18-06-2019, 09:20 AM
বিকেলে স্টেশনে গিয়ে জয়নালের কথা মত জায়গায় উপস্থিত হল নির্মল।লম্বা চওড়া দৈত্যাকার জয়নালকে যে কেউ চিনতে ভুল করবে না।জয়নাল আসতেই কাগজে মোড়া টাকার প্যাকেটটা বাড়িয়ে দিল নির্মল।
জয়নাল হলদে খৈনি খাওয়া দাঁতগুলো বের করে বিচ্ছিরি ভাবে হাসল।
----বাবু, আমি কুলি বলে কি ভিখারি পাইলেন।আমার জমিন, বাস্তু সব আছে।পয়সা লিয়ে কি করব।
---মানে?
---মানে কিছু না বাবু।আমি যখন কথা দিছি সাক্ষী দিব না।দিব না।কিন্তু কথা রাখতে হলে আমার মত ঢেমনা লোকের কিছু চাই।
---আর কি চাও তুমি?
---মরদ লোক কি চায় সে আপনি মরদ হয়ে বুঝলেননি? আমার একটা মেয়েছেলে লাগবে।
নির্মল এমনিতেই ছাপোষা বাঙালি সরকারি কর্মচারী, ভীতু ধরনের লোক।এমন প্রস্তাব শুনে তার সম্মানে লাগছিল।কিন্তু সে জানে সে যার সাথে কথা বলছে সে একটা ছোটলোক।কিন্তু এখন এই ছোটলোকের সাথেই তার রফা করা জরুরী।
----আমি পয়সা দিচ্ছি তুমি মেয়েছেলে পেয়ে যাবে।না হয় অ্যামাউন্ট বাড়িয়ে দিব।
আবার একদফা হাসল জয়নাল।এবারটা হিংস্র অট্টহাসি।
-----বাজারী মেয়েছেলে লাগিয়ে কি সুখ মিলবে বাবু? আমার ঘরোয়া বড় ঘরের বউ দরকার।যেমনটা ভাবি মানে আপনার বিবি আছে।মানে আমি টারায়াল হতে যে দু মাস বাকি আছে সেই দু মাসের লগে ভাবিরে চাই।এইটা আমার পাক্কা কথা।
শান্তশিষ্ট নির্মল সরকার আগে কখনোই এত রেগে যায়নি।তার ইচ্ছা করছে এই লোকটাকে এখুনি মেরে ফেলতে।কিন্তু সে অপারগ।
---রাস্কেল! ভেবেছ কি? মশকরা হচ্ছে?
---চোখ রাঙাবেনা বাবু।আমার গতরের জোর গোটা হাঁসডাঙা গ্রাম ভয় পায়।আপনার লগগে যা বলছি তা আপনি ভাবেন।যদি ঘানি না টানতে চান, তবে বউটাকে দুমাসের জন্য আমার কাছে বন্দক রাখেন।আমার এককথা।আমি সাক্ষী দিতে যাবোনি।
কিছু বলবার আগেই জয়নাল মন্ডল চলে গেল।মাথাটা ঘুরাচ্ছিল নির্মলের।কোনোরকম সে ট্যাক্সি নিয়ে বাড়ী ফিরে এলো।
মিতালি টিভি দেখছে।সিন্টু পড়ার ঘরে বসে অঙ্ক করছে।
---চা খাবে? মিতালি জিজ্ঞেস করল।
নির্মল কোনো উত্তর দিল না।সোজা ঘরের মধ্যে চলে গেল।মিতালি বুঝতে পারছিল কিছু একটা সমস্যা হয়েছে।
স্বামীর পিছন পিছন এসে বলল---কি হল? কিছু বললে না তো?
----জয়নাল মন্ডল টাকা নেয়নি।
----নেয়নি? কেন? সকালে তো রাজি হল।তুমি একবার পোদ্দার দা'কে ফোন করো।
---কোনো লাভ নেই।
পাশের ঘর থেকে সিন্টু ডাক দিল---মা?
মিতালি ব্যস্ত হয়ে পড়ল সিন্টুকে অঙ্ক করাতে।মাঝে চা করে এনে দিল নির্মলকে।
নির্মল সরকারের মনে হচ্ছে তার মাথায় যেন বাজ পড়েছে।এ যাবৎ এই চুয়াল্লিশ বছর বয়সে তার এমন কখনো হয়নি।সামনেই সিন্টুর মাধ্যমিক।ততদিনে নির্মল হয়তো জেলে।চাকরী চলে যাবে।যে সঞ্চয় সে ব্যাঙ্কে রেখেছে সেখান থেকে জরিমানা দিতে হবে।বাকিটা দিয়ে মিতালি কি পারবে সংসার চালাতে? কি হবে সিন্টুর ভবিষৎত? তাদের একমাত্র ছেলের?
নির্মল আগে প্রচুর সিগারেট খেত।এখন মিতালির কড়াকড়িতে কম খায়।খোলা ছাদে দাঁড়িয়ে সিগারেটের ধোঁয়াগুলো কুন্ডলী পাকিয়ে যাচ্ছে।
মিতালি পেছনে এসে বলল---তুমি পোদ্দার দা'কে ফোন করলে না? পোদ্দার দা কিছু তো একটা করতে পারত?
সিগারেট টুকরোটা ছুঁড়ে দিয়ে নির্মল মিতালীর কাঁধ ধরে ঝাঁকিয়ে বলল---মিতু তুমি পারবে তো একা সংসার সামলাতে?
মিতালি বলল---কেন এরকম বলছ? ওই লোকটা কত টাকা চায়?
নির্মল রেগে গেল।বলল---ও একটা জানোয়ার, ইতর।ওর চেহারাই তার প্রমান দিচ্ছিল।
---আমি একবার পোদ্দার দা'কে ফোন করি?
---কিছু লাভ হবে না মিতু?
---ওই লোকটা কেন এমন করল?সকালেই তো বলল কুড়ি হাজার টাকায় ও রাজি।আমার কিন্তু লোকটিকে দেখেই বর্বর লোভী মনে হচ্ছিল।দেখ আরো কিছু টাকা চায় হয়ত।
-- মিতু ওই লোকটা অসভ্য বর্বর সব কিছুই।কিন্তু ও টাকা চায় না।
----তবে কি চায়?
----- ও যা চায় সেটা আমার কাছে ভীষন মূল্যবান।
---কি চায় ও? কি মূল্যবান? তোমার জীবন আমাদের সংসার আমাদের ছেলের ভবিষ্যৎ সব নস্ট হয়ে যাবে।তার চেয়ে কি মূল্যবান? মিতালি উদ্ভ্রান্তের মত বলল।
নির্মলের জিভ আড়ষ্ট হয়ে উঠছিল।---ও তোমাকে চায় মিতু! ওই শয়তানটা তোমাকে চায়!
---কি বলছ কিছু বুঝলাম না!
----ও একটা মেয়ে লোভী নোংরা নরকের কীট।ও তোমাকে দু মাসের জন্য চায়।
মিতালির কান ঝাঁ ঝাঁ করছিল।সে একটি সন্তানের মা।একজনের স্ত্রী।তাকে নিয়ে এমন নোংরা কামনা কারোর থাকতে পারে সে কখনোই ভাবেনি।
-----
(চলবে)
জয়নাল হলদে খৈনি খাওয়া দাঁতগুলো বের করে বিচ্ছিরি ভাবে হাসল।
----বাবু, আমি কুলি বলে কি ভিখারি পাইলেন।আমার জমিন, বাস্তু সব আছে।পয়সা লিয়ে কি করব।
---মানে?
---মানে কিছু না বাবু।আমি যখন কথা দিছি সাক্ষী দিব না।দিব না।কিন্তু কথা রাখতে হলে আমার মত ঢেমনা লোকের কিছু চাই।
---আর কি চাও তুমি?
---মরদ লোক কি চায় সে আপনি মরদ হয়ে বুঝলেননি? আমার একটা মেয়েছেলে লাগবে।
নির্মল এমনিতেই ছাপোষা বাঙালি সরকারি কর্মচারী, ভীতু ধরনের লোক।এমন প্রস্তাব শুনে তার সম্মানে লাগছিল।কিন্তু সে জানে সে যার সাথে কথা বলছে সে একটা ছোটলোক।কিন্তু এখন এই ছোটলোকের সাথেই তার রফা করা জরুরী।
----আমি পয়সা দিচ্ছি তুমি মেয়েছেলে পেয়ে যাবে।না হয় অ্যামাউন্ট বাড়িয়ে দিব।
আবার একদফা হাসল জয়নাল।এবারটা হিংস্র অট্টহাসি।
-----বাজারী মেয়েছেলে লাগিয়ে কি সুখ মিলবে বাবু? আমার ঘরোয়া বড় ঘরের বউ দরকার।যেমনটা ভাবি মানে আপনার বিবি আছে।মানে আমি টারায়াল হতে যে দু মাস বাকি আছে সেই দু মাসের লগে ভাবিরে চাই।এইটা আমার পাক্কা কথা।
শান্তশিষ্ট নির্মল সরকার আগে কখনোই এত রেগে যায়নি।তার ইচ্ছা করছে এই লোকটাকে এখুনি মেরে ফেলতে।কিন্তু সে অপারগ।
---রাস্কেল! ভেবেছ কি? মশকরা হচ্ছে?
---চোখ রাঙাবেনা বাবু।আমার গতরের জোর গোটা হাঁসডাঙা গ্রাম ভয় পায়।আপনার লগগে যা বলছি তা আপনি ভাবেন।যদি ঘানি না টানতে চান, তবে বউটাকে দুমাসের জন্য আমার কাছে বন্দক রাখেন।আমার এককথা।আমি সাক্ষী দিতে যাবোনি।
কিছু বলবার আগেই জয়নাল মন্ডল চলে গেল।মাথাটা ঘুরাচ্ছিল নির্মলের।কোনোরকম সে ট্যাক্সি নিয়ে বাড়ী ফিরে এলো।
মিতালি টিভি দেখছে।সিন্টু পড়ার ঘরে বসে অঙ্ক করছে।
---চা খাবে? মিতালি জিজ্ঞেস করল।
নির্মল কোনো উত্তর দিল না।সোজা ঘরের মধ্যে চলে গেল।মিতালি বুঝতে পারছিল কিছু একটা সমস্যা হয়েছে।
স্বামীর পিছন পিছন এসে বলল---কি হল? কিছু বললে না তো?
----জয়নাল মন্ডল টাকা নেয়নি।
----নেয়নি? কেন? সকালে তো রাজি হল।তুমি একবার পোদ্দার দা'কে ফোন করো।
---কোনো লাভ নেই।
পাশের ঘর থেকে সিন্টু ডাক দিল---মা?
মিতালি ব্যস্ত হয়ে পড়ল সিন্টুকে অঙ্ক করাতে।মাঝে চা করে এনে দিল নির্মলকে।
নির্মল সরকারের মনে হচ্ছে তার মাথায় যেন বাজ পড়েছে।এ যাবৎ এই চুয়াল্লিশ বছর বয়সে তার এমন কখনো হয়নি।সামনেই সিন্টুর মাধ্যমিক।ততদিনে নির্মল হয়তো জেলে।চাকরী চলে যাবে।যে সঞ্চয় সে ব্যাঙ্কে রেখেছে সেখান থেকে জরিমানা দিতে হবে।বাকিটা দিয়ে মিতালি কি পারবে সংসার চালাতে? কি হবে সিন্টুর ভবিষৎত? তাদের একমাত্র ছেলের?
নির্মল আগে প্রচুর সিগারেট খেত।এখন মিতালির কড়াকড়িতে কম খায়।খোলা ছাদে দাঁড়িয়ে সিগারেটের ধোঁয়াগুলো কুন্ডলী পাকিয়ে যাচ্ছে।
মিতালি পেছনে এসে বলল---তুমি পোদ্দার দা'কে ফোন করলে না? পোদ্দার দা কিছু তো একটা করতে পারত?
সিগারেট টুকরোটা ছুঁড়ে দিয়ে নির্মল মিতালীর কাঁধ ধরে ঝাঁকিয়ে বলল---মিতু তুমি পারবে তো একা সংসার সামলাতে?
মিতালি বলল---কেন এরকম বলছ? ওই লোকটা কত টাকা চায়?
নির্মল রেগে গেল।বলল---ও একটা জানোয়ার, ইতর।ওর চেহারাই তার প্রমান দিচ্ছিল।
---আমি একবার পোদ্দার দা'কে ফোন করি?
---কিছু লাভ হবে না মিতু?
---ওই লোকটা কেন এমন করল?সকালেই তো বলল কুড়ি হাজার টাকায় ও রাজি।আমার কিন্তু লোকটিকে দেখেই বর্বর লোভী মনে হচ্ছিল।দেখ আরো কিছু টাকা চায় হয়ত।
-- মিতু ওই লোকটা অসভ্য বর্বর সব কিছুই।কিন্তু ও টাকা চায় না।
----তবে কি চায়?
----- ও যা চায় সেটা আমার কাছে ভীষন মূল্যবান।
---কি চায় ও? কি মূল্যবান? তোমার জীবন আমাদের সংসার আমাদের ছেলের ভবিষ্যৎ সব নস্ট হয়ে যাবে।তার চেয়ে কি মূল্যবান? মিতালি উদ্ভ্রান্তের মত বলল।
নির্মলের জিভ আড়ষ্ট হয়ে উঠছিল।---ও তোমাকে চায় মিতু! ওই শয়তানটা তোমাকে চায়!
---কি বলছ কিছু বুঝলাম না!
----ও একটা মেয়ে লোভী নোংরা নরকের কীট।ও তোমাকে দু মাসের জন্য চায়।
মিতালির কান ঝাঁ ঝাঁ করছিল।সে একটি সন্তানের মা।একজনের স্ত্রী।তাকে নিয়ে এমন নোংরা কামনা কারোর থাকতে পারে সে কখনোই ভাবেনি।
-----
(চলবে)