02-03-2024, 07:48 PM
আয়ুষী – নিজের ঘরে ঢুকেই বিছানার উপরে নিজের ব্যাগ আর ফোনটাকে ছুঁড়ে ফেলল ও। তারপর দরজাটাকে বন্ধ করে বিছানার উপরে ধপাস করে বসে পড়ল। কেমন যেন গুমোট গরম লাগছে। ফ্যানটা ফুলস্পিডে ঘোরা সত্ত্বেও একটুও হাওয়া ওর গায়ে লাগছে না। মাথাটাও কাজ করা বন্ধ করে দিয়েছে। একটা সিগারেট খাওয়া দরকার। তা নাহলে মাথাটা ঠান্ডা হবে না কিছুতেই। ব্যাগ থেকে সিগারেটের প্যাকেট আর লাইটারটা বের করে একটা সিগারেট ধরালো। তারপর তাতে একটা টান দিয়ে লম্বা একটা ধোঁয়া ছাড়ল। ধোঁয়ার অস্পষ্ট কুন্ডলীটা ওর মুখ থেকে বেরিয়ে জানালার দিকে ছুটে বেরিয়ে এল। পরপর দু তিনটে টান মারার পরেও মাথাটা কিছুতেই ঠান্ডা হচ্ছে না। বারবার তিন্নির বলা কথাগুলো ওর কানে বাজছে। যতই বাড়ছে, ততই মাথাটা ঠান্ডা হওয়ার জায়গায় গরম হয়ে যাচ্ছে। রাত অনেকটাই হয়েছে বোঝা যাচ্ছে। কিন্তু ক’টা বাজছে ও জানে না। একটা হতে পারে। দেড়টা হওয়াটাও কোনো আশ্চর্যের বিষয় নয়। আবার দুটো হলেও ওর কিছু করার নেই। কিন্তু খিদেটা তো পাচ্ছে। কিন্তু খাওয়ার ইচ্ছে হচ্ছে না। অদ্ভুত একটা বৈপরিত্য শরীরের মধ্যে টের পাচ্ছে ও। যেমন মনের মধ্যেও হচ্ছে। যেমন চোখের কোণদুটো হু হু করে জ্বলছে। বালিশটাকে শক্ত করে আঁকড়ে ধরে কাঁদতে ইচ্ছে হচ্ছে। কিন্তু পারছে কই। কাঁদার পরিবর্তে ঠোঁটের কোণে জ্বলন্ত সিগারেটটায় উপর্যুপরি কয়েকটা টান দিয়ে, সেটাকে টান মেরে ছুঁড়ে ফেলে দিল জানালার বাইরে। আজকের সন্ধ্যেটাকেও এইভাবে টান মেরে ছুঁড়ে ফেলে দিতে পারলে ওর আরোও ভালো লাগত। কিন্তু সেটাই বা পারছে কই। আর পারছে না বলেই হয়তো রাগটা তিন্নির চেয়েও নিজের উপরেই ঘুরেফিরে আসছে বারবার। সেই অনুভূতিটুকুর জন্যই হয়তো রাগটাকেও ঝেড়ে ফেলতে পারছে না মাথা থেকে। কিম্বা শরীর থেকে। কিম্বা ঐ সিগারেটটার মতোই পোড়া মনটা থেকেও।
দিনটা অন্যদিনের থেকে কিছুটা হলেও অন্যরকম ভাবেই শুরু হয়েছিল আজকে। দিনের বেলায় ও কটায় বাড়ি থেকে বের হয়, আর রাত্রিবেলায় কটায় বাড়ি ফেরে, সেটা যখন ও নিজেই জানে না, তখন বাড়ির অন্যদের সেই বিষয়ে দোষারোপ করাটা বোধহয় বাতুলতা। ও মাঝে মাঝে ভাবে বাংলার ‘বাউন্ডুলে’ শব্দটা বোধহয় ওকে দেখেই আবিষ্কৃত হয়েছিল। বাড়িতে লোক বলতে ওকে নিয়ে চারজন। বাবা-মা-ভাইয়া আর ও। ও আর ভাইয়া যমজ। কে বড়ো আর কেই বা ছোটো এই নিয়ে ও কোনোদিন মাথা ঘামায় নি। কিই বা হবে ঘামিয়ে? যদি সে বড়ো হয়, তাহলে পৃথিবী কি উত্তর দিকে ঘুরতে শুরু করবে? বাবা বলে ও নাকি ছোটোবেলা থেকেই যাকে বলে রেবেল। বাড়িতে একমাত্র ওরই সাহস আছে মায়ের চোখে চোখ রেখে কথা বলার। আর কারোর নেই। কিন্তু ইদানিং সেটাও ভালো লাগে না। কারণ কদিন ধরেই ওর কিছুই যেন ঠিকঠাক হচ্ছে না। না লিরিকস, না গিটার। না অন্যকিছু। ওদের দলটার নামও কিন্তু বাউন্ডুলে। নামটা ওরই দেওয়া তাতে কোনো সন্দেহ নেই। তিন্নি লিড ভোকালিস্ট। ও বেস গিটারে। সন্দীপন ড্রাম। আর তিন্নির দাদা তমাল কি বোর্ড। আরোও দু চারজন আছে। সেই কলেজ থেকেই ওদের ব্যান্ডের যাত্রা শুরু। একমাত্র তমালদা হচ্ছে ওদের থেকে সিনিয়ার। বাকীরা একই ক্লাসের। সেই কেজি ক্লাস থেকে। ও ওদের লিরিসিস্ট। কিন্তু কদিন ধরেই ওর মাথায় কোনো লিরিক্স আসছে না। তার কারণ বাকীরা বুঝতে না পারলেও তিন্নি কিন্তু ঠিকই পেরেছিল। ওদের দুজনকে হরিহর আত্মা বললেও হয়তো কম কিছু বলা হয়। ওরা তার থেকেও বেশী কিছু। অন্তত ও নিজে তো তাইই ভাবে। কিন্তু তিন্নি কি ভাবে? ও কোনোদিন জানতে চায়নি। ভেবেছে কিই বা হবে জেনে। কিন্তু আজ দেখছে জানলেই হয়তো ভালো হত। তাহলে মন পোড়ার যন্ত্রণাটা একটু হলেও তো কম হত। খিদেটা আবার পাচ্ছে। সেই কোন দুপুরে খেয়ে বেরিয়েছিল। এখন তো অগাধ রাত। খিদে পাওয়াটাই স্বাভাবিক। কিন্তু তাও বাইরে গিয়ে খাওয়ার ইচ্ছে করছে না। বালিশে মাথাটা রেখে শুয়ে পড়ল ও। তারপর প্যাকেটটা থেকে আরো একটা সিগারেট বের করে ধরাতে গেল। কিন্তু ধরাল না। ইদানিং ওর সিগারেটটা খাওয়া আগের থেকে বেড়ে গেছে। এটা ওকে তিন্নিই বলেছে। তারপর থেকে ও মনে মনে ঠিক করেছিল সিগারেট খাওয়া কমিয়ে দেবে। কিন্তু এখন মনে হচ্ছে সেটা হওয়ার নয়। ধীরে ধীরে চোখের পাতাগুলো বুজল ও। দিনটা শুরু হয়েছিল একটু অন্যরকম ভাবেই। ও প্রায় প্রতিরাতেই দেরী করে বাড়ি ফেরে। সঙ্গে একসেট এক্সট্রা চাবী থাকে বলে বিশেষ একটা অসুবিধা হয় না। ও যখন বাড়ি ফেরে তখন বাকীদের আক্ষরিক অর্থেই মাঝরাত। মা গজগজ করলেও টেবিলে ওর খাবার চাপা দিয়ে রাখতে ভোলে না। ঠান্ডা সেই খাবার ও খেয়েও নেয়। আজকেও নিজের রুমে ঢোকার আগে দেখেছে টেবিলে ওর প্রাপ্য খাবার ঢাকা দেওয়া আছে। কিন্তু আজ ও খায়নি। সকালে ঘুমটা ভেঙ্গে গিয়েছিল অদ্ভুত একটা আওয়াজে আর সেই সাথে মায়ের চিৎকারে। মা এরকম খুব কমই করে। আসলে করার প্রয়োজন পড়ে না। তাড়াতাড়ি উঠে বসে বাইরে বেরিয়ে এসে দেখল মা ভাইয়ার রুমের বাইরে দাঁড়িয়ে তারস্বরে চিৎকার করছে আর দরজায় ধাক্কাচ্ছে। কি না, ভাইয়া আজ নাকী দেরী করে ঘুম থেকে উঠেছে! মায়ের ন্যাকামো দেখে ওর মাথা গরম হয়ে গিয়েছিল। তারপরে মায়ের সাথে কিছুটা চিৎকার চেঁচামেচি করে আবার এসে শুয়ে পড়েছিল ও। ঘুমটা ভাঙ্গল যখন তখন দেড়টা পেরিয়ে গেছে। একেবারে স্নান করে রেডি হয়ে যখন নিজের ঘর থেকে বেরোলো, দেখল টেবিলে ওর খাবার ঢাকা আছে। নিঃশব্দে খেয়ে বেরিয়ে পড়েছিল ঘর থেকে। না বেরোলেই হয়তো ভালো করত। আজকের দিনটাই জাস্ট ওর জন্য নয়।
ওদের রিহার্সাল তিন্নিদের ঘরে হয়। প্রথম থেকেই এটা হয়ে আসছে। তিন্নির বাবা-মাও এতে কোনো আপত্তি করেন নি। বরং প্রতিনিয়ত ওদের প্রত্যেককে উৎসাহ ও উদ্যোম দিয়ে গেছেন। গেছেন কেন, এখনও দিয়ে যান। ওর বাবাও কোনোদিন আপত্তি করেনি। মুশকিল হয়েছিল মাকে নিয়ে। মেয়ে ছেলেদের মতো করে চুল কেটে স্টেজে উঠে ঘাড় দুলিয়ে দুলিয়ে গান গাইবে, তাও আবার ব্যান্ডের গান, সেটা মা একদমই মেনে নেয়নি। কিন্তু সেও হাল ছাড়ার পাত্রী নয়। ছোটোবেলা থেকেই গান ওর একটা প্যাশান। জেদ করেও এই প্যাশানটাকে বজায় রেখেছে। কিন্তু কালকের পর কি হবে সেটা বলা আর সম্ভব নয়। কারণ আজকে যে ঘটনাটা ঘটে গেল তারপর আর ব্যান্ডে থাকাটা তো অনেক দূরের কথা, তিন্নিদের বাড়িতে যাওয়াটা উচিত হবে কিনা, সেটাও একবার ওর ভেবে দেখা দরকার। ও আজ কলেজ যায়নি। যেতে ইচ্ছা করেনি। ও, তিন্নি, স্যান্ডি অর্থাৎ সন্দীপন সবাই একই কলেজে পড়ে। কিন্তু বিভিন্ন সাবজেক্টে। কিন্তু সবাই কলেজ করার পরে জড়ো হয় তিন্নিদের বাড়িতে। ওখানে পুরানো গানের রিহার্সাল হয়। নতুন গানের আলোচনা, অ্যারেঞ্জমেন্ট হয়। কোথাও প্রোগ্রাম থাকলে সে বিষয়ে আলোচনা হয়। তাই আজ ও কলেজ না গিয়ে সটান পৌঁছে গিয়েছিল তিন্নিদের বাড়িতে। গিয়ে ওর মায়ের কাছে জানতে পারল আজ নাকি তিন্নিও কলেজ যায়নি। এটা ওর জানা ছিল না। ইনফ্যাক্ট সকাল থেকে ওর ফোনটা নট রিচেবল ছিল। অবশ্য তা নিয়ে ও খুব একটা দুশ্চিন্তা করেনি। তিন্নি এইরকমই একটা পাগলাটে। এরকম মাঝে মধ্যে করেই থাকে। আর এরকমটা করে বলেই না ওকে এত ভালো লাগে ওর। ওর এই স্বভাবটার জন্যই ও ওকে এতটা ভালোবাসে। হ্যাঁ। ও তিন্নিকে ভালোবাসে। না। কোনো বন্ধু হিসাবে নয়। বরং আদি অকৃত্রিম ভালোবাসা। যেমন একজন প্রেমিক তার প্রেমিকাকে ভালোবাসে, ঠিক তেমনই ও ভালোবাসে তিন্নিকে। কিন্তু এই কথাটা ও আজও মুখ ফুটে বলতে পারেনি তিন্নিকে। কি জানি, শুনে কি রিঅ্যাক্ট করবে। কিন্তু ওর সন্দেহ যে তিন্নি কিছু একটা হলেও আন্দাজ করেছে হয়তো। তা নাহলে কদিন ধরেই তিন্নি ওকে অ্যাভয়েড করবে কেন? কলেজ গেলেও ওর সাথে কথা বলছে না। ঠিক টাইমে রিহার্সালে আসছে না। এলেও চুপচাপ এক কোণে বসে থেকে উঠে চলে যাচ্ছে। ইত্যাদি। তাই তো কদিন ধরে ওরও মন খারাপ। কোনো কাজে মন বসাতে পারছে না। না পড়োশোনায়। না গানে। নতুন কোনো লিরিক্স মাথায় আসছে না। সাথে বেড়েই চলেছে সুখটানের সংখ্যা। আজ মনে মনে একটা ব্যবস্থা করবে বলেই ঠিক করেছিল ও। ও ভেবেছিল তিন্নিকে ওর মনের কথাটা আজকেই জানিয়ে দেবে। দোতলায় তিন্নির রুমে যখন ও ঢুকল তখন সন্ধ্যে হব হব। দিনের শেষ একটা মরা আলো এসে ঢুকছে জানালার গরাদ ঠেলে। বিছানার উপরে উপুড় হয়ে শুয়ে রয়েছে তিন্নি। পরণে একটা ক্রীম ঢোলা গেঞ্জী আর মেরুন রঙের ক্যাপ্রী। ও ঘরে ঢুকেই দরজাটা বন্ধ করে দিল। আর সেই শব্দে বিছানায় উঠে বসল তিন্নি।
আগুনের আঁচের তাতে বর্তমানে ফিরল ও। দুই আঙুলের ফাঁকে কখন যে সিগারেটটা পুড়ে শেষ হয়ে গেছে সেটা বুঝতেই পারেনি ও। পড়ে রয়েছে একটু লালচে আভা আর কিছুটা লম্বাটে ছাই। এই সিগারেটটাকেও আগেরটার মতই জানালা দিয়ে ছুঁড়ে ফেলে দিল। তারপর টেবিলের উপর থেকে জলের বোতলটাকে তুলে নিয়ে ঢক ঢক করে বেশ কিছুটা জল খেয়ে নিল। পেটের মধ্যে ধিকি ধিকি জ্বলতে থাকা খিদের আগুনটা এবার হয়ত নিভে যাবে। কিন্তু ওর মনের আগুনটা? বোতলটাকে আবার যথাস্থানে রেখে দিয়ে বিছানার উপর থেকে ফোনটাকে হাতে তুলে নিল। দুটো বাজতে বারো মিনিট বাকী। তার মানে এখন বেশ রাত। ফোনটাকে আনলক করল ও। ব্যাটারীর চার্জ পারসেন্টেজ ১৫ দেখাচ্ছে। লাল হয়ে আসা ব্যাটারীটা আর কিছুক্ষণ পরেই দেহ রাখবে। ফোনটাকে চার্জ দিলে হত। কিন্তু এখন আর বিছানা ছেড়ে উঠতে ইচ্ছা করছে। ফোনের উপরে একবার আঙুল ঘোরাল ও। তারপর থেমে গেল। হঠাৎ করেই অ্যাপটা চোখে পড়ল ওর। গতকালই অ্যাপটা ইনস্টল করেছে ও। ইচ্ছা ছিল তিন্নিকে দেখাবে। কিন্তু সেই সুযোগ পায়নি। বুড়ো আঙুলের আলতো চাপেই খুলে গেল অ্যাপটা। সাদাটে স্ক্রীণে নীলচে একটা বৃত্ত ঘুরছে। তারপরেই ইউজার নেম আর পাসওয়ার্ড। এটাও ও আগে থেকেই তৈরী করে রেখেছিল। কেবল যথাস্থানে দেওয়ার অপেক্ষা। একমুহুর্ত থমকাল ও।
- “কি ব্যাপার? তুই এখন এখানে?” তিন্নির প্রশ্নে থমকে দাঁড়াল ও। তারপর বিছানায় ওর পাশে বসে বলল, “কেন? তোর কিছু অসুবিধা আছে?” তারপর তিন্নির মুখের দিকে তাকিয়ে ও বলল, “থাকলে বল্, চলে যাচ্ছি।”
- “বাজে কথা বন্ধ কর। তুই দরজাটা ছিটকিনি দিলি কেন?” তিন্নির গলায় কি উদ্বেগের ছোঁয়া আছে, সেটাই বোঝার চেষ্টা করল ও। কিন্তু পারল না।
- “তোর সাথে আমার কিছু দরকারী কথা আছে। তাই দিলাম।” গলাটাকে শান্ত করে প্রায় খাদে টেনে নামিয়ে দিয়ে জবাব দিল ও।
- “আগে ছিটকিনিটা খোল। সবাই কি ভাববে?” তিন্নির শেষের কথাটা যেন ছুঁচের মত বিঁধল ওর গায়ে।
- “কি ভাববে মানে? আমরা বন্ধু। দরজা বন্ধ করতে পারি না? আর তুই এভাবে প্যানিক করছিস কেন?”
- “প্যানিক করছি না। তোকে কেবল দরজাটা খুলতে বলেছি।”
- “খুলে দেবো। প্যানিক করিস না। আমার কথা বলা হয়ে গেলেই আমি দরজাও খুলে দেবো। আর এখান থেকে চলেও যাবো। কিন্তু তার আগে তোর সাথে আমার কিছু দরকারী কথা আছে। সেগুলো আগে বলে নিই।”
- “বল কি বলবি।” তিন্নি কি আগের থেকে একটু শান্ত হয়েছে? হবে হয়তো।
- “আমি কদিন থেকেই লক্ষ্য করছি তুই আমাকে অ্যাভয়েড করছিস। কেন জানতে পারি?”
- “কারণটা তুই ভালো করেই জানিস। আর নাটক করিস না।” তিন্নি যেন একটু তেতে গেল।
- “নাটক! আমি নাটক করছি!?”
- “নাটক নয়তো কি? তুই কি বলতে চাস, কি করতে চাস আমি জানি না?” ফোঁস করে উঠল তিন্নি।
- “কি করতে চাই আমি?” ও কিন্তু বরফ শীতল।
- “তুই নোংরামী করতে চাস।”
- “নোংরামী! কোনটা নোংরামী? তোকে ভালোবাসাটা নোংরামী?”
- “বাজে কথা বলিস না। তুই ভালো করেই জানিস আমি এরকম না। আমার এসব ভালো লাগে না।”
- “ভালো লাগে না? কি ভালো লাগে না?”
- “শুনবি? তাহলে শোন। তুই যখন আমার কাছে এসে বসিস আমার ভালো লাগে না। তুই যখন আমাকে ছুঁস, আমার ভালো লাগে না। আমার তোকেই ভালো লাগে না। তুই চলে যা এখান থেকে। তুই নোংরা। তোর মন নোংরা। তোর ব্যবহার নোংরা। আমার কাছে আর কোনো দিন আসবি না। তুই অসুস্থ হতে পারিস। আমি নয়।”
একটানা কথাগুলো বলে আবার বিছানায় উপুড় হয়ে শুয়ে পড়ল তিন্নি। তবে এবার নিজের মুখটা বালিশের মধ্যে গুঁজে। ওর শরীরটা বারে বারে ফুঁপে ফুঁপে উঠছে। তিন্নি কি কাঁদছে? ওর ইচ্ছা হল একবার তিন্নির মাথায় হাত রাখে। চুলে আলতো করে বিলি কেটে দেয়। নিঃশেষে শুষে নেয় ওর দু চোখ উজাড় করা জলের ফোঁটাগুলোকে। কিন্তু চেয়েও এর একটাও করতে পারল না ও। মেঝের সাথে ওর পাগুলোকে কেউ যেন সিমেন্টের সঙ্গে এঁটে দিয়েছে। ওর পাদুটো থরথর করে কাঁপছে। ওর নিজের চোখের কোণদুটোও কেমন যেন জ্বলছে হু হু করে। কিন্তু ও কাঁদতে পারছে না। ও কাঁদলও না। দরজাটা খুলে ঘরের বাইরে বেরিয়ে এল ধীর পায়ে। দরজার ঠিক পাশেই দাঁড়িয়েছিল তিন্নির দাদা তমাল। ওর দিকে একবার ভাবলেশহীন চোখে তাকাল। তারপর বোনের ঘরে ঢুকে গেল। ধীর পায়ে তিন্নিদের বাড়ি থেকে বেরিয়ে এল ও।
ইউজার নেম আর পাসওয়ার্ডটা দিতেই নীলচে বৃত্তটা বারকয়েক পূর্ণগতিতে ঘোরার পর ওর ফোনের স্ক্রীণে ইংরেজীতে ফুটে উঠল একটা বার্তা। Welcome to the world of true voyeurism, exhibitionism & cuckolding. Live your deepest wild fantasy. আরো অনেক কথা লেখা ছিল, সবটা ও পড়ল না। কেবল নীচের দিকে বড়ো করে লেখা Enter বোতামটায় একটা চাপ দিল। সাথে সাথে অ্যাপের হোমপেজটা খুলে গেল। স্ক্রীণের একদম উপরের ডানদিকে ওর ইউজার নেমের ঠিক পাশে একটা সবুজ বৃত্ত জ্বলজ্বল করছে। তার মানে ও এখন Active। আয়ুষী ঘাড় গুঁজে পাগলের মত স্ক্রল করতে শুরু করল অ্যাপটায়। ও হয়তো জানতেও পারল না, ওর আশেপাশের আরও পাঁচখানা আলাদা আলাদা প্রোফাইল আলাদা আলাদা ফোন থেকে এই মুহুর্তে Active হয়ে আছে।
~ অত্র প্রথমোৎধ্যায়ঃ সমাপ্তঃ ~