03-02-2024, 01:29 PM
আচ্ছা ধরো আমি তোমায় যদি এমন একটা গল্প বলি যেখানে সব কাল্পনিক লাগবে কিন্তু সব কথা সত্যি!
তুমি এখন ভাববে যে আরে লেখক ভাই তুমি এত ভনিতা করছ কেনো? বলে ফেলো না …
আরে আরে রসো একটু… পরে আমার দোষ দেবে না কিন্তু… ।
গল্প টা প্রেমের তবে আমি বলবো এটা অভিমানের গল্প ।
*খাল কেটে কুমির।
আচ্ছা শ্রেষ্ঠা তুই তো আমার বাড়িতেই প্র্যাকটিস করতে পারিস!
তুমি সত্যি বলছো আদি দা!
আরে আলবাত বলছি।
দেখিস আমাদের ডুয়েট যা জমবে না!
উফ্ আমার তো ভাবতেই কেমন লাগছে …
আদিশ্রি! এই শ্রেষ্ঠা আমাদের প্রথম অ্যালবাম এর এটাই নাম হবে!
হ - হ্যাঁ আদি দা।
আচ্ছা তোর মনে আছে আমাদের প্রথম দেখা…
ভাবলেও এখন হাসি পায়।
শ্রেষ্ঠা কিছু বলে না আকাশপানে চেয়ে থাকে ।
আজকে ওর খুব ভালো লাগছে।
বসন্ত পঞ্চমী আজ।
তারওপর ওর ভালোবাসা অধিরাজ আজকে ওর সাথে বেরিয়েছে!
সবকিছু অবাস্তব সপ্নের মত লাগছে।
আজ থেকে বছর খানেক আগেও এই অধীরাজ প্রধান কে এক কথায় অসহ্য লাগতো ওর।
গায়ে পড়া গোছের ছেলে লাগতো।
শ্রেষ্ঠা ভৌতবিজ্ঞান বিভাগের ছাত্র প্রথম বর্ষের।
আর আধিরাজ ইংলিশ বিভাগের অন্তিম বর্ষের ছাত্র।
সাধারণ মধ্যবিত্ত ঘরের মেয়ে শ্রেষ্ঠা সিংহ জলপাইগুড়ি থেকে এই সুদূর কলকাতায় এসেছে তার মাস্টার্স ডিগ্রি অর্জন করতে।
আধীরাজ এর সাথে ওর পরিচয় আজকের মত এক সরস্বতী পুজোয়।
আধিরজ এর দোষের মধ্যে একটাই শ্রেষ্ঠা দেখলো সে ভীষণই ক্যাজুয়াল। মানে জীবন নিয়ে কোনো যেন চিন্তাই নেই!
আশ্চর্য!? ভবিষ্যৎ নিয়ে ভাববে না?
যখনই ক্যাম্পাসে আসে আধিরাজ হয় গাছ তলায় বসে কখনো গিটার বাজাচ্ছে কখনো আড্ডা দিচ্ছে।
শ্রেষ্ঠা প্রথমে ভেবেছিল ওকে অত পাত্তা দেবে না।
তবে কথায় বলে তুমি নিজের থেকে যদিও বা পালিয়ে বাচো ভাগ্যর থেকে পালিয়ে যাবে কোথায়?
ডিপার্টমেন্ট থেকে গানের জন্য ওর নাম দিয়ে দিল ওর প্রিয় বান্ধবী সোহিনী।
আর তখনই দেখা হলো সেই আধীরজ এর সাথে।
উররি নতুন নাকি রে?
হম…
কোন ডিপার্টমেন্ট তোর?
ফিজিক্স..
তুই কি এরকম অল্প কথাই বলিস?
আপনাকে চিনি না জানি না খোশগল্প করার মতো…
আরে আমায় চিনিস না? রোজ তো ক্লাসে যাবার আগে আমায় চোখ দিয়ে ভস্ম করিস..
আপনি…
উহু এমনি নয় … তুমি টা বেটার। আর আমার নাম আধিরাজ। তুই আদি দা বলিস।
আমি..
শ্রেষ্ঠা সিংহ, ফিজিক্স 1স্ট ইয়ার, কলেজ টপার, রোল 123242, insta তে shreesings একাউন্ট টা তোর, ক্লাসিকাল আর সেমি ক্লাসিকাল বিষয়।
এক শ্বাসে বলে যায় আদি।
কি জুনিয়র ঠিক বললাম তো?
আপনি ইয়ে মনে তুমি কি করে…
আরে ম্যাডাম নিশ্চই ভাবছ .. হে প্রভু হরেরাম কৃষ্ণ জগন্নাথ প্রেমানন্দে ইয়ে ক্যা হুয়া!!??
হাহা হাহা.. আরে খালি ইংলিশ জেনে তো আর পেট চলবে না এই 2024 এর বাজারে…. তাই আমি..
শ্রেষ্ঠা ভাবছিল এক্ষুনি বলবে হ্যাকিং জানে.. ।
আজকাল এটাই ফ্যাশন হয়েছে.. ।
আদি বলে ওঠে , তাই আমি… জাদু জানি… । হাহা।
আরে এই দেখ তোর ফর্ম টা।
আর তোর মত নীল চোখ রেয়ার। Hmm হলিউড অভিনেত্রী Alexandra Daddario এর মত!
এই জন্য তো বললাম আমায় রোজ চোখ দিয়ে ভস্ম করিস। আর তোর insta ID আমি তো কবে থেকে ফলো করি… তুই maskedmaker এর নাম শুনেছিস? ওটাই আমি ।
শ্রেষ্ঠা বুঝতে পারে আসলে ওর নাম, রোল, কলেজ এসবের ডিটেল তো আদি পাবেই কারণ ও এই আসন্ন অনুষ্ঠানের পরিচালক কমিটির অংশ। আর ওর insta ID কি করে পেল সেটাও বলল।
Maskedmaker insta তে খুব ফেমাস! ও একটা হুডি আর মুখোশ পরে ইন্ডিয়ান ক্লাসিকাল আর সেমি ক্লাসিকাল কে রিমিক্স করে, সে গুলো দিয়ে বেশ ভালো টিউন বানায়। তবে শ্রেষ্ঠা এর এসব একদম পছন্দ নয়। তার মতে পারলে নিজে কিছু করুক তা নয় অন্যের সৃষ্টি কে নষ্ট করা.. ।
বিশেষ করে স্বর্ণ হংস সিডি আর লেবেল এর গানের প্রতি যেনো maskedmaker এর বিশেষ বিতৃষ্ণা!
কিন্তু যে মানুষটা সমগ্র দুনিয়া থেকে নিজেকে লুকায় শ্রেষ্ঠা কে সব বলল কেন?
কি ভাবছিস তোকে বললাম কেন?
আসলে শ্রেষ্ঠা তুই আমার সবচেয়ে বড় হেটার।
তাই তোকে বললাম কারন তোকে আমায় ঘেন্না করার আগে জেনে নিতে হবে। শত্রুতা করলে ভালো করে কর। আর হ্যা তোর ইংলিশ এ বানান ভুল হয়। পরেরবার অনলাইনে এসে উলটপালট বলে গাল দিলে আমিও কিন্তু ট্রলারগুলোকে আর ঠেকাব না।
তুমি আমায় হুমকি দিচ্ছ?
না।
এর পর অনেকবার একে অন্যের পথ কেটেছে দুজনে।
শ্রেষ্ঠা তার শত্রু কে চিনেছে… । তার শত্রু আদি নয়। তার ওই ভ্রান্ত ধারণা যে আদি গান গুলো কে নষ্ট করে এটাই তার শত্রু। আদি গান নষ্ট করে না.. এটা অনেক টা একটা গাছ কে কাপড় , রং , আলো দিয়ে সাজানো।
এতে তো আসল গাছের ক্ষতি হচ্ছে না…
আর এটাই ছিল শ্রেষ্ঠা এর শত্রু।
আদি দা তার খুব ভালো বন্ধু হয়ে গেছে।
প্রথম ক্লাস বানক, প্রথম কলকাতা ঘোরা, প্রথম বার কফি হাউসের সবার সাথে আড্ডা… ।
শুধু আদি ই নয়, আদির বন্ধু দীপ্ত আর অনুপ্রিয়া এর সাথেও শ্রেষ্ঠা, সোহিনী এর খুব ভালো জমে যায়।
শ্রেষ্ঠা এর জলপাইগুড়ির মফস্বল থেকে কলকাতার শহরে জীবন প্রথম দিকে একটু কষ্টের হলেও এখন সয়ে গেছে… । কারণ আদি দা।
ছেলেটা একটা অদ্ভুত চরিত্র।
পাথরের মত কঠিন। মোমের মত নরম।
অসম্ভব জেদী। প্রচন্ড অনুগত।
প্রচন্ড মেধাবী। একদম বোকা।
একবার শ্রেষ্ঠা এর বাবা মা এসেছিল মেয়ের খোঁজ নিতে … হঠাৎ আদি ও না বলে কয়ে একটা টেডি বিয়ার আর একটা গিফট বক্স নিয়ে হাজির হয়।
সবাই একে অন্যের মুখ চাওয়াচাওয়ি করে ।
সোহিনী ও নেই যে সামাল দেবে…
আদি সটান শ্রেষ্ঠা এর কাছে গিয়ে ওর হাতে ওই দুটো ধরিয়ে দেয়।
ওর মা বাবা কে প্রণাম করে বলে।
নমস্কার কাকু, কাকিমা। আমার নাম আধিরাজ প্রধান। বয়স 23+ । আমি একা থাকি। আমি আগে law পড়েছি। এখন সখেই সেই সাথে নিজের ভাষা এর পরিধি আর বাড়াতে আর মজবুত করতে ইংলিশ এ মাস্টার্স ও করছি।
এছাড়াও আমি সঙ্গীতশিল্পী। মাসে সব মিলিয়ে 1.5 লাখ কম করে আয় করি। এতেই স্টুডিও ভাড়া, বাড়ি ভাড়া, গাড়ির ই এম আই , সব দিয়ে তবুও হাতে 20 হাজার এর বেশি ই থাকে। বাকি আমি মিচুয়াল ফান্ড এ ও টাকা জমাই।
কাকু, কাকিমা আমি সব কাজ জানি । যাকে বলে অ্যাডিডাস টু কালীদাস…
আমি শ্রেষ্ঠা কে ভালবাসি। আমি আজকেই ওকে বিয়ে করতে পারি।
শ্রেষ্ঠা এর মা বাবা থ! সোহিনী অনেকক্ষণ আগেই এসেছে কিন্তু আদির মনোলোগ শুনে সে ও পাথর।
এদিকে শ্রেষ্ঠা এর কান, নাক লাল… লজ্জায় আর ভয়ে।
আদি অনেক লম্বা কম করে হলেও 6 ফিট তো হবেই তার ওপর পেটানো চেহারা।
শ্রেষ্ঠা এর মা বাবা ওর মুখের দিকে চেয়ে আছেন…
আদি এতক্ষণ যা বললো সেগুলো একবারে এত জলদি আর আকস্মিক ভাবে হয়েছে যে মেয়ের বাপ মা কি প্রশ্ন করবে আর কি খুঁত বার করে রিজেক্ট রিজেক্ট রিজেক্ট বলবে সেটা ভাবতে পারছে না… ।
শ্রেষ্ঠা এর বাবা পরিস্থিতি সামাল দিলেন।
আচ্ছা আচ্ছা তুমি ভেতরে তো আসো। সব তো দরজা দিয়েই বললে।
শ্রেষ্ঠা এর 2 bhk apartment এর দরজায় দাড়িয়ে ছিলো এতক্ষণ বেচারা। একেই জানুয়ারি চলছে তাতে কলকাতায় 10 ডিগ্রি!
আদি ঘরে এলো।
শ্রেষ্ঠা ওর জন্যেও এক কাপ কফি এনেদিল।
আদি বলতে যাবে যে আমার টা..
হ্যাঁ হ্যাঁ ব্ল্যাক কফি চিনি ছাড়া মধু দেওয়া ।
শ্রেষ্ঠা এর মা বাবা এর বুঝতে বাকি রইল না ।
এই এক বছরে কি হয়েছে, তার খোঁজ নেওয়াশুরু হলো।
ওরা লিভ ইন করে কি না, কখনো কি ইন্টারকোর্স করেছে ?
আদি ঠোঁটকাটা। ওর মুখে কিছু আটকায় না।
আদি বলে ওর এই বিষয়ে আপত্তি। এরকম নামহীন সম্পর্কে ও বিশ্বাসী নয়। তাই শ্রেষ্ঠা এর কাছে ও একজন ভালো বন্ধু এর মত আচরন করে। ওর দরকারে আছে কিন্তু ওকে পন্ন হিসেবে পেতে চায় না। তাই কাকু কাকিমা র প্রশ্নের উত্তর যে না ওরা লিভ ইন এ আছে না ইন্টারকোর্স করেছে। এমন কি শ্রেষ্ঠা এর হাথ ধরে রাস্তায় ও বেরোয়নি না কিস করেছে।
আদি এটাও বলে আজ তো শ্রেষ্ঠা এর জন্মদিন , তাই ভেবেছিলাম মনের কথা বলে গিফট গুলো ও দেবো। যাক ভালই হলো। আপনাদের সামনে সব খোলা থাকল।
শ্রেষ্ঠা এর মা জানতে চাইলেন আদি তার মা বাবা এর সম্পর্কে কিছু বলছে না কেনো…
বাবা এর কথা বলতে আদি গর্বিত। বাবা সহিদ আদিনাথ প্রধান, ইন্ডিয়ান এইরফরস
আর তোমার মা?
আমার মা নেই।
নেই মানে কি… মারা গেছেন?
সন্তর্পনে প্রশ্ন করে শ্রেষ্ঠা এর বাবা।
না বহাল তবিয়তে আছেন।
তাহলে? এবার সোহিনী প্রশ্ন করে।
শ্রেষ্ঠা চুপচাপ শুনছে…
আমার মা নেই। মানে আমি ওই মহিলাকে নিজের মা হিসেবে স্বীকার করি না।
রাজনন্দিনি দেবরায়।
এবার অবাক হওয়ার পালা সকলের।
রাজনন্দিনী দেব রায় তো স্বর্ণ হংস সিডি অ্যান্ড লেবেল এর মালিক সুকান্ত দেব রায় এর এক মাত্র পুত্র বধূ। আর তার ছেলের নাম তো অনিল দেব রায়!
শ্রেষ্ঠা মনে মনে হিসাব কষে … আচ্ছা এর মানে রজনন্দিনি ম্যাডাম এর প্রথম পক্ষের সন্তান আদি।
আর এই রাজনন্দিনী দেব রায় হলেন ভারত তথা পৃথিবীর অন্যতম শ্রেষ্ঠ গায়িকাদের একজন যিনি তার ক্লাসিকাল আর সেমি ক্লাসিকাল গানের জন্য অত্যন্ত জনপ্রিয়। এনার মেয়ে ও আছে । আধুনিক জর এর গান করে । ঐশী দেব রায়।
তাহলে কাকু কাকিমা… আমি কি পাস না ফেল?
এবার দুজন দুজনার দিকে তাকায়।
শ্রেষ্ঠা এর বাবা বলেন, দেখো বাবা, আমরা তোমার মত ধনী নই, খুব কষ্টে মেয়েকে পড়াচ্ছি।
তুমি ভালো ছেলে শ্রী কে খুশি রাখবে জানি.. তবে ..
তবে কি কাকু?
তুমি যদি ওর পড়াশোনা শেষ করে ওকে নিজের পায়ে দাড়াতে দাও আর ওকে ওর ব্যক্তি স্বাধীনতা থেকে বঞ্চিত না করো তাহলে তোমাদের সম্পর্ক মেনে নিতে এই বুড়ো বুড়ির সমস্যা নেই ।
কিরে মা, তোর আপত্তি নেই তো?
শ্রী তার মায়ের পেছনে লুকোয় লজ্জায়।
মাথা নেড়ে বলে তার আপত্তি নেই।
তাই একপ্রকার আনঅফিসিয়াল ভাবেই ওদের এনগেজমেন্ট হয়ে গেলো।
সোহিনী দুজনের insta তে দুজনের লিংক দিল।
অনলাইনের দুনিয়ায় এটা একপ্রকার ঘোষণা ।
এরপর কেটে গেছে একটা গোটা বছর। প্রথম সরস্বতী পুজোয় অজানা দুজন , দ্বিতীয়তে প্রথম বার কাছে আসা আর এবার…
শ্রেষ্ঠা এর ডাকনাম শ্রী আর আধিরাজ এর আদি।
এই নিয়ে প্ল্যান করে আদিরাজ।
তবে আদি জানত না যে শ্রী কে নিজের বাড়িতে প্র্যাকটিস করতে ডেকে সে খাল কেটে কুমির আনতে চলেছে জীবনে।
তুমি এখন ভাববে যে আরে লেখক ভাই তুমি এত ভনিতা করছ কেনো? বলে ফেলো না …
আরে আরে রসো একটু… পরে আমার দোষ দেবে না কিন্তু… ।
গল্প টা প্রেমের তবে আমি বলবো এটা অভিমানের গল্প ।
*খাল কেটে কুমির।
আচ্ছা শ্রেষ্ঠা তুই তো আমার বাড়িতেই প্র্যাকটিস করতে পারিস!
তুমি সত্যি বলছো আদি দা!
আরে আলবাত বলছি।
দেখিস আমাদের ডুয়েট যা জমবে না!
উফ্ আমার তো ভাবতেই কেমন লাগছে …
আদিশ্রি! এই শ্রেষ্ঠা আমাদের প্রথম অ্যালবাম এর এটাই নাম হবে!
হ - হ্যাঁ আদি দা।
আচ্ছা তোর মনে আছে আমাদের প্রথম দেখা…
ভাবলেও এখন হাসি পায়।
শ্রেষ্ঠা কিছু বলে না আকাশপানে চেয়ে থাকে ।
আজকে ওর খুব ভালো লাগছে।
বসন্ত পঞ্চমী আজ।
তারওপর ওর ভালোবাসা অধিরাজ আজকে ওর সাথে বেরিয়েছে!
সবকিছু অবাস্তব সপ্নের মত লাগছে।
আজ থেকে বছর খানেক আগেও এই অধীরাজ প্রধান কে এক কথায় অসহ্য লাগতো ওর।
গায়ে পড়া গোছের ছেলে লাগতো।
শ্রেষ্ঠা ভৌতবিজ্ঞান বিভাগের ছাত্র প্রথম বর্ষের।
আর আধিরাজ ইংলিশ বিভাগের অন্তিম বর্ষের ছাত্র।
সাধারণ মধ্যবিত্ত ঘরের মেয়ে শ্রেষ্ঠা সিংহ জলপাইগুড়ি থেকে এই সুদূর কলকাতায় এসেছে তার মাস্টার্স ডিগ্রি অর্জন করতে।
আধীরাজ এর সাথে ওর পরিচয় আজকের মত এক সরস্বতী পুজোয়।
আধিরজ এর দোষের মধ্যে একটাই শ্রেষ্ঠা দেখলো সে ভীষণই ক্যাজুয়াল। মানে জীবন নিয়ে কোনো যেন চিন্তাই নেই!
আশ্চর্য!? ভবিষ্যৎ নিয়ে ভাববে না?
যখনই ক্যাম্পাসে আসে আধিরাজ হয় গাছ তলায় বসে কখনো গিটার বাজাচ্ছে কখনো আড্ডা দিচ্ছে।
শ্রেষ্ঠা প্রথমে ভেবেছিল ওকে অত পাত্তা দেবে না।
তবে কথায় বলে তুমি নিজের থেকে যদিও বা পালিয়ে বাচো ভাগ্যর থেকে পালিয়ে যাবে কোথায়?
ডিপার্টমেন্ট থেকে গানের জন্য ওর নাম দিয়ে দিল ওর প্রিয় বান্ধবী সোহিনী।
আর তখনই দেখা হলো সেই আধীরজ এর সাথে।
উররি নতুন নাকি রে?
হম…
কোন ডিপার্টমেন্ট তোর?
ফিজিক্স..
তুই কি এরকম অল্প কথাই বলিস?
আপনাকে চিনি না জানি না খোশগল্প করার মতো…
আরে আমায় চিনিস না? রোজ তো ক্লাসে যাবার আগে আমায় চোখ দিয়ে ভস্ম করিস..
আপনি…
উহু এমনি নয় … তুমি টা বেটার। আর আমার নাম আধিরাজ। তুই আদি দা বলিস।
আমি..
শ্রেষ্ঠা সিংহ, ফিজিক্স 1স্ট ইয়ার, কলেজ টপার, রোল 123242, insta তে shreesings একাউন্ট টা তোর, ক্লাসিকাল আর সেমি ক্লাসিকাল বিষয়।
এক শ্বাসে বলে যায় আদি।
কি জুনিয়র ঠিক বললাম তো?
আপনি ইয়ে মনে তুমি কি করে…
আরে ম্যাডাম নিশ্চই ভাবছ .. হে প্রভু হরেরাম কৃষ্ণ জগন্নাথ প্রেমানন্দে ইয়ে ক্যা হুয়া!!??
হাহা হাহা.. আরে খালি ইংলিশ জেনে তো আর পেট চলবে না এই 2024 এর বাজারে…. তাই আমি..
শ্রেষ্ঠা ভাবছিল এক্ষুনি বলবে হ্যাকিং জানে.. ।
আজকাল এটাই ফ্যাশন হয়েছে.. ।
আদি বলে ওঠে , তাই আমি… জাদু জানি… । হাহা।
আরে এই দেখ তোর ফর্ম টা।
আর তোর মত নীল চোখ রেয়ার। Hmm হলিউড অভিনেত্রী Alexandra Daddario এর মত!
এই জন্য তো বললাম আমায় রোজ চোখ দিয়ে ভস্ম করিস। আর তোর insta ID আমি তো কবে থেকে ফলো করি… তুই maskedmaker এর নাম শুনেছিস? ওটাই আমি ।
শ্রেষ্ঠা বুঝতে পারে আসলে ওর নাম, রোল, কলেজ এসবের ডিটেল তো আদি পাবেই কারণ ও এই আসন্ন অনুষ্ঠানের পরিচালক কমিটির অংশ। আর ওর insta ID কি করে পেল সেটাও বলল।
Maskedmaker insta তে খুব ফেমাস! ও একটা হুডি আর মুখোশ পরে ইন্ডিয়ান ক্লাসিকাল আর সেমি ক্লাসিকাল কে রিমিক্স করে, সে গুলো দিয়ে বেশ ভালো টিউন বানায়। তবে শ্রেষ্ঠা এর এসব একদম পছন্দ নয়। তার মতে পারলে নিজে কিছু করুক তা নয় অন্যের সৃষ্টি কে নষ্ট করা.. ।
বিশেষ করে স্বর্ণ হংস সিডি আর লেবেল এর গানের প্রতি যেনো maskedmaker এর বিশেষ বিতৃষ্ণা!
কিন্তু যে মানুষটা সমগ্র দুনিয়া থেকে নিজেকে লুকায় শ্রেষ্ঠা কে সব বলল কেন?
কি ভাবছিস তোকে বললাম কেন?
আসলে শ্রেষ্ঠা তুই আমার সবচেয়ে বড় হেটার।
তাই তোকে বললাম কারন তোকে আমায় ঘেন্না করার আগে জেনে নিতে হবে। শত্রুতা করলে ভালো করে কর। আর হ্যা তোর ইংলিশ এ বানান ভুল হয়। পরেরবার অনলাইনে এসে উলটপালট বলে গাল দিলে আমিও কিন্তু ট্রলারগুলোকে আর ঠেকাব না।
তুমি আমায় হুমকি দিচ্ছ?
না।
এর পর অনেকবার একে অন্যের পথ কেটেছে দুজনে।
শ্রেষ্ঠা তার শত্রু কে চিনেছে… । তার শত্রু আদি নয়। তার ওই ভ্রান্ত ধারণা যে আদি গান গুলো কে নষ্ট করে এটাই তার শত্রু। আদি গান নষ্ট করে না.. এটা অনেক টা একটা গাছ কে কাপড় , রং , আলো দিয়ে সাজানো।
এতে তো আসল গাছের ক্ষতি হচ্ছে না…
আর এটাই ছিল শ্রেষ্ঠা এর শত্রু।
আদি দা তার খুব ভালো বন্ধু হয়ে গেছে।
প্রথম ক্লাস বানক, প্রথম কলকাতা ঘোরা, প্রথম বার কফি হাউসের সবার সাথে আড্ডা… ।
শুধু আদি ই নয়, আদির বন্ধু দীপ্ত আর অনুপ্রিয়া এর সাথেও শ্রেষ্ঠা, সোহিনী এর খুব ভালো জমে যায়।
শ্রেষ্ঠা এর জলপাইগুড়ির মফস্বল থেকে কলকাতার শহরে জীবন প্রথম দিকে একটু কষ্টের হলেও এখন সয়ে গেছে… । কারণ আদি দা।
ছেলেটা একটা অদ্ভুত চরিত্র।
পাথরের মত কঠিন। মোমের মত নরম।
অসম্ভব জেদী। প্রচন্ড অনুগত।
প্রচন্ড মেধাবী। একদম বোকা।
একবার শ্রেষ্ঠা এর বাবা মা এসেছিল মেয়ের খোঁজ নিতে … হঠাৎ আদি ও না বলে কয়ে একটা টেডি বিয়ার আর একটা গিফট বক্স নিয়ে হাজির হয়।
সবাই একে অন্যের মুখ চাওয়াচাওয়ি করে ।
সোহিনী ও নেই যে সামাল দেবে…
আদি সটান শ্রেষ্ঠা এর কাছে গিয়ে ওর হাতে ওই দুটো ধরিয়ে দেয়।
ওর মা বাবা কে প্রণাম করে বলে।
নমস্কার কাকু, কাকিমা। আমার নাম আধিরাজ প্রধান। বয়স 23+ । আমি একা থাকি। আমি আগে law পড়েছি। এখন সখেই সেই সাথে নিজের ভাষা এর পরিধি আর বাড়াতে আর মজবুত করতে ইংলিশ এ মাস্টার্স ও করছি।
এছাড়াও আমি সঙ্গীতশিল্পী। মাসে সব মিলিয়ে 1.5 লাখ কম করে আয় করি। এতেই স্টুডিও ভাড়া, বাড়ি ভাড়া, গাড়ির ই এম আই , সব দিয়ে তবুও হাতে 20 হাজার এর বেশি ই থাকে। বাকি আমি মিচুয়াল ফান্ড এ ও টাকা জমাই।
কাকু, কাকিমা আমি সব কাজ জানি । যাকে বলে অ্যাডিডাস টু কালীদাস…
আমি শ্রেষ্ঠা কে ভালবাসি। আমি আজকেই ওকে বিয়ে করতে পারি।
শ্রেষ্ঠা এর মা বাবা থ! সোহিনী অনেকক্ষণ আগেই এসেছে কিন্তু আদির মনোলোগ শুনে সে ও পাথর।
এদিকে শ্রেষ্ঠা এর কান, নাক লাল… লজ্জায় আর ভয়ে।
আদি অনেক লম্বা কম করে হলেও 6 ফিট তো হবেই তার ওপর পেটানো চেহারা।
শ্রেষ্ঠা এর মা বাবা ওর মুখের দিকে চেয়ে আছেন…
আদি এতক্ষণ যা বললো সেগুলো একবারে এত জলদি আর আকস্মিক ভাবে হয়েছে যে মেয়ের বাপ মা কি প্রশ্ন করবে আর কি খুঁত বার করে রিজেক্ট রিজেক্ট রিজেক্ট বলবে সেটা ভাবতে পারছে না… ।
শ্রেষ্ঠা এর বাবা পরিস্থিতি সামাল দিলেন।
আচ্ছা আচ্ছা তুমি ভেতরে তো আসো। সব তো দরজা দিয়েই বললে।
শ্রেষ্ঠা এর 2 bhk apartment এর দরজায় দাড়িয়ে ছিলো এতক্ষণ বেচারা। একেই জানুয়ারি চলছে তাতে কলকাতায় 10 ডিগ্রি!
আদি ঘরে এলো।
শ্রেষ্ঠা ওর জন্যেও এক কাপ কফি এনেদিল।
আদি বলতে যাবে যে আমার টা..
হ্যাঁ হ্যাঁ ব্ল্যাক কফি চিনি ছাড়া মধু দেওয়া ।
শ্রেষ্ঠা এর মা বাবা এর বুঝতে বাকি রইল না ।
এই এক বছরে কি হয়েছে, তার খোঁজ নেওয়াশুরু হলো।
ওরা লিভ ইন করে কি না, কখনো কি ইন্টারকোর্স করেছে ?
আদি ঠোঁটকাটা। ওর মুখে কিছু আটকায় না।
আদি বলে ওর এই বিষয়ে আপত্তি। এরকম নামহীন সম্পর্কে ও বিশ্বাসী নয়। তাই শ্রেষ্ঠা এর কাছে ও একজন ভালো বন্ধু এর মত আচরন করে। ওর দরকারে আছে কিন্তু ওকে পন্ন হিসেবে পেতে চায় না। তাই কাকু কাকিমা র প্রশ্নের উত্তর যে না ওরা লিভ ইন এ আছে না ইন্টারকোর্স করেছে। এমন কি শ্রেষ্ঠা এর হাথ ধরে রাস্তায় ও বেরোয়নি না কিস করেছে।
আদি এটাও বলে আজ তো শ্রেষ্ঠা এর জন্মদিন , তাই ভেবেছিলাম মনের কথা বলে গিফট গুলো ও দেবো। যাক ভালই হলো। আপনাদের সামনে সব খোলা থাকল।
শ্রেষ্ঠা এর মা জানতে চাইলেন আদি তার মা বাবা এর সম্পর্কে কিছু বলছে না কেনো…
বাবা এর কথা বলতে আদি গর্বিত। বাবা সহিদ আদিনাথ প্রধান, ইন্ডিয়ান এইরফরস
আর তোমার মা?
আমার মা নেই।
নেই মানে কি… মারা গেছেন?
সন্তর্পনে প্রশ্ন করে শ্রেষ্ঠা এর বাবা।
না বহাল তবিয়তে আছেন।
তাহলে? এবার সোহিনী প্রশ্ন করে।
শ্রেষ্ঠা চুপচাপ শুনছে…
আমার মা নেই। মানে আমি ওই মহিলাকে নিজের মা হিসেবে স্বীকার করি না।
রাজনন্দিনি দেবরায়।
এবার অবাক হওয়ার পালা সকলের।
রাজনন্দিনী দেব রায় তো স্বর্ণ হংস সিডি অ্যান্ড লেবেল এর মালিক সুকান্ত দেব রায় এর এক মাত্র পুত্র বধূ। আর তার ছেলের নাম তো অনিল দেব রায়!
শ্রেষ্ঠা মনে মনে হিসাব কষে … আচ্ছা এর মানে রজনন্দিনি ম্যাডাম এর প্রথম পক্ষের সন্তান আদি।
আর এই রাজনন্দিনী দেব রায় হলেন ভারত তথা পৃথিবীর অন্যতম শ্রেষ্ঠ গায়িকাদের একজন যিনি তার ক্লাসিকাল আর সেমি ক্লাসিকাল গানের জন্য অত্যন্ত জনপ্রিয়। এনার মেয়ে ও আছে । আধুনিক জর এর গান করে । ঐশী দেব রায়।
তাহলে কাকু কাকিমা… আমি কি পাস না ফেল?
এবার দুজন দুজনার দিকে তাকায়।
শ্রেষ্ঠা এর বাবা বলেন, দেখো বাবা, আমরা তোমার মত ধনী নই, খুব কষ্টে মেয়েকে পড়াচ্ছি।
তুমি ভালো ছেলে শ্রী কে খুশি রাখবে জানি.. তবে ..
তবে কি কাকু?
তুমি যদি ওর পড়াশোনা শেষ করে ওকে নিজের পায়ে দাড়াতে দাও আর ওকে ওর ব্যক্তি স্বাধীনতা থেকে বঞ্চিত না করো তাহলে তোমাদের সম্পর্ক মেনে নিতে এই বুড়ো বুড়ির সমস্যা নেই ।
কিরে মা, তোর আপত্তি নেই তো?
শ্রী তার মায়ের পেছনে লুকোয় লজ্জায়।
মাথা নেড়ে বলে তার আপত্তি নেই।
তাই একপ্রকার আনঅফিসিয়াল ভাবেই ওদের এনগেজমেন্ট হয়ে গেলো।
সোহিনী দুজনের insta তে দুজনের লিংক দিল।
অনলাইনের দুনিয়ায় এটা একপ্রকার ঘোষণা ।
এরপর কেটে গেছে একটা গোটা বছর। প্রথম সরস্বতী পুজোয় অজানা দুজন , দ্বিতীয়তে প্রথম বার কাছে আসা আর এবার…
শ্রেষ্ঠা এর ডাকনাম শ্রী আর আধিরাজ এর আদি।
এই নিয়ে প্ল্যান করে আদিরাজ।
তবে আদি জানত না যে শ্রী কে নিজের বাড়িতে প্র্যাকটিস করতে ডেকে সে খাল কেটে কুমির আনতে চলেছে জীবনে।