13-03-2024, 01:02 AM
(This post was last modified: 13-03-2024, 01:04 AM by aaniksd. Edited 1 time in total. Edited 1 time in total.)
পর্ব -২
সামনে সঞ্জয়কে দেখে সুমিত্রা একটু থতমত খেয়ে যায়..
“মা…তুমি কতো দেরি করে দিলে…” সুমিত্রাকে উদ্দেশ্য করে বলে ওঠে সঞ্জয়…
“হ্যাঁ রে…ওই দাদুটার..গায়ে হাত পায় ব্যাথা হচ্ছিলো তো তাই একটু মালিশ করে দিচ্ছিলাম”.
মায়ের কথা শুনে আর কোনো প্রশ্ন করে না সঞ্জয়…
সুমিত্রা সামনে এগোতে থাকে…পেছনে ছেলে সঞ্জয়…
হাঁটতে হাঁটতে সুমিত্রার হাতে মুঠি করা একটা কাগজে মোড়া জিনিসের দিকে নজর যায়…
মায়ের হাতে থেকে কেড়ে নেবার চেষ্টা করে সঞ্জয়, বলে “মা ওটা কি??… আমার জন্য কিছু আছে ওতে…”.
সুমিত্রা তখুনি নিজের হাত উপরে তুলে, ছেলের থেকে ওটাকে সরিয়ে নেয়…বলে, “ওটা কিছু না…”
সঞ্জয় আবার চুপ করে যায়…মাকে কিছু আর প্রশ্ন করে না…হাঁটতে হাঁটতে বাড়ির দিকে রওনা হয়.
মনের কৌতূহল মনেই রেখে দেয়…
হয়তো ওতে সত্যিই তার জন্য মা চকলেট নিয়ে যাচ্ছে…বাড়ি গিয়ে দিয়ে দেবে.
সারা রাস্তা সুমিত্রা ওটাকে ছেলের থেকে দূরে রেখেছিলো…
অবশেষে, বস্তির বাইরে একটা ঝোঁপে , এদিক ওদিক তাকিয়ে সে ওটাকে ছুড়ে ফেলে দেয়..
সঞ্জয়ের তা দেখে মন খারাপ হয়ে যায়…
ভেবে ছিল ওর জন্য চকলেট আছে ওতে কিন্তু তা নয়…
বাড়িতে এসে মা প্রথমেই কুয়ো তলায় জল দিয়ে নিজের হাতটা ভালো করে ধুয়ে নেয়..
সঞ্জয়ের মনে সন্দেহ হয়….কি ছিল ওটাতে….কৌতুহলী মনে নানা রকম প্রশ্ন উঠতে থাকে.
আজ সারাদিন তার কাছে একপ্রকার পরীক্ষার মতো কেটে গেছে…নানান ধরণের অজ্ঞাত প্রশ্ন তার কাছে এসেছে…যার উত্তর তার কাছে নেই…
এমন সংকট তার জীবনে এই প্রথম…
যাক আজ অনেক দেরি হয়ে গেছে…খেলাধুলার সময় নেই…মা এখন ঘরেই থাকবে..তাকে আর বাইরে যেতে দেবেনা…
থাক খেয়ে দেয়ে না হয় দুপুর বেলা মাঠে খেলতে যাবো..
আরে আমি তো ভুলেই গেলাম…ঐযে মা ওখানে কি ফেলেছিলো…ওটা আমি দেখবো…বিকেল বেলা…সাথে আসলাম কেউ নিয়ে যাব..
মনে মনে বলে সঞ্জয়…
তখনি, “সঞ্জয়…তাড়াতাড়ি স্নান করে নে…অনেক বেলা হয়ে গেল…”
মায়ের ডাক পায়…
“হ্যাঁ মা..যাই..” বলে সঞ্জয় স্নান করতে চলে যায়.
দুপুর বেলা খাওয়া দাওয়ার পর সঞ্জয় মাঠে খেলতে যাবে…তখনি ঘরে মায়ের দিকে নজর যায়…দেখে অনেক গুলো টাকা মা হাতে নিয়ে গুনছে…
সুমিত্রা চোখ তুলে দেখে সঞ্জয়…বাইরে যাবার প্রস্তুতি নিচ্ছে…”এই শোন…বাবু…”
বলে মা দেখে নেয় ছেলেকে…
“হ্যাঁ মা বলো…” বলে সঞ্জয়.
“এই নে..তোর টিউশনের টাকা…আজ বিকালে তোর মাস্টারমশাই কে দিয়ে দিবি…ভুলে যাসনা যেন…আর ঠিক মতো রাখিস…টাকা পয়সা হারিয়ে দিসনা যেন..”
বলে সুমিত্রা, সঞ্জয়ের হাতে টাকা ধরিয়ে দেয়…
“না মা…আমি টাকা হারাবো না…তুমি চিন্তা করোনা…আমি ঠিক মাস্টারমশাই কে টাকা টা দিয়ে দেব..”.সঞ্জয় তার মাকে বলে..
সঞ্জয় জানে…মায়ের কষ্টের উপার্জিত টাকা…তাই সে যত্ন করে…কলেজের ব্যাগ খুলে তাতে একটা পেন্সিল বক্স আছে ওতে রেখে দেয়…
“মা আমি এখন খেলতে যাব..?? “
অনুমতি নেয় সঞ্জয়…
“হ্যাঁ যা…তবে বেশি দেরি করিস না…পড়তে যেতে হবে তোকে..” বলে মা সুমিত্রা.
আজ মাঠে আসলামের সাথে দেখা হয়..সঞ্জয় তাকে খুশির খবর দেয়…যে আজ সে মাস্টার মশাই এর টাকা মিটিয়ে দেবে…
বিকালে খেলা শেষে বাড়ি ফিরে এসে, তাড়াতাড়ি তৈরী হয়ে নেয়..টিউশন পড়া আছে..
ততক্ষনে সে ওই ঝোঁপের কথা ভুলেই গেছে…
টিউশন থেকে ফেরার সময় মনে এলো…তখন মা কি যেন একটা সেখানে ফেলে ছিল…ওটা আমার যেয়ে দেখার ছিল কিন্তু এখন দেখা যাবে কি…?
সাথে আসলাম ছিল…
“চল না আসলাম…একটু ওই দিকটা যাব…” বলে সঞ্জয়.
“কেন রে…কি আছে ওদিকে…” বলে আসলাম.
“চল না তুই আমার সাথে, দরকার আছে…” আবার বলে সঞ্জয়.
“না রে আজ এখন যাব না…এমনি তেই সন্ধ্যা হয়ে গেছে…তাড়াতাড়ি বাড়ি ফিরতে হবে..” বলে আসলাম বস্তির দিকে এগোতে থাকে..
সঞ্জয় ও মনে মনে বলে, আজ অনেক দেরি করে ফেলেছে..এমনিতেও অন্ধকারে ঝোঁপে ঢোকা ঠিক হবে না…কাল মনে করে একবার আসতে হবে…
বাড়ি গিয়ে সঞ্জয় দেখে ঘরে মা নেই.. দরজায় তালা…একটু চঞ্চল হয়ে ওঠে মন.
মা আবার এখন কোথায় গেলো…মনে মনে বলে ওঠে..
কিছু ক্ষণ পরেই দেখে মা..থলি হাতে করে বাড়ির দিকে আসছে…
“মা তুমি কোথায় গিয়েছিলে..? “ ব্যাকুল হয়ে প্রশ্ন করে সে..
“এই তো বাজার গিয়েছিলাম…” বলে সুমিত্রা..
মায়ের হাতের থলিতে দেখে…একটা পলিথিনে মুরগির মাংস…
উঃ অনেক দিন পর সে আজ মাংস খেতে পাবে..কি মজা…
পরক্ষনেই সঞ্জয়ের বাবাও রিক্সার হর্ন বাজাতে বাজাতে বাড়ি ফেরে..
রাতের বেলা সুমিত্রা ছেলের জন্য মাংস রান্না করে…..সঞ্জয়, মায়ের হাতের রান্না খুব পছন্দ করে..বেশ তৃপ্তি খায়..
খাবার সময় সুমিত্রা ওর ছেলের পাশে বসে থাকে…ছেলেকে খেতে দেখে ওর মন ভরে ওঠে…তাছাড়া বাড়িতে মাছ মাংস খুব কমই রান্না হয়.
সঞ্জয় একটু বেশি..মাছ মাংস রান্না পছন্দ করে..
সুমিত্রা আজ সারাদিনের সব ঘটনাবলী ভুলে গিয়ে…হাঁটুর মধ্যে মাথা দিয়ে, ঘাড় হিলিয়ে ছেলেকে খেতে দেখে…
পরেরদিন সকালে যথারীতি সুমিত্রা আর ওর বর পরেশনাথ নিজের কাজে বেরিয়ে যায়..
সঞ্জয় আজ মনে রেখেছে..তাকে ওখানে যেতে হবে…হ্যাঁ তবে কলেজ ফেরার পর…
আজ আসলাম কলেজ আসেনি…সুতরাং তাকে একাই যেতে হবে..
সারাদিন কলেজ করার পর বিকেল বেলা বাড়ি ফেরার সময় সঞ্জয় ওই ঝোঁপটার দিকে পা বাড়ায়..
এ রাস্তা সচরাচর ফাঁকায় থাকে…সেহুতু তার ঝোঁপে ঢুকতে কোনো বাধা হলো না.
হামাগুড়ি দিয়ে অনায়াসে সে ঝোঁপের মধ্যে প্রবেশ করল..
তারপর সে এদিকে ওদিকে তাকাতে থাকে…কই কোথায় সেই কাগজ মুড়ি…দেখতে পায়না সে.
স্থির হয়ে একবার মনে করার চেষ্টা করে…ঠিক কোথায় সেই কাগজ টা পড়ে ছিল..
হ্যাঁ ওই তো…
কিছুদূরে…শুকনো পাতার আড়ালে…হ্যাঁ ওখানেই পড়ে রয়েছে…সেই কাগজ খানি..
তবে সেটা ওর শরীর থেকে একটু দূরে হবে..
মন যখন জিজ্ঞাসু থাকে, কোনো কিছুই বাধা হয়ে দাঁড়ায় না..
এ এক রহস্য উজ্জাপনের খেলা…মনের মধ্যে বড়ো কৌতূহল তৈরী হয়ে গিয়েছিল..
ওটা কি…?
মা সেদিন ছুড়ে ফেলে দিয়েছিল…
সঞ্জয় হামাগুড়ি দিয়ে, নিজের মেরুদন্ড বেঁকা করে…ডান হাত অনেক টা প্রসারিত করে ওই কাগজ তার কাছে পৌঁছোয়.
ঝাপটে ধরে ওই কাগজ খন্ডকে মুঠির মধ্যে নিয়ে সটান বেরিয়ে আসে ঝোপ থেকে…
আহঃ…এ এক খেলা জয়ের মতো আনন্দ…
মা সেদিন এটাকে হাতে নিতে দেয়নি…
কি জিনিস আছে এতে…বাইরে থেকে মনে হচ্ছে কোনো নরম জিনিস…পেলপেলে.
সে আর ধরে রাখতে পারলোনা নিজেকে…দেখি কি আছে..
আসতে আসতে কাগজের ভাঁজ খুলতে লাগলো সঞ্জয়..
বেরিয়ে পড়লো একটা অজ্ঞাত জিনিস..যেটা সে আগে কখনো দেখেনি…
একটা লম্বা বেলুনের মতো…সাদা রঙের…
হাত দিয়ে নাড়লে কেমন তেল তেল করে…
একি বেলুন নাকি….মনে মনে করে সঞ্জয়.
মেলার সময় যে বড়ো গোল বেলুন পাওয়া যায়….না ফোলালে ঠিক ঐরকম…তবে এটা ওই বেলুন গুলোর থেকে অনেক লম্বা…অনেক বড়ো…
ভালো করে সঞ্জয় ওটাকে পর্যবেক্ষণ করার চেষ্টা করে..
বেশ তেল তেলে এই বেলুন টা…
আর এর ভেতরে এই সাদা রঙের জিনিস টা কি…?
ছিঃ…..বলে সঞ্জয় ওটাকে আবার ঝোঁপের মধ্যে ছুঁড়ে দেয়…আর সেটা একটা কাঁটা ঝোঁপের ডালে লেগে…ওই সাদা জিনিসটা টপটপ করে নিচে পড়তে থাকে…
সঞ্জয়…মুখ থেকে একরাশ থুতু বের করে ওয়াক থু…ফেলে দেয়…
নোংরা…নোংরা বলে…সেখান থেকে চলে আসে….
এবার তার অনুসন্ধিৎসু মন আবার এক নতুন কৌতূহলে ঢুকে পড়ে.
এ আবার কেমন জিনিস…ওটা মা নিয়ে কি করছিলো…হয়তো ওটা ওই দুস্টু লোকটার মাকে দিয়েছিলো ফেলে দেবার জন্য….তবে সেদিন বলল মা তেল মালিশ করছিলো…কিন্তু ও ভাবে কেউ তেল মালিশ করে কি…?
মনে মধ্যে নানা রকম শঙ্কা এই ক্ষুদে সঞ্জয়ের.
বাড়ি ফিরে মায়ের দিকে চেয়ে দেখে…সঞ্জয়….মায়ের বড়ো বড়ো চোখ..গাঢ় লম্বা ভ্রু আর টিকালো লম্বা নাক..কপালে ওই বড়ো বিন্দুর মতো লাল সিঁদুরের টিপ…
“কি দেখছিস অমন করে….” সুমিত্রা বলে ওঠে ছেলে সঞ্জয় কে…
“না…মা…কিছুনা…” বলে সঞ্জয় হাত পা ধুতে চলে যায়…
সঞ্জয়ের মন এই কয় দিন ধরে বেশ ভালোই রয়েছে…., কারণ ওর বাবা অনেক দিন হলো মায়ের সাথে ঝগড়া করেনি…বাবা মদ খাওয়া টাও কমিয়ে দিয়েছে..
সে এখন প্রতিদিন কলেজে যায়…বন্ধু দের সাথে খেলা করে আর টিউশন পড়তে যেতেও কোনো অসুবিধা হয়না…কারণ মা তার টাকা শোধ করে দিয়েছে.
সঞ্জয় ভেবেছিলো যেহেতু বাবা আর মায়ের সাথে ঝগড়া অশান্তি করে না সেহেতু মা বেশ হাঁসি খুশি থাকবে..
অনেক দিন হয়ে গেলো…সেই ছোট্ট বেলায় মা তাকে শহর দিকে ঘোরাতে নিয়ে যেত..জামাকাপড় কিনে দিত..কত লজেন্স…আমাকে এনে দিত..
তখন কত ভালোবাসতো মা তাকে..
সন্ধে বেলা সেই চাঁদ মামার গল্প শোনাতো…”আমি মায়ের কোলে বসে সেই গল্প শুনতে শুনতে কোথায় যেন হারিয়ে যেতাম..”
আর সেই রাজা রানীর গল্প…যেটা শুনিয়ে মা আমাকে ঘুম পাড়াতো..
তারপর এখন বড়ো হয়ে গেছি…মা আর আগের মতো হাঁসি খুশি থাকেনা..শুধুই চিন্তিত দেখায়. সঞ্জয়…মায়ের সাথে কাটানো সেই দিন গুলোর কথা মনে করে.
যত দিন থেকে সে জ্ঞানমান হয়েছে….মায়ের প্রতি বাবার অত্যাচার সে দেখে আসছে…সহ্য করে আসছে একপ্রকার..
কিন্তু বেশ তো কয়েক দিন হয়েগেলো কই বাবা তো আর আগের মতো অশান্তি করেনা…
তাহলে মায়ের ও ওই রূপ মন দুঃখী করে থাকার তো কোনো কথা নয়…
বিশেষ করে সেদিন টার পর থেকে মা আরও ভাবুক থাকে…
সঞ্জয়ের ভালোবাসা তার মায়ের প্রতি প্রগাঢ়…
সেদিন ওই দুস্টু বৃদ্ধ লোকটা মায়ের সাথে কি যেন করছিলো….এখন সেটা মনে পড়লে ভীষণ রাগ হয় লোকটার প্রতি…একটা অজ্ঞাত হিংসা মনের মধ্যে চলে আসে.
সে মায়ের ভালোবাসা কারো সাথে ভাগ করে নিতে চায়না, মায়ের প্রতি ভালোবাসার অধিকার শুধু তার… সে চায় মা শুধু তাকেই ভালোবাসুক..
একদিন বিকেলবেলা সঞ্জয় খেলাধুলা করে এসে মাকে সুধায়…”মা তুমি অমন দুঃখী মন করে কেন থাকো…আমার ভালো লাগেনা…”
সুমিত্রা তখন ছেলে সঞ্জয়ের দিকে তাকায় আর মৃদু হাঁসে……”কই রে…আমি মন দুঃখী থাকি….এই তো…হাসলাম…” বলে ছেলের গালে হাত বুলিয়ে দেয়..
“না মা…আমি চাইনা তুমি সবসময় ঐরকম চুপচাপ করে বসে থাক…তুমি বলো আমি কি করলে তুমি অনেক অনেক খুশি হবে…”
ছেলের কথা শুনে সুমিত্রা একটু ভাবুক হয়ে ওর কাছে এসে বলে…”কই তুই তোর মায়ের কথা ভাবিস…তুই তো সারাদিন খেলাধুলা নিয়েই ব্যাস্ত থাকিস…পড়াশোনা ঠিক মতো করিস..?? করিস না…”
তুই ভালো করে পড়াশোনা কর আর অনেক বড়ো মানুষ হয়ে দেখা…এতেই আমি অনেক খুশি হবো…
সুমিত্রার কথা গুলো ছেলে সঞ্জয় অনেক গভীর মনোযোগ দিয়ে শোনে…
বলে..”হ্যাঁ মা…আমি আরও ভালো করে পড়াশোনা করবো মা…তুমি দেখে নিও আমি বড়ো হয়ে চাকরি করবো…আর অনেক টাকা পয়সা তোমার হাতে তুলে দেব..”
সে কথা শুনে সুমিত্রা একরাশ হাঁসি হেঁসে দেয়….যাইহোক আর কেউ তার পাশে থাকুক না থাকুক ছেলে তার সাথে আছে…তার দুঃখ কষ্ট বোঝে…
না হলে ওই শয়তান স্বামী তার জীবন টাকে নরক বানিয়ে তুলেছে..
ছেলে কে ঠিক মতো মানুষ করার জন্য সে সবরকম প্রয়াস করতে রাজি..কি আর করাযাবে ভাগ্যই যে তার প্রতি বিরূপ…তানাহলে সামান্য কিছু টাকা কড়ি উপার্জনের জন্য তাকে অনৈতিক পথ বেছে নিতে হচ্ছে…
গ্রামে দরিদ্র মা বাবা ভেবেছিলো…ছেলে শহরে থাকে…পয়সা কড়ি ঠিকঠাক কামিয়ে নেয়…মেয়ের কোনো অভাব হবে না…
মিষ্টি দেখতে মেয়ে বলে কতইনা সম্বন্ধ এসেছিলো তার জন্য…হ্যাঁ গায়ের রং সামান্য দাবা তাতেও কোনো অসুবিধা হচ্ছিলো না..
লক্ষী স্বভাবের মেয়ে সুমিত্রাকে দেখে যে কেউ মুগ্ধ হয়ে যেত…
শেষের দিকে অবিশ্যি বাবা মা এ সম্বন্ধে অরাজি হতে শুরু করে দিয়েছিল…কলকাতা বেজায় দূর তাদের গ্রাম থেকে….বাপ্ জন্মেও কেউ যায়নি ওখানে…এতো দূরে মেয়েকে বিয়ে দেওয়া কি ঠিক হবে…
কিন্তু ঐযে আত্বিয়স্বজনের চাপে পড়ে…এমন জায়গা আর ছেলে পাওয়া যাবেনা সচরাচর..
সে যাইহোক এখনকার পরিস্থিতি সুমিত্রা কে মেনে নিতে হয়েছে..শুধু ছেলের মুখ তাকিয়ে..
“সঞ্জয় তুই এবার পড়তে বস….সন্ধ্যা হতে চলেছে…” সুমিত্রা হাঁক দিয়ে ছেলেকে নির্দেশ দেয়.
তারপর ও নিজে সেখান থেকে উঠে গিয়ে কুয়ো তলায় চলে যায়…সন্ধ্যা আরতি করতে হবে…ঠাকুরকে ধুপ দেখানোর সময় এসে গেছে…
ছেলের জন্য, নিজের জন্য…আর স্বামীর জন্য প্রার্থনা করে সে.
আসতে আসতে সময় এভাবেই পেরোতে থাকে…
সঞ্জয়ের বাৎসরিক পরীক্ষার আরম্ভ হতে আর একমাস বাকি…
তাই মায়ের শক্ত আদেশ বাইরে বেশি ক্ষণ থাকা যাবেনা…শুধু পড়া আর পড়া…খেলাধুলা বেশি ক্ষণ না…আর পাড়ার ছেলেদের সাথে মেলামেশা তো এই কয়দিনে একদম বন্ধ..
তাই অনিচ্ছা সত্ত্বেও তাকে বই নিয়ে বসে থাকতে হয়..
ওর পরীক্ষা চলাকালীন মা খুব সকালে রান্নাবান্না করে তারপর নিজের কাজে যায়..
সঞ্জয়ের পরীক্ষা বেশ ভালোই হচ্ছে..যা যা সে মুখস্ত করে যায় সেই সেই গুলোই পরীক্ষাতে আসে..
পরীক্ষার পর একমাস ছুটি হলে তারকাছে অফুরন্ত সময় থাকে…নিজের খেলাধুলো নিয়ে ব্যাস্ত থাকার জন্য.
মাঝেমধ্যে মায়ের সাথে মায়ের কাজের বাড়ি গুলো তে যাবার বায়না করে সঞ্জয়, কিন্তু না সুমিত্রা তার ছেলেকে নিজের সাথে নিয়ে যেতে একদম নারাজ…
একদিন সঞ্জয় খেলার ছলে আবার ওই ঝোঁপটার দিকে চলে যায়…সেদিন টার কথা মনে পড়ে যায় তার.
ওই অজ্ঞাত জিনিসটা কি ছিলো মনে আবার জিজ্ঞাসা উদ্রেক হয়.
বেলুন ছিলোনা ওটা নিশ্চিত সে…কারণ ওই রকম বেলুন উড়ে বেড়াতে আগে বা পরে কখনো দেখেনি..
হয়তো একমাত্র মা তাকে এই প্রশ্নের উত্তর দিতে পারবে..
কিন্তু…মনে মনে একটা অজানা ভয় তৈরী হয়..
মা তাকে বকবে না তো…যদি জানতে পারে…আমি এদিকে এসেছি…অথবা সে যদি বলে ফেলে যে সে ওই জিনিসটাকে হাতে নিয়েছে.
মাকে মিথ্যা কথা কখনো বলে না সঞ্জয়.
মার ও খেতে হতে পারে মায়ের কাছে তার জন্য…না না…থাক আমি জিজ্ঞাসা করব না..
একমাস পর সঞ্জয়ের বাৎসরিক পরীক্ষার রেজাল্ট বের হয়….
খুশির বিষয় হলো…. সঞ্জয় এবারের পরীক্ষায় প্রথম স্থান অধিকার করেছে…সে এখন সপ্তম শ্রেণীতে উত্তীর্ণ হয়েছে..
কলেজ থেকে বাড়িতে এসে মাকে সে খবর জানাতে…খুবই খুশি হয় সুমিত্রা…দুই চোখ দিয়ে জল চলে আসে তার…
“মা…তোমাকে হেড মাস্টারমশাই পরিতোষ স্যার কালকে ডেকেছেন…” সুমিত্রা কে উদ্দেশ্য করে বলে ওঠে সঞ্জয়..
“কেন রে…” সুমিত্রা একটু অবাক হয়ে প্রশ্ন করে..
“কি জানি মা…হয়তো আমি ফার্স্ট হয়েছি তাই…তোমাকে কিছু বলবে..” বলে সঞ্জয়..
ঠিক আছে তুই যখন কলেজ যাবি, আমাকে ডেকে নিস্… বলে সুমিত্রা
পরেরদিন যথা সময়ে সঞ্জয় তার মাকে নিয়ে কলেজ চলে যায়…
সেখানে অনেক ছাত্র ওদের মা বাবাকে সাথে করে নিয়ে এসেছে…আজ কৃতি ছাত্রদের সম্বর্ধনা জানানো হবে..
তবে সেখানে বেশিরভাগ ছাত্রই বস্তি এলাকার…
অবশেষে সঞ্জয়কে সম্বর্ধনা জানানোর সময় আসে…
সে আর মা সুমিত্রা কলেজের হেড মাস্টার এর কাছে যায়..
“আপনার ছেলে তো খুবই ভালো রেজাল্ট করেছে এবার…আমরা খুব খুশি…এতে বাবা মায়ের সাথে সাথে কলেজের ও শুনাম হয়.”
সুমিত্রাকে উদ্দেশ্য করে হেড মাস্টার বক্তব্য রাখেন..
সুমিত্রা অনেক ভাবুক হয়ে ওঠে…”বলে স্যার এসব আপনাদের কৃপা…তানাহলে আমাদের মতো গরিবের ছেলে মেয়ে দের কথা কারা চিন্তা ভাবনা করে বলুন..”
হেড মাস্টার মশাই আপ্লুত হয়ে বলেন..”আহঃ…না না..এমন একদম মনে করবেন না…তাছাড়া আপনার ছেলে খুবই মনোযোগী আর জিজ্ঞাসু…দেখবেন ছেলে মায়ের মান ঠিক রাখবে…”
সুমিত্রা আবার বলে “আশীর্বাদ করুন স্যার….ছেলে যেন বড়ো হতে পারে..”
“হ্যাঁ নিশ্চই নিশ্চই…তবে তার আগে মায়ের আশীর্বাদ সবচেয়ে বড়ো….” বলে উনি সঞ্জয়কে নির্দেশ দেন মায়ের পা ছুঁয়ে প্রণাম করে আশীর্বাদ নেবার জন্য…
তারপর সঞ্জয় নিজের মায়ের কোমল চরণস্পর্শ করে মাথায় নেয়…সুমিত্রাও ছেলে সঞ্জয়কে প্রাণ ভরে আশীর্বাদ করে..
প্রথম হওয়ার পুরস্কার স্বরূপ সঞ্জয় কলেজ থেকে কয়েকজোড়া খাতা আর পেন উপহার পায়..
সুমিত্রা জানে সঞ্জয় বস্তির সব মাথামোটা দস্যি ছেলেদের সাথে প্রতিযোগিতায় প্রথম হয়েছে…তাতে ওর তেমন খুশি হওয়ার কারণ নেই..
সন্ধ্যাবেলা স্বামী পরেশনাথ বাড়ি এলে সুমিত্রা ছেলের খুশির খবর টা জানায়…পরেশনাথ তাতে বিন্দুমাত্র উৎসাহ দেখায় না. বলে..”হুহঃ…পড়াশোনায় আবার ফার্স্ট সেকেন্ড…মাল কড়ি দিয়েছে তো দাও আমায়….কাজে লাগবে….”
সুমিত্রা, বরের কথা শুনে মন খারাপ হয়ে যায়..মনে মনে বলে…এইসব মানুষের কাছে…লেখা পড়ার কোনো মূল্য নেই..যাইহোক…ছেলের এই খবর টা বরকে না শোনালেও পারতো.
যতই হোক ছেলের বাবা..সে..তাই শুনিয়ে ছিলো…কিন্তু এমন উত্তর পাবে তার আশা ছিলো না..
এমনিতেও পরেশনাথকে আজ একটু উদাসীন লাগছিলো…
সুমিত্রা জানে যে পরেশনাথ এমন করে থাকলে ওর মদ চাই…আর মদ খেলেই মাতলামো….তার উপর শারীরিক প্রহার…
সুতরাং এইরকম পরিস্থিতিতে স্বামীকে মদ থেকে দূরে রাখতে হবে…
আজ এমনি তেও ছেলের পরীক্ষার ফল ভালো হওয়ায় মন ভালো আছে তার..অনেক দিন স্বামী সুখ পাইনি সে.
তাই স্বামীকে বাইরে যেতে দিলে হবে না…এক ঢিলে দুই শিকার..
রান্না ঘর থেকেই একবার উঁকি মেরে দেখে নেয়…সঞ্জয় কি করছে…
“ছেলেটা এখন মনোযোগ দিয়ে একনাগাড়ে পড়ছে..”
আর স্বামী পরেশনাথ…সেতো বাইরে যাবার প্রস্তুতি নিচ্ছে…”না…বাইরে গেলেই বিপদ..”
সুমিত্রা রান্নাঘর থেকে বেরিয়ে…পরেশনাথের কাছে চলে যায়..কোনো রকম ছলনা করে তাকে ঘরে বসিয়ে রাখতে হবে…
এইতো সবে সন্ধে হলো…রাত হতে এখন অনেক দেরি…আর ছেলেও বড়ো হয়েছে…ওর সামনে কিছু করা..ছিঃ ছিঃ..
পরেশনাথও ইদানিং নারী গমন করে নি…
আজ সুমিত্রার ইচ্ছা জেগেছে…একটু ভালোবাসা আদায় করে নিতে চায় সে..তার নিম্নাঙ্গ চিন চিন করছে.
“কোথায় যাও তুমি….এখন…?? পরেশনাথ কে প্রশ্ন করে সুমিত্রা..
“আমার যেখানে ঠিকানা…” তাচ্ছিল্ল স্বরে জবাব দেয়..পরেশনাথ..
সুমিত্রা ওর স্বামীর গা ঘেঁষে দাঁড়িয়ে যায়….”আজ যেওনা গো…” একটা বিনীত সুলভ মধুর ধ্বনিতে স্বামীকে আর্জি জানায় সে..
পরেশনাথ একটু আশ্চর্য হয়ে বউয়ের দিকে তাকায়…দেখে সুমিত্রার চোখে…গভীর যৌন ক্ষুধা…
সুমিত্রার পটলচেরা চোখ ঢুলুঢুলু…সে আজ তার স্বামীর বাহুতে ঢোলে পড়তে চায়…
পরেশনাথ নেহাতই একজন মাতাল…তানাহলে সুমিত্রার মতো এমন সুন্দরী কামুকী বউ ছেড়ে সূরার সন্ধানে কেউ বেরোই..?
নিজের লিঙ্গে একটা ভারী ভাব অনুভব করল সে…
আজ হয়তো বউকে একটা চরম গাদন দিতে হবে…মনে মনে..ভাবে…
মুচকি দুস্টু হেঁসে…মাথা নাড়িয়ে সাই দেয় পরেশনাথ..
সঞ্জয়ের মা তখন আশস্থ হয়ে রান্নাঘরে চলে যায়….তাড়াতাড়ি রান্নার পাঠ চুকিয়ে ফেলতে হবে.
ছেলেকে খাইয়ে..ঘুম পাড়িয়ে দিতে হবে….
উফঃ……নিজের যোনিতে একটা চাপা ভাব অনুভব করছিলো সে….
সামনে সঞ্জয়কে দেখে সুমিত্রা একটু থতমত খেয়ে যায়..
“মা…তুমি কতো দেরি করে দিলে…” সুমিত্রাকে উদ্দেশ্য করে বলে ওঠে সঞ্জয়…
“হ্যাঁ রে…ওই দাদুটার..গায়ে হাত পায় ব্যাথা হচ্ছিলো তো তাই একটু মালিশ করে দিচ্ছিলাম”.
মায়ের কথা শুনে আর কোনো প্রশ্ন করে না সঞ্জয়…
সুমিত্রা সামনে এগোতে থাকে…পেছনে ছেলে সঞ্জয়…
হাঁটতে হাঁটতে সুমিত্রার হাতে মুঠি করা একটা কাগজে মোড়া জিনিসের দিকে নজর যায়…
মায়ের হাতে থেকে কেড়ে নেবার চেষ্টা করে সঞ্জয়, বলে “মা ওটা কি??… আমার জন্য কিছু আছে ওতে…”.
সুমিত্রা তখুনি নিজের হাত উপরে তুলে, ছেলের থেকে ওটাকে সরিয়ে নেয়…বলে, “ওটা কিছু না…”
সঞ্জয় আবার চুপ করে যায়…মাকে কিছু আর প্রশ্ন করে না…হাঁটতে হাঁটতে বাড়ির দিকে রওনা হয়.
মনের কৌতূহল মনেই রেখে দেয়…
হয়তো ওতে সত্যিই তার জন্য মা চকলেট নিয়ে যাচ্ছে…বাড়ি গিয়ে দিয়ে দেবে.
সারা রাস্তা সুমিত্রা ওটাকে ছেলের থেকে দূরে রেখেছিলো…
অবশেষে, বস্তির বাইরে একটা ঝোঁপে , এদিক ওদিক তাকিয়ে সে ওটাকে ছুড়ে ফেলে দেয়..
সঞ্জয়ের তা দেখে মন খারাপ হয়ে যায়…
ভেবে ছিল ওর জন্য চকলেট আছে ওতে কিন্তু তা নয়…
বাড়িতে এসে মা প্রথমেই কুয়ো তলায় জল দিয়ে নিজের হাতটা ভালো করে ধুয়ে নেয়..
সঞ্জয়ের মনে সন্দেহ হয়….কি ছিল ওটাতে….কৌতুহলী মনে নানা রকম প্রশ্ন উঠতে থাকে.
আজ সারাদিন তার কাছে একপ্রকার পরীক্ষার মতো কেটে গেছে…নানান ধরণের অজ্ঞাত প্রশ্ন তার কাছে এসেছে…যার উত্তর তার কাছে নেই…
এমন সংকট তার জীবনে এই প্রথম…
যাক আজ অনেক দেরি হয়ে গেছে…খেলাধুলার সময় নেই…মা এখন ঘরেই থাকবে..তাকে আর বাইরে যেতে দেবেনা…
থাক খেয়ে দেয়ে না হয় দুপুর বেলা মাঠে খেলতে যাবো..
আরে আমি তো ভুলেই গেলাম…ঐযে মা ওখানে কি ফেলেছিলো…ওটা আমি দেখবো…বিকেল বেলা…সাথে আসলাম কেউ নিয়ে যাব..
মনে মনে বলে সঞ্জয়…
তখনি, “সঞ্জয়…তাড়াতাড়ি স্নান করে নে…অনেক বেলা হয়ে গেল…”
মায়ের ডাক পায়…
“হ্যাঁ মা..যাই..” বলে সঞ্জয় স্নান করতে চলে যায়.
দুপুর বেলা খাওয়া দাওয়ার পর সঞ্জয় মাঠে খেলতে যাবে…তখনি ঘরে মায়ের দিকে নজর যায়…দেখে অনেক গুলো টাকা মা হাতে নিয়ে গুনছে…
সুমিত্রা চোখ তুলে দেখে সঞ্জয়…বাইরে যাবার প্রস্তুতি নিচ্ছে…”এই শোন…বাবু…”
বলে মা দেখে নেয় ছেলেকে…
“হ্যাঁ মা বলো…” বলে সঞ্জয়.
“এই নে..তোর টিউশনের টাকা…আজ বিকালে তোর মাস্টারমশাই কে দিয়ে দিবি…ভুলে যাসনা যেন…আর ঠিক মতো রাখিস…টাকা পয়সা হারিয়ে দিসনা যেন..”
বলে সুমিত্রা, সঞ্জয়ের হাতে টাকা ধরিয়ে দেয়…
“না মা…আমি টাকা হারাবো না…তুমি চিন্তা করোনা…আমি ঠিক মাস্টারমশাই কে টাকা টা দিয়ে দেব..”.সঞ্জয় তার মাকে বলে..
সঞ্জয় জানে…মায়ের কষ্টের উপার্জিত টাকা…তাই সে যত্ন করে…কলেজের ব্যাগ খুলে তাতে একটা পেন্সিল বক্স আছে ওতে রেখে দেয়…
“মা আমি এখন খেলতে যাব..?? “
অনুমতি নেয় সঞ্জয়…
“হ্যাঁ যা…তবে বেশি দেরি করিস না…পড়তে যেতে হবে তোকে..” বলে মা সুমিত্রা.
আজ মাঠে আসলামের সাথে দেখা হয়..সঞ্জয় তাকে খুশির খবর দেয়…যে আজ সে মাস্টার মশাই এর টাকা মিটিয়ে দেবে…
বিকালে খেলা শেষে বাড়ি ফিরে এসে, তাড়াতাড়ি তৈরী হয়ে নেয়..টিউশন পড়া আছে..
ততক্ষনে সে ওই ঝোঁপের কথা ভুলেই গেছে…
টিউশন থেকে ফেরার সময় মনে এলো…তখন মা কি যেন একটা সেখানে ফেলে ছিল…ওটা আমার যেয়ে দেখার ছিল কিন্তু এখন দেখা যাবে কি…?
সাথে আসলাম ছিল…
“চল না আসলাম…একটু ওই দিকটা যাব…” বলে সঞ্জয়.
“কেন রে…কি আছে ওদিকে…” বলে আসলাম.
“চল না তুই আমার সাথে, দরকার আছে…” আবার বলে সঞ্জয়.
“না রে আজ এখন যাব না…এমনি তেই সন্ধ্যা হয়ে গেছে…তাড়াতাড়ি বাড়ি ফিরতে হবে..” বলে আসলাম বস্তির দিকে এগোতে থাকে..
সঞ্জয় ও মনে মনে বলে, আজ অনেক দেরি করে ফেলেছে..এমনিতেও অন্ধকারে ঝোঁপে ঢোকা ঠিক হবে না…কাল মনে করে একবার আসতে হবে…
বাড়ি গিয়ে সঞ্জয় দেখে ঘরে মা নেই.. দরজায় তালা…একটু চঞ্চল হয়ে ওঠে মন.
মা আবার এখন কোথায় গেলো…মনে মনে বলে ওঠে..
কিছু ক্ষণ পরেই দেখে মা..থলি হাতে করে বাড়ির দিকে আসছে…
“মা তুমি কোথায় গিয়েছিলে..? “ ব্যাকুল হয়ে প্রশ্ন করে সে..
“এই তো বাজার গিয়েছিলাম…” বলে সুমিত্রা..
মায়ের হাতের থলিতে দেখে…একটা পলিথিনে মুরগির মাংস…
উঃ অনেক দিন পর সে আজ মাংস খেতে পাবে..কি মজা…
পরক্ষনেই সঞ্জয়ের বাবাও রিক্সার হর্ন বাজাতে বাজাতে বাড়ি ফেরে..
রাতের বেলা সুমিত্রা ছেলের জন্য মাংস রান্না করে…..সঞ্জয়, মায়ের হাতের রান্না খুব পছন্দ করে..বেশ তৃপ্তি খায়..
খাবার সময় সুমিত্রা ওর ছেলের পাশে বসে থাকে…ছেলেকে খেতে দেখে ওর মন ভরে ওঠে…তাছাড়া বাড়িতে মাছ মাংস খুব কমই রান্না হয়.
সঞ্জয় একটু বেশি..মাছ মাংস রান্না পছন্দ করে..
সুমিত্রা আজ সারাদিনের সব ঘটনাবলী ভুলে গিয়ে…হাঁটুর মধ্যে মাথা দিয়ে, ঘাড় হিলিয়ে ছেলেকে খেতে দেখে…
পরেরদিন সকালে যথারীতি সুমিত্রা আর ওর বর পরেশনাথ নিজের কাজে বেরিয়ে যায়..
সঞ্জয় আজ মনে রেখেছে..তাকে ওখানে যেতে হবে…হ্যাঁ তবে কলেজ ফেরার পর…
আজ আসলাম কলেজ আসেনি…সুতরাং তাকে একাই যেতে হবে..
সারাদিন কলেজ করার পর বিকেল বেলা বাড়ি ফেরার সময় সঞ্জয় ওই ঝোঁপটার দিকে পা বাড়ায়..
এ রাস্তা সচরাচর ফাঁকায় থাকে…সেহুতু তার ঝোঁপে ঢুকতে কোনো বাধা হলো না.
হামাগুড়ি দিয়ে অনায়াসে সে ঝোঁপের মধ্যে প্রবেশ করল..
তারপর সে এদিকে ওদিকে তাকাতে থাকে…কই কোথায় সেই কাগজ মুড়ি…দেখতে পায়না সে.
স্থির হয়ে একবার মনে করার চেষ্টা করে…ঠিক কোথায় সেই কাগজ টা পড়ে ছিল..
হ্যাঁ ওই তো…
কিছুদূরে…শুকনো পাতার আড়ালে…হ্যাঁ ওখানেই পড়ে রয়েছে…সেই কাগজ খানি..
তবে সেটা ওর শরীর থেকে একটু দূরে হবে..
মন যখন জিজ্ঞাসু থাকে, কোনো কিছুই বাধা হয়ে দাঁড়ায় না..
এ এক রহস্য উজ্জাপনের খেলা…মনের মধ্যে বড়ো কৌতূহল তৈরী হয়ে গিয়েছিল..
ওটা কি…?
মা সেদিন ছুড়ে ফেলে দিয়েছিল…
সঞ্জয় হামাগুড়ি দিয়ে, নিজের মেরুদন্ড বেঁকা করে…ডান হাত অনেক টা প্রসারিত করে ওই কাগজ তার কাছে পৌঁছোয়.
ঝাপটে ধরে ওই কাগজ খন্ডকে মুঠির মধ্যে নিয়ে সটান বেরিয়ে আসে ঝোপ থেকে…
আহঃ…এ এক খেলা জয়ের মতো আনন্দ…
মা সেদিন এটাকে হাতে নিতে দেয়নি…
কি জিনিস আছে এতে…বাইরে থেকে মনে হচ্ছে কোনো নরম জিনিস…পেলপেলে.
সে আর ধরে রাখতে পারলোনা নিজেকে…দেখি কি আছে..
আসতে আসতে কাগজের ভাঁজ খুলতে লাগলো সঞ্জয়..
বেরিয়ে পড়লো একটা অজ্ঞাত জিনিস..যেটা সে আগে কখনো দেখেনি…
একটা লম্বা বেলুনের মতো…সাদা রঙের…
হাত দিয়ে নাড়লে কেমন তেল তেল করে…
একি বেলুন নাকি….মনে মনে করে সঞ্জয়.
মেলার সময় যে বড়ো গোল বেলুন পাওয়া যায়….না ফোলালে ঠিক ঐরকম…তবে এটা ওই বেলুন গুলোর থেকে অনেক লম্বা…অনেক বড়ো…
ভালো করে সঞ্জয় ওটাকে পর্যবেক্ষণ করার চেষ্টা করে..
বেশ তেল তেলে এই বেলুন টা…
আর এর ভেতরে এই সাদা রঙের জিনিস টা কি…?
ছিঃ…..বলে সঞ্জয় ওটাকে আবার ঝোঁপের মধ্যে ছুঁড়ে দেয়…আর সেটা একটা কাঁটা ঝোঁপের ডালে লেগে…ওই সাদা জিনিসটা টপটপ করে নিচে পড়তে থাকে…
সঞ্জয়…মুখ থেকে একরাশ থুতু বের করে ওয়াক থু…ফেলে দেয়…
নোংরা…নোংরা বলে…সেখান থেকে চলে আসে….
এবার তার অনুসন্ধিৎসু মন আবার এক নতুন কৌতূহলে ঢুকে পড়ে.
এ আবার কেমন জিনিস…ওটা মা নিয়ে কি করছিলো…হয়তো ওটা ওই দুস্টু লোকটার মাকে দিয়েছিলো ফেলে দেবার জন্য….তবে সেদিন বলল মা তেল মালিশ করছিলো…কিন্তু ও ভাবে কেউ তেল মালিশ করে কি…?
মনে মধ্যে নানা রকম শঙ্কা এই ক্ষুদে সঞ্জয়ের.
বাড়ি ফিরে মায়ের দিকে চেয়ে দেখে…সঞ্জয়….মায়ের বড়ো বড়ো চোখ..গাঢ় লম্বা ভ্রু আর টিকালো লম্বা নাক..কপালে ওই বড়ো বিন্দুর মতো লাল সিঁদুরের টিপ…
“কি দেখছিস অমন করে….” সুমিত্রা বলে ওঠে ছেলে সঞ্জয় কে…
“না…মা…কিছুনা…” বলে সঞ্জয় হাত পা ধুতে চলে যায়…
সঞ্জয়ের মন এই কয় দিন ধরে বেশ ভালোই রয়েছে…., কারণ ওর বাবা অনেক দিন হলো মায়ের সাথে ঝগড়া করেনি…বাবা মদ খাওয়া টাও কমিয়ে দিয়েছে..
সে এখন প্রতিদিন কলেজে যায়…বন্ধু দের সাথে খেলা করে আর টিউশন পড়তে যেতেও কোনো অসুবিধা হয়না…কারণ মা তার টাকা শোধ করে দিয়েছে.
সঞ্জয় ভেবেছিলো যেহেতু বাবা আর মায়ের সাথে ঝগড়া অশান্তি করে না সেহেতু মা বেশ হাঁসি খুশি থাকবে..
অনেক দিন হয়ে গেলো…সেই ছোট্ট বেলায় মা তাকে শহর দিকে ঘোরাতে নিয়ে যেত..জামাকাপড় কিনে দিত..কত লজেন্স…আমাকে এনে দিত..
তখন কত ভালোবাসতো মা তাকে..
সন্ধে বেলা সেই চাঁদ মামার গল্প শোনাতো…”আমি মায়ের কোলে বসে সেই গল্প শুনতে শুনতে কোথায় যেন হারিয়ে যেতাম..”
আর সেই রাজা রানীর গল্প…যেটা শুনিয়ে মা আমাকে ঘুম পাড়াতো..
তারপর এখন বড়ো হয়ে গেছি…মা আর আগের মতো হাঁসি খুশি থাকেনা..শুধুই চিন্তিত দেখায়. সঞ্জয়…মায়ের সাথে কাটানো সেই দিন গুলোর কথা মনে করে.
যত দিন থেকে সে জ্ঞানমান হয়েছে….মায়ের প্রতি বাবার অত্যাচার সে দেখে আসছে…সহ্য করে আসছে একপ্রকার..
কিন্তু বেশ তো কয়েক দিন হয়েগেলো কই বাবা তো আর আগের মতো অশান্তি করেনা…
তাহলে মায়ের ও ওই রূপ মন দুঃখী করে থাকার তো কোনো কথা নয়…
বিশেষ করে সেদিন টার পর থেকে মা আরও ভাবুক থাকে…
সঞ্জয়ের ভালোবাসা তার মায়ের প্রতি প্রগাঢ়…
সেদিন ওই দুস্টু বৃদ্ধ লোকটা মায়ের সাথে কি যেন করছিলো….এখন সেটা মনে পড়লে ভীষণ রাগ হয় লোকটার প্রতি…একটা অজ্ঞাত হিংসা মনের মধ্যে চলে আসে.
সে মায়ের ভালোবাসা কারো সাথে ভাগ করে নিতে চায়না, মায়ের প্রতি ভালোবাসার অধিকার শুধু তার… সে চায় মা শুধু তাকেই ভালোবাসুক..
একদিন বিকেলবেলা সঞ্জয় খেলাধুলা করে এসে মাকে সুধায়…”মা তুমি অমন দুঃখী মন করে কেন থাকো…আমার ভালো লাগেনা…”
সুমিত্রা তখন ছেলে সঞ্জয়ের দিকে তাকায় আর মৃদু হাঁসে……”কই রে…আমি মন দুঃখী থাকি….এই তো…হাসলাম…” বলে ছেলের গালে হাত বুলিয়ে দেয়..
“না মা…আমি চাইনা তুমি সবসময় ঐরকম চুপচাপ করে বসে থাক…তুমি বলো আমি কি করলে তুমি অনেক অনেক খুশি হবে…”
ছেলের কথা শুনে সুমিত্রা একটু ভাবুক হয়ে ওর কাছে এসে বলে…”কই তুই তোর মায়ের কথা ভাবিস…তুই তো সারাদিন খেলাধুলা নিয়েই ব্যাস্ত থাকিস…পড়াশোনা ঠিক মতো করিস..?? করিস না…”
তুই ভালো করে পড়াশোনা কর আর অনেক বড়ো মানুষ হয়ে দেখা…এতেই আমি অনেক খুশি হবো…
সুমিত্রার কথা গুলো ছেলে সঞ্জয় অনেক গভীর মনোযোগ দিয়ে শোনে…
বলে..”হ্যাঁ মা…আমি আরও ভালো করে পড়াশোনা করবো মা…তুমি দেখে নিও আমি বড়ো হয়ে চাকরি করবো…আর অনেক টাকা পয়সা তোমার হাতে তুলে দেব..”
সে কথা শুনে সুমিত্রা একরাশ হাঁসি হেঁসে দেয়….যাইহোক আর কেউ তার পাশে থাকুক না থাকুক ছেলে তার সাথে আছে…তার দুঃখ কষ্ট বোঝে…
না হলে ওই শয়তান স্বামী তার জীবন টাকে নরক বানিয়ে তুলেছে..
ছেলে কে ঠিক মতো মানুষ করার জন্য সে সবরকম প্রয়াস করতে রাজি..কি আর করাযাবে ভাগ্যই যে তার প্রতি বিরূপ…তানাহলে সামান্য কিছু টাকা কড়ি উপার্জনের জন্য তাকে অনৈতিক পথ বেছে নিতে হচ্ছে…
গ্রামে দরিদ্র মা বাবা ভেবেছিলো…ছেলে শহরে থাকে…পয়সা কড়ি ঠিকঠাক কামিয়ে নেয়…মেয়ের কোনো অভাব হবে না…
মিষ্টি দেখতে মেয়ে বলে কতইনা সম্বন্ধ এসেছিলো তার জন্য…হ্যাঁ গায়ের রং সামান্য দাবা তাতেও কোনো অসুবিধা হচ্ছিলো না..
লক্ষী স্বভাবের মেয়ে সুমিত্রাকে দেখে যে কেউ মুগ্ধ হয়ে যেত…
শেষের দিকে অবিশ্যি বাবা মা এ সম্বন্ধে অরাজি হতে শুরু করে দিয়েছিল…কলকাতা বেজায় দূর তাদের গ্রাম থেকে….বাপ্ জন্মেও কেউ যায়নি ওখানে…এতো দূরে মেয়েকে বিয়ে দেওয়া কি ঠিক হবে…
কিন্তু ঐযে আত্বিয়স্বজনের চাপে পড়ে…এমন জায়গা আর ছেলে পাওয়া যাবেনা সচরাচর..
সে যাইহোক এখনকার পরিস্থিতি সুমিত্রা কে মেনে নিতে হয়েছে..শুধু ছেলের মুখ তাকিয়ে..
“সঞ্জয় তুই এবার পড়তে বস….সন্ধ্যা হতে চলেছে…” সুমিত্রা হাঁক দিয়ে ছেলেকে নির্দেশ দেয়.
তারপর ও নিজে সেখান থেকে উঠে গিয়ে কুয়ো তলায় চলে যায়…সন্ধ্যা আরতি করতে হবে…ঠাকুরকে ধুপ দেখানোর সময় এসে গেছে…
ছেলের জন্য, নিজের জন্য…আর স্বামীর জন্য প্রার্থনা করে সে.
আসতে আসতে সময় এভাবেই পেরোতে থাকে…
সঞ্জয়ের বাৎসরিক পরীক্ষার আরম্ভ হতে আর একমাস বাকি…
তাই মায়ের শক্ত আদেশ বাইরে বেশি ক্ষণ থাকা যাবেনা…শুধু পড়া আর পড়া…খেলাধুলা বেশি ক্ষণ না…আর পাড়ার ছেলেদের সাথে মেলামেশা তো এই কয়দিনে একদম বন্ধ..
তাই অনিচ্ছা সত্ত্বেও তাকে বই নিয়ে বসে থাকতে হয়..
ওর পরীক্ষা চলাকালীন মা খুব সকালে রান্নাবান্না করে তারপর নিজের কাজে যায়..
সঞ্জয়ের পরীক্ষা বেশ ভালোই হচ্ছে..যা যা সে মুখস্ত করে যায় সেই সেই গুলোই পরীক্ষাতে আসে..
পরীক্ষার পর একমাস ছুটি হলে তারকাছে অফুরন্ত সময় থাকে…নিজের খেলাধুলো নিয়ে ব্যাস্ত থাকার জন্য.
মাঝেমধ্যে মায়ের সাথে মায়ের কাজের বাড়ি গুলো তে যাবার বায়না করে সঞ্জয়, কিন্তু না সুমিত্রা তার ছেলেকে নিজের সাথে নিয়ে যেতে একদম নারাজ…
একদিন সঞ্জয় খেলার ছলে আবার ওই ঝোঁপটার দিকে চলে যায়…সেদিন টার কথা মনে পড়ে যায় তার.
ওই অজ্ঞাত জিনিসটা কি ছিলো মনে আবার জিজ্ঞাসা উদ্রেক হয়.
বেলুন ছিলোনা ওটা নিশ্চিত সে…কারণ ওই রকম বেলুন উড়ে বেড়াতে আগে বা পরে কখনো দেখেনি..
হয়তো একমাত্র মা তাকে এই প্রশ্নের উত্তর দিতে পারবে..
কিন্তু…মনে মনে একটা অজানা ভয় তৈরী হয়..
মা তাকে বকবে না তো…যদি জানতে পারে…আমি এদিকে এসেছি…অথবা সে যদি বলে ফেলে যে সে ওই জিনিসটাকে হাতে নিয়েছে.
মাকে মিথ্যা কথা কখনো বলে না সঞ্জয়.
মার ও খেতে হতে পারে মায়ের কাছে তার জন্য…না না…থাক আমি জিজ্ঞাসা করব না..
একমাস পর সঞ্জয়ের বাৎসরিক পরীক্ষার রেজাল্ট বের হয়….
খুশির বিষয় হলো…. সঞ্জয় এবারের পরীক্ষায় প্রথম স্থান অধিকার করেছে…সে এখন সপ্তম শ্রেণীতে উত্তীর্ণ হয়েছে..
কলেজ থেকে বাড়িতে এসে মাকে সে খবর জানাতে…খুবই খুশি হয় সুমিত্রা…দুই চোখ দিয়ে জল চলে আসে তার…
“মা…তোমাকে হেড মাস্টারমশাই পরিতোষ স্যার কালকে ডেকেছেন…” সুমিত্রা কে উদ্দেশ্য করে বলে ওঠে সঞ্জয়..
“কেন রে…” সুমিত্রা একটু অবাক হয়ে প্রশ্ন করে..
“কি জানি মা…হয়তো আমি ফার্স্ট হয়েছি তাই…তোমাকে কিছু বলবে..” বলে সঞ্জয়..
ঠিক আছে তুই যখন কলেজ যাবি, আমাকে ডেকে নিস্… বলে সুমিত্রা
পরেরদিন যথা সময়ে সঞ্জয় তার মাকে নিয়ে কলেজ চলে যায়…
সেখানে অনেক ছাত্র ওদের মা বাবাকে সাথে করে নিয়ে এসেছে…আজ কৃতি ছাত্রদের সম্বর্ধনা জানানো হবে..
তবে সেখানে বেশিরভাগ ছাত্রই বস্তি এলাকার…
অবশেষে সঞ্জয়কে সম্বর্ধনা জানানোর সময় আসে…
সে আর মা সুমিত্রা কলেজের হেড মাস্টার এর কাছে যায়..
“আপনার ছেলে তো খুবই ভালো রেজাল্ট করেছে এবার…আমরা খুব খুশি…এতে বাবা মায়ের সাথে সাথে কলেজের ও শুনাম হয়.”
সুমিত্রাকে উদ্দেশ্য করে হেড মাস্টার বক্তব্য রাখেন..
সুমিত্রা অনেক ভাবুক হয়ে ওঠে…”বলে স্যার এসব আপনাদের কৃপা…তানাহলে আমাদের মতো গরিবের ছেলে মেয়ে দের কথা কারা চিন্তা ভাবনা করে বলুন..”
হেড মাস্টার মশাই আপ্লুত হয়ে বলেন..”আহঃ…না না..এমন একদম মনে করবেন না…তাছাড়া আপনার ছেলে খুবই মনোযোগী আর জিজ্ঞাসু…দেখবেন ছেলে মায়ের মান ঠিক রাখবে…”
সুমিত্রা আবার বলে “আশীর্বাদ করুন স্যার….ছেলে যেন বড়ো হতে পারে..”
“হ্যাঁ নিশ্চই নিশ্চই…তবে তার আগে মায়ের আশীর্বাদ সবচেয়ে বড়ো….” বলে উনি সঞ্জয়কে নির্দেশ দেন মায়ের পা ছুঁয়ে প্রণাম করে আশীর্বাদ নেবার জন্য…
তারপর সঞ্জয় নিজের মায়ের কোমল চরণস্পর্শ করে মাথায় নেয়…সুমিত্রাও ছেলে সঞ্জয়কে প্রাণ ভরে আশীর্বাদ করে..
প্রথম হওয়ার পুরস্কার স্বরূপ সঞ্জয় কলেজ থেকে কয়েকজোড়া খাতা আর পেন উপহার পায়..
সুমিত্রা জানে সঞ্জয় বস্তির সব মাথামোটা দস্যি ছেলেদের সাথে প্রতিযোগিতায় প্রথম হয়েছে…তাতে ওর তেমন খুশি হওয়ার কারণ নেই..
সন্ধ্যাবেলা স্বামী পরেশনাথ বাড়ি এলে সুমিত্রা ছেলের খুশির খবর টা জানায়…পরেশনাথ তাতে বিন্দুমাত্র উৎসাহ দেখায় না. বলে..”হুহঃ…পড়াশোনায় আবার ফার্স্ট সেকেন্ড…মাল কড়ি দিয়েছে তো দাও আমায়….কাজে লাগবে….”
সুমিত্রা, বরের কথা শুনে মন খারাপ হয়ে যায়..মনে মনে বলে…এইসব মানুষের কাছে…লেখা পড়ার কোনো মূল্য নেই..যাইহোক…ছেলের এই খবর টা বরকে না শোনালেও পারতো.
যতই হোক ছেলের বাবা..সে..তাই শুনিয়ে ছিলো…কিন্তু এমন উত্তর পাবে তার আশা ছিলো না..
এমনিতেও পরেশনাথকে আজ একটু উদাসীন লাগছিলো…
সুমিত্রা জানে যে পরেশনাথ এমন করে থাকলে ওর মদ চাই…আর মদ খেলেই মাতলামো….তার উপর শারীরিক প্রহার…
সুতরাং এইরকম পরিস্থিতিতে স্বামীকে মদ থেকে দূরে রাখতে হবে…
আজ এমনি তেও ছেলের পরীক্ষার ফল ভালো হওয়ায় মন ভালো আছে তার..অনেক দিন স্বামী সুখ পাইনি সে.
তাই স্বামীকে বাইরে যেতে দিলে হবে না…এক ঢিলে দুই শিকার..
রান্না ঘর থেকেই একবার উঁকি মেরে দেখে নেয়…সঞ্জয় কি করছে…
“ছেলেটা এখন মনোযোগ দিয়ে একনাগাড়ে পড়ছে..”
আর স্বামী পরেশনাথ…সেতো বাইরে যাবার প্রস্তুতি নিচ্ছে…”না…বাইরে গেলেই বিপদ..”
সুমিত্রা রান্নাঘর থেকে বেরিয়ে…পরেশনাথের কাছে চলে যায়..কোনো রকম ছলনা করে তাকে ঘরে বসিয়ে রাখতে হবে…
এইতো সবে সন্ধে হলো…রাত হতে এখন অনেক দেরি…আর ছেলেও বড়ো হয়েছে…ওর সামনে কিছু করা..ছিঃ ছিঃ..
পরেশনাথও ইদানিং নারী গমন করে নি…
আজ সুমিত্রার ইচ্ছা জেগেছে…একটু ভালোবাসা আদায় করে নিতে চায় সে..তার নিম্নাঙ্গ চিন চিন করছে.
“কোথায় যাও তুমি….এখন…?? পরেশনাথ কে প্রশ্ন করে সুমিত্রা..
“আমার যেখানে ঠিকানা…” তাচ্ছিল্ল স্বরে জবাব দেয়..পরেশনাথ..
সুমিত্রা ওর স্বামীর গা ঘেঁষে দাঁড়িয়ে যায়….”আজ যেওনা গো…” একটা বিনীত সুলভ মধুর ধ্বনিতে স্বামীকে আর্জি জানায় সে..
পরেশনাথ একটু আশ্চর্য হয়ে বউয়ের দিকে তাকায়…দেখে সুমিত্রার চোখে…গভীর যৌন ক্ষুধা…
সুমিত্রার পটলচেরা চোখ ঢুলুঢুলু…সে আজ তার স্বামীর বাহুতে ঢোলে পড়তে চায়…
পরেশনাথ নেহাতই একজন মাতাল…তানাহলে সুমিত্রার মতো এমন সুন্দরী কামুকী বউ ছেড়ে সূরার সন্ধানে কেউ বেরোই..?
নিজের লিঙ্গে একটা ভারী ভাব অনুভব করল সে…
আজ হয়তো বউকে একটা চরম গাদন দিতে হবে…মনে মনে..ভাবে…
মুচকি দুস্টু হেঁসে…মাথা নাড়িয়ে সাই দেয় পরেশনাথ..
সঞ্জয়ের মা তখন আশস্থ হয়ে রান্নাঘরে চলে যায়….তাড়াতাড়ি রান্নার পাঠ চুকিয়ে ফেলতে হবে.
ছেলেকে খাইয়ে..ঘুম পাড়িয়ে দিতে হবে….
উফঃ……নিজের যোনিতে একটা চাপা ভাব অনুভব করছিলো সে….