16-02-2024, 12:56 PM
ভীষ্ম প্রতিজ্ঞা ও সিজারের মৃত্যু
6 রাউন্ডের প্রতিযোগিতায়
আদি আর ঐশী সহ আরো 30 জন সঙ্গীত শিল্পী অংশ গ্রহণ করে…
নানা রকমের কৌশল , লোকগীতি, আধুনিক গান , এছাড়াও বাদ্য যন্ত্র প্রতিযোগিতা…
ফাইনালে আদি তো থাকবেই…
তবে ঐশী কে বেগ পেতে হচ্ছিল খুব।
ওর সামনে প্রতিপক্ষ ছিল একটি মেয়ে যে ক্লাসিকাল গায়িকা আর ঐশী আধুনিক।
বাদ্যযন্ত্র রাউন্ডে ঐশী বেঁচে নেয় ড্রাম আর মেয়েটি বাঁশি। মেয়েটির সুবিধা হচ্ছিল আধুনিক গানের সাথে বাঁশি বাজিয়ে কিন্তু ক্লাসিকাল এর সাথে ড্রামস?
ঐশী ও তো আসলে প্রধান বাড়ির ই মেয়ে।
গিরিরাজ আর অম্বিকা প্রধানের মেয়ে।
ঐশী খুব বিখ্যাত একটি গান যেটি সেমি ক্লাসিকাল তার সাথে ড্রাম বজায়। গানটি ছিল আইগীরি নন্দিনী…
জনতা খুশি, জাজেসরা খুশি, আর মাত্র এক নম্বরের ফারাকে ঐশী ফাইনালে।
এখন লড়াই এসপার না অস্পার।
হয় আজকের পর আদি তার হারানো জীবনের সুখ আবার ফিরে পাবে না হয় সে সারাজীবন এর জন্য জনসমক্ষে গান গাইতে পারবে না।
অনিল আর আদি কন্ট্রাক্ট সই করেছে।
নিজের বাবাকে স্মরণ করে আদি গান শুরু করল।
এই রাউন্ড খালি গলায় গানের রাউন্ড।
এই রাউন্ডে আদি নিশ্চিত জিতবে।
আদির মা যে কিনা জজ সে ও চায় আদি জিতে তাকে এই নরক থেকে উদ্ধার করুক…
কিন্তু অনিলের কথা মনে পড়তেই তার হাত পা কাঁপতে শুরু করে… ।
অনিল বলেছে যদি নন্দিনী ঐশী কে না জেতায়, ঐশী কে সে সব বলে দেবে যে সে তাদের নিজের সন্তান নয়। শুধু তাই নয়, ঐশী যে ভালো গায়িকা এই ভুল ধারণা ও অনিল ভেঙে দেবে… ঐশী নিজের সমালোচনা নিতে পারে না। ও কিন্তু এবার মারা যাবে।
আর আদি যদি জিতেও যায় এখান থেকে প্রাণে বাঁচবে না… দর্শক দের মধ্যে আগেই লোক আছে … তারা আগে প্লাস্টিক এর বোতল টুকি টাকি ছুড়বে তারপর কাচের বোতল আর ভারী জিনিস ছুড়ে মারবে এদিকে সিকিউরিটি ওকে বাঁচাতে এলে জনতার ভিড়ে পরে ও মারা যাবে আর যেহেতু ভিড়ের কোনো চেহারা হয় না , তোমার একমাত্র ছেলের প্রাণ যাওয়াটা একটা নিছক অ্যাকসিডেন্ট হয়ে পড়ে থাকবে । তুমি তোমার মেয়ে আর ছেলে দুজন কেই হারাবে রাণী।
এখন তুমি ঠিক করো, ছেলের সাথ দিয়ে ওকে মৃত্যুতে ঠেলে দেবে না ওকে ধোখা দিয়ে প্রাণে বাঁচাবে…
তুমি মানুষ না অনিল… পিশাচ তুমি!!
You're devil Anil!!
A demon you are!!
এবার অনিল সত্যিই শয়তান এর মত বলে
Yes, I am a devil and you, my sweetheart,are our golden egg laying goose..
আদি করেছিল শংকর মাহাদেবন এর বৃথলেস টা। 30 এ 27।
ওদিকে ঐশী করেছিল একটি অপেরা সং।
দর্শকরা এবার অতটা উৎসাহী ছিল না।
অনেকে তো কান চাপা দিয়েছিল।
কিন্তু রেজাল্ট 30 এ 30!
আদি প্রশ্ন করে , বিচার চায়, এটা অন্যায়।
নন্দিনী জবাব দেয়… মিস্টার প্রধান আপনার গান টা অসাধারন । তবে মিস দেব রায় এর প্রত্যেকটা নোট ঠিক ছিল। আপনি কিছু জায়গায় শ্বাস নিয়েছিলেন.. তাই এই প্রতিযোগিতার বিজয়ী ঐশী দেব রায়।
তবে আমরা চাই আপনিও পুরস্কার পান । মাত্র দুই নম্বরের তফাৎ। আপনারা দুজনেই বিজেতা!
না। এটা আপনারাও জানেন আর আমিও জানি যে অপেরা তে পিচ টা কতটা জরুরি । কোনটা শুনতে ভালো লাগে আর কোনটায় কান চাপা দিতে হয়। তাই আমার অনুরোধ আপনারা রি ইভালুয়েট করুন স্কোর টা।
মিঃ প্রধান আপনি এভাবে জজ দের স্কোর সয়াল করতে পারেন না… ।
দাড়ান । এবার sh group এর vp অনিল দেব রায় স্টেজে এসে জায়ান্ট স্ক্রিন এ একটা গ্রাফ দেখান যেখানে আদির কোথায় কোথায় সুর , তাল, ছন্দ, লয় কেটেছে সেটা দেখায়। আর ঐশীর ও। দেখা যায় ঐশীর বেশিরভাগ ঠিক।
তাহলে আদি তুমি কথা রেখ।
এই বলে ঐশী আর আদিকে পুরস্কার দেওয়া হয়।
ঐশী উৎসাহের সাথে পুরষ্কার নেয়।
কিন্তু আদি স্টেজ ছেড়ে যায়।
ঐশী কে পুরস্কার দিয়েই নন্দিনী পড়ি কি মরি করে ছোটে আদির পেছনে।
বাবাই… শোন.. বাবাই রে.. অন্ধকারে কোথায় যাচ্ছিস …বাবাই দাঁড়া…
আদি ওর দিকে তাকায় ওর চোখ দিয়ে আগুন ঝরছে ওর চোখে জল…
নন্দিনী এর বুক কাপে… এই চোখ বিভীষিকা!
রক্ত হিম করে দেওয়া!
বা.বাবাই..
কেনো করলে.. শেষ অবধি তুমিও?
নন্দিনী চুপ। কি বলবে ? এটা বলবে যে প্রাণে বাঁচানোর জন্যে এটা করতে হয়েছে ওকে?
আদি তো বলবে প্রাণের ভয় করে না কিন্তু এই প্রতিজ্ঞা তো ওর থেকে গান কে আর ওর তবলা বাজানোর সব সাধ্য নিয়ে নিল।
দেব রায় ম্যানসনে ও এখন কি করে থাকবে?
আদি বলে। শুধু তোমার জন্যে তোমার নতুন পরিবারের উঠতে বসতে অপমান আমি সহ্য করি। যাতে আমার রাগ তোমার ওপর না ঝারে।
আর তুমি ঐ অনিল দেব রায়ের কোথায় আমায়… আমায় ছুরি মারলে??
How could you maa? How could you?
বলে আদি জোরে জোরে কাঁদতে থাকে।
এদিকে মা কে খুঁজতে খুঁজতে ঐশী ও এসেছে এই পেছন দিকটায়।
আরে তোমরা এখানে?
এই যে তোমার ট্রফি।
তুমি কিন্তু দারুন গাও। আমি তো ভাবিইনি আমি তোমায় হারিয়ে জিতেছি! It's so surreal!
আদি ওর শার্ট এর হাতায় নিজের চোখ মোছে আবার নিজের ভারী গলায় বলে।
তুই আমায় হারিয়ে জিতিস্নি। তোকে আমায় বিট্রে করে জেতানো হয়েছে।
What rubbish।
এটাই সত্যি। তোর গান শুনে তো সবাই কানে হাত দিয়ে বসেছিল। যা গিয়ে রেকর্ডিং দেখ।
আদি রেগে গিয়ে বলছে।
ঐশী এবার কাঁপতে থাকে ওর হাথ থেকে আদির ট্রফিটা পড়ে যায়।
মিথ্যে… মিথ্যে মিথ্যে মিথ্যে!! মিত্থে বলছো তুমি!!
You're a liar !! You … you are jealous of me… YOU ARE JEALOUS OF ME!!
হিংসে করো তুমি আমায়। বলতে বলতে ঐশীর নাক থেকে রক্ত পড়তে শুরু করে।
নন্দিনী ছুটে যান মেয়ের কাছে।
ঐশী জ্ঞান হারাবে… মা ও আমায় হিংসে করে বলো? ও খুব পচা…ওকে বকে দিও…
আঃ মামন এত কথা বলিস না । রেস্ট নে মা..
না আগে বলো..
হ্যাঁ ও পচা , তোকে হিংসে করে … এবার ঘুমো মা..
নন্দিনী কথা গুলো ঐশী কে শান্ত করার জন্ন বললেও রাগে উন্মাদ আদি ওগুলোই সত্যি বলে ধরে নেয়।
নিচে পড়ে যাওয়া ট্রফির থেকে ভেঙে থাকা একটা কাচের টুকরো নিয়ে নিজের বা হাতের তালু কেটে মাটিতে রক্ত ফেলে বলে…
যতদিন এই মাটি থাকবে আমি ধরে নেব আমার মা মৃত। দেব রায় পরিবারের সাথে আমার সম্পর্ক নেই।
নন্দিনী , ঐশী কে খুঁজতে অনিল ও লোকজন কে নিয়ে আসে… এসে দেখে ঐশী অজ্ঞান আর নন্দিনী? ওর যেন দেহ থেকে আত্মা বেরিয়ে গেছে…
অনিল ওকে ডাকতেই নন্দিনী উদভ্রান্তের মত তার ছেলে কে খুঁজতে শুরু করল…
অনিল ইশারা করল আর ডাক্তার নন্দিনী কে ঘুমের ওষুধ দিয়ে শান্ত করলে।
এরপর আদি তার জিনিসপত্র নিয়ে আসে ।
যদিও যাওয়ার আগে সবার কাছে আশীর্বাদ নেয়।
ঐশী কে ও চকলেট দেয়।
আর হেসে বিদায় নেয়। এই হাসি চেহারার মুখোশ ও সেদিন পড়েছিল আর
আজকে সেই মুখোশ আলগা করল শ্রী এর ব্যবহার।
এতক্ষণ শ্রী সব শুনল।
নন্দিনী কে প্রশ্ন করল …
আপনি ওকে যেতে দিলেন?
আমি দেইনি রে মা… বিশ্বাস কর… ওরা আমায় ঘুমের ওষুধ দিয়ে রেখেছিল।
তারপর যখনই অনিল জানতে পারল যে তুই আদি কে আবার আকাশে ওড়ার ডানা দিয়েছিস ও তোকেই ওর থেকে আলাদা করে দিল।
আর আমার পোড়া কপাল দেখ… ছেলের সাথে দেখা যদিও বা হবে আমায় দেখবে ওর ঘর ভাঙ্গানি হিসেবে…
মা আমরা তো প্রায় এসে গেলাম…
এ দেখাই শেষ দেখা নয় তো?
শ্রী একটা সাদা কুর্তি পড়া, পায়ে ক্রিম রঙের হাই হিল, বা পায়ে আদির দেওয়া সোনার তোরা, ডান হাতে এক গোছা চুরি কপালে ছোট্ট কাল টিপ চোখে কাজল চুল টা ছাড়া। হাতে একটা আইফোন। অনিল আঙ্কেল গিফট দিয়েছেন ।
রাজনন্দিনী একটা সোনালী পাড়ের সবুজ শাড়ী পড়েছেন। গলায় সোনার হার , মঙ্গল সূত্র, হাতে শাঁখা, পলা, সোনার বালা, চুরি, সিঁথিতে অল্প সিঁদুর। দীর্ঘাঙ্গী নন্দিনী কে বেশ দেবী দেবী লাগছে । এত ও সাজে না আজকে সেজেছে।
আর ঐশী একটা রিপড ডেনিম, একটা ব্ল্যাক ট্যাংক টপ তার ওপর একটা রেড চেকার্ড শার্ট আর টুকিটাকি গয়না পড়ে আছে।
তিন জনেরই লম্বা চুল। নন্দিনী এর চুল তার হাঁটু অবধি ছোট ছোট ঢেউ যুক্ত, শ্রেষ্ঠা এর চুল কোমর এর একটু নিচ অবধি যায়। আর ঐশী এর চুল যায় তার থাই অবধি।
আদির বাড়ির সামনে এলে পরে দেখে আদি একটা ছোটা হাতি (টাটা এস ace) গাড়িতে তার ছোটখাটো জিনিসপত্র তুলছে ।
আজকে একটু গরম আছে… ছেলেটা হয়তো ভালো করে খায়নি ঘুমায়নি।
শ্রী এর মনে হয় নিকুচি করেছে রাগ অভিমানের দরকার হলে আদির ওই বিরাট হাতের মার সহ্য করবে কিন্তু আদিকে কষ্ট পেতে দেবে না।
আদি টেম্পো টাকে বিদায় দিল।
পেছনে ফিরে দেখে 3 জন কে। কোনো সাধারণ মানুষ যদি এখন থাকতো সে ভাবত সে স্বপ্ন দেখছে। আচ্ছা পাঠক এর সুবিধার জন্য বলি ধরো তোমার সামনে সুনিধি চৌহান, শ্রেয়া ঘোষাল আর নীতি মোহন আছে তোমার যা অবস্থা হবে সেরকম ই ব্যাপার।
ও তুই এসে গেছিস…যাক ভালো হলো…
নন্দিনী কে পায়ে হাথ দিয়ে প্রণাম করে
বলে ভালো আছেন ম্যাডাম?
নন্দিনী কি বলবে কি করবে বুঝতে পারে না সে পুরো ফ্রিজ হয়ে যায়…
কোনো রকমে আটকে আটকে বলে
হ.. হ্যা..ভালো..ভালো আছি ভালো আছি..
তুমি..কেমন আছো?
আদি কিছু বলে না একটা হাসি দেয়।
ঐশীর দিকে দেখে বলে… তুই ঐশী তাই তো..
আমি adhiraj । তুই আদি দা বলতে পারিস।
ঐশী ও অবাক । দাদান এমন করছে কেন? এমন তো নয় ওকে চেনে না।
ঐশী একটা সৌজন্যে হাসি হাসলো…
সে এবার কানে কানে তার মা কে বলল…
মা তোমার ছেলের কি হয়েছে বলো ত?
ওর না আমাদের দেখলে আগে মারা তারপর প্রশ্ন করার কথা…
নন্দিনী বলে যা হচ্ছে হক । অত মাথা ঘামাতে জাস না। তবে এটা ঝড়ের আগে শান্তি। নিজেকে প্রস্তুত রাখ।
এবার ঐশী শ্রী এর কানে কানে বলে তুমি ওকে কত ত্রমা দিয়েছ? যে আমাদের সাথেও হেসে কথা বলছে…??
কি হ্যান্ডসম লাগছে বলো..কিন্তু অমন রোগা রোগা লাগছে কেনো? কিছু খায়নি নাকি?
অ্যা? তুমি কি বলছো? হ্যালো পৃথিবী টু শ্রেষ্ঠা..
হ্যাঁ .. ইয়ে না মানে কিছু বলছিলে?
নাহ থাক। আমার যা বোঝার বোঝা হয়ে গেছে।
আদি এবার ডাকে আরে আপনারা বাইরে কেনো ভেতরে আসুন..।
এবার নন্দিনী কে বলে আপনি কফি না চা নেবেন?
ঐশী তো কফি খাবে..
আর শ্রেষ্ঠা এর জন্য লেমন টি…
নন্দিনী বলে না না কিছু লাগবে না… ।
আরে ম্যাডাম আপনার সাথে এটাই হয়তো শেষ দেখা..
নন্দিনী আর শ্রেষ্ঠা এর মুখ সাদা হয়ে যায়… ।
আরে আমি বলতে চাইছি যে এই বাড়ির ওনার হয় পুরো বাড়ি দেবে না হয় দেবে না এবার আমার স্টুডিও তো আপনারা কেড়ে নিচ্ছেন। আমার তো মাথা গোঁজার ঠাঁই লাগবে…
শ্রেষ্ঠা এর মা বাবা বলেছিল জলপাইগুড়ি গিয়ে থাকতে … কিন্তু যে মেয়ে আজ অন্যের কথায় আমায় অবিশ্বাস করে আমায় এক প্রকার বাড়ি ছাড়া করল পরের বার একই কাজ করবে না এর প্রমাণ কোথায়?
আদি..!
কি? সোহিনী এর সাথে কথা হয়নি ?
আমি তো দেখলাম সকালে তোর নাম ট্রেন্ড এ।
আর ফ্লাইওভার এর কাছে যে বড় ব্যানারটা ওখানেও তো তোর বড় ছবি! আরিববাস নতুন ফোন! আরে এটা তো 15 প্রো ম্যাক্স
এই শোন না আমার একটা ফটো তুলে দিস তো আর হ্যা তোদের সাথে একটা সেলফি ও নেব, আমার কলিগরা পুরো জলে কয়লা হয়ে যাবে।
ও যেটা বলছিলাম… হ্যা সোহিনী..
ও তো বলেছে যে ও একটা ফাইল কপি করেছে ।
আর যেহেতু এটা অলরেডি sh এর কাছে ছিল তাই আমি যখন পোস্ট করলাম আমি ফেঁসে গেলাম…. ।
থাক। যা হয়েছে হয়ে গেছে। তার চেয়ে বরং আমরা একটু চা কফি খাই।
এই যে ঐশী তোর ক্যাপাচিনো উইথ এক্সট্রা সুগার।
শ্রেষ্ঠা এর লেমন টি উইথ হানি।
আর এটা আপনার জন্য ম্যাডাম
লাল চা সাথে এক চামচ মধু আর অল্প লেবুর রস দেওয়া।
নন্দিনী চা নিয়ে চুমুক দিতেই মনে পড়ে যায় আদিনাথ এর কথা।
যখন নন্দিনী ওর নতুন বউ । কিছু পারতো না। খালি গান জানত আর পড়াশোনা।
আদিনাথ বলত তাতেই হবে । তুমি তোমার শিল্পে ধ্যান দাও তো …. বাকি সামলানোর জন্য তো আমি আছি নাকি।
নন্দিনী এর রেওয়াজ এর আগে এই চা ছিল মাস্ট।
পরে নন্দিনী আদিনাথ এর পাক্কা গিন্নি হলেও আদিনাথ বাড়ি থাকলে ভোরে নন্দিনীর স্পেশাল চা আদি ই বানাবে।
নন্দিনী এর চোখে জল।
আদি ওর দিকে চেয়ে আছে… যেনো কিছু শুনতে চাইছে।
আদি বলে , ভালো হয়েছে ম্যাম? আসলে আমার বাবা যত দিন বেঁচে ছিলেন ততদিন এই রকম করেই মায়ের জন্যে চা বানাতেন… আমার মা এর খুব পছন্দের এটা…
বাবাই…
আদি কিছু বলে না।
কি রে তুই বসে আছিস কেন?
নতুন বাড়িতে কি স্পেশাল দার্জিলিঙ চা খাওয়াচ্ছে? দেখ এই মুহূর্তে তুই আমায় পথে বসিয়েছিস। আমার আবার আগের অবস্থায় ফিরতে সময় লাগবে… । তবে তোর জন্য ভালো খবর… । তোর তো 5 বছরের কন্ট্রাক্ট!
আমিও ভাবছিলাম এই শহরে আর কিছু নেই আমি তাই মুম্বাইয়ে একটা কর্পোরেট ল ফার্ম এ এই ক বছর কাজ করব।
ততদিন তোর যদি এই লোফার লোকটা মনে ধরে তো ভালো। আর তোর সাফল্য যেমন নন্দিনী ম্যাডাম আর ঐশী এর আছে সেটা বড় হয় তো তুই সেরকম ও থাকতে পারিস।
তবে ওই 5 বছর। আর আমি যদি জানতে পারি যে তুই দীপিকা পাডুকোন হয়ে একে তাকে ডেট করছিস অথচ আমি তোর কাছে জাস্ট একটা অপশন, সরি বস, আমি রণবীর সিং নই। আমার হারানোর কিছু নেই।
প্রথমে মা শৈশব কেড়ে নীল,
বোন কেড়ে নীল স্বপ্ন
প্রেয়সী কেড়ে নিলো আশা।
তোর কথাই খেটে গেলো।
Adhiraj is nothing but an empty shell।
বলে আদির চোখের থেকে দু ফোঁটা জল পড়ল।
আদি এর কথা শুনে ওরাও দুঃখী।
আদি এবার নাক মুছে গলা ঝেড়ে মুখে জল দিয়ে এসে এক গ্লাস জল খেলো।
তারপর শ্রেষ্ঠা কে আডিশ্রি স্টুডিও আর maskedmaker prodcution এর সত্ব হ্যান্ড অভার এর কাগজ গুলো দিল।
বলল , দেখ এখানে তুই সই কর, ম্যাম আপনি এখানে করুন আর ঐশী এখানে হ্যা জার জার নামের পাশে।
হ্যাঁ আমি দীপ্ত কে ও ডেকেছিলাম …ওই তো!
আর ইনি হলেন অজিত দা।
একজন কাল কোট পরা মাঝ বয়সী লোক আর আদির বয়সী একটি ছেলে এল।
এবার সবাই সই করলো।
অজিত বাবু বললেন এবার থেকে আডিশ্রী স্টুডিও আর maskedmaker প্রোডাকশন এর সব সত্ব শ্রেষ্ঠা সিংহ আর তার পার্টনার দের হ্যান্ডোভার করা হলো। উকিলের উপস্থিতি তে আর কোনো জোর জুড়ি ছাড়াই কাজ টি হয়েছে।
অজিতবাবু কে এগিয়ে দিয়ে এসে আদি বলে
তাহলে কাজ শেষ..শ্রেষ্ঠা আর জলাচ্ছি তোকে ।
আমি আমার মেল ইগো ভরা এই ফাঁপা শরীর নিয়ে বিকেলের ফ্লাইটে চলে যাবো।
আদি দা.. আদি দা … শোনো না.. লক্ষ্মীটি আমার দিকে তাকাও
শ্রেষ্ঠা আদির মুখ তার দিকে তুলে আনে তার দুই হাথ দিয়ে…
তুমি এসব কি বলছো? .. কোথায় যাবে ?
আমার দিকে তাকাও…
ছাড় আমায় শ্রী..
না, ছাড়বো না.. আদি দা… কোন কাপল এ ভুল বোঝাবুঝি হয় না? তাই বলে তুমি আমাদের সংসার ভেঙে দেবে?
শ্রী ঝগড়া হলে তবুও আশা ছিল… তুই তো আমায় কিছু বলার আগেই আসামি ধরে ছিলি..
তুই আমার বিরুদ্ধে fraud এর কেস করেছিস!
তুই এর মানে ও বুঝিস?
ভুল করেছি আদি দা… তুমি … তুমি এক কাজ করো… তুমি আমায় মারো, হ্যা যতক্ষণ আমি আমার ভুল না বুঝতে পারি আমায় মারো… কিন্তু আমায় ছেড়ে যেও না… আমি পাগল হয়ে যাবো…
শ্রী তুই এত সেজে এসেছিস … আজ তো তোদের উৎসব! দেখ আমি আজ নিঃস্ব। আমি আজকে শূন্য।
না না না … আদি দা.. এ সব তুমি কি বলছো আদি দা…
বাবাই… মেয়েটাকে ক্ষমা কি করা যায় না?
ম্যাডাম … ক্ষমা করা যায় তখনই যখন লেভেল টা সেম থাকে…
শ্রী এখন আমার চেয়ে অনেক অনেক ওপরে… ওকে ক্ষমা করা আমার কাছে ধৃষ্টতা।
আচ্ছা আমার লেট হচ্ছে।
দ্বীপ… একটা ফটো নিবি..?
আদি আবার ওর চোখ মোছে..
শ্রী এর চোখ মুছিয়ে দেয়..
এই এদিকে তাকা… একটা অনুরোধ রাখবি?
না কোনো অনুরোধ নয়… তুমি এরকম কেনো করছ ? আমার… খুব কষ্ট হচ্ছে..
শোন তুই আমার কথা না শুনিস তাহলে আমি এমনিই চলে যাবো। দ্বীপের ও দেরি হচ্ছে ।
আচ্ছা বেশ… বলো কি করতে হবে..
তোর নতুন ফোন একটা ছবি তুলতাম…
দেখ অত দামী ফোন কেনার ক্ষমতা আমার নেই।
একটু লোভ হলো… তোর আপত্তি থাকলে বলতেই পারিস…
এরপর দীপ্ত শ্রেষ্ঠা এর সাথে আদির কম করে হলেও 30 টা ফটো তুলেছে।
আর ওর মা, বোন আর প্রেমিকার সাথেও ভালো কয়েকটা।
আদি এবার বলে গেলো থ্যাঙ্কস।
আর শ্রী তোকে থ্যাঙ্কস আমার বাকি আমি টুকুকে ও শেষ করার জন্ন।
5 বছর পর দেখা হবে সবার সাথে বাই।
বলে আদির লাল কালো থার টা ধুলো উড়িয়ে চলে গেলো… পেছনে পড়ে রইলো সাফল্যের চূড়ায় ওঠা অর্থ, নাম, যশ এ পরিপূর্ণ তিন ভিখারিনী।
6 রাউন্ডের প্রতিযোগিতায়
আদি আর ঐশী সহ আরো 30 জন সঙ্গীত শিল্পী অংশ গ্রহণ করে…
নানা রকমের কৌশল , লোকগীতি, আধুনিক গান , এছাড়াও বাদ্য যন্ত্র প্রতিযোগিতা…
ফাইনালে আদি তো থাকবেই…
তবে ঐশী কে বেগ পেতে হচ্ছিল খুব।
ওর সামনে প্রতিপক্ষ ছিল একটি মেয়ে যে ক্লাসিকাল গায়িকা আর ঐশী আধুনিক।
বাদ্যযন্ত্র রাউন্ডে ঐশী বেঁচে নেয় ড্রাম আর মেয়েটি বাঁশি। মেয়েটির সুবিধা হচ্ছিল আধুনিক গানের সাথে বাঁশি বাজিয়ে কিন্তু ক্লাসিকাল এর সাথে ড্রামস?
ঐশী ও তো আসলে প্রধান বাড়ির ই মেয়ে।
গিরিরাজ আর অম্বিকা প্রধানের মেয়ে।
ঐশী খুব বিখ্যাত একটি গান যেটি সেমি ক্লাসিকাল তার সাথে ড্রাম বজায়। গানটি ছিল আইগীরি নন্দিনী…
জনতা খুশি, জাজেসরা খুশি, আর মাত্র এক নম্বরের ফারাকে ঐশী ফাইনালে।
এখন লড়াই এসপার না অস্পার।
হয় আজকের পর আদি তার হারানো জীবনের সুখ আবার ফিরে পাবে না হয় সে সারাজীবন এর জন্য জনসমক্ষে গান গাইতে পারবে না।
অনিল আর আদি কন্ট্রাক্ট সই করেছে।
নিজের বাবাকে স্মরণ করে আদি গান শুরু করল।
এই রাউন্ড খালি গলায় গানের রাউন্ড।
এই রাউন্ডে আদি নিশ্চিত জিতবে।
আদির মা যে কিনা জজ সে ও চায় আদি জিতে তাকে এই নরক থেকে উদ্ধার করুক…
কিন্তু অনিলের কথা মনে পড়তেই তার হাত পা কাঁপতে শুরু করে… ।
অনিল বলেছে যদি নন্দিনী ঐশী কে না জেতায়, ঐশী কে সে সব বলে দেবে যে সে তাদের নিজের সন্তান নয়। শুধু তাই নয়, ঐশী যে ভালো গায়িকা এই ভুল ধারণা ও অনিল ভেঙে দেবে… ঐশী নিজের সমালোচনা নিতে পারে না। ও কিন্তু এবার মারা যাবে।
আর আদি যদি জিতেও যায় এখান থেকে প্রাণে বাঁচবে না… দর্শক দের মধ্যে আগেই লোক আছে … তারা আগে প্লাস্টিক এর বোতল টুকি টাকি ছুড়বে তারপর কাচের বোতল আর ভারী জিনিস ছুড়ে মারবে এদিকে সিকিউরিটি ওকে বাঁচাতে এলে জনতার ভিড়ে পরে ও মারা যাবে আর যেহেতু ভিড়ের কোনো চেহারা হয় না , তোমার একমাত্র ছেলের প্রাণ যাওয়াটা একটা নিছক অ্যাকসিডেন্ট হয়ে পড়ে থাকবে । তুমি তোমার মেয়ে আর ছেলে দুজন কেই হারাবে রাণী।
এখন তুমি ঠিক করো, ছেলের সাথ দিয়ে ওকে মৃত্যুতে ঠেলে দেবে না ওকে ধোখা দিয়ে প্রাণে বাঁচাবে…
তুমি মানুষ না অনিল… পিশাচ তুমি!!
You're devil Anil!!
A demon you are!!
এবার অনিল সত্যিই শয়তান এর মত বলে
Yes, I am a devil and you, my sweetheart,are our golden egg laying goose..
আদি করেছিল শংকর মাহাদেবন এর বৃথলেস টা। 30 এ 27।
ওদিকে ঐশী করেছিল একটি অপেরা সং।
দর্শকরা এবার অতটা উৎসাহী ছিল না।
অনেকে তো কান চাপা দিয়েছিল।
কিন্তু রেজাল্ট 30 এ 30!
আদি প্রশ্ন করে , বিচার চায়, এটা অন্যায়।
নন্দিনী জবাব দেয়… মিস্টার প্রধান আপনার গান টা অসাধারন । তবে মিস দেব রায় এর প্রত্যেকটা নোট ঠিক ছিল। আপনি কিছু জায়গায় শ্বাস নিয়েছিলেন.. তাই এই প্রতিযোগিতার বিজয়ী ঐশী দেব রায়।
তবে আমরা চাই আপনিও পুরস্কার পান । মাত্র দুই নম্বরের তফাৎ। আপনারা দুজনেই বিজেতা!
না। এটা আপনারাও জানেন আর আমিও জানি যে অপেরা তে পিচ টা কতটা জরুরি । কোনটা শুনতে ভালো লাগে আর কোনটায় কান চাপা দিতে হয়। তাই আমার অনুরোধ আপনারা রি ইভালুয়েট করুন স্কোর টা।
মিঃ প্রধান আপনি এভাবে জজ দের স্কোর সয়াল করতে পারেন না… ।
দাড়ান । এবার sh group এর vp অনিল দেব রায় স্টেজে এসে জায়ান্ট স্ক্রিন এ একটা গ্রাফ দেখান যেখানে আদির কোথায় কোথায় সুর , তাল, ছন্দ, লয় কেটেছে সেটা দেখায়। আর ঐশীর ও। দেখা যায় ঐশীর বেশিরভাগ ঠিক।
তাহলে আদি তুমি কথা রেখ।
এই বলে ঐশী আর আদিকে পুরস্কার দেওয়া হয়।
ঐশী উৎসাহের সাথে পুরষ্কার নেয়।
কিন্তু আদি স্টেজ ছেড়ে যায়।
ঐশী কে পুরস্কার দিয়েই নন্দিনী পড়ি কি মরি করে ছোটে আদির পেছনে।
বাবাই… শোন.. বাবাই রে.. অন্ধকারে কোথায় যাচ্ছিস …বাবাই দাঁড়া…
আদি ওর দিকে তাকায় ওর চোখ দিয়ে আগুন ঝরছে ওর চোখে জল…
নন্দিনী এর বুক কাপে… এই চোখ বিভীষিকা!
রক্ত হিম করে দেওয়া!
বা.বাবাই..
কেনো করলে.. শেষ অবধি তুমিও?
নন্দিনী চুপ। কি বলবে ? এটা বলবে যে প্রাণে বাঁচানোর জন্যে এটা করতে হয়েছে ওকে?
আদি তো বলবে প্রাণের ভয় করে না কিন্তু এই প্রতিজ্ঞা তো ওর থেকে গান কে আর ওর তবলা বাজানোর সব সাধ্য নিয়ে নিল।
দেব রায় ম্যানসনে ও এখন কি করে থাকবে?
আদি বলে। শুধু তোমার জন্যে তোমার নতুন পরিবারের উঠতে বসতে অপমান আমি সহ্য করি। যাতে আমার রাগ তোমার ওপর না ঝারে।
আর তুমি ঐ অনিল দেব রায়ের কোথায় আমায়… আমায় ছুরি মারলে??
How could you maa? How could you?
বলে আদি জোরে জোরে কাঁদতে থাকে।
এদিকে মা কে খুঁজতে খুঁজতে ঐশী ও এসেছে এই পেছন দিকটায়।
আরে তোমরা এখানে?
এই যে তোমার ট্রফি।
তুমি কিন্তু দারুন গাও। আমি তো ভাবিইনি আমি তোমায় হারিয়ে জিতেছি! It's so surreal!
আদি ওর শার্ট এর হাতায় নিজের চোখ মোছে আবার নিজের ভারী গলায় বলে।
তুই আমায় হারিয়ে জিতিস্নি। তোকে আমায় বিট্রে করে জেতানো হয়েছে।
What rubbish।
এটাই সত্যি। তোর গান শুনে তো সবাই কানে হাত দিয়ে বসেছিল। যা গিয়ে রেকর্ডিং দেখ।
আদি রেগে গিয়ে বলছে।
ঐশী এবার কাঁপতে থাকে ওর হাথ থেকে আদির ট্রফিটা পড়ে যায়।
মিথ্যে… মিথ্যে মিথ্যে মিথ্যে!! মিত্থে বলছো তুমি!!
You're a liar !! You … you are jealous of me… YOU ARE JEALOUS OF ME!!
হিংসে করো তুমি আমায়। বলতে বলতে ঐশীর নাক থেকে রক্ত পড়তে শুরু করে।
নন্দিনী ছুটে যান মেয়ের কাছে।
ঐশী জ্ঞান হারাবে… মা ও আমায় হিংসে করে বলো? ও খুব পচা…ওকে বকে দিও…
আঃ মামন এত কথা বলিস না । রেস্ট নে মা..
না আগে বলো..
হ্যাঁ ও পচা , তোকে হিংসে করে … এবার ঘুমো মা..
নন্দিনী কথা গুলো ঐশী কে শান্ত করার জন্ন বললেও রাগে উন্মাদ আদি ওগুলোই সত্যি বলে ধরে নেয়।
নিচে পড়ে যাওয়া ট্রফির থেকে ভেঙে থাকা একটা কাচের টুকরো নিয়ে নিজের বা হাতের তালু কেটে মাটিতে রক্ত ফেলে বলে…
যতদিন এই মাটি থাকবে আমি ধরে নেব আমার মা মৃত। দেব রায় পরিবারের সাথে আমার সম্পর্ক নেই।
নন্দিনী , ঐশী কে খুঁজতে অনিল ও লোকজন কে নিয়ে আসে… এসে দেখে ঐশী অজ্ঞান আর নন্দিনী? ওর যেন দেহ থেকে আত্মা বেরিয়ে গেছে…
অনিল ওকে ডাকতেই নন্দিনী উদভ্রান্তের মত তার ছেলে কে খুঁজতে শুরু করল…
অনিল ইশারা করল আর ডাক্তার নন্দিনী কে ঘুমের ওষুধ দিয়ে শান্ত করলে।
এরপর আদি তার জিনিসপত্র নিয়ে আসে ।
যদিও যাওয়ার আগে সবার কাছে আশীর্বাদ নেয়।
ঐশী কে ও চকলেট দেয়।
আর হেসে বিদায় নেয়। এই হাসি চেহারার মুখোশ ও সেদিন পড়েছিল আর
আজকে সেই মুখোশ আলগা করল শ্রী এর ব্যবহার।
এতক্ষণ শ্রী সব শুনল।
নন্দিনী কে প্রশ্ন করল …
আপনি ওকে যেতে দিলেন?
আমি দেইনি রে মা… বিশ্বাস কর… ওরা আমায় ঘুমের ওষুধ দিয়ে রেখেছিল।
তারপর যখনই অনিল জানতে পারল যে তুই আদি কে আবার আকাশে ওড়ার ডানা দিয়েছিস ও তোকেই ওর থেকে আলাদা করে দিল।
আর আমার পোড়া কপাল দেখ… ছেলের সাথে দেখা যদিও বা হবে আমায় দেখবে ওর ঘর ভাঙ্গানি হিসেবে…
মা আমরা তো প্রায় এসে গেলাম…
এ দেখাই শেষ দেখা নয় তো?
শ্রী একটা সাদা কুর্তি পড়া, পায়ে ক্রিম রঙের হাই হিল, বা পায়ে আদির দেওয়া সোনার তোরা, ডান হাতে এক গোছা চুরি কপালে ছোট্ট কাল টিপ চোখে কাজল চুল টা ছাড়া। হাতে একটা আইফোন। অনিল আঙ্কেল গিফট দিয়েছেন ।
রাজনন্দিনী একটা সোনালী পাড়ের সবুজ শাড়ী পড়েছেন। গলায় সোনার হার , মঙ্গল সূত্র, হাতে শাঁখা, পলা, সোনার বালা, চুরি, সিঁথিতে অল্প সিঁদুর। দীর্ঘাঙ্গী নন্দিনী কে বেশ দেবী দেবী লাগছে । এত ও সাজে না আজকে সেজেছে।
আর ঐশী একটা রিপড ডেনিম, একটা ব্ল্যাক ট্যাংক টপ তার ওপর একটা রেড চেকার্ড শার্ট আর টুকিটাকি গয়না পড়ে আছে।
তিন জনেরই লম্বা চুল। নন্দিনী এর চুল তার হাঁটু অবধি ছোট ছোট ঢেউ যুক্ত, শ্রেষ্ঠা এর চুল কোমর এর একটু নিচ অবধি যায়। আর ঐশী এর চুল যায় তার থাই অবধি।
আদির বাড়ির সামনে এলে পরে দেখে আদি একটা ছোটা হাতি (টাটা এস ace) গাড়িতে তার ছোটখাটো জিনিসপত্র তুলছে ।
আজকে একটু গরম আছে… ছেলেটা হয়তো ভালো করে খায়নি ঘুমায়নি।
শ্রী এর মনে হয় নিকুচি করেছে রাগ অভিমানের দরকার হলে আদির ওই বিরাট হাতের মার সহ্য করবে কিন্তু আদিকে কষ্ট পেতে দেবে না।
আদি টেম্পো টাকে বিদায় দিল।
পেছনে ফিরে দেখে 3 জন কে। কোনো সাধারণ মানুষ যদি এখন থাকতো সে ভাবত সে স্বপ্ন দেখছে। আচ্ছা পাঠক এর সুবিধার জন্য বলি ধরো তোমার সামনে সুনিধি চৌহান, শ্রেয়া ঘোষাল আর নীতি মোহন আছে তোমার যা অবস্থা হবে সেরকম ই ব্যাপার।
ও তুই এসে গেছিস…যাক ভালো হলো…
নন্দিনী কে পায়ে হাথ দিয়ে প্রণাম করে
বলে ভালো আছেন ম্যাডাম?
নন্দিনী কি বলবে কি করবে বুঝতে পারে না সে পুরো ফ্রিজ হয়ে যায়…
কোনো রকমে আটকে আটকে বলে
হ.. হ্যা..ভালো..ভালো আছি ভালো আছি..
তুমি..কেমন আছো?
আদি কিছু বলে না একটা হাসি দেয়।
ঐশীর দিকে দেখে বলে… তুই ঐশী তাই তো..
আমি adhiraj । তুই আদি দা বলতে পারিস।
ঐশী ও অবাক । দাদান এমন করছে কেন? এমন তো নয় ওকে চেনে না।
ঐশী একটা সৌজন্যে হাসি হাসলো…
সে এবার কানে কানে তার মা কে বলল…
মা তোমার ছেলের কি হয়েছে বলো ত?
ওর না আমাদের দেখলে আগে মারা তারপর প্রশ্ন করার কথা…
নন্দিনী বলে যা হচ্ছে হক । অত মাথা ঘামাতে জাস না। তবে এটা ঝড়ের আগে শান্তি। নিজেকে প্রস্তুত রাখ।
এবার ঐশী শ্রী এর কানে কানে বলে তুমি ওকে কত ত্রমা দিয়েছ? যে আমাদের সাথেও হেসে কথা বলছে…??
কি হ্যান্ডসম লাগছে বলো..কিন্তু অমন রোগা রোগা লাগছে কেনো? কিছু খায়নি নাকি?
অ্যা? তুমি কি বলছো? হ্যালো পৃথিবী টু শ্রেষ্ঠা..
হ্যাঁ .. ইয়ে না মানে কিছু বলছিলে?
নাহ থাক। আমার যা বোঝার বোঝা হয়ে গেছে।
আদি এবার ডাকে আরে আপনারা বাইরে কেনো ভেতরে আসুন..।
এবার নন্দিনী কে বলে আপনি কফি না চা নেবেন?
ঐশী তো কফি খাবে..
আর শ্রেষ্ঠা এর জন্য লেমন টি…
নন্দিনী বলে না না কিছু লাগবে না… ।
আরে ম্যাডাম আপনার সাথে এটাই হয়তো শেষ দেখা..
নন্দিনী আর শ্রেষ্ঠা এর মুখ সাদা হয়ে যায়… ।
আরে আমি বলতে চাইছি যে এই বাড়ির ওনার হয় পুরো বাড়ি দেবে না হয় দেবে না এবার আমার স্টুডিও তো আপনারা কেড়ে নিচ্ছেন। আমার তো মাথা গোঁজার ঠাঁই লাগবে…
শ্রেষ্ঠা এর মা বাবা বলেছিল জলপাইগুড়ি গিয়ে থাকতে … কিন্তু যে মেয়ে আজ অন্যের কথায় আমায় অবিশ্বাস করে আমায় এক প্রকার বাড়ি ছাড়া করল পরের বার একই কাজ করবে না এর প্রমাণ কোথায়?
আদি..!
কি? সোহিনী এর সাথে কথা হয়নি ?
আমি তো দেখলাম সকালে তোর নাম ট্রেন্ড এ।
আর ফ্লাইওভার এর কাছে যে বড় ব্যানারটা ওখানেও তো তোর বড় ছবি! আরিববাস নতুন ফোন! আরে এটা তো 15 প্রো ম্যাক্স
এই শোন না আমার একটা ফটো তুলে দিস তো আর হ্যা তোদের সাথে একটা সেলফি ও নেব, আমার কলিগরা পুরো জলে কয়লা হয়ে যাবে।
ও যেটা বলছিলাম… হ্যা সোহিনী..
ও তো বলেছে যে ও একটা ফাইল কপি করেছে ।
আর যেহেতু এটা অলরেডি sh এর কাছে ছিল তাই আমি যখন পোস্ট করলাম আমি ফেঁসে গেলাম…. ।
থাক। যা হয়েছে হয়ে গেছে। তার চেয়ে বরং আমরা একটু চা কফি খাই।
এই যে ঐশী তোর ক্যাপাচিনো উইথ এক্সট্রা সুগার।
শ্রেষ্ঠা এর লেমন টি উইথ হানি।
আর এটা আপনার জন্য ম্যাডাম
লাল চা সাথে এক চামচ মধু আর অল্প লেবুর রস দেওয়া।
নন্দিনী চা নিয়ে চুমুক দিতেই মনে পড়ে যায় আদিনাথ এর কথা।
যখন নন্দিনী ওর নতুন বউ । কিছু পারতো না। খালি গান জানত আর পড়াশোনা।
আদিনাথ বলত তাতেই হবে । তুমি তোমার শিল্পে ধ্যান দাও তো …. বাকি সামলানোর জন্য তো আমি আছি নাকি।
নন্দিনী এর রেওয়াজ এর আগে এই চা ছিল মাস্ট।
পরে নন্দিনী আদিনাথ এর পাক্কা গিন্নি হলেও আদিনাথ বাড়ি থাকলে ভোরে নন্দিনীর স্পেশাল চা আদি ই বানাবে।
নন্দিনী এর চোখে জল।
আদি ওর দিকে চেয়ে আছে… যেনো কিছু শুনতে চাইছে।
আদি বলে , ভালো হয়েছে ম্যাম? আসলে আমার বাবা যত দিন বেঁচে ছিলেন ততদিন এই রকম করেই মায়ের জন্যে চা বানাতেন… আমার মা এর খুব পছন্দের এটা…
বাবাই…
আদি কিছু বলে না।
কি রে তুই বসে আছিস কেন?
নতুন বাড়িতে কি স্পেশাল দার্জিলিঙ চা খাওয়াচ্ছে? দেখ এই মুহূর্তে তুই আমায় পথে বসিয়েছিস। আমার আবার আগের অবস্থায় ফিরতে সময় লাগবে… । তবে তোর জন্য ভালো খবর… । তোর তো 5 বছরের কন্ট্রাক্ট!
আমিও ভাবছিলাম এই শহরে আর কিছু নেই আমি তাই মুম্বাইয়ে একটা কর্পোরেট ল ফার্ম এ এই ক বছর কাজ করব।
ততদিন তোর যদি এই লোফার লোকটা মনে ধরে তো ভালো। আর তোর সাফল্য যেমন নন্দিনী ম্যাডাম আর ঐশী এর আছে সেটা বড় হয় তো তুই সেরকম ও থাকতে পারিস।
তবে ওই 5 বছর। আর আমি যদি জানতে পারি যে তুই দীপিকা পাডুকোন হয়ে একে তাকে ডেট করছিস অথচ আমি তোর কাছে জাস্ট একটা অপশন, সরি বস, আমি রণবীর সিং নই। আমার হারানোর কিছু নেই।
প্রথমে মা শৈশব কেড়ে নীল,
বোন কেড়ে নীল স্বপ্ন
প্রেয়সী কেড়ে নিলো আশা।
তোর কথাই খেটে গেলো।
Adhiraj is nothing but an empty shell।
বলে আদির চোখের থেকে দু ফোঁটা জল পড়ল।
আদি এর কথা শুনে ওরাও দুঃখী।
আদি এবার নাক মুছে গলা ঝেড়ে মুখে জল দিয়ে এসে এক গ্লাস জল খেলো।
তারপর শ্রেষ্ঠা কে আডিশ্রি স্টুডিও আর maskedmaker prodcution এর সত্ব হ্যান্ড অভার এর কাগজ গুলো দিল।
বলল , দেখ এখানে তুই সই কর, ম্যাম আপনি এখানে করুন আর ঐশী এখানে হ্যা জার জার নামের পাশে।
হ্যাঁ আমি দীপ্ত কে ও ডেকেছিলাম …ওই তো!
আর ইনি হলেন অজিত দা।
একজন কাল কোট পরা মাঝ বয়সী লোক আর আদির বয়সী একটি ছেলে এল।
এবার সবাই সই করলো।
অজিত বাবু বললেন এবার থেকে আডিশ্রী স্টুডিও আর maskedmaker প্রোডাকশন এর সব সত্ব শ্রেষ্ঠা সিংহ আর তার পার্টনার দের হ্যান্ডোভার করা হলো। উকিলের উপস্থিতি তে আর কোনো জোর জুড়ি ছাড়াই কাজ টি হয়েছে।
অজিতবাবু কে এগিয়ে দিয়ে এসে আদি বলে
তাহলে কাজ শেষ..শ্রেষ্ঠা আর জলাচ্ছি তোকে ।
আমি আমার মেল ইগো ভরা এই ফাঁপা শরীর নিয়ে বিকেলের ফ্লাইটে চলে যাবো।
আদি দা.. আদি দা … শোনো না.. লক্ষ্মীটি আমার দিকে তাকাও
শ্রেষ্ঠা আদির মুখ তার দিকে তুলে আনে তার দুই হাথ দিয়ে…
তুমি এসব কি বলছো? .. কোথায় যাবে ?
আমার দিকে তাকাও…
ছাড় আমায় শ্রী..
না, ছাড়বো না.. আদি দা… কোন কাপল এ ভুল বোঝাবুঝি হয় না? তাই বলে তুমি আমাদের সংসার ভেঙে দেবে?
শ্রী ঝগড়া হলে তবুও আশা ছিল… তুই তো আমায় কিছু বলার আগেই আসামি ধরে ছিলি..
তুই আমার বিরুদ্ধে fraud এর কেস করেছিস!
তুই এর মানে ও বুঝিস?
ভুল করেছি আদি দা… তুমি … তুমি এক কাজ করো… তুমি আমায় মারো, হ্যা যতক্ষণ আমি আমার ভুল না বুঝতে পারি আমায় মারো… কিন্তু আমায় ছেড়ে যেও না… আমি পাগল হয়ে যাবো…
শ্রী তুই এত সেজে এসেছিস … আজ তো তোদের উৎসব! দেখ আমি আজ নিঃস্ব। আমি আজকে শূন্য।
না না না … আদি দা.. এ সব তুমি কি বলছো আদি দা…
বাবাই… মেয়েটাকে ক্ষমা কি করা যায় না?
ম্যাডাম … ক্ষমা করা যায় তখনই যখন লেভেল টা সেম থাকে…
শ্রী এখন আমার চেয়ে অনেক অনেক ওপরে… ওকে ক্ষমা করা আমার কাছে ধৃষ্টতা।
আচ্ছা আমার লেট হচ্ছে।
দ্বীপ… একটা ফটো নিবি..?
আদি আবার ওর চোখ মোছে..
শ্রী এর চোখ মুছিয়ে দেয়..
এই এদিকে তাকা… একটা অনুরোধ রাখবি?
না কোনো অনুরোধ নয়… তুমি এরকম কেনো করছ ? আমার… খুব কষ্ট হচ্ছে..
শোন তুই আমার কথা না শুনিস তাহলে আমি এমনিই চলে যাবো। দ্বীপের ও দেরি হচ্ছে ।
আচ্ছা বেশ… বলো কি করতে হবে..
তোর নতুন ফোন একটা ছবি তুলতাম…
দেখ অত দামী ফোন কেনার ক্ষমতা আমার নেই।
একটু লোভ হলো… তোর আপত্তি থাকলে বলতেই পারিস…
এরপর দীপ্ত শ্রেষ্ঠা এর সাথে আদির কম করে হলেও 30 টা ফটো তুলেছে।
আর ওর মা, বোন আর প্রেমিকার সাথেও ভালো কয়েকটা।
আদি এবার বলে গেলো থ্যাঙ্কস।
আর শ্রী তোকে থ্যাঙ্কস আমার বাকি আমি টুকুকে ও শেষ করার জন্ন।
5 বছর পর দেখা হবে সবার সাথে বাই।
বলে আদির লাল কালো থার টা ধুলো উড়িয়ে চলে গেলো… পেছনে পড়ে রইলো সাফল্যের চূড়ায় ওঠা অর্থ, নাম, যশ এ পরিপূর্ণ তিন ভিখারিনী।