Thread Rating:
  • 56 Vote(s) - 2.68 Average
  • 1
  • 2
  • 3
  • 4
  • 5
Erotic Thriller মেগাসিটির নির্জনতা
রবিনের সঙ্গ পাওয়া যাবে কিভাবে তার জন্য তার মন আকুলি বিকুলি করেছে। কিন্তু সে একে প্রশ্রয় দেয়নি। কিন্তু সেদিন যখন উপমা ওকে বিয়েতে দাওয়াত করলো তখন না করতে পারেনি। যদিও শুরুতে যেতে অস্বীকার করেছে কিন্তু তার অবচেতন মনে সে যাওয়ার জন্য প্রস্তুত হয়ে ছিল। এরপর যখন বিয়েতে আবার রবিনের সাথে দেখা হল তখন নিজের উপর পুনরায় নিয়ন্ত্রণ হারিয়েছিল সে। রবিন সম্ভবত জাদুকর। ওর পাশে গেলে কোনো মেয়েই সম্ভবত নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারে না। এরপর বাসায় ফেরার পথে রবিনের আগ্রাসন, এগিয়ে দিতে যাওয়ার সময় অসম্পূর্ণ রোমান্স তার মধ্যে একটা অবদমিত যৌনাবেগ সৃষ্টি করেছিল। সে মন থেকে চাইছিল রবিন তাকে আবার প্রাণ খুলে আদর করুক। তাই সেদিন যখন ফিরোজ সাভার যাওয়ার কথা বলল তখন তার ভেতরটা শিশুর মতো খুশি হয়ে গিয়েছিল। অবশেষে একটা সময় পাওয়া গেল। কিন্তু রবিন যখন জানালো সে আসতে পারবে না, তখন তার মেজাজ খারাপ হয়ে গেল একশো ডিগ্রি। সারারাত সে বিছানায় ছটফট করেছে৷ মন যখন কোনো আনন্দজনক মূহুর্তের জন্য প্রস্তুত হয়ে থাকে তখন সেটা না হলে ফ্রাস্ট্রেশন তৈরি হয়। বিগত তিনদিন ধরে আফরিন ফ্রাস্ট্রেশনে ভুগছে। রবিন বারবার কল দিয়েছে কিন্তু সে রিসিভ করেনি। হোয়াটসঅ্যাপে মেসেজ দিয়ে সরি লিখেছে অনেকবার। কিন্তু সে কোনো রিপ্লাই দেয়নি।

ফিরোজ ভাবছেন আফরিনের এই মুড অফ তার অবহেলার জন্য, সময় না দেওয়ার জন্য। তিনি মনে মনে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন এখন থেকে যত ব্যস্ততাই থাকুক, আফরিনকে তিনি প্রতি ঘন্টায় কল দেবেন।

আফরিন পড়ে গেছে দোটানার মধ্যে। সে ফিরোজকে ভালোবাসে ঠিক, কিন্তু রবিনকেও সে ভালোবেসে ফেলেছে। রবিন তার জীবনে এখন একটা বাস্তবতা। তাকে সে অস্বীকার করতে পারবে না৷ ধীরে ধীরে যেন রবিনের প্রতি ভালোবাসার পারদটা ফিরোজের প্রতি অনুভূতির চেয়ে উপরে উঠে যাচ্ছে। যদি সুযোগ থাকতো তাহলে সে আজীবনের জন্য রবিনের কাছে চলে যেত। কিন্তু সে জানে ফিরোজ তাকে প্রচণ্ড ভালোবাসে। সে যদি ফিরোজকে ছেড়ে দেয় তাহলে ফিরোজ জীবন্মৃত হয়ে যাবে। ফিরোজকে কষ্ট না দেওয়া তার কর্তব্য। ওদিকে রবিনকেও সে একান্ত করে চায়। এর একটাই মাত্র সমাধান আছে, তাহলো রবিনের সাথে গোপন প্রেম চালিয়ে যাওয়া। কিন্তু গোপনে প্রেম করার অর্থ একজনকে ধোকা দেওয়া, যা কখনো আফরিন নিজের ক্ষেত্রে মেনে নিতে পারবে না। তাহলে সে যে ধোকা দিচ্ছে এর কী জবাব আছে তার কাছে? অতৃপ্ত হৃদয় উত্তর দিতে পছন্দ করে না, শুধু চায় তার বাসনা পূরণ হোক।

খাওয়া শেষে পরম মমতায় আফরিনকে বুকের মধ্যে নিয়ে শুয়ে পড়লেন ফিরোজ। দীর্ঘদিন পর তাদের মধ্যে রোমান্টিক সঙ্গম হল। ফিরোজের প্রতিটা স্ট্রোকের সময় আফরিনের শুধু মনে পড়ে যাচ্ছিল রবিনের কথা। সে এই ফ্যান্টাসি থেকে মুক্তি চায় না। চায় তাড়িয়ে তাড়িয়ে উপভোগ করতে। তাই উপর দিয়ে ফিরোজকে জড়িয়ে ধরলেও হৃদয়ের জগতে যে অলৌকিক উদ্যান সে তৈরি করে নিয়েছে, সেখানে রবিনের বুকের মধ্যে মুখ লুকিয়েছিল সে।

ফিরোজের পিছু নিয়ে সাভার যাওয়ার দুইদিন পর আবার একই জায়গায় হাজির হয় রবিন। ডিসেম্বরের হালকা শীতে ভোরবেলা বাইক নিয়ে সভার চলে যায় সে৷ বাইকটা পার্ক করে বাড়ির গেটে টোকা দেয়। ভেতর থেকে দারোয়ান জানতে চায়- 'কে, কী চাই?'
'বাড়ি ভাড়া নিতে আসছি। একটু খুললে ভালো হয়।' উত্তর দেয় রবিন।
'এই বাড়ি ভাড়া দেওয়া হয় না। আপনি অন্য জায়গায় দেখেন।'
'আমি এই এলাকায় নতুন ভাই। ভাল বাসার সন্ধান জানি না। আপনি একটা ভালো বাড়ি খুঁজে দিতে পারলে আপনারে বকশিস দিতাম।'
রবিনের কথায় কাজ হয়। গেট খুলে দারোয়ান বেরিয়ে আসে। দারোয়ান খবিরুদ্দিন অনেক বছর ধরে দারোয়ানির চাকরি করে। তার অভিজ্ঞতায় দেখেছে বড় ব্যবসায়ী বা চাকরিজীবীরা নিজেরা বাসা ভাড়া করতে পারে না। কারণ একটা বাসা খোঁজা অনেক সময় সাপেক্ষ ব্যাপার৷ যা তাদের নাই। তাই তারা ব্রোকারের মাধ্যমে বাড়ি ভাড়া করে। সে এক সময় বনানীতে দারোয়ানি করেছে। সেখানে এক শ্রেণির দালাল আছে যারা বাড়ি, অফিস ভাড়া, ফ্ল্যাট বিক্রি এসব পেশায় জড়িত। তাদের আয় ইনকাম বেশ ভালো। খবিরুদ্দিনও ছোটখাটো ক্লায়েন্ট ম্যানেজ করে দিয়েছে। তাতে দুই পক্ষ থেকেই কিছু কমিশন সে পেয়েছে। কিন্তু বড় দাও মারার সুযোগ তার হয়নি। সে ছাপোষা একজন মানুষ। বড় মানুষদের সাথে ডিল করার ক্ষমতা তার নাই।

আগন্তুক লোকটার কথা শুনে চোখ দুটো চকচক করে ওঠে খবিরুদ্দিনের। অনেকদিন পর এরকম একজন কাস্টমার পাওয়া গেছে। দুর্মূল্যের বাজারে একটু বাড়তি ইনকাম কে না চায়। এমনিতে স্যার যা বেতন দেয় তা দিয়ে সংসার ভালো মতই চলে যায়। কিন্তু আটকে যায় অন্য জায়গায়। তার টুকটাক তামাক সেবনের নেশা আছে। দিনে এক পুড়িয়া গাঁজা টানতে না পারলে তার দিনটা ভালো যায় না। গাঁজার নেশায় টাকা নষ্ট করে বাড়িতে টাকা কম পাঠানোয় দুদিন আগে বউয়ের সাথে ঝগড়া হয়েছে তার। তার দেশের বাড়ি কিশোরগঞ্জ৷ বাড়িতে স্ত্রী আর দুইটা মেয়ে আছে। ছেলে নাই তার। একটা ছেলের জন্য তার বুকটা খা খা করে।

'জি স্যার বলেন। আপনের কেমন বাড়ি লাগবে? বাগানবাড়ি, ফ্ল্যাট বাড়ি নাকি অফিস। আমার কাছে সব খোঁজ আছে। আপনি টেকা দিবেন বাড়ি পাইবেন।' আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে কথাগুলো বলে খবিরুদ্দিন।
'আমার একটা বাগানবাড়ি লাগবে। নদীর পারে এরকম একটা পজিশন হলে ভালো হয়। ভাড়া যা লাগে লাগুক। বাড়ি পছন্দ হলে টাকা কোনো বিষয় না।'
ইচ্ছা করেই বাগানবাড়ির কথা বলল রবিন। কারণ সে এখন নিজেকে বড়লোক দেখাতে চায়। খবিরুদ্দিনের কথা শুনেই তার ভেতরটা পড়ে ফেলেছে সে। এই ধরনের মানুষের চোখ থাকে উঁচুতে। নিজের সমপর্যায়ের লোকদের এরা ফকিন্নি মনে করে। তাদের ধারণা তারা আসলে ওরকম বড়লোক হওয়ারই কথা ছিল। কপাল দোষে আজ গরিব। রবিন বিষয়টা আগে বুঝতে পারলে গাড়ি নিয়ে আসতো। গাড়ি নিয়ে আসলে খবিরুদ্দিন তাকে আরো বেশি সিরিয়াসলি নিত। কি আর করা। এখন এভাবেই ম্যানেজ করতে হবে।
'তা স্যার করেন কি আপনে? গাড়ি নিয়া আসছেন? চলেন ওই পাশে বাজার আছে। ওখানে গিয়া কথা বলি।' খবিরুদ্দিন বলে।
'আমি বাইং হাউজের ব্যবসা করি। বাইং হাউজ বোঝেন তো? ওই বিদেশে গার্মেন্টস প্রডাক্ট ডেলিভারি দেই আরকি। বিদেশ থেকে আমার অনেক বায়ার আসে। তাদেরকে হোটেলে রাখতে গেলে বিল অনেক বেশি আসে। তাই ভাবছি একটা বাগানবাড়ি ভাড়া নেব। আর আজকে গাড়ি আনি নাই। আমার গাড়ি নিয়ে ম্যানেজার গেছে এয়ারপোর্টে। আমি তাই বাইক নিয়ে আসছি। চলেন বাজারে যাই।'
'এইটা কোনো সমস্যা না। চলেন যাই। আমারে আপনার নিজের লোকই মনে করবেন স্যার। যেকোনো দরকারে আমারে স্মরণ করবেন। বন্দা হাজির থাকবে সব সময়।'
'তুমি তো দেখছি বেশ কাজের আছো। হুম, আমার চোখ তাই বলছে। জহুরির চোখ মিথ্যা বলে না। তোমাকে কাজে লাগানো লাগবে।' রবিন আপনি থেকে তুমিতে চলে আসে। এমনিতেও খবিরুদ্দিনের বয়স বেশি না। পয়ত্রিশের মতো হবে। তুমি বললে অধীনস্থদের মনে মালিক মালিক একটা ভাব তৈরি করা সহজ হয়।

বাজারে এসে একটা চা বিড়ির দোকানে বসে। দুটো চা দিতে বলে পকেট থেকে বেন্সনের প্যাকেট বের করে রবিন। খবিরুদ্দিনের দিকে একটা এগিয়ে দেয়। বিড়িখোরদের কাছে দামি সিগারেট মহামূল্যবান জিনিস। খবিরের মনে রবিনের দাম বেড়ে যায়। চা খেতে খেতে একটা নিরিবিলি জায়গায় গিয়ে দাঁড়ায় রবিন। খবির তাকে অনুসরণ করে।
'আমি যে বিজনেস করি তাতে বিদেশীদের সাথে সব কাজকাম। আর বিদেশীরা একটু লাল পানি আর ওইসব মানে বুঝোই তো, লাইক করে। তোমারে যদি এই দুইটা ম্যানেজ করার দায়িত্ব দেই পারবা না?'

খবির দেখে তার কপাল খুলে গেছে। ওইসব মানে কি সে বোঝে। বলে, 'পারব না মানে স্যার, একশোবার পারব। আপনি যেই ধরনের মাল চান সব পাবেন। আরে আমার বর্তমান মালিকরেই তো...।' কথাটা অর্ধসমাপ্ত রেখে কাশি দেওয়ার ভাব ধরে খবির।
'তোমার বর্তমান মালিকরে কি? মাল সাপ্লাই দাও?'
'আরে না না। আমার মালিক মাল পানি খায় না। উনি বড় সৎ লোক।'
'ও আচ্ছা। সৎ লোক বলে তাকে সতী নারী সাপ্লাই দাও তাই তো?' কথাটা বলে হাসতে থাকে রবিন। খবির বিব্রতভাব কাটিয়ে উঠতে চেষ্টা করে।
'কি যে বলেন স্যার। আমি ছোট মানুষ। ওইসব কই পাব। আর স্যার ওইসবের মধ্যে নাই। উনি ভালো লোক।'
'এই না তুমি বললা তুমি সব ম্যানেজ করতে পারবা। এখন আবার বলতেছো তুমি ছোট মানুষ। তার মানে আমাকে অন্য লোক খুঁজতে হবে। বুঝতে পারছি।'
খবির দেখে তার সোনার ডিম হাতছাড়া হয়ে যাচ্ছে। তাই দ্রুত বলে ওঠে- 'না স্যার পারব পারব। আসলে কি আমার মালিক ভালো মানুষ ঠিক আছে। কিন্তু আমার কিছু যোগাযোগ আছে এইসব বিষয়ে। আমি ম্যানেজ করতে পারব।'
রবিন খেয়াল করে খবির মালিকের বিষয়ে কোনো তথ্য দিতে চাচ্ছে না। তার মানে ডাল মে কুছ কালা হে।
'আচ্ছা তোমার বর্তমান মালিকের নাম কি? কি করে উনি?'
'উনার নাম আনিস চৌধুরী। উনি পরিবহন ব্যবসায় আছেন।'
খবিরের কথায় খটকা লাগে রবিনের। নাম তো মিলল না। দ্রুত চিন্তা কাজ করে রবিনের মাথায়। খবির প্রথমে যেভাবে গাইগুই করলো মালিকের বিষয়ে, তারপর আবার হঠাৎ করে মালিকের নাম বলে দিল, বিষয়টা কেমন যেন বিপরীতমুখী লাগলো। তার মানে নামটা হয়তো আসল না। রবিন তার আরেকটা কার্ড ছুড়ে মারে। কথা বের করাটা এক প্রকার কার্ড খেলার মতো। সঠিক সময়ে উপযুক্ত কার্ড শো করতে পারলে জিত তার। কিন্তু কোন কার্ডে বাজি লাগবে আর কোন কার্ডে লাগবে না তা কেউ জানে না।
'দেখো খবির। আমার সাথে মিথ্যা বলবা না। আমি ঘাস খেয়ে এতবড় বিজনেস দাড় করাই নাই। বুদ্ধি না থাকলে এতদূর আসতে পারতাম না। আমি চাই তুমি আমার বিশ্বস্ত লোক হও। আমি মানুষের চোখ দেখলে মনের খবর পড়তে পারি। তুমি আমার বিশ্বস্ত লোক হতে পারলে তোমার আর দাতোয়ানির চাকরি করা লাগবে না৷ তোমারে আমার সেক্রেটারির চাকরি দিব। তুমি তো দেখতে শুনতে খারাপ না৷ ফিটনেসও ভালো। এই ছোট চাকরি কেন করবা? তোমারে আমি ভাল পজিশনে দেখতে চাই।'
'স্যার মিথ্যা বলি নাই। মানে আর কি ওই মালিকের বিষয়ে সব কথা বলা নিষেধ আছে তো তাই।' মুখটা কাচুমাচু করে বলে খবির।
'সেতো থাকবেই। আমি এতবড় একটা বিজনেস করি এটা যদি আশেপাশের পোলাপান জানে তাইলে তো ওরা ডিস্টার্ব করবে আমারে। দুইদিন পরপর আইসা বলবে স্যার আজ এই উৎসব টাকা দেন, কাল ওমুকের '.ি টাকা দেন। চান্দাবাজি শুরু করবে। ওরা পলিটিক্যাল পোলাপান। ওদের চ্যাতাইলে এলাকায় থাকাও মুশকিল হয়ে যায়। তাই কেউ চায় না তার পরিচয় প্রকাশ পাক। কিন্তু আমারে দেইখা কি তোমার এলাকার ছিচকে মাস্তান মনে হয়? আমি কি তার কাছে চান্দা চাব? আমি জানতে চাই এইজন্য যে আমার আশেপাশে কারা থাকে বা এই এলাকার সিকিউরিটি কেমন তার জন্য। সিকিউরিটি ভালো না হইলে তো বড় মানুষরা থাকবে না তাইনা। আর এই নাও এডভান্সের টাকা৷ তোমার যা লাগে খরচ কইরো আর বাকি টাকা দিয়া বাড়ির এডভান্স কইরো। আর নাম্বার রাইখা দিবা দরকারে আরো পাঠাবো।' কথাগুলো বলে খবিরের হাতে একটা টাকার বান্ডিল তুলে দেয়।
'এইখানে তিরিশ হাজার আছে। যদি আরো লাগে বলবা। টাকা পয়সা আমার কাছে কোনো বিষয় না। আমি চাই মানুষের আনুগত্য আর বিশ্বস্ততা। তুমি আমার বিশ্বস্ত হইতে পারলে তোমার দিন ঘুরে যাবে খবির।'
হাতে এতগুলো টাকা পেয়ে চোখ উজ্জ্বল হয়ে ওঠে খবিরুদ্দিনের। তার তিন মাসের বেতন সে এক মূহুর্তে পেয়ে গেছে। নিজের চোখকেই সে বিশ্বাস করতে পারছে না। তার মনে হয় এই লোক তাকে যা আদেশ করবে সে তাই শুনবে।
টাকা হাতে পেয়ে খবিররের চোখের তারায় আনন্দ রবিনের চোখ এড়ায় না। রবিন অভিজ্ঞতা থেকে দেখেছে কথা বের করার সময় টার্গেট যখন ভালনারেবল হয়ে যায় তখন হাতে কিছু টাকা গুঁজে দিলে টনিকের মতো কাজ করে। তাই কোথাও এই ধরনের স্ট্রিং অপারেশনে গেলে সাথে কিছু টাকা রাখে সে।
টাকা পেয়ে খবিরের প্রতিরোধের দেয়াল ভেঙে যায়৷ সে জানায় বাড়ির মালিকের নাম ফিরোজ। তিনি পুলিশের বড় অফিসার। ফিরোজের মদ ও নারীর নেশা আছে৷ প্রতি বৃহস্পতিবার সে এখানে এসে মদ খায় আর নারী নিয়ে ফূর্তি করে। উঠতি মডেল, অভিনেত্রী এগুলো ফিরোজের প্রথম পছন্দ। কোনো কোনো সময় ভদ্র ঘরের নারীদেরও দেখা যায়। যারা ফেবারের আশায় ফিরোজের শয্যাসঙ্গী হয়। তার বন্ধুকেও দেখা যায় মাঝেমধ্যে তার সাথে যোগ দিতে। সে নাকি ভার্সিটির মাস্টার।
'স্যার আমি যে এই কথা আপনেরে জানাইছি এইটা যদি ফিরোজ স্যার জানে তাইলে আমারে ডাইরেক্ট গুলি কইরা মাইরা ফালাইব। আপনার দোহাই লাগে স্যার এইটা যেন ফিরোজ স্যারের কানে না যায়।'
'আরে ধুর। তুমি পাগল নাকি। আমি এগুলো ফিরোজ সাহেবকে বলতে যাব কেন। উনার আর আমার কাজ তো একই রকম। বলা যায় আমরা ভালো বন্ধু হব দেখা হইলে।'
'ঠিক আছে স্যার। আপনের উপর ভরসা করলাম।'
'সেতো তোমাকে করতেই হবে যদি নিজের ভাগ্যের পরিবর্তন চাও। আচ্ছা এই এলাকার প্রতি শতাংশ জায়গার দাম কত বলো তো?'
'এই ধরেন পাঁচ ছয় লাখ। ক্যান স্যার?'
'না মানে ভাবছি আমিও এমন একটা বাড়ি করে ফেলব কিনা। নিজের একটা বাগানবাড়ির শখ আমারও আছে। যদি বাড়ি বানাই তাইলে এর ম্যানেজিং এর সব দায়িত্ব তোমারে দেব।' রবিনের কথায় বিনয়ে গলে পড়তে চায় খবির। তার চোখেমুখে কৃতজ্ঞতার ছাপ সুস্পষ্ট।

খবিরের সাথে কথা শেষ করে বাইক স্টার্ট দেয় রবিন। আপাতত এখানকার কাজ শেষ। ফিরোজ সম্পর্কে যে তথ্য পাওয়া গেছে তা শুধু তার নিউজের জন্যই না, দুদকেরও কাজে লাগবে। বাড়িটা দাঁড়িয়ে আছে প্রায় বিশ বাইশ শতাংশ জায়গার উপর। তার মানে এভারেজ যদি পাঁচ লাখ করেও শতক ধরা যায় তাহলে বাড়িসহ প্রায় তিন কোটি টাকার সম্পত্তি আছে এখানে। ফিরোজের মতো জুনিয়র অফিসার এত টাকা কিভাবে যোগাড় করলো তা এক বিস্ময়। দুদকের কাজ সময় মতো দুদক করবে। তার কাজ এখন এই তথ্যকে কাজে লাগিয়ে বীরেন বাবুর খুনিদের খুঁজে বের করা। এরজন্য ফিরোজকে ফাঁদে ফেলতে হবে। কিন্তু সেটা কিভাবে? যদি ফিরোজের এই গোপন সম্পদের খবর ফাঁস করে দেয় তাহলে কী হবে? তাহলে ফিরোজ হয়তো সাসপেন্ড হবে, তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় তদন্ত হবে। কিন্তু বীরেন বাবুর খুনের রহস্য রহস্যই থেকে যাবে। রবিনের ইন্টারেস্ট দুর্নীতির তথ উদঘাটনে নয়, এই তথ্য কাজে লাগিয়ে খুনের রহস্য উদঘাটন করা। ফিরোজের এই সম্পত্তির খবর সে জেনে গেছে এটা বলে ব্লামেইল করা যায়? নাহ, এটা করলে নিজের পায়ে নিজে কুড়াল মারা হবে। ফিরোজ তাকে বাঁচতে দেবে না। অনেক সাংবাদিকই এসব করতে গিয়ে নিহত হয়েছে। এটা সেকেলে পদ্ধতি। এর চেয়ে বেটার কিছু ভাবতে হবে। রবিনের দৃষ্টি সামনে, কিন্তু তার মাথায় কাজ করছে রাজ্যের ভাবনা। ভাবতে ভাবতে বাসায় চলে আসে সে। বিছানায় শুয়েও তার চিন্তা কূল খুঁজে পায় না। কিভাবে আটকানো যায় ফিরোজকে? হঠাৎ একটা চিন্তা মাথায় খেলে যায় রবিনের। খবির বলছিল ফিরোজের প্রথম পছন্দ উঠতি মডেল, অভিনেত্রী। তার মানে এটা ফিরোজের দুর্বলতা। মানুষের পছন্দের জিনিসই তার দুর্বল পয়েন্ট। রবিন ফিরোজের এই একিলিস হিলে আঘাত করতে চায়। এরজন্যও আফরিনকে প্রয়োজন তার। কিন্তু আফরিন দুদিন ধরে কল ধরছে না। ফিরোজকে ফাঁদে ফেলার জন্য আফরিনকে তার একান্ত প্রয়োজন। সেদিন যায়নি বলে আফরিন রাগ করে আছে। যেভাবেই হোক রাগ ভাঙাতে হবে।
আফরিনের কথা মনে হতেই আতঙ্ক আর বেদনা একসাথে ঘিরে ধরে রবিনকে। মেয়েটা তাকে মন থেকে ভালোবেসে ফেলেছে৷ সারাক্ষণ হোয়াটসঅ্যাপে মেসেজ দিতে থাকে। সে কি করছে না করছে কখন কোথায় যাচ্ছে সব জানতে চায়। দুদিন ধরে মেসেজও দিচ্ছে না। মেয়েটা যখন জানবে রবিন ফিরোজের সম্পর্কে তথ্য নিতে তার সাথে অভিনয় করেছে, তখন তার কী অবস্থা হবে? রবিনের অবচেতন মন প্রশ্ন করে, সে এখনো অভিনয় করে যাচ্ছে নাকি আফরিনকে একটু একটু ভালোও বাসতে শুরু করেছে? দুদিন কল না ধরায় তার কি একটুও খারাপ লাগছে না? সচেতন মন উত্তর দিতে চায় না। সেখানে এখন ভর করেছে তাবাসসুম। ছয় বছর পর পুরনো প্রেম ফিরে এসেছে। এবার আর তাকে হাতছাড়া করতে চায় না। যেভাবেই হোক এবার তাকে জয় করেই ছাড়বে৷ অন্যদিকে অবচেতন মন বলে আফরিন তার মনের অনেকখানি জায়গাজুড়ে অবস্থান নিয়ে ফেলেছে। সেখান থেকে তাকে সরানো সহজ হবে না। দুদিকের দোলাচলে দোল খেতে খেতে ঘুমিয়ে যায় রবিন।

পরদিন অফিসে গিয়ে দেখে তাবাসসুম এখনো আসেনি। ডেস্কটা ফাঁকা পড়ে আছে। রবিনের বুকের মধ্যে শূন্যতা অনুভূত হয়। কি হল মেয়েটার? এখনো আসেনি কেন? কোনো অসুখ বিসুখ হল না তো? সে ফোন বের করে ফোন দেয় তাবাসসুমের নাম্বারে। তাবসসুম ফোন রিসিভ করতেই শশব্যস্ত হয়ে জিজ্ঞেস করে- ' কোথায় আপনি? শরীর ঠিক আছে তো? অফিসে আসবেন না আজকে?'
রবিনের প্রশ্ন শুনে অবাক হয় তাবাসসুম। বলে- 'আরে আমি তো অফিসে না গিয়ে সরাসরি প্রেসক্লাবে চলে আসছি। এখানে বিরোধীদের মানববন্ধন হচ্ছে। প্রোগ্রামটা কাভার করে অফিসে আসব। তুমি এত ব্যস্ত হচ্ছো কেন? কোনো সমস্যা?'
'তা না। আসলে অফিসে এসে আপনাকে দেখতে পেলাম না তো তাই জিজ্ঞেস করলাম।' সব জায়গায় আত্মবিশ্বাসী রবিনের কণ্ঠ তাবাসসুমের বেলায় কেমন ম্যাড়মেড়ে শোনায়। রবিনের কথা শুনে হেসে ওঠে তাবাসসুম। বলে- 'ওরে পাগল তুমি জানো না যে আমার কাজ তোমার চেয়ে আলাদা। পলিটিক্যাল বিটে কখন কোথায় থাকা লাগে তার নিশ্চয়তা নেই। আমি দ্রুতই চলে আসব। দেখা হবে।'

রবিন কাজে মনোযোগ দেওয়ার চেষ্টা করে। তাবাসসুমের সাথে কথা বলতে গেলে এমন হয় কেন কে জানে। সব কেমন তালগোল পাকিয়ে যায়। সব গোছানো কথা এলোমেলো হয়ে যায়। হৃদয় থেকে ভালোবাসা কোনো মানুষের সাথে এই প্রথম কথা বলছে সে। বলা যায় এই অনুভূতির কাছে আনাড়ি সে। যাকে হারানোর ভয় নেই, বা গেলেও কিছু যায় আসে না, তার সাথে যেভাবে ইচ্ছা কথা বলা যায়। কিন্তু যাকে হারানোর ভয় আছে তার সাথে কথা বলার সময় প্রতি পলে সাবধানে থাকতে হয়। রবিন এখন তার বাস্তব অভিজ্ঞতা লাভ করছে।

ঘন্টাখানেক পর অফিসে আসে তাবাসসুম। একটা টপস আর একটা জিন্স পরেছে সে। দারুণ স্মার্ট লাগছে তাকে। সিনেমায় অভিনয় করলে এই মেয়ে প্রথম সারির নায়িকা হতো এটা নিশ্চিত। অফিসে এসেই রবিনের ঘাড়ে একটা টোকা দেয় তাবাসসুম। রবিন তখন কম্পিউটারে একটা নিউজ এডিট করছিলো।
'কী, খুব দুশ্চিন্তা হচ্ছিল নাকি আমার জন্য? নাকি এমনিতেই কল দিছো?'
'দুশ্চিন্তা হচ্ছিল বৈকি। আপনাকে না দেখে হঠাৎ মনে হল আপনার অসুখ বিসুখ হল না তো! তাই কল দিয়েছিলাম।'
'আহা আমার জন্য কত চিন্তা তোমার।আমার জন্য কেউ ভাবে এটা জেনে ভালোই লাগছে।' দুষ্টু হাসি হেসে উত্তর দিল তাবাসসুম।
'আপনার জন্য ভাবার লোকের অভাব নাই আমি জানি। অফিসের সব কলিগই আপনার সাথে একটু কথা বলতে পারলে খুশি হয়। কিন্তু আমার চিন্তাটা অন্যরকম। আপনি বুঝবেন না।'
'তাই বুঝি? আমার কি বোঝার বয়স হয়নি?' দুষ্টুমির ভঙ্গিতে জানতে চায় তাবাসসুম। সে আসলে রবিনের কথা সিরিয়াসলি নিচ্ছে না।
'বোঝার বয়স হয়েছে। তবে সব কথা সব সময় সবাই অনুবাদ করতে পারে না।'
'আহারে আমার ব্লাডি জুনিয়র। ঠিক আছে, কাজ করো, গেলাম।' কথাটা বলে নিজের ডেস্কে চলে যায় তাবাসসুম।

রবিন কাজের ফাঁকে সুযোগ পেলেই তাবাসসুমের দিকে তাকিয়ে থাকে। এর মধ্যে দুইবার চোখাচোখি হয়ে গেছে। দুজনই মুচকি হাসি দিয়ে নিজেদের কাজে মন দিয়েছে। অফিস শেষে রবিন তাবাসসুমকে বনানী পৌঁছে দিয়ে আসতে চায়। তাবাসসুম বলে কষ্ট করে তোমার এতদূর যাওয়া লাগবে না৷ আমি সিএনজি নিয়ে চলে যাব।

রাতে বাসায় ফিরে রবিনের আচরণের কথা মনে পড়ে তাবাসসুমের। ছেলেটা এমন করছে কেন। ভাব দেখে মনে হয় সে ওর গার্লফ্রেন্ড। কিন্তু এটা তো সম্ভব নয়। সে ওর চেয়ে সিনিয়র। তার উপর আবার ডিভোর্সি। অথচ রবিন এখনো বিয়ে করেনি। তাহলে ছেলেটা কী বোঝাতে চায় তার আচরণ দিয়ে?

রবিন যাই বোঝাতে চাক, তাবাসসুম আর এইসব প্রেম পিরিতের মধ্যে নাই। সে বিয়েই করবে না আর আপাতত এই সিদ্ধান্তে আছে। আবার যাকে বিয়ে করবে, সে যে চিট করবে না তার নিশ্চয়তা কী? এর চেয়ে একা থাকাই ভালো। সোশ্যাল ওয়ার্ক করবে, নারীদের অধিকার নিয়ে কাজ করবে আর সাংবাদিকতা, এই তিনেই জীবন কাটিয়ে দেবে সে। কোনো পুরুষকে আর সে বিশ্বাস করে না। তার ধারণা শিশ্নযুক্ত কোনো মানুষ বিশ্বাসী হতে পারে না। তাই তার এই একলা চলো নীতি।

শুয়ে শুয়ে জীবনের প্রথম প্রেমের অনুভূতি স্মরণ করে সে। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম বর্ষেই প্রেম শুরু হয় তাদের। শুরুতে সোহেলকে নিয়ে পুরো ঢাকা টইটই করে ঘুরেছে সে। আজ জিয়া উদ্যান, কাল রমনা, পরদিন বলধা গার্ডেন, বোটানিক্যাল, টিএসসি, সোহরাওয়ার্দী, কোনো জায়গা বাদ নেই তাদের পায়ের স্পর্শের। সোহেল প্রতিদিন তার জন্য একটা গোলাপ কিনতো। তাবসসুম সেই গোলাপ বাসায় নিয়ে আসতো। জমতে জমতে প্রায় দুইশোটা গোলাপ জমেছিল তার বাসায়। সেই গোলাপের মতই ভালোবাসার শেকড় এভাবে শুকিয়ে যাবে কে জানতো?

ওদিকে রবিনের চোখে ঘুম নেই। নানামুখী চিন্তা তার মাথায় ভর করেছে। আফরিন কল ধরছে না এটা একটা টেনশন। তার উপর ফিরোজের সাথে পরবর্তী চালটা কি হবে তা নিয়ে ভাবতে হচ্ছে৷ এরই মধ্যে বাগড়া দিচ্ছে তাবসসুমের মুখখানা। ওই মুখটা চিন্তার সূত্র এলোমেলো করে দিচ্ছে। সে এখন যেভাবে তাবসসুমের কথা ভাবছে, তাবসসুমও কি তার কথা ভাবছে? নাকি সে একাই হাওয়ায় প্রাসাদ বানিয়ে যাচ্ছে। তাবাসসুমকে তার বাইকে উঠাতেই হবে। বাইক হল প্রেমে পড়ার বাহন। বাইকে কয়েকদিন ঘোরাফেরা করলে তাবসসুম খানিকটা দুর্বল হতেও পারে।
'কি করো, বাসায় ফিরেছো?' হঠাৎ নোটিফিকেশনের আওয়াজে ফোন হাতে নিয়ে দেখে আফরিন মেসেজ দিয়েছে।
'হ্যা ফিরেছি। আমার খোঁজ আর কে রাখে? আমি কি কারো কিছু হই নাকি?' কপট রাগ দেখিয়ে রিপ্লাই দেয় রবিন। যাক অবশেষে আফরিন মেসেজ দিয়েছে আপাতত এটাই সান্ত্বনা।
'দেখো, ঢং করবা না৷ আমার রাগ এখনো পড়েনি। তুমি কষ্টে থাকবা তাই টেক্সট করেছি৷ এত আকাশে ওড়ার প্রয়োজন নাই।'
'আচ্ছা। এখন মহারানীর রাগ ভাঙানোর জন্য আমাকে কি করতে হবে? শাহবাগের এ মাথা থেকে ও মাথা পর্যন্ত ল্যাংটা হয়ে দৌড় দিব?'
'তুমি এতো শয়তান, আগে জানলে তোমার সাথে মিশতাম না। তুমি কি আমাকে একটু রাগ করেও থাকতে দিবা না? ফাজিল একটা।' মেসেজের সাথে এক দঙ্গল হাসির ইমোজি।
'আই লাভ ইউ।'
'আই লাভ ইউ টু বেবি। আই ব্যাডলি নিড ইউ। তোমাকে প্রচুর মিস করছি।'
'আমিও অনেক মিস করছি সোনা। কতদিন কথা হয় না৷ কল দেই?'
'নাহ, ফিরোজ বাসায়। ওয়াশরুমে গেছে। সেই ফাঁকে বদমাইশটাকে টেক্সট করলাম।'
'কাল বাসায় আসব?'
'বাসায় না৷ বাসায় আসাটা রিস্কি। চলো বাইরে কোথাও বসি।'
'ঠিক আছে। কই বসবা? রেস্টুরেন্টে নাকি পার্কে?'
'রেস্টুরেন্টে। পার্কে ভয় লাগে। কে কোত্থেকে দেখে ফেলবে কে জানে।'
'ঠিক আছে। বিকেলে ফোন দিব তাহলে। রেডি থেকো।'
'হুম থাকব। উম্মাহহহ।'
'উমম্মাহহ।'

আফরিনের সাথে কথা শেষ করে আবার ফিরোজের বিষয়টা নিয়ে পড়ে সে৷ ফিরোজ মডেল লাইক করে। তার মানে মডেল দিয়ে ফিরোজকে ফাঁদে ফেলানো যায়। কিন্তু মডেলরা টাকার বিনিময়ে সেক্স করতে পারে, তার জন্য কাজ করবে কেন? তার উপর ফিরোজ আবার পুলিশ। এসব বিষয় ঝামেলায় জড়ানোর ক্ষেত্রে প্রফেশনাল মডেল অভিনেত্রীরা একশো হাত দূরে থাকবে। তাহলে উপায় কি? ভাবতে ভাবতে হঠাৎ শ্রাবন্তীর কথা মনে পড়ে যায় রবিনের৷ শ্রাবন্তী দৌলৎদিয়ার মেয়ে হলেও শিক্ষিত, মেধাবী। আধুনিক কালচারাল দুনিয়ার খোঁজ খবরও রাখে। নিজের জেদের বশবর্তী হয়েই সে দৌলৎদিয়ায় পড়ে আছে। ওকে মডেল হিসেবে ফিরোজের কাছে পাঠানো যায়। ওকে যা বলা যাবে তাই শুনবে। কিন্তু গীতা মাসী কি ওকে আসতে দেবে? গীতা মাসী যদিও তাকে পছন্দ করে এমনকি একবার তার সাথে সঙ্গমও হয়েছে, তবুও শ্রাবন্তী তার বিজনেসের একটা এসেট। কেউ চায় না তার বিজনেস ধ্বংস করে অন্যের জন্য কাজ করতে। শ্রাবন্তী একবার পল্লী থেকে বের হলে আর নাও ফিরতে পারে, এটা একটা ভয়ের বিষয় হতে পারে তার জন্য। তবে চেষ্টা করে দেখা যেতে পারে। গীতা মাসী যদি সহযোগিতা করে তাহলে কাজটা সহজ হবে। তা নাহলে অন্য উপায় অবলম্বন করতে হবে। এর জন্য শ্রাবন্তীকে আগে থেকেই ঢাকায় এসে থাকতে হবে৷ কখন কিভাবে ওকে কাজে লাগানো যায় সেটা সময় এলেই বোঝা যাবে। আগামীকাল গীতা মাসীকে একটা ফোন দিতে হবে। আপাতত ঘুমানো যাক।

বিয়ের পর দিনগুলো ভালোই যাচ্ছে অরিত্র আর উপমার। আগে থেকেই সেক্সে অভ্যস্ত অরিত্র উপমা দম্পতির তাই সেক্স বিষয়ে অস্বস্তি বা শারীরিক জটিলতা নেই। ফলে গত দুই সপ্তাহ তারা উদ্দাম যৌনতা চালিয়েছে। কিন্তু এখনো হানিমুনে যাওয়া হয়নি। উপমা চেয়েছিল বাইরে কোথাও যেতে। কিন্তু অরিত্র রাজি হয়নি। সে এখন দুটো কাজে মনোযোগ দিয়েছে। তার বাবার খুনিদের বিচারের ব্যবস্থা করা আর অরুণিমা ফাউন্ডেশনকে ঢেলে সাজানো। হত্যা রহস্য উদঘাটনে রবিন কাজ চালিয়ে যাচ্ছে। কয়েকদিন রবিনের সাথে কথা হয়নি। অগ্রগতি কতদূর হল জানতে হবে। ওদিকে অরুণিমা ফাউন্ডেশনের ম্যানেজার জানিয়েছেন, কেরানীগঞ্জের পথশিশু পুনর্বাসন কেন্দ্রের নির্মাণ কাজ শুরু করা দরকার। বীরের বাবু জমি কিনে রেখে গিয়েছিলেন। কিন্তু তিনি ভবন নির্মাণের কাজ শুরু করে দিয়ে যেতে পারেননি। প্রায় ষাট শতাংশ জায়গা কেনা হয়েছে কেরানীগঞ্জের একটি গ্রামে। সেখানে একটা কলেজ আর অনাথ শিশুদের আশ্রয় কেন্দ্র গড়ে তোলা হবে। অরুণিমা ফাউন্ডেশন ইতোমধ্যে অনেক মেধাবী শিক্ষার্থীদের মেধাবৃত্তি দিয়েছে। তাদের অনেকেই এখন কর্মজীবনে ভালো অবস্থানে আছে।
[+] 9 users Like Topuu's post
Like Reply


Messages In This Thread
RE: মেগাসিটির নির্জনতা - by Topuu - 05-02-2024, 01:15 PM



Users browsing this thread: 21 Guest(s)