Thread Rating:
  • 56 Vote(s) - 2.68 Average
  • 1
  • 2
  • 3
  • 4
  • 5
Erotic Thriller মেগাসিটির নির্জনতা
পর্বঃ ১২

আসাদ গেট পার হয়ে এগিয়ে চলেছে ফিরোজের গাড়ি। পেছনে সমগতিতে এগিয়ে যাচ্ছে দ্বিতীয় গাড়িটা। দ্বিতীয় গাড়িটার স্টিয়ারিং ধরে আছে রবিন। তার চোখ একবার মোবাইলের স্ক্রিনে আরেকবার সামনে ঘোরাফেরা করছে। মোবাইলের স্ক্রিনে ভেসে উঠছে সামনের গাড়িটার অবস্থান। দারোয়ানের চোখ ফাঁকি দিয়ে ফিরোজের গাড়িতে একটা জিপিএস ট্র‍্যাকার চিপ লাগিয়ে দিয়েছিল রবিন৷ তাই নিশ্চিন্তে নিরাপদ দূরত্ব বজায় রেখে ফলো করে যাচ্ছে সে। ফিরোজের গাড়ি যেখানেই যাক, পথের নির্দেশ চলে আসবে রবিনের ফোনে।

রাত বাড়লে পরিচিত ঢাকা শহরের রূপ অন্যরকম হয়ে যায়। বহু দিনের চেনা শহরটাকে অচেনা মনে হয়। রাস্তায় চোখে পড়ে হিজড়াদের আনাগোনা। অল্প টাকায় দেহ বিক্রি করে ওরা শ্রমজীবী পুরুষদের কাছে। অভারব্রিজগুলোর উপর নিশিকন্যাদের তৎপরতা শুরু হয়ে যায়। ওরা ভাসমান দেহপসারিণী। ওদের প্রেমিকেরা অভারব্রিজের দেয়ালে ঠেকনা দিয়েই কাজ সেরে ফেলতে পারে। নোংরা কন্ডমটা পরে থাকে সেখানেই। এভাবেই জীবনের জোয়াল কাঁধে নিয়ে বেঁচে থাকে এই শহরের মানুষ। মহানগরের কোলাহলের মাঝেও থেমে থাকে না প্রেম, দেহপ্রক্ষালন কিংবা কামের সরোবরে অবগাহন। সবাই যার যার সাধ্যমতো নির্জনতা খুঁজে নেয়।

পর্বত সিনেমার সামনে গিয়ে গতি কমে যায় ফিরোজের গাড়ির। একটা ট্রাক বেরিবাধ দিয়ে ঢুকে ঢাকা আরিচা মহাসড়কে পড়েছে। রাস্তা পুরোটা প্রায় ব্লক করে ফেলেছে দানব ট্রাক। রবিনও দূরত্ব বজায় রেখে গতি কমিয়ে দেয়। আজ যখন আফরিন কল দিয়ে বলল, 'ফিরোজ সাভার যাবে, তুমি বাসায় আসতে পারো', তখন রবিনের চোখ উজ্জ্বল হয়ে উঠেছিল। আফরিনকে বলেছিল, 'এমন একটা সময়ে তুমি এই সুখবরটা দিলা যখন আমি একটা অ্যাসাইনমেন্ট নিয়ে গাজিপুর আসছি। কি আর করা। অন্যকোনো দিন আবার হবে।' রবিনের কথা শুনে আফরিন মন খারাপ করেছিল। কিন্তু রবিনের হাতে বিকল্প অপশন নেই। ফিরোজকে ফলো তার সাভারের রহস্য উদঘাটন করতে হবে। তাই আফরিনকে মিথ্যা বলা ছাড়া উপায় ছিল না।

ট্রাক সমান্তরাল লেনে উঠতেই ফিরোজের গাড়ির গতি বেড়ে যায়। রবিনও এগিয়ে যায় ঈগলের দৃষ্টিতে সামনে তাকিয়ে। গত এক সপ্তাহে দারুণ একটা ব্যপার ঘটে গেছে রবিনের অফিসে। ওর এক সময়ের ক্রাশ তাবাসসুম ওদের অফিসে জয়েন করেছে সিনিয়র স্টাফ রিপোর্টার হিসেবে৷ তাবাসসুম আহসান। ঢাবির গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের এক সময়ের সব ছেলেদের স্বপ্নের নারী। রবিনের চেয়ে এক ব্যাচ সিনিয়র। সব ছেলে যার জন্য পাগল তার সৌন্দর্যকে উপেক্ষা করতে পারেনি রবিনও। জুনিয়র হয়েও প্রেমে পড়ে গিয়েছিল তার। কিন্তু তাবাসসুমকে সেই কথা কখনো জানানো হয়নি। কারণ সে তখন তার সহপাঠী সোহেলের সাথে চুটিয়ে প্রেম করছে। সোহেল ক্লাসের ফার্স্ট বয়। দেখতে শুনতেও খারাপ না। ভদ্র ছেলে হিসেবে ডিপার্টমেন্টে সুনাম আছে। এমন কারো কাছ থেকে গার্লফ্রেন্ড ছিনিয়ে নেওয়া সহজ কথা নয়। তার উপর রবিন আবার জুনিয়র। তাই মনের কথা মনেই চেপে রেখেছিল এতোদিন। ডিপার্টমেন্টে দেখা হলে তাবাসসুমের সাথে হাই হ্যালো হত। কিন্তু কখনো ক্লোজ হওয়ার চেষ্টা করেনি। কারণ ক্লোজ হয়ে গেলে না পাওয়ার বেদনাটা আরো তীব্রতর হবে। তার চেয়ে বরং নিরাপদ দূরত্ব বজায় রাখাই ভালো।

সেদিন অফিসে গিয়ে তাবাসসুমকে দেখে অবাক হয়েছিল রবিন। পুরনো প্রেম মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছিল।ক্যাম্পাস ছাড়ার পর তাবাসসুমকে এক রকম ভুলেই গিয়েছিল সে। নতুন নতুন মেয়েদের শরীরের ঘ্রাণে তাবাসসুম নামক ফুলের সুবাস মিইয়ে গিয়েছিল। তারপর এতদিন পর দেখা। সৌন্দর্য সেই আগের মতোই আছে। মায়াবী একজোড়া চোখ। গভীর চোখের মণি। দেখলেই ভালোবাসতে ইচ্ছা করে। তাবাসসুমও রবিনকে দেখে অবাক হয়েছিল। প্রাথমিক কুশলাদি সেরে ডেস্ক থেকে বেরিয়ে এসে দুজন ক্যান্টিনে গিয়ে বসেছিল। তার পর দুটো কফির অর্ডার দিয়ে শুরু হয়েছিল ওদের গল্প।
'আপনার সাথে লাস্ট দেখা হয়েছিল সম্ভবত কনভোকেশনের দিন। তারপর প্রায় ছয় বছর হয়ে গেছে। এতদিন পর আপনার সাথে দেখা হল। প্রকৃতির কোনো রহস্য লুকিয়ে আছে মনে হয় এর মধ্যে। কি সেটা বলেন তো।'
'কোনো রহস্য নাই রবিন। আমি যুগের কণ্ঠ ছেড়ে দিয়ে এখানে জয়েন করেছি তাই দেখা হয়েছে। এখানে অলৌকিক কিছু নেই।'
'আপনি যাই বলেন। আমার মনে হচ্ছে কোনো রহস্য আছে। প্রকৃতি সব কথা খোলাখুলি বলে না। কিছু কথা খুঁজে বের করে নিতে হয়। তা আপনি যুগের কণ্ঠ ছাড়লেন কেন?'
'কেন আবার৷ সাংবাদিকতার সেই চিরাচরিত সমস্যা। প্রমোশন নেই। পরিশ্রমের মূল্যায়ন না হলে কাজ করে মজা নেই। তাই ছেড়ে দিলাম।'
'সোহেল ভাই কেমন আছে। কই আছে উনি এখন?'
'ভালোই আছে সম্ভবত। কই আছে জানি না।'
'মানে কি? আপনি সোহেল ভাইকে বিয়ে করেননি?'
'করেছিলাম। বিচ্ছেদ হয়ে গেছে।'
'বলেন কি? কিভাবে কি হল? কিছুই তো বুঝতে পারছি না।'
'এটা তোমার বোঝার বিষয় না তাই বুঝতে পারছো না। বাদ দাও ওসব কথা।'
'না আপু প্লিজ। আমি শুনতে চাই। আপনি বলেন। আপনাদের বিচ্ছেদ কেন কিভাবে হল?'
'প্রথম দিনেই সব জেনে নিতে চাও? আরেকদিন বলি?'
'ঠিক আছে। কাল আমার পক্ষ থেকে আপনার জন্য ডিনারের দাওয়াত রইলো। রাতে আমরা একসাথে রেস্টুরেন্টে খাব।'
'আচ্ছা দেখা যাবে।'

ফিরোজের গাড়ি হেমায়েতপুর পার হয়ে এগিয়ে চলেছে। রবিনের গাড়িও ছুটছে সমগতিতে। ল্যাম্পোস্টের আলোয় রাজপথে আলো আঁধারীর সৃষ্টি হয়েছে। তার মধ্যে গাড়ির হেডলাইটের আলো আঁধার কেটে কেটে যেন চলার পথ করে দিচ্ছে।

পরদিন অফিস শেষে রবিন আর তাবাসসুম পান্থপথের একটা রেস্টুরেন্টে বসেছিল। জীবনে এই মেয়েটার এত কাছাকাছি বসতে পারবে কখনো ভাবেনি রবিন। নিয়তি যেন ওকে নিয়ে খেলে কখনো কখনো। ভুলে যাওয়া প্রেম আবার হাজির হয়েছে। যেন শুকানো ক্ষত থেকে শুরু হয়েছে নতুন করে রক্তক্ষরণ। তাবাসসুমের ডিভোর্স হয়ে গেছে কথাটা শুনে রাতে ঘুম হয়নি রবিনের। তার হৃদয়ের গহীনে একটা সম্ভাবনার কথা নাড়া দিয়ে উঠছিল। তবে সেটা আদৌ সম্ভব কিনা জানে না সে। কিছু কিছু সময় নিয়তিকে নিজের মতো চলতে দিতে হয়। নিয়তির স্রোত যে কূলে নিয়ে ফেলে সেখানেই হয়তো কল্যাণকর কিছু থাকে।

'আপনার আর সোহেল ভাইয়ের মতো ম্যাচিউরড একটা কাপলের ডিভোর্স হয়ে গেল এটা মানতেই পারছি না। তাহলে বিয়ে করে আর লাভ কি এই জীবনে। হতাশ হলাম।' কফির পেয়ালায় চুমুক দিতে দিতে বললো রবিন।
'আমি এসব বিষয়ে এখন নির্লিপ্ত। যা হবার তাই হয় জীবনে, তুমি আমি কিছুই নিয়ন্ত্রণ করতে পারব বা। এটাই সত্য। তুমি শুনতে চাইলা তাই বলছি। নাহলে এগুলো নিয়ে কথা বলার কোনো ইচ্ছাই আমার ছিল না।'
'আমি জানি বেদনার স্মৃতিগুলো রোমন্থন কোনো ভালো কাজ না। তবে ভেবে নেন আমিই শেষ ব্যক্তি যার কাছে আপনি এগুলো বলবেন। আশা করি এরপর আর কারো কাছে বলতে হবে না।' কণ্ঠে অনুনয় ঝরে পড়লো রবিনের।
'এরপর আর কাউকে বলতে হবে না কেন? তুমি তান্ত্রিক নাকি? মন্ত্র পড়ে সব ঠিক করে দিবা?' হাসতে হাসতে কথাটা বললো তাবাসসুম। গম্ভীর পরিবেশ হালকা করা দরকার। এর জন্য হাসির চেয়ে বেটার অপশন নেই। গুমোট হয়ে থাকলে গল্প করে আরাম পাওয়া যায় না।
'দুনিয়াতে তন্ত্র মন্ত্র বলে কিছু নেই। সব হল ইচ্ছাশক্তি। ইচ্ছাশক্তির বলে আপনি অসাধ্যকে সাধন করতে পারবেন। আমিও ইচ্ছাশক্তির বলে পাথরে ফুল ফুটাবো।' তাবাসসুমের রসিকতায় রবিন কিছুটা সহজ হয়েছে। তার আড়ষ্টতা কেটে গেছে কিছুটা।
'এইসব ভূয়া গল্প আমার সামনে করবা না। গান কবিতা জীবন না। ওগুলো কল্পনাতেই ভালো মানায়। বাস্তবের জীবন গদ্যময়। পাথরে ফুল ফোটে শুধু গর্দভের রাজ্যে।'

তাবাসসুমের হঠাৎ আক্রমণে দিশেহারা অনুভব করলো রবিন। কি হল মেয়েটার। এই হাসি এই রাগ। ডিভোর্সের পর নাকি অনেকের মানসিক সমস্যা দেখা দেয়। এরও তাই হল নাকি?
'আচ্ছা ঠিক আছে। আপনি ঠিকই বলেছেন। এবার বলেন আপনার ডিভোর্সের গল্প।' ডমিন্যান্ট মেন্টালিটির মেয়েদের সাথে তাল দিয়ে কথা না বললে অহেতুক শুধু বিতর্ক হয়। রবিন আপাতত বিতর্ক চায় না। তাই তাবাসসুমের সব কথায় হ্যাঁ হ্যাঁ বলার সিদ্ধান্ত নেয়।
'তুমি হয়তো জানো যে ক্যাম্পাসে আমি আর সোহেল বেস্ট কাপল ছিলাম। সবাই আমাদের হিংসা করতো। অনেক ছেলে আমার পিছনে লাইন দিয়েছে কিন্তু কাউকে কখনো প্রশ্রয় দেইনি। আমার প্রথম এবং একমাত্র ভালোবাসা ছিল সোহেল। গ্রাজুয়েশন শেষে সোহেল একটা প্রাইভেট ইউনিভার্সিটির লেকচারার পদে জয়েন করলো। আর আমি জয়েন করলাম যুগের কণ্ঠে। কর্মজীবনে প্রবেশ করার এক বছরের মধ্যেই আমরা বিয়ে করলাম। বিয়ের পর কখনো আমাদের লাইফ বোরিং কাটেনি। অনেকে বলে দীর্ঘদিন প্রেম করার পর বিয়ে করলে বিয়েটা এক্সাইটিং লাগে না। কিন্তু আমাদের তা ছিল না। হানিমুনে বিভিন্ন জায়গায় ঘুরে বেরিয়েছি। ছবি তুলেছি। মানুষের প্রশংসা পেয়েছি। যেন একটা স্বপ্নের জগতে ছিলাম। সোহেলের সাথে সংসার হয়েছে আমার তিন বছর। এক বছর হল ডিভোর্স হয়েছে।'
'আচ্ছা। এতো সুন্দর একটা সংসার ভাঙলো কি করে? ডিভোর্সটা কে দিয়েছে? আপনি নাকি সোহেল ভাই?'
'আমিই দিয়েছি। বিষয়টা একটু লেইম। তাই কারো কাছে শেয়ার করি না। কিন্তু তুমি আমার ক্যাম্পাসের ছোটভাই আবার এখন কলিগ হয়েছো। তাই তোমার কাছে বলব। কারণ মন খুলে কথা বলতে পারি না অনেকদিন। হাপিয়ে উঠেছি। বন্ধুবান্ধব সবাই যার যার জীবনে ব্যস্ত। এই শহরে কেউ কারো আপন নয়। সবাই নিজেকে নিয়ে ব্যস্ত। মানুষ বলে মৃত্যুর পরে কেয়ামত হবে। তখন কেউ কাউকে চিনবে না। শুধু নিজের কথাই ভাববে। আমার মনে হয় এই আধুনিক যান্ত্রিক শহরব্যবস্থাও এক ধরনের কেয়ামতের ময়দান। এখানে সবাই শুধু ইয়া নাফসি ইয়া নাফসি করছে। কেউ কারো দিকে তাকানোর সময় নেই।'
'কথাটা একেবারে খারাপ বলেননি। কিন্তু এটা আসলে মানুষের দোষ না। মানুষের নিয়তিই তাকে এই যান্ত্রিক জঞ্জালে নিয়ে এসেছে।'
'যাই হোক। এবার আসল কথাটা বলি। সোহেল ওর ছাত্রীদের সাথে অনৈতিক সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েছিল। চাকরিজীবনের শুরু থেকেই ও এই কাজে জড়িয়ে যায়। এটাকে পরকীয়া বা প্রেম বলা যায় না। বরং গিভ এন্ড টেকের সম্পর্ক ছিল। শরীরের বিনিময়ে কোনো কোনো ছাত্রীকে ভালো গ্রেড দিত। তবে চোরের দশদিন আর গেরস্থের একদিন। একবার এক মেয়ে ওকে ট্র‍্যাপে ফেলে। ওই মেয়ের পছন্দের জায়গায় গিয়ে সেক্স করার কথা ছিল। সোহেল সেখানে গেলে মেয়ে তার বন্ধুদের নিয়ে সোহেলকে আটক করে। মেয়ের কাছে সব রকম প্রুফ ছিল যা ভাইরাল হলে সোহেলের জীবন ধ্বংস হয়ে যেত। মেয়েটাকে ভালোই বলতে হবে। সে তার বন্ধুদের দিয়ে সোহেলকে উত্তম মধ্যম দেওয়ায় আর দশ লাখ টাকা দাবি করে। এর অন্যথা হলে মেসেজ, অডিও, ভিডিও সব ভাইরাল করে দেওয়ার হুমকি দেয়। সোহেলকে ওরা আটকে রেখেছিল। আমার কাছে একটা ফোন আসে। সোহেলের নাম্বার থেকেই। সে বলে দশ লাখ টাকা নিয়ে যেতে। খুব নাকি ইমার্জেন্সি। কোনো প্রশ্ন করতে নিষেধ করে। বাকি কথা সে পরে বলবে জানায়। আমি হিতাহিতজ্ঞানশূন্য হয়ে ব্যাংক থেকে টাকা তুলে ওর দেওয়া ঠিকানায় চলে যাই। গিয়ে আসল ঘটনা জানতে পারি। সেদিন ইচ্ছা হচ্ছিল আমি মাটির নিচে ঢুকে যাই। সোহেল আমার বিশ্বাস এভাবে ভেঙ্গে টুকরো টুকরো করে ফেলবে কখনো কল্পনাও করিনি। এরপর আর সোহেলের সাথে থাকা আমার পক্ষে সম্ভব হয়নি। সেদিনই বাসা থেকে চলে গিয়েছিলাম। পরে ডিভোর্স লেটার পাঠিয়ে দিয়েছি। সোহেল অনেকবার ক্ষমা চেয়েছে। আমার পা ধরে কান্নাকাটি করেছে। কিন্তু ওর প্রতি আমার কোনো আবেগ তৈরি হয়নি। এরপর থেকে একাই আছি।'
'খুবই দুঃখজনক। একবার বিশ্বাস ভাঙলে আসলে বিশ্বাস আর ফিরে আসে না। আমি আপনার কষ্ট অন্তর দিয়ে অনুভব করতে পারছি।'
'অনুভব করলে ভালো। তাহলে তুমি কাউকে ঠকানোর আগে ভাবতে পারবা। জীবনে কাউকে ঠকিও না। এটা ভীষণ অন্যায়।'

তাবাসসুমের কথা শুনে মনে মনে প্রমাদ গোণে রবিন। তার ইতিহাস জানলে এই মেয়ে তো তার সাথে কথাই বলবে না। ভারী যন্ত্রণা। এত সতী সাধ্বী নারীর প্রতি কিনা সে দুর্বল। তার আফরিনের কথা মনে পড়ে যায়। মেয়েটাকে সে ধোকাই দিচ্ছে বলা যায়। এর আগে কখনো কোনো মেয়ের সাথে এই ধরনের ধোকাবাজি করেনি রবিন। যদি আফরিম জানে যে সে শুধু নিজের স্বার্থে তাকে ব্যবহার করেছে, তাহলে কি অবস্থা হবে মেয়েটার?

ফিরোজের গাড়ি উলাইল পার হয়ে বামে মোড় নিয়েছে। এতক্ষণ বড় সড়কে ছিল। এখন চিপা গলিতে গাড়ি ঢুকেছে। জিপিএস না থাকলে এসব রাস্তায় অনুসরণ করা কঠিন। রবিন তাই আগেই সব ব্যবস্থা নিয়ে রেখেছে। বামে ঢুকে দশ মিনিট গাড়ি চালানোর পর একটা বাড়ির সামনে গিয়ে থেমে গেল ফিরোজের গাড়ি। জিপিএস দেখে রবিনও গাড়ি থামিয়ে দিল। তারপর হেঁটে হেঁটে ওই বাড়ির দিকে এগিয়ে গেল। দূর থেকে অস্পষ্টভাবে দেখা যাচ্ছে দারোয়ান গেট খুলে দিচ্ছে। গেটের সামনে লাইটের আলোতে জায়গাটা আলোকিত। কিন্তু দূর থেকে স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে না। বাড়িটা কিছুটা ফাঁকা জায়গায়। আশেপাশে তেমন বাড়িঘর নেই। পাশ দিয়ে ধলেশ্বরী নদী একেবেকে বয়ে গেছে। সুন্দর পজিশন বাড়িটার। নদীর পাড়ে বাগানবাড়ি টাইপ বলা যায়।

ফিরোজের গাড়ি ভেতরে ঢুকতেই গেট বন্ধ করে দিল দারোয়ান। এবার ফিরোজ ধীর পায়ে এগিয়ে গেলো বাড়িটার দিকে। আজকে কাজ শুধু বাড়ি চিনে যাওয়া। বাকি কাজ আরেকদিন করতে হবে। এটা কার বাড়ি? ফিরোজ এখানে কি করে? এখানে কোনো অনৈতিক কাজ হয় না তো? নাকি সাধারণ কোনো বাড়ি। হয়তো ফিরোজের কোনো বন্ধুর। অনেকগুলো প্রশ্ন মাথার মধ্যে ঘুরপাক খাচ্ছে। আপাতত কাজ শেষ। এবার ফিরে যাওয়া যায়। পরশুদিন এখানে আবার আসতে হবে। ফিরোজ এখান থেকে চলে যাওয়ার পর।

অফিস থেকে ফিরে ভীষণ ক্লান্তি অনুভব করছে তাবাসসুম। রান্না করতে ইচ্ছা করছে না। মা বাসায় নেই। তার বোনের বাসায় গেছে। আজ গিয়েছিল পল্টনে বিরোধী দলের প্রেস ব্রিফিং কাভার করতে। এরপর অফিসে গিয়ে নিউজ রেডি করে ঢাকার জ্যামে পিষ্ট হয়ে বাসায় পৌঁছাতে পৌঁছাতে রাত এগারোটা বেজে গেছে। তাবাসসুমের বাসা বনানীতে। দুই ভাই বোন ওরা। বাবা নেই। ওর বয়স যখন এগারো তখন মারা গেছেন। বাবা বিজনেস করতেন এক্সপোর্ট ইমপোর্টের। মারা যাওয়ার আগে এই ফ্ল্যাটটা কিনেছিলেন তিনি। সেখানেই এখন মা মেয়ে থাকে। বড়ভাই আমেরিকা প্রবাসী।

ফ্রিজ খুলে দুটো মিষ্টি খেয়ে শুয়ে পড়লো তাবাসসুম। অনেকদিন পর সেদিন রবিনের সাথে মন খুলে কিছু কথা বলেছে সে। রবিন ওর ডিপার্টমেন্টের জুনিয়র হলেও ওর সম্পর্কে তেমন কিছু জানে না সে। সাধারণ শিক্ষার্থী হিসেবে ফরমাল যতটুকু কথা বলতে হয় তাই হয়েছে ওর সাথে। কিন্তু এতোদিন পর ওকে নিজের অফিসে দেখে অনেক আপন মনে হয়েছিল। মানুষের স্বভাব বড়ই বিচিত্র। অচেনা পরিবেশে মুখচেনা লোককেও আপন মনে হয়। প্রথম প্রহরে ডিপার্টমেন্টের সিনিয়র কয়েকজন বড়ভাই আছে। কিন্তু তাদের সাথে আগে থেকে পরিচয় ছিল না। কারো সাথে আগ বাড়িয়ে কখনো পরিচিত হওয়ার গরজ অনুভব করেনি তাবাসসুম। বরং তার সাথে কথা বলার জন্যই লোকের সিরিয়াল পড়ে যেত। এখনো যে সে ফেলনা হয়ে গেছে তা না। চারপাশে ঘুরঘুর করার জন্য উপগ্রহের অভাব তার কোনোকালেই ছিল না। কিন্তু এখন এসব পুরুষকে দেখলে বিরক্ত লাগে। সবাইকে পটেনশিয়াল চিটার মনে হয়। সোহেলের সাথে বিচ্ছেদের পর তার মধ্যে নারীবাদী প্রবণতা সৃষ্টি হয়েছে। আগে কখনো সে নারীবাদীদের পছন্দ করেনি। এখন মনে হয় নারীরা আসলেই বৈষম্যের শিকার। লালসার শিকার। সমাজের শারীরিক ও মানসিক নির্যাতনের শিকার। তাত্বিক নারীবাদ ছাড়া হঠাৎ তৈরি হওয়া নারীবাদীরা পুরুষবিদ্বেষী হয়। তাবাসসুম এখন তাই হয়েছে। যুগের কণ্ঠ ছাড়ার অন্যতম একটা কারণ এটা। তার ডিভোর্স হয়েছে শুনে কলিগরা মনে হয় তাকে এক্সট্রা খাতির করতো। সহানুভূতির ছলে হয়তো ফায়দা নিতে চাইতো। কেউ কেউ ডিনারের আমন্ত্রণ জানাতো। তাদের এই অতিরিক্ত আগ্রহ তার জন্য ছিল অপমানজনক। তাই হাউজ পরিবর্তন করে প্রথম প্রহরে জয়েন করেছে সে।

নতুন হাউজের কাউকে জানানো যাবে না যে সে ডিভোর্সি। ডিভোর্সি নারীদের সমাজ করুণার চোখে দেখে। তাবাসসুম কারো করুণা চায় না। তাই রবিনকে এই ব্যাপারে কারো সাথে কিছু শেয়ার করতে মানা করে দিয়েছে। রবিন ছেলেটা ওকে রেসপেক্ট করে। ওর চোখের দৃষ্টিতে কোনো কলুষতা দেখতে পাওয়া যায়নি। বেশিরভাগ পুরুষই ফাঁক পেলে বুক বা পেটের দিকে নজর দেয়। রবিন এ পর্যন্ত তা করেনি। তবুও তাবাসসুম ভরসা পায় না। পুরুষ জাতটাই খারাপ। সোহেলকেও তো এভাবে সে বিশ্বাস করেছিল। কিন্তু কী হল শেষ পর্যন্ত। বাকি জীবনটা কি একাই কাটিয়ে দেবে, নাকি অন্য কাউকে জীবনে স্থান দিতে পারবে, নিশ্চিত নয় তাবাসসুম। তবে বিয়ের আগ্রহ যে হারিয়ে ফেলেছে সেকথা নিশ্চিত।

পরদিন অফিসে গিয়ে ডেস্কে বসে একটা নোট নিচ্ছিল তাবাসসুম। পলিটিক্যাল বিট কাভার করে সে৷ কাজটা একটু কঠিন। তবে ভালো করে করতে পারলে সাংবাদিকতায় লিডিং পজিশনে যাওয়া সহজ। রাজনৈতিক নেতাদের সাথে কাজ হওয়ায় এদের সাথে এক রকম সখ্য তৈরি হয়। যারা ধুরন্ধর তারা এই সখ্যকে ক্যাশ করতে পারে। কিন্তু তাবাসসুমের মতো সুন্দরীদের জন্য এই কাজ বেমানান লাগে। সবাই যেন ভেবে নিয়েছে সুন্দরী মেয়েরা সাংবাদিকতা করবে? আচ্ছা ঢুকিয়ে দাও বিনোদনের সাব এডিটরে বা ফিচার বিভাগে। পলিটিক্স, ক্রাইম, ইকোনোমিকস, কোর্ট এসব কঠিন বিটে ওদের যাওয়ার দরকার নাই। কিন্তু সব সময় চ্যালেঞ্জ নিতে ভালোবাসা একগুঁয়ে তাবাসসুম পলিটিক্যাল বিটেই ঢুকবে, এটা কেউ আটকাতে পারেনি। সাংবাদিকতায় সহজ কাজ হল সাব এডিটরের কাজ। ডেস্ক জব। বাইরের ঝড়ঝাপটা মোকাবেলা করার প্রয়োজন নেই। কিন্তু এতে আসলে সাংবাদিকতার আসল থ্রিল অনুভব করা যায় না। রিপোর্টিং হল সাংবাদিকতার প্রাণ। মাঠে-ময়দানে ঘুরে তথ্য সংগ্রহ করে সেখান থেকে নিউজ তৈরি করা একজন রিপোর্টারের দায়িত্ব। এই কাজের মধ্যে যেমন থ্রিল আছে, তেমনি সমাজের কল্যাণের জন্য কিছু করতে পারার আনন্দও আছে। টিভিতে সংবাদ উপস্থাপনার প্রস্তাব পেয়েছে অনেক। কিন্তু তাবাসসুমের মনে হয়েছে ওখানে নিজের সৃজনশীলতা দেখানোর সুযোগ কম। তাই যাওয়ার গরজ অনুভব করেনি।
'কি করছেন আপু?' পিছন থেকে কথাটা শুনে ঘাড় ঘুরিয়ে দেখলো রবিন দাঁড়িয়ে আছে।
'এইতো নোট নিচ্ছিলাম একটা। কেমন আছো?'
'ভালো আছি। আপনার কি অবস্থা?'
'এইতো চলছে। তোমার কাজবাজের কি খবর। তোমার তো বেশ সুনাম শুনলাম অফিসে।'
'আরে না। সবাই আমাকে ভালোবাসে তাই সুনাম করে। আমি আসলে বেগুন।'
'তোমার বিনয়ে আমি মুগ্ধ। এবার যাও। কাজ করো।'
'আমার তো শুধু একটাই কাজ।'
'মানে?'
'মানে ওই দুই নাম্বার লোকদের খোঁজ খবর রাখা এইতো।'
'আচ্ছা। দুই নাম্বারদের সাথে থাকতে থাকতে নিজেও দুই নাম্বার হয়ে যেও না। নিজের নীতিবোধ ঠিক রেখে চইলো।'
'অবশ্যই। নীতির প্রশ্নে কোনো আপস নাই।'

রবিন নিজের ডেস্কে গিয়ে বসে। ওর ডেস্ক থেকে বাম দিকে তাকালে তাবাসসুমের ডেস্ক চোখে পড়ে। তবে তাবাসসুমের সাথে আই কন্টাক্ট হওয়ার জন্য তাবাসসুমকেও ডান দিকে তাকাতে হবে। রবিন কম্পিউটার অন করে কাজে মনোযোগ দিতে চেষ্টা করে। কিন্তু বারবার শুধু তাবাসসুমের দিকে চোখ চলে যাচ্ছে। মেয়েটাকে যত দেখছে ততই যেন ভালোবেসে ফেলছে। রবিন অবাক হয় একটা বিষয় চিন্তা করে। যাকে ভালোবাসা যায় তাকে নিয়ে বাজে কিছু ভাবা যায় না। তাই সব মেয়ের বুক পাছায় আগে চোখ গেলেও তাবাসসুমের ক্ষেত্রে এটা ঘটেনি। এমনকি এখনো পর্যন্ত সরাসরি ওর বুকের দিকে তাকায়নি রবিন। মানুষ বলে কাম থেকে নাকি প্রেমের সূত্রপাত। কথাটা হয়তো সত্যি। তবে সব সময় সেই কাম যে মূখ্য থাকে তা না। গৌণও থাকতে পারে। ভালোবাসায় কাম গৌণ থাকাটাই উত্তম। দেহের তাড়নায় তৈরি হওয়া ভালোবাসা আর যাই হোক, নিঃস্বার্থ নয়।

রবিন আবার তাকায় তাবাসসুমের দিকে। মনোযোগ দিয়ে কাজ করছে কম্পিউটারে। চুলগুলো লম্বা কাঠি দিয়ে খোপার মতো করে বাধা। চোখ স্ক্রিনে আবদ্ধ। মায়াবী মুখটায় এখন আর আগের মতো হাসি লেগে থাকে না। রবিন বুকের মধ্যে কষ্ট অনুভব করে। জীবনে কখনো কোনো মেয়ের জন্য কষ্ট অনুভব করেনি। এবারই প্রথম। অনুভূতিটা টের পেয়ে অবাক হয় রবিন। নিজের কাছেই নিজেকে অপরিচিত লাগে। তাবাসসুম যে কঠিন পরিস্থিতির ভেতর দিয়ে গিয়েছে এরপর কি সে আদৌ কোনো পুরুষকে ভালোবাসতে পারবে? আর কোনো মতে সে যদি তাবাসসুমের হৃদয় জয় করতে পারেও, তার কর্মকাণ্ডের কথা জানলে সে কি তার সাথে থাকবে? আবার সে নিজেও কি নতুন নতুন নারীসঙ্গ ছাড়া এক নারীতে সীমাবদ্ধ হয়ে থাকতে পারবে? সবকিছু জট পাকিয়ে যায়। মনে হয় গোলকধাঁধায় ফেলে দিয়েছে কেউ তাকে। কিন্তু রবিন আপাতত এসব নিয়ে ভাবতে চায় না। সে শুধু তাবাসসুমকে আপন করে পেতে চায়। এর জন্য যা যা করা লাগে সে করবে। কিন্তু এই মেয়েকে জয় করা সহজ হবে না। বলা যায় জীবনের সবচেয়ে কঠিন নারী চরিত্রের মুখোমুখি সে এখন।

হঠাৎ ডান দিকে ফিরে নিজের মোবাইল হাতে নেয় তাবাসসুম। এসময় তার চোখের কোণে ধরা পড়ে রবিন তার দিকে তাকিয়ে আছে। পূর্ণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে দেখতে গেলে রবিন দ্রুত মুখ ঘুরিয়ে নেয়। রবিনের আচরণে অবাক হয় তাবাসসুম। ছেলেটা এদিকে তাকিয়ে কী দেখছিল? তাকে? কিন্তু তাকে কেন দেখবে? সে ওর চেয়ে সিনিয়র। ছেলেটার সিনিয়র জুনিয়র জ্ঞান লোপ পেল নাকি? এলোমেলো চিন্তা মাথায় ঘুরপাক খায়। বিষয়টাকে নিজের মনের ভুল ভেবে নিয়ে আবার কাজে মনোযোগ দেয় সে।

ওদিকে রবিন হঠাৎ ধরা পড়ে যাবে মোটেই ভাবতে পারেনি। তাবাসসুমের মধ্যে কি যেন আছে। সরাসরি ওর চোখের দিকে তাকানোর হিম্মত হয় না। লুকিয়ে দেখতে গিয়ে এভাবে চোখাচোখি হয়ে যাবে কে জানতো। রবিন নিজেকে শান্ত করে কাজে মনোযোগ দেওয়ার চেষ্টা করে।

ফিরোজ সাহবে আবার তার আগের ফর্মে ফিরে গেছেন। কুকুরের ঝামেলাটা মিটে গেছে। বেশ কিছুদিন ধরে কুকুরটা আর জ্বালাতন করছে না। খাজা হুজুর বড় কামেল লোক। এতবড় উপকার করেছেন মানুষটা কিন্তু বিনিময়ে কিছু চাননি। আজকাল এমন সৎ লোক দেখা যায় না। চারপাশে শুধু চোর বাটপার। এর মধ্যে কামেল লোক খুঁজে পাওয়া দুষ্কর। খাজা হুজুর বলেছেন সময় হলে তিনি কিছু একটা চেয়ে নেবেন। কি চাইবেন তিনি কে জানে। যা চাইবেন তাই দেওয়ার জন্য রাজি আছেন ফিরোজ সাহবে। কত টাকা চাইতে পারেন তিনি? দেখা যাক।

রাতে বাসায় ফিরে দেখলেন আফরিন মুখ গোমড়া করে বসে আছে। কয়েকদিন আফরিনকে সময় দেওয়া হয়নি। বেচারি একা থাকে বাসায়। তারও তো নিঃসঙ্গ লাগতে পারে। কিন্তু তিনি কি করবেন? পুলিশের চাকরি তার। চাইলেই কি বেশি সময় দেওয়া যায়? তিনি কি পুলিশের চাকরির আড়ালে নিজের অপরাধবোধ লুকাতে চাইছেন? জানতে চায় তার অবচেতন মন।

'তোমাকে আজ এতো সুন্দর লাগছে কেন জান? নতুন করে প্রেমে পড়েছ নাকি?' পোশাক বদলাতে বদলাতে জানতে চাইলেন ফিরোজ। তার কণ্ঠে রসিকতার সুর।
'তুমি আমার সাথে কথা বইলো না প্লিজ। সারাদিন কোনো খোঁজ রাখো না। আমি কি খেলাম কি করলাম তার কোনো খবর রাখো না৷ আবার এখন ন্যাকামি শুরু করেছো। এসব আমার ভালো লাগে না।' কণ্ঠে উত্তাপ নিয়ে বলে আফরিন।
'কি করব বলো। সারাদিন অফিসের কাজে বিজি থাকি। চাইলেই কি সময় বের করা যায়?'
'শুধু শরীরটা পাশে রাখাই সময় দেওয়া না। দূর থেকেও সময় দেওয়া যায়। দিনে একটা কলও তো দিতে পারো? নাকি সেই সময়টুকুও হয় না তোমার?'
'আচ্ছা সরি। আমার ভুল হয়েছে। আর কখনো ভুল হবে না। এবার লক্ষ্মী বউয়ের মতো একটা চুমু দাও।'
'ঢং না করে খেতে বসো যাও।' কথাটা বলে আফরিন ডাইনিং টেবিলে খাবার সাজানো শুরু করে। ফিরোজ ফ্রেশ হয়ে খাবার টেবিলে বসেন। আফরিন সবসময়ই ভালো রান্না করে। বড়লোকের মেয়েরাও যে ভালো রান্না করতে পারে, আফরিনকে না দেখলে বোঝা যাবে না।
'আজ আমি তুমি তোমাকে খাওয়ায় দিব। আমার পাশে বসো।' কথাটা বলে আফরিনের হাত ধরে পাশের চেয়ারে বসিয়ে দেন ফিরোজ। আফরিন কথা না বলে বসে পড়ে। ফিরোজ আফরিনকে প্রাণ দিয়ে ভালোবাসেন তাতে কোনো সন্দেহ নেই। জীবনে তিনি অনেক নারীর সাথেই মিশেছেন। তবে ভালোবেসেছেন শুধু এই একটা নারীকে৷ আফরিনের জন্য নিজের জীবন দিতেও কুণ্ঠাবোধ করবেন না তিনি। তবুও আফরিনকে সময় দেওয়া হয় না কেন? তার যে সময় নেই বিষয়টা কি আসলেই তাই? তা তো না৷ চাইলেই দিনে অনেকবার ফোনে কথা বলতে পারেন। তবুও বলেন না। এটা কি অবহেলা নাকি আফরিনকে নিয়ে অতিরিক্ত আত্মবিশ্বাস এর কারণ? আফরিনও তো একটা মেয়ে। তার কাছ থেকে সময় না পেয়ে অন্য কারো প্রতি দুর্বল হয়ে যেতে পারে কি? ফিরোজের মন উত্তর দেয়, এটা কখনোই হতে পারে না৷ আফরিন তাকে ছাড়া আর কাউকে ভাবতেই পারে না। আফরিন এমন কিছু করবে সেটা বিশ্বাস করেন না তিনি।

ওদিকে আফরিনের মনে তখন দ্বিধা। সে ফিরোজকে ভালোবাসে একথা সত্য। তবে সম্প্রতি রবিনের প্রতি সে দুর্বল হয়ে পড়েছে৷ এমনকি এটা শুধু দুর্বলতার মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকেনি৷ শারীরিক সম্পর্ক পর্যন্ত গড়িয়েছে। রবিনের সাথে পরিচয় হওয়ার পর একটা ঘোরের মধ্যে চলে গিয়েছিল সে। তারপর রবিনের আন্তরিকতা, তার খুনসুটি, কথা বলার স্টাইল, টিভিতে সাক্ষাৎকারের ব্যবস্থা করে দেওয়া ইত্যাদি সবকিছু দিয়ে রবিন তাকে পরাজিত করে দিয়েছে। যেন রবিন জানে সে কোন জায়গায় দুর্বল। সেসব জায়গাতেই টোকা দিয়েছে সে। রবিনের সাথে প্রথমবার শারীরিক সম্পর্ক হয়ে গিয়েছিল হুট করে। কোনো পরিকল্পনা ছাড়াই৷ এরপর সে অপরাধবোধে ভুগেছে। কাজটা কি ঠিক হল? ফিরোজকে চরম ধোকা দেওয়া হয়ে গেল। তাই এরপর এক সপ্তাহ রবিনের সাথে কোনো ধরনের যোগাযোগের চেষ্টা করেনি। সে চেয়েছে রবিনের বিষয়টা স্মৃতি থেকে মুছে দিতে। কিন্তু কোন অদৃশ্য সুতোয় বাধা পড়েছে তার মন।
[+] 7 users Like Topuu's post
Like Reply


Messages In This Thread
RE: মেগাসিটির নির্জনতা - by Topuu - 05-02-2024, 01:14 PM



Users browsing this thread: