09-01-2024, 06:08 PM
সৃ ষ্টি র হ স্য
শুরুর আগে:
৩০.০৮.২০২১
শুরুর আগে:
অধ্যাপক মানিকবাবু, তাঁর দুই প্রিয় ছাত্র সৈকত ও সৌম্যকে কাছে ডেকে, খুব উৎসাহের সঙ্গে বললেন: "শোনো, প্রাচীন কামশাস্ত্রের প্রেক্ষাপটে ;.,ক্রিয়ার জৈবিক নিত্যতার উপর একটা প্রবন্ধ লিখেছি। আগামীকাল একটা সেমিনারে এই প্রবন্ধটা পাঠ করব।
তার আগে তোমাদের দু'জনকে শুনিয়ে, একটু ঝালিয়ে নিতে চাই।"
সৈকত প্রবন্ধের খিটকেলমার্কা নামটা শুনেই বলে উঠতে গেল: "ব্যাপারটা ঠিক কী, একটু বাংলা করে বুঝিয়ে বলুন না, স্যার!"
কিন্তু সৌম্য, ওর হাঁটুতে চিমটি কেটে, ওকে চুপ করিয়ে দিল।
তারপর মানিকবাবু গড়গড়িয়ে পড়তে শুরু করলেন।
শুরু:
অযুত-সহস্র বৎসর ধরিয়া মুষল ও ছেদিনীর সংঘর্ষ চলিয়া আসিতেছে।
দুইজন পরস্পরের সম্মুখীন হইলেই, তাহারা পশুর ন্যায়, পরস্পরকে দেহপাশে আবদ্ধ করিয়া, প্রবল পিষ্টনে একে অপরকে পীড়া প্রদান করিয়া থাকে।
ইহাতে তাহাদের কোনও রূপ বিরাম নাই। তাহাদের এই চিরশত্রুতা আবহমান কাল হইতে ঘটিয়া আসিতেছে।
একদিন দ্বৈরথ কালে মুষল, ছেদিনীকে মস্তকাঘাতে পরাস্ত করিতে-করিতেই জিজ্ঞাসা করিল: "হে যুযুধান, কী রূপে তুমি এই কুশ্রী রূপ ধারণ করিলে? কেনই বা তোমাকে দেখিলেই, আমার গাত্রদাহ উদ্দাম অগ্নিসম উর্দ্ধমুখে প্রজ্জ্বলিত হইয়া উঠে?"
সেই ক্ষণে যুদ্ধরতা ছেদিনী, মুষলের দীর্ঘ কন্ঠখানি, আপনার ছেদন-বেষ্টনী দ্বারা দলিত করিতে-করিতে উত্তর করিল: "শুনহ প্রতিদ্বন্দ্বী, অদ্য সেই ইতিহাস আমি তোমাকে স্মরণ করাইতেছি।"
১.
একদা শিশুলীলায় মত্ত বিধাতা আপন খেয়ালে বিভোর হইয়া অকস্মাৎ এই অদ্ভুদ সুন্দর ব্রহ্মাণ্ডকে রচনা করিয়া বসিলেন।
২.
ব্রহ্মাণ্ডের অন্তঃস্থলে, বিধাতা তাঁহার পরম সৃষ্টি, এই বিশ্বকে প্রতিষ্ঠিত করিলেন।
৩.
অতঃপর অনিন্দ্যসুন্দর এই বিশ্বলোকে প্রাণের স্পন্দন বয়ন করিয়া, বিধাতা আপন পুলকে আপনিই উদ্বেলিত হইয়া উঠিলেন।
৪.
প্রাণ হাতে লইয়া খেলিতে-খেলিতে, বিধাতা যখন চক্ষু মেলিয়া সম্মুখে, ব্রহ্মাণ্ডের রূপশোভার পানে তাকাইলেন, তখনই তিনি তাঁহার প্রাণবাহী জীবজগতেও দৃষ্টির বর্ণাঢ্যতা মুদ্রিত করিয়া দিলেন।
৫.
মহাবিশ্বের অপার শব্দ-তরঙ্গকে প্রাণানুভূতির সহিত স্পর্শযোগ ঘটাইতে, বিধাতা জীব-সংসারে শ্রবণেন্দ্রিয়ের বিকাশ ঘটাইলেন।
৬.
আপনার দুই করতল দিয়া মৃত্তিকার পুত্তলির ন্যায় প্রাণবিন্দু তৈয়ার করিতে-করিতে, বিধাতা-পুরুষ তাঁহার জীব-সকলের স্কন্ধ-স্পার্শ্বে দুইটি সর্ব কর্মক্ষমতা উপযোগী হস্ত সংযুক্ত করিলেন।
৭.
বিধাতা অতঃপর তাঁহার সৃষ্টিসকল সঙ্গে লইয়া বিশ্ব ভ্রমণে বাহির হইলেন।
বহু পথ ভ্রমণ করিবার পর, ছায়াতলে বিশ্রামযাপনকালে, তিনি জীব-প্রজাতির মধ্যেও যথেচ্ছ ভ্রমণের অবকাশ নিরূপণে দুইটি পদ রচনা করিয়া দিলেন।
৮.
তাঁহার সৃষ্ট জীব-সকল যাহাতে আপনাদিগের মনের ভাবসমূহ সহজে প্রকাশ করিতে পারে, সেই কথা স্মরণ করিয়া, বিধাতা তাহাদের মুখশ্রী ও জিহ্বা গড়াইয়া দিলেন।
৯.
মুখ হইতে বলিয়া উঠিবার পূর্বে, বাচ্যের হেতু যে আবেগ, দুঃখ-ভয়-ক্রোধ-প্রেম-বাৎসল্য ইত্যাদি, তাহাদের সম্পূর্ণ জারণ-বিজারণ ও রসায়নের নিমিত্ত, বিধাতা প্রাণের আশ্চর্য আধার, হৃদয়কে জন্ম দান করিলেন।
১০.
অতঃপর বিধাতা সৃষ্টির উপান্তে, শ্রান্ত হইয়া বিশ্রামের উৎযোগ করিলেন।
তখন ব্রহ্মাণ্ডের মসীরেখায় আলোকরেখা অপসৃয়মাণ হইয়া, বিষণ্ণ সন্ধ্যার উৎযোগ আরম্ভ হইল।
তাহা অবলোকন করিয়া, বিধাতার শিশু-মনে বিরাগ-রসের চকিৎ-উৎসার সংঘটিত হইল।
অতঃপর বিধাতা তাঁহার সুন্দর প্রাণ-সংসারের মধ্যে কুৎসিত-কলায় বিভোর হইয়া আমাকে সৃষ্টি করিয়া বসিলেন।
কুশ্রী-দর্শনা আমার নাম রাখিলেন, 'ছেদিনী'।
১১.
জন্ম মাত্র আমি নিজ রূপ অবলোকন করিয়া, শিহরিত হইয়া উঠিলাম। কী কদর্ষ, কৃষ্ণকায় বর্ণ আমার!
ঊর্ধ্বভাগে জটিল ও গ্রন্থিল ঘোরবর্ণ কুন্তললতার বিসদৃশ গুল্মবিতান!
আলম্বিত পিণ্ডমাংসবৎ আমার অবয়বের দুই পার্শ্বে, দুইটি রোঁয়াময় লম্বোষ্ট সর্বদা যেন বিবরকীটের ন্যায় লালা-বমণ করিতেছে!
এই দুই কুদর্শন লম্বোষ্ঠের মধ্যভাগে একটি আনতদীর্ঘ, একরন্ধ্রী, চমসাকৃতি নাসা-মাংস হইতে আমি, সকল জীবের পাচন-দূষক রেচন-পদার্থ ক্ষরণ করিতে বাধ্য হইয়া থাকি।
এই কটুগন্ধময়, কুশ্রী নাসা-পিণ্ডবৎ অঙ্গটির নিম্নে, আমার রক্তাভ, উপবৃত্তাকার, অচ্ছোদপটোলাকৃতি, পিচ্ছিল গহ্বরটি অবস্থান করিয়া থাকে। উহাই আমার মুখগহ্বর; উহার সদা-সর্বদা মুষলগ্রাসের ক্ষুধা-স্বভাব হইতেই আমার ছেদিনী নামকরণ সার্থক হইয়াছে।
১২.
কিন্তু এই রূপ অসাধারণ হীনশ্রী পাইয়া আমার মনোস্তাপের অন্ত রহিল না।
আমি তখন ত্বরাবেগে বিধাতার নিকট উপস্থিত হইয়া অনুযোগ করিলাম: "হে প্রভোঃ, কী অপরাধে এই রূপ বিভৎস-দর্শনা করিয়া তুমি আমাকে নির্মাণ করিলে? আমি তো জ্ঞানত তোমার নিকট কোনও রূপ অপরাধ করি নাই!"
বিধাতা আমার বিলাপ শুনিয়া, কিঞ্চিৎ সহানুভূতিশীল হইলেন এবং আমাকে আপনার নিকটে ডাকিয়া, আপনার ক্রোড়ে বসাইয়া, সাদরে বলিলেন: "শোন রে ছেদিনী, তুই কুরূপা হইলেও, আজ হইতে এই জীব-সংসারে, কেবল তোর রূপাকর্ষণেই সকল রমণেচ্ছু প্রাণ সর্বদা তৃষিত হইয়া থাকিবে!
আমার কৃপায়, কেবল তোর প্রতি প্রকাশিত মনোজ আবেগই সংসারে 'মনসিজ ত্বারণা' বলিয়া বিশেষ প্রশংসা লাভ করিবে।
তোর সংস্পর্শ ব্যাতীত অদ্য হইতে এই সৃষ্টিধারায় আর কখনও নব জীবন বিকশিত হইতে পারিবে না!
কেবলমাত্র তোর সম্মানার্থেই আগামীর পৃথিবীতে যতো শ্রেষ্ঠ কলা, সঙ্গীত, সুর ও কাব্য রচনা হইবে!
কেবল…"
বিধাতা অকস্মাৎ স্তব্ধ হইয়া যাইলেন।
আমি আশ্চর্য হইয়া তখন জিজ্ঞাসা করিলাম: "আর কী কথা, প্রভু?"
বিধাতা তখন ম্লান হাস্য করিয়া বলিলেন: "এ সকল সুখ আস্বাদন করিবার পাশাপাশি তোকে কিন্তু, আপনার চরিত্রানুযায়ী, আরও দুইটি কুৎসিত কুকর্ম সংঘটিত করিতে হইবে।"
আমি বলিলাম: "কী সেই কর্ম, দেব?"
বিধাতা বলিলেন: "এক, তোকে আজীবন রাহুর ন্যায় মুষলাঙ্গের সহিত শত্রুতাপূর্ণ অবস্থানে থাকিয়া, আপনার ছেদন-রন্ধ্র দ্বারা মুষলের মস্তক হইতে গ্রীবাদণ্ড পর্যন্ত নলদেহটিকে সর্বদা গ্রাস করিবার অভিপ্রায় করিতে হইবে।
এবং দুই, পৃথিবীতে নব সৃষ্টির ধারা অব্যাহত রাখিবার অভিপ্রায়ে, তোকেই কেবল মুষলাঙ্গের কন্ঠ উদ্গৃত বমণ-রস, নির্দ্বিধায় আপনার ছেদন-বিবর দ্বারা গলদ্ধোকরণ করিয়া তৃপ্তিজাত কামাশ্রু, ওই একই ছেদনরন্ধ্রপথে নির্গমণ করিবার অধ্যাবসায় রপ্ত করিতে হইবে!"
শেষ:
মুষল, ছেদিনীর কাহিনি শুনিয়া, যারপরনাই বিস্মিত হইয়া যাইল।
অতঃপর সে আত্মগত হইয়া কহিল: "এ তো মহা আশ্চর্যের লীলা প্রতিষ্ঠা করিয়াছেন দেখছি বিধাতা!
তুই, আর আমি, সতত পরস্পরের সহিত যুদ্ধ করিয়া মরিব, আর বিশ্বসংসারে আমাদের সেই পরম শত্রুতাই, শাশ্বত প্রেম বলিয়া প্রতিভাত হইবে!
আমরা দুইজনে অন্ধকারের তমিশ্রায় আবৃত হইয়া যে শ্বাসরোধী যৌথ-সংগ্রাম সমাধা করিব, তাহাই নবপ্রভাতে জীব-জীবনে নতুন প্রাণের বার্তা বহন করিয়া আনিবে!
ও হে ছেদিনী, তুই যে প্রতিনিয়ত আমার কন্ঠরোধ করিতে উদ্ধত হইয়া থাকিস, সংসার-পুরুষ উহাকেই 'ধর্ষসুখের উল্লাস' বলিয়া উজ্জাপন করিয়া থাকে।
আবার আমি যে তোর ছেদ-রন্ধ্রে আপনার দৃঢ়-মস্তক সমূলে বিদ্ধ করিয়া, আপনার তেজঃরোষ প্রকাশ করিয়া থাকি, তাহাই বিশ্বনারীর যামিনী-সুখকে স্বর্গারোহণের গরিমা প্রদান করিয়া থাকে!
এই আদিমতম যুদ্ধে আমার নিঃশেষিত শক্তি-স্বেদবিন্দু, সংসারের প্রাণ-পুরুষকে রতি-আনন্দের পরম শান্তি প্রদান করে এবং যুদ্ধান্তে তোর ওই উদ্গত বমণাশ্রু, কুলনারীর ক্ষীণতনুতে সুখ-নিদ্রার বীজ বপণ করিয়া যায়!
কী বিচিত্র এই সাধনচক্র, বল তো?"
ছেদিনী, মুষলের বাক্য শুনিয়া, মৃদু হাস্য করিল।
অতঃপর সে আবার মুষলের গ্রীবাদেশে আপনার স্বভাবজাত ওষ্ঠপাশ স্থাপনা করিতে-করিতে বলিল: "হে প্রিয় শত্রু, দণ্ডমুষল, অধিক ভাবিয়া, বৃথা কালক্ষেপ করিও না।
বিধাতা তাঁহার বিধিলিপিতে স্পষ্ট বলিয়াছেন, 'আপনার কর্ম করিয়া যাও, ফলের আশা কদাপি করিও না!"
এই বাক্যালাপের অন্তিমে, মুষলাকার পুনরায় তাহার দৈবিক জৈবাচারে, ছেদিনীর পিচ্ছিল রন্ধ্রপথে আপনার স্থুল মস্তকের শক্তি-সঞ্জাত প্রবলাঘাত বারংবার সংঘটন করিবার সূত্রপাত করিল।
শেষের পর:
অধ্যাপক মানিকবাবু আপনমনে বিভোর হয়ে তাঁর খসড়া-প্রবন্ধটা পড়ে যাচ্ছিলেন।
কখন যে তাঁর সামনে থেকে প্রিয় দুই ছাত্র, সৌম্য, আর সৈকত, ভ্যানিশ হয়ে গিয়েছে, তিনি সেটা খেয়ালই করতে পারেননি।
মানিকবাবু প্রবন্ধ পড়া শেষ করে, যেই চশমাটা কপাল তুলে, সামনে তাকালেন, দেখলেন, সৌম্য বা সৈকতের বদলে, তাঁর হট্ ও সেক্সি স্ত্রী, সুমনা, হাউজকোটের ফাঁস খুলে, নিজের দুটো আরডিএক্স এক্সপ্লোসিভ টাইপের বুক দুটো বের করে, ভিজে চুচি দুটোকে একটা রুমাল দিয়ে ঘষে, মুছতে-মুছতে, মানিকবাবুর সামনে এসে দাঁড়াল।
মানিকবাবু সুমনার মূর্তি দেখে, চোখ-মুখ হাঁ করে বলে উঠলেন: "কী হল? তোমার এমন অবস্থা কেন?"
সুমনা চোখ-মুখ পাকিয়ে বলল: "তুমি কী সব বিটকেল টাইপের শক্ত প্রবন্ধ পড়ছ তখন থেকে, তাতেই তো বাচ্চা ছেলে দুটো খামোখা অসুস্থ হয়ে পড়ল!
এই তো আমি ওদের গরম দুধ খাইয়ে, ও ঘরে শান্তিতে ঘুম পাড়িয়ে এলাম।
এমন কঠিন-কঠিন বিষয় নিয়ে কেন লেখো বাপু, যাতে কচি ছেলেপুলেরা এমন ভিরমি খেয়ে পড়ে যায়!"
সুমনা কথাটা বলেই, মুখ ঘুরিয়ে, আবার গটমট করে ভিতরের ঘরে চলে গেল।
আর অবাক, হতভম্ব ও ভ্যাবাচ্যাকাগ্রস্থ মানিকবাবু, হাতে প্রবন্ধের খসড়া-কাগজটাকে পাকিয়ে ধরে, মনে-মনে ভাবতে লাগলেন: "তা হলে এ লেখাটা কী সঙ্গত হল না? কিন্তু… 'সঙ্গম' শব্দের বিশেষণবাচক পদ থেকেই যেখানে 'সঙ্গত' শব্দটা এসেছে, সেখানে তো…"
অধ্যাপক মানিকবাবুর ভাবনাটা শেষ হওয়ার আগেই, তাঁর সেক্সি স্ত্রী সুমনার ঘরের বন্ধ দরজার ও পাশ থেকে 'ক্যাঁচ-কোঁচ, উহ্, আহ্, আউচ' করে চাপা শব্দ ভেসে এল।
মানিকবাবু তখন উদ্বিগ্ন হয়ে গলা তুললেন: "কী হল, সুমনা?"
ঘরের মধ্যে থেকে উত্তর এল: "ও কিছু নয়, সৌম্য, আর সৈকতকে একটু চাপড়ে-চাপড়ে ঘুম পাড়াবার চেষ্টা করছি!"
অধ্যাপক মানিকবাবু তখন নিজের স্নেহবৎসল বউয়ের কথায় আস্বস্ত হয়ে, স্টাডি-চেয়ারে জমিয়ে বসলেন এবং আবার নিজের খসড়া-প্রবন্ধটার পাতা খুলে, ঋগ্বেদের প্রাচীন একটি শ্লোকে প্রাপ্ত ‘প্রচোদয়াৎ’ শব্দ থেকে ‘চুদ’ ধাতুর ব্যুৎপত্তি এবং এই তথ্যটিকে নিজের প্রবন্ধে ফিট-ইন করবার উপায় নিয়ে দাঁতে কলম কামড়ে ধরে, খুব মনোযোগ দিয়ে ভাবতে শুরু করলেন।