22-01-2024, 02:43 PM
<×><×><×><×><×><×><×><×><×><×><×><×>
শিলিগুড়িতে কমলকলি
<×><×><×><×><×><×><×><×><×><×><×><×>
বড়দিন আর ফোর্থ সাটারডে উপলক্ষে, পরপর তিনদিন ছুটি। শুক্রবার রাতের ফ্লাইটে, সুমিতা আর রাজ উড়ে গেল কলকাতায়। অনেকদিন মায়ের সাথে দেখা হয়নি। টেলিফোনে কথা বলে কি আর মন ভরে। ওদিকে কলির পরীক্ষা শেষ হয়ে গেছে। ওকে এবার শিলিগুড়িতে নিয়ে আসতে হবে।
শুক্রবারে, অনেক রাত্রে বাড়িতে পৌঁছে; রাতের খাওয়া দাওয়া সেরের মায়ের সাথে সামান্য কথা বলে ঘরে শুয়ে পড়েছিল রাজ।
শনিবার, রোববার দুদিনই পাড়ার বন্ধু বান্ধবের সাথে আড্ডা দিয়ে সময় কেটে গেছে।
সন্ধ্যের পরে, মায়ের সাথে যেটুকু যা কথা আবার হয়েছে। সুমিতার মেয়েকে দু-এক ঝলক দেখেছে। কথাবার্তা বিশেষ কিছু হয়নি।
সোমবার সকালে, বেডটি নিয়ে ঘরে এলো; সুমিতার মেয়ে কমলকলি। সবাই অবশ্য কলি বলে ডাকে। সকালে উঠেই, স্নান করে একটা সুন্দর চুড়িদার পড়ে আছে। কোমর ছাপানো ভিজে চুল, পিঠের উপরে ছড়ানো।
ঘুম ভেঙে যাওয়ার পরে, রাজ তখন বিছানায় এপাশ-ওপাশ করছিল। চায়ের ট্রে, বেড সাইড টেবিলে রেখে;
অনুচ্চ মধুর স্বরে বলল, "তোমার চা"
একবার চোখ তুলে তাকিয়ে হাত বাড়িয়ে চা নিয়ে নিল রাজ। নিজের মনেই ভাবল, 'এটাকে দিয়ে চা, আবার কে পাঠালো।' মেয়েটা যেন অন্তর্যামী। বলে উঠলো, "আমি নিজের ইচ্ছেয় আসিনি। তোমার মা-ই পাঠিয়েছে।"
দুপুর বেলা খেতে বসে, মায়ের কথা শুনে; রাজের আক্কেল গুড়ুম। পাশের চেয়ারে বসে, একটা হাত পাখা নিয়ে হাওয়া করতে করতে; মা বলল,
"তিন বছর কলি, শিলিগুড়িতে ওর মায়ের কাছে থেকে; গ্রাজুয়েশন কমপ্লিট করবে। তারপর, তোমার সঙ্গে কলির বিয়ে দেব।"
হাত পাখাটা নাড়তে নাড়তে আবার বলল, "এতদিন ধরে, অনেক নষ্টামি করেছ। শিলিগুড়ির কথা তো সুমিতার মুখে সব শুনেছি। ওসব এবার বন্ধ করতে হবে। তিন বছর বাদে, কলিকে বিয়ে করে; সুন্দর করে সংসার করবে। সুমিতা তোমার সঙ্গেই থাকবে, তোমাদের গার্জিয়ান হিসেবে। কোনরকম বদমাইশি করলে, আমি সুমিতার থেকে খবর পেয়ে যাব।"
পাশেই আরেকটা চেয়ারে বসে, সুমিতা মুখ টিপে টিপে হাসছে। দুদিন ধরে মনে হয়, মায়ের সাথে গুজুর-গুজুর, ফুসুর-ফুসুর করে; এই সবই লাগিয়েছে। 'দাঁড়াও, একবার শিলিগুড়িতে যাই; তোমার হচ্ছে', মনে মনে বলল রাজ।
"আরেকটা কথা, এখন থেকে সুমিতাকে আর নাম ধরে ডাকবে না। মা বলতে হবে না। বৌদি বলে ডেকো, কারণ, তিন বছর বাদে ওর মেয়ের সঙ্গেই তোমার বিয়ে হবে।" … আবার বলে উঠলো মা।
ফ্যাল ফ্যাল করে মায়ের মুখের দিকে চেয়ে রইলো রাজ। বাছাই বাছাই কটা গালাগাল দিলো সুমিতাকে। যদিও তার শব্দ শোনা গেল না।
সোমবার সন্ধ্যা বেলা যখন এয়ারপোর্ট-এর উদ্দেশ্যে বেরোবে; কলিকে দেখে, আরেক প্রস্থ চমক খেলো রাজ। এর আগে, যখনই নজরে পড়েছে; চুড়িদার অথবা স্কার্ট ব্লাউজ পরেছিল।
এখন শাড়ি পরে, একদম জেন্টল লেডি।
খোলা চুল, একটা হেয়ার ব্যান্ডের সুন্দর করে আটকানো। চোখে একটা দামি গগলস, মাথার উপরে তোলা। সুমিতা যে ফিরে যাবার টিকিটের সঙ্গে, কলির টিকিটও কেটেছিল; সেটা কিন্তু রাজ একবারও টের পায়নি।
নিজের ছোট হ্যান্ড ব্যাগের সাথে, দুটো বড় সুটকেস; আর, দুই বগলে দুই সুন্দরী কে নিয়ে শিলিগুড়ির উদ্দেশ্য উড়ে গেল রাজ। ভবিষ্যতে রাজের জীবনে কি আছে; তার খবর কেউ রাখে না।
~: সমাপ্ত :~