Thread Rating:
  • 9 Vote(s) - 2.44 Average
  • 1
  • 2
  • 3
  • 4
  • 5
Adultery মুখোশের অন্তরালে(জীবনে ঘটে যাওয়া অদ্ভুত বিষাদময়তার আখ্যান)
#31
ছিঃ! শব্দটি ব্যবহার করে ড্রাইভার আবার মুখ সামনের দিকে ফিরিয়ে গাড়ি স্টার্ট নিল। ভবানীপুর থেকে সল্টলেক বেশ অনেকটা রাস্তা পথ। আজ বিকেলে ঢাকুরিয়ায় প্রণবেশের বাড়িতে এসেছিল পূবালী। প্রণবেশই ডেকেছিলেন ওকে। ফোন করে নয়, মেসেজে। একটিই বাক্য—পারছি না। প্লিজ এসো লক্ষ্মীটি। এই ডাককে প্রতিবার উপেক্ষা করার চেষ্টা করে পূবালী। কিন্তু কী যে দুর্নিবার এক আকর্ষণ ও শেষ পর্যন্ত পারে না নিজেকে আটকে রাখতে। মেসেজের রিপ্লাই না দিয়েও ঠিক সময় গিয়ে উপস্থিত হয়েছিল প্রণবেশের বাড়িতে। তারপর সেখান থেকে দুজনে গিয়েছিল ক্লিনিকে। এখন গন্তব্য সল্টলেক।

প্রফেসর প্রণবেশ গুপ্ত। ইংরেজির অধ্যাপক প্রণবেশ গুপ্তকে ইউনিভার্সিটির ছেলে মেয়েরা পিজি বলে ডাকে। তবে পি ফর প্রণবেশ নয়, পি ফর পাগলা জি ফর গুপ্ত। পাগলা গুপ্ত। তবে এটাও ঠিক পিজির ক্লাস করার জন্য ক্লাসের স্টুডেন্টরা মুখিয়ে থাকে। কী অসাধারণ যে পড়ান উনি, কী যে এক অমোঘ আকর্ষণ রয়েছে তাঁর কথায়, তাঁর প্রতিটি শব্দচয়নে, এবং ওনার উপস্থিতিতে। সকলের মতো পূবালী মুগ্ধ ছিল পিজির প্রতি। এমন অসাধারণ আবেগ দিয়ে তিনি বোঝাতেন কিটস, শেলি, ওয়ার্ডসওয়ার্থ-এর কবিতাগুলো, যে নতুন ভাবনায় ধরা পড়ত তাদের লেখা কবিতার আখরগুলি। ক্লাসে পূবালীকে বন্ধুরা ডাকত মিস বার্বি নামে। এখনও পুরনো বন্ধুরা ওই নামেই ডাকে। এই ডাক অযৌক্তিক নয়। মাত্র পাঁচফুট হাইটের পূবালী অবিকল একটি মেম পুতুল যেন। চোখ ধাঁধানো ফর্সা, ভরাট তুলতুলে গড়ন, একমাথা কোঁকড়া বাদামি আভার চুল ঘাড় পর্যন্ত ছুঁটে ছুঁয়ে থাকে। শরীর তার এমনই কোমল যে ঢালু কাঁধে ব্রায়ের স্ট্র্যাপ পর্যন্ত যেন কামড়ে বসে দাঁতের দাগ ফেলে দেয়। পূবালীর এখনও মনে পড়ে পিজি প্রথমবার যখন পূবালীর ব্র্যায়ের স্ট্র্যাপে হাত দিয়েছিলেন, ওই দগদগে লাল হয়ে ওঠা লম্বা লাইন বরাবর কী পরম যত্নে বার বার হাত বুলিয়েছিলেন, নিজের ঠোঁট রেখেছিলেন করুণ আদরে। ফর্সা ফোলা গাল, পুরু টুকটুকে লাল দুটি ঠোঁট আর দীর্ঘায়ত একজোড়া চোখের প্রতি স্বাভাবিক- ভাবে আকৃষ্ট ছিল ইউনিভার্সিটির অধিকাংশ পুরুষ। স্কুল জীবন থেকেই অসংখ্য নিত্যনতুন প্রণয় প্রস্তাবে প্রতিদিন ভরে উঠত তার দুই হাত। একটা সময়ে এইসব প্রস্তাব আর তাকিয়েও দেখত না ও, ভাল করে শুনতেও ইচ্ছে করত না। মনে হত এই পৃথিবীর পুরুষেরা বুঝি প্রেমের প্রস্তাব দিতেও ভুলে গেছে, তাদের প্রতিটি প্রেম- প্রস্তাবে তীব্র চাহিদা রয়েছে, ভালবাসা নেই। ফলে পুরুষের প্রতি যে স্বাভাবিক আকর্ষণবোধ তা পূবালী হারিয়ে ফেলছিল, এবং এই হারিয়ে ফেলায় ও ভয় পাচ্ছিল। কাউকে আর আলাদা মনে হত না, সকলেই একইরকম। তবে তাই বলে নিজের প্রতি কখনও অসচেতন হয়নি সে। বরাবরের সৌন্দর্যসচেতন পূবালী নিজেকে নিজের মনের মতই সাজিয়েছে দুইবেলা। বাবা সরকারি ব্যাঙ্কে উচ্চপদে কাজ করে অধিষ্ঠিত, মাও বেসরকারি ব্যাঙ্কে কর্মরতা ফলে বরাবরই একটি স্বচ্ছল পরিবার পেয়েছে। পারিবারিক সচ্ছলতার অভাব কোনওদিনই ছিল না তার। আদরের মেয়েকে না চাইতেই তার জন্য নানারকম উপহারে ভরিয়ে দিয়েছে বাবা। ফলত একটি নিরুপদ্রব শৌখিন জীবন বরাবর কাটিয়ে এসেছে ও জীবনে অভ্যস্ত হয়ে পড়েছিল ও। সবরকমের পোশাকেই পূবালীকে চমৎকার দেখতে লাগে তাই নিজের পছন্দের আর বাবা মার নিয়ে আসা অজস্র দেশি বিদেশি পোশাকে ভরা ওর আলমারি। কলেজের ছেলেদের পুরুষদের মুগ্ধ অসহায় দৃষ্টিগুলোকে উপেক্ষা করতে করতে দিনগুলো বছরগুলো পার হয়ে গেল, চলে যাচ্ছিল কিন্তু কলেজ পেরিয়ে ইউনিভার্সিটিতে আসার পর যেদিন প্রথম পিজির ক্লাস করল পূবালী সেদিনই প্রথম টের পেল একজোড়া অন্যমনস্ক চোখ, যে যেন ওকে দেখেও দেখছে না। অবাক হয়েছিল। স্কুল কলেজের স্যারদের চোখেও যে এক পুরুষালি লুব্ধ পুরুষ-মুগ্ধতা দেখে অভ্যস্ত হয়েছিল। পূবালী সেই প্রথমবার তার ব্যত্যয় দেখে বিস্মিত হয়েছিল। এ কী সম্ভব! প্রথম কয়েকটি ক্লাস করার পর ভেবেছিল স্যর বুঝি ওকে খেয়াল করেননি। কিন্তু তারপর ইচ্ছে করেই একদিন সামনের বেঞ্চে বসে দেখল স্যার পড়াচ্ছেন অথচ ওর প্রতি আলাদা অভিনিবেশ নেই তার দৃষ্টিতে সত্যিই কোনও আলাদা অ্যাটেনশন নেই! পড়াতে পড়াতে একেবারেই নিরাসক্ত নৈমিত্তিক চাউনি। লোকটা যেন নিজের কথাতেই বিভোর।

চলবে
Like Reply


Messages In This Thread
RE: মুখোশের অন্তরালে(জীবনে ঘটে যাওয়া অদ্ভুত বিষাদময়তার আখ্যান) - by Nazia Binte Talukder - 20-02-2024, 10:16 PM



Users browsing this thread: 1 Guest(s)