Thread Rating:
  • 21 Vote(s) - 3.38 Average
  • 1
  • 2
  • 3
  • 4
  • 5
Adultery বনেদি বাড়ির কেচ্ছা ও একটি অদ্ভুত খুন
#28
খুন ও খুনের তদন্ত



জায়গাটা আধা মফঃস্বল। যাত্রাপালা শেষ হতেই পিল পিল করে লোকজন বেরিয়ে আসে। এখানকার লোকেদের প্রধান বিনোদন বলতে যাত্রা, তাই যাত্রা অনুরাগি প্রচুর। সিনেমা হল একটি আছে তবে সেটি বিশেষ চলে না। এখানকার হাইকলেজে মাঠে যাত্রা অনুষ্ঠানটির আয়োজন করা হয়েছে। এই কলেজ সংলগ্ন চার পাঁচটি গ্রাম থেকে লোকজন এসেছে যাত্রা দেখতে।

যাইহোক যাত্রা ভাংতেই লোকজন যে যার বাড়ির পথ ধরে। বেশিরভাগ লোকজনই সাইকেল নিয়ে এসেছে। আর যারা সাইকেল আনেনি তারা ম্যানেজ করে তাদের প্রতিবেশিদের কারও সাইকেলে সওয়ারি হয়ে এসেছে। তাই বেশিরভাগ সাইকেলে দু থেকে তিনজন সওয়ারি।

একটা লোক এদিক ওদিক তাকিয়ে দেখার চেষ্টা করে তার গ্রামের কেউ সাইকেল নিয়ে এসেছে কিনা। অনেককেই দেখতে পায় কিন্তু সবাই দু তিনজনকে সাইকেলে চাপিয়ে নিয়ে ফিরে যাচ্ছে। কেউই সিঙ্গল আসেনি। অশোক আশা করেছিল তার গ্রামের একজন কাউকে পেয়ে যাবে যার সাইকেলে চেপে বাড়ি ফিরতে পারবে। কিন্তু তার আশেপাশের এমন কাউকে সাইকেলে একা ফিরতে দেখতে পায় না। অশোক তাই মনমরা হয়ে হাটা শুরু করে।

অশোকের যাত্রা দেখার নেশা অনেকদিনের, এই যাত্রা দেখা নিয়ে সংসারে কম অশান্তি হয়নি। কিন্তু আশেপাশে কোথাও যাত্রা হচ্ছে শুনলেই অশোক সেখানে হাজির হয়ে যায়। আজকের এই যাত্রাপালাটা তার বাড়ির থেকে অনেক দূরে হচ্ছে। কিন্তু অশোক যাত্রা দেখার নেশায় বিকেল বিকেল এখানে পৌঁছে যায়। অশোক টিকিট কাটার আগে দেখে যাত্রা শুরু হবে সন্ধ্যা সাতটায় আর শেষ হবে রাত দশটায়। সাড়ে দশটার শেষ বাসে আরামসে বাড়ি ফিরে যেতে পারবে। এইভেবে অশোক টিকিট কেটে ফেলে। কিন্তু যাত্রা শুরু হয় রাত আটটায় আর শেষ হয় রাত এগারটায়। অশোকের বাড়ি ফেরার শেষ বাস তখন চলে গেছে।

অশোক নিজের হাতঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখে প্রায় সাড়ে এগারোটা বাজতে যায়। মোটামুটি লোকজন প্রায় ফাঁকা হয়ে আসে। অশোক দেখে তার গ্রামের যারাই এসেছে সবাই দু থেকে তিনজন সওয়ারি নিয়ে এসেছে। ফলে কারও সাইকেলে চেপে ফেরা সম্ভব হয় না। আবার তার গ্রামের এমন কাউকে দেখতে পায়না যে হেটে ফিরছে। তাহলে তার সাথে গল্প করতে করতে ফিরতে পারত। অশোক নিরাশ হয়ে বাড়ির দিকে হাটা লাগায়। এখান থেকে হেটে তার বাড়ি ফিরতে প্রায় দেড় ঘণ্টা সময় নেবে। অশোক আর একবার হাতঘড়িটার দিকে তাকিয়ে হিসেব করে নেয় তার বাড়ি ফিরতে প্রায় রাত একটা থেকে সোয়া একটা বেজে যাবে। অশোক জোরকদমে পা চালায়।

আধা মফস্বল অঞ্চলে রাত এগারোটা মানে মাঝ রাত। রাস্তাঘাট সুনসান, জনমানবহিন। কয়েকটা রাস্তার কুকুর ছাড়া কাউকে দেখতে পাওয়া যায় না। দোকান পাট সব বন্ধ। অশোক যাত্রার ডায়লগ আওড়াতে আওড়াতে এগিয়ে যায়।

মিনিট দশেক হাঁটার পরেই তার পাশে এসে কালো রঙের একটা এম্বাসেডর গাড়ি ব্রেক কষে দাড়ায়। গাড়িটা হঠাৎ করে তার পাশে এসে দাড়াতে অশোক একটু ভয় পেয়ে যায়। অশোক গাড়িতে ড্রাইভার ছাড়া আর কাউকে দেখতে পায় না।
ড্রাইভারটা একটা চিরকুট তার দিকে এগিয়ে দিয়ে জিজ্ঞেস করে, ‘স্যার, এই ঠিকানাটা কোথায় বলতে পারবেন?’




অশোক চিরকুটটা পড়ে দেখে তাদের গ্রামের মণ্ডলদের বাড়ির। তার গ্রামে ফেরার একটা সুবিধে পেয়ে যেতে মনে মনে খুশি হয়। আবার একটা অচেনা অজানা লোকের গাড়িতে ফিরতে ভয়ও পায়। একটু সন্দিহান হয়ে অশোক জিজ্ঞেস করে, ‘এত রাতে মণ্ডলদের বাড়িতে কি করতে যাবেন?’

ড্রাইভারটা তার পাশের সিটের একটা প্যাকেট দেখিয়ে বলে, ‘স্যার, এই প্যাকেটটা পৌঁছে দিতে যাব। খুব আর্জেন্ট।’

তাদের গ্রামের মণ্ডলরা বেশ অবস্থাপন্ন, দোতলা পাকা বাড়ি। মণ্ডলদের একটা ছেলে বম্বে থাকে হয়ত সেই এই পার্সেলটা পাঠিয়েছে। অশোক নিশ্চিন্ত হবার জন্য জিজ্ঞেস করে, ‘এই পার্সেলটা কি বম্বের থেকে এসেছে?’

ড্রাইভারটা বলে, ‘হ্যা, স্যার, আপনি কি করে জানলেন?’

ড্রাইভারের কথা শুনে অশোকের মনের সংসয় দুর হয়। নিশ্চিন্ত হয় গাড়িটা তাদের গ্রামেতেই যাচ্ছে।

অশোক বলে, ‘তুমি যে বাড়িতে যাবে, আমি তার পাশেই থাকি। আমি মণ্ডলদের খুব ভাল করে চিনি।’

ড্রাইভারটার মুখে হাসি ফুটে ওঠে, বলে, ‘স্যার, আপনি এখন বাড়ি ফিরবেন তো?’

অশোক মাথা নেড়ে সম্মতি জানাতেই ড্রাইভারটা গাড়ির থেকে নেমে এসে পেছনের দিকের দরজা খুলে দিয়ে বলে, ‘স্যার, তাহলে তো খুব ভাল হল। আপনি আমার সাথে গেলে রাস্তাটা আপনি চিনিয়ে দিতে পারবেন। আর আপনিও তাড়াতাড়ি বাড়ি ফিরতে পারবেন।’

ড্রাইভারটার মুখে বারবার স্যার স্যার শুনে অশোকের মন খুশ হয়ে যায়। যেখানে সে ফেরার জন্য একটা সাইকেল ম্যানেজ করার কথা ভেবেছিল সেখানে একটা গাড়ি ম্যানেজ হয়ে যাবে এতটা অশোক আশা করেনি। হঠাৎ করে এরকম একটা সুযোগ জুটে যেতে অশোক আর দেরি না করে পেছনের সিটে বসে পড়ে।

গাড়ি ছুটতে শুরু করে। অশোক প্রথম কয়েকটা বাঁক ড্রাইভারকে দেখিয়ে দেবার পরে যখন দেখে গাড়ি এখন সোজা যাবে কোন ডায়ে বায়ের ব্যাপার নেই তখন অশোক ভাল করে হেলান দিয়ে বসে। গাড়ি চলতে থাকে, অশোকের আরামে চোখ বুজে আসে।
আচমকা সশব্দে গাড়িটা ব্রেক কষে দাড়িয়ে পড়ে। অশোক ধড়মড় করে উঠে বসে। তাকিয়ে দেখে অন্ধকার ফুড়ে তিনটে ছায়ামূর্তি গাড়ির কাছে চলে আসে। অশোক ভয়ে আধমরা হয়ে যায়। এরমধ্যে গাড়ির পেছনের দিকের দরজা খুলে দুটো ছায়ামূর্তি তাকে ঠেলে সরিয়ে দিয়ে তার দুদিকে বসে পড়ে। আর তৃতীয় ছায়ামূর্তিটি ড্রাইভারের পাশের সিটে বসে পড়ে। তিন ছায়ামূর্তি বসার সাথে সাথে গাড়ি উল্কার বেগে ছুটতে শুরু করে।





আচমকা এই পরিস্থিতির মধ্যে পড়ে অশোকের হাত পা অবশ হয়ে আসে। বুকে ধড়পড়ানি শুরু হয়। হাউমাউ করে কান্না জুড়ে দিয়ে অশোক বলে, ‘স্যার, আমি গরিব মানুষ, বিশ্বাস করুন আমার কাছে কোন টাকা পয়সা নেই। আমি যাত্রা....’

অশোক কথা শেষ করতে পারে না, পেটের উপরে একটা হিম শীতল বস্তু অনুভব করে। তাকিয়ে দেখে ডান পাশে বসা লোকটা রিভলভারের নলটা তার তলপেটে ঠেকিয়ে রেখেছে। ভয়ে আতঙ্কে অশোকের শরীরে কাঁপুনি ধরে যায়, মেরুদণ্ড দিয়ে একটা ঠাণ্ডা স্রোত বয়ে যায়। অজানা আগুন্তুকদের হাত থেকে বাঁচার জন্য কাণ্ডজ্ঞান হারিয়ে অশোক ‘বাচাও’ ‘বাচাও’ বলে চেচিয়ে ওঠে। তখনই সামনের সিটে বসা লোকটা অশোকের গালে সপাটে একটা চড় কষায়। আর বাম পাশে বসা লোকটা অশোকের তলপেটে একটা ঘুষি বসিয়ে দেয়। তীব্র যন্ত্রণায় মাথা ঘুরে যায় অশোকের। মার খেয়ে অশোক অসহায়ভাবে নেতিয়ে পড়ে।

অশোক এটুকু বুঝে যায় এই লোকগুলো ভয়ঙ্কর। এদের হাত থেকে নিস্তার পাওয়া সহজ নয়। রাস্তাঘাট একদম নির্জন, একটা লোকও নেই। তাই বোকার মত কিছু করলে বিপদ আরও বাড়বে। অশোক একদম চুপ মেরে যায়। অশোকের যা আর্থিক অবস্থা তাতে লোকগুলো তার কাছ থেকে পেট্রলের খরচও তুলতে পারবে না। তাকে ধরে নিয়ে এদের কি লাভ সেটা অশোকের মাথায় আসে না।

অশোক এইবার লোকগুলোর মুখের দিকে তাকায়। ভীষণ অবাক হয়ে যায়, তার পাশে বসা দুজন মুখোশ পরে আছে অথচ ড্রাইভার আর সামনের সিটে বসা লোকটা মুখোশ পরে নেই। তবে কি মুখোশ পরা দুজন তার পরিচিত। চিনে ফেলতে পারে সেই ভয়ে কি মুখোশ পরে আছে। কিন্তু অশোকের এমন কোন শ্ত্রুও নেই যে তাকে মেরে ফেলতে চাইবে। অশোকের কাছে পুরো ব্যাপারটাই ঘোলাটে লাগে।

একটু পরেই গাড়িটা পিচ রাস্তা ছেড়ে মেঠো রাস্তা ধরে। রাস্তা উচু নিচু হওয়ায় গাড়িটা লাফাতে লাফাতে এগিয়ে যায়। লোকগুলোর মুখে কোন কথা নেই, পাথরের মূর্তির মত চুপ করে বসে আছে। এতে অশোকের প্রানে আরও ভয় ঢুকে যায়। একটু পরেই গাড়িটা একটা নদীর ধারে এসে দাড়ায়। নদীর পাড়ে একটা বিশাল বট গাছ দেখতে পাওয়া যায়। সামনের সিটের লোকটা ড্রাইভারকে গাড়িটা গাছটার নিচে গিয়ে দাড় করাতে বলে। গাড়িটা থামার পরেই সামনের সিটের লোকটা আর ড্রাইভার দুজনে গাড়ির থেকে নেমে আসে। কিন্তু বাকিরা কেউ গাড়ির থেকে নামে না। গাড়ির আয়না দিয়ে অশোক দেখতে পায় ড্রাইভারটা ডিকি খুলে একটা বেশ মোটা দড়ি বার করে। এরপরে ড্রাইভারটা মোটা দড়িটা কাঁধে চাপিয়ে গাছে উঠে যায়। এদের ব্যাপার স্যাপার দেখে অশোকের অবস্থা সঙ্গিন হয়ে ওঠে। দরদর করে ঘামতে থাকে।

সামনের সিটের লোকটা আদেশের সুরে বলে ওঠে, ‘মালটাকে গাড়ির থেকে নামা।’
অশোকের পাশে বসা দুজন টেনে হিঁচড়ে অশোককে গাড়ির থেকে নামিয়ে আনে।






অশোক এদের হাবভাব দেখে বুঝতে পারে সামনের সিটে বসা লোকটাই এই দলের পাণ্ডা। তাই অশোক সামনের সিটের লোকটার পায়ে পড়ে যায়। পা ধরে কাঁদতে শুরু করে দেয়। লোকটা কোমরে ঝোলানো রিভলভারটা একটানে বের করে অশোকের কপালে ঠেকিয়ে বলে, ‘কম কথায় ঠিক মতো জবাব দিবি।’

অশোক কাঁদতে কাঁদতে ‘জ্বি হুজুর’ ‘জ্বি হুজুর’ বলতে থাকে।

লোকটার মুখে একটা পৈশাচিক হাসি খেলে যায়, সেই দেখে অশোকের হাড় হিম হয়ে যায়।

লোকটা বলে, ‘আমার কথার ঠিক ঠিক জবাব দিলে কোনো ক্ষতি করব না। কিন্তু যদি আমার মনে হয় মিথ্যা কথা বলছিস তবে দু চোখের ঠিক মাঝখানে সীসা দিয়ে গোল করে গর্ত করে দেব।’

অশোক ভয়ে চুপসে যায়। অপেক্ষা করে লোকটার প্রশ্নের।

লোকটা কর্কশ স্বরে জিজ্ঞেস করে, ‘বিনোদিনী তোকে মাসে পঁচিশ হাজার টাকা দিত কেন?’

প্রশ্ন শুনে অশোকের ভেতরটা পর্যন্ত কেঁপে ওঠে। গলা শুকিয়ে কাঠ হয়ে যায়। তবুও কোনরকমে অশোক বলে, ‘হুজুর, আমি তো পুলিশকে বলেছি....’

কথা শেষ করতে পারে না তার আগেই লোকটা হাঁতের পিস্তলের বাঁটটা দিয়ে সজোরে অশোকের মুখে আঘাত করে বলে, ‘আমরা পুলিশ নই।’

অশোক শুধু মুখে ‘আ আক’ বলেই নাকটা চেপে ধরে। গলগল করে নাক দিয়ে রক্ত পড়তে থাকে। তাতে লোকটার মুখে কোন দয়ার লক্ষন দেখা যায় না বরং তার চোখেমুখে একটা হিংস্র ভাব ঠিকরে বেরোয়।

লোকটা অশোকের জামার কলার ধরে বলে, ‘আরেকবার বলছি, উত্তর পছন্দ না হলে সোজা বারুদ ঠুসে দেব একটা চোখে। বিনোদিনী তোকে মাসে পঁচিশ হাজার টাকা দিত কেন?’

দু হাত জড় করে লোকটার পায়ের কাছে বসে পড়ে অশোক হাউ হাউ করে কাঁদতে কাঁদতে বলে, ‘হুজুর, বিশ্বাস করুন। পুলিশ আমাকে অনেকে মেরেছে। আমাকে দিয়ে মিথ্যে বলানোর অনেক চেষ্টা করেছে। কিন্তু হুজুর, আমি সত্যি বলছি, বিনোদিনী দেবি আমাদেরকে টাকাটা মাসোয়ারা হিসাবে দিত। .....’

পুলিশের কাছে অশোক যে বয়ানটা দিয়েছিল সেটাই ভাঙ্গা রেকর্ডের মত বাজিয়ে যায়। অশোকের কথা শুনে লোকটার মুখচোখ ভয়ঙ্কর আকার ধারন করে। লোকটা মুখোশ পরা লোক দুটোকে ইশারা করে। লোক দুটো এগিয়ে এসে অশোকের দুটো হাত আর চুলের মুঠি ধরে হিড়হিড় করে টানতে টানতে নিয়ে যায়। টেনে হিঁচড়ে অশোককে গাড়ির মাথায় নিয়ে গিয়ে দাড় করায়। গাড়ির ঠিক উপরেই ড্রাইভারটা গাছের ডালে বসেছিল। ড্রাইভারটা শক্ত, মোটা দড়িটার একটা প্রান্ত গাছের ডালে ভাল করে বেঁধে দড়িটা উপর থেকে ঝুলিয়ে দেয়। মুখোশ পরা দুজনের একজন অশোককে শক্ত করে ধরে রাখে অপরজন ঝোলান দড়িটা অশোকের গলায় ফাসির মত করে পরিয়ে দেয়।

অশোকের বুঝতে বাকি থাকে না তাকে এরা ফাঁসি দিয়ে মেরে ফেলার চক্রান্ত করছে। অশোক তারস্বরে চেচাতে থাকে, কিন্তু ওই নির্জন জায়গায় তার চিৎকার শোনার মত কেউ নেই। এরপরে তারা অশোকের হাত দুটো পিছমোড়া করে বেঁধে দেয়। লোক দুটো গাড়ির মাথা থেকে নেমে আসে। আর ড্রাইভারও গাছ থেকে নেমে পড়ে।

এইবারে অশোকের মনে মৃত্যু ভয় দেখা দেয়। অশোক বুঝতে পারে গাড়ির উপরে সে যতক্ষণ দাড়িয়ে থাকবে ততক্ষণ সে বেঁচে থাকবে। গাড়িটা সরে গেলেই সে ঝুলে পড়বে আর গলার ফাঁসটা চেপে বসে তার মৃত্যু নিশ্চিত। অশোকের মনে হয় লোকগুলো তার ফাঁসির পরোয়ানা নিয়ে এসেছে। এই লোকগুলো তাকে খুন করবে অথচ পুলিশের কাছে এটা আত্মহত্যা বলে মনে হবে। এটা ভেবে অশোকের হাত পা সব ঠাণ্ডা হয়ে আসে।

অশোক অনেক কাকুতি মিনতি করে, ক্ষমা চায় কিন্তু লোকগুলো এসব কথায় কোন পাত্তাই দেয় না। চারজনই গাড়িতে উঠে বসে। ড্রাইভারটা গাড়িতে স্টার্ট দেয়, এক্সেলেটরে চাপ দিয়ে গাড়িটা ঘন ঘন গর্জন করায়। এরপরে ড্রাইভার গাড়িটা সামান্য আগু পিছু করে। অশোকের টালমাটাল অবস্থা হয়।

গাড়ির স্টার্ট বন্ধ হয়। সামনের সিটের লোকটা গাড়ির থেকে মাথা বার করে চেচিয়ে বলে, ‘শেষবারের মত বলার সুযোগ দিচ্ছি। যদি ঠিক বলিস তবে ছেড়ে দেব। আর যদি তা না হয় তাহলে আমরা গাড়ি নিয়ে বেরিয়ে যাব।’

অশোকের কান্না থেমে যায়, মনে তোলপাড় চলে। গাড়িটা স্থির হয়ে দাড়িয়ে থাকে, গাড়ির ভেতরের চারজন পাথরের মত বসে থাকে। সামান্যতম নড়াচড়া করতে অশোক ভয় পায় যদি গলায় ফাঁসটা লেগে যায়। হঠাৎ করে জায়গাটা ভীষণ রকম নিঝুম মেরে যায়। বাতাসও যেন থমকে যায়, গাছের কোন পাতা নড়ে না। ঝি ঝি পোকার ডাক ছাড়া আর কিছু শোনা যায়।

গাড়িটা হঠাৎ স্টার্ট নেয়, এগোতে শুরু করে। অশোকের অবস্থা তখন শোচনীয়, কোনরকমে টাল সামলায়। গাড়ির মাথার একদম শেষ প্রান্তে অশোক চলে আসে। কোনরকমে দাড়িয়ে থাকে, আর এক ইঞ্চি এগোলেই গাড়ির মাথার থেকে অশোকের পা বেরিয়ে যাবে, আর অবধারিত ফাসি।

ঠিক সেই সময় অশোক বিশ্ব ব্রম্ভাণ্ড কাঁপিয়ে চেচিয়ে ওঠে, ‘ব্ল্যাকমেল করতাম।’

*********************************
Like Reply


Messages In This Thread
RE: বনেদি বাড়ির কেচ্ছা ও একটি অদ্ভুত খুন - by ronylol - 17-06-2019, 05:47 PM



Users browsing this thread: 3 Guest(s)