10-01-2024, 02:22 PM
*Sala da Pranzo*
আমাদের পাড়ায় অনুপ্রাণিত কালুর চপের দোকান। বছর চারেক আগে একটা টিনের চালার দোকানে কড়াই, স্টোভ নিয়ে ব্যবসার শুরু। আজ তার নিজের দোতলা বাড়ির এক তলায় একটা অংশে টেবিল চেয়ার পাতা ছোট্ট সুন্দর দোকান। ডেইলি সেল প্রায় ৫/৬ হাজার টাকার। কালুর সঙ্গে প্রেম স্বপ্নার। স্বপ্নার ব্যাংক অফিসার বাবার আপত্তি চপশিল্পপতির সঙ্গে মেয়ের বিয়ে দেবেন না। স্বপ্নার বিয়ে হলো কালুর তিনভাগের একভাগের রোজকার করা KFC এর সুট টাই শোভিত কাউন্টার ম্যানেজারের সঙ্গে।
হায়রে এই আমাদের দেশ! বিজ্ঞাপনের বিপণন কৌশলে আমরা হাফ আতেল বাঙালীরা সাউথ সিটি তে ডেসার্ট মারছি, কিন্তু চন্দননগরের জলভরাকে জাতে উঠতে দিচ্ছি না। আমরা আসলে নিজেদের উৎকর্ষতাকে নিজেরাই বিশ্বাস করি না, ভরসা করি সাত সমুদ্র তেরো নদী ছুঁয়ে আসা সর্টিফায়েড কপি : কি ডাক্তার, কি জামাই, কি ওষুধ, কি খাবার!
কিছুদিন মন খারাপ করে বসে থাকার পর হাফসোল খাওয়া কালু বুঝতে পারল কলকাতাকে লন্ডন বানাতে গেলে যেমন লেকটাউনে বিগ বেন এর প্রয়োজন, কিংবা বিশ্ব বাংলা বানাতে গেলে যেমন পৃথিবীর সপ্ত আশ্চর্যের সবগুলোকে ইকো পার্কের আওতায় আনতে হয়েছে, তেমনি বাঙালীর এই নিজেকে অবমূল্যায়ন করার প্রবণতা এবং বিশ্বজনীনতার প্রতি দুর্বলতার সুযোগ নিয়ে একটু বুদ্ধি খাটিয়ে নিউ টাউন ইকো স্পেসের সামনে একটা বাংলা খাবারের বৈশ্বয়িক রেস্তোরাঁ খুলে ফেললো যার
নাম দিল *"La Sala da Pranzo di Kalu"* সংক্ষেপে LSPK, আর খাদ্যতালিকায় সমস্ত বাংলা খাবারের নাম ইংরেজি কিংবা অন্য কোন বিদেশী ভাষায় লিখে দিল। আই টি সেক্টরের কুল স্মার্ট ছেলেমেয়েগুলো সেই খাবার খাওয়ার জন্য হামলে পড়ল।
LSPK র কিছু খাবারের উদাহরণ -
*রোসেটো আল্জফার্নো*
এটা বস্তুত লাল শাক দিয়ে মাখা ভাত। দাম - ৩৭৫ টাকা প্লেট। বাড়িতে আপনাকে দিলে আপনি কি খাবেন? নাকি নাক সিটকবেন!!! অথচ Sala da Pranzo তে সব সোনা মুখ করে খাচ্ছে।
*নাচোজ উইথ সালসা*
খাস্তা নিমকি, কাঁচা টমেটোর চাটনির সাথে। দাম - ২০০ টাকা।খাস্তা আর কাঁচা টমেটোর চাটনি শুনলে কেই বা আর ২০০ টাকা দেবে। কিন্ত এটা যে নাচোজ!
*সিনোমিনে সুফলে*
সুজির হালুয়া। দাম - ১৭৫ টাকা! বাড়িতে মা ঠাকুমার হাতে এই টাকায় ২৫ জনের হয়ে যাবে।
*রাইস সুপ উইথ লেমন গ্রাস*
লেবু পাতা দিয়ে ভাতের মাড়। দাম - ১৫০ টাকা। কুল স্মার্ট ছেলেমেয়েগুলো বুক ফুলিয়ে বলে, - "I am having RICE SOUP WITH NACHOS"। কে আর বলতে পছন্দ করবে খাস্তার সংগে ভাতের মাড় খাচ্ছি রে!
*ইন্ডিলাচা*
কালুর ছেলেবেলায় মা পরোটার ভেতরে সবজী ভরে হাতে ধরিয়ে দিত। কালু সেটাকেই একটু ঘষামাজা করে নিয়ে একটা গ্লোবাল নাম চিপকে দিয়েছে। দাম- ২০০ টাকা।
*গ্রাম জুস উইথ পিপার*
ঠেলা ওয়ালার ঘটিতে তৈরি ১০টাকার ছাতুর সরবত।
"ছাতু" বললে লোকে গেঁয়ো ভাববে বা হীন দৃষ্টিতে দেখবে। কিন্তু এটাই Sala da Pranzo তে বসে ১৫০ টাকা দিয়ে পাবলিক দিব্যি খাচ্ছে।
*জাপানিজ রাইস ওয়াইন*
ওটা একটু সুগন্ধি সহযোগে পরিবেশিত গোদা বাংলায় যাকে বলে হাঁড়িয়া। একবার ঝাড়গ্রামে বেড়াতে গিয়ে এক সাঁওতাল বাড়িতে খেয়েছিল। সেটাই এক গ্লাস ৯০ টাকা।
*চীলড রাইস উইথ গ্রিলড বৃঞ্জাল*
আসলে পান্তা ভাত আর বেগুন পোড়া। বেকার অবস্থায় এটাই ছিল কালুর মেইন খাবার। সেটাই এখন জাতে উঠেছে, দাম - ২২৫ টাকা + GST.
আসলে আমরা অতি আধুনিকরা খাবার নয় খাবারের মোড়কে টাকা চিবিয়ে খেতে পছন্দ করি। আর এটার সুযোগ নিয়েই বুদ্ধিধারী কালু রোজগারের সাথে সাথে জাতেও উঠে গেল। স্বপ্নার ব্যাংক অফিসার বাবা এখন আফসোস করে।
#সংগৃহীত, পরিমার্জিত এবং সংযোজিত
আমাদের পাড়ায় অনুপ্রাণিত কালুর চপের দোকান। বছর চারেক আগে একটা টিনের চালার দোকানে কড়াই, স্টোভ নিয়ে ব্যবসার শুরু। আজ তার নিজের দোতলা বাড়ির এক তলায় একটা অংশে টেবিল চেয়ার পাতা ছোট্ট সুন্দর দোকান। ডেইলি সেল প্রায় ৫/৬ হাজার টাকার। কালুর সঙ্গে প্রেম স্বপ্নার। স্বপ্নার ব্যাংক অফিসার বাবার আপত্তি চপশিল্পপতির সঙ্গে মেয়ের বিয়ে দেবেন না। স্বপ্নার বিয়ে হলো কালুর তিনভাগের একভাগের রোজকার করা KFC এর সুট টাই শোভিত কাউন্টার ম্যানেজারের সঙ্গে।
হায়রে এই আমাদের দেশ! বিজ্ঞাপনের বিপণন কৌশলে আমরা হাফ আতেল বাঙালীরা সাউথ সিটি তে ডেসার্ট মারছি, কিন্তু চন্দননগরের জলভরাকে জাতে উঠতে দিচ্ছি না। আমরা আসলে নিজেদের উৎকর্ষতাকে নিজেরাই বিশ্বাস করি না, ভরসা করি সাত সমুদ্র তেরো নদী ছুঁয়ে আসা সর্টিফায়েড কপি : কি ডাক্তার, কি জামাই, কি ওষুধ, কি খাবার!
কিছুদিন মন খারাপ করে বসে থাকার পর হাফসোল খাওয়া কালু বুঝতে পারল কলকাতাকে লন্ডন বানাতে গেলে যেমন লেকটাউনে বিগ বেন এর প্রয়োজন, কিংবা বিশ্ব বাংলা বানাতে গেলে যেমন পৃথিবীর সপ্ত আশ্চর্যের সবগুলোকে ইকো পার্কের আওতায় আনতে হয়েছে, তেমনি বাঙালীর এই নিজেকে অবমূল্যায়ন করার প্রবণতা এবং বিশ্বজনীনতার প্রতি দুর্বলতার সুযোগ নিয়ে একটু বুদ্ধি খাটিয়ে নিউ টাউন ইকো স্পেসের সামনে একটা বাংলা খাবারের বৈশ্বয়িক রেস্তোরাঁ খুলে ফেললো যার
নাম দিল *"La Sala da Pranzo di Kalu"* সংক্ষেপে LSPK, আর খাদ্যতালিকায় সমস্ত বাংলা খাবারের নাম ইংরেজি কিংবা অন্য কোন বিদেশী ভাষায় লিখে দিল। আই টি সেক্টরের কুল স্মার্ট ছেলেমেয়েগুলো সেই খাবার খাওয়ার জন্য হামলে পড়ল।
LSPK র কিছু খাবারের উদাহরণ -
*রোসেটো আল্জফার্নো*
এটা বস্তুত লাল শাক দিয়ে মাখা ভাত। দাম - ৩৭৫ টাকা প্লেট। বাড়িতে আপনাকে দিলে আপনি কি খাবেন? নাকি নাক সিটকবেন!!! অথচ Sala da Pranzo তে সব সোনা মুখ করে খাচ্ছে।
*নাচোজ উইথ সালসা*
খাস্তা নিমকি, কাঁচা টমেটোর চাটনির সাথে। দাম - ২০০ টাকা।খাস্তা আর কাঁচা টমেটোর চাটনি শুনলে কেই বা আর ২০০ টাকা দেবে। কিন্ত এটা যে নাচোজ!
*সিনোমিনে সুফলে*
সুজির হালুয়া। দাম - ১৭৫ টাকা! বাড়িতে মা ঠাকুমার হাতে এই টাকায় ২৫ জনের হয়ে যাবে।
*রাইস সুপ উইথ লেমন গ্রাস*
লেবু পাতা দিয়ে ভাতের মাড়। দাম - ১৫০ টাকা। কুল স্মার্ট ছেলেমেয়েগুলো বুক ফুলিয়ে বলে, - "I am having RICE SOUP WITH NACHOS"। কে আর বলতে পছন্দ করবে খাস্তার সংগে ভাতের মাড় খাচ্ছি রে!
*ইন্ডিলাচা*
কালুর ছেলেবেলায় মা পরোটার ভেতরে সবজী ভরে হাতে ধরিয়ে দিত। কালু সেটাকেই একটু ঘষামাজা করে নিয়ে একটা গ্লোবাল নাম চিপকে দিয়েছে। দাম- ২০০ টাকা।
*গ্রাম জুস উইথ পিপার*
ঠেলা ওয়ালার ঘটিতে তৈরি ১০টাকার ছাতুর সরবত।
"ছাতু" বললে লোকে গেঁয়ো ভাববে বা হীন দৃষ্টিতে দেখবে। কিন্তু এটাই Sala da Pranzo তে বসে ১৫০ টাকা দিয়ে পাবলিক দিব্যি খাচ্ছে।
*জাপানিজ রাইস ওয়াইন*
ওটা একটু সুগন্ধি সহযোগে পরিবেশিত গোদা বাংলায় যাকে বলে হাঁড়িয়া। একবার ঝাড়গ্রামে বেড়াতে গিয়ে এক সাঁওতাল বাড়িতে খেয়েছিল। সেটাই এক গ্লাস ৯০ টাকা।
*চীলড রাইস উইথ গ্রিলড বৃঞ্জাল*
আসলে পান্তা ভাত আর বেগুন পোড়া। বেকার অবস্থায় এটাই ছিল কালুর মেইন খাবার। সেটাই এখন জাতে উঠেছে, দাম - ২২৫ টাকা + GST.
আসলে আমরা অতি আধুনিকরা খাবার নয় খাবারের মোড়কে টাকা চিবিয়ে খেতে পছন্দ করি। আর এটার সুযোগ নিয়েই বুদ্ধিধারী কালু রোজগারের সাথে সাথে জাতেও উঠে গেল। স্বপ্নার ব্যাংক অফিসার বাবা এখন আফসোস করে।
#সংগৃহীত, পরিমার্জিত এবং সংযোজিত