20-02-2024, 09:39 PM
পর্ব ১: টিটুর জন্মের আগে
*******আপনার এরকম অনুভূতি হতো?
বাবা এক দেড় মাসের ছুটি নিয়ে বাড়িতে আসতেন। যথারীতি তখন মা আমাকে অনেক তাড়াতাড়ি ঘুম পাড়িয়ে দিতেন। এরকম এক ছুটিতে বাবা আমাদের সাথে কাটিয়ে কর্মস্থলে ফিরে যাওয়ার পর হঠাৎ মায়ের পেট ফুলতে শুরু করলো। মায়ের পেটটা অস্বাভাবিক ভাবে ফুলতে লাগলো, আর টাইট হয়ে যেতে লাগলো। মাঝে মাঝে একজন বয়স্কা ঠাকুমা এসে খোঁজ নিয়ে যেতেন। মাসি, মামী ঘনঘন দেখা করতে আসতে লাগলেন। পিসিও এসেছিলেন এক্দুবার। আমি ভাবলাম মায়ের বুঝি ভয়ানক অসুখ করেছে। তাহলে মা সদরে গিয়ে ডাক্তার দেখাননা কেন? আমার ঠাকুমা মায়ের অনেক যত্ন নিতে শুরু করলেন। ঘরের কাজের ভার অনেকটাই নিজের হাতে তুলে নিলেন। দাদু বাজার থেকে ভালোভালো ফলমূল আর খাবার আনতেন। আমি ভাবতাম মায়ের পথ্য বুঝি। মাকে আমি অনেকবার জিগেশ করেছি "মা তোমার কোনো অসুখ করেছে"। মা বলতেন "না সোনা কিছু হয়নি"। আমি আবারো বলতাম " মা তোমার পেটটা এরকম ফুলে উঠছে কেন?"
মা বলতেন "ও কিছুনা, আবার ঠিক হয়ে যাবে।"
মায়ের ব্যাথা লাগবে ভেবে আমি মায়ের পেট আর চটকাতাম না। পাও তুলতাম না মায়ের গায়ে। রাতে মায়ের পেটে তেল মালিশ করে দিতাম, পা মালিশ কর দিতাম, যাতে ব্যাথা না হয়। মা বারণ করতেন। কিন্তু আমি মাকে সুস্থ করে তোলার জন্য মায়ের কথায় আমল দিতাম না। মায়ের ঘুম না হলে আরো শরীর খারাপ হয়ে যাবে ভেবে আমি আর কোনো রকম দুষ্টুমি করতাম না ঘুমানোর সময়। এমনকি গরমের রাতগুলোতে বাতাসও করে দিতাম। শুধু মায়ের পেটের ওপর হালকা করে হাত রেখে ঘুমিয়ে যেতাম আর মনে মনে প্রার্থনা করতাম মা যাতে তাড়াতাড়ি সুস্থ হয়ে যায়। ভয়ে আশংকায় অনেক সময় ঘুমের মধ্যে আমি কেঁদে উঠতাম। মা তখন আমায় জাগিয়ে মাথায় হাত বুলোতে বুলোতে আবার ঘুম পাড়িয়ে দিতেন। একটা জিনিস নজর করেছিলাম যে মায়ের পেটের সাথে সাথে মায়ের দুদুগুলিও যেন আরো বড়ো আর ভারী হয়ে উঠছিলো।
এভাবে অনেক মাস কেটে গেলে হঠাৎ একদিন দুপুরে মায়ের পেটে প্রচন্ড ব্যাথা শুরু হলো। মা চিৎকার করতে শুরু করলেন। আমার ঠাকুমা ছুটে এলেন। মা আমায় কোনোরকমে বললেন মাসি মামী আর সবার আগে ওই ঠাকুমাকে খবর দিতে। আমি ওই দুপুরে প্রানপনে মাঠ পেরিয়ে দৌড়োতে লাগলাম। মামী মাসি সবাই আমার খবর পেয়ে দৌড়ে এলেন বাড়িতে। বাবান আর পল্টুও এলো। এসে দেখি ওই ঠাকুমা একটা থলে হাতে ততক্ষনে এসে গেছেন, আমার ঠাকুমা একটা গামলায় গরম জল নিয়ে মায়ের ঘরে ঢুকেন। কাঁধে একটা তোয়ালে। মা তখন ব্যাথায় প্রচন্ড কাতরাচ্ছেন। মাসি আর মামীও ওদের সাথে মায়ের ঘরে ঢুকে গিয়ে বাবান, পল্টু আর আমাকে বের করে দরজায় খিল তুলে দিলেন। আমরা তিনজন দাদুর কাছে গিয়ে বসলাম। দাদুর মুখ থমথমে হয়েছিল তাই কিছু জিগেস করার সাহস হলো না।
একটু পরে মায়ের চিৎকার থেমে গেলো। আমার বুক আশংকায় ঢিবঢিব করতে লাগলো। একটু পরে একটা কান্নার আওয়াজ পেলাম। দাদু হন্তদন্ত হয়ে বেরিয়ে এলেন। আমরা এলাম পিছু পিছু। একটু পরে ওই ঠাকুমা তোয়ালে মুড়ে হাসি মুখে একটা একটা পুঁটলি দাদুর হাতে তুলে দিলো। দাদু আমাদের দেখালেন। আমি প্রথমবার টিটুর মুখ দেখলাম।
পরে মাসিকে জিগেশ করলাম "মায়ের কি হয়েছিল"? মাসি বললেন কিছু না "মায়ের পেটের ভেতর একটা ফুল হয়েছিল। ফুলপরী এসে তোর মায়ের থেকে সেই ফুলটা নিয়ে তোর জন্য মায়ের কাছে একটা ভাই দিয়ে গেছে।" আমি বললাম "মাসি, আমাকেও কি ফুলপরী দিয়ে গেছিলো?" মাসি বললেন, "না, তোকে জলপরী দিয়ে গেছিলো"। পল্টু জিগেশ করলো, "আর আমাকে?" মাসি বললেন "তোকেও জলপরী দিয়ে গেছিলো।"
........