Thread Rating:
  • 135 Vote(s) - 3.69 Average
  • 1
  • 2
  • 3
  • 4
  • 5
Adultery পদ্ম নাগের বিষ
বিপ্লবের স্ত্রী অনিতা অধিক স্বাস্থ্যবতী নারী। ওরা বিদেশ যাবার আগে এটাই বোধ হয় শেষ ভ্রমণ। নিঃসন্তান এই দম্পতি বহু জায়গা ঘুরে বেড়িয়েছে। তাদের অবশ্য সুন্দরবন কখনো আসা হয়নি।

দ্বিপ্রাহরিক আহারের পর দাঁত খুঁটতে খুঁটতে নদীর দক্ষিণা বাতাস খেতে হাজির হল বিপ্লব নদীর পাড়ে। সঙ্গে পীযুষ। অনতিদূরে রমা ও অনিতা গৃহস্থালী গল্পে মশগুল।
লতা কলতলায় বাসন কোচনগুলো ধুয়ে ফেলতে ব্যস্ত। হাঁটু অবধি নদীর জলে নেমে ডিঙির দড়ি গোছাচ্ছে শম্ভু। ষষ্ঠীপদ হাজির হল জাল নিয়ে। বললে---সার যাবেন লা কি, মাছ ধরা দেইখতে?

পীযুষ বললে---কি হল বিপ্লব যাবি নাকি?

----মাছ ধরা? মানে এই নদীতে? কি যেন বললি নদীর নাম?

---কালনাগিনী। উত্তর দিল পীযুষ।

---একটা সাপ আছে না ঐ নামে?

পীযুষ হাসলো। বলল---আছে। বাংলার উপকথার সাথে অত্যন্ত পরিচিত। মনসামঙ্গল কাব্যে লখিন্দরকে কামড় দিয়েছিল কালনাগিনী। আসলে একটা নির্বিষ সুদর্শন সাপ।

ষষ্ঠীপদ বললে---শম্ভুর ঠাকুরদাদার নামটা লখিন্দর কি লা?

শম্ভু ঠোঁটের ফাঁকে বিড়ি জেঁকে ভারী কাজ করতে করতে বললে---শুনছি। আমি তারে দিখি লাই। তবে কি জানেন সার, কালনাগিনী কাটলে লোক মইরে যাওয়া তো দূর, জ্ঞান হারাইবে এমনটাও হয় লা। তবে বেহুলা যে তারে মনসা মার লগে চিকিচ্ছা কইরতে লিয়ে গেল নদী বুকে, সে যে তার জ্ঞান ছিল লাই।

পীযুষ বললে---শম্ভু, তুমি পড়েছ মনসা মঙ্গল?

---লা, পইড়ি লাই। আমি মূর্খ মানুষ। গেরামে পালাগান হইলে দেইখছি।

---তোমার কি মনে হয় এসব সত্য? তুমিই তো বলছিলে মন্ত্রতন্ত্রয় চিকিৎসা হয় না।

শম্ভু কোনো উত্তর করল না। বলল---যাঃ লুঙ্গি গামছা লিতে ভুইলে গেছি।

ষষ্ঠীপদ বললে---যা যা লিয়ে আয় জলদি। কি সার'রা যাবেন লা কি?

শম্ভু জল কাদা ডিঙিয়ে নদীর পাড়ে উঠতেই রমা এগিয়ে এলো দূর থেকে। বললে--জলে যাবে, এগুলো কে নেবে?

পীযুষ দেখল রমা ঠিক দায়িত্বশীলা স্ত্রীর মত শম্ভুর লুঙ্গি গামছা এনেছে। শম্ভু ওটা খুব সহজাত ভাবে গ্রহণ করল। যেন রমা ওর বহুদিনের দাম্পত্য সঙ্গিনী, এভাবেই রমা ওর স্ত্রী ভূমিকা পালন করে আসছে। পীযুষের বিষয়টা এড়ালো না।

বিপ্লব বলল---গেলে তো হয়। ঘরে বসে কি করব? মেয়ে মহলে ওরা গল্প করুক। চল আমরা বরং নদীটা ঘুরে আসি।

পীযুষ ঈষৎ হেসে বলল---নদীটা নয়। সুন্দরবনে অজস্র নদী। এই নদীই শাখা প্রশাখার মত বহু নদীতে মিশেছে। কি হে ষষ্ঠীপদ ঠিক বলছি কিনা?

---সামনে ইগুলেই মাতলা, রায়মঙ্গল, বিদ্যাধরী সব আছে। সময় থাইকলে সব নদী'ই পাইবেন।

অনিতা বললে---ওমা তোমরা এখন নদীতে যাবে নাকি?

বিপ্লব বললে---ঘরে বসে কি করব? তুমি আর রমা বৌদি গল্প করো। আমরা পুরুষ মানুষরা ঘুরে আসি।

নদীপাড় হতে ডিঙি ছাড়ার আগেই শম্ভু বললে---বিড়ি প্যাকেট লিয়ে এসছিস ষষ্ঠী।

----না তো রে। ভুইলে গেলাম। কোমরে দু খান আর বিড়ি আছে মাত্র।


নদীদের সুখ দুঃখ মানুষের মত। তারা প্রতারক নয়। তারা বহমান ভালোবাসা আর যন্ত্রনা নিয়ে প্রতিদিন মিলিত হচ্ছে সাগরে। নদীর এপারে অরণ্য, ওপারেও তাই। শক্ত পেশল হাতে দাঁড় টানছে শম্ভু। সবল যুবকের কৃষ্ণবর্ণ বাহু ফুলে উঠছে শ্রমসাধ্য কাজে। বিকেলের সূর্যাস্তের আভায় নদী কমলা রংয়ের। ষষ্ঠী বলল---আজ পূর্ণিমা, ই নদী রাইতের আলোয় রুপালি হই যাবে।

জাল ফেলে টপটপ মাছ ধরছে ষষ্ঠী। কি শৈল্পিক দক্ষতায় ওরা মাছ ধরছে। ধীরে ধীরে সন্তর্পনে গুটিয়ে আনছে জাল। বেছে বেছে বড় মাছগুলো রেখে ছোটগুলো ছেড়ে দিচ্ছে।

শম্ভুর আজ বাজারে মাছ বিক্রি করার ইচ্ছে নেই। যতটুকু ধরছে বাড়ির আগত অতিথিদের জন্য। এদিকে লোভ সামলাতে না পেরে বাজার থেকে থলে ভর্তি করে পীযুষ নোনা মাছ কিনে এনেছে। এত মাছ খাবে কে!

সন্ধ্যে গড়াতে সত্যিই নদী রুপালি হয়ে উঠল। ষষ্ঠী নতুন অতিথি বিপ্লবের দিকে চেয়ে বলল---সার, যাবেন লা কি মাতলার দিকটা? ইদিক দিয়া বজরা গিছিলি গো রাজা জমিদারের।

বিপ্লব রসায়নের অধ্যাপক হলেও ইতিহাসে আগ্রহ আছে। উৎসাহিত হয়ে বলল---এই রাতে যাওয়া যায়?

---কেন নয়। ঐ দেখ দূরে ওটা। ছোট ট্রলার বোধ হয়। পীযুষ জবাব দিল।

ষষ্ঠী বলল---সিটা মাতলার বুকে। দিখেন অনেকগুলা ছোট ডিঙ্গাও আছে।

শম্ভু এতক্ষন নদী বুকে কেমন চুপ করে ছিল। গুমর ভেঙে অকস্মাৎ বলল---আমারে ফিইরতে হবে জলদি। তু সার'দের লিয়ে নদী ঘুরায় দিখাবি। সরবেড়িয়া বাজারে গেরামের লোকদের মিটিং আছে আজ। মিটিংয়ে না গিলে, বুসে মাছ বিকতে দিবে লা ইদ্রিসের লোক।

----তু যাবি কেমন কইরে?

---মাতলা ঘাটে ভিড়াই দে। কারুর একটা ডিঙ্গা ধরাই লিয়ে রসুলপুর চইলে যাবো।

পীযুষ বললে---তোমাদের যদি তাড়া থাকে, তাহলে ফিরেই চলো।

ষষ্ঠীপদ বললে---লা সার। কুনো অসুবিধা লাই। মোর সাথে থাইকেন। শম্ভু চইলে যাক।
Like Reply


Messages In This Thread
পদ্ম নাগের বিষ - by Henry - 21-10-2023, 11:21 PM
RE: পদ্ম নাগের বিষ - by Henry - 25-02-2024, 11:17 PM



Users browsing this thread: 6 Guest(s)