02-03-2024, 07:39 PM
যথারীতি কাজ শেষ করে আকর্ষ একটু আগে বেরিয়ে গেলো। অফিসে থেকে বেরিয়ে সামনের বাসস্টপের পাশে একটা চা দোকানে গিয়ে বসলো। সেখানে একটা চা আর সিগারেট ধরিয়ে খেতে লাগলো। তার তাড়াহুড়ো নেই, আকর্ষ জানে নায়নীর আসতে আর কম করে হলেও আধা ঘন্টা তো লাগবেই, তাই আরামছে ছা আর সিগারেট খেতে লাগলো। আকর্ষের অনেক অবাক লাগে এই ২ মাসে কতটা পরিবর্তন হয়েছে সে। এই আকর্ষ আগে এই রকম ছিলো না কিন্তু কোনো কারণে আজকের আকর্ষ অনেক গুছালো। এইসব ভাবছিলো আর চা খাচ্ছিলো।
আকর্ষকে বেরিয়ে যেতে দেখেছে নায়নী। নায়নীর তখন ইচ্ছে করছিলো ওর সাথেই বের হতে কিন্তু ও পারলো না। অফিসে কিছু হলে তা ছড়াতে বেশি টাইম লাগে না। আগুনের মতো ছড়াতে শুরু করে। যেখানে নায়নী নিজের মর্যাদা নিজের সম্মান ধরে রেখেছে, নায়নীকে নিয়ে কেও কখনো কথা তুলতে পারেনি, আর নায়নী আশা করে যে কখনো কথা তুলতেও পারবে না। নায়নী নিজের সব কাজ গুছিয়ে একটু ফ্রেশ হয়ে, নিজেকে আয়নায় একটু দেখে নিলো নায়নী, আর ভাবতে লাগলো,
"আচ্ছা আমি তো ওর থেকে বয়সে অনেক বড়ো আমার কি ওর সাথে ঘুরে বেড়ানো মানায়। মানুষ কি বলবে আমাদের দেখলে? " এইসব ভাবছিলো নায়নী কিন্তু পরোক্ষনেই মনে হলো সমাজের কথা ভেবে কি হবে আর এই সমাজ বড়ই অদ্ভুত যেখানে ৩০ বছরের একটা পুরুষ একটা ১৮ বছরের মেয়েকে বিয়ে করলে কিছু হয় না সেখানে যদি একটা ২৫ বছরের মেয়ে যদি ১৮ বছরের ছেলেকে বিয়ে করে তাহলে সমাজের সব শেষ হয়ে যায় মহাভারত অশুদ্ধ হয়ে যায়। সমাজের এই রুপ নায়নী বুঝতে পারে না। তাই নায়নী সমাজের কথা তেমন ভাবে না কিন্তু কি করবে ও যে সমাজে থাকে ও যে সমাজের একটা অংশ। এইটা তো বদলানো যাবে না।
এইসব ভাবতেই নিজের ব্যাগ নিয়ে কেবিন থেকে বেরিয়ে পড়লো। আকর্ষ বলেছে ও বাস স্টপের সাথে যে চায়ের দোকান সেখানে অপেক্ষা করবে। নায়নী অফিসে থেকে বেরিয়ে হাঁটতে সেখানে গেলো। নায়নী দেখলো আকর্ষ বসে আছে আর টিভিতে ক্রিকেট খেলা দেখছে। অনেকে বলতে পারে ছেলেদের ফর্মাল লুকে অনেক ভালো লাগে, কিন্তু নায়নীর তা মনে হয় না। নায়নীর মনে হয় আকর্ষকে অগোছালো লুকেই বেশি ভালো লাগে।
আকর্ষকে ফর্মালে সুন্দর যে লাগে না তা কিন্তু নয় ওকে ফর্মাল লুকে খুব সুন্দর লাগে। কিন্তু নায়নীর আকর্ষকে ইনফর্মাল লুকেই বেশি ভালো লাগে।
নায়নী আসছে দেখতে পেরে আকর্ষ দোকানের চায়ের বিল মিটিয়ে দোকান থেকে বেরিয়ে পড়লো। আর বাইক নিয়ে এসে নায়নীর সামনে দাঁড়ালো। আকর্ষ বাইক নিয়ে নায়নীর সামনে দাঁড়ালো। আকর্ষের বাইক সামনে দাঁড়ানোর পর নায়নী তাড়াতাড়ি করে বাইকে উঠে পড়লো, কারণ বলা যায় না , অফিসের কেও এখানে থাকলেও থাকতে পারে তাই নায়নী আর দেরি না করে উঠে পড়লো।
নায়নী বাইকে উঠার পরেই আকর্ষ বাইক ছাড়লো। আগে নায়নীর কেমন যেনো লাগতো আকর্ষের শরীরে হাত দিতে। কিন্তু সময়ের যাওয়ার সাথে সাথে এখন অনেকটা অভ্যাস হয়ে হয়ে গেছে। আকর্ষ ও বাইক স্টার্ট করলো নায়নী বাইকে উঠার পর। নায়নী জিজ্ঞেস করেনি কোথায় নিয়ে যাচ্ছে আকর্ষ ওকে। নায়নী জানে আকর্ষ ওকে ভালো কোথায় নিয়ে যাবে। আকর্ষ নায়নীকে নিয়ে আসলো হাওড়া ব্রিজের এইখানে। আকর্ষ আর নায়নী পাশাপাশি বসলো। বসার পর নায়নী বললো,
"তা আজকে হুট করে ঘুরার প্ল্যান কেন শুনি?"
আকর্ষ ওর দিকে তাকিয়ে বললো,
"হুমম যদি বলি এমনি। তাহলে?"
"বাহ্ বাহ্ এই বুড়িকে নিয়ে ঘুরতে আসতে ইচ্ছে হলো।"
এই বলে নায়নী হেসে দিলো,
"এই যে ফালতু কথা যতসব কে বলেছে তুমি বুড়ি ?"
"বুড়ি তো ৩৫ টা বসন্ত আমার চলে গেছে। আর কয়টা বসন্ত বাকি আছে কে জানে।"
"উফফ তোমাকে নিয়ে পারি না। আমার কাছে তুমি সুন্দরী অনেক মেয়েদের চেয়ে।"
"বাহ্ তাই নাকি আমাদের ব্রাঞ্চ ম্যানেজারের চেয়েও।"
এই বলে হেসে দিলো নায়নী,
" সত্যি বলতে হ্যা সবিতা ম্যাম সুন্দরী, কিন্তু তোমার মতো না। "
"সবিতার বয়স কম হট এন্ড সেক্সি। ফিগারও সুন্দর তার থেকেও আমি সুন্দরী।"
"সবিতা ম্যাম হট সেক্সি হতে পারে কিন্তু আমার চোখে তুমি সবচেয়ে বেশি হট এন্ড সেক্সি আর সুন্দরী আমার তোমাকেই ভালো লাগে।"
এই কথা বলেই আকর্ষ জিহ্বাতে কামড় দিলো, আর মনে মনে বললো,
"ইসসস কি বললাম আমি।"
নায়নী এই কথা শুনে হেসে দিলো, আকর্ষের মুখটা তখন দেখার মতো,
আকর্ষ ভুলে মনের কথাটা বলে ফেলেছে নায়নী বুঝলো।
আকর্ষ দেখলো নায়নী হাসছে, তাই আকর্ষ জিজ্ঞেস করলো,
"এইখানে হাসির কি হলো?"
নায়নী হাসতে হাসতে বললো,
"নাহ নাহ কিছু না বলো।"
আকর্ষ একটু তাকিয়ে থাকলো নায়নীর দিকে তারপর বললো,
"সবিতা ম্যাম মনে হয় অনেক স্ট্রিক্ট?"
"আমি যতদূর জানি হ্যা। উনি অনেক স্ট্রিক্ট। আর উনি একদম কাজে গাফলতি পছন্দ করেন না।"
"হুমম সেটাই দেখছি।"
"কৌশিক আর জয়দেবকে বলে দিয়ো কাজে যেন ফাঁকি না দেয় না হলে কিন্তু আমারো সাধ্য থাকবে না ওদের বাঁচানোর।"
"কৌশিক ঠিক আছে টেনশন হয় জয়দেবকে নিয়ে।"
"কেন ও কি করলো?"
"কি আর করবে?"
"জয়দেব ম্যামকে দেখার পর, ম্যামের ফিগার দেখে পুরো লাট্টু হয়ে গেছে, ম্যামকে দেখছে আর বলছে ইসস ভাই মালটা কি কড়া। আর একটা কথা বলছে বার বার।"
"কি কথা?"
"মানে একটু বাজে কথা?"
"কি বাজে কথা শুনি?"
"বলতে পারি পড়ে আবার আমাকে কিছু বলা যাবে না।"
"ঠিক আছে বাবা বলবো না বলো।"
"জয়দেবের ম্যামের মাই খুব পছন্দ হয়েছে। জয়দেবের এখন মনে প্রাণে একটাই চিন্তা ম্যামের মাই ধরবে টিপবে। "
এই কথা শুনে নায়নীর কান দিয়ে গরম ধোয়া বের হতে লাগলো। আকর্ষ যে সোজাসুজি এইভাবে কথাটা বলবে সেটা নায়নী ভাবতেই পারেনি।
"ওহ আচ্ছা।"
"আর দোষ সম্পূর্ণ ওর না।"
"ম্যাম যেরকম রিভেলিং ড্রেস পড়েছে আরেকটা বোতাম খালি হলে ব্রা আর মাই দুইটাই দেখা যেত।"
এই কথা শুনে নায়নী কেমন করে জানি আকর্ষের দিকে তাকালো বললো,
"তুমি মনে হয় খুব ভালো ভাবে খেয়াল করেছো? "
নায়নীর মুখে দেখে আকর্ষ বুঝলো, নায়নী রাগ করছে। তাই বললো,
"আরে না না সে রকম কিছু না। তুমি তো দেখেছো ম্যাম কি রকম ড্রেস পড়েছে। তার জন্য বললাম।"
"সে যাই পড়ুক তুমি তাকাবে না।"
"আচ্ছা বাবা ওকে আমি তাকাবো না।"
"আর তুমি জয়দেবের মতো ঐটার দিকে তাকাবে না।"
"কোনটার দিকে?"
"জয়দেব যেটার দিকে তাকায়।"
আকর্ষ যখন বুঝলো নায়নী মাইয়ের কথা বলছে তখন আকর্ষ হেসে দিলো, আর বললো,
"আচ্ছা ঠিক আছে, কিন্তু ম্যাম কিন্তু সেই সেক্সি মানতে হবে।"
"ওহ তাই তাহলে যাও না তোমার ঐ সেক্সি ম্যামের কাছে।"
"আমি কখন বলেছি আমি ম্যামের কাছে যাবো।"
"তাহলে কেন বলছো এইসব?"
"আচ্ছা বাবা বলবো না এখন খুশি তো?"
"হুমম।"
আকর্ষ যখন ঐ সবিতার কথা বলে তখন নায়নীর মনের ভেতর একটা জ্বলনের সৃষ্টি হয়, কিন্তু কেন সেটা ও জানে না। আকর্ষ তো শুধু ওর ভালো বন্ধু। আচ্ছা আকর্ষ কি নায়নীর শুধু ভাল বন্ধু? এর উত্তর নায়নীর কাছে নেই। এইদিকে আকর্ষ ও খেয়াল করেছে সবিতার নাম যখন নেয় ও তখন নায়নী একটু রেগে যায় যা আকর্ষের কাছে খুব ভালো লাগে। আকর্ষ ও জানে ওদের দুইজনের মধ্যে কিছু একটা আছে।
কিন্তু কি আছে?
আকর্ষ বললো,
"হয়েছে বাবা, এখন থাক। তোমাকে ঘরে পৌছিয়ে দিয়ে আসতে হবে। চলো উঠি।"
"হুমম।"
এই বলে নায়নী আর আকর্ষ উঠে পড়লো। আকর্ষ আসার পর নায়নীর জীবন একটু ছুটছে। আগে নায়নী নিজেকে মনে করতো রোবট। সারাদিন অফিস করে বাসায় যেত আর বাসায় গিয়ে রাতের খাবার খেয়েই ঘুম আবার পরের দিন সকালে অফিসে এসেছে পড়তো, এইভাবেই চলতো নায়নীর জীবন, কিন্তু আকর্ষ আসার পর এই একঘেয়েমির জীবনে একটু তো ছন্দ পতন হয়েছে। যা খুব একটা খারাপ না নায়নীর মনে হয়।
বাইক চলছে নিজের আপন গতিতে। সূর্য নিজের মুখে লুকিয়েছে বেশ কিছুক্ষন আগেই। এখন পাখিরা আর সারাদিন খেতে খাওয়া মানুষরা যাচ্ছে নিজেদের ঘরে। নায়নী তখন বলে উঠলো,
"আচ্ছা আমাদের ব্যাপারে যদি কেও জেনে যায়? তাহলে কি হবে ভেবে দেখেছো?"
আকর্ষ বললো,
"কি হবে কিছুই হবে না।"
"কেন?"
"কারণ আমি তুমি আমরা পূর্ণ বয়স্ক নারী পুরুষ। আমরা জানি কোনটাতে আমাদের ভালো মন্দ। আর কোনটাতে আমাদের খারাপ।"
"এখন না হয় জানলো না? সামনে জানলে কি হবে?"
"দেখো আমি মানুষটা একটু অন্যভাবে ভাবি। জীবন অনেকটা ছোট, আমাদের সাথে কখন কি হয়ে যায় সেটা আমরা জানি না। আজ আছি তো কাল নেই। তো এই ছোট জীবনে আমি হাসতে চাই মন খুলে বাঁচতে চাই। তাই আমি ভবিষ্যত নিয়ে এতটা ভাবি না। আমি বর্তমানে বাঁচি। যা হবে দেখা যাবে। "
"হুমম বুঝলাম।"
"তুমিও চেষ্টা করে দেখো। সামনে যা পাও লুফে নাও। কালকে কি হবে কে জানে?"
"হুমম।"
নায়নী আর আকর্ষ সারা রাস্তায় আর কথা বলেনি।
আকর্ষের সাথে থাকলে নায়নীর সময় গুলো যেনো খুব তাড়াতাড়ি কেটে যায়, এমনিতে এতো সময় তাড়াতাড়ি যায় কিনা নায়নীর সন্দেহ। এই সব ভাবতে ভাবতেই নায়নীর ঘরের সামনে এসে আকর্ষ বাইক থামায়। আকর্ষ বলে,
"এসে পড়েছি ম্যাম।"
এই কথা শুনে নায়নীর ঘোর ভাঙে, দেখে আসলেই এসে পড়েছে। নায়নী আকর্ষের কাঁধে হাত দিয়ে বাইক থেকে নামলো।
নায়নী বাইক থেকে নেমে বললো,
"আজ তাহলে আসি কালকে অফিসে দেখা হবে। "
"ঠিক আছে।"
এই বলে আকর্ষ সেখানেই দাঁড়িয়ে রইলো। নায়নী বললো,
"তুমি যাবে না? নাকি এইখানেই রাত কাটানোর পরিকল্পনা করছো।"
"নাহ নাহ এইখানে তো থাকা যায় না। তুমি আগে যাও, তারপর যাচ্ছি।"
নায়নী হেসে দিলো এই কথা শুনে,
"ঠিক আছে।"
এই বলে নায়নী চলে আসলো নিজের ঘরে। ঘরে আসার পর বারান্দায় এসেছে দেখলো আকর্ষ তখনও দাঁড়িয়ে আছে। নায়নী তাই ইশারায় বললো,
"এখন যাও।"
নায়নী ঘরে গিয়েছে দেখার পর, বাইক ঘুরিয়ে আকর্ষ নিজের বাড়ির জন্য রওনা দিলো। আকর্ষ এই রকমই যদি আকর্ষ নায়নীকে নিয়ে কোথাও যায় তাহলে আকর্ষ নায়নীকে নিজের ঘরে পৌছিয়ে দিবে, আর যতক্ষন না পর্যন্ত নিজের বারান্দায় আসছে ততক্ষন পর্যন্ত আকর্ষ সেখান থেকে যাবে না। নায়নী মনে মনে ভাবে ছেলেটার মাথায় কোনো সমস্যা আছে কিনা। নাহলে এত কেয়ার ওর মতো একজনের জন্য? এর পিছনের কারণ কি তা নায়নী জানে না।
ঘরে এসে ফ্রেশ হয়ে, রাতের খাবার খেয়ে নেয় নায়নী। খাওয়া দাওয়া শেষ করে, বিছানায় নিজের শরীরটা মিশিয়ে দেয়। সারাদিন এই অফিসের কাজ আর তারপর আকর্ষের সাথে ঘোরাঘুরি করার পর ওর শরীর অনেক টায়ার্ড হয়ে গিয়েছে।
নায়নী বিছানায় শুয়ে শুয়েই ভাবলো অনেক দিন রাখির সাথে কথা হয় না তাই ও নিজে থেকেই ফোন দিলো।
কয়েকবার রিং হলো তারপর নায়নীর ফোন ধরলো। ফোন ধরার পর রাখি বলে উঠলো,
"বাহ্ আমার বান্ধবী এতো ভালো হলো কবে থেকে শুনি?"
এই কথা শুনে নায়নী বললো,
"মানে আমি খারাপ ছিলাম কবে?"
"নাহ নাহ সেটা বলিনি?"
"তাহলে?"
"তুই তো আমাকে কল দিতিস না। আমি কল না দিলে। তাই বললাম।"
"আচ্ছা তাহলে কলটা রেখে দেই নাকি?"
"নাহ থাক দিয়েছিস যখন বল তাহলে কেমন আছিস?"
"ভালো আছি তুই কেমন আছিস।"
"আমি তো ভালো আছি। তোর ছেলে আর জামাইবাবু কেমন আছে?"
"ওরা সবাই খুব ভালো আছে।"
"আচ্ছা।"
"তা সেদিন যে শাড়ি পড়লি তা সেই শাড়ি পড়ার কারণ কিন্তু আমি এখনও জানি না।"
"ঐতো একটু ঘুরতে গিয়েছিলাম তার জন্য পড়েছিলাম এই আর কি।"
"নাহ নাহ তুই শুধু ঘোরার জন্য আমাকে ফোন দিয়ে ঐভাবে বলতি না যে কি পড়বো? এইখানে আরো একটা কিছু আছে।"
"কি থাকবে কিছুই নেই?"
"নাহ আছে আমি জানি। আমাকে বল।"
এই কথা শুনে নায়নী একটু ভাবলো আর বললো,
"ঠিক আছে বলতে পারি কিন্তু আমার কথা শুনে হাসবি না বা মজা নিবি না, ঠিক আছে?"
"আচ্ছা বাবা ঠিক আছে এখন বল।"
"আসলে আমাদের অফিসে নতুন একটা ছেলে এসেছে নাম আকর্ষ ঐ ওর সাথে ঘুরতে গিয়েছিলাম। "
" কি বলিস তুই আবার একটা ছেলের সাথে ঘুরতে গিয়েছিলি? "
"হুমম গিয়েছিলাম।"
"তা ছেলেটা দেখতে কি রকম?"
"দেখতে? "
এই বলে নায়নী কিছুক্ষন ভাবলো আর বললো,
"দেখতে সুন্দর বলা চলে। লম্বা ফর্সা, খুব স্পষ্টভাষী আর নিজের কাজ নিয়ে খুব সিরিয়াস।"
"বাহ্ তা ছেলের বয়স কতো?"
"বয়স মাত্র ২৭।"
"কি বলিস মাত্র ২৭ এই ছেলে তো তোর থেকে অনেক ছোটরে। "
"হুমম তাই তো এই ছেলের নাম দিয়েছি পিচ্চি।"
এই বলে নায়নী হাসতে লাগলো। রাখি ফোনের মধ্যেই ওর হাসি শুনতে পারছে। এই রকম করে শেষ কবে নায়নীকে হাসতে শুনেছে রাখির মনে পড়ে না। রাখির এইটা ভেবেই খুশি লাগছে যে নায়নী হাসছে।
"তা কিভাবে কি হলো?"
তখন নায়নী শুরু থেকে সব বললো, সব শুনে রাখি বললো,
"ইসস কি শোনালি তুই আমাকে।সব শুনে তো আমার এইটা পিচ্চি ছেলেটাকে খুব দেখতে ইচ্ছে করছে। কোনো ছবি নেই?"
"নাহ তো কোনো ছবি নেই।"
"যাহঃ বাবা এতো দিন ধরে চিনিস তোর অফিসে তোর আন্ডারে কাজ করে আর তোর কাছে কোনো ছবি নেই?"
"নাহ তো আসলে সত্যি বলতে কখনো ছবির দরকার হয়নি তাই আমার কাছে ওর কোনো ছবি নেই।"
"বাহ্ দেখো মেয়ের কান্ড এতো দিন হয়ে গেলো এখনও তার কাছে একটা ছবি নেই।"
"তাই কি?"
"তাই কি মানে? তোর এখন একটাই কাজ তুই যত তাড়াতাড়ি পারবি আমাকে ঐ ছেলের একটা ছবি দিবি। ঠিক আছে।"
"ইসস ছেলেটা মনে হয় সেই সেক্সি তোর কথা শুনে যা বুঝলাম।"
"হুমম তা বলতে পারিস।"
"তোর কি কপাল দেখ এইটা বয়সে কি সুন্দর নিজের চেয়ে ছোট ছেলের সাথে ঘুরছিস মজা করছিস। আর আমার বরটার ভুঁড়ি বের হচ্ছে খেয়ে খেয়ে। আমিও যদি তোর ঐ আকর্ষের মতো একটা ছেলে পেতাম।"
"কেন জামাইবাবুর কি সমস্যা। জামাইবাবু তো এখনও সেই দেখতে ঠিক আছে। এইটা বিয়ের পর শরীরটা একটু ভারী হয়ে গিয়েছে এইটা আর কি?"
"হুমম কি আর করা যাবে বল। আচ্ছা শোন না একদিন আমাকে কথা বলিয়ে দিস আর যদি আমি কলকাতা আসি তাহলে আমাকে দেখা করিয়ে দিবি। ঠিক আছে?"
" ঠিক আছে বাবা। "
"নায়নী আমার একটা কথা বলার বলার আছে
"হ্যাঁ বল না কি কথা?"
"আমার মনে হয় আকর্ষ তোকে ভালোবাসে"
এই কথা শুনে নায়নী খুব বেশি অবাক হলো না।
আকর্ষের এতদিনের কর্মকাণ্ড যদি কেউ শোনে তাহলে সত্যি বলবে আকর্ষ নায়নীকে ভালোবাসে।
কিন্তু নায়নী সিওর না তাই বললো,
" সত্যি বলতে আমি জানি না আর জানতেও চাই না।আমাদের মাঝে সুন্দর একটা বন্ধুত্ব আছে। এইটাই অনেক এখন দেখি কোথায় নিয়ে যায় ভাগ্য। "
"নায়নী ভাগ্য সবাইকে দুইবার সুযোগ দেয় না। তুই পেয়েছিস আশা করি এই সুযোগ হাতছাড়া করবি না।"
"ঠিক আছে আজকে তাহলে রাখি। অনেক রাত হলো।"
"ঠিক আছে। আর ফোন করিস।"
"ঠিক আছে বাই।"
"বাই।"
চলবে
এই গল্প যদি ভালো লেগে থাকে অবশ্যই কমেন্ট করে জানাবেন। যদি কোনো মতামত থাকে জানাতে ভুলবেন না। অথবা টেলিগ্রাম এ এসএমএস দিতে পারেন @Paradox787898 এই নামে। আপনাদের এসএমএস এ আমি উৎসাহ পাই। তাই আমাকে বেশি বেশি করে উৎসাহ দিবেন এই আশা করি।
আকর্ষকে বেরিয়ে যেতে দেখেছে নায়নী। নায়নীর তখন ইচ্ছে করছিলো ওর সাথেই বের হতে কিন্তু ও পারলো না। অফিসে কিছু হলে তা ছড়াতে বেশি টাইম লাগে না। আগুনের মতো ছড়াতে শুরু করে। যেখানে নায়নী নিজের মর্যাদা নিজের সম্মান ধরে রেখেছে, নায়নীকে নিয়ে কেও কখনো কথা তুলতে পারেনি, আর নায়নী আশা করে যে কখনো কথা তুলতেও পারবে না। নায়নী নিজের সব কাজ গুছিয়ে একটু ফ্রেশ হয়ে, নিজেকে আয়নায় একটু দেখে নিলো নায়নী, আর ভাবতে লাগলো,
"আচ্ছা আমি তো ওর থেকে বয়সে অনেক বড়ো আমার কি ওর সাথে ঘুরে বেড়ানো মানায়। মানুষ কি বলবে আমাদের দেখলে? " এইসব ভাবছিলো নায়নী কিন্তু পরোক্ষনেই মনে হলো সমাজের কথা ভেবে কি হবে আর এই সমাজ বড়ই অদ্ভুত যেখানে ৩০ বছরের একটা পুরুষ একটা ১৮ বছরের মেয়েকে বিয়ে করলে কিছু হয় না সেখানে যদি একটা ২৫ বছরের মেয়ে যদি ১৮ বছরের ছেলেকে বিয়ে করে তাহলে সমাজের সব শেষ হয়ে যায় মহাভারত অশুদ্ধ হয়ে যায়। সমাজের এই রুপ নায়নী বুঝতে পারে না। তাই নায়নী সমাজের কথা তেমন ভাবে না কিন্তু কি করবে ও যে সমাজে থাকে ও যে সমাজের একটা অংশ। এইটা তো বদলানো যাবে না।
এইসব ভাবতেই নিজের ব্যাগ নিয়ে কেবিন থেকে বেরিয়ে পড়লো। আকর্ষ বলেছে ও বাস স্টপের সাথে যে চায়ের দোকান সেখানে অপেক্ষা করবে। নায়নী অফিসে থেকে বেরিয়ে হাঁটতে সেখানে গেলো। নায়নী দেখলো আকর্ষ বসে আছে আর টিভিতে ক্রিকেট খেলা দেখছে। অনেকে বলতে পারে ছেলেদের ফর্মাল লুকে অনেক ভালো লাগে, কিন্তু নায়নীর তা মনে হয় না। নায়নীর মনে হয় আকর্ষকে অগোছালো লুকেই বেশি ভালো লাগে।
আকর্ষকে ফর্মালে সুন্দর যে লাগে না তা কিন্তু নয় ওকে ফর্মাল লুকে খুব সুন্দর লাগে। কিন্তু নায়নীর আকর্ষকে ইনফর্মাল লুকেই বেশি ভালো লাগে।
নায়নী আসছে দেখতে পেরে আকর্ষ দোকানের চায়ের বিল মিটিয়ে দোকান থেকে বেরিয়ে পড়লো। আর বাইক নিয়ে এসে নায়নীর সামনে দাঁড়ালো। আকর্ষ বাইক নিয়ে নায়নীর সামনে দাঁড়ালো। আকর্ষের বাইক সামনে দাঁড়ানোর পর নায়নী তাড়াতাড়ি করে বাইকে উঠে পড়লো, কারণ বলা যায় না , অফিসের কেও এখানে থাকলেও থাকতে পারে তাই নায়নী আর দেরি না করে উঠে পড়লো।
নায়নী বাইকে উঠার পরেই আকর্ষ বাইক ছাড়লো। আগে নায়নীর কেমন যেনো লাগতো আকর্ষের শরীরে হাত দিতে। কিন্তু সময়ের যাওয়ার সাথে সাথে এখন অনেকটা অভ্যাস হয়ে হয়ে গেছে। আকর্ষ ও বাইক স্টার্ট করলো নায়নী বাইকে উঠার পর। নায়নী জিজ্ঞেস করেনি কোথায় নিয়ে যাচ্ছে আকর্ষ ওকে। নায়নী জানে আকর্ষ ওকে ভালো কোথায় নিয়ে যাবে। আকর্ষ নায়নীকে নিয়ে আসলো হাওড়া ব্রিজের এইখানে। আকর্ষ আর নায়নী পাশাপাশি বসলো। বসার পর নায়নী বললো,
"তা আজকে হুট করে ঘুরার প্ল্যান কেন শুনি?"
আকর্ষ ওর দিকে তাকিয়ে বললো,
"হুমম যদি বলি এমনি। তাহলে?"
"বাহ্ বাহ্ এই বুড়িকে নিয়ে ঘুরতে আসতে ইচ্ছে হলো।"
এই বলে নায়নী হেসে দিলো,
"এই যে ফালতু কথা যতসব কে বলেছে তুমি বুড়ি ?"
"বুড়ি তো ৩৫ টা বসন্ত আমার চলে গেছে। আর কয়টা বসন্ত বাকি আছে কে জানে।"
"উফফ তোমাকে নিয়ে পারি না। আমার কাছে তুমি সুন্দরী অনেক মেয়েদের চেয়ে।"
"বাহ্ তাই নাকি আমাদের ব্রাঞ্চ ম্যানেজারের চেয়েও।"
এই বলে হেসে দিলো নায়নী,
" সত্যি বলতে হ্যা সবিতা ম্যাম সুন্দরী, কিন্তু তোমার মতো না। "
"সবিতার বয়স কম হট এন্ড সেক্সি। ফিগারও সুন্দর তার থেকেও আমি সুন্দরী।"
"সবিতা ম্যাম হট সেক্সি হতে পারে কিন্তু আমার চোখে তুমি সবচেয়ে বেশি হট এন্ড সেক্সি আর সুন্দরী আমার তোমাকেই ভালো লাগে।"
এই কথা বলেই আকর্ষ জিহ্বাতে কামড় দিলো, আর মনে মনে বললো,
"ইসসস কি বললাম আমি।"
নায়নী এই কথা শুনে হেসে দিলো, আকর্ষের মুখটা তখন দেখার মতো,
আকর্ষ ভুলে মনের কথাটা বলে ফেলেছে নায়নী বুঝলো।
আকর্ষ দেখলো নায়নী হাসছে, তাই আকর্ষ জিজ্ঞেস করলো,
"এইখানে হাসির কি হলো?"
নায়নী হাসতে হাসতে বললো,
"নাহ নাহ কিছু না বলো।"
আকর্ষ একটু তাকিয়ে থাকলো নায়নীর দিকে তারপর বললো,
"সবিতা ম্যাম মনে হয় অনেক স্ট্রিক্ট?"
"আমি যতদূর জানি হ্যা। উনি অনেক স্ট্রিক্ট। আর উনি একদম কাজে গাফলতি পছন্দ করেন না।"
"হুমম সেটাই দেখছি।"
"কৌশিক আর জয়দেবকে বলে দিয়ো কাজে যেন ফাঁকি না দেয় না হলে কিন্তু আমারো সাধ্য থাকবে না ওদের বাঁচানোর।"
"কৌশিক ঠিক আছে টেনশন হয় জয়দেবকে নিয়ে।"
"কেন ও কি করলো?"
"কি আর করবে?"
"জয়দেব ম্যামকে দেখার পর, ম্যামের ফিগার দেখে পুরো লাট্টু হয়ে গেছে, ম্যামকে দেখছে আর বলছে ইসস ভাই মালটা কি কড়া। আর একটা কথা বলছে বার বার।"
"কি কথা?"
"মানে একটু বাজে কথা?"
"কি বাজে কথা শুনি?"
"বলতে পারি পড়ে আবার আমাকে কিছু বলা যাবে না।"
"ঠিক আছে বাবা বলবো না বলো।"
"জয়দেবের ম্যামের মাই খুব পছন্দ হয়েছে। জয়দেবের এখন মনে প্রাণে একটাই চিন্তা ম্যামের মাই ধরবে টিপবে। "
এই কথা শুনে নায়নীর কান দিয়ে গরম ধোয়া বের হতে লাগলো। আকর্ষ যে সোজাসুজি এইভাবে কথাটা বলবে সেটা নায়নী ভাবতেই পারেনি।
"ওহ আচ্ছা।"
"আর দোষ সম্পূর্ণ ওর না।"
"ম্যাম যেরকম রিভেলিং ড্রেস পড়েছে আরেকটা বোতাম খালি হলে ব্রা আর মাই দুইটাই দেখা যেত।"
এই কথা শুনে নায়নী কেমন করে জানি আকর্ষের দিকে তাকালো বললো,
"তুমি মনে হয় খুব ভালো ভাবে খেয়াল করেছো? "
নায়নীর মুখে দেখে আকর্ষ বুঝলো, নায়নী রাগ করছে। তাই বললো,
"আরে না না সে রকম কিছু না। তুমি তো দেখেছো ম্যাম কি রকম ড্রেস পড়েছে। তার জন্য বললাম।"
"সে যাই পড়ুক তুমি তাকাবে না।"
"আচ্ছা বাবা ওকে আমি তাকাবো না।"
"আর তুমি জয়দেবের মতো ঐটার দিকে তাকাবে না।"
"কোনটার দিকে?"
"জয়দেব যেটার দিকে তাকায়।"
আকর্ষ যখন বুঝলো নায়নী মাইয়ের কথা বলছে তখন আকর্ষ হেসে দিলো, আর বললো,
"আচ্ছা ঠিক আছে, কিন্তু ম্যাম কিন্তু সেই সেক্সি মানতে হবে।"
"ওহ তাই তাহলে যাও না তোমার ঐ সেক্সি ম্যামের কাছে।"
"আমি কখন বলেছি আমি ম্যামের কাছে যাবো।"
"তাহলে কেন বলছো এইসব?"
"আচ্ছা বাবা বলবো না এখন খুশি তো?"
"হুমম।"
আকর্ষ যখন ঐ সবিতার কথা বলে তখন নায়নীর মনের ভেতর একটা জ্বলনের সৃষ্টি হয়, কিন্তু কেন সেটা ও জানে না। আকর্ষ তো শুধু ওর ভালো বন্ধু। আচ্ছা আকর্ষ কি নায়নীর শুধু ভাল বন্ধু? এর উত্তর নায়নীর কাছে নেই। এইদিকে আকর্ষ ও খেয়াল করেছে সবিতার নাম যখন নেয় ও তখন নায়নী একটু রেগে যায় যা আকর্ষের কাছে খুব ভালো লাগে। আকর্ষ ও জানে ওদের দুইজনের মধ্যে কিছু একটা আছে।
কিন্তু কি আছে?
আকর্ষ বললো,
"হয়েছে বাবা, এখন থাক। তোমাকে ঘরে পৌছিয়ে দিয়ে আসতে হবে। চলো উঠি।"
"হুমম।"
এই বলে নায়নী আর আকর্ষ উঠে পড়লো। আকর্ষ আসার পর নায়নীর জীবন একটু ছুটছে। আগে নায়নী নিজেকে মনে করতো রোবট। সারাদিন অফিস করে বাসায় যেত আর বাসায় গিয়ে রাতের খাবার খেয়েই ঘুম আবার পরের দিন সকালে অফিসে এসেছে পড়তো, এইভাবেই চলতো নায়নীর জীবন, কিন্তু আকর্ষ আসার পর এই একঘেয়েমির জীবনে একটু তো ছন্দ পতন হয়েছে। যা খুব একটা খারাপ না নায়নীর মনে হয়।
বাইক চলছে নিজের আপন গতিতে। সূর্য নিজের মুখে লুকিয়েছে বেশ কিছুক্ষন আগেই। এখন পাখিরা আর সারাদিন খেতে খাওয়া মানুষরা যাচ্ছে নিজেদের ঘরে। নায়নী তখন বলে উঠলো,
"আচ্ছা আমাদের ব্যাপারে যদি কেও জেনে যায়? তাহলে কি হবে ভেবে দেখেছো?"
আকর্ষ বললো,
"কি হবে কিছুই হবে না।"
"কেন?"
"কারণ আমি তুমি আমরা পূর্ণ বয়স্ক নারী পুরুষ। আমরা জানি কোনটাতে আমাদের ভালো মন্দ। আর কোনটাতে আমাদের খারাপ।"
"এখন না হয় জানলো না? সামনে জানলে কি হবে?"
"দেখো আমি মানুষটা একটু অন্যভাবে ভাবি। জীবন অনেকটা ছোট, আমাদের সাথে কখন কি হয়ে যায় সেটা আমরা জানি না। আজ আছি তো কাল নেই। তো এই ছোট জীবনে আমি হাসতে চাই মন খুলে বাঁচতে চাই। তাই আমি ভবিষ্যত নিয়ে এতটা ভাবি না। আমি বর্তমানে বাঁচি। যা হবে দেখা যাবে। "
"হুমম বুঝলাম।"
"তুমিও চেষ্টা করে দেখো। সামনে যা পাও লুফে নাও। কালকে কি হবে কে জানে?"
"হুমম।"
নায়নী আর আকর্ষ সারা রাস্তায় আর কথা বলেনি।
আকর্ষের সাথে থাকলে নায়নীর সময় গুলো যেনো খুব তাড়াতাড়ি কেটে যায়, এমনিতে এতো সময় তাড়াতাড়ি যায় কিনা নায়নীর সন্দেহ। এই সব ভাবতে ভাবতেই নায়নীর ঘরের সামনে এসে আকর্ষ বাইক থামায়। আকর্ষ বলে,
"এসে পড়েছি ম্যাম।"
এই কথা শুনে নায়নীর ঘোর ভাঙে, দেখে আসলেই এসে পড়েছে। নায়নী আকর্ষের কাঁধে হাত দিয়ে বাইক থেকে নামলো।
নায়নী বাইক থেকে নেমে বললো,
"আজ তাহলে আসি কালকে অফিসে দেখা হবে। "
"ঠিক আছে।"
এই বলে আকর্ষ সেখানেই দাঁড়িয়ে রইলো। নায়নী বললো,
"তুমি যাবে না? নাকি এইখানেই রাত কাটানোর পরিকল্পনা করছো।"
"নাহ নাহ এইখানে তো থাকা যায় না। তুমি আগে যাও, তারপর যাচ্ছি।"
নায়নী হেসে দিলো এই কথা শুনে,
"ঠিক আছে।"
এই বলে নায়নী চলে আসলো নিজের ঘরে। ঘরে আসার পর বারান্দায় এসেছে দেখলো আকর্ষ তখনও দাঁড়িয়ে আছে। নায়নী তাই ইশারায় বললো,
"এখন যাও।"
নায়নী ঘরে গিয়েছে দেখার পর, বাইক ঘুরিয়ে আকর্ষ নিজের বাড়ির জন্য রওনা দিলো। আকর্ষ এই রকমই যদি আকর্ষ নায়নীকে নিয়ে কোথাও যায় তাহলে আকর্ষ নায়নীকে নিজের ঘরে পৌছিয়ে দিবে, আর যতক্ষন না পর্যন্ত নিজের বারান্দায় আসছে ততক্ষন পর্যন্ত আকর্ষ সেখান থেকে যাবে না। নায়নী মনে মনে ভাবে ছেলেটার মাথায় কোনো সমস্যা আছে কিনা। নাহলে এত কেয়ার ওর মতো একজনের জন্য? এর পিছনের কারণ কি তা নায়নী জানে না।
ঘরে এসে ফ্রেশ হয়ে, রাতের খাবার খেয়ে নেয় নায়নী। খাওয়া দাওয়া শেষ করে, বিছানায় নিজের শরীরটা মিশিয়ে দেয়। সারাদিন এই অফিসের কাজ আর তারপর আকর্ষের সাথে ঘোরাঘুরি করার পর ওর শরীর অনেক টায়ার্ড হয়ে গিয়েছে।
নায়নী বিছানায় শুয়ে শুয়েই ভাবলো অনেক দিন রাখির সাথে কথা হয় না তাই ও নিজে থেকেই ফোন দিলো।
কয়েকবার রিং হলো তারপর নায়নীর ফোন ধরলো। ফোন ধরার পর রাখি বলে উঠলো,
"বাহ্ আমার বান্ধবী এতো ভালো হলো কবে থেকে শুনি?"
এই কথা শুনে নায়নী বললো,
"মানে আমি খারাপ ছিলাম কবে?"
"নাহ নাহ সেটা বলিনি?"
"তাহলে?"
"তুই তো আমাকে কল দিতিস না। আমি কল না দিলে। তাই বললাম।"
"আচ্ছা তাহলে কলটা রেখে দেই নাকি?"
"নাহ থাক দিয়েছিস যখন বল তাহলে কেমন আছিস?"
"ভালো আছি তুই কেমন আছিস।"
"আমি তো ভালো আছি। তোর ছেলে আর জামাইবাবু কেমন আছে?"
"ওরা সবাই খুব ভালো আছে।"
"আচ্ছা।"
"তা সেদিন যে শাড়ি পড়লি তা সেই শাড়ি পড়ার কারণ কিন্তু আমি এখনও জানি না।"
"ঐতো একটু ঘুরতে গিয়েছিলাম তার জন্য পড়েছিলাম এই আর কি।"
"নাহ নাহ তুই শুধু ঘোরার জন্য আমাকে ফোন দিয়ে ঐভাবে বলতি না যে কি পড়বো? এইখানে আরো একটা কিছু আছে।"
"কি থাকবে কিছুই নেই?"
"নাহ আছে আমি জানি। আমাকে বল।"
এই কথা শুনে নায়নী একটু ভাবলো আর বললো,
"ঠিক আছে বলতে পারি কিন্তু আমার কথা শুনে হাসবি না বা মজা নিবি না, ঠিক আছে?"
"আচ্ছা বাবা ঠিক আছে এখন বল।"
"আসলে আমাদের অফিসে নতুন একটা ছেলে এসেছে নাম আকর্ষ ঐ ওর সাথে ঘুরতে গিয়েছিলাম। "
" কি বলিস তুই আবার একটা ছেলের সাথে ঘুরতে গিয়েছিলি? "
"হুমম গিয়েছিলাম।"
"তা ছেলেটা দেখতে কি রকম?"
"দেখতে? "
এই বলে নায়নী কিছুক্ষন ভাবলো আর বললো,
"দেখতে সুন্দর বলা চলে। লম্বা ফর্সা, খুব স্পষ্টভাষী আর নিজের কাজ নিয়ে খুব সিরিয়াস।"
"বাহ্ তা ছেলের বয়স কতো?"
"বয়স মাত্র ২৭।"
"কি বলিস মাত্র ২৭ এই ছেলে তো তোর থেকে অনেক ছোটরে। "
"হুমম তাই তো এই ছেলের নাম দিয়েছি পিচ্চি।"
এই বলে নায়নী হাসতে লাগলো। রাখি ফোনের মধ্যেই ওর হাসি শুনতে পারছে। এই রকম করে শেষ কবে নায়নীকে হাসতে শুনেছে রাখির মনে পড়ে না। রাখির এইটা ভেবেই খুশি লাগছে যে নায়নী হাসছে।
"তা কিভাবে কি হলো?"
তখন নায়নী শুরু থেকে সব বললো, সব শুনে রাখি বললো,
"ইসস কি শোনালি তুই আমাকে।সব শুনে তো আমার এইটা পিচ্চি ছেলেটাকে খুব দেখতে ইচ্ছে করছে। কোনো ছবি নেই?"
"নাহ তো কোনো ছবি নেই।"
"যাহঃ বাবা এতো দিন ধরে চিনিস তোর অফিসে তোর আন্ডারে কাজ করে আর তোর কাছে কোনো ছবি নেই?"
"নাহ তো আসলে সত্যি বলতে কখনো ছবির দরকার হয়নি তাই আমার কাছে ওর কোনো ছবি নেই।"
"বাহ্ দেখো মেয়ের কান্ড এতো দিন হয়ে গেলো এখনও তার কাছে একটা ছবি নেই।"
"তাই কি?"
"তাই কি মানে? তোর এখন একটাই কাজ তুই যত তাড়াতাড়ি পারবি আমাকে ঐ ছেলের একটা ছবি দিবি। ঠিক আছে।"
"ইসস ছেলেটা মনে হয় সেই সেক্সি তোর কথা শুনে যা বুঝলাম।"
"হুমম তা বলতে পারিস।"
"তোর কি কপাল দেখ এইটা বয়সে কি সুন্দর নিজের চেয়ে ছোট ছেলের সাথে ঘুরছিস মজা করছিস। আর আমার বরটার ভুঁড়ি বের হচ্ছে খেয়ে খেয়ে। আমিও যদি তোর ঐ আকর্ষের মতো একটা ছেলে পেতাম।"
"কেন জামাইবাবুর কি সমস্যা। জামাইবাবু তো এখনও সেই দেখতে ঠিক আছে। এইটা বিয়ের পর শরীরটা একটু ভারী হয়ে গিয়েছে এইটা আর কি?"
"হুমম কি আর করা যাবে বল। আচ্ছা শোন না একদিন আমাকে কথা বলিয়ে দিস আর যদি আমি কলকাতা আসি তাহলে আমাকে দেখা করিয়ে দিবি। ঠিক আছে?"
" ঠিক আছে বাবা। "
"নায়নী আমার একটা কথা বলার বলার আছে
"হ্যাঁ বল না কি কথা?"
"আমার মনে হয় আকর্ষ তোকে ভালোবাসে"
এই কথা শুনে নায়নী খুব বেশি অবাক হলো না।
আকর্ষের এতদিনের কর্মকাণ্ড যদি কেউ শোনে তাহলে সত্যি বলবে আকর্ষ নায়নীকে ভালোবাসে।
কিন্তু নায়নী সিওর না তাই বললো,
" সত্যি বলতে আমি জানি না আর জানতেও চাই না।আমাদের মাঝে সুন্দর একটা বন্ধুত্ব আছে। এইটাই অনেক এখন দেখি কোথায় নিয়ে যায় ভাগ্য। "
"নায়নী ভাগ্য সবাইকে দুইবার সুযোগ দেয় না। তুই পেয়েছিস আশা করি এই সুযোগ হাতছাড়া করবি না।"
"ঠিক আছে আজকে তাহলে রাখি। অনেক রাত হলো।"
"ঠিক আছে। আর ফোন করিস।"
"ঠিক আছে বাই।"
"বাই।"
চলবে
এই গল্প যদি ভালো লেগে থাকে অবশ্যই কমেন্ট করে জানাবেন। যদি কোনো মতামত থাকে জানাতে ভুলবেন না। অথবা টেলিগ্রাম এ এসএমএস দিতে পারেন @Paradox787898 এই নামে। আপনাদের এসএমএস এ আমি উৎসাহ পাই। তাই আমাকে বেশি বেশি করে উৎসাহ দিবেন এই আশা করি।