয়দেব কাজ কর নায়নী ম্যাম যদি দেখে না কাজ বাদ দিয়ে আড্ডা মারছি। তাহলে আমাদের পশ্চাতদেশের মেরে দিবে। তাই ভাই কাজে মন দে। পড়ে এইসব নিয়ে আলোচনা করা যাবে।"
এইটা কথা বলেই আকর্ষ কাজে মন দিলো আর আকর্ষের সাথে সাথে ওরাও কাজ করতে শুরু করলো। কাজ করছে এমন সময় ওদের অফিসের পিয়ন এসে বললো,
"আকর্ষ স্যার আপনাকে সবিতা ম্যাম যেতে বলেছে। "
এই কথা শুনে বড্ডো অবাক হলো আকর্ষ। এখন আকর্ষকে কেন ডাকলো, এর উত্তর আকর্ষের কাছে নেই। আকর্ষ বললো,
"ঠিক আছে আমি আসছি।"
এইটা বলে আকর্ষ নিজের কাজটা গুছিয়ে সবিতার সাথে দেখা করতে চলে গেলো। আকর্ষ গিয়ে দেখলো সবিতা একটা ফাইল ঘাঁটছে তাই বললো আকর্ষ বললো,
"মে আই কাম ইন ম্যাম?"
সবিতা ফাইল থেকে মাথা উঁচু করে দেখলো আর কেও না আকর্ষ তাই বললো,
"প্লিজ কাম ইন।"
আকর্ষ সবিতার সামনে বসলো। আকর্ষ বসার পর সবিতা নিজের ফাইলটা রেখে বললো,
"কেমন আছেন মিস্টার আকর্ষ?"
"ভালো ম্যাম। আপনি?"
"আমিও। "
"ম্যাম আপনি আমাকে কেনো ডেকেছেন?"
"আপনার কি অফিসের পড়ে কোনো প্ল্যান আছে?"
আকর্ষ এইটা কথা শুনে অনেক অবাক হলো আর বললো,
"নাহ ম্যাম কেন?"
"তাহলে আপনি আমার সাথে আজকের ডিনারটা করুন এতে কি কোনো সমস্যা আছে।।"
এই কথা শুনে আকর্ষ পুরো আকাশ থেকে পড়লো, কি বলবে আকর্ষ ভেবে পেলো না আর মুখের ওপর না করা অনেক খারাপ দেখা যায় আর কিছু হোক বা না হোক সবিতা আকর্ষের বস তাই আকর্ষ না করলো না। একটু মুচকি হেসে বললো,
"নাহ ম্যাম কোনো সমস্যা নেই। আমি যাবো।"
এই কথা শুনে সবিতার মুখে উজ্জ্বল হয়ে গেলো। ঠিক আছে আমি আপনাকে জানিয়ে দিবো কোথায় আসতে হবে।
"ঠিক আছে ম্যাম।"
এরপর সবিতা আর আকর্ষ কিছু কাজের কথা বললো। কথা বলা শেষ হলে আকর্ষ সবিতার কেবিন থেকে বেরিয়ে আসলো। এই ডিনারে যাওয়ার ব্যাপারটা কি নায়নীকে বলবে নাকি না সেটা ভাবছে? আকর্ষ মনে মনে ভাবলো এখন না পড়ে বলবে।
দেখতে দেখতে অফিস টাইম শেষ হয়ে গেল। সবাই বেরিয়ে পড়েছে। নায়নী বের হওয়ার একটু পরেই আকর্ষ বের হলো। নায়নীকে প্রত্যেকদিন নিচে এগিয়ে দিতে আশে বলতে গেলে নায়নী বের হওয়ার ১ কি ২ মিনিট পরেই আকর্ষ বের হয় অফিস থেকে। আকর্ষ নায়নী অফিসে খুব ফর্মাল বেহাভ করে যেনো ওদের সম্পর্কে কোনো গুজব অফিসে না ছড়িয়ে পড়ে এই জন্য। আকর্ষ নায়নীর সাথেই নিচে আসলো। নায়নী যতক্ষন না ট্যাক্সি না নিলো ততক্ষন আকর্ষ গেটের সামনেই দাঁড়িয়ে রইলো। নায়নী ট্যাক্সিতে উঠার পর আকর্ষের দিকে তাকিয়ে একটা মুচকি হাসি দিলো। ঐ হাসি দেখার পর আকর্ষের সারাদিনের ক্লান্তি এক নিমিষে দূর হয়ে গেলো। মানুষের হাসিও কি এতো সুন্দর হতে পারে আমার জানা ছিলো না।
নায়নী যাওয়ার পর আকর্ষ নিজের বাইক নিয়ে রেস্টুরেন্টের জন্য রওনা হলো, সবিতা ম্যাম আকর্ষকে ডিনারের জন্য ইনভাইট করেছে এইটা নায়নীকে এখনও বলেনি এইটা নিয়ে ওর মনের মধ্যে একটু হলেও গিল্টি ফীল হচ্ছে। আকর্ষ প্রথমে ভেবেছিলো না করে দিবে কিন্তু না নিজের বসকে এইরকম মুখের ওপর না করা ভালো দেখায় না তাই আর না করেনি। আকর্ষ অফিসে থাকতেই সবিতা রেস্টুরেন্ট এর এড্রেস এসএমএস করে দিয়েছে। আর সাথে এইটাও বলেছে আকর্ষ যেনো আগে যায় ওর আসতে একটু লেট্ হবে। আকর্ষও তাই একটু ধীরে ধীরে যাচ্ছে কোনো তাড়াহুড়ো নেই। রেস্টুরেন্টটা অনেক হাই ফাই সবার এইখানে খাওয়ার মতো অবস্থা থাকে না অনেকে চাইলেও এইখানে এসে খেতে পারে না। আকর্ষ ভেতরে ঢোকার পর একজন ওয়েটার আকর্ষের কাছে এসে বললো,
"ওয়েলকাম স্যার।"
"আপনার কি কোনো টেবিল বুক করা আছে?"
আকর্ষকে সবিতা আগেই বলে রেখেছে ও নিজের নামে টেবিল বুক করেছে। তাই আকর্ষ বললো,
"হ্যা। মিষ্টি সবিতা নামে।"
ওয়েটারটা নিজের হাতে থাকা কাগজে একটু দেখলো, আর বললো,
"জ্বী পেয়েছি আপনি আমার সাথে আসুন।"
এই কথা বলে ওয়েটার হাঁটতে লাগলো আর তার পাশে পাশে আকর্ষও হাঁটতে লাগলো। ওয়েটার একটা টেবিলের পাশে এসেছে বললো,
"স্যার এইটা আপনাদের টেবিল। "
আকর্ষ দেখলো রেস্টুরেন্টের একেবারে কর্নারের টেবিল। আকর্ষের টেবিলে বসে কলকাতার সব দেখার যাচ্ছে রাতের কলকাতা কতটা সুন্দর সেটা না দেখলেই বলা কষ্টের। আকর্ষ টেবিল পেয়ে বসে পড়লো, আকর্ষ বসার পর ওয়েটার বললো,
"স্যার আপনার জন্য কিছু আনবো।"
আকর্ষ বললো,
"নো থাঙ্কস এখন না একটু পড়ে।"
"ঠিক আছে স্যার।" এইটা বলে ওয়েটারটা চলে গেলো। আকর্ষ ওর মাকে ফোন করে আগেই বলে দিয়েছে। যেনো উনি খেয়ে নেন আকর্ষ আজকে বাইরে ডিনার করবে।
আকর্ষ টেবিলে বসে বসে নিজের ফোন ঘটেছিলো এমন সময় দেখতে পেলো গেট দিয়ে সবিতা ম্যাম আসছেন। আজকে সবিতা ম্যামকে চেনা যাচ্ছে না আজকে এ কাকে দেখছে আকর্ষ একি সবিতা না অন্য কেও। আকর্ষ দেখলো সাদা ট্রান্সপ্যারেন্ট শাড়ি কালো কালারের পার দেওয়া। ভেতরে কালো কালারের ডিপ নেকলাইনের ব্লাউজ পড়েছে। শাড়িটা পড়েছে নাভির থেকে ২ ৩ ইঞ্চি নিচে। ছুঁরো থেকে বুড়ো যে সবাই তাকিয়ে দেখছে আর দেখবেই বা না কেন সবিতার মাইয়ের অনেক টুকুই দেখার যাচ্ছে। ব্লাউজটা কোনো রকমে ঢেকে রেখেছে মাইয়ের অংশটুকু। এইসব ভাবছিলো আর এরই মাঝে সবিতা এসেছে উপস্থিত হলো আর বললো,
"সরি সরি লেট্ হয়ে গেলো।"
"আরে না না লেট্ হয়নি। "
"কখন এসেছেন আপনি?"
"এইতো মাত্র কিছুক্ষন হয়। এসেছি।"
"যাক বাবা এইটু নিজেকে গুছাতে গিয়ে সময় লেগে গেলো।"
"আপনার সময় নেওয়াটা সার্থক হয়েছে।"
"তাই বুঝি? তা কেন শুনি একটু?"
"সবাই আপনাকে যেভাবে দেখছে তাতে বুঝা যাচ্ছে আপনি আজকে অনেকের রাতের ঘুম হারাম হয়ে যাবে। "
এই কথা শুনে সবিতার মুখে একটু লজ্জার ছাপ দেখা গেলো, সবিতা বললো,
"তা আপনার ঘুম হারাম হবে না "
এই কথা শুনে আকর্ষ কি উত্তর দিবে ভেবে পেলো না, ও কথাটা যতটা হেসে উড়িয়ে দেওয়া যায় সেই ভাবেই বললো,
"আমার ঘুম হলো আমার বউয়ের মতো আমি যতই চেষ্টা করি না ঘুমানোর এই ঘুম আমার কাছে আসবেই।"
এই কথা শুনে সবিতা জোরে হেসে দিলো, হাসিটা এতো জোরে ছিলো অন্য টেবিলের সবাই সবিতার দিকে বড়ো বড়ো করে তাকিয়ে রইলো,
তখন আকর্ষ বললো,
"আস্তে হাসুন মানুষ কি বলবে।"
সবিতা দেখলো তাইতো তাই মুখে হাত দিয়ে হাসতে লাগলো সবিতা।
সবিতার হাসি দেখে বলতেই হবে সবিতা আসলেই সুন্দরী আর ওর হাসিও সুন্দর কিন্তু এতে ওর কিছুই যায় আশে না কারণ ওর মন যে অন্যের কাছে।
সবিতা জিজ্ঞেস করলো,
"কি ভাবছেন?"
"নাহ কিছু না।"
"কিছু অর্ডার করেননি?"
"নাহ।"
"আচ্ছা ঠিক আছে। অর্ডার করি নাকি?"
"হ্যা অবশ্যই।"
এই বলে ওয়েটারকে ডাক দিলো আকর্ষ। আকর্ষ সবিতাকে বললো,
"কি খাবেন?"
"আপনি যা খাবেন তাই খাবো।"
"তাই বললে কি হয় আপনারও তো পছন্দ থাকতে পারে আপনি অর্ডার করুন।"
সবিতা ঠিক আছে বলে নিজের জন্য খাবার অর্ডার করলো। আর আকর্ষ ও করলো। ওয়েটার বললো একটু পরেই খাবার আসবে একটু অপেক্ষা করতে বললো ওদের।
আকর্ষ তখন বললো,
"আপনার আসতে কোনো সমস্যা হয়নি তো?"
"নাহ এমনি কোনো সমস্যা হয়নি। আমাকে কি তুমি বলে বলা যায় না?"
কথাটা শুনে আকর্ষ আকাশ থেকে পড়লো বলে কি এই মেয়ে। মাথা ঠিক আছে তো নাকি মাথাটা এই মেয়ের একেবারে গেছে। আকর্ষ এই কথা শুনে একটু ইতস্তত বোধ করতে শুরু করলো। কি বলবে এখন। আকর্ষের সামনে বসা সবিতা বুঝতে পারলো আকর্ষ একটু ইতস্তত বোধ করছে তাই বললো,
"আরে এতে এতো সমস্যার কি আছে?"
"নাহ মানে আপনি আমার বস আবার বড়ো তাই?"
"তাই কি? বসকে কি কেও তুমি করে বলে না আর আমি তোমার থেকে কতো বছরের বড়ো গুনে গুনে ৩ বছরের বড়ো।এইটুকু বড়ো বড়ো হলো নাকি?"
"নাহ তাও বড়ো তো?"
"আরে দেখো প্রিয়াঙ্কা আর নিক জোনাস এর বয়সের মধ্যে তফাৎ ১০ বছরের বড়ো তাহলে?"
"নাহ অফিসে যদি কেও জানে তাহলে অনেক গুজব ছড়াবে।"
"আরে না তুমি আর আমি যখন থাকবো তখন তুমি করে বলবে আর অন্য সময় আপনি করে বলবে ওকে?"
"ওকে।"
সবিতা হাসছে,
"হাসছো কেন?"
"হাসছি কারণ কেউ নিজের থেকে বয়সে একথা বড়কে তুমি বলতে ভয় পায়।"
আকর্ষ তখন বলে উঠলো,
"ভয় পাবো না আমার বস তুমি যদি কিছু উল্টাপাল্টা হয় তাহলেই তো আমার চাকরিটা গেলো।"
এই কথা শুনে সবিতা হাসতে লাগলো আর বললো,
"নাহ নাহ আমি এমন করবো না আমি অন্যসবার মতো না।"
এই কথা শুনে আকর্ষ হাফ ছেড়ে বাঁচলো, আর বললো,
"যাক বাবা বাঁচা গেলো।"
আকর্ষের কথা শুনে সবিতা আবার হেসে দিলো, সবিতা আকর্ষকে জিজ্ঞেস করলো,
"তোমার গার্লফ্রেন্ড আবার রাগ করবে না তো তুমি তাকে সময় দেওয়া বাদ দিয়ে আমার সাথে এসেছো।"
এই কথা আকর্ষ একটু হেসে দিলো আর বললো,
"আমার ঐসব গার্লফ্রেন্ড নেই।"
"তাহলে কি কেও নেই?"
এই কথা বলার সময় সবিতার মুখ উজ্জ্বল হয়ে উঠলো, আকর্ষ এটা ভালোই লক্ষ্য করেছে।
আকর্ষ বললো,
"একেবারে নেই এটা বলবো না একজন আছে বলতে পারো"
"কি গার্লফ্রেন্ড?"
"না না এখনকার সময় একটা কথা খুব শোনা যায় ক্রাশ। বলতে পারো আমারো একটা ক্রাশ আছে।"
এই কথা শুনে সবিতা অনেক অবাক হলো আর বললো,
"ক্রাশ বাহ্ ইন্টারেষ্টিং।"
"ইন্টারেষ্টিং না ছাই।"
"কেন কেন?"
"ক্রাশ পর্যন্ত ঠিক ছিলো। কিন্তু আমি আমার ক্রাশের প্রেমে হাবুডুবু খাচ্ছি তার ভালোবাসা পাওয়ার জন্য তোরপাচ্ছি।"
"আহারে কি বলো? তাহলে ক্রাশ থাকার এক্সপেরিয়েন্স কেমন শুনি?"
"ক্রাশ থাকার এক্সপেরিয়েন্স আর কি বলবো কিছু মানুষ মনে করে ক্রাশ থাকা একটা মিষ্টি অনুভূতি কিন্তু সত্যি বলতে ক্রাশ থাকা অনেক তিতা একটা অনুভূতি আর আপনি যদি সেই ক্রাশকে আপনার সব দিয়ে ভালোবাসেন তাহলে আপনি গেছেন।"
"এতোই যখন ভালোবাসো তাহলে বলে দাও তোমার ক্রাশকে?"
"বললে বলা যায় কিন্তু বন্ধুত্বটা নষ্ট হবার ভয়ে বলছি না। "
"কেমন নষ্ট?"
"ধরুন আমার ক্রাশের বয়ফ্রেন্ড আছে আপনার ক্রাশ আপনাকে বন্ধু ভাবে আপনাকে সব বলে আপনার সামনে যখন ঐ বয়ফ্রেন্ড এর কথা বলবে তখন আপনার সারাদিন শরীর জ্বলবে। কিন্তু কিছু করার নেই শুনতেই হবে। কারণ আপনি চান উনি খুশি থাকুক আমি চাই আমার ক্রাশ খুশি থাকুক আমার সাথে থাকুক কিংবা অন্যের সাথে থাকুক সেটা আমার দেখার বিষয় না। সে খুশি তো আমি খুশি। তার সান্নিধ্যে আমি খুশি।
কথায় আছে না
"তুমি যাকে ভালোবাসো তাকে যেতে দাও
সে যদি তোমার হয়ে থাকে সে তোমার কাছে ফিরে আসবে।"
আমিও তাই মেনে নিয়েছি। ওর হাসি কান্নাতে ওর পাশে থাকতে পারলেই হলো। ওকে যে পেতে হবে এরতো কোনো মানে নেই। "
আকর্ষের সব কথা সবিতা মন দিয়ে শুনলো, আকর্ষের সব কথার সাথে সবিতার চিন্তার মিল আছে শুধু একটি কথার সাথে না তাই সবিতা জিজ্ঞেস করলো,
"তার সাথে যদি বন্ধু হয়ে থাকো তাহলে কি বেশি কষ্ট পাবে না তাকে না পাওয়ার চেয়ে।"
"সত্যি বলতে এইটা সবার ক্ষেত্রেই আলাদা আলাদা। আমার মনে হয় তার সাথে কথা না বলে তাকে না দেখে তার থেকে নিজেকে আলাদা করে রাখার চেয়ে একটু কষ্ট সহ্য করে তার পাশে থাকা তার ভালো খারাপ ২ সময়েই পাশে থাকা ভালো হয়তো একটু কষ্ট পাবেন কিন্তু এর বদলে আপনি যা সুখ পাবেন তা ঐ কষ্টের সামনে নগন্য।"
এই কথার উত্তরে সবিতা কিছুই বলতে পারলো না আসলেই তো এইরকম হতে পারে। এইভাবে কখনো ভাবেনি সবিতা ছেলেটা বয়সে ওর থেকে ছোট হলেও অন্য সব দিক দিয়ে অনেক ম্যাচিউর যা সবিতার অনেক ভালো লাগলো। সবিতা বলে উঠলো,
"তাহলে আমার সাথে তোমার ক্রাশের পরিচয় করিয়ে দিচ্ছ কবে?"
"সময় হলে করাবো। "
"আচ্ছা তুমি তো তোমায় ক্রাশকে ভালোবাসো এখন এইটা একতরফা ভালোবাসা এখন যদি তোমার জীবকনে অন্য কেও ঢুকতে চায় বা তোমার প্রেমে পড়ে অন্য কেও তখন কি হবে?"
"সত্যি বলতে জীবন থেমে থাকে না আমি তার জীবনে জায়গা না পেলে আমার জীবন থেমে থাকবে না নতুন কেও আসতেই পারে এটা নতুন কিছু না। যদি সব ঠিক থাকে আমি তাকে গ্রহণ করে নিবো। সত্যি বলতে,
তুমি তাকেই ''ভালোবাসো'' যে তোমাকে ''ভালোবাসে'' তাকে নয় যাকে তুমি ''ভালোবাসো'' কারন, যাকে তুমি ''ভালোবাসবে সে তোমাই ছেড়ে দিতে একবারও ভাববে না, আর যে তোমাই ''ভালোবাসবে সে হাজার কষ্ট পেলেও তোমাই কখনো ছাড়বে না।
সবিতা আর কিছু বললো না।
এর মাঝে খাবার এসে গেলো। সবিতা আর আকর্ষ ২ জনে খেতে শুরু করে দিলো। ২ জন খাওয়ার সময় নানান বিষয় নিয়ে কথা বললো। সবিতা এতো কথা কারো সাথে বলেছে কিনা এই কয়েকটা বছরে সেটা ওর ঠিক মনে পড়ছে না। আকর্ষের সাথে কথা বলতে যেনো ওর খুব ভালো লাগছে। যাই হোক ওরা খেলো। খাওয়া শেষ করে ওরা বিল মিটিয়ে বের হয় রেস্টুরেন্ট থেকে। সবিতা জানে আকর্ষ বাইক নিয়ে এসেছে তাই বললো,
"আচ্ছা আমরা কি কোথাও বসতে পারি?"
আকর্ষ এই কথা শুনে কিছুক্ষন ভাবলো আর বললো,
"আপনার সমস্যা হবে না তো।"
" নাহ নাহ আমার কোনো সমস্যা হবে না।"
"ঠিক আছে চলুন তাহলে।"
"কোথায় যাচ্ছি আমরা?"
আকর্ষ সবিতাকে বাইকে উঠতে বললো,
"আরে উঠুন আমি আপনাকে কোনো খারাপ জায়গায় নিয়ে যাবো না।"
এই কথা শুনে সবিতা হেসে দিলো আর বললো তোমার সাথে আমি নরকে যেতেও প্রস্তুত আছি তুমি বললে।
আকর্ষ বললো,
"থাক নরকে যেতে হবে না আমি যেখানে নিচ্ছি সেখানে চলুন।"
সবিতা আকর্ষের পিছনে বসলো। আর এতটা সেটে বসলো সবিতার স্তন পুরো আকর্ষের পিঠে লাগছে। আকর্ষ সেটা ভালো ভাবে ফীল করছে। আকর্ষ কিছু বললো না আকর্ষ বাইক নিয়ে চলতে শুরু করলো। আকর্ষ একটু স্পিড বাড়িয়ে দিলো আকর্ষ যত স্পিড বাড়াচ্ছে সবিতা আকর্ষের কোমড় আরো জড়িয়ে ধরছে আর নিজেকে পুরো লেপ্টে ফেলেছে আকর্ষের সাথে। আকর্ষ কিছু বললো না।
আকর্ষ সবিতাকে নিয়ে আসলো রবীন্দ্র সরোবরে। সময় প্রায় শেষের দিকে আস্তে আস্তে মানুষ বের হয়ে যাচ্ছে আর ওরা প্রবেশ করলো বাইক পার্ক করে। গিয়ে ওরা সরোবর দেখা যায় এমন একটা ব্রেঞ্চে বসলো। সবিতা বললো,
"আমি ভাবতেই পারিনি তুমি আমাকে এইখানে নিয়ে আসবে। থ্যাংক ইউ সো মাচ আমাকে এইখানে আনার জন্য।"
"আরে না না এইটা আমার সৌভাগ্য।"
"তুমি তাহলে বিয়ে করছো কবে শুনি?"
"বিয়ে করতে অনেক দেরি এখন ঐ সবার কোনো প্ল্যান নেই।"
"আচ্ছা কেন?"
"কারণ আমি এরেঞ্জ ম্যারেজ করতে চাই না। আর আমার এখনও খেলাধুলা করার বয়স এতো তাড়াতাড়ি বিয়ে করলে সমস্যা।"
এই বলে হেসে দিলো আকর্ষ। সবিতা অল্প আলোতেও আকর্ষের সুন্দর হাসি দেখলো।
সবিতা বললো,
"আমার মনে হয় তোমার বউ যে হবে ও অনেক লাকি হবে?"
এই কথা শুনে আকর্ষ আবার হেসে দিলো বললো,
"না না আমাকে পেয়ে উনি লাকি হবে কিনা বলতে পারছি না কিন্তু আমি যদি তাকে পাই তাহলে যে ভাগ্যবান সেটা বলার অপেক্ষা রাখে না। "
এই কথা শুনে সবিতার ভালো লাগলো কেও তো আছে যে নিজেকে নিয়ে না ভেবে তার জীবনসঙ্গীনি কে নিয়ে ভাবে। খুব ভালো লাগলো শুনে। সবিতা বললো,
"তাহলে তোমার বউ তো তোমার থেকে অনেক আদর পাবে।"
"অনেক আদর পাবে কিনা জানি না তবে তাকে আমি অনেক ভালোবাসবো নানান ভাবে ভালোবাসবো।"
"আচ্ছা তাই তা কিভাবে শুনি?"
" ধরো সারাদিন অফিসে থেকে এসে যখন বউ দরজা খুলবে তখন বৌকে সাথে সাথে জড়িয়ে ধরে বলবো ভালোবাসি। "
"তাই বুঝি তা তুমি তো দেখছি খুব প্রেমিক পুরুষ।আর কি করবে?"
"কোনো এক জোৎস্না রাতে আমি নীল পাঞ্জাবী আর ও নীল শাড়ি পড়ে নদীর পায়ে খালি পায়ে হাটবো।"
"ইসস কি সুন্দর আর শোনাও ?"
"আবার মাঝে মাঝে যখন রাত হয়ে যাবে তখন ওকে বলবো চলো গিয়ে ফুচকা খেয়ে আসি।"
"তুমি এইগুলো করলে তোমার বউয়ের খুশির ঠিকানা থাকবে না। আর কি কিছু ইচ্ছা আছে?"
"হ্যা আর ছোট ছোট কিছু ইচ্ছা আছে?"
"কি ইচ্ছা শুনি?"
" যখন ও কাজ করবে তখন ওকে পিছন থেকে জড়িয়ে ধরে রাখবো। আর ওর ঘাম গুলো মুছে দিবো। যখন ও রাগ করবে তখন অফিসে থেকে আসার পর ওর জন্য অনেক গুলো চকলেট আর আইসক্রিম কিনে দিবো। আর যখন ও ওর পিরিয়ড এর ব্যাথা নিয়ে কষ্ট করবে। তখন আমি ঐদিন ওর পাশে থাকবো। কারণ এর আগে বাবা ছিলো কিন্তু তখন আমি ছাড়া মানুষটার কেও নেই তাই আমাকে তার খেয়াল রাখতে হবে। এই হলো ইচ্ছা। আরো কিছু ইচ্ছা আছে সেগুলো মনে পড়ছে না।"
সবিতা মন্ত্রমুগ্ধয়ের মতো আকর্ষের কথা শুনলো। আকর্ষ যে প্রেমিক পুরুষ আকর্ষ যাকে ভালোবাসবে তাকে সব দিয়ে ভালোবাসবে সেটা বুঝতে বাকি রইলো না। সবিতা বললো,
"অফিসের অনেক মেয়েই কিন্তু তোমার প্রতি ক্রাশ খেয়েছে এখন যদি এই কথা গুলো শুনতো তাহলে তো পুরো ভালোবেসে ফেলতো।"
আকর্ষ এটা শুনে কিছু বললো না হাসলো শুধু। এমন সময় হোয়াটস্যাপে একটা এসএমএস আসলো, আকর্ষ ফোনটা খুলে দেখে আর কেও না নায়নী। আকর্ষ তখন মনে মনে বললো,
"এই রে খেয়েছে মহারানীকে রাত্রে কল দিবো বলেছিলাম। এখন যদি কল না দেই তাহলে কথা বলবে না। তাই জাস্ট ছোট্ট একটা এসএমএস দিলো আমি বাইরে ঘরে গিয়ে তোমাকে ফোন দিচ্ছি। এই বলে ফোনটা নিজের পকেটে রেখে দিলো।"
সবিতা এটা দেখলো আর জিজ্ঞেস করলো,
"কোনো সমস্যা আকর্ষ?"
"না না কোনো সমস্যা নেই।"
" কে এসএমএস করেছে তোমার ক্রাশ? "
"উহু ক্রাশ তো সবার জন্য আমার জন্য সে অন্য কিছু?"
"অন্য কিছু বলতে কি?"
"আমার কাছে উনি আমার নেশা। আমি তাকে নেশা বলেই ডাকি মাঝে মাঝে। আমি তার নাম দিয়েছি নেশা।"
"নেশা এইটা আবার কেমন নাম?"
"হুমম ভালো নাম তো।"
"কিভাবে?"
"এই নেশাকে ছাড়া আমার চলে না তাকে না দেখতে পারলে নিজেকে পাগল পাগল লাগে মনে হয়। নিজেকে আটকাতে পারি না। তাকে দেখলেই শান্তি আর যখন সে হাসে তখন আমার মনে এক শীতল বাতাস বয়ে যায়। যা আমার মনকে ঠান্ডা করে দেয়। ধরুন অনেক রাগ করে আছি কেও ফোন দিলে তুলকালাম হয়ে যাবে সেখানে যদি ও ফোন দেয় তাহলেই আমার রাগ সব পানি পানি হয়ে যায়।"
এইটা সবিতা বললো,
"বাবা রে তোমার নেশা তো অনেক ভয়ঙ্কর ।"
"হুমম বলতে পারেন আমি তার নেশায় আসক্ত। আমি তার প্রেমে নেশাক্ত।"
আকর্ষ দেখলো হাত ঘড়িতে রাত অনেক হয়েছে। তাই সবিতাকে বললো,
"চলুন আপনাকে নামিয়ে দিয়ে আসি।"
এই শুনে সবিতা বললো,
" আরে না না আমাকে নামিয়ে দেওয়া লাগবে না তুমি চলে যাও আমি ট্যাক্সি করে চলে যাবো।"
"আহঃ কি সুন্দর কথা। এতো রাতে আপনাকে আমি একা ছাড়বো আমাকে কি পাগল কুকুর কামড়িয়েছে নাকি বেশি কথা না বলে চুপ চাপ আমার সাথে চলুন।"
সবিতা আর কিছু বলতে পারলো না। আকর্ষ আর সবিতা ২ জনে এক সাথে রবীন্দ্র সরোবর থেকে বের হলো। আকর্ষ বাইক স্টার্ট করলো আর সবিতাকে বসতে বললো,
সবিতা আকর্ষের পিছনে বসলো আর আকর্ষের পিঠে একেবারে মাথা এলিয়ে দিলো। এই ভাবে দেখলে যে কেও বলবে এরা হলো প্রেমিক প্রেমিকা।
আকর্ষ কিছু বলে নি কি বলবে। আকর্ষ তাই ঐভাবেই বাইক চালিয়ে সবিতার ঘরে সবিতাকে নামিয়ে দিয়ে আসলো, যাওয়ার সময় সবিতা বলেছিলো,
"আকর্ষ তোমাকে অনেক ধণ্যবাদ আমাকে এতো সুন্দর একটা রাত উপহার দেওয়ার জন্য।"
আকর্ষ বলেছিলো,
" মাই প্লেজার ম্যাম। "
সবিতাকে নামিয়ে দিয়েই আকর্ষ বাইক নিয়ে নিজের ঘরের জন্য রওনা হলো। আর খুব তাড়াতাড়ি এসে পড়লো। আকর্ষের যে আসতেই হবে কেও একজন তার জন্য অপেক্ষা করছে।
চলবে
অনেকদিন অপেক্ষা করতে হলো তার জন্য ক্ষমা প্রার্থী।
আর লাইক রিভিউ দিয়ে জানাবেন কেমন লাগলো
এই গল্প যদি ভালো লেগে থাকে অবশ্যই কমেন্ট করে জানাবেন। যদি কোনো মতামত থাকে জানাতে ভুলবেন না। আমাকে ইমেইল করতে পারেন lf859782; অথবা টেলিগ্রাম এ এসএমএস দিতে পারেন @Paradox787898 এই নামে। আপনাদের এসএমএস এ আমি উৎসাহ পাই। তাই আমাকে বেশি বেশি করে উৎসাহ দিবেন এই আশা করি।
"ব্রাঞ্চ ম্যানেজার তো তোমাকে তো খুব ফেভার করছে দেখি?"
এই কথা শুনে আকর্ষ একটু অবাক হলো, আর বললো,
"আমাকে ফেভার করছে কোথায় আমি তো সেরকম কিছু দেখছি না।"
"করছে করছে। আমি খেয়াল করেছি।"
" ফেভার করলে তো ভালোই তাই না? "
"ভালো কিন্তু উনি তোমাকে একটু বেশি টাচ করে।"
"বাহ্ ম্যাম কি সুন্দর আমিই তো আপনাকে বললাম যে উনি আমাকে বেশি টাচ করে আর আপনি আমাকে সে কথা কেন বলছেন?"
"কারণ আমি দেখেছি। "
"ওহ আচ্ছা।"
"শোনো উনার কাছে থেকে দূরে থেকো যেভাবে মৌমাছির মতো তোমার আশে পাশে ঘুরঘুর করে মনে হয় তোমার শরীরের ভেতর যে মধু আছে সেগুলো শুষে নিবে।"
এই কথা বলে নায়নী হাসতে লাগলো। আকর্ষ বুঝলো নায়নী কি বুঝাতে চাইছে। তাই বললো,
"সবিতা ম্যামের মতো সুন্দরী যদি আমার এইটা অধমের মধু খেতে চায় তাহলে মধু না শুধু মধুর পুরো মৌচাক ধরে খাইয়ে দিবো।"
" আহঃ কি কথা। তো খাওয়াও না তোমার মৌচাক। কে না করেছে। "
"কেও না করেনি। কিন্তু আমি খাওয়াতে চাই আরেকজনকে যে খেতে চায় না। আর যে খেতে চায় তাকে আমি খাওয়াতে চাই না কি একটা সমস্যা।"
নায়নী মনে মনে ভাবলো, এইটা পিচ্চি ছেলেটা তার কথাই বলছে। তাই কথা ঘুরানোর জন্য,
"হয়েছে কে কি খায় এখন সেটা সময় বলবে। এখন ঘুমাও অনেক রাত হলো।"
"কি করে ঘুমাই একা যে আর ঘুম আশে না। "
"তাই তাহলে মাসিমাকে বলি একটা বিয়ে দিয়ে দিতে কি বলো।"
"এতো তাড়াতাড়ি বিয়ে করবো না।"
"এহ বাবা এখন বললে একা ঘুমাতে ভালো লাগে না বিয়ে করলেই তো আর একা ঘুমাতে হবে না।"
"বিয়ে তো করতেই চাই কিন্তু আমি যাকে বিয়ে করতে চাই সেও যে আমাকে বিয়ে করতে চায় কিনা সেটাই তো জানি না।"
"ওহ বাবা তাই তা কে আমাদের এইটা হ্যান্ডসামের মনের দখল নিয়েছে শুনি।"
"আছে একজন।"
"বাহ্ তাহলে নামটা বলো না শুনি।"
"নাহ এখন না সময় হলে এমনি জানতে পারবে আমি জানাবো।"
"ঠিক আছে অপেক্ষায় রইলাম তোমার মনের রানীকে দেখার জন্য।"
"আচ্ছা।"
"ঠিক আছে এখন রাখছি।"
"এইটা শোনো আমার একটা কথা রাখবে?"
"কি কথা শুনি?"
"নাহ আগে বলো রাখবে।"
"আচ্ছা রাখবো বলো,"
"আমাকে একটা গান গেয়ে শোনাও না।"
"কি না না একদম না আমি ঐ গানটান গাইতে পারি না।"
"মিথ্যে কেন বলছো আমি জানি তুমি গান গাও।"
"কিভাবে জানলে শুনি?"
"আমি তোমার ফেসবুকে দেখেছি তোমার ফ্রেন্ডরা তোমাকে ট্যাগ করে ভিডিও আপলোড করেছে সেখানে দেখেছি।"
আকর্ষ কি বলবে এখন ভেবে পেলো না, শুধু বললো
"এখনি শুনতে হবে।"
"হুমম।"
নায়নী কিছু চায়নি ওর কাছে এই পর্যন্ত আজকে চেয়েছে তাই ও না করলো না। আকর্ষ জিজ্ঞেস করলে,
"এইখানে শুনবে না ভয়েস এসএমএস করে দিবো?"
"ভয়েজ এসএমএস করে দাও।"
আকর্ষ তখন বাই বলে কল কেটে দিলো,
আর গাইতে শুরু করলো,
তোমায় হৃদ মাঝারে রাখবো, ছেড়ে দেবো না
তোমায় হৃদ মাঝারে রাখবো, ছেড়ে দেবো না
ওরে ছেড়ে দিলে সোনার গৌর আর পাবে না
ক্ষ্যাপা ছেড়ে দিলে সোনার গৌর আর পাবে না, না না না
ছেড়ে দেবো না
তোমায় হৃদ মাঝারে রাখবো, ছেড়ে দেবো না
তোমায় হৃদ মাঝারে রাখবো, ছেড়ে দেবো না
হৃদয় মোহনো গোরা, কোন গুনিজনার মনোহরা
হৃদয় মোহনো গোরা, কোন গুনিজনার মনোহরা
ওরে রাধার প্রেমে মাতোয়ারা চাঁদ গৌড়
ওরে রাধার প্রেমে মাতোয়ারা
ধূলায় যাই ভাই গড়াগড়ি
যেতে চাইলে যেতে দেবো না
ওরে যেতে চাইলে যেতে দেবো না, না না না
না না না যেতে দেবো না
তোমায় হৃদ মাঝারে রাখবো, ছেড়ে দেবো না
তোমায় হৃদ মাঝারে রাখবো, ছেড়ে দেবো না
এইটুকু গান নিজের খালি গলায় গেয়ে পাঠিয়ে দিলো। আর সাথে একটা গুড নাইট লিখে আকর্ষ শুয়ে পড়লো। নায়নী ভয়েস এসএমএস পাওয়ার সাথে সাথে সেটা চালু করলো আর নায়নী শুনতে পেলো আকর্ষের গলায় এই গানটা, নায়নী গানটা শুনছে আর নায়নীর মনে হচ্ছে গানটা আকর্ষ শুধু নায়নীর জন্য গাইছে। অন্য কারো জন্য না। শুধু নায়নীর জন্য। নায়নী ঐ একটা ভয়েজ এসএমএস যে কতবার শুনেছে তার কোনো হিসেব নেই। নিজেও ঐ ভয়েজ এসএমএসের সাথে তাল মিলিয়ে গাইলো। রাত অনেক হয়ে যাওয়াতে ঘুমিয়ে পড়লো নাহলে হয়তো সারারাত ঐ গান শুনতো।
আজকে অফিসে সবার মধ্যে একটা টান টান উত্তেজনা কাজ করছে। ব্রাঞ্চ ম্যানেজার বলেছে আজকে একটা স্পেশাল নোটিশ আছে। এইটা শুনে কেও কেও খুশি আবার কেও কেও দুঃখী কারণ অনেকে ভয় করছে কারণ যদি তাঁদের চাকরি চলে যায় আবার অনেকে খুশি এইটা ভেবে
যে হয়তো তাঁদের প্রমোশন হবে, সবাই নানান জল্পনা কল্পনা করছে কানাঘুসা হচ্ছে অনেক কিন্তু কেও কিহজ বলছে না। নায়নীকে আকর্ষ একবার এসএমএস করেছিল কি নোটিস আছে এইটা জানে কিনা? নায়নী বললো ও জানে না।
আকর্ষ ও আর কিছু বলেনি। অবশেষে অনেক জলপনার কল্পনার পর আসলো সেই সময়।
কি বলবে সবিতা?
কি হবে আকর্ষ আর নায়নীর সাথে?
অবশেষে এলো সে সময়, সবাইকে সবিতা ওদের এনাউন্সমেন্ট এরিয়াতে আসতে বলল। দেখতে দেখতে সবাই এনাউন্সমেন্ট এরিয়াতে এসে পড়ল সবাই ভাবছে এখন কি হবে সবিতা কি বলবে
? অনেকের মনে অনেক কিছুই চলছে এরই মাঝে সবিতা তার নিজের কেবিন থেকে বেরিয়ে এনাউন্সমেন্ট এরিয়াতে আসলো এসে বললো,
"আপনারা সবাই জানেন আমাদের এই ব্রাঞ্চ এইটা কয়েকটা মাসের ব্যবধানে খুব সুন্দর গ্রোথ দেখিয়েছে। আপনারা আপনাদের সর্বোচ্চ দিয়ে চেষ্টা করে যাচ্ছেন আমিও দেখেছি আপনারা কতটা কাজ করেন আর কোম্পানির জন্য কতটা ভাবেন। এই সব কাজের চাপে নিজের সুখ দুঃখ সব ভুলেই যেতে হয় এতো কাজের চাপ, তাই আমি হেড ব্রাঞ্চে কথা বলেছি আর আমাদের গ্রোথ ও আমাদের জন্য হেড ব্রাঞ্চ একদিনের ছুটি ও একটি ছোট্ট পার্টির আয়োজন করেছেন। পার্টির থিম হলো ওয়েস্টার্ন ড্রেস আপনারা সবাই নিজেদের পছন্দের ড্রেস পড়ে আসবেন। আর সেই দিন অনেক এনজয় করবেন। তো আসছে রবিবার দেখার হচ্ছে পার্টিতে। "
এইটা কথা বলার সাথে সাথে সবাই হাত তালি দিলো। অনেকের মনে থেকে পাথর নামও গেলো, অনেকে পার্টি পাচ্ছে বলে খুশি। আকর্ষ ও একটু ব্রেক পাবে এইটা ভেবে ও খুশি। নিজেকে এখন সময় দেওয়াটা ভুলেই গেছে। এইটা সারাদিন অফিস থেকে ঘর আর ঘর থেকে আবার অফিস এইভাবেই যাচ্ছে জীবন, এই একঘেয়ামীর জীবনে একটু তো ছন্দপতন হলো এইটা অনেক আকর্ষের কাছে। সবাইকে আরো কিছু কথা বলে সবিতা এনাউন্সমেন্ট শেষ করলো। সবাই নিজেদের ডেস্কে এসে কাজে লেগে গেলো। আকর্ষ জয়দেব আর কৌশিক নিজেদের মধ্যে একবার ডিসকাস করে নিলো কি পড়বে। তখন জয়দেব বলে উঠলো,
"যে যাই বল সবিতা ম্যামকে বিকিনিতে যা লাগবে না, ম্যামের বড়ো বড়ো ঐ সুন্দর দুটো মাই ইসসস আমার ভাবলেই নিজের শরীরের লোম দাঁড়িয়ে যাচ্ছে।"
কৌশিক আর আকর্ষ সেই কথা শুনে বললো,
"চুপ শালা কি বলিস এইসব কেও শুনলে না তোকে বিকিনি পরিয়ে অফিস থেকে বের করে দিবে ঐ সবিতা ম্যাম তখন আর কিছু বলতে পারবি না।"
"আর রাখতো আমার চাকরি গেলে যাক যদি ঐ অপ্সরার সান্নিধ্য একবার পাই না তাহলে চাকরি কেন এইটা দুনিয়া ছেড়ে দিবো আমি।"
এইটা কথা শুনে কৌশিক আকর্ষকে বললো,
"বাদ দে ভাই এ পিড়েছে সবিতা ম্যামের মাইরার পেছনে এ মনে হয় স্বপ্নেও ম্যামের মাইয়ের কথা ভাবে। আর না জানি কি কি করে ও সবিতা ম্যামকে ভেবে সেটা ও ভালো জানে আমরা আমাদের কাজে যাই ভাই।"
আকর্ষ বললো,
"হুমম। আর জয়দেব কাজ কর নায়নী ম্যাম যদি দেখে না কাজ বাদ দিয়ে আড্ডা মারছি। তাহলে আমাদের পশ্চাতদেশের মেরে দিবে। তাই ভাই কাজে মন দে। পড়ে এইসব নিয়ে আলোচনা করা যাবে।"
এইটা কথা বলেই আকর্ষ কাজে মন দিলো আর আকর্ষের সাথে সাথে ওরাও কাজ করতে শুরু করলো। কাজ করছে এমন সময় ওদের অফিসের পিয়ন এসে বললো,
"আকর্ষ স্যার আপনাকে সবিতা ম্যাম যেতে বলেছে। "
এই কথা শুনে বড্ডো অবাক হলো আকর্ষ। এখন আকর্ষকে কেন ডাকলো, এর উত্তর আকর্ষের কাছে নেই। আকর্ষ বললো,
"ঠিক আছে আমি আসছি।"
এইটা বলে আকর্ষ নিজের কাজটা গুছিয়ে সবিতার সাথে দেখা করতে চলে গেলো। আকর্ষ গিয়ে দেখলো সবিতা একটা ফাইল ঘাঁটছে তাই বললো আকর্ষ বললো,
"মে আই কাম ইন ম্যাম?"
সবিতা ফাইল থেকে মাথা উঁচু করে দেখলো আর কেও না আকর্ষ তাই বললো,
"প্লিজ কাম ইন।"
আকর্ষ সবিতার সামনে বসলো। আকর্ষ বসার পর সবিতা নিজের ফাইলটা রেখে বললো,
"কেমন আছেন মিস্টার আকর্ষ?"
"ভালো ম্যাম। আপনি?"
"আমিও। "
"ম্যাম আপনি আমাকে কেনো ডেকেছেন?"
"আপনার কি অফিসের পড়ে কোনো প্ল্যান আছে?"
আকর্ষ এইটা কথা শুনে অনেক অবাক হলো আর বললো,
"নাহ ম্যাম কেন?"
"তাহলে আপনি আমার সাথে আজকের ডিনারটা করুন এতে কি কোনো সমস্যা আছে।।"
এই কথা শুনে আকর্ষ পুরো আকাশ থেকে পড়লো, কি বলবে আকর্ষ ভেবে পেলো না আর মুখের ওপর না করা অনেক খারাপ দেখা যায় আর কিছু হোক বা না হোক সবিতা আকর্ষের বস তাই আকর্ষ না করলো না। একটু মুচকি হেসে বললো,
"নাহ ম্যাম কোনো সমস্যা নেই। আমি যাবো।"
এই কথা শুনে সবিতার মুখে উজ্জ্বল হয়ে গেলো। ঠিক আছে আমি আপনাকে জানিয়ে দিবো কোথায় আসতে হবে।
"ঠিক আছে ম্যাম।"
এরপর সবিতা আর আকর্ষ কিছু কাজের কথা বললো। কথা বলা শেষ হলে আকর্ষ সবিতার কেবিন থেকে বেরিয়ে আসলো। এই ডিনারে যাওয়ার ব্যাপারটা কি নায়নীকে বলবে নাকি না সেটা ভাবছে? আকর্ষ মনে মনে ভাবলো এখন না পড়ে বলবে।
দেখতে দেখতে অফিস টাইম শেষ হয়ে গেল। সবাই বেরিয়ে পড়েছে। নায়নী বের হওয়ার একটু পরেই আকর্ষ বের হলো। নায়নীকে প্রত্যেকদিন নিচে এগিয়ে দিতে আশে বলতে গেলে নায়নী বের হওয়ার ১ কি ২ মিনিট পরেই আকর্ষ বের হয় অফিস থেকে। আকর্ষ নায়নী অফিসে খুব ফর্মাল বেহাভ করে যেনো ওদের সম্পর্কে কোনো গুজব অফিসে না ছড়িয়ে পড়ে এই জন্য। আকর্ষ নায়নীর সাথেই নিচে আসলো। নায়নী যতক্ষন না ট্যাক্সি না নিলো ততক্ষন আকর্ষ গেটের সামনেই দাঁড়িয়ে রইলো। নায়নী ট্যাক্সিতে উঠার পর আকর্ষের দিকে তাকিয়ে একটা মুচকি হাসি দিলো। ঐ হাসি দেখার পর আকর্ষের সারাদিনের ক্লান্তি এক নিমিষে দূর হয়ে গেলো। মানুষের হাসিও কি এতো সুন্দর হতে পারে আমার জানা ছিলো না।
নায়নী যাওয়ার পর আকর্ষ নিজের বাইক নিয়ে রেস্টুরেন্টের জন্য রওনা হলো, সবিতা ম্যাম আকর্ষকে ডিনারের জন্য ইনভাইট করেছে এইটা নায়নীকে এখনও বলেনি এইটা নিয়ে ওর মনের মধ্যে একটু হলেও গিল্টি ফীল হচ্ছে। আকর্ষ প্রথমে ভেবেছিলো না করে দিবে কিন্তু না নিজের বসকে এইরকম মুখের ওপর না করা ভালো দেখায় না তাই আর না করেনি। আকর্ষ অফিসে থাকতেই সবিতা রেস্টুরেন্ট এর এড্রেস এসএমএস করে দিয়েছে। আর সাথে এইটাও বলেছে আকর্ষ যেনো আগে যায় ওর আসতে একটু লেট্ হবে। আকর্ষও তাই একটু ধীরে ধীরে যাচ্ছে কোনো তাড়াহুড়ো নেই। রেস্টুরেন্টটা অনেক হাই ফাই সবার এইখানে খাওয়ার মতো অবস্থা থাকে না অনেকে চাইলেও এইখানে এসে খেতে পারে না। আকর্ষ ভেতরে ঢোকার পর একজন ওয়েটার আকর্ষের কাছে এসে বললো,
"ওয়েলকাম স্যার।"
"আপনার কি কোনো টেবিল বুক করা আছে?"
আকর্ষকে সবিতা আগেই বলে রেখেছে ও নিজের নামে টেবিল বুক করেছে। তাই আকর্ষ বললো,
"হ্যা। মিষ্টি সবিতা নামে।"
ওয়েটারটা নিজের হাতে থাকা কাগজে একটু দেখলো, আর বললো,
"জ্বী পেয়েছি আপনি আমার সাথে আসুন।"
এই কথা বলে ওয়েটার হাঁটতে লাগলো আর তার পাশে পাশে আকর্ষও হাঁটতে লাগলো। ওয়েটার একটা টেবিলের পাশে এসেছে বললো,
"স্যার এইটা আপনাদের টেবিল। "
আকর্ষ দেখলো রেস্টুরেন্টের একেবারে কর্নারের টেবিল। আকর্ষের টেবিলে বসে কলকাতার সব দেখার যাচ্ছে রাতের কলকাতা কতটা সুন্দর সেটা না দেখলেই বলা কষ্টের। আকর্ষ টেবিল পেয়ে বসে পড়লো, আকর্ষ বসার পর ওয়েটার বললো,
"স্যার আপনার জন্য কিছু আনবো।"
আকর্ষ বললো,
"নো থাঙ্কস এখন না একটু পড়ে।"
"ঠিক আছে স্যার।" এইটা বলে ওয়েটারটা চলে গেলো। আকর্ষ ওর মাকে ফোন করে আগেই বলে দিয়েছে। যেনো উনি খেয়ে নেন আকর্ষ আজকে বাইরে ডিনার করবে।
আকর্ষ টেবিলে বসে বসে নিজের ফোন ঘটেছিলো এমন সময় দেখতে পেলো গেট দিয়ে সবিতা ম্যাম আসছেন। আজকে সবিতা ম্যামকে চেনা যাচ্ছে না আজকে এ কাকে দেখছে আকর্ষ একি সবিতা না অন্য কেও। আকর্ষ দেখলো সাদা ট্রান্সপ্যারেন্ট শাড়ি কালো কালারের পার দেওয়া। ভেতরে কালো কালারের ডিপ নেকলাইনের ব্লাউজ পড়েছে। শাড়িটা পড়েছে নাভির থেকে ২ ৩ ইঞ্চি নিচে। ছুঁরো থেকে বুড়ো যে সবাই তাকিয়ে দেখছে আর দেখবেই বা না কেন সবিতার মাইয়ের অনেক টুকুই দেখার যাচ্ছে। ব্লাউজটা কোনো রকমে ঢেকে রেখেছে মাইয়ের অংশটুকু। এইসব ভাবছিলো আর এরই মাঝে সবিতা এসেছে উপস্থিত হলো আর বললো,
"সরি সরি লেট্ হয়ে গেলো।"
"আরে না না লেট্ হয়নি। "
"কখন এসেছেন আপনি?"
"এইতো মাত্র কিছুক্ষন হয়। এসেছি।"
"যাক বাবা এইটু নিজেকে গুছাতে গিয়ে সময় লেগে গেলো।"
"আপনার সময় নেওয়াটা সার্থক হয়েছে।"
"তাই বুঝি? তা কেন শুনি একটু?"
"সবাই আপনাকে যেভাবে দেখছে তাতে বুঝা যাচ্ছে আপনি আজকে অনেকের রাতের ঘুম হারাম হয়ে যাবে। "
এই কথা শুনে সবিতার মুখে একটু লজ্জার ছাপ দেখা গেলো, সবিতা বললো,
"তা আপনার ঘুম হারাম হবে না "
এই কথা শুনে আকর্ষ কি উত্তর দিবে ভেবে পেলো না, ও কথাটা যতটা হেসে উড়িয়ে দেওয়া যায় সেই ভাবেই বললো,
"আমার ঘুম হলো আমার বউয়ের মতো আমি যতই চেষ্টা করি না ঘুমানোর এই ঘুম আমার কাছে আসবেই।"
এই কথা শুনে সবিতা জোরে হেসে দিলো, হাসিটা এতো জোরে ছিলো অন্য টেবিলের সবাই সবিতার দিকে বড়ো বড়ো করে তাকিয়ে রইলো,
তখন আকর্ষ বললো,
"আস্তে হাসুন মানুষ কি বলবে।"
সবিতা দেখলো তাইতো তাই মুখে হাত দিয়ে হাসতে লাগলো সবিতা।
সবিতার হাসি দেখে বলতেই হবে সবিতা আসলেই সুন্দরী আর ওর হাসিও সুন্দর কিন্তু এতে ওর কিছুই যায় আশে না কারণ ওর মন যে অন্যের কাছে।
সবিতা জিজ্ঞেস করলো,
"কি ভাবছেন?"
"নাহ কিছু না।"
"কিছু অর্ডার করেননি?"
"নাহ।"
"আচ্ছা ঠিক আছে। অর্ডার করি নাকি?"
"হ্যা অবশ্যই।"
এই বলে ওয়েটারকে ডাক দিলো আকর্ষ। আকর্ষ সবিতাকে বললো,
"কি খাবেন?"
"আপনি যা খাবেন তাই খাবো।"
"তাই বললে কি হয় আপনারও তো পছন্দ থাকতে পারে আপনি অর্ডার করুন।"
সবিতা ঠিক আছে বলে নিজের জন্য খাবার অর্ডার করলো। আর আকর্ষ ও করলো। ওয়েটার বললো একটু পরেই খাবার আসবে একটু অপেক্ষা করতে বললো ওদের।
আকর্ষ তখন বললো,
"আপনার আসতে কোনো সমস্যা হয়নি তো?"
"নাহ এমনি কোনো সমস্যা হয়নি। আমাকে কি তুমি বলে বলা যায় না?"
কথাটা শুনে আকর্ষ আকাশ থেকে পড়লো বলে কি এই মেয়ে। মাথা ঠিক আছে তো নাকি মাথাটা এই মেয়ের একেবারে গেছে। আকর্ষ এই কথা শুনে একটু ইতস্তত বোধ করতে শুরু করলো। কি বলবে এখন। আকর্ষের সামনে বসা সবিতা বুঝতে পারলো আকর্ষ একটু ইতস্তত বোধ করছে তাই বললো,
"আরে এতে এতো সমস্যার কি আছে?"
"নাহ মানে আপনি আমার বস আবার বড়ো তাই?"
"তাই কি? বসকে কি কেও তুমি করে বলে না আর আমি তোমার থেকে কতো বছরের বড়ো গুনে গুনে ৩ বছরের বড়ো।এইটুকু বড়ো বড়ো হলো নাকি?"
"নাহ তাও বড়ো তো?"
"আরে দেখো প্রিয়াঙ্কা আর নিক জোনাস এর বয়সের মধ্যে তফাৎ ১০ বছরের বড়ো তাহলে?"
"নাহ অফিসে যদি কেও জানে তাহলে অনেক গুজব ছড়াবে।"
"আরে না তুমি আর আমি যখন থাকবো তখন তুমি করে বলবে আর অন্য সময় আপনি করে বলবে ওকে?"
"ওকে।"
সবিতা হাসছে,
"হাসছো কেন?"
"হাসছি কারণ কেউ নিজের থেকে বয়সে একথা বড়কে তুমি বলতে ভয় পায়।"
আকর্ষ তখন বলে উঠলো,
"ভয় পাবো না আমার বস তুমি যদি কিছু উল্টাপাল্টা হয় তাহলেই তো আমার চাকরিটা গেলো।"
এই কথা শুনে সবিতা হাসতে লাগলো আর বললো,
"নাহ নাহ আমি এমন করবো না আমি অন্যসবার মতো না।"
এই কথা শুনে আকর্ষ হাফ ছেড়ে বাঁচলো, আর বললো,
"যাক বাবা বাঁচা গেলো।"
আকর্ষের কথা শুনে সবিতা আবার হেসে দিলো, সবিতা আকর্ষকে জিজ্ঞেস করলো,
"তোমার গার্লফ্রেন্ড আবার রাগ করবে না তো তুমি তাকে সময় দেওয়া বাদ দিয়ে আমার সাথে এসেছো।"
এই কথা আকর্ষ একটু হেসে দিলো আর বললো,
"আমার ঐসব গার্লফ্রেন্ড নেই।"
"তাহলে কি কেও নেই?"
এই কথা বলার সময় সবিতার মুখ উজ্জ্বল হয়ে উঠলো, আকর্ষ এটা ভালোই লক্ষ্য করেছে।
আকর্ষ বললো,
"একেবারে নেই এটা বলবো না একজন আছে বলতে পারো"
"কি গার্লফ্রেন্ড?"
"না না এখনকার সময় একটা কথা খুব শোনা যায় ক্রাশ। বলতে পারো আমারো একটা ক্রাশ আছে।"
এই কথা শুনে সবিতা অনেক অবাক হলো আর বললো,
"ক্রাশ বাহ্ ইন্টারেষ্টিং।"
"ইন্টারেষ্টিং না ছাই।"
"কেন কেন?"
"ক্রাশ পর্যন্ত ঠিক ছিলো। কিন্তু আমি আমার ক্রাশের প্রেমে হাবুডুবু খাচ্ছি তার ভালোবাসা পাওয়ার জন্য তোরপাচ্ছি।"
"আহারে কি বলো? তাহলে ক্রাশ থাকার এক্সপেরিয়েন্স কেমন শুনি?"
"ক্রাশ থাকার এক্সপেরিয়েন্স আর কি বলবো কিছু মানুষ মনে করে ক্রাশ থাকা একটা মিষ্টি অনুভূতি কিন্তু সত্যি বলতে ক্রাশ থাকা অনেক তিতা একটা অনুভূতি আর আপনি যদি সেই ক্রাশকে আপনার সব দিয়ে ভালোবাসেন তাহলে আপনি গেছেন।"
"এতোই যখন ভালোবাসো তাহলে বলে দাও তোমার ক্রাশকে?"
"বললে বলা যায় কিন্তু বন্ধুত্বটা নষ্ট হবার ভয়ে বলছি না। "
"কেমন নষ্ট?"
"ধরুন আমার ক্রাশের বয়ফ্রেন্ড আছে আপনার ক্রাশ আপনাকে বন্ধু ভাবে আপনাকে সব বলে আপনার সামনে যখন ঐ বয়ফ্রেন্ড এর কথা বলবে তখন আপনার সারাদিন শরীর জ্বলবে। কিন্তু কিছু করার নেই শুনতেই হবে। কারণ আপনি চান উনি খুশি থাকুক আমি চাই আমার ক্রাশ খুশি থাকুক আমার সাথে থাকুক কিংবা অন্যের সাথে থাকুক সেটা আমার দেখার বিষয় না। সে খুশি তো আমি খুশি। তার সান্নিধ্যে আমি খুশি।
কথায় আছে না
"তুমি যাকে ভালোবাসো তাকে যেতে দাও
সে যদি তোমার হয়ে থাকে সে তোমার কাছে ফিরে আসবে।"
আমিও তাই মেনে নিয়েছি। ওর হাসি কান্নাতে ওর পাশে থাকতে পারলেই হলো। ওকে যে পেতে হবে এরতো কোনো মানে নেই। "
আকর্ষের সব কথা সবিতা মন দিয়ে শুনলো, আকর্ষের সব কথার সাথে সবিতার চিন্তার মিল আছে শুধু একটি কথার সাথে না তাই সবিতা জিজ্ঞেস করলো,
"তার সাথে যদি বন্ধু হয়ে থাকো তাহলে কি বেশি কষ্ট পাবে না তাকে না পাওয়ার চেয়ে।"
"সত্যি বলতে এইটা সবার ক্ষেত্রেই আলাদা আলাদা। আমার মনে হয় তার সাথে কথা না বলে তাকে না দেখে তার থেকে নিজেকে আলাদা করে রাখার চেয়ে একটু কষ্ট সহ্য করে তার পাশে থাকা তার ভালো খারাপ ২ সময়েই পাশে থাকা ভালো হয়তো একটু কষ্ট পাবেন কিন্তু এর বদলে আপনি যা সুখ পাবেন তা ঐ কষ্টের সামনে নগন্য।"
এই কথার উত্তরে সবিতা কিছুই বলতে পারলো না আসলেই তো এইরকম হতে পারে। এইভাবে কখনো ভাবেনি সবিতা ছেলেটা বয়সে ওর থেকে ছোট হলেও অন্য সব দিক দিয়ে অনেক ম্যাচিউর যা সবিতার অনেক ভালো লাগলো। সবিতা বলে উঠলো,
"তাহলে আমার সাথে তোমার ক্রাশের পরিচয় করিয়ে দিচ্ছ কবে?"
"সময় হলে করাবো। "
"আচ্ছা তুমি তো তোমায় ক্রাশকে ভালোবাসো এখন এইটা একতরফা ভালোবাসা এখন যদি তোমার জীবকনে অন্য কেও ঢুকতে চায় বা তোমার প্রেমে পড়ে অন্য কেও তখন কি হবে?"
"সত্যি বলতে জীবন থেমে থাকে না আমি তার জীবনে জায়গা না পেলে আমার জীবন থেমে থাকবে না নতুন কেও আসতেই পারে এটা নতুন কিছু না। যদি সব ঠিক থাকে আমি তাকে গ্রহণ করে নিবো। সত্যি বলতে,
তুমি তাকেই ''ভালোবাসো'' যে তোমাকে ''ভালোবাসে'' তাকে নয় যাকে তুমি ''ভালোবাসো'' কারন, যাকে তুমি ''ভালোবাসবে সে তোমাই ছেড়ে দিতে একবারও ভাববে না, আর যে তোমাই ''ভালোবাসবে সে হাজার কষ্ট পেলেও তোমাই কখনো ছাড়বে না।
সবিতা আর কিছু বললো না।
এর মাঝে খাবার এসে গেলো। সবিতা আর আকর্ষ ২ জনে খেতে শুরু করে দিলো। ২ জন খাওয়ার সময় নানান বিষয় নিয়ে কথা বললো। সবিতা এতো কথা কারো সাথে বলেছে কিনা এই কয়েকটা বছরে সেটা ওর ঠিক মনে পড়ছে না। আকর্ষের সাথে কথা বলতে যেনো ওর খুব ভালো লাগছে। যাই হোক ওরা খেলো। খাওয়া শেষ করে ওরা বিল মিটিয়ে বের হয় রেস্টুরেন্ট থেকে। সবিতা জানে আকর্ষ বাইক নিয়ে এসেছে তাই বললো,
"আচ্ছা আমরা কি কোথাও বসতে পারি?"
আকর্ষ এই কথা শুনে কিছুক্ষন ভাবলো আর বললো,
"আপনার সমস্যা হবে না তো।"
" নাহ নাহ আমার কোনো সমস্যা হবে না।"
"ঠিক আছে চলুন তাহলে।"
"কোথায় যাচ্ছি আমরা?"
আকর্ষ সবিতাকে বাইকে উঠতে বললো,
"আরে উঠুন আমি আপনাকে কোনো খারাপ জায়গায় নিয়ে যাবো না।"
এই কথা শুনে সবিতা হেসে দিলো আর বললো তোমার সাথে আমি নরকে যেতেও প্রস্তুত আছি তুমি বললে।
আকর্ষ বললো,
"থাক নরকে যেতে হবে না আমি যেখানে নিচ্ছি সেখানে চলুন।"
সবিতা আকর্ষের পিছনে বসলো। আর এতটা সেটে বসলো সবিতার স্তন পুরো আকর্ষের পিঠে লাগছে। আকর্ষ সেটা ভালো ভাবে ফীল করছে। আকর্ষ কিছু বললো না আকর্ষ বাইক নিয়ে চলতে শুরু করলো। আকর্ষ একটু স্পিড বাড়িয়ে দিলো আকর্ষ যত স্পিড বাড়াচ্ছে সবিতা আকর্ষের কোমড় আরো জড়িয়ে ধরছে আর নিজেকে পুরো লেপ্টে ফেলেছে আকর্ষের সাথে। আকর্ষ কিছু বললো না।
আকর্ষ সবিতাকে নিয়ে আসলো রবীন্দ্র সরোবরে। সময় প্রায় শেষের দিকে আস্তে আস্তে মানুষ বের হয়ে যাচ্ছে আর ওরা প্রবেশ করলো বাইক পার্ক করে। গিয়ে ওরা সরোবর দেখা যায় এমন একটা ব্রেঞ্চে বসলো। সবিতা বললো,
"আমি ভাবতেই পারিনি তুমি আমাকে এইখানে নিয়ে আসবে। থ্যাংক ইউ সো মাচ আমাকে এইখানে আনার জন্য।"
"আরে না না এইটা আমার সৌভাগ্য।"
"তুমি তাহলে বিয়ে করছো কবে শুনি?"
"বিয়ে করতে অনেক দেরি এখন ঐ সবার কোনো প্ল্যান নেই।"
"আচ্ছা কেন?"
"কারণ আমি এরেঞ্জ ম্যারেজ করতে চাই না। আর আমার এখনও খেলাধুলা করার বয়স এতো তাড়াতাড়ি বিয়ে করলে সমস্যা।"
এই বলে হেসে দিলো আকর্ষ। সবিতা অল্প আলোতেও আকর্ষের সুন্দর হাসি দেখলো।
সবিতা বললো,
"আমার মনে হয় তোমার বউ যে হবে ও অনেক লাকি হবে?"
এই কথা শুনে আকর্ষ আবার হেসে দিলো বললো,
"না না আমাকে পেয়ে উনি লাকি হবে কিনা বলতে পারছি না কিন্তু আমি যদি তাকে পাই তাহলে যে ভাগ্যবান সেটা বলার অপেক্ষা রাখে না। "
এই কথা শুনে সবিতার ভালো লাগলো কেও তো আছে যে নিজেকে নিয়ে না ভেবে তার জীবনসঙ্গীনি কে নিয়ে ভাবে। খুব ভালো লাগলো শুনে। সবিতা বললো,
"তাহলে তোমার বউ তো তোমার থেকে অনেক আদর পাবে।"
"অনেক আদর পাবে কিনা জানি না তবে তাকে আমি অনেক ভালোবাসবো নানান ভাবে ভালোবাসবো।"
"আচ্ছা তাই তা কিভাবে শুনি?"
" ধরো সারাদিন অফিসে থেকে এসে যখন বউ দরজা খুলবে তখন বৌকে সাথে সাথে জড়িয়ে ধরে বলবো ভালোবাসি। "
"তাই বুঝি তা তুমি তো দেখছি খুব প্রেমিক পুরুষ।আর কি করবে?"
"কোনো এক জোৎস্না রাতে আমি নীল পাঞ্জাবী আর ও নীল শাড়ি পড়ে নদীর পায়ে খালি পায়ে হাটবো।"
"ইসস কি সুন্দর আর শোনাও ?"
"আবার মাঝে মাঝে যখন রাত হয়ে যাবে তখন ওকে বলবো চলো গিয়ে ফুচকা খেয়ে আসি।"
"তুমি এইগুলো করলে তোমার বউয়ের খুশির ঠিকানা থাকবে না। আর কি কিছু ইচ্ছা আছে?"
"হ্যা আর ছোট ছোট কিছু ইচ্ছা আছে?"
"কি ইচ্ছা শুনি?"
" যখন ও কাজ করবে তখন ওকে পিছন থেকে জড়িয়ে ধরে রাখবো। আর ওর ঘাম গুলো মুছে দিবো। যখন ও রাগ করবে তখন অফিসে থেকে আসার পর ওর জন্য অনেক গুলো চকলেট আর আইসক্রিম কিনে দিবো। আর যখন ও ওর পিরিয়ড এর ব্যাথা নিয়ে কষ্ট করবে। তখন আমি ঐদিন ওর পাশে থাকবো। কারণ এর আগে বাবা ছিলো কিন্তু তখন আমি ছাড়া মানুষটার কেও নেই তাই আমাকে তার খেয়াল রাখতে হবে। এই হলো ইচ্ছা। আরো কিছু ইচ্ছা আছে সেগুলো মনে পড়ছে না।"
সবিতা মন্ত্রমুগ্ধয়ের মতো আকর্ষের কথা শুনলো। আকর্ষ যে প্রেমিক পুরুষ আকর্ষ যাকে ভালোবাসবে তাকে সব দিয়ে ভালোবাসবে সেটা বুঝতে বাকি রইলো না। সবিতা বললো,
"অফিসের অনেক মেয়েই কিন্তু তোমার প্রতি ক্রাশ খেয়েছে এখন যদি এই কথা গুলো শুনতো তাহলে তো পুরো ভালোবেসে ফেলতো।"
আকর্ষ এটা শুনে কিছু বললো না হাসলো শুধু। এমন সময় হোয়াটস্যাপে একটা এসএমএস আসলো, আকর্ষ ফোনটা খুলে দেখে আর কেও না নায়নী। আকর্ষ তখন মনে মনে বললো,
"এই রে খেয়েছে মহারানীকে রাত্রে কল দিবো বলেছিলাম। এখন যদি কল না দেই তাহলে কথা বলবে না। তাই জাস্ট ছোট্ট একটা এসএমএস দিলো আমি বাইরে ঘরে গিয়ে তোমাকে ফোন দিচ্ছি। এই বলে ফোনটা নিজের পকেটে রেখে দিলো।"
সবিতা এটা দেখলো আর জিজ্ঞেস করলো,
"কোনো সমস্যা আকর্ষ?"
"না না কোনো সমস্যা নেই।"
" কে এসএমএস করেছে তোমার ক্রাশ? "
"উহু ক্রাশ তো সবার জন্য আমার জন্য সে অন্য কিছু?"
"অন্য কিছু বলতে কি?"
"আমার কাছে উনি আমার নেশা। আমি তাকে নেশা বলেই ডাকি মাঝে মাঝে। আমি তার নাম দিয়েছি নেশা।"
"নেশা এইটা আবার কেমন নাম?"
"হুমম ভালো নাম তো।"
"কিভাবে?"
"এই নেশাকে ছাড়া আমার চলে না তাকে না দেখতে পারলে নিজেকে পাগল পাগল লাগে মনে হয়। নিজেকে আটকাতে পারি না। তাকে দেখলেই শান্তি আর যখন সে হাসে তখন আমার মনে এক শীতল বাতাস বয়ে যায়। যা আমার মনকে ঠান্ডা করে দেয়। ধরুন অনেক রাগ করে আছি কেও ফোন দিলে তুলকালাম হয়ে যাবে সেখানে যদি ও ফোন দেয় তাহলেই আমার রাগ সব পানি পানি হয়ে যায়।"
এইটা সবিতা বললো,
"বাবা রে তোমার নেশা তো অনেক ভয়ঙ্কর ।"
"হুমম বলতে পারেন আমি তার নেশায় আসক্ত। আমি তার প্রেমে নেশাক্ত।"
আকর্ষ দেখলো হাত ঘড়িতে রাত অনেক হয়েছে। তাই সবিতাকে বললো,
"চলুন আপনাকে নামিয়ে দিয়ে আসি।"
এই শুনে সবিতা বললো,
" আরে না না আমাকে নামিয়ে দেওয়া লাগবে না তুমি চলে যাও আমি ট্যাক্সি করে চলে যাবো।"
"আহঃ কি সুন্দর কথা। এতো রাতে আপনাকে আমি একা ছাড়বো আমাকে কি পাগল কুকুর কামড়িয়েছে নাকি বেশি কথা না বলে চুপ চাপ আমার সাথে চলুন।"
সবিতা আর কিছু বলতে পারলো না। আকর্ষ আর সবিতা ২ জনে এক সাথে রবীন্দ্র সরোবর থেকে বের হলো। আকর্ষ বাইক স্টার্ট করলো আর সবিতাকে বসতে বললো,
সবিতা আকর্ষের পিছনে বসলো আর আকর্ষের পিঠে একেবারে মাথা এলিয়ে দিলো। এই ভাবে দেখলে যে কেও বলবে এরা হলো প্রেমিক প্রেমিকা।
আকর্ষ কিছু বলে নি কি বলবে। আকর্ষ তাই ঐভাবেই বাইক চালিয়ে সবিতার ঘরে সবিতাকে নামিয়ে দিয়ে আসলো, যাওয়ার সময় সবিতা বলেছিলো,
"আকর্ষ তোমাকে অনেক ধণ্যবাদ আমাকে এতো সুন্দর একটা রাত উপহার দেওয়ার জন্য।"
আকর্ষ বলেছিলো,
" মাই প্লেজার ম্যাম। "
সবিতাকে নামিয়ে দিয়েই আকর্ষ বাইক নিয়ে নিজের ঘরের জন্য রওনা হলো। আর খুব তাড়াতাড়ি এসে পড়লো। আকর্ষের যে আসতেই হবে কেও একজন তার জন্য অপেক্ষা করছে।
চলবে
অনেকদিন অপেক্ষা করতে হলো তার জন্য ক্ষমা প্রার্থী।
আর লাইক রিভিউ দিয়ে জানাবেন কেমন লাগলো
এই গল্প যদি ভালো লেগে থাকে অবশ্যই কমেন্ট করে জানাবেন। যদি কোনো মতামত থাকে জানাতে ভুলবেন না। আমাকে ইমেইল করতে পারেন lf859782; অথবা টেলিগ্রাম এ এসএমএস দিতে পারেন @Paradox787898 এই নামে। আপনাদের এসএমএস এ আমি উৎসাহ পাই। তাই আমাকে বেশি বেশি করে উৎসাহ দিবেন এই আশা করি।